05/08/2024
ছবিটা তুলতাম না। বাধ্য হয়েই তুললাম। অবশ্য ছবিটা তোলার পর কম বেগ পেতেও হয়নি। জুতো পরে সীটের ওপর দু পা তুলে দিয়ে যে ভদ্রলোক বসে আছেন, ঘটনাটা তাকে নিয়েই। পাঁশকুড়া থেকে ট্রেনে উঠেছি। আমি ডান দিকের জানালার সীটে বসেছি, আর এই ভদ্রলোক বাম দিকের জানালায়। ট্রেন ফাঁকা। ভীড় একদম নেই। পরের স্টেশন থেকেই উঠলেন, এক বয়স্ক লোক। পরনে আধ ময়লা পাঞ্জাবি আর ধুতি। কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ। পাকা চুল, আর মুখে হালকা দাড়ি। উনি ট্রেনে উঠেই এই সুট বুট পরা ভদ্রলোকের পাশে বসতে গেলে ভদ্রলোক বললেন,
-আর সীট নেই? এখানেই বসতে হলো?
বয়স্ক মানুষটি বিনয়ের সাথে বললেন,
-কিছু ভুল করলাম বাবা?
-এত প্রশ্ন করেন কেন? এত সীট থাকতে গায়ের কাছে ঢুকে বসেছেন দেখছি, উঠে গিয়ে অন্য জায়গায় বসুন।
কথা গুলো বেশ মেজাজ দেখিয়ে বললেন ভদ্রলোক। বয়স্ক মানুষটি থতমত খেয়ে বললেন,
-তোমার তো কিছু অসুবিধা করিনি আমি।
ভদ্রলোক বললেন,
-বাংলা বোঝেন না মনে হয়। যত সব আনকালচার্ড, অশিক্ষিতের দল।
এমন অপমানজনক কথা বলতেই বয়স্ক মানুষটি আর কথা না বাড়িয়ে অপজিট দিকের সীটে গিয়ে বসলেন। আমি থাকতে না পেরে মুখ খুললাম। ভদ্রলোককে বললাম,
-আপনি যে এত গুলো কথা বললেন, উনি কি দোষ করেছিলেন?
ভদ্রলোক তখন বললেন,
-আপনি ওনার গায়ে গা দিয়ে বসুন না, ওনার জন্য যখন এত দরদ!
বয়স্ক মানুষটি তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-ছেড়ে দাও বাবা। এই তো এই টুকু সময়ের যাত্রা। পরের স্টেশনেই নেমে যাব। কি হবে কথা বাড়িয়ে? আজকাল এত ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে মাথা গরম করি না। বাহাত্তর বছর বয়স হয়ে গেল, অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুধু বুঝেছি মানুষের সাথে মানুষের কত পার্থক্য। মান আর হুঁশ নিয়েই তো মানুষ হয়। কথা গুলো বলেই পরের স্টেশনে নেমে গেলেন।
এরপরেই ঘটল আসল ঘটনা। বয়স্ক মানুষটি নেমে যেতেই এই ভদ্রলোক সীটের ওপর পা দুটো জুতো পরা অবস্থায় তুলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই আমি মোবাইলটা বের করে ছবি তুলতেই উনি বললেন,
-কি হলো আপনি আমার ছবি তুললেন কেন?
আমি হেসে বললাম,
-আপনার ছবি তুলব? ভাবলেন কি করে? আপনি সেলিব্রেটি নাকি যে আপনার ছবি তুলব? আমি ওই সীটটার ছবি তুলেছি। আর ওই সীটটা নিশ্চয়ই আপনার না? ওই সীটটা কেন, কোনো সীটই আপনার না। যে সীটটায় বসে আছেন, বড় জোর ওই সীটটা আপনার বলে দাবী করতে পারেন।
আমার এমন কথায় উনি বেজায় চটলেন।বললেন,
-ছবিটা ডিলিট করুন। ভালো হবে না বলছি?
আবার হাসলাম। বললাম,
-ভয় পেলেন? উঁহু। আমি ছবি ডিলিট করব না। একটু আগে আপনিই তো ওই বয়স্ক মানুষটিকে বলছিলেন না, অশিক্ষিত, আনকালচার্ড। শুনুন, চেহারা আর পোশাক দিয়ে কে শিক্ষিত, আর কে অশিক্ষিত তার বিচার হয় না। আর সুট বুট পরে আছে মানেই সে শিক্ষিত ভদ্রলোক এমনটাও আশা করা যায় না। মানুষের পরিচয় তার কাজে, তার ব্যবহারে। আপনি শিক্ষিত মানুষ হলে, জুতো পরা অবস্থায় পা দুটো সীটে তুলে দিতেন না। এটা বোঝা উচিত ছিল, নোংরা জুতো জোড়া যেখানে তুলে দিলেন, সেটা বসার জায়গা, কেউ না কেউ সেখানে বসবেই। দ্বিতীয় দিন এমনটা করার আগে একটু ভাববেন। চকচকে পোশাকের সাথে মনটাকেও ঝকঝকে করতে শিখুন।
কলমে: সরজিৎ ঘোষ।