01/06/2024
***********কুরবানীর প্রসঙ্গে হাদিস****************
• عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا " .
*অনুবাদ:* হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ক্বুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।(ইবনে মাজাহ শরীফ হাদীস নং ৩১২৩)
*সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি কেউ কুরবানী না দেয় সে ব্যক্তি গুনহাগার হবে
🌹🌹7️⃣8️⃣6️⃣/9️⃣2️⃣🌹🌹
*অবসর সময়ে মাত্র ৫ মিনিটে নিজের জায়গায় বসে থেকেই হাতে মোবাইল ধরে কুরবানী সংক্রান্ত ২২ টি জরুরী মসলা জেনে নিন*।
*তোহফায়ে ঈমানী বা মাসায়েলে কুরবানী*
*কুরবানীর কিছু খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল*।
১/ ধনী মুসলমানদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব, ফরজও নয় সুন্নাতও নয় এটাই সঠিক।
তবে হ্যাঁ প্রিয় নবী হুযূর আলাইহিস সালামের উপর কুরবানী করা ফরজ ছিল,
এটা তাঁর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
২/ বিশ্ব নবী হুযূর আলাইহিস সালাম মদীনা শরীফে থাকা কালীন প্রতি বছর নিজে কুরবানী করতেন এবং যে সমস্ত পারক ব্যক্তি কুরবানী করতেন না, তাদের উপর অসন্তুষ্ট হতেন।
৩/ কুরবানী যবেহ করার সময় শুধু "বিসমিল্লাহ" বলা ফরজ, তার সাথে "আল্লাহু আকবার" বলা মুস্তাহাব।
৪/ কুরবানীর পশু নিজে যবেহ করা উত্তম, যদি নিজে না জানে বা না পারে, তাহলে অন্য লোককে দিয়ে যবেহ করাবে, তবে সেখানে নিজে উপস্থিত থাকা উত্তম।
৫/ কুরবানীর পশুকে শুইয়ে দেওয়ার পর তার সামনে ছুরি ইত্যাদিতে শান দেওয়া ঠিক নয়।
৬/ উটের কুরবানী করা সব চাইতে উত্তম, তার পর গরু উত্তম, তার পর ছাগল তার পর ভেঁড়া।
৭/ নূর নবী হুযূর আলাইহিস সালাম মক্কা শরীফে থাকা কালীন কোন দিন ঈদুল আযহার কুরবানী করেননি। তার কারণ,তখন কুরবানী করা ওয়াজিব হওয়ার হুকুম হয়নি।
৮/ দুম্বা এবং ভেঁড়ার মোটা তাজা ৬ মাসের বাচ্চা,যদি দেখতে ১ বছরের মত মনে হয়, তাহলে তার কুরবানী দেওয়া জায়েয হবে।
৯/ প্রাক ইসলাম যুগে কুরবানীর (পশু উৎসর্গ করার) প্রথা ছিল, কিন্তু কুরবানী করে কুরবানীর মাংস খাওয়া হারাম ছিল।
কুরবানী করার পর যবেহ কৃত পশুকে গায়েবী আগুন এসে পুড়িয়ে দিত।
ঐ যুগে কুরবানী কবুল হওয়ার এটাই লক্ষন ছিল।
১০/ কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুকে কুরবানী দাতার নেকীর পাল্লায় রেখে দিয়ে তার নেকীর পাল্লা ভারী করে দেওয়া হবে।
১১/ কিয়ামতের দিন সহজে পুলসিরাত পার হওয়ার জন্য কুরবানীর পশুকে কুরবানী দাতার জন্য যানবাহন বানিয়ে দেওয়া হবে।
১২/ কুরবানীর পশুর দেহের প্রতিটি অঙ্গ কুরবানী দাতার দেহের প্রতিটি অঙ্গের গুনাহের বদলা ( কাফ্ফারা ) হয়ে দাঁড়াবে।
১৩/ দয়াল নবী সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে গরীব মানুষের মাঝে কুরবানীর পশু বিতরণ করতেন।
এখনও যদি ধনী লোকেরা কুরবানীর পশু দান স্বরুপ বিতরণ করেন,তাহলে সেটা নেওয়া ও কুরবানী করা অবশ্যই জায়েয হবে, তবে বদ আক্বিদা ও বদ মাযহাবদের নিকট থেকে কুরবানীর পশু নেওয়া হারাম।
১৪/ মহা নবী সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাতের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিয়েছেন।
এখনও বহু ভাগ্যবান মুসলমান দয়ার নবীর নামে কুরবানী করে থাকেন,এটা অবশ্যই জায়েয।
১৫/ হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করতে নিয়ে যান, তখন হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বয়স ছিল ৭ অথবা ১৩ বছর।
১৬/ মক্কা শরীফ থেকে দুই মাইল দুরে মিনা মাঠে হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
১৭/ একটি বর্ণনা অনুযায়ী হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের গলায় ৭০ বার ছুরি চালিয়ে ছিলেন তবুও তাঁর গলা কাটেনি কেননা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার নিষেধ ছিল।
১৮/ হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে জান্নাত থেকে যে দুম্বাটি এসেছিল, তার নাম ছিল "জারির"।
লালচে সাদা রং এর দুম্বা,তার দেহে মাংস ছাড়া যেমন- হাড় নাড়িভুঁড়ি ও মল ইত্যাদি কিছুই ছিল না। দেখতে হাতির সমান, মিনা প্রান্তরে স্বাবির নামক একটি পাহাড়ের ধারে একটি বাবলার গাছে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।
আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাযরাত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে ঐ দুম্বাটিকে কুরবানী করেন।
১৯/ হাযরাত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ঐ দুম্বাটি যবেহ করে তার মাংস পশু পাখিকে খাইয়ে দেন। কেননা দুম্বাটি ছিল জান্নাতী,পৃথিবীর আগুন জান্নাতী পশুর মাংস রান্না বা সিদ্য করতে পারবে না।
২০/ যে সমস্ত মুসলমান কুরবানীর দিনগুলিতে সাহিবে নেসাবের আওতায় পড়বেন, অর্থাৎ- ধনীর তালিকায় পড়বেন, তারা যদি জ্ঞানী হন পাগল না হন, সাবালক হন নাবালক না হন, স্থানীয় হন মুসাফির না হন,তাহলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাদের সকলের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
২১/ কুরবানীর তারিখগুলিতে রাতে কুরবানী করলেও কুরবানী হয়ে যাবে তবে এটা না করা-ই করে ভালো।
২২/ মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়,তবে নফল হিসাবে করলে অবশ্যই নেকী পাবে।
বিস্তারিত জানতে দেখুন- মিরয়াতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ ২য় খঃ,
ইসলামী তাক্বরীবাত ও ইসলামী হায়রাত আঁগেয মা'লুমাত ইত্যাদি কিতাবাদি কুরবানীর বয়ান।
━━━━━━ • পর্ব-০১ • ━━━━━━
❏❏ কুরবানীর ফযীলত
☞ কুরবানীর জন্তুর শরীরে যত পশম থাকে, প্রত্যেকটা পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী পাওয়া যায়।
☞ কুরবানীর দিনে কুরবানী করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত।
❏❏ কাদের উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব
☞ ১০ই যিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ই যিলহজ্জের সন্ধা পর্যন্ত অর্থাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর/ফিতরা ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ/সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
☞ মুসাফিরের উপর (সফরের হালতে থাকলে) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়না।
☞ কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানীর ছওয়াব পাওয়া যাবে।
☞ কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে।
☞ যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
☞ কোন মকসূদের জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মকসূদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব হোক বা ধনী) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
☞ যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানী না করলে কুরবানীর দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
❏❏ কোন কোন জন্তু দ্বারা কুরবানী করা দুরস্ত আছে
☞ বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা গাভী, ষাড়, বলদ, মহিষ, উট এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তু দ্বারা কুরবানী করা দুরস্ত।
❏❏ কুরবানীর জন্তুর বয়স প্রসঙ্গ
☞ বকরী, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে। তবে ভেড়া, ভেড়ী ও দুম্বার বয়স যদি কিছু কমও হয় কিন্তু এরূপ মোটা তাজা হয় যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে; তবে অন্ততঃ ছয় মাস বয়স হতে হবে। বকরীর ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম নেই। বকরী কোন অবস্থায় এক বৎসরের কম বয়সের হতে পারবে না।
☞ গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে।
☞ উটের বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে।