07/11/2024
||প্রেম এবং কাকতাড়ুয়া||
(দ্য ভিনটেজ টেইল)
২য় মৌসুম/১ম পর্ব
-- আব্দুল্লাহ নূর রবি
_____________________
১. জোনাকির গান বুঝি থামলো,
চাঁদ নিজে লুকালো আড়ালে।
শিশিরে স্নান করে ভোর হয়,
তুমি এসে দুটি হাত বাড়ালে।
আগুনের দিন, শেষ হবে একদিন।
ঝর্ণার সাথে গান হবে একদিন।
এ পৃথিবী ছেড়ে চলো যাই,
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে সীমাহীন।....
লালুদের গ্রামে সত্যিই যেন আগুনের দিন শেষ হয়ে এবার নতুন করে ঝর্ণার গান শুরু হয়ে গেছে। গ্রামটার পরিবেশে বিশেষ কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি যদিও, এখনও তার আঁচল ঘেঁষে বয়ে চলে ইছামতি নদী, এখনও সন্ধ্যায় সে শিতানে হরিতালয় পর্বতখানা বিছিয়ে নিয়ে ঘুমাতে যায়, তবে কি এক বিচিত্র কারণে যেন নব্য নব্য লাগে আজকের এই গ্রামখানাকে। এরই মাঝে সময় চলে গেছে অনেকটা। অনেকটা বলতে বেশ অনেকটাই, লালুর কাছে এই দুইটি মাস যেন পৃথিবীর দীর্ঘতম দিবস বলেই মনে হয়েছে। কেননা, সে আচমকা প্রেমে পড়তে শুরু করেছিলো তখন। কি জানি কার প্রেমে, সে তখনও শনাক্ত করতে পারেনি তার অধিক তর হৃদকম্পনের উৎস। কেন জানি তার হঠাৎ হঠাৎ -ই শ্বাসের গতি তীব্র হয়ে যেতো কারো প্রাক্কালের আগমনে। তবুও সে কেন জানি আনমনে নিজের এই অনুভূতি স্বীকারে সচেষ্ট ছিলো না। কিন্তু অনুভূতি কি আর পাটের দড়ি দিয়ে বেধে রাখা যায়? উপচে পড়া গরম দুধের মতো তার অনুভূতিও তাই ক্রমেই ফুলে ফেঁপে ওঠতে লাগলো। যখনই সকাল কিংবা সন্ধ্যায় অথবা মধ্যাহ্নে সাইকেলের চাকার ঘূর্ণনের সরাৎ সরাৎ শব্দ হতো, ঝনঝন করে বেজে উঠতো সাইকেলের সাইরেন, ওমনি তার পা দুটো হৃদয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে চলতো পালানের দিকে। জলপাইয়ের মতো চোখগুলো তার অবাক হয়ে চেয়ে থাকতো কাছা দিয়ে লুঙ্গি পড়া গলুর বাদামি লালচে বর্ণের সুগঠিত শরীরের পানে। কনকনে গলায় ঝংকার তুলে গলু যখন বলতো,
-- কিরে, ভোদাই !! দাড়াইয়াই থাকবি, নাকি যাবি আমার লগে?? তোর চুতমারানি বাপে আর কালগুক্কই বোইনে দেখলে তো আবার আঁশ বটি নিয়া দৌড়ানি দিবো নে। আয় হাদারাম, পিছে আইসা বয়। আজকে যামু আঁখ চুরি করতে, ওগো কাওরে কই নাই। তুই আর আমিই, মজা হয়বানে....
লালু তখনও হাবার মতো চেয়ে থাকে গলুর মুখপানে, যতক্ষণ না তার হাতের তাল এসে পড়ে তার পদ্ম কোমল পিষ্ঠে। গলুর মুখঝামটা খেয়ে লালু তখন গিয়ে বসে পড়ে গলুর ঝনঝনাঝন লোহার গাড়ির পিছনে। তখনও যেন তার আপত্তি থাকে গলুর কোমড়ে হাত খানা দিয়ে অক্টেপাশের মতো পেচিয়ে ধরতে, যতক্ষণ না গলু পুনরায় গাল দিয়ে বলে, কিরে!! আমি কি তোর ভাসুর লাগি যে দূরে সইরা বসবি। হালার পো, হাত দে, দুই হাত দিয়া পেঁচাইয়া ধর আমারে। যে আচুদা রাস্তা ঘাট, ধইরা না বসলে পইড়া যাবি। আর আমার কাছের কিয়ের লজ্জা তোর। জানোস না আমি তোর কি লাগি?? বলতো, আমি কি লাগি তোর?? বল, শুনি!!..
গলু অধীর আগ্রহে পিছনপানে মুখ ফিরিয়ে থাকে লালুর জবাবের প্রতীক্ষায়। লালুর মনে তখন রসিকতা করার সাধ জাগে। মুখ ভেঙ্চি কেটে সে বলে, তুই আমার কি লাগোস শুনবি?? তুই হয়লি, আমার জা....
--- জা...???
--- তুই হয়লি আমার জা, জা, জাফর ভাইয়ের বন্ধু লাগিস...।।
গলু লালুর মুখ চেপে ধরে বলে, কি কয়লি তুই। কুত্তার বাচ্চা, আবার ক....
লালু তখন স্বর নরম করে বলে, তুই আমার জামাই লাগোস। হয়ছে, এবার খুশি চল!!
-- না,, শুনতেই তো পায়লাম না। আরও জোরে ক, কি কয়লি??
লালু তখন চিৎকার গলুর কানের গোড়ে গিয়ে বলে, তুই আমার পাঠা লাগোস, পাঠার ঘরের পাঠা, আর আমি তোর পাঠী!! হয়ছে?? চল, এইবার, আব্বায় চইলা আইবো....
গলু মুচকি হেসে সাইকেলের প্যাডেলে পা চাপিয়ে ঘোড়ার শক্তিতে ঘূর্ণন দিয়ে এগিয়ে চলে আকা বাঁকা কাঁচামাটির পথ ঘাট পেরিয়ে কি জানি কোন অচিনপুরের দেশে। আমরা আমাদের চেনশোনা প্রায় গল্পেই দেখি নায়িকার সান্নিধ্যে নায়ক ভালো হয়ে ওঠার চিরাচরিত গল্প, তবে আমাদের এ গল্পে ওল্টো কাহিনী ঘটেছে। লালু আগে ভালো ছিলো, তবে গলুর খপ্পরে পড়ে আজ লালুও বখে গেছে বেশ অনেকটাই। সেও এখন রীতিমতো দৈনিক গলুর সাথে দিগবিদিক চরে বেড়ায়, এর ওর গাছ থেকে ক্ষেত থেকে এটা ওটা চুরি করে খায়, বিড়ি খায়, নেশা করে, পড়ালেখায় ঠিক মতো মনোযোগ দেয় না। আর এই নিয়ে খুব বেশিই চিন্তিত এ গায়ের নব্যাগত ইঞ্জিয়ার মিস্টার শোবেল।
আপাতত সে কয়েকদিনের জন্য তার তাবুতে গিয়ে থাকে, রাতদিন কাজ করে বেড়ায়, তবে যখনই সে অবকাশ পায় ওমনি ছুটে আসে লালুর সাথে দেখা করতে। তবে তার দেখা পাওয়া যেন ডুমুরের ফুল
দেখা পাওয়ার মতোই দূর্লভ হয়ে উঠেছে ইদানিং। মর্মাহত হয়ে তখন মিস্টার শোবেল লালুর বাবা মাস্টার সাহেবের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা সভার আয়োজন করে। খানিকটা ভগ্নপ্রায়, খানিকটা আশাহত, কিছুটা বিমর্ষ এবং ক্রোধিত গলায় সে তখন মাস্টারসাহেবকে বলে, স্যার। লালুর বিষয়টা আমার মোটেও সুবিধার ঠেকছে না। চেয়ারম্যানের ভাই গোলাপ শাহ যে কোন ধরনের ছেলে সেটা এই হোল গায়ের সবাই জানে, আর সেই ছেলেটির সাথেই লালু সারাটাদিন টইটই করে এধারছে ওধার ঘুরে বেড়ায়। আমি শুনেছি, সে নাকি নেশাপানিও ধরেছে। রাতে ঘুমুতে গিয়ে আমি ওর গায়ে থেকে বিড়ির গন্ধও পেয়েছি বহুবার। ও পড়ালেখায় আর আগের মতো মন দেয় না, আমার সাথে ঠিকমতন কথাও বলে না একটি। স্যার, এবার আপনিই বলুন ওর আচার ব্যবহার কি আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়? আর ওই গোলাপের সাথে ওকে ঘুরতে দেওয়াটা কি উচিত?
মাস্টারসাহেবের চুল অনেকটাই পাকিয়ে গেছে। মাথা ভরা সেই সাদা চুলের ঝাঁকিরাশি নিয়ে সে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কিছুক্ষণ গভীর চিন্তার পরে জবাব দেয়, আমি আর কি বলুম বাবা?? তোমরাই দেহো, তোমরাই কও। ওই জাওড়া পোলাডায় পুরাই খাইয়া দিছে আমার বেডারে। আমার কথাও ওই আর হুনতে চায় না। এহন ওর সব দায় দায়িত্ব আমি তোমার ওপর আর ললিতার ওপর ছাইড়া দিলাম। তোমরা যেডা ভালো মনে করো সেডাই করো। দরকার হয়লে ধইরা জিগা গাছের ডালা দিয়া ওর গায়ের চামড়া তুইলা দিবা, তাও দেহো যদি পোলাডারে আবার ঠিকঠাক করতে পারো।
মাস্টারসাহেবের কথায় শোবেল কিছুটা আশ্বাস পায়। তবে ললিতা বিরূপ মুখভঙ্গি করে বলে, হেয় ক্যান আমার ভাইরে মারবো? হের কি অধিকার আছে? ওই আমার ভাই, আমার রক্ত। দরকার হয়লে ওরে পিটায়া বিছায়া ফেলবাম। তয় হেয় জানি আমার লালুর গায়ে হাত না তুলে।
শোবেল ক্লান্ত মুখে বলে, আচ্ছা আচ্ছা। আপনি ভয় পাবেন না, অস্থির হবেন না। আমি আপনার ভাইকে কিছুই বলবো না। তবে আপনি তো তাকে কিছু বলতেই পারেন। শাসন করতেই পারেন। তার উপর তো আপনার পূর্ণ অধিকার আছে। একটু ভালো করে চিন্তা করে তারপর দেখুন, কি করে তাকে আবার সেই নিরীহ লালু বানানো যায়।
ললিতা খানিকটা গর্জিত কন্ঠে জবাব দেয়, ওইডা নিয়া আপনেরে এত চিন্তা করুন লাগতো না। আমার ভাই আমি বুইঝা লইবাম। আর হো, আরও একটা কথা। আপনের তো এখন থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হইয়াই গেছে। আপনের আর তো আমাগো বাড়ি না আসলেও চলে। হুদাই এতদূর কষ্ট কইরা হাইটা আইসা উড়াপাখির মতো পরের সংসারে নাক গলায়বার কি দরকার আছে???
মিস্টার শোবেল হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে ললিতার মুখপানে, আর মনে মনে ভাবে, ও আমার ওপর এত রেগে আছে কেন? আমি ওর কি করলাম আবার??
________________
২. এদিকে কুটু মিয়া লঞ্চের ডিকিতে বসে বসে হাজার হাজার নতুন নতুন খাবারের পদ আবিষ্কার করে ফেলেছে। সেই খুশিতে চেয়ারম্যান সাহেবও গদগদ হয়ে কুটুকে " বিজ্ঞানী কুটুশচন্দ্র বসু" উপাধি দিয়েও ফেলেছেন। এই গতকালই তো কুটু মিয়া কোত্থেকে চিংড়ির মতো কষা করে কাঁকড়ার মালাইকারি রেঁধে নিয়ে আসলো। তাতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য দিলো এক ছিপি কেওড়ার জল, গোলাপ জল, চন্দনের গুঁড়া, মিঠা আতর, লেবুর রস, ভিনেগার, আঙুরের রস, আর এক চামচ দিলো চেয়ারম্যানের বোতল থেকে চুরি করা সাদা জল। টমেটো কুচি কুচি করে কেটে সিদ্ধ করে পেস্ট বানিয়ে সেটা দিতেও ভুল করলো না। সবশেষে দিলো জিরের ফাঁকি। তখন তার গন্ধে পুরো স্টিমার মাখোমাখো হয়ে উঠলো। চেয়ারম্যান সাহেবেরও আগে ছুটে এলো স্টিমারের অন্যান্য কর্মচারীগণ। সবাই অতি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো আজকের বিশেষ পদ কি? তখন কুটু মিয়া তাদের সম্মুখে তুলে ধরলো তার নতুন আবিষ্কৃত আরও একটি পদ জলকচু ফুলের বড়া। কোনো এক ফাঁকে নদীতে নাইতে নেমে সে কচুরিপানা হতে তুলে এনেছিলো ময়ূরপেখমের নকশাখচিত বেশ কিছু ফুল। তারপর এনে তাতে লবণ দিয়ে ভালোকরে খেঁচে নিয়ে তারপর তাতে দিলো এক বাটি বেসনের ফাকি, কয়েক চামচ মশলার গুড়া, কয়েক চিমটি নুন, গোল মরিচ কালোজিরা আর তারপর সেগুলোকে ডুবু ডুবু গরম তেলে ভেজে উঠিয়ে খবরের কাগজের উপর জুরাতে দিয়েছিলো।
সবাই আশা করেছিলো মাংস জাতীয় কিছু একটা রাধা হয়েছে। তবে জলকচুর বড়া দেখে একেকজন নাক ছিটকাতে লাগলো। তারপর মুহুর্তেই স্থান খালি করে চলে গেলো। তবে চেয়ারম্যান সাহেব যখন তাদের এই রকম অসভ্যতার কথা শুনেছেন ওমনি সবাইকে ডেকে নিয়ে লাইন করে বসিয়ে জলকচুর বড়া দিয়ে ভাত খেতে দিয়েছেন। যদিও প্রথমে সবাই অনিচ্ছাতেই খেতে বসেছিলো, তবে একটা বড়া মুখে নিতেই সবার মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো। তারপর যেন প্রতিযোগিতা করে করে তারা বড়া খেয়ে শেষ করতে লাগলো। কটু তখন চিন্তায় পড়লো, চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য পরে কিছু থাকে কি না কে জানে। তাই সে কাঁকড়া মালাইকারির পাশেই কয়েকটা বড়াও তুলে রাখলো। আর সেই কারি হতে কিছুটা ঝুল এনে একেক করে সবার পাতে ছুইয়ে দিয়ে বললো, লও খাও সবাই। আইজ ভালো মন্দ রান্দনের কিছু ছিলো না। তাই বড়া করছি। আর চেয়ারম্যান সাহেবের জন্যে একটু কাঁকড়ার কারী রাধছিলাম। ওইদিন নাইতে গিয়া দুইটা কাঁকড়াও ধরছিলাম দানবের মতো। খাইয়া দেহো কেমন ট্যাস।
নতুন রেসিপির নাম শুনে সবাই আরও একবার বিমর্ষ মুখে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে শেষে পাতে হাত দিয়ে সংকোচপূর্ণ ভাবে খাবার মুখে নিলো। ঠিক তেমনই মুখে যেন তাদের আরও একবার স্বাদের বিস্ফোরণ ঘটলো। ওমনি তারা চেয়ারম্যান সাহেবকে ডেকে বললেন,
সাহেব। এই কুটু মিয়ারে আপনি আমাগো পক্ষ হয়তে কিছু একটা উপহার দিয়া দ্যান, বেতন পায়লে আমরা শোধ কইরা দিমু। তাজমহল বানায়বার পর শাহজাহান যেমন কারিগরদের হাত কেটে দিইচিলো, আইজ আমাগো মনে হয়তাছে কুটু মিয়ার হাতও আমরা কাইটা সাথে কইরা লইয়া যাই। ওই মানুষ না সাহেব, সাক্ষাৎ ওই হিন্দু গো দেবী অন্নপূর্ণা। কি যে স্বাদের রান্দা আজকে রাঁধছে। ওরে আপনি কিছু দ্যান...
চেয়ারম্যান সাহেবের মুখটা রঙিন হয়ে ওঠলো। তিনি কটুর দিকে চেয়ে তার হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলেন। তারপর নিজের হাতের একটা লাল রত্নের আংটি খুলে কুটুর আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে আলতো আদর দিয়ে বললেন, এমন সুন্দর সুন্দর হাতগুলা তোমরা কাইটা দিতে চাও!! এমন হাত কাটুন লাগে না, সোনা দিয়া বান্ধাইয়া দেওন লাগে। বুঝলা মিয়ারা? এহন যাও তোমরা, তোমাগো বেতন হয়তে আর কিছু দিওন লাগবো না। এহন আমার খায়বার টাইম। কুটু আহো, আমার খায়বার নিয়া আহো।।
চেয়ারম্যান সাহেবের কামড়ায় খাবার নিয়ে পরিবেশন করার পর কুটু শুধু তার হাতখানা দেখতে লাগলো। এমন দামী একটা আংটি তার হাতে ঠিক মানায়তাছে না। কেমন বাদুড়ের গলায় মুক্তার মালার মতো মনে হচ্ছে। এই নিয়ে বরং কিছু কথা বলা দরকার বলে তার মনে হলো।
সাহেব!! এই আংটিডা আপনে ফিরায়া নেন। আপনের হাতেই এইডা ভালো মানায়তো। আমার হাতে মনে হয়তাছে উলুবনে মুক্তার মতো। আমি এমনিতেই খুশি।
আইচ্ছা আপনের আর কিছু লাগতো? কাঁকড়ার মালাই কারীডা কেমন হয়ছে??
চেয়ারম্যান সাহেব একটু তম্বি খেলেন৷ ঢুক গিলে বললেন, এটা কাঁকড়ার মালাইকারি??
কুটু মাথা নাড়লো। আরও বললো, হো। আর এইডা কচু ফুলের বড়া। খাইয়া দেহেন ভালোই লাগে।
চেয়ারম্যান সাহেব খকখক করে হেসে হেসে বললেন, ওরে খোদা। তোমার মাথায় এত বুদ্ধি। নতুন নতুন আবিষ্কার করো দেহি তুমি রোজরোজ। আইজ হয়তে তেমার নাম হইলো গিয়া কুটুসচন্দ্র বসু। জগদীশ চন্দ্র বসুর ছোট ভাই তুমি। হা হা হা.....
_______________
৩. চারিদিকে সমতলে ছেয়ে আছে শ্যামল মসৃণ গোচারণভূমি। জৈব পুষ্টিতে সমৃদ্ধ অঞ্চল বলেই এত সবুজ আর সবুজ চারিধারে। তার উপর যখন হরিতালয় থেকে ঢেউ বয়ে আসে তখন যেন একে সবুজের সমুদ্দুর বলে মনে হয়। আর এই সবুজ সমুদ্রেই এসে ডুব লাগালো লালু আর গোলাপ শাহ। ঝনঝনা সাইকেলটার মৃতদেহটাকে এক পাশে ফেলে দিয়ে সবুজ ঘাসের গা এলিয়ে শুয়ে আছে লালু। তার পাশেই দুটা বিশাল বিশাল মিষ্টি রসালো আখের লাঠি। গোলাপ শাহ একটা ছোট খন্ড ছিলে চিপড়ে চিপড়ে রস বের করে লালুর গালে ঢালছে। আর একটু পরপরই আনমনে কি জানি কি ভেবে মাছরাঙা পাখির মতো ঠোঁকর দিচ্ছে লালুর ঠোঁটে। লালু কি বলবে এই পাগলটাকে বুঝতে পারছে না কিছু। তবে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তাদের থেকে একটু দূরেই ক্ষেতের মাঝে একটা বাঁশের মাথায় কুমড়া দিয়ে তার গায়ে শার্ট পড়িয়ে কে যেন একটা কাকতাড়ুয়া দাড় করিয়ে গেছে। চোখমুখোও আকা হয়েছে আবার তাতে। লালু গোলাপ শাহকে হঠাৎ বলে ওঠলো, আপনে মাইনষের সামনে এসব করতাছেন, লইজ্জা করে না আপনের??
গোলাপ শাহ অবাক হয়ে বললো, মানুষ। আবার মানুষ পায়লি কই?
লালু তখন ওই কাকতাড়ুয়া দেখিয়ে বললো, ওই তো ওই কুমড়ামানবটা।
গোলাপ তখন রাগী মুখে ওঠে দাড়িয়ে হনহন করে এগিয়ে গেলো ওটার দিকে। তারপর গিয়ে পাগলের মতো ওই মূর্তির সামনে বকবক করতে লাগলো, কিরে?? হেনে দাড়ায় দাড়ায় কি দেখছোস তুই? ওরে চিনোস কেরা? ওর নাম লালু, আমার একমাত্র বউ। আর আমার বউরে আমি চুমা দেই না, উপ্তা কইরা চু** তাতে তোর কি সমস্যারে মাঙের নাতি? যাহ, সর এহান থেকা। তোর জন্য আমার বউ লজ্জা পায়তাছে। চোখ সরা, উল্টো দিকে ঘোর।
গোলাপ শাহ কাকতাড়ুয়ার মাথায় বিশাল দুটো কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দিয়ে আবারও লালুর কাছে এলো। বললো, এইবার দেখ। ওর চোখ আটকায় দিছি। এইবার তো বউ আর কেউ নাই, কুপি লিবায়া এহন চইলা আয় তোর সোয়ামীর কাছে।
বলেই গোলাপ শাহ ঝাঁপিয়ে পড়লো লালুর গায়ের উপর। হাতে হাত আটকে, ঠোঁটে ঠোঁট আটকে, চোখে চোখ আটকে যখন সে ঘাসখেতে প্রেমের খেলা খেলছিলো, তখন চারিপাশে তরতর করে ঝড়ও হাওয়া ভীষণ বেগে ছুটাছুটি করছিলো। সবুজের সমুদ্দুরে যেন সবুজ সুনামি শুরু হয়েছিলো তাতে। আর তাতে নড়ে নড়ে উঠচিলো এক পায়ে দাড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়াটা ও। হঠাৎ করেই একটা ঝাপটা হাওয়ায় তার মাথায় দেওয়া কলাপাতার মুখোস খুলে গেলো। আর তার দৃষ্টি গিয়ে পড়লো উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে অর্ধ-উলঙ্গ দুজন যুবকের উন্মত্ততায়। আর তাই দেখে যেন তার চোখে মুখে একটা হাসির আভা আরও বিস্তারিতভাবে ফুটে ওঠলো।
______(চলবে)___
(গল্পটির পরবর্তী পর্ব পেতে কমপক্ষে ২৫টি শেয়ার, ৫০ টি মন্তব্য প্রযোজ্য🤭)