Society of Social Scientists - SOSS

Society of Social Scientists - SOSS Society of Social Scientists is a Social organisation with an academic purpose.

10/12/2024

মানবেন্দ্রনাথ রায় রচিত নব -মানবতাবাদ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা __ বিনোদ জৈন।
কমুনিস্ট ম্যানিফেস্টোর সময় থেকে।
প্রথম অধ্যায়
কমুনিস্ট ইস্তাহারে "সর্বহারা বিপ্লবের যুগ" ঘোষনার পর একশত বৎসর চলে গেছে। কিন্তু নিশ্চিত ভবিষ্যত বাণী থাকা সত্ত্বেও সে যুগ আর এলনা। একটা দেশে এই বিপ্লবের শুরু হয়েছিল বটে, কিন্তু বিস্তার লাভ করতে পারলো না। বিপ্লবের রোমান্টিক স্বপ্ন নৈতিক আবেদন হারাল। ইস্তাহারে ঘোষনা ছিল বিপ্লবের ধারা অব্যাহত থাকবে। এর সঙ্গে শুরু হবে মানব সমাজের প্রকৃত ইতিহাস। এর আগের সব ইতিহাস--যেখানে কেবল মানুষের দাসত্বের কথা লেখা ---তা হয়ে যাবে প্রাক-ইতিহাস। সর্বহারা বিপ্লব মুক্ত মানুষের কথা লিখবে। এরকম স্বপ্ন খুবই প্রেরণা সঞ্চারী। কিন্তু ভ্রান্ত আশা ছাড়া কিছু নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিনাম রূপে সর্বহারা বিপ্লব ঘটেছিলো। এই সময়কালে ফ্যাসিবাদ --যা কিনা সাম্যবাদের বিপরীত---তারও বৃদ্ধি ঘটেছিল। কমুনিস্ট ইস্তাহারের ঘোষণায় বিশ্বাস ছিল যে রাশিয়ার বিপ্লব দিয়ে সর্বহারা বিপ্লবের শুরু। কিন্তু এর পরে উন্নততর সভ্যতার শুরু তো হলোই না, বরং পরিবর্তে মনে হলো তার সমাপ্তি রচিত হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রচলিত দর্শন সমূহের অসম্পূর্ণতা
মানবতার ভবিষ্যতে যারা বিশ্বাস করেন, সেইসব চিন্তকগন সভ্যতার এই বিপদের কারণ নিয়ে না ভেবে পারেন না. এজন্য প্রথমেই দরকার যুক্তিবাদী কণ্ঠস্বর , গোঁড়ামি ও অন্ধ আবেগ থেকে সতর্ক হওয়া। সভ্য দুনিয়ার সামনে আজ নতুন আশা, নতুন আদর্শ , নতুন দর্শনের প্রয়োজন। গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র -এই দুটি পরস্পর বিপরীত ধারণা ও দুটি ভিন্ন দর্শন। নৈতিক আদর্শ ও সামাজিক আচরনেএরা ভিন্ন ধর্মী।
মানবতার ঐতিহ্য সমাজ -সংগঠনকে ব্যক্তির স্বত স্পুর্ত প্রচেষ্টার মিলন ক্ষেত্র বলে প্রেরনা যুগিয়েছিল। একনায়কতন্ত্র হল সব সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ , যা মানুষকে স্বাধীনতা দেয় , এই সব কিছুর অস্বীকৃতি। খৃস্টান চার্চ ও পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য মানুষের স্বাধীনতার পথে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতিরোধ বানিয়েছে।দুটোই আজ ব্যর্থ। একনায়কতন্ত্র এরকম ই বিস্বাদে ভরা , গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে সংসদীয় গণ তন্ত্রের সীমাবদ্ধতা অস্বীকার করার উপায় নেই.. সংসদীয় শাসনে নাগরিকের পৌর স্বাধীনতাগুলি কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক হয়ে দাঁড়ায়। গণতন্ত্র শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। উপরন্তু দুটি নির্বাচনের মধ্যকালীন সময়ে শাসকদল সংখ্যা গরিষ্ঠতার বলে এক চেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। এর কারন নিহিত রয়েছে উদারনৈতিক দর্শনে- যেখানে প্রতিযোগিতা মূলক অর্থনীতির কারনে ব্যক্তির জন্য এক অসহায় অবস্থান তৈরি হয়। সংসদীয় ব্যবস্থার সুযোগগুলি কব্জা করে নিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপ ক্ষমতায় এসেছিল। আবারও তারা এভাবে আসতে পারে। অতএব গণতন্ত্রকে সংসদীয় পরিসীমার বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে ।
আমাদের সঙ্গে আছে সভ্যতার শুরু থেকে পাওয়া সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের দুর্লভ উত্তরাধিকার। মানবজাতির ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য এই উত্তরাধিকার আমাদের আসল ভিত্তি।

26/11/2024

কিছু সংযোজন , কিছু কথা।।

"...কেন তিনি (মানবেন্দ্রনাথ রায়)কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক পরিধির বাইরে চলে গেলেন, বা তাঁকে বাইরে বের করে দেওয়া হল , স্তালিন, জিনোভিয়েব বা বুখারিনের সঙ্গে কী কী প্রশ্নে তাঁর মতবিরোধ হয়েছিল , তা তিনি নিজে কোথাও প্রকাশ্য ভাবে আলোচনা করেননি, অন্য কাউকে করতে দেখিনি। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। অবশ্য আমার জানার বাইরেও এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কিছু কথা থাকতেই পারে। অথচ রায় মার্ক্সবাদী শিবির থেকে বেরিয়ে গেলেও নিজে কোথাও কমুনিস্ট আন্তর্জাতিক বা স্তালিন প্রমুখ সোভিএট্ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর বহিস্কার বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে প্রকাশ্য নিন্দা বা বিরোধিতা করে কিছু লেখেননি। তাঁর এই মহত্ব ও ঔদার্যও তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল করে তোলেনি। বরং একবার শিবির বহির্ভূত হওয়ার ফলে আমরা মার্ক্সবাদীরা, বিভিন্ন বামপন্থী দলের কর্মী নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা তাঁর প্রতি পঞ্চাশ-ষাটের দশক পর্যন্ত প্রবল বিরূপ ছিলাম।পরে বিরূপতা কাটলেও বোধ হয় রায় সম্পর্কে আমরা অনেকটা উদাসীন থেকে গিয়েছিলাম। তাঁর নাম নেওয়াও পাপ, রচনাবলী পড়ে দেখাতো অনেক দূরের কথা--এরকম একটা মনোভাব আমাদের অনেকের মধ্যে আজও বেশ শক্ত হয়ে চেপে বসে আছে। তাঁর সমসাময়িক বা পরবর্তী কালের মার্ক্সবাদী নেতাদের মধ্যে যাঁরা অন্তত মুখে স্বীকার করেছেন , তাঁরা রায়ের কাছে অনেক কিছু শিখেছেন , তাঁরাও কোথায় কী পেয়েছেন, বা কী নিয়েছেন ,ঋণস্বীকৃতির ছলেও তার কিছু উল্লেখ করেননি”। প্রবন্ধকার শ্রী মুখোপাধ্যায় আরও মন্তব্য করেন যে “এমনকি, তাঁর দর্শনে কোথায় কী কী ভুল হয়েছে , কোন কোন প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে তাঁদের মতপার্থক্য , তাও তাঁরা কেউ মুখ ফস্কে বলতে চাননি। অনেকটা যেন নৈ:শব্দের বান মেরে তাঁকে আমরা চিন্তা-মননের জগতে একঘরে এবং অপ্রাসঙ্গিক করে রাখার চেষ্টা করেছি।" (অশোক মুখোপাধ্যায় , মুক্ত মন মুক্ত চিন্তা , এপ্রিল- সেপ্টেম্বর,২০২৪) . এম. এন রায়ের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে যাদের মন উত্তরহীন -প্রশ্নে বিচলিত, অথবা কেন তাঁর নাম উচ্চারিত হয়না, সেই উত্তর পেতে অশোক মুখোপাধ্যায় লিখিত একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধের এই ক্ষুদ্র অংশটি কিছু সাহায্য করতে পারে। প্রসঙ্গত, আমি একটু সংযোজন করতে চাই।
প্রথমতঃ “ এমনকি, তাঁর দর্শনে কোথায় কী কী ভুল হয়েছে , কোন কোন প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে তাঁদের মতপার্থক্য” , এ বিষয়ে কিছু আলোচনা পাওয়া যায়, অন্তত আমি পেয়েছি। সবকিছু হাতের সামনে নেই, তবু এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করব সম্প্রতি প্রকাশিত আর এস পি সংগঠনের মুখপত্র গনবার্তা,( শারদীয় সংখ্যা , ২০২৪ , ১৪৩১) র নাম উল্লেখ করতে চাই। সেখানে মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক দেবেশ রায়চৌধুরীর অনেক পুরনো একটি প্রবন্ধের অনুবাদ উল্লেখ করছি। (M.N.Roy’s Concept of State From Marxism to New Humanism: An Assessment of M.N.Roy’s Thought. By Debesh Roychowdhury. Society and Change, Vol.V Nos 2-3, January to June, 1988, PP. 263-282) "মার্ক্সবাদ থেকে নব মানবতাবাদ : এম. এন. রায়ের চিন্তা ধারার মূল্যায়ন” -এই শিরোনামে। দেবেশ রায়চৌধুরী একজন কমুনিস্ট তাত্ত্বিক হিসাবেই মানবেন্দ্রনাথের চিন্তার মূল্যায়ন করেছেন। পাঠক এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত হতে বা না হতে পারেন, মতানৈক্য বোধ করতে পারেন, তবে পড়তে ভালো লাগবে ও যুক্তিকে শান দেবে, এটুকু বলা যায়. .. দীর্ঘ প্রবন্ধটি ১৯৮৮ সালে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। জার্নালটির সম্পাদক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ইংরেজি সংখ্যাটি এখন পাওয়া না যেতে পারে। তবে হাতের কাছে অনুবাদটি পড়ে দেখতে পারেন। এই সঙ্গে মনে করতে চাই , অধ্যাপক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাদের মাস্টারমশাই ছিলেন, এবং পি এইচ ডি কাজের জন্য কলকাতায় রবীন্দ্রভারতীর গ্রন্থাগারিক রেডিক্যাল হিউম্যানিস্ট ডক্টর সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে বুদ্ধদেব স্যারের কাছে কাজ করার সুপারিশ করে বলেছিলেন যে 'এম.এন রায় সম্পর্কে গবেষণার জন্য এখানে (কলকাতায়) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যোগ্যতম ব্যক্তি'। গান্ধীর নন-কোঅপারেশন ও সত্যাগ্রহী আন্দোলনের উপর তাঁর অথেন্টিক গ্রন্থ, মাস্টার ডিগ্রীতে যা আমাদের পাঠ্য ছিল। অথচ তিনি গান্ধীবাদী বা রায়বাদী ছিলেন না, সেটা সকলেই জানে।
২) দ্বিতীয়ত উল্লেখ করতে চাই যে, বহুদিন আগে, সম্ভবত নব্বই দশকের প্রথম দিকে, অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় ( d. 26th November 2023) একাডেমিক দৃষ্টিকোন থেকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন এম.এন. রায়ের রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে। ‘দেশ কাল ও সমাজ’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে রায়ের জাতীয়তাবাদ থেকে মার্ক্সবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ ও নব মানবতাবাদ দর্শনে উত্তরণের পথে বিভিন্ন বাঁক ও জটিলতা নিয়ে আলোচনার প্রারম্ভিক চেষ্টা করেন এবং স্যার নিজস্ব মত, বলা যায় দ্বিমত, উচ্চারণ করেছিলেন।
বাংলার বিখ্যাত সাংবাদিক তুষার কান্তি ঘোষ, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, তৎকালীন আনন্দবাজর গোষ্ঠীর অনেক বাঙালি রায়ের বুদ্ধিমত্তা ও তাঁর বৈচিত্রপূর্ণ রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বিশেষ শ্রদ্ধা ও সমীহ বোধ করতেন। দেরাদুনে তাঁর মৃত্যুর পর আনন্দবাজারের একটা কার্টুন ছবি সেই প্রমান দিয়েছিল। ক্যালকাটা হাই কোর্টের বিচারপতি ফনি ভূষণ চক্রবর্তী (১৯৬১), বাংলার অধ্যাপক বি.এন দাশগুপ্ত ,মানবেন্দ্রনাথের উপর গ্রন্থ লেখেন। শোনা যায়, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখোপাধ্যায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সম্পর্কে গভীর শ্রদ্ধাবশত হাওড়া জেলার আমতায় রায়ের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে রাষ্ট্রপতি হবার পরেও আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। স্কুলটির নাম তাজপুর এম. এন. রায় ইনস্টিটিউশন,১৮৯৫, এবং সরকার শিক্ষাবিভাগ পরিচালনা করে, (প্রতিষ্ঠাতার নাম প্রায় হারিয়ে গেছে)। প্রফেসর অমল মুখোপাধ্যায় এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় দুজনেই সিউড়ি কলেজে অধ্যাপক গৌরীপদ ভট্টাচার্যের ছাত্র ছাত্র ছিলেন। ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের কথা বাদ দিয়েই বলছি। যেমন, প্রফেসর নির্মল চন্দ্র ভট্টাচার্য এশিয়াটিক সোসাইটিতে ১৯৭৬ সনে এক দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন কেবলমাত্র রায়ের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ধারণার উপর, সেই বক্তৃতা পরে গ্রন্থ রূপে প্রকাশ করেছিল এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৮০ সালে। বইটির নাম- ‘সোশ্যাল এন্ড পলিটিকাল আইডিয়াস অফ এ ম. এন .রায়'। ইদানিং কালের মার্ক্সবাদী চিন্তাবিদ অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত বিভিন্ন আলোচনা সভায় এম .এন রায়ের উপর আলোচনা করেছেন। এম. এন রায়কে বুঝতে তাদের ভুল হয়েছিল, একথা তিনিও স্বীকার করেছেন। কলকাতা জিজ্ঞাসা দপ্তরে তিনি গিয়েছেন এবং শিবনারায়ণ রায়ের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা ছিল, তবে নিজের লেখায় তিনি এসব কথা লিখেছেন কিনা জানা নেই। মানবেন্দ্র অনুগামীদের কথা ছেড়ে দিয়ে বলা যায় যে, অধ্যাপক অম্লান দত্ত, নিরঞ্জন ধর, আবু সৈয়দ আইয়ুব প্রমুখ রায়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দর্শন ও নৈতিকতা নিয়ে সমূহ আলোচনা করেছেন। তাদের গ্রন্থ এর সাক্ষ্য দেয়। বাংলা ভাষায় রায়ের গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছে খুব কম, তাই এখানে চর্চার জায়গাটা বিস্তার লাভ করেনি। বাংলা ভাষায় তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থ নেই বললেই চলে। জীবনের প্রধান সময়টা তাঁকে বিদেশে থাকতে হয়েছে , বিভিন্ন বিদেশি ভাষা আয়ত্ত করে সেই সব দেশে কমুনিস্ট আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়েছে।মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়। ভারতে ফিরে এসে জেলে থাকার সময় যে পড়াশোনা তিনি করতেন, সব বিভিন্ন বিদেশি ভাষার বই; জেল-মুক্তির পর দক্ষিণ ভারত, পশ্চিম ভারতে এবং উত্তর ভারতে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা বেশি ছিল এবং নিজের মাতৃভুমি বঙ্গে তাঁর বসবাসের স্থায়িত্ব কম থাকার একটা কারন কলকাতার গরম , হয়ত দীর্ঘদিন ইউরোপিয়ান জলবায়ুতে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে অসুবিধা হতো। অন্ধ্র প্রদেশে ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাম স্তরে এম.এন রায়ের ব্যাপক চর্চা হয়েছে। জি. ডি. পারেখ ও ডাক্তার ইন্দুমতী পারেখ মহারাষ্ট্রে রায়ের নামে এম.এন রায় হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পাস তৈরি করেন। ক্যাম্পাসটি ছিল সেন্টার ফর দ্যা স্টাডি অফ সোশ্যাল চেঞ্জ। আর, এল, নিগম (R.L.Nigam) ছাড়াও সাধারণ চিন্তাশীল নাগরিকগন ভারতীয় সমাজ সংস্কৃতি-অর্থনীতি রাজনীতি পরিবর্তনের বৈপ্লবিক ধারণার দ্বারা আলোড়িত হয়েছেন। রায়ের জীবদ্দশায় রেডিক্যাল পার্টি ও হিউম্যানিস্ট মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, পরবর্তী কালে তাঁরা রায়ের উপর ছোট আকারে যা লিখেছেন, সেগুলিও অমূল্য সম্পদ। সেগুলিকে বাংলায় অনুবাদ করতে পারলে বাঙলা-ভাষীদের কাছে রায় সম্পর্কে পরিচয়ের বিস্তার হতো।
স্প্যানিশ,ইংরেজি, ও অন্যান্য ইউরোপিয়ান ভাষায় এম. এন রায়ের বস্তুবাদী দর্শনের চর্চা হয়ে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থাবলীতে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ ও লেখার ঋণ স্বীকার দুষ্প্রাপ্য নয়। বাংলার বাইরে এম. এন. রায় চর্চা যথেষ্ট পরিমানে ছিল, আজও কিছু আছে, তবে কালের নিয়মে কমে এসেছে। সরকারি বদান্যতা বিহীন একলা চলার দম সকলের থাকে না। আগে তালিকায় অনেক অনুগামী ও অনুরাগীদের নাম ছিল, বর্তমানে অনেক নাম বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছে। রায়ের জীবদ্দশাতেই চল্লিশ দশকের শেষদিকে তাঁর চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনার শুরু। যুক্তিপূর্ণ আলোচনা যত বিরূপ হোক না কেন, রায় নিজে তা এন্ডোর্স করতেন। একটা উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। প্রফেসর এ.বি শাহ , (ভারতীয় সেক্যুলার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা) নব-মানবতাবাদের ২২টি থিসিসের কোনো বিশেষ অংশের উপর ক্রিটিকাল আলোচনা করেছিলেন এবং সেই লেখাটি নিজের সাপ্তাহিক পত্রিকায় রায় প্রকাশ করেছিলেন। অত্যন্ত উঁচু মানের বৌদ্ধিক শক্তির অধিকারী তথা ‘ইন্টেলেকচুয়াল ম্যাভেরিক’ এই গুজরাটি লেখকের প্রবন্ধটি পাছে অন্য কারো হাতে অবহেলিত হয়, এই জন্য রায় পত্রিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শিবনারায়ণ রায়ের কাছে নোট পাঠিয়ে বলে দেন- এ. বি. শাহর লেখাটি যেন অবশ্যই ছাপা হয় । শাহ সম্পর্কে রায়ের মন্তব্য ছিল “this chap has first rate mind”, “and his views have to be taken quite seriously. We are going to publish his piece in our weekly. Either you write a rejoinder, or I shall have to do it myself. I do not care to have some other radical tangling up with him.” এই বাক্যাংশ প্রমান করে রায়ের বৌদ্ধিক স্তর কতটা জড়তা -মুক্ত ছিল। সংকীর্ণ ইগো -আমিত্ব তাঁর বৌদ্ধিক সত্তাকে কখনো প্রভাবিত করতে পারেনি। এখানেই তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য। কিন্তু তা উপলব্ধি করার মত সমর্থ আমরা হয়ে উঠতে পারিনি । আর সেই কারনেই “তাঁর এই মহত্ব ও ঔদার্যও তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল করে তোলেনি”। যাঁরা অনুভব করতে পেরেছিলেন তাঁদের কয়েকজন ভারতীয় বিদেশে থেকেও বিদেশের রাজনীতির সঙ্গে রায়কে নিয়ে চর্চা করে যাচ্ছেন। যেমন, আমার চেনা একজন কামেস্বর ওয়ালি (K.C.Wali) , যিনি মনে করেন “A Thinking man is lost in the feeling monster of the masses” . আর একজন নারিশেটি ইনাইয়া। ব্রিটিশ জেলে বসে লেখা রায়ের বিরাট ভলিউম থেকে একটা বড় অংশের উপর ইনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পি. এইচ. ডি করেন। আশি বছর বয়সেও তিনি অবিরাম রায়ের ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ভারতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্টিশনার ভি.এম.তারকুণ্ডে নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার এমন একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ( Father of the Civil Liberties Movement )। জরুরী অবস্থা কালে জয়প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গে একত্রে সিটিজেনস ফর ডেমোক্রেসি (CFD )এবং পিপলস' ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (PUCL ) নাম দুটি এন. জি. ও. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নয়া দিল্লিতে আই .আর.আই ইনস্টিটিউটে (IRI) প্রতি বছর এম.এন. রায় মেমোরিয়াল লেকচার আয়োজিত হয় এবং সেখানে বক্ত্রতা দিতে আসেন দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী, হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের অবসর প্রাপ্ত বিচারক, পার্লিয়ামেণ্টের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গের রেডিক্যাল এসোসিয়েশনের অফিসেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকে যোগদান করতেন, যারা সকলে রায়পন্থী নন, অনেকে বামপন্থীও ছিলেন, কিন্তু রায় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং শ্রদ্ধা পোষণ করতেন।
রায়ের মতো কালা পাহাড়ি ব্যক্তিত্বকে 'ব্রাত্য' করার পিছনে কারণ গুলি বোঝার চেষ্টা করা যায়। উল্লেখযোগ্য যে কম্যুনিস্ট পর্বে মার্কসবাদকে মানবেন্দ্রনাথ কী ভাবে বুঝতেন, অন্যান্য মার্কসবাদী যেমন স্তালিন, জিনোভিয়েব বা বুখারিনের ,( (এবং বরোদিন ) তাদের সঙ্গে তাঁর মার্ক্সবাদ অনুভবের পার্থক্য কী ছিল , তা নিজে যেমন পরিষ্কার ভাবে বলেন নি, তেমনি সেই বিষয়ে তাঁর সেই সময়ের লেখা পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থ পড়ে দেখার সুযোগ ভারতে অনেকের ছিলনা, তেমনি মতাদর্শগত দিক থেকে তখন সময়টাও খুব ক্রিটিকাল ছিল। উক্ত নামগুলির সঙ্গে রায়ের কমুনিজম চিন্তার পার্থক্য নিয়ে মতভেদ হয়েছে রাশিয়াতে বসেই। স্তালিন ছাড়া পলিটব্যুরোর কয়েকজন সদস্য রায়ের মতভেদকে সহজ ভাবে নিতে পারেন নি। সোভিয়েত রাশিয়ার প্রকল্প অনুসারে চীন মিশন সফল না হওয়ায় স্তালিনও রায়ের প্রতি বন্ধুত্বকে ম্লান হতে দেন। এই মতভেদের প্রধান কারন খুঁজলে দেখা যায় যে কার্ল মার্ক্সের দর্শনে হিউম্যানিজম অংশটির প্রতি রায় যতটা আকৃষ্ট হয়েছিলেন, ততটা বোধ করি প্রলেতারিয়েত শ্রেনী এবং (লেনিনের মতে) পার্টির একচ্ছত্র ক্ষমতার প্রতি নয় । কারণ তিনি অন্তস্থলে এক হার্ডকোর হিউম্যানিস্ট হিসাবে মানব-হিতে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর জীবনীকার ও গবেষকদের এইরকমই সিদ্ধান্ত। বিশেষত , দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধ উত্তর পর্বে মার্কসবাদ রায়ের মনকে তৃপ্ত করতে পারলনা , তিনি মার্ক্সবাদ অতিক্রম করে ‘নব মানবতাবাদ’ নামে এক নুতন রাষ্ট্র দর্শন আবিষ্কার করলেন । সেটা অত কম সময়ে বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব ছিল। পুরোনো ধ্যান ধারণা ভেঙে যাচ্ছে , বিদেশ থেকে নুতন নুতন মতাদর্শ ভারতীয় তথা বাঙালিদের মনকে উদ্বেলিত করছে, সেসব অনুকরণের প্রবণতা শক্তিশালী হচ্ছে, এমত অবস্থায় পরিচিত ভাবনাকে আবার নুতন ঝাকুনি দেয়ার বিষয় বুঝবার চেয়ে হয়ত বিরূপতা তৈরি করতে পারে। শোনা যায়, তৎকালীন জাতীয়তাবাদী পুঁজিপতি নেতৃত্ব প্রতিদিন রায়ের প্রকাশিত পত্রিকাগুলি পড়ছেন, আর সংশয়ে ভুগছেন ; কারন, পুঁজিবাদ ও দেশীয় জাতীয়তাবাদের বুর্জোয়া স্বার্থ বিরোধী কমুনিস্ট রায়কে নাহয় চেনা গেল, কিন্তু কমুনিজমের বাইরে গিয়ে তিনি তবে কার স্বার্থের কথা বলছেন ?, ষষ্ঠ কঙগরেসে কমিন্টার্নের গোঁড়ামি প্রসূত অনুসৃত নীতিগুলির সঙ্গে একমত নন, অতএব তিনি বহিস্কৃত, তাহলে তাঁর পায়ের নিচে মাটি কোথায়, তিনি তখন 'no where' । এমন মানুষ যার পিছনে কোনো অথরিটির অনুমোদন থাকেনা, তাঁর কথা কে শুনবে। গান্ধীপন্থী মুখ্যমন্ত্রী (১৯৪৮) ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়কে বলতে শোনা যায়- কংগ্রেস অনুগামীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলছেন, 'তোমরা যেন আবার গিয়ে এম.এন. রায়ের দলে ভিড়ে যেও না '! এদেশে তখন গান্ধীপন্থার বাইরে স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র বসু অসুবিধায় পড়েছেন, রায় তখন সুভাষ বসুর পশে দাঁড়িয়েছেন। সেই সময়টাকে মনে রাখলে আমরা বুঝতে পারি এম এন রায় কেন ব্রাত্য হয়ে উঠলেন। সেই পরম্পরাগত অথরিটি-ঝোঁকা মানসিকতার পরিবর্তন এদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আজই বা কতটা আছে ? যে মুষ্টিমেয়রা আছেন , তারা সর্ব ক্ষেত্রে একা থাকেন, কোনও প্রত্যাশায় শাসকের ছত্রছায়ায় থাকা তাদের জীবন শৈলীর বাইরে।
অপরদিকে, শাসক বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তে এম.এন রায়ের নাম নেই , কারণ ‘সেখানে বস্তুবাদের চাহিদা কম’ । আর একটু পেছনে তাকিয়ে দেখা যায়। জহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসু বিস্ময় -বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে রায়কে দেখেছেন, কিন্তু আধিপত্যবাদী ক্ষমতা- রাজনীতির বিষয়ের সঙ্গে জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ধারণায় পার্থক্য ইত্যাদি রায়কে নেহেরু-সুভাষ থেকে আলাদা করে দেয় , তাঁরা হাত মেলাতে পারলেন না। বিশেষত প্রচুর পড়াশোনা করা পন্ডিত নেহেরু দেশের স্বাধীনতায় রায়ের সুগভীর আত্মত্যাগ এবং রায়ের স্বকীয় বোধের মার্ক্সবাদ / সমাজতন্ত্রবাদ সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন। আমরা অনেকেই জানিনা যে ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রথম দিকে নেহেরু রায়ের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রায়ের সঙ্গে দ্বিমত হয়। তা হোক , কিন্তু রায়ের এই পরোক্ষ অবদানের কথা কি তিনি স্বীকার করে গেছেন? দেরাদুনে রায়ের মৃত্যু শয্যায় তিনি গিয়ে দেখা করেছেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সরকারি ভাবে রায়ের স্মৃতি রক্ষায় কিছু কি করেছেন? জওহরলাল, সুভাষচন্দ্র প্রমুখ কমুনিজম বিযুক্ত সমাজতন্ত্রবাদী, অপরদিকে রায় তখনও কমুনিস্ট বলেই পরিচিত। কবল তাই নয়, রায়ের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারি স্তরে বিরূপতা অথবা ঔদাসীন্য ইত্যাদির কারন আরও গভীরে। সোভিয়েট রাশিয়াপন্থী ভারতীয় কমিউনিস্টদের কাছে রায় একজন 'জাতিচ্যুত' ছাড়া কেউ নন।. ক্ষমতা-নিস্পৃহ রায়কে তাঁরা চিনতে ভুল করলেন, নাকি অন্য কিছু?
তদুপরি, তাঁর অকস্মাৎ অকাল মৃত্যু ওই দর্শন চর্চার উপর প্রায় যবনিকা টেনে দিল। তাঁর উত্তরসূরীগণ তখনও সবাই পূর্বের চিন্তার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। এ বিষয়ে রায় সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন, তাই বিভিন্ন স্টাডি ক্যাম্পে তিনি সেসব মনস্তত্ব নিয়ে আলোচনাও করেছেন ।
আশোক মুখোপাধ্যায় লিখছেন: মার্কসবাদকে অতিক্রম করে নবমানবতাবাদের প্রতিষ্ঠাকালেও রায় তাঁর ইংরেজি মুখ পত্রের নাম দিয়েছিলেন The Marxian Way এবং এই সময় একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন What is Marxism?(1943) এবং তার মধ্যে তিনি মার্ক্সবাদের যে দার্শনিক-নৈতিক ব্যাখ্যা দেন তা এক কথায় সত্যিই অনবদ্য। শুধু তখন কেন, আজ পর্যন্ত কোনো মার্ক্সবাদীকে ঠিক এইভাবে বিষয়টিকে রাখতে দেখা যায় না." । বামপন্থী রাজনীতিকগন রাজনীতির চক্র থেকে বেরিয়ে এম, এন রায়ের The Marxian Way, The Humanist Way জার্নালগুলো পড়ার সময় করতে পারেননি, তথা প্রয়োজন বোধ করেননি। কমিউনিস্টরা ভাববাদী দর্শনের কঠোর সমালোচক, অথচ বস্তুবাদী বৈপ্লবিক দর্শনের চর্চা তাঁরা কতটুকু করেছেন? এম. এন. রায়ের Materialism: An outline of the History of Scientific Thought’ বইখানা আদৌ কোন বাঙালি মার্ক্সবাদী পড়েছেন কিনা জানা যায়না (১৯৪০, ১৯৫১)।
যাঁরা কিছু পড়েছেন বা শিখেছেন, তাঁরাও স্বীকার করতে ভয় পেয়েছেন কেন? এই প্রশ্নটিও কেউ ভাবেননি । তাই তাদের নব প্রজন্ম উজ্জ্বল বুদ্ধির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বস্তুবাদী দর্শনের যথার্থ অনুসন্ধিৎসু হতে পারেনি। দুর্ভাগ্য এই যে অনেক বাঙালির "জ্ঞানী -গুণী " অহংকার এম.এন রায়ের কাছে পৌঁছতে দেয়নি। অশোক মুখোপাধ্যায় এই খন্ড চিত্রে অনেক না বলা কথা তুলে ধরেছেন। বামপন্থীরা অনেকেই জানেন না যে চিন্তার ভিন্নতা সত্ত্বেও জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মানবেন্দ্রনাথ ও তাঁর প্রধান উত্তরসূরিদের উপর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন, তবে প্রদর্শন করতেন কিনা তা তেমনটা জানা যায়নি, যেহেতু প্রকাশ্য কাজকর্মে তা দেখা যায়নি । তবে বাংলার রেডিকাল হিউম্যানিস্টরাও সম্পর্ক স্থাপনে কোন উদ্যোগ নিয়েছেন, এমন তথ্যও নেই.। বরং শোনা যায়, রেডিক্যাল নেতৃত্ব যদি একটু এগিয়ে আসতেন (আপ্রোচ করতেন), তাহলে জ্যোতি বসুর সময়ে, এমন কি বুদ্ধদেব বাবুর সময়ে সল্টলেকে রাডিক্যালদের স্থায়ী অফিস ভবন পাওয়া কঠিন ছিলনা। প্রথম দিকে, বিশেষত কমিউনিস্ট পার্টির নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে রায়ের সম্পর্কে যে ভুল ধারণার বীজ বপন হয়েছিল, পরবর্তী কালে সেটা কেটে যায়। তথাপি কোথায় ‘ কিন্তু’ ছিল ?
শ্রী মুখোপাধ্যায়ের মতে রায়কে দু' ভাবে কমিউনিস্ট পার্টি ব্যবহার করতে পারতো। প্রথমে বস্তুবাদী যুক্তিবাদী জ্ঞানের চর্চায় রায়ের কাছ থেকে নেবার মতো অনেক কিছু ছিল.এবং তা করলে বিজ্ঞান আন্দোলন , বিজ্ঞান- দর্শন চর্চা অনেক এগিয়ে যেতো। আর একটি হল, জ্ঞান চর্চার রীতিনীতির দিক থেকেও রায়ের চর্চা আবশ্যিক ছিল, এবং সেখান থেকে কতটা নিতে হবে এবং কতটা বাতিল করতে হবে, এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলে "আমরা সমান ভাবেই উপকৃত হতাম"।
এর উত্তরে আমাদের মনে হয়, রায়ের বিদ্যাবুদ্ধির পরিচিতির অভাবে তাঁকে ব্যবহার করার কথা কারও মাথায় আসেনি। অথবা এর পিছনে সম্ভাব্য কারন রায়ের দর্শন ও রাজনীতির সঙ্গে কিছু মৌলিক পার্থক্যকে তারা জনসমক্ষে আসতে দিতে চায় নি। রায়ের যে যুক্তিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক রাজনীতি অনুশীলনের (সাইন্টিফিক পলিটিক্স) কথা বলা হয়েছে , তা সি পি এম রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতা- কেন্দ্রিক ও আমলা প্রধান ব্যবস্থায় দলীয় রাজনীতির ময়দানে সম্ভব নয়। দল ও শ্রেণী স্বার্থের মানদন্ডে অহিংসা, ন্যায় ও সাম্যের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। কাজেই কার্ল মার্ক্সের তাত্ত্বিক আদর্শের প্রেরনা একদিকে পড়ে থাকুক। বাস্তব রাজনীতির প্রয়োগে সর্বহারা শ্রেণীর বকলমে দলীয় গোষ্ঠী স্বার্থ প্রাধান্য বিস্তার করে, তারপর সব ইতিহাস। রায় প্রদর্শিত মুক্ত বিজ্ঞান চর্চার দ্বারা নিজের পায়ে কে আর কুড়াল মারবে , মূল প্রশ্ন সেটা। অন্তত এদেশে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে - বক্তৃতায় যতই ভালো কথা থাকুক, প্রকৃত শিক্ষা তথা বিজ্ঞান ও দর্শন চর্চায় জনসাধারণকে আলোকিত করা দলীয় রাজনীতির চোরাগলিতে হারিয়ে যায়। রাজনীতিকরা বিদ্বান নন, বিদ্যা চর্চার বালাই তাদের থাকেনা বললেই চলে, অন্যদেরকেও করাবার তাগিদ তারা অনুভব করতে পারেন না, তাদের জীবন চর্যায় সময় দখল করে নেয় ভোট-রাজনীতির গ্রামার অনুসারে দল ও ক্ষমতা বিস্তারের প্রবল মোহ। আধিপত্যের মনস্তত্ব যুক্তি বোধ ও বিবেচনা শক্তিকে কাবু করে রাখে। অর্ধ শিক্ষিত ভোটার সমাজ সেটাকেই গণতন্ত্রের মানদণ্ড ভেবে নেয়। সে যাই হোক , রাজনীতিকদের এক বিশেষ সুবিধা হল , ক্ষমতার নিয়মে তারা বিদ্বানদের শাসন করেন। ইতিহাসবিদকে, বৈজ্ঞানিককে তারা নিয়ন্ত্রণ করে দলীয় স্বার্থের কাজে ব্যবহার করেন। অনেকে চোখ বুজে থেকেছেন নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশনের ভেতরে; সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে রায়ের নুতন রাষ্ট্র ভাবনাকে তারা ‘কষ্ট কল্পনা’ বলে এড়িয়ে গেছেন। হয়ত প্রচলিত ধারনায় অভ্যস্ত রাজনীতির বাইরে না আসতে পারলে সেটা বোঝা যায়না। যেমন, ঘরের থেকে বাইরে না এলে সমগ্র ঘরটাকে দেখা যায়না। অতএব পঁচাত্তর বছরের স্বাধীনতার পরেও একজন হার্ডকোর স্বাধীনতা বিপ্লবী ও দার্শনিকের নাম সর্বত্র অনুচ্চারিত! তাতে আমরা আশ্চর্য হব কেন ? ? এম. এন রায়কে ‘একঘরে’ যদি করা হয়, তাতে সারা ভারতবর্ষে কার কি লাভ, অন্তত আমরা বাঙালীরা খুব লাভবান হয়েছি কি? এই আত্মা জিজ্ঞাসা জাগাতে পারলেই উত্তর মিলবে আশা রাখি। রেডিক্যাল মুভমেন্টের লক্ষ্য সেটাই। সেই পথে কাজ করে চলেছে মনি দাশগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত গোবরডাঙা রেনেসাঁ ইনস্টিটিউট, এবং দীপক দা পরিচালিত গোবরডাঙা বিজ্ঞান পরিষদ। তাছাড়াও কিছু সঙগঠন এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত।
26/11/24
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

23/12/2023

মণি দাশগুপ্ত একটি উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেটা হোল সাধারন মানুষের ভিতর, বিশেষ করে গ্রামের মানুষের ভিতর বিজ্ঞান মনস্কতা ছড়িয়ে দেওয়া। এই আত্মোৎসর্গের তুলনা খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিজ্ঞান মনস্কতা বলতে তিনি যা বুঝতেন তা হোল: মানুষ তো প্রকৃতির সন্তান। এই প্রকৃতিকে যুক্তি দিয়ে বোঝার যে চেষ্টা, যে প্রকৃতি থেকে মানুষ উৎপন্ন, সেই প্রকৃতিকে জানবার বোঝবার যে চেষ্টা তারই নাম বিজ্ঞান মনস্কতা। তিনি গ্রামাঞ্চলে যেখানে ছিলেন সেখানে অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই কাজে এগিয়ে গেছেন। তাদের সঙ্গে তিনি প্রকৃতির একটা পরিচয়, যুক্তিবাদী পরিচয় গড়ে তোলবার চেষ্টা করেছেন। আমাদের চারদিকে বিস্তৃত যে জগৎ সেই জগৎ সম্বন্ধে একটা দৃষ্টি যুক্তিবাদী দৃষ্টি সৃষ্টি করতে এবং এই কাজটা যে এতই গুরুত্বপূর্ন, যে ব্যাক্তিগত উচ্চাশার চেয়ে এই কাজের গুরুত্ব বেশি, একথা বোঝাবার জন্য মণি দাশগুপ্তকে কোন বক্তৃতা দিতে হত না। তার জীবন একথা ঘোষণা করত। (অম্লান দত্ত), 2001
Mani Dasgupta sacrificed his life for a cause. That is to spread the science mentality among the common people, especially among the rural people. It is difficult to find a comparison to this sacrifice. What he understood as a scientific temperament was: Man is a child of nature. The attempt to understand this nature with reason, the attempt to understand the nature from which man originates, that attempt to understand that nature is called scientific mentality. He went on with young children in the countryside where he was. He tried to develop with them an identity of nature, a rational identity. Mani Dasgupta did not have to give a lecture to create an insightful rational view of the world that surrounds us and to show that this work was so important that it was more important than personal ambition. His life would have declared it. (Amlan Dutta), 2001

Society of Social Scientists is a Social organisation with an academic purpose.

তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির গঠন (1920)বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো, 1917 সালের রাশিয়ান বিপ্লব ভারতের বিপ্লবীদের জন্...
08/11/2023

তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির গঠন (1920)

বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো, 1917 সালের রাশিয়ান বিপ্লব ভারতের বিপ্লবীদের জন্য একটি মহান অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিল যারা সেই সময়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে নিযুক্ত ছিলেন। তাদের অনেকেই নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন এবং লেনিন ও বলশেভিক পার্টির সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং 1913-14 সালে তাদের মধ্যে কেউ কেউ গদর পার্টি গঠন করেছিলেন। কিন্তু 1920 সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অস্তিত্ব প্রকাশ পায়।
কমিউনিস্ট থার্ড ইন্টারন্যাশনালের দ্বিতীয় বিশ্ব কংগ্রেস (1920) দ্বারা একটি অভিবাসী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। কমিন্টার্ন এক্সিকিউটিভ কমিটি (ইসিসিআই) এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি উপ-কমিটি, 'স্মল ব্যুরো' গঠন করে। ব্যুরো 1920 সালের সেপ্টেম্বরে বাকুতে প্রাচ্যের জনগণের প্রথম কংগ্রেসের আয়োজন করেছিল, বিশেষত এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে। এর পরে তাসখন্দে 17 অক্টোবর 1920 তারিখে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। সাত সদস্য হলেন এম.এন. রায়, এভলিন রায়-ট্রেন্ট, অবনী মুখার্জি, রোজা ফিটিংভ, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ শফিক এবং আচার্য। শফিককে পার্টির সেক্রেটারি, রায়কে সমাজতান্ত্রিক তুর্কেস্তান ভিত্তিক পার্টির ব্যুরোর সেক্রেটারি এবং আচার্যকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়, যিনি কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন।

17 অক্টোবর প্রথম বৈঠকে, সংগঠনটি 'ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি' হিসাবে এর নাম গ্রহণ করে। উদ্বোধনী বৈঠকটি কমিন্টার্নের নীতিগুলিও গ্রহণ করে এবং সিপিআই-এর একটি প্রোগ্রাম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় যা 'ভারতের অবস্থার জন্য উপযুক্ত'। সদস্যপদ পদ্ধতি এবং কমিন্টার্নের সাথে সংযুক্তি নিয়ে একটি প্রাথমিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল’ গান গেয়ে সভা শেষ হয়।
এম.এন. রায়, পার্টির প্রধান সংগঠক হিসাবে, ভারত থেকে তরুণ প্রাক্তন মুহাজির ছাত্রদের সফলভাবে নিয়োগ করতে আগ্রহী ছিলেন। রায় এবং ইভলিন রায়-ট্রেন্ট, তার স্ত্রী এবং সেই সময়ে কমরেড, মোহাম্মদ শফিক, মোহাম্মদ আলী এবং অন্যান্য প্রাক্তন মুহাজিরদের নবজাতক কমিউনিস্ট পার্টির ভাঁজে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রাক্তন মুহাজিররা (ঔপনিবেশিক ভারত থেকে স্ব-আরোপিত নির্বাসনে থাকা মুসলমানরা) প্যান-ইসলামের প্রতি তাদের বিশ্বাস হারাচ্ছিল এবং উত্সাহের সাথে প্রাথমিক সিপিআই এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সদস্য হিসাবে যোগদান করেছিল।

তারা মুহাজির হিসাবে ভারত থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল এবং কাফেরদের (ব্রিটিশ উপনিবেশিকদের) শাসিত দেশ থেকে হিজরত বা ধর্মীয় দেশত্যাগের প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিল। এটি ছিল একটি ঔপনিবেশিক বিরোধী প্ররোচনা যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে ভারতীয় মুসলমানদের একটি অংশের মধ্যে স্থান লাভ করে। এটি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্যান-ইসলামিজমের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং অন্যান্য ঔপনিবেশিক বিরোধী প্রবণতা এবং গোষ্ঠীগুলির সাথে সারিবদ্ধ হওয়ার একটি চিহ্নিত প্রবণতা দেখায়। মুহাজিরদের লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তান ও তুরস্কে পৌঁছানো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে এবং সেখান থেকে সোভিয়েত মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল। বলশেভিক অঞ্চলগুলিতে, তারা একটি আদর্শিক রূপান্তর করেছিল।
15 ডিসেম্বর 1920-এর সিপিআই-এর কার্যবিবরণীতে আরও তিনজনকে প্রার্থী সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা প্রকাশ করা হয়েছে যাদের পার্টির পূর্ণ সদস্যতার জন্য তিন মাসের পরীক্ষামূলক সময় শেষ করতে হয়েছিল। একই সভায় রায়, শফিক ও আচার্যকে নিয়ে তিন সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটিও নির্বাচিত হয়। দলটি তুর্কিস্তানে নিবন্ধিত হয়েছিল এবং 1921 সালে আন্তর্জাতিকের তৃতীয় কংগ্রেসের সময় একটি পরামর্শমূলক কণ্ঠের সাথে কমিন্টার্ন দ্বারা একটি গ্রুপ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল। 1921 সালের প্রথম দিকে পার্টিতে যোগদানকারী অনেক প্রাক্তন মুহাজির মস্কোতে ভ্রমণ করেছিলেন এবং নতুন শুরু হওয়া ইউনিভার্সিটি অফ দ্য টয়লার অফ দ্য ইস্ট -এর নথিভুক্ত হন ।
সিপিআই গঠনের পর তাসখন্দে একটি ভারতীয় সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্কুলটি 1920 সালের অক্টোবর থেকে 1921 সালের মে মাসের শেষ পর্যন্ত কাজ করে। এর ছাত্র, যেমন রফিক আহমদ এবং শওকত উসমানী, পরে মস্কোর ইউনিভার্সিটি অফ টয়লারস অফ ইস্টে স্থানান্তরিত হয়। মুজাফফর আহমদের মতে (ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ) নথি থেকে অন্তত ২১ জন তরুণ মুহাজির ছাত্রের নাম চিহ্নিত করা যেতে পারে। তারা তাসখন্দ মিলিটারি স্কুলে যোগদান করেছিল এবং পরে তাদের মধ্যে কয়েকজন মস্কোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয় যখন তারা ভারতে ফিরে এসে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলে।

পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় তাদের বিচার করা হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। শওকত উসমানি যিনি 1924 সালের কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, 1929 সালের মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় মীর আবদুল মজিদের সাথে পুনরায় দোষী সাব্যস্ত হন। মুজাফ্ফর আহমদ সিপিআই-এর তাঁর স্মৃতিকথা দুটি আবদুল মজিদ এবং ফিরোজউদ্দিন মনসুরকে উৎসর্গ করেছিলেন। অগ্রগামী প্রাক্তন মুহাজিররা ভারত থেকে কমিউনিস্ট হয়েছিলেন।
যদিও অভিবাসী কমিউনিস্টরা যখন তারা ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তখন তারা নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু বিদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম ভারতের অভ্যন্তরে কমিউনিস্ট আন্দোলনের উত্থানের পূর্বে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাসখন্দে পার্টি গঠনের পর মুজাফফর আহমদ, এস.এ. ডাঙ্গে, সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার এবং অন্যা😂ন্যদের সাথে যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল যারা 1917 সালের বলশেভিক বিপ্লবের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রাজনীতির দিকে ঝুঁকছিলেন এবং ছোট ছোট সংগঠনগুলিকে সংগঠিত করেছিলেন। 1921 এবং 1922 সালের শেষের দিকে বোম্বে, কলকাতা, মাদ্রাজ, লাহোর এবং কানপুরে কমিউনিস্ট দলগুলি।
*****************************************
সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে?

