জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সবার প্রতি রইলো কৃষ্ণপ্রীতি ও শুভেচ্ছা।
07/01/2022
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম চরণ যুগল 🙏❤️
প্রভুর চরণ দর্শন করার পর প্রণাম করে
"হরেকৃষ্ণ" লিখতে ভুলবেন না।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম চরণ যুগল 🙏❤️
24/12/2021
02/07/2021
জয় মা 💗
দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির ।। Dakshineswar Kali Temple
23/06/2021
পানিহাটিতে অবস্থিত শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পন্ডিতের শ্রীপাটের মাধবীলতা কুঞ্জে আছে রাঘব পন্ডিতের সমাধি। তাঁর পুজিত মদনমোহন বিগ্রহের নিত্য পূজা হয়ে থাকে।
" রাঘব পন্ডিতের প্রাণ।
নিতাই গৌর রাধেশ্যাম।। "
মহাপ্রভু নীলাচল যাওয়ার পরে প্রতিবছর রথের সময় রাঘব পন্ডিতের বাল্য বিধবা ভগিনী দময়ন্তী দেবীর তত্বাবধানে রাঘব ভবন থেকে ঝোলায় করে প্রভুর প্রিয় খাদ্যদ্রব্য শ্রীক্ষেত্র পাঠানো হতো। এর নাম “রাঘবের ঝালি”।
এখনও সেই রীতি মেনে প্রতিবছর রথযাত্রার সময় পানিহাটি থেকে "রাঘবের ঝালি" যায়।
অনুবাদ :
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, প্রভু নিত্যান্দ, শ্রীঅদ্বৈত আচার্য, শ্রীগদাধর এবং
শ্রীবাস আদি গৌরভক্তবৃন্দের জয় হোক।
28/05/2021
25/05/2021
Radhe Radhe 💗
24/05/2021
প্রভুর চরণ দর্শন করার পর প্রণাম করে
"হরেকৃষ্ণ" লিখতে ভুলবেন না।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম চরণ যুগল 🙏❤️
প্রভুর চরণ দর্শন করার পর প্রণাম করে
"হরেকৃষ্ণ" লিখতে ভুলবেন না।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম চরণ যুগল 🙏❤️
13/05/2021
10/05/2021
পরমকরুনাময় সচ্ছিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সবার জীবন সুন্দরময়,কল্যাণময় আর মঙ্গলময় করুণ।❤️
01/05/2021
"জয় রাধামাধব জয় কুঞ্জবিহারী" 💕
আমি সেই পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করি, যাঁর অক্ষিযুগল পদ্মের ন্যায়, নবজলধরের ন্যায় গাত্রবর্ণ, বিদ্যুতের মতো দ্যুতিময় পোশাক, যাঁর দুটি বাহু এবং যাঁর গলে সুন্দর বনমালা আর যিনি হাতের জ্ঞান মুদ্রা প্রদর্শনের দ্বারা দিব্য জ্ঞান নির্দেশ করছেন। সেই শ্রীকৃষ্ণ সমুজ্জ্বল ভূষণের দ্বারা সজ্জিত এবং শ্রীমতী রাধারাণীর সকল গোপ সখীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন। শ্রীমতী রাধারাণী কর্তৃক আলিঙ্গিত হয়ে তাঁর আনন্দঘন রূপ প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিভুজাকৃতি ঘন নীলাভ কৃষ্ণবর্ণের শ্রীকৃষ্ণ সকল দেবদেবীদের ঈশ্বর এবং অপার্থিব আনন্দে পরিপূর্ণ তার কলেবর।
মাঘমাসস্য শেষে বা প্রথমে ফাল্গুনস্য চ।
কৃষ্ণা চতুর্দশী সা তু শিবরাত্রি-চতুর্দশী।।
মাঘমাসের শেষে বা ফাল্গুন মাসের প্রথমে যে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী, তাই শিবরাত্রি। বিশ্বাস, শিবরাত্রিতে যথাযথ নিয়ম মেনে বিল্বপত্র সহযোগে পুজো করলে ভগবান তুষ্ট হন।
পূজা পদ্ধতি অনুযায়ী, রাত্রে চার প্রহরে চারবার পুজো করতে হয় শিবলিঙ্গে। মতান্তরে, চার প্রহরে চারবার পুজো করতে কেউ অক্ষম হলে প্রথম প্রহরেই পরপর চারবার শিবপূজা করে নেওয়া যেতে পারে। পাষাণ নির্মিত অথবা পার্থিব শিবলিঙ্গ প্রতিবারে গড়ে নিতে হবে।
শিবরাত্রি যাঁরা পালন করছেন, তাঁরা ভক্তিভরে, শুদ্ধচিত্তে পূজার জন্য প্রস্তুত হবেন। প্রত্যেক প্রহরে স্নান ও অর্ঘ্যদানের সময় আলাদা আলাদামন্ত্র পড়তে হবে।
Be the first to know and let us send you an email when শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু - Sri Chaitanya Mahaprabhu posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.
Videos
দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির ।। Dakshineswar Kali Temple
জয় মা 💗
দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির ।। Dakshineswar Kali Temple
"জয় রাধামাধব জয় কুঞ্জবিহারী" 💕
"জয় রাধামাধব জয় কুঞ্জবিহারী" 💕
আমি সেই পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করি, যাঁর অক্ষিযুগল পদ্মের ন্যায়, নবজলধরের ন্যায় গাত্রবর্ণ, বিদ্যুতের মতো দ্যুতিময় পোশাক, যাঁর দুটি বাহু এবং যাঁর গলে সুন্দর বনমালা আর যিনি হাতের জ্ঞান মুদ্রা প্রদর্শনের দ্বারা দিব্য জ্ঞান নির্দেশ করছেন। সেই শ্রীকৃষ্ণ সমুজ্জ্বল ভূষণের দ্বারা সজ্জিত এবং শ্রীমতী রাধারাণীর সকল গোপ সখীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন। শ্রীমতী রাধারাণী কর্তৃক আলিঙ্গিত হয়ে তাঁর আনন্দঘন রূপ প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিভুজাকৃতি ঘন নীলাভ কৃষ্ণবর্ণের শ্রীকৃষ্ণ সকল দেবদেবীদের ঈশ্বর এবং অপার্থিব আনন্দে পরিপূর্ণ তার কলেবর।
#হরেকৃষ্ণ #শ্রীকৃষ্ণ #ভগবানশ্রীকৃষ্ণ
#HoreKrishno #SriKrishno #BhogobanSriKrishno
#জয়শ্রীরাধাকৃষ্ণ #রাধেরাধে #হরিবল
#JoySriRadhaKrishno #RadheRadhe #Horibol
#হরেকৃষ্ণ #শ্রীকৃষ্ণ #ভগবানশ্রীকৃষ্ণ
#HoreKrishno #SriKrishno #BhogobanSriKrishno
#জয়শ্রীরাধাকৃষ্ণ #রাধের
🔱🔱🙏ওঁ নমঃ শিবায়🙏🔱🔱 ❤️HAR HAR MAHADEV❤️
J𝖆𝖎 B𝖍𝖔𝖑𝖊 B𝖆𝖇𝖆 🔱
|| हर हर महादेव || || सब शिव है || J𝖆𝖎 B𝖍𝖔𝖑𝖊 B𝖆𝖇𝖆 🔱
J𝖆𝖎 B𝖍𝖔𝖑𝖊 B𝖆𝖇𝖆 🔱
|| हर हर महादेव || || सब शिव है || J𝖆𝖎 B𝖍𝖔𝖑𝖊 B𝖆𝖇𝖆 🔱
|| हर हर महादेव || || सब शिव है || J𝖆𝖎 B𝖍𝖔𝖑𝖊 B𝖆𝖇𝖆 🔱
|| हर हर महादेव || || सब शिव है || J𝖆𝖎 B𝖍𝖔𝖑𝖊 B𝖆𝖇𝖆 🔱
চৈতন্য, শ্রী (১৪৮৬-১৫৩৩) প্রকৃত নাম বিশ্বম্ভর মিশ্র। কৃষ্ণ চৈতন্য নামেও তিনি পরিচিত। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ থেকে রূপান্তরিত এক ধর্মবেত্তা, যিনি তাঁর স্বকীয় ভক্তির মাধ্যমে বাংলা ও উড়িষ্যার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। বৈষ্ণব বংশ পরম্পরার পঞ্চম পর্যায় অর্থাৎ গৌড়ীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব তাঁর, যা বর্তমানে উত্তর ভারত ও বাংলাদেশের বৈষ্ণব সমাজের ধর্মজীবনে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।
চৈতন্যের জীবনের প্রথমার্ধ নদীয়া জেলার (পশ্চিমবঙ্গের) নবদ্বীপে অতিবাহিত হয়। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে তিনি ভারতের সকল তীর্থ ভ্রমণ করেন, তারপর ফিরে আসেন উড়িষ্যায়, যেখানে শুধু ব্রজ অঞ্চলে একটি সংক্ষিপ্ত সফর বাদ দিলে তাঁর জীবনের বাকি সময় স্থায়িভাবে কাটান। পুরীতে বাসকালে তিনি ক্রমশ জড়ো হওয়া বহু সংখ্যক পন্ডিত, গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী, এমনকি প্রজাপতি রাজা প্রতাপ রুদ্রের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। বাংলার ভক্তবৃন্দ তাঁকে ধরাধামে আবির্ভূত স্বয়ং ভগবান অর্থাৎ কৃষ্ণ হিসেবে জ্ঞান করে প্রতিবছর, তাঁর কাছে আসত। এ মাহাত্ম্যে তাঁর জীবনকাহিনী বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে দুটি উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছে। প্রথমত, আধ্যাত্মিক উপস্থিতির মূর্ত প্রকাশরূপে এবং দ্বিতীয়ত, ভক্তির আদর্শ হিসেবে। কারণ, তাঁর শিক্ষা ও ব্যক্তিগত আদর্শই ধর্মতত্ত্ব ও ধর্মীয় আচারাদির মৌলিক নীতিসমূহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এবং বর্তমানে সেগুলি গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে প্রাধান্য লাভ করেছে। ষোল শতকে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় আড়াই লক্ষেরও বেশি চরণে রচিত পুঁথিগুলিতে তাঁর কর্মকান্ড লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এসব বিবরণে বিধৃত ঐতিহ্য তাঁর জীবনের মূল রূপরেখার সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
নদীয়া জেলায় নবদ্বীপ শহরে ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের (১৪০৭ শকাব্দ) ফাল্গুন মাসের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) চন্দ্রগ্রহণের রাতে এক শুভ লগ্নে চৈতন্য জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জগন্নাথ মিশ্র সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ গ্রাম থেকে আগত, আর তাঁর মা শচী ছিলেন নীলাম্বর চক্রবর্তী নামের এক সিলেটি ব্রাহ্মণের কন্যা। প্রথাগতভাবে চৈতন্য লালিত-পালিত হন। বেশ কিছু আখ্যানে শ্রী কৃষ্ণের শৈশবের সঙ্গে চৈতন্যের শৈশবের বেশ মিল দেখানো হয়েছে। তাঁর ডাক নাম রাখা হয় নিমাই (অপদেবতার অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য ব্যবহূত নিম পাতা থেকে জাত একটি আদুরে ক্ষুদ্র নাম) এবং গৌর বর্ণের জন্য গৌর অথবা স্বর্ণ কান্তি রঙ, যা পরবর্তী সময়ে রাধার স্মারক রূপে গৃহীত হয়েছে। বিষ্ণু পন্ডিত চৈতন্যকে হাতেখড়ি দেন এবং উচ্চতর পড়াশোনার জন্য তিনি গঙ্গা দাসের সংস্কৃত টোলে যান। সেখানকার ঐতিহ্য তাঁকে বড় পন্ডিত হিসেবে গড়ে তোলে। বিভিন্ন তথ্য থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, অতি অল্প বয়স থেকেই তিনি অনন্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এবং যেখানেই তিনি গেছেন সেখানেই লোকজনকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। স্থানীয় পন্ডিত বল্লভ আচার্যের কন্যা লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁর পরিণয়ের অল্প দিন পরেই তিনি তাঁর নিজের টোল খোলেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ববঙ্গে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে যান। তাঁর বড় ভাই বিশ্বরূপ ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষা নিয়ে ‘শঙ্করারণ্য’ নাম গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর গৃহত্যাগে নিঃসন্দেহে বিশ্বম্ভরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। যখন বিশ্বম্ভর পূর্ববঙ্গে ভ্রমণরত তখন তাঁর তরুণী স্ত্রী সাপের কামড়ে মারা যান। ফিরে আসার অল্পদিনের মধ্যে চৈতন্য স্থানীয় পন্ডিত সনাতন মিশ্রের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। বাইশ বছর বয়সে যুবক চৈতন্য তাঁর মৃত পিতার পিন্ড দানের জন্য গয়া তীর্থে যান। সেখানে প্রখ্যাত বৈষ্ণব সাধক ও সন্ন্যাসী ঈশ্বরপুরীর সঙ্গে বিশ্বম্ভর একাকী সাক্ষাৎ করেন এবং সে সাক্ষাতের পর তিনি কৃষ্ণপ্রেমের উন্মাদনায় শিহরিত এবং চিরদিনের জন্য রূপান্তরিত এক নতুন মানুষরূপে উদ্ভূত হন।
গয়া থেকে ফিরে, বিশ্বম্ভর সহসা নবদ্বীপের ভক্তিকেন্দ্রে প্রবেশ করেন, যেখানে তাঁর ব্যক্তি আকর্ষণ কৃষ্ণ ভক্তের একটি ক্ষুদ্র দলকে প্রবলভাবে উজ্জীবিত করে। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম বিহবলতার এমন এক উন্মাদনা সৃষ্টি হয় যে, ভক্তি ভাবাবেশে বুদ্ধিবৃত্তিক বিচ্যুতি আরও বাড়তে থাকে এবং বিশ্বম্ভরকে টোল বন্ধ করে দিতে হয়। শান্তিপুরের অতি শ্রদ্ধেয় ভক্ত পন্ডিত অদ্বৈত আচার্য বিশ্বম্ভরের মধ্যে দেবতার লক্ষণ দেখতে শুরু করেন। এ স্বীকৃতিসহ, মাঝে মাঝে অনুষ্ঠিত বৃন্দ নাচ-গানের আসর, যা কীর্তন নামে পরিচিত, শীঘ্রই নৈশকালীন কর্মসূচিতে পরিণত হয়; ভক্তরা বিশ্বম্ভরের প্রতিবেশী প্রখ্যাত শ্রীবাসের বাড়ির উঠানে সমবেত হতে থাকে। অবধূতী মার্গের সন্ন্যাসী নিত্যানন্দ এ অনুগামী ভক্তের দলে যোগ দেন এবং বছরের কোন এক সময় প্রখাত ভক্তবৃন্দ, যেমন নরহরি সরকার, গদাধর ও চৈতন্যের প্রথম চরিতকার মুরারি গুপ্তকে অর্ন্তভুক্ত করে মূল বৈষ্ণব সমাজ গঠিত হয়। বৃন্দাবন দাসের সুবৃহৎ গ্রন্থ চৈতন্য ভাগবত বিশ্বম্ভরের ভগবদ্ভক্তির তাড়িত প্রভাবের বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। এতে আরও দেখা যায়, ওই দলবদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উন্মাদনার প্রকাশ, যার লক্ষণগুলি হলো রোদন, স্বেদনির্গমন, মূর্ছা, অট্টচিৎকার এবং আরও অনেক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, যেগুলি মৃগীরোগগ্রস্ত মানুষের বিকারের অনেকটাই কাছাকাছি। এ বিশিষ্ট লক্ষণগুলি পরবর্তীকালে সত্যিকারের ভক্তির অনিয়ন্ত্রিত লক্ষণরূপে প্রকাশ পায়। কীর্তনের আসরগুলির হৈহুল্লোড় আপাতভাবে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বিরক্তি উৎপাদন করেছিল বলে মনে হয়, বিশেষ করে কীর্তন যখন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে; অন্তত স্থানীয় কাজীর সঙ্গে বিবাদের একটি ঘটনায় এবং অন্যটি দেবীর উপাসক স্থানীয় শাক্ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে। সম্ভবত এসব আশঙ্কার কারণে বিশ্বম্ভর অনতিবিলম্বে ঘোষণা করেন যে, যারা সামাজিকভাবে একে ধ্বংসকারিরূপে দেখেছে তারা তাঁর আরাধনাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেনি। তাই ভক্তি মাহাত্ম্য বজায় রাখার জন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করবেন বলেও ঘোষণা দেন। নিকটবর্তী কাটোয়া শহরে ছিলেন সন্ন্যাসী কেশব ভারতী। তিনি চবিবশ বছর বয়সী বিশ্বম্ভরকে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে (১৪৩১ শকাব্দ) সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষা দেন। বিশ্বম্ভরের নতুন ধর্মীয় নাম হয় কৃষ্ণচৈতন্য, যিনি পৃথিবীকে কৃষ্ণ সম্পর্কে অবহিত করাবেন। কৃষ্ণচৈতন্য নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। চৈতন্যের সন্ন্যাস গ্রহণের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর মা শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্যের গৃহে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এবং শোকাতুরা জননী তাঁর কাছ থেকে এ শপথ আদায় করে নেন যে, চৈতন্য পুরীতেই বাস করবেন। নিত্যানন্দ ও অন্যান্যদের নিয়ে চৈতন্য ঈশ্বরোন্মাদ দশায় ওই শহরের দিকে যাত্রা করলেন।
পুরী ছিল গজপতি রাজাদের রাজধানী। এটি ছিল পূর্ব ভারতে বৈষ্ণবদের সর্বশেষ প্রধান ঘাঁটি এবং ভাই বলরাম ও বোন সুবলাসহ দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দেবের মহান দারুমূর্তির ধাম। নগরে প্রবেশের পরপরই চৈতন্যের কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হলো মূলত নবদ্বীপে শিক্ষাপ্রাপ্ত নব্যন্যায় পন্ডিত প্রখ্যাত বৈদান্তিক বাসুদেব সার্বভৌম ভট্টাচার্যকে বৈষ্ণবধর্মে ধর্মান্তরকরণ। এ সুকীর্তি চৈতন্য ও তাঁর অনুসারী ভক্ত দলের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করেছিল এবং সুস্পষ্টভাবে রাজার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এর পরে তাঁর আরও কৃতিত্ব হলো আরেক বড় পন্ডিত প্রকাশানন্দকে ধর্মান্তরকরণ। একজন সঙ্গীকে নিয়ে চৈতন্য পুরী ত্যাগ করে দক্ষিণে কমরীণ অন্তরীপের শেষ মাথায়, তারপর পশ্চিম উপকূলে এবং মধ্য ও উত্তর ভারতে তীর্থভ্রমণে যান। কলিঙ্গে তিনি সাহচর্য লাভ করেন বিখ্যাত ভক্ত পুরুষ ও রাজমন্ত্রী রামানন্দ রায়ের, যিনি চৈতন্যের মধ্যে শুধু কৃষ্ণ হিসেবে দেবত্ব দেখতে চান নি, বরং চৈতন্যকে মিলনে-বিরহে রাধাকৃষ্ণের একক সত্তারূপে অনুভব করেছিলেন। এ ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটিই আজ পর্যন্ত বৈষ্ণব ঐতিহ্যে প্রভাব বিস্তার করে আছে।
অনেক বছর তীর্থযাত্রার ফলরূপে চৈতন্য রঘুনাথ ভট্ট ও গোপাল ভট্টকে ভক্ত হিসেবে গ্রহণ করেন, তাঁদের পাঠিয়ে দেন ব্রজধামে, যেখানে আগেই লোকনাথ ও ভূগর্ভকে পাঠানো হয়েছিল। পুরীতে ফিরে এসে তিনি আবার বৃন্দাবনে যান। পথিমধ্যে দুই অনন্যসাধারণ ভক্ত রূপ ও সনাতনকে দীক্ষা দেন। রূপ ও সনাতন কিছুকাল আগেও বাংলার সুলতান হোসেন শাহের দরবারে কর্মচারী ছিলেন, কিন্তু চৈতন্যের ভক্ত দলে যোগদানের জন্য পালিয়ে আসেন। পরে তাঁরাই চৈতন্যের দীক্ষামন্ত্রকে ব্রজকেন্দ্রিক গোস্বামী কুলের দ্বারা বিকশিত গৌড়ীয় ধর্মতত্ত্বের ভিত্তিতে রূপ দেন। ব্রজধামে থাকাকালে চৈতন্য কৃষ্ণাবতারে ধরাধামে আগমনের বিস্তৃত স্থানগুলি চিনতে পারেন। তীর্থকেন্দ্র হিসেবে ব্রজের পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং মন্দির স্থাপন করে এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে তিনি তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দেন। যখন তিনি পুরীতে ফিরে আসেন তখন বাংলার ভক্তরা জগন্নাথের প্রায় বিশটি বার্ষিক রথযাত্রা উৎসবের প্রথমটির আয়োজন করেছিল। চৈতন্য আরও একবার বৃন্দাবন তীর্থে যেতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে পুরীতে ফিরে আসেন এবং বাকি জীবন তিনি কখনও আর পুরী ছেড়ে যান নি।
প্রায় তিরিশ বছর বয়সে তাঁর অবশিষ্ট জীবনের রীতিনীতি স্থিত হয়। বলা হয় কাশীশ্বর মিশ্রের দেওয়া একটি অপরিসর অঙ্গনে তিনি বাস করতেন। এখানে থেকে প্রতিদিন জগন্নাথ মন্দির দর্শন এবং ভক্তবৃন্দের সাথে কীর্তন, কৃষ্ণনাম জপ, ভাগবত পুরাণ শোনা ও বর্ণনা করা এবং জয়দেব এর গীতগোবিন্দ ও অন্যান্য রচনা থেকে গান গাওয়ার জন্য তিনি বের হতেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ এর চৈতন্য চরিতামৃত প্রধানত পুরীবাসের এ বছরগুলিতে স্বরূপ দামোদর, রূপ, সনাতন, রঘুনাথ দাস, জগদানন্দ এবং যবন হরিদাস প্রমুখ, যাঁরা চৈতন্যের চারপাশে জড়ো হয়েছিলেন এমন বিখ্যাত ভক্তদের প্রতি উদাহরণ সহযোগে তাঁর শিক্ষা দানের ঘটনাবৃত্তান্ত বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছে। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দের (১৪৫৫ শক) আষাঢ় মাসের (জুন-জুলাই) কোন এক সময়ে চৈতন্যের মহাপ্রয়াণ হয়; তবে এ-সম্পর্কিত পুরো বিবরণ জানা যায় না। ধর্মপ্রাণ ভক্তের বিবেচনায় তাঁর মৃত্যু হয় নি, তিনি শুধু স্বর্গে ফিরে গেছেন। ভক্তিধর্ম প্রসঙ্গে মাত্র আটটি সংস্কৃত শ্লোক রেখে গেলেও কৃষ্ণচৈতন্য একজন মহান ধর্মসংস্কারক ও অবতাররূপে বাংলা ও ভারতের সর্বত্র শ্রদ্ধেয় মহাপুরুষ। এর মূলে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সকল ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে চৈতন্য প্রবর্তিত মতের গভীরতম শিহরণমূলক ও মননগত সৃষ্টিশীল অনুপ্রেরণা। [টনি কে. স্টুয়ার্ট]
গ্রন্থপঞ্জি Bimanbihari Majumdara, Sri Chaitanyacaritera Upadana, Calcutta, 1959; Sushil Kumar De, Early History of the Vaisnava Faith and Movement in Bengal, Calcutta, 1961; AK Majumdar, Chaitanya: His Life and Doctrine (A Study in Vaisnavism), Bombay, 1969; Edward C Dimock and Tony K Stewart, ‘Introduction’ to The Caitanya Caritamrta of Krsnadasa Kaviraja (Trans. and Ed by Tony K Stewart), Harvard Oriental Series, No. 56, Cambridge, MA, 1999.