Mon's favorite

Mon's favorite Mandirapaul.921

 #সেদিনেরবৃষ্টি  #পর্বঃ৯মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কেয়া পুরাই Shocked কিন্তু নিজেকে সামলে শুধু বললো,  "আমি বাড়ি যাবো। "একপ্রক...
22/05/2024

#সেদিনেরবৃষ্টি

#পর্বঃ৯

মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কেয়া পুরাই Shocked কিন্তু নিজেকে সামলে শুধু বললো,

"আমি বাড়ি যাবো। "

একপ্রকার রাগেই কেয়ার হাত টা ছেড়ে দিলেন মাহির ভাই। কেয়াও চুপচাপ নির্জন পথে হাঁটছে। সাথীদের ও আর দেখা যাচ্ছে না।

মাহির ভাইয়া আবার ডাকলেন...

কেয়া শুনো...

কেয়া দাঁড়ালো।

"আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে সত্যি দুঃখিত। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না। প্লিজ।"

কেয়ার মনে কোনো কষ্ট নেই।
কারণ কেয়ারও মাহির ভাইয়াকে ভালো লাগে। ওনি কেয়ার কাছাকাছি থাকলে কেয়া নিজের কথা হারিয়ে ফেলে। কেয়ার খুব অস্বস্তি হয়, বুক ধুকপুক করে। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে৷

কিন্তু কেয়া তো এর কিছুই মাহির ভাইয়াকে বলতে পারবে না। কারণ ওনি কেয়ার ভাই তাই নিজে থেকেই দূরে দূরে থাকতে চাই, কথা কম বলে। কিন্তু কেয়া পারছে কোথায়।

কেয়ার সব পছন্দ অপছন্দ সব এই মানুষ টা জানে। এসব মনে মনে ভাবছে কেয়া,

মাহির ভাইয়াঃ কি হলো কেয়া? কি ভাবছো সরি বললাম তো৷ চলো বাড়ি যাই।

কেয়াও চুপচাপ ওনার সাথে বাড়ি চলে আসলো। রাতে খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরলো।

সকাল থেকে মনে হচ্ছে বাড়ির হৈচৈ ৩ গুণ বেড়ে গেছে। বাড়িতে আত্মীয়রা এসে ভরে যাচ্ছে। আজ ভাইয়ার গায়ে হলুদ। বড় করে অনুষ্ঠান করবে না। ছেলেকে হলুদ লাগিয়ে গোসল করাবে এই আর কি।

কেয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো৷ আজও নাস্তায় কেয়ার প্রিয় খাবার খিচুড়ি, মাংস, আচার। দেখেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো কেয়ার। খাওয়া শেষ করে সবার সাথে একটু গল্পগুজব করলো।

হঠাৎ কেয়ার মনে হলো সকাল থেকে মাহির ভাইয়াকে দেখছে না। মনটা খুব করে তাকে দেখতে চাচ্ছে।

বাহিরে বের হলো কেয়া। কিন্তু মাহির ভাইয়ার পাত্তা নেই। ওদের বাড়ির পাশেই বড় পুকুর আছে।। উঠানের চারপাশে ঘর থাকায় পুকুর দেখা যায় না। কিন্তু পুকুরের এখান থেকে মানুষের কথা আসছে৷ তাই কেয়াও কৌতুহল নিয়ে গেলো।

৪-৫ জন পুকুরে নেমেছে মাছ তুলার জন্য মাহির ভাইয়াও তাদের মধ্যে একজন৷ সেন্টু গেঞ্জি পরে মাথায় গামছা বেঁধে মাছ ধরছে। কেয়ার কেনো জানি আজ মাহির ভাইয়ার প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করছে। ভালো লাগাটা একটু বেশিই কাজ করছে। কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের পাড়ে। গ্রামের বাড়ির এটায় সৌন্দর্য পুকুর ভরা মাছ, খেতে সবজি, বাড়ি ভরা মেহমান, আড্ডা এসবের আমেজে ভরপুর পরিবেশ। শহরে এর কিছুই হয় না। বিয়ে মানেই সেজেগুজে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বর বউ কে দেখে ২-১ টা ছবি তুলে খেয়ে বাসায় চলে আসা।

মাহির ভাইয়া মনে হয় কেয়ালে দেখে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছেন। তারপর ও তার মুখে লজ্জামাখা হাসি লেগেই আছে। এই হাসিটায় কেয়াকে বারবার ঘায়েল করে। প্রতিনিয়ত নিজেকে কন্ট্রোল করতে হচ্ছে কেয়াকে। জাল টেনে পুকুরের পাড়ে এসে মাছ তুলছে। একটা অনেক বড় কাতলা মাছ উঠেছে।

মাহির ভাইয়াঃ এই কেয়া এদিকে আসো। এখানে আসছোই যখন এই মাছ তুমি নিয়ে যাও।

কেয়াঃ এত বড় মাছ আমি কিভাবে নিবো?

মাহির ভাইয়াঃ ধরো বললাম।

কেয়াঃ মনে মনে ভাবছে," মাছ তো ধরতেই পারবো কিন্তু মাছের নাড়াচাড়ায় আমি সহ না পানিতে পরে যায়"

মাহির ভাইয়া হয়তো কেয়ার অবস্থা বুঝতে পেরেছেন।

তাই বললেন," তুমি কাছে আসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে মাছ ধরলে মাছ আর তুমি দুজনেই ঠিক মতো বাড়িতে যেতে পারবে।"

কেয়া রীতিমতো অবাক। ওনি কিভাবে জানলো কেয়া এসব ভাবছে। কেয়া ভয়ে ভয়ে ওনার কাছে গেলো।

ওনি কেয়াকে মাছ টা ধরিয়ে দিলেন ঠিক মতো।

সাবধান ও করে দিলেন যেনো না ছাড়ে । ওনিও কেয়ার পিছন পিছন বাকি মাছ গুলো নিয়ে আসলেন। কেয়ার হাতে মাছ দেখে বাড়ির মানুষ হাসাহাসি শুরু করলেন।

এই কাজ যে মাহির ভাইয়ার এটা বুঝতে আর বাকি নেই কারোর।কেয়া মাছ টা অন্য মাছ গুলোর সাথে রেখে দিলো।। ভাগ্য ভালো কেয়া আর মাছ ঠিকঠাক ভাবে বাড়ি আসতে পেরেছে।

মাহির ভাইয়ার আম্মু মানে আমার কাকিয়া ধমক দিয়ে বললেন,
কেয়া শহরের মেয়ে। মাছ ধরে অভ্যস্ত না যদি মাছের কাটায় হাত কাটে তখন তো সবাই রিয়েক্ট করবে। বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে।

মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কিছু একটা বলতে গিয়েও মুচকি হেসে চলে গেলো। এই মানুষ টা অনেক রহস্যময় কখন কি করে বুঝা মুসকিল।

কেয়া গোসল শেষ করে বসে আছে। ভাইয়া এখন বাসায় নেই৷ হয়তো বিকালে গোসল করাবে ভাইয়াকে। মাছটাকে একপ্রকার কোলে করে নিয়ে আসছিলো কেয়া৷ তাই সারা শরীরে মাছের গন্ধ করছে। এজন্য গোসল করে নিয়েছে

বেলা বাজে ২ টা খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরছে। কিন্তু কেয়া তো কোনো শাড়ি নিয়ে আসে নি। এই জীবনে শাড়ি কখনো পরেও নি।

সবার শাড়ি পড়া দেখে নিজেরও খুব শাড়ি পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছু করার নেই৷ সাথীর রুমে গিয়ে কেয়ার ব্যাগ বের করে জামা খুঁজতেছিল, আর ভাবছিল কোনটা পরা যায়।
সাথীর রুমে একটা জানালা আছে," ঐ জানালা দিয়ে মাহির ভাইয়ার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মাহির ভাইয়াই হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।"

মাহির ভাইয়াঃ কেয়া এটায় একটা শাড়ি আছে। আর যা যা দরকার সাথীকে বলো ও তোমায় দিবে। আর সাথী শাড়ি পড়াতে পারে ওকে বলো শাড়িটা তোমায় পরিয়ে দিতে। যদি শাড়ি না পরে জামা পরে বের হয়েছো তাহলে তোমার খবর আছে। আসছি আমি।

শাড়ি কেয়ার হাতে দিয়ে চলে গেলেন

কেয়া রীতিমতো টাশকি খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিসব বলে গেলেন ওনি!

তবে কেয়ার মনটা খুব ভালো হয়ে গেছে। এই মাত্র ভাবছিলো, "আমার শাড়ি থাকলে আমিও পড়তাম।"

এত তাড়াতাড়ি ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে ভাবে নি।

এসব ভাবতে ভাবতে সাথী রুমে আসলো,

কেয়াকে বলছে, কেয়া চলো শাড়ি পরি।

আমার কাছে শাড়ি আছে তোমায় দিচ্ছি।

কেয়ার হাতে ব্যাগ দেখে জিজ্ঞেস করছে, "এটা কি?"

কেয়া নিজেই তো খুলে দেখে নি।

সাথী ব্যাগ টা নিয়ে খুলে দেখছে। একটা কমলা রঙের গোলাপি পাড়ের শাড়ি। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কমলার সঙ্গে গোলাপি রঙ খুব মানিয়েছে।

সাথীঃ তুমি শাড়ি নিয়ে আসছো। চলো পরিয়ে দেয়।

দুজনেই শাড়ি পরে সেজেগুজে বের হলো। সবাই তাদের প্রশংসা করছেন। কেয়ার আম্মু, কাকিয়া ওদের সামনে যেতে লজ্জা লাগছিলো। জীবনে প্রথম শাড়ি পরেছে কেয়া, কেমন জানি আনইজি লাগছিলো৷

কেয়ার আম্মু দেখে বললেন," মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। জীবনে প্রথমবার আমার মেয়েটা শাড়ি পরলো।"

বাহিরে গাছের নিচে কেয়ার আব্বু চাচ্চু আরও কয়েকজন বসে গল্প করছেন। আব্বু চাচ্চুরাও কেয়াকে দেখে মাশাআল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পরলেন।

কেয়ার মন শুধু মাহির ভাইয়াকে খুঁজছেন। কেয়া আর সাথী গেইটের কাছে গিয়ে ছবি তুলছে। মাহির ভাইয়ার ফোনেই ছবি তুলছে। সাথীর ফোন নেই। সাথীকে ফোন কিনে দিবে বলেছে৷ তখন তো আর এই মুহূর্ত থাকবে না তাই সাথী মাহির ভাইয়ার ফোন এনে কেয়া আর সাথীর ছবি তুলছে।

হঠাৎ মাহির ভাইয়া একটা কমলা রঙের পাঞ্জাবি আর একটা সাদা প্যান্ট পরে বের হলেন। চোখে আবার সানগ্লাসও পরলেন। পুরাই নায়ক লাগছিলো। কেয়াদের কাছে আসছেন।

মাহির ভাইয়াঃ কিরে ছবি তুলা হলো তোদের । আমায় কয়েকটা ছবি তুলে দে তো।

সাথী মাহির ভাইয়ার কয়েকটা ছবি তুলে দিলো৷ পরে মাহির ভাইয়া ফোনটা কেয়ার হাতে দিয়ে বললেন, "আমাদের দুই ভাই বোনের ছবি তুলে দাও তো।

কেয়াও যথারীতি তুলে দিলো৷

তারপর ছবিগুলো দেখে মাহির ভাইয়া সাথীকে ফোনটা দিলো,

কেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, আমা আর কেয়ার ছবি তুলে দে।

কথাটা শুনা মাত্রই হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে কেয়ার। মাহির ভাইয়া কেয়ার সাথে ছবি তুলবেন। কিছু ভাবতে পারছে না কেয়া।

সাথী ডেকে বললো, "এই কেয়া ঠিকমতো দাঁড়াও।"

কেয়াও ভদ্র মেয়ের মতো ওনার পাশে দাঁড়ালো । ওনার পাশে দাঁড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু কেয়ার হৃৎস্পন্দন বেড়ে শরীর ঘামতে শুরু করেছে।এর মধ্যে ছবি তুলা শেষ। ৩ জনে কয়েকটা সেলফি তুললেন।
তারপর কেয়া আর সাথী বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। কেয়া সোজা সাথীর রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে বসে পড়লো। এখনো শরীর ঘামতেছে কেয়ার ।

কেয়া অনুভব করতে পারছে সে মাহির ভাইয়ার প্রতি অসম্ভব দূর্বল হয়ে গেছে। ওনি কেয়ার কাছাকাছি আসলে কেয়ার মনের ভিতরে কি যেনো ছুটোছুটি করতে থাকে।
বোনের সাথে ভাই ছবি তুলতেই পারে এটা কোনোভাবেই মনকে বুঝাতে পারছে না কেয়া।

চলবে.........

#ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ

 #লহরীপ্রেম ||৬||পহেলা রমজান। মায়া পড়ন্ত বিকালে কোমরে ওড়না গুঁজে  ইফতারির আয়োজনে ব্যস্ত। তার শুকনো মুখটা ঘর্মাক্ত। চিকচি...
22/05/2024

#লহরীপ্রেম

||৬||

পহেলা রমজান। মায়া পড়ন্ত বিকালে কোমরে ওড়না গুঁজে ইফতারির আয়োজনে ব্যস্ত। তার শুকনো মুখটা ঘর্মাক্ত। চিকচিক করছে। বারংবার গলার নিচটাতে হাত রেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। আবারও কাজ করছে। ওদিকে ঘড়ির কাঁটা যে থেমে নেই।
কলিংবেল বাজলে সে ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ফিরে চুলাটা বন্ধ করে দিল। কোমরের ওড়না খুলে গায়ে জড়িয়ে মূল দরজা খুলে দেয়। এখনো দরজা খোলবার আগে সতর্কতার সহিত কে এসেছে তা দেখার অভ্যাসটা সে গড়তে পারেনি।
রিয়ন দুহাতে বাজার ভর্তি ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখামাত্র বাজারের ব্যাগ এগিয়ে নেওয়ার জন্য মায়া হাত বাড়ায়। কিন্তু রিয়ন তার হাত ফিরিয়ে দিয়ে বলে‚
“সমস্যা নেই। সারাদিন তুমিও রোজা থেকে কম কাজ করো না।”
নিজ স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে মুহূর্তে যেন তার তৃষ্ণা মিটে গেল। দরজা বন্ধ করার আগে রিয়নের পেছন দিকটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। রিয়নের দেহও ঘর্মাক্ত। পিঠের অংশের শার্ট সেই ঘামে সিক্ত। দরজা লাগিয়ে এগিয়ে এসে মায়া বলে‚
“তুমি গিয়া জামা-কাপড় পাল্টাও৷ আমি এগুলা রাখতাছি।”
রিয়ন তার কথা শুনল না। হাঁটুর দিকে প্যান্ট খানিকটা টেনে ব্যাগগুলোর সামনে বসে একটা একটা করে সব বের করতে লাগল। কনুই অবধি শার্টের হাতা টেনে সে মায়ার পানে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল‚
“তোমার রান্না শেষ হয়েছে?”
মায়া না সূচক মাথা নাড়ল। বাজারের ব্যাগের সামনে বসতে চাইলে রিয়ন ফের তাকে বাঁধা দেয়।
“যেটা করছিলে সেটা করো গিয়ে। আমি এগুলো দেখে নিব। না পারলে তোমায় ডেকে নিব।”
মায়া কথা বাড়াল না। ছোট এক ‘হুম’ শব্দে পা বাড়াল রান্নাঘরের দিকে।
রান্নাঘরের কাজ সারতে সারতে মায়া অতীতের কথা ভাবতে লাগল। মুহূর্তে মনে পড়ে গেল তার মা-বাবার ঘটনা।

এমনই এক রমজানের সন্ধ্যা। মাগরিবের আজান হতে মাত্র মিনিট দশেকের পার্থক্য। ঠিক সে মুহূর্তে মাহতাব আলম বাড়ি প্রবেশ করেছিলেন। হাতে তার বড় কার্প মাছ। বাড়ির উঠানে সেই মাছ রেখে তিনি জোরাল গলায় মায়াকে ডেকে বলেছিলেন‚
“মায়া কইরে? এই মাছগুলা তোর মার কাছে নিয়া যা। এখন কাইটা ফ্রিজে না রাখলে পড়ে গন্ধ হইয়া যাইব।”
শরবত তৈরিতে ব্যস্ত মায়া শরবত রেখে দ্রুত পায়ে বাড়ির উঠানে এসে হাজির হয়েছিল। নিজের বাবার উপর খানিকটা রাগ হয়েছিল তার। নিজেকে সামলাতে না পেরে বলেই উঠেছিল‚
“আজানের আছে মাত্র মিনিট পাঁচেক। এই সময় মতো তুমি মাছ আনলা কোন আক্কেলে‚ আব্বু? এহন আম্মু মাছই কাটব নাকি ইফতার করব?”
মেয়ের এমন প্রশ্নে মাহতাব আলম চোখ রাঙিয়ে তাকায়। পরনের পাঞ্জাবি খুলে হুংকার ছেড়ে বলেন‚
“বেশি কথা কস কেন? যেইডা কইছি হেইডা কর নয়তো মাছ নিয়া ফালাইয়া দিয়া আয়।”
রাগে ফোঁসফোঁস করতে থেকে তিনি পরনের লুঙ্গি খানিকটা উঁচিয়ে কলপাড়ের দিকে পা বাড়ালেন। আর বিরবিরিয়ে বললেন‚
“মা-ডার মতো ঝি-ডারেও খারাপ বানাইতাছে। এমন করলে কোনো বেডার ভাত খাইবার পারব না।”
সেদিন মাছ কাটতে কাটতে আফিরা বেগমের সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছিল। মাগরিবের সালাত আদায়ের সুযোগটুকুও যেন তার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ইফতারি হিসেবে মায়া দুটো খেজুর এবং একটু পানি খাইয়েছিল তাকে‚ রোজা ভাঙানোর জন্য। আফিরা বেগমের দেহাভ্যন্তর থেকে সেদিন ক্ষণে ক্ষণে শুধুমাত্র দীর্ঘশ্বাস বেরিয়েছিল।

“চোখে পানি কেন? খারাপ লাগছে নাকি?”

হঠাৎ রিয়নের প্রশ্নে মায়া অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসল। খানিকটা বিচলিত হয়ে সে রিয়নের দিকে ফিরে তাকাল। ইতোমধ্যে রিয়ন নিজের পরনের ঘর্মাক্ত পোশাক পরিবর্তন করে ফ্রেশ হয়েছে। খানিকক্ষণ আগে কিনে আনা ফলগুলোর কয়েকটা একটা বোলে নিয়ে পরিষ্কার করে নিচ্ছে। তার এমন কাজে খানিকটা কৌতূহলী হলো মায়া।
নিজের স্ত্রী-কে নিজের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে তারও আগ্রহ জাগে। প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করল সে‚
“খারাপ লাগছে কি?”
“না‚” মাথা নেড়ে মায়া চুলায় বসানো তরকারির দিকে মনোযোগ দিল। পাশে ইশারা করে কুঁচি করা পেঁয়াজ দেখিয়ে বলে‚
“পেঁয়াজ কেঁটেছি‚ তাই চোখে পানি।”
রিয়নের ভুরু যুগল কুঁচকে এলো। বিয়ের এই পাঁচ মাসে এসে রিয়ন নিজের স্ত্রী সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা পেয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মিথ্যা বলা বা অযুহাত দেওয়া৷ যখন মায়া এ কাজটি করে তখন সে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে।

রিয়ন ভেঁজা হাত না মুছে বাড়িয়ে দিল মায়ার দিকে। শীতল ও কোমল স্পর্শে মায়ার গালে স্থান নেওয়া নোনাজল মুছে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করল।
ক্লান্ত ও জ্বরভাব ত্বকে হঠাৎ শীতল ও কোমল স্পর্শ পেতেই মায়ার শরীর শিউরে উঠল। সে তৎক্ষনাৎ রিয়নের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। সে যেন স্তব্ধ। এমন কিছু সে কোন কালেই আশা করেনি।
একগাল হেসে রিয়ন বলে‚ “রোজা অবস্থায় মিথ্যা বলার কি প্রয়োজন?”
জবাব দিল না মায়া। মাথা নিচু করে খুন্তি দিয়ে কড়াইয়ের তরকারি নাড়তে থাকে। রিয়ন অনুমান করল মায়া তার মিথ্যার জন্য লজ্জিত৷ সুতরাং কথা বাড়িয়ে নিজ স্ত্রীকে আরো লজ্জিত করার কোন মানে হয় না। সে নিঃশব্দে একটি ছুরির সাহায্যে ফলগুলো কাটতে লাগে।
মায়া খানিকক্ষণ পরপর আড়চোখে রিয়নের ফল কাটা‚ সেগুলো সুন্দরভাবে প্লেটে সাজানো দেখছে।
স্বামী নামক জাতির উপর যে ভুল ধারণা বুকে ধরে সে বড় হয়েছিল‚ তা রিয়ন আজ অর্ধেকাংশে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। আজ সে খানিকটা আনন্দিত। কারণ সে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে‚ রিয়নকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল ছিল না‚ একাংশে হলেও ঠিক ছিল।

ইফতারি শেষে মায়া যখন এঁটো প্লেটগুলো নিয়ে টেবিল থেকে উঠে রিয়ন তখন পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে তাকে থামায়৷
“এগুলো পরিষ্কার করা কি খুব জরুরী? এখন এসব পরিষ্কার করলে নামাজের সময়টা কি থাকবে‚ মায়া?”
মায়া তৃতীয় বারের মতো থমকে দাঁড়ায়। কোন জবাব দেয় না। রিয়নের মুখপানে নিশ্চুপ এবং নিষ্পলক খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রিয়ন মায়ার হাত থেকে এঁটো প্লেটগুলো টেবিলের উপর ফিরিয়ে রাখে। তার হাত ধরে টেনে রুমের দিকে এগোতে থেকে রিয়ন বলে‚
“রমজান মাসটা ফজর ও মাগরিবের নামাজটা স্বামী-স্ত্রী একসাথে আদায় করব। মনে থাকবে?”
মায়া তখনও কোন জবাব দিতে পারে না। চুপচাপ স্বামীকে অনুসরণ করতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে তার চোখজোড়া ঠিক ভিজে উঠতে থাকে। সে নিজেকে থামায়৷ অহেতুক অশ্রুজল বিসর্জন দিবে না৷ বরং প্রতি ফোঁটা চোখের পানি সে সেজদায় ফেলবে। এতটা ভাগ্যবতী হিসেবে সৃষ্টি করায় পরম দয়ালু ও সর্বশক্তিমান আল্লাহকে শুকরিয়া জানাবে সে।
জায়নামাজে কেবলামুখো হয়ে দাঁড়ানোর আগমুহূর্তে রিয়ন একবার ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ার দিকে তাকায়। মায়ার মাথা তখন নিচু করা। কিন্তু তার দুগালে চোখের পানি চিকচিক করছে। রিয়ন তাকে কোন প্রশ্ন করল না। সে চুপচাপ সালাত আদায়ে মন দিল।

চলবে………

(পাঠকদের ভালো-মন্দ মন্তব্য/কমেন্টের আশা রাখছি)

 #লহরীপ্রেম ||৫||শুক্রবার। মুসলিমদের জুম্মা বার। সকালবেলা খোরশেদ মন্ডলকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসেছে রিয়ন। সপ্তাহ খানেক ছেলে ও...
21/05/2024

#লহরীপ্রেম

||৫||

শুক্রবার। মুসলিমদের জুম্মা বার। সকালবেলা খোরশেদ মন্ডলকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসেছে রিয়ন। সপ্তাহ খানেক ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে কাটিয়ে এবার তিনি গ্রামে ফিরেছেন। বাস জার্নিতে ঢাকায় আসতে উনার যতটুকু না সময় লেগেছে‚ সেই তুলনায় ঘণ্টাখানেক কম সময় লেগেছে ফিরতে। সূর্য যখন মাথার ঠিক উপরে তখন আশেপাশের মসজিদে আযান দিতে শুরু করল।
ব্যাগ হাতে বাড়ির মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে খোরশেদ মন্ডল ছোট মেয়ে রাইদাকে ডেকে উঠলেন।
“রাইদা মা‚ ব্যাগ গুলা নিয়া যা তো।”
বাবার ডাক শুনে হাস্য উজ্জ্বল অভিব্যক্তিতে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা রাইদা। হাসতে হাসতে সে জিজ্ঞাসা করল‚
“বাবা‚ এতো তাড়াতাড়ি ফিরা আইলেন যে?”
“তাড়াতাড়ি কই? সপ্তাহ পড়ে আইছি। আর কতো থাকন যায় পোলার সংসারে?”
রাইদা খোরশেদের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে চৌকাঠে রাখল। উড়না ঠিক করার পর তার কপাল কুঁচকে আসে।
“কেন‚ বাবা? ভাবি কি দুর্ব্যবহার করছে?”
“কী বলস‚ রাই‚ এগুলা? বউমা কেন দুর্ব্যবহার করব? ও তো আরো মন খারাপ করল আমি এত তাড়াতাড়ি ফিরা আসছি বইলা। মাইয়াডা সারাদিন একলা একলা ওই চাইর দেয়ালের ভিতরে থাকে।”
ঘর্মাক্ত পাঞ্জাবি খুলে খোরশেদ রাইয়ের হাতে দিয়ে রশিতে ঝুলন্ত গামছা টেনে নিজের কাঁধে ঝুলালেন। কপালের ঘাম মুছে প্রশ্ন করলেন‚
“তোর মায় কই?”
“রান্না করে। আপনে কলপাড় থেইকা হাত-মুখ ধুইয়া আহেন।”
খোরশেদ মন্ডল মাথা নাড়লেন। পেছনে এক কদম ফেলে চলে গেলেন বাড়ির পশ্চিম দিকটায়।

জুম্মার নামায শেষে খোরশেদ মন্ডল ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোজা বাড়ি এসে পৌঁছালেন। ঘরে প্রবেশ করা মাত্র ফ্যানের সুইচ অন করে সোফাতে গা এলিয়ে বসলেন তিনি। তিনি দুর্বল কন্ঠে নিজের স্ত্রীকে ডাকলেন‚
“পারভীন‚ ঠান্ডা পানি নিয়া আহো তো।”
এরপর তিনি নিজের কন্ঠ নামিয়ে আপনমনে বললেন‚
“যা গরম পড়ছে! গলা হুকাইয়া গেছে আমার।”
পারভীন বেগম স্বামীর ডাক স্পষ্ট-ই শুনেছেন। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে তাতে নরমাল পানি মিশিয়ে এগিয়ে গেলেন। খোরশেদ মন্ডলের সামনে পানির গ্লাস রাখতে রাখতে প্রশ্ন করলেন‚
“বিষ সহ খাইবা নাকি বিষ ছাড়া?”
খোরশেদ মন্ডল ক্ষিপ্ত হলেন না। বরং তিনি হাসলেন। হাতের ইশারায় পারভীন বেগমকে অপেক্ষা করতে বলে ঢকঢক করে সবটুকু পানি পান করে নিলেন। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে তিনি আবারও হাসলেন। বললেন‚
“তোমার এই স্বভাব এখনো গেলো না‚ পারভীন? এই বয়সে আইসাও আমারে মারনের চিন্তা করো?”
পারভীন বেগম জবাব দিতে চাইলেন। কিন্তু ব্যর্থ হলেন নিজ কন্যা রাইদার জন্য।
রাই নাচার ভঙ্গিতে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। পরনে তার নতুন শাড়ি। নীল তার রঙ। বাবা-মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে প্রদর্শন করে জিজ্ঞাসা করে‚
“দেখ তো‚ কেমন লাগতাছে আমারে?”
খোরশেদ মন্ডল মেয়ের বাচ্চামিতে হেসে উঠলেন। রাইয়ের মন রক্ষার্থে খানিকটা বাড়িয়ে বললেন‚
“মাশা-আল্লাহ! একেবারে নীল পরীর লাগান লাগতাছে আমার আম্মারে। বউমার কিন্তু পছন্দ আছে। কি সুন্দর শাড়িটা পছন্দ করছে তোর লাইগা!”
নাসিক্যধ্বনিতে বিরক্তির অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করলেন পারভীন বেগম। মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বললেন‚
“ভাব খানা দেখো‚ জমিদারের বাচ্চার৷ বলি‚ এই গরমের মধ্যে তুই এই শাড়ি পইরা‚ চুলগুলা আলগা দিয়া সঙ সাজছস কোন দুক্ষে?”
“দুক্ষে না‚ মা‚ সুখে। সুখে। মনে রঙ লাগছে আমার। জানো না?”
মেয়ের এমন কথা শুনে ক্ষিপ্ত হলে পারভীন বেগম। মায়ের অভিব্যক্তি পাঠ করে রাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে‚ যা পারভীনকে আরো রাগান্বিত করে।
“দূর হো আমার চোক্ষের সামনে তে। তোরে দেইখা আমার গরম লাগতাছে। সর।”
“বুঝছি‚ আমি তোমার থেইকা একটু বেশি সুন্দরী দেইখা তুমি আমারে হিংসা কর। এর লাইগাই তো আমার সাজগোছ দেখবার পারো না।”
পারভীন বেগমকে ভেঙচি কেটে রাই শাড়ির আঁচল নাড়াতে থেকে নিজের রুমে চলে যায়৷ রাগান্বিত পারভীন বেগম কপালে ভাঁজ ফেলে মেয়ের হাঁটার ধরণ দেখেন। এবং মা-মেয়ের এমন ঝগড়া দেখে খোরশেদ মুখ টিপে হাসছেন। প্রাণ খুলে হাসতে ইচ্ছা করছে উনার৷ কিন্তু সূর্য উত্তাপের তুলনায় বর্তমানে উনার স্ত্রীর মেজাজের তাপমাত্রা অধিক। বাড়িতে ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটুক‚ তিনি এই মুহূর্তে এমন কিছুর আশা করছেন না। যার কারণে নিজের হাসিকে সংযত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
“তুমি হাসতাছ কী কারণে?” কোমরে এক হাত ঠেকিয়ে পারভীন বেগম যখন প্রশ্ন করলেন‚ খোরশেদ মন্ডল তখন বুঝতে পারলেন তিনি যে মুখ টিপে হাসছেন তা তার গিন্নির দৃষ্টির নিরীক্ষিত।

ঘড়ির কাটা যখন দশের ঘর পেরিয়েছে তখন মায়া নিজের কাজ সেরে বেডরুমে মাত্র প্রবেশ করেছে। কিন্তু সে চৌকাঠ পেরিয়ে আর এগোনোর সাহস পেল না। রিয়ন বিছানার এক পাশে বসে তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সমস্ত রুম জুড়ে এক অদ্ভুত নীরব শিরশিরে ভাব বিরাজ করছে।
মায়ার মস্তিষ্ক খুব দ্রুত কাজ করতে লাগল। সারাদিনের করা ছোট থেকে ক্ষুদ্রতর কাজগুলো সে স্মরণ করতে লাগল। কোথাও কোন ভুল হয়েছে কিনা৷ কিন্তু তেমন কিছুই তার স্মরণ হলো না।
“ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আসুন‚ মহারানী‚” রিয়নের রাশভারী কন্ঠে মায়া মাথা উঁচু করে তাকাল।
সে উপলব্ধি করল চিন্তা সাগরের অতলে ডুবে সে মাথা নিচু করে একই স্থানে অবস্থান করছিল। এক শুকনো ঢোক গিলে সে গুটি-গুটি পায়ে এগিয়ে গেল। রিয়নের সামনে সেই পার্সেলের বক্স।
অর্ডার করা জিনিসে কোন গণ্ডগোল নেই তো? রিয়ন তো তাকে বলেছিল সব দেখে পার্সেল রিসিভ করতে৷ সেও তাই করেছে।
রিয়নের সামনে দাঁড়ালে মায়ার চোখ একবার রিয়ন তো একবার বিছানার উপর রাখা পার্সেলের দিকে নড়াচড়া করতে লাগল। মৃদু সুরে মায়া জিজ্ঞাসা করল‚
“কী হইছে?”
রিয়ন বুঝতে পারল মায়া কিছুটা ভয়ার্ত। হয়তোবা তার এমন রাগান্বিত অভিব্যক্তি ও কন্ঠের কারণে। কিন্তু এটা রিয়নের নিকট নতুন। বিয়ের পর থেকে আজকের আগ অবধি সে কখনো মায়াকে ভয় পেতে দেখেনি। তবে আজ কেন হঠাৎ সে তর্কের পরিবর্তে ভয়ার্ত?
মনে জাগ্রত প্রশ্নকে এক পাশে ঠেলে রিয়ন মায়াকে প্রশ্ন করল‚
“পার্সেল রিসিভের ক্ষেত্রে আমি কী বলেছিলাম?”
“সব ঠিক আছে কিনা তা দেইখা নিতে।”
“আপনি কি তা করেছিলেন?”
রিয়নের হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া‚ রাশভারী কন্ঠে আপনি সম্বোধন করা… সবকিছু যেন মায়াকে ঘাবড়ে দিচ্ছে। সচারাচর মায়ার উপর রাগান্বিত হলে রিয়ন তাকে বেয়াদব‚ মাথামোটা‚ ফাজিল ইত্যাদি বলে বকাঝকা করে। কিন্তু কখনো আপনি সম্বোধন করে না।
মায়া নিরবে মৃদু মাথা নাড়িয়ে শব্দহীন জবাব দিল। তৎক্ষনাৎ রিয়নের কপালে গুনে গুনে চারটে ভাঁজ পড়ল৷ নির্দিষ্ট একটি লেখার উপর ইশারা করে সে বলল‚
“এতে কি লেখা আছে পড়ুন তো।”
মায়া আরো দুই কদম এগিয়ে গেল। বক্সের উপর সাদা স্টিকারে নাম‚ ঠিকানা‚ পার্সেলের ওজন‚ সংখ্যা ইত্যাদি লেখা। মায়া খানিকটা কৌতূহলী হয়ে উঠল যখন সে দেখল পণ্যের সংখ্যা একশত। এই ছোট একটা বক্সের ভেতর একশত জিনিস!
“A gift from your husband‚” খানিকটা স্পষ্ট শব্দে মায়া উচ্চারণ করল। রিয়নের দিকে তাকিয়ে ফের বলল‚
“তোমার স্বামীর পক্ষ থেকে উপহার।”
এক ভুরু উঁচিয়ে রিয়ন পিঠ সোজা করে বসে।
“কার স্বামী?”
“তোমার।”
জবাব দেওয়ার পর মুহূর্তে মায়া নিজের ভুল বুঝতে পারে। সে তৎক্ষনাৎ কপাল থাবড়ে নিজের জিহবা কামড়ে ধরে। ভাবে এইমাত্র মস্তবড় ভুল করল।
ধমকে উঠল রিয়ন‚ “ আমাকে কি দেখতে সমকামী মনে হয় যে আমার স্বামী থাকবে‚ মাথামোটা কোথাকার?”
“সরি‚ গালতি ছে মিস্টেক‚” বিরবির করে ব্যক্ত করে মায়া।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়ন। পেপার কাটার দিয়ে বক্সের স্কচটেপ কেটে তা মায়ার সামনে মেলে দেয়। বিহ্বল নয়নে মায়া বক্সের ভেতরে তাকিয়ে থাকে।
“এত্তগুলা!” অবিশ্বাস্য কন্ঠে কেবলমাত্র এতটুকু উচ্চারণ করে ফের রিয়নের দিকে তাকায় সে।
বক্সের ভেতর রঙবেরঙের হরেক রকমের চুড়ি। রিয়ন যেন মায়ার জন্য পুরো এক চুড়ির মেলা উঠিয়ে এনেছে।
মায়ার প্রতিক্রিয়াতে রিয়নের সমস্ত রাগ মুহূর্তে হাওয়ায় মিশে যায়। আনন্দে সে হেসে উঠে।
মায়া আবারও জিজ্ঞাসা করে‚ “এগুলো সব আমার জন্য?”
সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায় রিয়ন। বলে‚ “কিন্তু এক শর্তে।”
মায়ার মনে আবার কৌতূহল জন্মায়। বাম কাঁধের দিকে ঘাড় কিঞ্চিৎ নুইয়ে বলে‚
“কিসের শর্ত আবার?”
“প্রতিদিন‚ প্রতিক্ষণ চুড়ি পরে থাকতে হবে।”

চলবে………

প্রশ্ন: ‘গণ্ডগোল' কে গুগুল পড়ছেন কে কে?

 #সেদিনেরবৃষ্টি #পর্বঃ৮মাহির ভাইয়া কেয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বসে তারপর চলে গেলেন।। কেয়াও ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া শে...
21/05/2024

#সেদিনেরবৃষ্টি

#পর্বঃ৮

মাহির ভাইয়া কেয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বসে তারপর চলে গেলেন।। কেয়াও ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে শুয়ে শুয়ে মাহির ভাইয়ার কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলো জানে না।

*****

আজ বুধবার। কেয়ারা সবাই মিলে মাহির ভাইয়াদের বাড়ি যাবে। মানে কেয়াদের গ্রামের বাড়িতে যাবে। কেয়া, ছোট ভাইয়া, তার আব্বু আর আম্মু। বড় ভাইয়ার পরীক্ষা চলছে তাই সে যেতে পারবে না। সে বিয়ের দিন সকালে আসবে বলেছে৷

কয়েকঘন্টার মধ্যে কেয়ারা গ্রামে পৌঁছে গেলো।
গ্রামে একটা ছোট বাজার আছে। এখানেই কেয়ারা গাড়ি থেকে নামলো।৷ এরপর মাটির রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। কিছুদূর হাঁটার পরই বাড়ি। বিয়ের গেইট করা হয়েছে অনেক বড় করে। বাড়িতে এটায় প্রথম বিয়ে।কেয়ারা গেইটের সামনে যেতেই সাথী বরণ ঢালা নিয়ে দৌড়ে আসলো। কেয়াদের বরণ করলো। ঐখানে নিয়ম আছে বরণ করলে টাকা দিতে হয় তাই আব্বু একহাজার টাকা দিলো। সাথীও খুশি মনে চলে গেলো।

তখনই মাহির ভাইয়া একহাতে কতগুলো ফুল নিয়ে আসছে। কেয়ার আব্বু আম্মুকে গোলাপ দিলো। ছোট ভাইয়াকেও দিলো। ওরা বাড়িত ভেতরে ঢুকে পরলো।
কেয়া মাহির ভাইয়াকে বললো, " আমার গোলাপ কোথায়?"

মাহির ভাইয়া মুচকি হেসে পেছন থেকে আরেকটা হাত বের করলো অনেকগুলো কাঠগোলাপ একসাথে বাঁধানো। দেখে কেয়ার মন খুশিতে ভরে গেলো।

কিন্তু মাহির ভাইয়া কিভাবে জানলো কাঠগোলাপ কেয়ার এত প্রিয়৷ গোলাপ যেমন কেয়ার অনেক পছন্দের ফুল, তেমনি কাঠগোলাপ আরও বেশি পছন্দের।
কেয়ার ইচ্ছে করছিলো মাহির ভাইয়াকে জরিয়ে ধরতে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা পারলো না। কেয়াও হাসিমুখে ধন্যবাদ দিয়ে মাহির ভাইয়ার হাত থেকে ফুলগুলো নিলো।

মাহির ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কি জানেন কাঠগোলাপ আমার অনেক প্রিয়?"

ভাইয়া একটু জোরে হেসে উঠলো, "মহারাণী, আমি তোমার সম্পর্কে কতটা জানি তা তুমি নিজেও জানো না। সময় হলে সব জানতে পারবে। তুমি মনে মনে যা চাইবে তাই তোমার সামনে হাজির হবে। আসো ভিতরে আসো"

কেয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি সামলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো কেয়া। সবার সাথে কথা বার্তা শেষ করলো। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলো। নাস্তাটাও মাহির ভাইয়াই এনে দিলো নকশিপিঠা,পোয়া পিঠা,শামুক পিঠা, আরও কত প্রকারের ঝাল পিঠা। প্রায় সবগুলোই কেয়ার পছন্দের। কেয়া শুধু প্রতিনিয়ত অবাকই হচ্ছে। যার সাথে কেয়ার জন্মের পর থেকে এত বছরে দেখাসাক্ষাৎ নেই। সে কেয়ার সম্পর্কে এতকিছু কিভাবে জানে। খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর সাথী কেয়াকে ওর রুমে নিয়ে যায়। কেয়া আর সাথী একসাথেই থাকবে। সে ক্লাসে কেয়ার থেকে একক্লাস বড় হলেও বয়সের তেমন পার্থক্য নেই। কারণ কেয়া প্লে, নার্সারি এসব পড়তে পড়তে এখন মাত্র ক্লাস ১০ এ। আর সাথী গ্রামের স্কুলে পড়ে কেয়ার আগে SSC দিয়ে ফেলছে৷ তাই কেয়া ওকে নাম ধরেই ডাকে।

সন্ধ্যায় সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ সাথী কেয়াকে ডাকলো, "আমি বাহিরে গেলাম।"
সাথী বললো," চলো ঘুরতে যাই।"

কেশা বললো, " কোথায় যাব।"

সে বললো, "আরে চলো...."

কেয়া আর সাথী হাঁটতে লাগলো। সন্ধ্যার পর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আলো আছে আকাশে। হাটঁতে হাঁটতে একটা ছোট নদীর পাড়ে আসলো তারা। এসে দেখে এখানে আরও ২ জন আছে। কেয়ারা আসতেই তারা উঠে কথা বললো, একজন মাহির ভাইয়া আরেকজন তার কাজিন নাম সৈকত। তারা সবাই বসে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।

সৈকত ভাইয়া বলে উঠলো, " বাড়িতে বড়দের সাথে গল্প করে আর কেমন লাগবে তাই তোমাদের এখানে আসতে বললাম"
একটু পর এখানে অনেক জেলে আসবে মাছ ধরতে। দেখবে অনেক ভালো লাগবে। এটা সেটা অনেক গল্প করতে লাগলো।।

রাত ৮ টার উপরে বাজে। গ্রামের বাড়িতে ৮ টা মানেই অনেক রাত। বাড়ি থেকে মাহির ভাইয়াকে কল দিচ্ছে। কেয়া সাথীকে পাওয়া যাচ্ছে না।

মাহির ভাইয়া বলছে, "আমরা কাছেই আছি।"

তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলছে।

বাড়ির দিকে রওনা দিলো সবাই।। কেয়া আর সাথী সামনে। পিছনে মাহির ভাইয়া আর সৈকত ভাইয়া।

হঠাৎ সৈকত ভাইয়া সাথীকে ডেকে বললো শুন সাথী কালকে কিভাবে কি করবি।
কথাটা বলতে বলতে দ্রুত হেঁটে সাথীর কাছে গেলো।

এই সুযোগে মাহির ভাইয়া কেয়ার হাতটা ধরলেন

কেয়ার হাঁটার গতি কমে গেলো, সাথী আর সৈকত ভাইয়া কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে।।

আর কেয়া তাকিয়ে আছে মাহির ভাইয়ার দিকে। মাহির ভাইয়া একটু রেগে বললেন,
" ওরা সামনে যাক , আমরা একটু পরে যায়।
তোমার সাথে কথা বলার জন্য সাথীকে বলে তোমাদের এখানে আনলাম আর তুমি সাথীর সাথেই কথা বলছো ওর সাথেই চলে যাচ্ছো। কেনো তোমার কি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। নাকি তুমি আমায় চিনো না। তোমার জন্য এতকিছু করি আর তোমার তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই। কি সমস্যা তোমার বলো......."

চলবে.......

#ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ🤗

 #সেদিনেরবৃষ্টি  #পর্বঃ৭বউ এর জন্য শাড়ি কিনা হলো। অন্যান্য সরঞ্জাম কিনা হচ্ছে। কেয়া আর  মাহির ভাইয়ার বোন সাথী কিছু সময়ের...
20/05/2024

#সেদিনেরবৃষ্টি

#পর্বঃ৭

বউ এর জন্য শাড়ি কিনা হলো। অন্যান্য সরঞ্জাম কিনা হচ্ছে। কেয়া আর মাহির ভাইয়ার বোন সাথী কিছু সময়ের মধ্যে ই ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। সে ইন্টারে পড়ে। কেয়ারাও এক ফাঁকে তাদের জন্য জামা পছন্দ করছে। একটা লেহেঙ্গা আর একটা ড্রেস কেয়ার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু কোন টা নিবে বুঝতে পারছে না। একবার লেহেঙ্গা আরেকবার ড্রেস হাতে নিচ্ছে।
তখনই মাহির ভাইয়া কেয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ড্রেস টা কেয়ার হাতে দিয়ে আবার চলে গেলো দূরে।

কেয়ার বুঝতে বাকি রইলো না কেয়া পছন্দ করতে পারছে না বলেই ওনি কেয়াকে হেল্প করলো। কিন্তু একটা কথাও বলে নি। হয়তো বাড়ির মানুষের নজরে পরে যাবে তাই। তারপর ওনি ওনার জন্য শার্ট দেখছেন। একটা শার্ট কেয়ার ড্রেসটার সাথে খুব মিলে যাচ্ছে। মনে মনে কেয়ার খুব খুশি লাগছে তারপর আবার নিজের মনকে শান্ত করে ফেলছে। হাজার হোক ওনি কেয়ার ভাই। ওনি নিশ্চয় কেয়াকে বোনের নজরেই দেখেন। কেয়ার মোটামুটি কেনাকাটা শেষ। তারপর মাহির ভাইয়া কেয়াকে ডাক দিলেন।

চলো তোমার টিউশনের সময় হয়ে গেছে। ততক্ষণে কেয়ার খেয়াল হলো। সবার সাথে আড্ডা আর শপিং এর চাপে ভুলেই গেছে তার টিউশন আছে।৷ সবার থেকে বিদায় নিয়ে মাহির ভাইয়ার পিছু পিছু চলে গেলো সে।

ভাইয়ার সাথে বাইকে করে টিউশনে চলে গেলো। ২ টা টিউশন ছিলো তাই ২ ঘন্টা+ সময় লেগেছে। সন্ধ্যার পর হয়ে গেছে। কেয়া বের হতেই দেখে মাহির ভাইয়া বাইকের উপর বসে আছে হাতে একটা কোন আইসক্রিম।

কেয়াকে দেখে বাইক থেকে নেমে সাইডে দাঁড়ালেন। কেয়া ওনার পাশে এসে দাঁড়াতেই কেয়ার দিকে আইসক্রিম টা বাড়িয়ে দিলেন৷ কেয়াও কোনোকিছু না ভেবে আইসক্রিম খাচ্ছে। ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রি টিউশন পড়লে মাথা এমনেই গরম হয়ে যায়। আইসক্রিম খেলে যদি একটু ঠান্ডা হয়।

মাহির ভাইয়া বাইক নিয়ে রেডি। বলছেন যদি একটু লেইটে বাসায় যাও তাহলে কি খুব সমস্যা হবে.? কেয়া মাথা নেড়ে না বললো। কারণ কেয়ারও মাহির ভাইয়ার সাথে থাকতে ভালোই লাগে। কেয়ার কথায় মাহির ভাইয়া বোধহয় অনেক খুশি হয়েছেন।

বাইকে উঠলো বাসায় দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাচ্ছেন।

কেয়া জিজ্ঞেস করলো, এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

ওনি বললেন একটা স্পেশাল জায়গায়।

কেয়া আর কিছুই বললো না। রাতের রাস্তা আসলেই সুন্দর। ল্যামপোস্টের আলো একটু পর পর ব্রীজ, দুপাশে কেবল শূন্যতা ঠান্ডা বাতাসে শরীর মন শীতল হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা পথ যাওয়ার পর রাস্তার পাশে বাইক থামালো মাহির৷ সামনেই ছোটোখাটো একটা বাজার মনে হচ্ছে। এখানে ঝাড়বাতিতে সাজানো ছোট একটা কফিশপ৷ ওনি ভেতরে ঢুকলেন ওনার পিছন পিছন কেয়াও ঢুকলো৷ ওনি দুই কাপ স্পেশাল চা অর্ডার করলেন।

চা এখনও আসে নি কেয়া বার বার এদিক সেদিন তাকাচ্ছে। কেনো জানি ওনার চোখের দিকে তাকাতেই পারছে না মেয়েটা। ওনি কেয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। এটা বুঝতে পেরেই কেয়া আর মুখ তুলতে পারছে না।
মাহির ভাইয়া হঠাৎ ই বলে উঠলেন,

"আচ্ছা কেয়া, তুমি কি আমায় এর আগে কখনো দেখো নি?"

কেয়া হতভম্ব হয়ে তাকালো ওনার দিকে তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,
আসলে আমি রাস্তাঘাটে চলার ক্ষেত্রে কোনো দিকে তাকাই না। তাই আপনাকেও কখনো দেখি নি।

মাহির ভাইয়া হয়তো কেয়ার কথাশ হতাশ হলেন,

তৎক্ষনাৎ মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, " এখন তো তাকাবে আমায় দেখলে?"

কেয়া কিছুই বললো না।

ততক্ষণে চা চলে আসছে। চায়ে চুমুক দিয়ে মনে হলো কেয়া মনে হয় চায়ের রাজ্যে ঢুকে গেছে। এত মজার চা কেয়া কখনও খায় নি।

চা খাওয়ার ফাঁকে মাহির ভাইয়া বলছেন,
আমরা ৪-৫ জন বন্ধু প্রায় ই এখানে আসি চা খেতে৷

তোমাকে নিয়ে এখানে চা খাওয়ার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের।

কেয়াঃ মানে?

মাহির ভাইয়াঃ না কিছু না। আর কিছুই বললেন না। চা খাওয়া শেষে বিল দিয়ে বের হয়ে গেলেন।

কেয়াও কিছু বলতে পারছে না। ওনি বাইক স্টার্ট দিলেন কেয়াও চুপচাপ বাইকের পিছনে বসে ভাবতে লাগলো, মাহির ভাইয়ার আচরণ মাঝে মাঝে আমায় খুব ভাবায়....

চলবে......

 #লহরীপ্রেম ||৪||সকালবেলা নাস্তার টেবিলে খোরশেদ মন্ডলের সাথে আলাপ করতে করতে সময়ের গতি সম্পর্কে ভুলে বসেছিল রিয়ন। ফলাফল—অ...
20/05/2024

#লহরীপ্রেম

||৪||

সকালবেলা নাস্তার টেবিলে খোরশেদ মন্ডলের সাথে আলাপ করতে করতে সময়ের গতি সম্পর্কে ভুলে বসেছিল রিয়ন। ফলাফল—অফিসে সে আজ দেরি করে পৌঁছেছে৷ শান্ত মনে কাজ করতে পারল না সে। ভালো পদে চাকরি করার কারণে বসের তিক্ত কথা শুনে বিগড়ানো মেজাজে নিজের আসনে ফিরতে হয়েছে। আবার অন্যের অধীনে কাজ করলে এধরনের ছোটখাটো ভুলের জন্য কথা শুনতে হবে সে সম্পর্কে রিয়ন অজ্ঞ না।
নিজের ডেস্কে ফিরে এসে চেয়ারে হেলান দিয়ে যখন সে বসল তখন তার ভেতর থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস পালিয়ে গেল। কাজ শুরু করার আগ মুহূর্তে পাশের ডেস্ক থেকে রিয়নের ঘনিষ্ঠ সহকার্মী ফাহাদ তাকে ডেকে উঠল।

“কি‚ মিয়া? নতুন বউ ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করে না নাকি?”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে বিরক্ত ও লজ্জিত হলো রিয়ন। কারণ তেমন কিছুই ঘটেনি যা ফাহাদ উল্লেখ করেছে। ফাহাদের দিকে ফিরে তাকাল না সে। ভদ্রতার খাতিরে বিরক্তি একপাশে ঠেলে রেখে সলজ্জ হাস্যে সে জবাব দিল‚
“না‚ ফাহাদ ভাই। ওসব কিছু না। গ্রাম থেকে বাবা আসছেন তো…।”
তার মুখের কথা সম্পূর্ণ না হতেই কেড়ে নিল ফাহাদ। সে নিজ আসন ছেড়ে এসে রিয়নের ডেস্কে নিজ নিতম্ভ ঠেকিয়ে দাঁড়াল। কনুই দিয়ে রিয়নকে মৃদু খোঁচা দিয়ে বলল‚
“আমরা যেমন বিয়ে করিনি? আমরা তো বুঝি না‚ তাই না?”
রিয়ন কথা বাড়াল না। সে জানে এখন অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ফাহাদ রিয়নকে লজ্জিত করবার পণ করেছে তা আঁচ করতে পেরেছে। সে ফাইল হাতে নিয়ে কাজ শুরু করে শান্ত সুরে বলল‚
“কাজ করেন‚ ফাহাদ ভাই। স্যার দেখলে আবার কথা শুনতে হবে।”
ফাহাদ আর কিছু বলল না। কারণ রিয়নের কথা সত্য। তাদের বস বেশ খিটখিটে মেজাজের। কাজ ফেলে কাউকে দুয়েকটা কথা বলতে দেখলেই তার জিহব নামক মেশিন চালু হয়ে যায়। ঝরঝর করে ঝরতে থাকে অপমান ও অবজ্ঞা মিশ্রিত সকল শব্দ। দ্বিধাবোধ করেন না। সব ক্ষমতা ও অর্থের শক্তি।

বিকালের দিকে রিয়নের মোবাইলে মেসেজ আসে। গত তিনদিন যাবত সে যতপ্রকার মেসেজ এসেছে সবগুলো দেখেছে। কাঙ্ক্ষিত মেসেজ দেখে তা মায়ার নাম্বারে ফরওয়ার্ড করে রিয়ন তার স্ত্রীকে কল করে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর মায়া তা রিসিভ করেছে। রিয়ন কিছু বলার আগে অপরপাশ থেকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে ভেসে আসে‚
“হুম‚ বলো।”
রিয়ন অজান্তে মুচকি হাসল। কেমন ভারী শুনাচ্ছে মায়ার কন্ঠ। তাকে এই মুহূর্তে কেমন দেখাতে পারে তাও সে চটজলদি কল্পনা করে ফেলল। নিঃশব্দে শ্বাস ফেলে রিয়ন প্রশ্ন করল‚
“ঘুমিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ… একটু চোখ লেগেছিল।”
মায়ার শুদ্ধ ভাষায় রিয়ন অবাক হলো না। তন্দ্রাঘোরে সে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে তা রিয়নের অজানা নয়। একই কোমল ও শান্ত কন্ঠে সে বলল‚
“একটা পার্সেল আসার কথা বলেছিলাম।”
“হ্যাঁ‚ মনে আছে। ডেলিভারি হবে আজকে?”
“হুম। মেসেজ ফরওয়ার্ড করে পাঠিয়েছি। ডেলিভারি ম্যান পার্সেল নিয়ে বাসার নিচেই আসবে। আমার নাম্বারে কল আসলে আমি তোমায় কল করে জানিয়ে দিব। তখন গিয়ে নিয়ে এসো।”
“আচ্ছা‚ আনব।”
“ঘুমাও‚” রিয়ন আর কিছু বলল না।

মায়ার জবাব শোনার প্রতিক্ষায়ও থাকল না। সাবধানে কল কেটে দিল মাত্র। গত কয়েকদিন যাবত যে অনুভূতি তার মাঝে কাজ করতে আরম্ভ করেছে তা উপলব্ধি করার পর স্বীকার করতে নারাজ সে। অনিচ্ছাসত্ত্বে কিছুটা অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়েও রিয়ন সতর্ক হয়ে যায়। হয় অহং এর জয়।

সন্ধ্যাবেলা ধোঁয়া উঠা দুই কাঁপ চা ও কিছু বিস্কুট ট্রে-তে নিয়ে মায়া খোরশেদ মন্ডলের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। শ্বশুর ও ছেলের বউ মিলে চা আড্ডা দিবে আজ। রিয়ন ফোন করার পর মায়া আর ঘুমাতে পারেনি। চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়েছে । কারণ অজানা।
বেডরুমের ভেতর খোরশদ মন্ডলকে না পেয়ে মায়া ডেকে উঠল‚
“বাবা‚ কোথায় আপনি?”
বারান্দা থেকে খানিকটা উচ্চ শব্দে জবাব এলো‚ “বারান্দায়‚ মা।”
খোরশেদ মন্ডল যে সূর্যাস্ত উপভোগে ব্যস্ত তা মায়া বুঝতে পারল। তাই বিলম্ব না করে চায়ের ট্রে হাতে পা বাড়াল বারান্দার দিকে। ছোট টোলটার উপর ট্রে রাখতেই খোরশেদ মন্ডল বলে উঠলেন‚
“তুই কবিতা আবৃত্তি করতে জানস‚ মায়া?”
মৃদু মাথা নাড়াল মায়া। এককাপ চা শ্বশুরের দিকে বাড়িয়ে উত্তর দিল‚
“কিছুটা‚ বাবা। আপনার কি আবৃত্তি শোনতে ইচ্ছে হচ্ছে?”
খোরশেদ মন্ডল সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। মায়া স্মিত হাস্যে বলল‚
“আমার কাছে কিন্তু শুধুমাত্র নজরুলের কবিতার বই আছে।”
খোরশেদ সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে হেসে উঠলেন। মাথা নাড়িয়ে বললেন‚
“ চলবে।”
মায়া বই আনতে ক্ষণিক সময়ের জন্য খোরশেদ মন্ডলের কাছ থেকে সরে গেল। বাছাই করে ‘সাম্যবাদী’ বইটা হাতে নিয়ে ফিরে গেল শ্বশুরের নিকট। গলা ঝেড়ে মায়া কাজী নজরুল ইসলামের ‘ঈশ্বর’ কবিতাটি আবৃত্তি করতে লাগল।

‘কে তুমি খুঁজিছ জগদীশে ভাই আকাশ-পাতাল জুড়ে?
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে‚ কে তুমি পাহাড় চূড়ে?
হায় ঋষি-দরবেশ‚
বুকের মানিকে বুকে ধরে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ!
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে‚
স্রষ্টারে খোঁজো— আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!’

সন্ধ্যা পেরিয়ে আঁধার নামল। রাতের রান্নার আয়োজন করতে করতে মায়া বারংবার চোখজোড়া মোবাইলের স্ক্রিনে স্থানান্তরিত হচ্ছে। খানিকটা ভয়ে আছে সে। যদি অসতর্কতাবশত পার্সেল রিসিভ করতে না পারে? খোরশেদ মন্ডলের উপস্থিতিতে তাদের মাঝে রাগারাগি হোক তা সে চায় না। মেসজে সে পেয়েছে‚ কিন্তু রিয়নের দ্বিতীয় কল সে পায়নি।

ঘন্টা খানেক পর রিয়নের ফোনে কল এলো। মেসেজে যেই নাম্বার যুক্ত করে ডেলিভারি ম্যানের নাম্বার বলে উল্লেখ করা হয়েছিল‚ ঠিক একই নাম্বার। কালক্ষেপ না করে রিয়ন কলে কথা বলে মায়াকে কল করল। প্রথমবার রিং হতে না হতে রিসিভ হলে রিয়ন বুঝতে পারে মায়া তার কলের অপেক্ষায় ছিল। আবারও এক মুচকি হাসি তার সমস্ত মুখমণ্ডল দখল করে নিল। নিজের মুখমণ্ডলে হাতের তালুর বিচরণ ঘটিয়ে গলা পরিষ্কার করে রিয়ন বলল‚

“পার্সেল এসেছে। গিয়ে রিসিভ করো।”
“আচ্ছা‚ করতাছি।”
আবারও সেই আঞ্চলিক ভাষা শুনে বিরক্তির এক অস্পষ্ট ও অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করল রিয়ন। বিরক্তিকর কন্ঠে সে জানাল‚ “জিনিস ঠিকমতো বুঝে নিও। খানিকটা ভারী হবে। সাবধানে বাসায় নিয়ে যেও। আমি বাড়ি ফিরে দেখে নিব সব ঠিক আছে কিনা।”
“হুম…‚” শব্দ উচ্চারণ করতে মায়ার যতটুকু সময় প্রয়োজন হয়েছে‚ কল কাটতে রিয়ন ততটুকু সময়ও নিল না।

ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মায়া একটি বড় শ্বাস নিয়ে তা মুখ দিয়ে বের করল। চুলার পাশে মোবাইল রেখে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে গিয়ে পার্সেল রিসিভ করল।
সিড়ি বেয়ে চতুর্থ তলায় উঠার সময় মায়ার খানিকটা কৌতূহল জাগল। তুলনামূলক বড় বক্স‚ কিন্তু অতোটা ভারী না। তার কদমের সাথে তাল মিলিয়ে বক্সের ভেতরের জিনিস ঝনঝন শব্দের সৃষ্টি করছে। কুঞ্চিত কপালে নিজেকে সামলে বিছানার উপর বক্সটা রেখে খানিকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকল।
হবে হয়তো রিয়নের প্রয়োজনীয় কোন জিনিস। রিয়নের অনুমতি ছাড়া বক্স খুলে ভেতরের জিনিসটি দেখার সাহস মায়া করতে পারল না। সেই অধিকার তার নেই ‚ এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী সে। কারণ তাদের সম্পর্ক আট-দশটা দম্পতির মতো নয়।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া বেডরুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। মনোযোগ দেয় রান্নায়। ফলে খুব তাড়াতাড়ি সে বক্সের বিষয়ে ভুলে যায়।

চলবে…………

Address

Raiganj
733129

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mon's favorite posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share