13/06/2023
#ধর্ম অর্থাৎ ধারণ করা।
যাহা পবিত্র, যাহা নিঃস্বার্থ।
বস্তুর গুন হচ্ছে বস্তুর ধর্ম।
যখন যেই ব্যক্তি ধর্ম ধারণ করে আর ধর্ম সেই ব্যক্তিকে রক্ষা করে, তাহাই ধর্ম।
মানুষকে অনন্য মানুষের সাথে, সকল জীবের সাথে ও সমগ্র সৃষ্টির সাথে একাত্ত হয়ে বাচার জ্ঞান দেয়। অর্থাৎ, ধর্ম মানুষের সমস্ত সংঘর্ষ বিনাশ করে।
ধর্মের আধার-
• জ্ঞান (সত্য জ্ঞান অর্জন )
• প্রেম (সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা)
• ন্যয় (অন্যায় ত্যাগ ও ন্যায় ধারণ)
• সমর্পণ (ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ)
• ধৃতি (ধৈর্য্য ধারণ করা)
🔷 অতএব, সত্য ধর্ম আর মিথ্যা অধর্ম।
জীবে প্রেম দেও, ঘৃণা নয়।
অন্যায় ত্যাগ করে ন্যায় ধারণ করো।
অহংকার নয়, স্নেহ ধারণ করো। করুণাশীল হও।
ক্রোধ ত্যাগ করে ক্ষমাশীল হও।
ধৈর্য্য ধারণ করো। সৃষ্টির রক্ষা ও মঙ্গল হেতু কর্ম করো।
সত্ আচরন ও সত্য জ্ঞান ধারণ করো।
ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ হও।
🔷 পৃথিবীতে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি জীবও দুঃধর্ম অর্থাৎ ধারণ করা।
যাহা পবিত্র, যাহা নিঃস্বার্থ।
বস্তুর গুন হচ্ছে বস্তুর ধর্ম।
∆ যখন যেই ব্যক্তি ধর্ম ধারণ করে আর ধর্ম সেই ব্যক্তিকে রক্ষা করে, তাহাই ধর্ম।
মানুষকে মানুষের সাথে, সকল জীবের সাথে ও সমগ্র সৃষ্টির সাথে একাত্ত হয়ে বাচার জ্ঞান দেয়। অর্থাৎ, ধর্ম মানুষের সমস্ত সংঘর্ষ বিনাশ করে।
ধর্মের আধার-
• জ্ঞান (সত্য জ্ঞান অর্জন )
• প্রেম (সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা)
• ন্যায় (অন্যায় ত্যাগ ও ন্যায় ধারণ)
• সমর্পণ (ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ)
• ধৃতি (ধৈর্য্য ধারণ করা)
🔷 অতএব, সত্য ধর্ম আর মিথ্যা অধর্ম।
জীবে প্রেম দেও, ঘৃণা নয়।
অন্যায় ত্যাগ করে ন্যায় ধারণ করো।
অহংকার নয়, স্নেহ ধারণ করো। করুণাশীল হও।
ক্রোধ ত্যাগ করে ক্ষমাশীল হও।
ধৈর্য্য ধারণ করো। সৃষ্টির রক্ষা ও মঙ্গল হেতু কর্ম করো।
সত্ আচরন ও সত্য জ্ঞান ধারণ করো।
ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ হও।
🔷 পৃথিবীতে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি জীবও দুঃখী, ততক্ষণ পৃথিবীতে কোনো জীবের সুখ পূর্ণ হয় না। আর তাই, এই জ্ঞান জানার পর সৃষ্টির প্রতি প্রমের উদয় হয়।
এটাই ধৰ্ম || এই আমার অভিমত
ধর্ম এবং এর স্বরূপ ও লক্ষণ।
ব্যাকরণের পরিভাষায় “ধৃ-ধারণে” ধাতুর দ্বারা "অর্তিস্তুসুহুস্ধৃভিক্ষুভায়াবাপদিয়ক্ষিনীভ্যো মন্" [উণাদি ১।১৪০] সূত্র হতে প্রাপ্ত 'মন্' প্রত্যয় যোগে ধর্ম শব্দ সিদ্ধ হয়। "ধারণাৎ ধর্মম্ ইত্যাহুঃ প্রিয়তে অনেন লোকঃ" আদি ব্যুৎপত্তি অনুসারে, 'যা আত্মোন্নতি এবং উত্তম সুখের জন্য ধারণ করা হয়' অথবা যার দ্বারা লোকসকল ধারণ করে অর্থাৎ ব্যবস্থা বা মর্যাদায় স্থিত করা হয়, তাকেই ধর্ম বলে। এই প্রকারে আত্মার উন্নতি করে এমন, মোক্ষ বা উত্তম ব্যবহারিক সুখ প্রদানকারী সদাচরণ, কর্তব্য অথবা শ্রেষ্ঠ নিয়ম-কানুন বিধানই ধর্ম। মনুস্মৃতিতে/মানবধর্মশাস্ত্রে ধর্মকে ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থূলভাবে তা দুই অর্থে গ্রহণ করা যায়।
[১] মুখ্য অর্থ [আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য সাধক]
[২] গৌণ অর্থ [লৌকিক ব্যবহার সাধক]
[১] আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে আত্মার উপকারক নিঃশ্রেয়স সিদ্ধি অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য কৃত আচরণকেই ধর্ম বলে। এটিই ধর্মের মুখ্য উদ্দেশ্য। এটি সর্বভৌমিক, সর্বকালিক ও সর্বজনীন যা কখনোই ত্যাজ্য নয়। এর প্রতিপাদন করাই ধর্মশাস্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য।
মহর্ষি মনুর ধর্মের বর্ণন-
বেদাভ্যাসস্তপো জ্ঞানং ইন্দ্রিয়াণাং চ সংয়মঃ।
অহিংসা গুরুসেবা চ নিঃশ্রেয়সকরং পরম্।।
মনুস্মৃতি ১২।৮৩
বেদাধ্যয়ন [মনু০ ১২।৯৪-১০৩], তপ= ব্রত সাধনা [মনু০ ১২।১০৪], জ্ঞান= সত্যবিদ্যার প্রাপ্তি [মনু০ ১২।১০৪], ইন্দ্রিয় সংযম [মনু০ ১২।৯২], অহিংসা = সব জীনে হিংসা ত্যাগ ও ভূতযজ্ঞ করা এবং গুরুসেবা = পরমগুরু ঈশ্বরের উপাসনা [যোগদর্শন ১।২৬]
তারপর পিতা মাতা আচার্যের সেবা, এই ছয় মোক্ষ প্রদানকারী সর্বোত্তম কর্ম।
ধূতিঃ ক্ষমা দমোঽস্তেয়ং শৌচং ইন্দ্ৰিয়নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যং অক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥
[মনুস্মৃতি ৬।৯২]
অনুবাদঃ- ১। [ধৃতিঃ] কষ্ট বা বিপদে ধৈর্য রাখা এবং দুঃখী ও বিচলিত না হওয়া তথা ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কষ্ট আসা সত্ত্বেও ধৈর্য রেখে পালন করতে থাকা, ২। [ক্ষমা] ধর্ম পালনের জন্য নিন্দা, মান, অপমান প্রভৃতি সহ্য করা, ৩। [দমঃ] ঈর্ষা, লোভ, মোহ, বৈরিতা প্রভৃতি অধর্মগুলো থেকে সংকল্প ও বিচারের দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা, ৪। [অস্তেয়ম্] চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা, ছল কপটতা, অসদাচরণ, অন্যায়, অধর্মাচরণ হয় এরকম কোনো বস্তু, ধন ইত্যাদি না নেওয়া, ৫ [শৌচম্] শরীর আর মন পবিত্র রাখা, ৬। [ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ] ইন্দ্রিয়সমূহকে নিজের নিজের বিষয়ের অধর্ম এবং আসক্তি থেকে মুক্ত রাখা, ৭। [ধীঃ] বুদ্ধির উন্নতি করা, মননশীল হয়ে বুদ্ধিবর্ধক উপায় বের করা এবং বুদ্ধির নাশ না করা, ৮। [বিদ্যা] সত্যবিদ্যার প্রাপ্তির জন্য অধিক যত্নবান হয়ে বিদ্যা এবং জ্ঞানের উন্নতি করা, ৯। [সত্যম্] মনে, বাণীতে ও কর্মে সত্যকে মেনে চলা, সত্যভাষণ, সত্যাচরণ করা, আত্মার বিরুদ্ধ আচরণ অর্থাৎ মিথ্যাচার না করা, ১০। [অক্রোধঃ] ক্রোধপূর্ণ ব্যবহার এবং প্রতিশোধের ভাবনা ত্যাগ করে শান্তি আদি গুণ ধারণ করা- [দশকং ধর্মলক্ষণম্] এই দশটি হলো ধর্মের লক্ষণ। এই গুণগুলো হলো ধর্মপালনের পরিচয় এবং যে মানুষ ধার্মিক, তিনি এই লক্ষণগুলো সিদ্ধ করেন। এটিই হলো ধর্মের সর্বপ্রামাণ্য দশ লক্ষণ।
[২] ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, ত্রিবিধ= আধ্যাত্মিক, মানসিক ও শারীরিক উন্নতি ঘটায়, মানবতা এবং দেবত্বের বিকাশ ঘটায়, উত্তম সুখপ্রদ শ্রেষ্ঠ ব্যবহারিক কর্তব্য, মর্যাদা এবং বিধানই [নিয়ম কানুন] ধর্ম। ব্যবহারিক ক্ষেত্র হওয়ার কারণে কর্ম, দেশ-কাল পরিস্থিতিবশত কিছু পরিবর্তনও এসে যায়।
নিম্নে সংক্ষিপ্ত প্রমাণ দ্রষ্টব্য -
সত্য তথা প্রিয়ভাষণ –
সত্যং জয়াৎপ্রিয়ং ব্রূয়ান্ন ব্রূয়াৎসত্যং অপ্রিয়ম্।
প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রূয়াদেষ ধর্মঃ সনাতনঃ ॥
মনুস্মৃতি ৪।১৩৮
পদার্থঃ- মনুষ্য (সত্যং ব্রূয়াৎ প্রিয়ং ব্রূয়াৎ) সদা সত্য বলো ও তা প্রিয়ো অর্থাৎ মধুর, শিষ্ট এবং হিতকর রূপে বলো (সত্যম্+অপ্রিয়ং নব্রূয়াৎ) সত্যভাষণ [সত্য কথা] অপ্রিয় ও অহিতকর ভাবে বলো না, যেমন অন্ধকে অন্ধ, পঙ্গুকে পঙ্গু আদি বলো না। (চ) এবং (প্রিয়ং অনৃতং ন ব্রূয়াৎ) প্রিয় বা হিতকর কথাও মিথ্যা হলে তা বলো না অর্থাৎ অন্যকে কুশলতা এবং প্রশন্নতার জন্য অসত্য কথা বলো না, (এষঃ সনাতনঃ ধর্মঃ) ইহা সদা-সর্বদা পালনীয় ধর্ম।
পতি-পত্নী আমরন একসাথে থাকবে -
অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণাস্তিকঃ।
এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়োঃ পরঃ ।।
মনুস্মৃতি ৯।১০১ = মরণ পর্যন্ত পতি-পত্নী পরস্পর কোনো প্রকারের ধর্ম উল্লঙ্ঘন এবং বিচ্ছেদ না হয়, সংক্ষেপে স্ত্র-পুরুষের এই সাররূপ মূখ্য ধর্ম।
দর্শনশাস্ত্রে ধর্মের স্বরূপকে উত্তম প্রকার সুস্পষ্ট করা হয়েছে। সেই অনুসারে ধর্মের পরিভাষা নিম্নরূপ "য়তোঽভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্মঃ।।"
বৈশেষিক দর্শন ১।১।২ = যা দ্বারা অভ্যুদয় নিঃশ্রেয় সিদ্ধ হয়, তাই ধর্ম। অর্থাৎ যা দ্বারা পদার্থ সমুহের যথাযথ জ্ঞান ও তার প্রয়োগ দ্বারা উন্নতি সিদ্ধি হয়, তাই ধর্ম। মনুবাক্যে আমরা দেখেছি বেদমাতা পদার্থসহ সকল বিদ্যার মূলস্রোত ও প্রেরণাদানকারিণী।
"চোদনালক্ষণোঽর্থো ধর্মঃ।" পূর্ব মীমাংসা দর্শন ১।১।২ = প্রেরণা, যার লক্ষণ= সাধন এবং অর্থ= বেদ শাস্ত্র প্রতিপাদিত বা বোধিত বিষয়, তাই ধর্ম। অর্থাৎ ধর্ম হলো সেসব অনুমোদনযোগ্য [শিক্ষা], যা বেদের অনুশাসন দ্বারা নির্দিষ্ট হয়।
এই যে ধর্ম সবসময় সনাতন হয়, এই জ্ঞান ঈশ্বর আমাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন যে গ্রন্থের মাধ্যমে তার নাম হল বেদ। বেদ জ্ঞান হল অনাদি এবং দেল, কালের বন্ধনের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। সবার জন্য এবং সব যুগের জন্য। আর তাই বেদে যে ধর্ম বিবৃতি করা হয়েছে, তাকেই সনাতন ধর্ম বলে।
∆ আর সনাতন শাস্ত্রের বাণী ------
"ধর্ম এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ"
[মনুস্মৃতি- ৮/১১৫; মহাভারত- বনপর্ব, ৩১২/১২৮]
অর্থাৎ, যে পুরুষ ধর্মের নাশ করে, ধর্মই সেই পুরুষের নাশ করে এবং যে ধর্মকে রক্ষা করে, তাঁর রক্ষা ধর্মই করে।
ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ||