22/05/2024
#সেদিনেরবৃষ্টি
#পর্বঃ৯
মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কেয়া পুরাই Shocked কিন্তু নিজেকে সামলে শুধু বললো,
"আমি বাড়ি যাবো। "
একপ্রকার রাগেই কেয়ার হাত টা ছেড়ে দিলেন মাহির ভাই। কেয়াও চুপচাপ নির্জন পথে হাঁটছে। সাথীদের ও আর দেখা যাচ্ছে না।
মাহির ভাইয়া আবার ডাকলেন...
কেয়া শুনো...
কেয়া দাঁড়ালো।
"আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে সত্যি দুঃখিত। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না। প্লিজ।"
কেয়ার মনে কোনো কষ্ট নেই।
কারণ কেয়ারও মাহির ভাইয়াকে ভালো লাগে। ওনি কেয়ার কাছাকাছি থাকলে কেয়া নিজের কথা হারিয়ে ফেলে। কেয়ার খুব অস্বস্তি হয়, বুক ধুকপুক করে। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে৷
কিন্তু কেয়া তো এর কিছুই মাহির ভাইয়াকে বলতে পারবে না। কারণ ওনি কেয়ার ভাই তাই নিজে থেকেই দূরে দূরে থাকতে চাই, কথা কম বলে। কিন্তু কেয়া পারছে কোথায়।
কেয়ার সব পছন্দ অপছন্দ সব এই মানুষ টা জানে। এসব মনে মনে ভাবছে কেয়া,
মাহির ভাইয়াঃ কি হলো কেয়া? কি ভাবছো সরি বললাম তো৷ চলো বাড়ি যাই।
কেয়াও চুপচাপ ওনার সাথে বাড়ি চলে আসলো। রাতে খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরলো।
সকাল থেকে মনে হচ্ছে বাড়ির হৈচৈ ৩ গুণ বেড়ে গেছে। বাড়িতে আত্মীয়রা এসে ভরে যাচ্ছে। আজ ভাইয়ার গায়ে হলুদ। বড় করে অনুষ্ঠান করবে না। ছেলেকে হলুদ লাগিয়ে গোসল করাবে এই আর কি।
কেয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো৷ আজও নাস্তায় কেয়ার প্রিয় খাবার খিচুড়ি, মাংস, আচার। দেখেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো কেয়ার। খাওয়া শেষ করে সবার সাথে একটু গল্পগুজব করলো।
হঠাৎ কেয়ার মনে হলো সকাল থেকে মাহির ভাইয়াকে দেখছে না। মনটা খুব করে তাকে দেখতে চাচ্ছে।
বাহিরে বের হলো কেয়া। কিন্তু মাহির ভাইয়ার পাত্তা নেই। ওদের বাড়ির পাশেই বড় পুকুর আছে।। উঠানের চারপাশে ঘর থাকায় পুকুর দেখা যায় না। কিন্তু পুকুরের এখান থেকে মানুষের কথা আসছে৷ তাই কেয়াও কৌতুহল নিয়ে গেলো।
৪-৫ জন পুকুরে নেমেছে মাছ তুলার জন্য মাহির ভাইয়াও তাদের মধ্যে একজন৷ সেন্টু গেঞ্জি পরে মাথায় গামছা বেঁধে মাছ ধরছে। কেয়ার কেনো জানি আজ মাহির ভাইয়ার প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করছে। ভালো লাগাটা একটু বেশিই কাজ করছে। কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের পাড়ে। গ্রামের বাড়ির এটায় সৌন্দর্য পুকুর ভরা মাছ, খেতে সবজি, বাড়ি ভরা মেহমান, আড্ডা এসবের আমেজে ভরপুর পরিবেশ। শহরে এর কিছুই হয় না। বিয়ে মানেই সেজেগুজে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বর বউ কে দেখে ২-১ টা ছবি তুলে খেয়ে বাসায় চলে আসা।
মাহির ভাইয়া মনে হয় কেয়ালে দেখে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছেন। তারপর ও তার মুখে লজ্জামাখা হাসি লেগেই আছে। এই হাসিটায় কেয়াকে বারবার ঘায়েল করে। প্রতিনিয়ত নিজেকে কন্ট্রোল করতে হচ্ছে কেয়াকে। জাল টেনে পুকুরের পাড়ে এসে মাছ তুলছে। একটা অনেক বড় কাতলা মাছ উঠেছে।
মাহির ভাইয়াঃ এই কেয়া এদিকে আসো। এখানে আসছোই যখন এই মাছ তুমি নিয়ে যাও।
কেয়াঃ এত বড় মাছ আমি কিভাবে নিবো?
মাহির ভাইয়াঃ ধরো বললাম।
কেয়াঃ মনে মনে ভাবছে," মাছ তো ধরতেই পারবো কিন্তু মাছের নাড়াচাড়ায় আমি সহ না পানিতে পরে যায়"
মাহির ভাইয়া হয়তো কেয়ার অবস্থা বুঝতে পেরেছেন।
তাই বললেন," তুমি কাছে আসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে মাছ ধরলে মাছ আর তুমি দুজনেই ঠিক মতো বাড়িতে যেতে পারবে।"
কেয়া রীতিমতো অবাক। ওনি কিভাবে জানলো কেয়া এসব ভাবছে। কেয়া ভয়ে ভয়ে ওনার কাছে গেলো।
ওনি কেয়াকে মাছ টা ধরিয়ে দিলেন ঠিক মতো।
সাবধান ও করে দিলেন যেনো না ছাড়ে । ওনিও কেয়ার পিছন পিছন বাকি মাছ গুলো নিয়ে আসলেন। কেয়ার হাতে মাছ দেখে বাড়ির মানুষ হাসাহাসি শুরু করলেন।
এই কাজ যে মাহির ভাইয়ার এটা বুঝতে আর বাকি নেই কারোর।কেয়া মাছ টা অন্য মাছ গুলোর সাথে রেখে দিলো।। ভাগ্য ভালো কেয়া আর মাছ ঠিকঠাক ভাবে বাড়ি আসতে পেরেছে।
মাহির ভাইয়ার আম্মু মানে আমার কাকিয়া ধমক দিয়ে বললেন,
কেয়া শহরের মেয়ে। মাছ ধরে অভ্যস্ত না যদি মাছের কাটায় হাত কাটে তখন তো সবাই রিয়েক্ট করবে। বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে।
মাহির ভাইয়ার এসব কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কিছু একটা বলতে গিয়েও মুচকি হেসে চলে গেলো। এই মানুষ টা অনেক রহস্যময় কখন কি করে বুঝা মুসকিল।
কেয়া গোসল শেষ করে বসে আছে। ভাইয়া এখন বাসায় নেই৷ হয়তো বিকালে গোসল করাবে ভাইয়াকে। মাছটাকে একপ্রকার কোলে করে নিয়ে আসছিলো কেয়া৷ তাই সারা শরীরে মাছের গন্ধ করছে। এজন্য গোসল করে নিয়েছে
বেলা বাজে ২ টা খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরছে। কিন্তু কেয়া তো কোনো শাড়ি নিয়ে আসে নি। এই জীবনে শাড়ি কখনো পরেও নি।
সবার শাড়ি পড়া দেখে নিজেরও খুব শাড়ি পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছু করার নেই৷ সাথীর রুমে গিয়ে কেয়ার ব্যাগ বের করে জামা খুঁজতেছিল, আর ভাবছিল কোনটা পরা যায়।
সাথীর রুমে একটা জানালা আছে," ঐ জানালা দিয়ে মাহির ভাইয়ার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মাহির ভাইয়াই হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।"
মাহির ভাইয়াঃ কেয়া এটায় একটা শাড়ি আছে। আর যা যা দরকার সাথীকে বলো ও তোমায় দিবে। আর সাথী শাড়ি পড়াতে পারে ওকে বলো শাড়িটা তোমায় পরিয়ে দিতে। যদি শাড়ি না পরে জামা পরে বের হয়েছো তাহলে তোমার খবর আছে। আসছি আমি।
শাড়ি কেয়ার হাতে দিয়ে চলে গেলেন
কেয়া রীতিমতো টাশকি খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিসব বলে গেলেন ওনি!
তবে কেয়ার মনটা খুব ভালো হয়ে গেছে। এই মাত্র ভাবছিলো, "আমার শাড়ি থাকলে আমিও পড়তাম।"
এত তাড়াতাড়ি ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে ভাবে নি।
এসব ভাবতে ভাবতে সাথী রুমে আসলো,
কেয়াকে বলছে, কেয়া চলো শাড়ি পরি।
আমার কাছে শাড়ি আছে তোমায় দিচ্ছি।
কেয়ার হাতে ব্যাগ দেখে জিজ্ঞেস করছে, "এটা কি?"
কেয়া নিজেই তো খুলে দেখে নি।
সাথী ব্যাগ টা নিয়ে খুলে দেখছে। একটা কমলা রঙের গোলাপি পাড়ের শাড়ি। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কমলার সঙ্গে গোলাপি রঙ খুব মানিয়েছে।
সাথীঃ তুমি শাড়ি নিয়ে আসছো। চলো পরিয়ে দেয়।
দুজনেই শাড়ি পরে সেজেগুজে বের হলো। সবাই তাদের প্রশংসা করছেন। কেয়ার আম্মু, কাকিয়া ওদের সামনে যেতে লজ্জা লাগছিলো। জীবনে প্রথম শাড়ি পরেছে কেয়া, কেমন জানি আনইজি লাগছিলো৷
কেয়ার আম্মু দেখে বললেন," মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। জীবনে প্রথমবার আমার মেয়েটা শাড়ি পরলো।"
বাহিরে গাছের নিচে কেয়ার আব্বু চাচ্চু আরও কয়েকজন বসে গল্প করছেন। আব্বু চাচ্চুরাও কেয়াকে দেখে মাশাআল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পরলেন।
কেয়ার মন শুধু মাহির ভাইয়াকে খুঁজছেন। কেয়া আর সাথী গেইটের কাছে গিয়ে ছবি তুলছে। মাহির ভাইয়ার ফোনেই ছবি তুলছে। সাথীর ফোন নেই। সাথীকে ফোন কিনে দিবে বলেছে৷ তখন তো আর এই মুহূর্ত থাকবে না তাই সাথী মাহির ভাইয়ার ফোন এনে কেয়া আর সাথীর ছবি তুলছে।
হঠাৎ মাহির ভাইয়া একটা কমলা রঙের পাঞ্জাবি আর একটা সাদা প্যান্ট পরে বের হলেন। চোখে আবার সানগ্লাসও পরলেন। পুরাই নায়ক লাগছিলো। কেয়াদের কাছে আসছেন।
মাহির ভাইয়াঃ কিরে ছবি তুলা হলো তোদের । আমায় কয়েকটা ছবি তুলে দে তো।
সাথী মাহির ভাইয়ার কয়েকটা ছবি তুলে দিলো৷ পরে মাহির ভাইয়া ফোনটা কেয়ার হাতে দিয়ে বললেন, "আমাদের দুই ভাই বোনের ছবি তুলে দাও তো।
কেয়াও যথারীতি তুলে দিলো৷
তারপর ছবিগুলো দেখে মাহির ভাইয়া সাথীকে ফোনটা দিলো,
কেয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, আমা আর কেয়ার ছবি তুলে দে।
কথাটা শুনা মাত্রই হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে কেয়ার। মাহির ভাইয়া কেয়ার সাথে ছবি তুলবেন। কিছু ভাবতে পারছে না কেয়া।
সাথী ডেকে বললো, "এই কেয়া ঠিকমতো দাঁড়াও।"
কেয়াও ভদ্র মেয়ের মতো ওনার পাশে দাঁড়ালো । ওনার পাশে দাঁড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু কেয়ার হৃৎস্পন্দন বেড়ে শরীর ঘামতে শুরু করেছে।এর মধ্যে ছবি তুলা শেষ। ৩ জনে কয়েকটা সেলফি তুললেন।
তারপর কেয়া আর সাথী বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। কেয়া সোজা সাথীর রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে বসে পড়লো। এখনো শরীর ঘামতেছে কেয়ার ।
কেয়া অনুভব করতে পারছে সে মাহির ভাইয়ার প্রতি অসম্ভব দূর্বল হয়ে গেছে। ওনি কেয়ার কাছাকাছি আসলে কেয়ার মনের ভিতরে কি যেনো ছুটোছুটি করতে থাকে।
বোনের সাথে ভাই ছবি তুলতেই পারে এটা কোনোভাবেই মনকে বুঝাতে পারছে না কেয়া।
চলবে.........
#ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