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি 1925 সালের 26 ডিসেম্বর কানপুরে প্রথম পার্টি কনফারেন্সে গঠিত হয়েছিল যা তখন কাউনপুর নামে পরিচিত ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন এম.এন. রায়, তার স্ত্রী ইভলিন ট্রেন্ট, অবনী মুখার্জি এবং এম.পি.টি. আচার্য।
ভারতীয় কমিউনিজমের প্রতিষ্ঠাতা কে?
মানবেন্দ্রনাথ রায়, এম এন রায় নামেই বেশি পরিচিত, (২১ মার্চ, ১৮৮৭-২৫ জানুয়ারি, ১৯৫৪). ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন ভারতীয় বিপ্লবী, উগ্র কর্মী, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক। রায় মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টি এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (তাসখন্দ গ্রুপ) এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
তাঁর পেশা কি ছিল?
- বিপ্লবী, মৌলবাদী কর্মী, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, দার্শনিক.
তাঁর রাজনৈতিক দল: যুগান্তর, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টি, র্যা ডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি.
তাঁর আন্দোলন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলন, হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র। তিনি কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের কংগ্রেসের প্রতিনিধি এবং চীনে রাশিয়ার সহযোগী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, রায় উদারপন্থী মানবতাবাদের দর্শনকে সমর্থন করার জন্য অর্থোডক্স মার্কসবাদ থেকে দূরে সরে যান, উদারতাবাদ এবং কমিউনিজমের মধ্যে একটি তৃতীয় পথ নির্ধারণের চেষ্টা করেন।
ভ্লাদিমির লেনিন বিপ্লবী ভ্যানগার্ড হিসাবে কমিউনিস্ট পার্টির ধারণাটি বিকাশ ঘটিয়ে অছিলেন, যখন ইম্পেরিয়াল রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন মতাদর্শগতভাবে বিরোধী দল, বলশেভিক দল ("সংখ্যাগরিষ্ঠদের") এবং মেনশেভিক উপদল ("সংখ্যালঘুদের") মধ্যে বিভক্ত ছিল।
(https://cpim.org/history/formation-communist-party-india-tashkent-1920)

1919 সালে কোন কমিউনিস্ট সংগঠন গঠিত হয়?
কমিউনিস্ট লীগ 1919 সালের মার্চ মাসে সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টির লন্ডন জেলা পরিষদ এবং গাই অলড্রেডের গ্লাসগো নৈরাজ্যবাদী গ্রুপ সহ লন্ডন ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।(Wikipedia).

Like in other parts of the world, the Russian Revolution of 1917 served as a great inspiration for revolutionaries in India who at that time were engaged in the struggle for the liberation from British rule. Many of them were living in exile and had been in contact with Lenin and the Bolshevik Party...

02/10/2023

Passage of Women’s Reservation Bill before six years of Implementation?

After 27 years, on 20th September, 2023 the Women’s Reservation Bill was passed by the Parliament of India, in both Houses almost unanimously except two against in the Lok Sabha. It’s a historical Day for India. Since 1996-2010, several attempts were made but the Bill did not see the day of light.
It was late Geeta Mukherjee (seven time MP from CPI) who for the first time moved a Private Members Bill on Sept 12, 1996, on the floor of the House. She sincerely believed that for empowerment of women, reservation of seats is a must. “It is high time that the women get their recognition in society building and they voice their rights on the Parliamentary and legislative floors backed by adequate numerical strength”. In July 1947, Renuka Ray , one of the 15 female members of the Constituent Assembly said that reservation of seats for women will bar their consideration for general seats, “however competent they may be”. So her suggestion was that women will get more chances in future of free India to prove their ability without reservation. But unfortunately, it was not happened. The number of women representatives in Legislature remained extremely bad even after several decades. Women are preoccupied in domestic duties and face many hurdles of socio-economic backwardness and Indian mind-set. The enactment of the 73rd and 74th constitutional amendments reserved 33% seats in the village panchayats and urban local bodies for women has brought success for women and recognition of their appreciated role despite all criticism against them. Hence, the demand for percentage of reservation in legislative Assemblies has gained solid ground.
The present ruling party BJP made an electoral promise as ‘one vote for BJP would ensure at least one third women’s representation’ but it did not get time for implementation of promise during its first term. BJP repeated its promise in 2019 election manifesto, but did not list the Bill even once in last four years, and now at the end of second term, it attempts to ensure that 18th Lok Sabha will see the 33 percent Women’s representation. Anybody can say that the Bill is only election propaganda to make the Indian women foolish again; it is like other jumla which the party has proved earlier. The question remains when BJP listed the government’s work for women advancement as providing Gas cylinder, toilets etc. it has no list of women M.Ps, and M.L.As in 16 states (10+6) ruled by BJP and its Alliances. History says, when the Bill was adopted in the Rajya Sabha in March 2010, one BJP leader said in the discussion that the passage of the Bill was subject to condition of “order in the House”. This was significant as there were already some players for “disorder” in the House. It is said that the Opposition parties including BJP did not want the UPA Government would take the credit of such an historical Bill! But exceptionally woman leader BJP, late Susma Swaraj supported the Bill for bigger cause across the party line. In fact this is the mirror of failure of implementation of the good laws in this country. In the 17th Lok Sabha, women representatives are only 14%.
Reasons of failure of the Bill in 1996 an 2010 and third time uncertainty for 2023 Bill:
i)Opposition to the Bill in the past decades: ‘Since 1996, multiple governments have introduced various versions of the women’s reservation Bill but failed to enact law due to a lack of political consensus. The UPA government tabled a women’s reservation Bill in Rajya Sabha in 2008 and passed it two years later with 186/1 votes. The UPA came close to success, but when the Bill was sent to Lok Sabha as per parliamentary procedure , it did not come reality due to opposition by various political leaders including UPA’s allies, and it lapsed upon the dissolution of the House in 2014’.
ii) Imperfection of the Bill : The current Bill, 2023 is similar version of the Bill of 2008 giving mandate of 33% reservation for women in Lok Sabha and Lower House of State Assemblies, but not for Rajya Sabha and Upper Council of state legislature. The fact is that Rajya Sabha currently has lower representation of women. The current Bill maintains the existing SC / ST reservation but not for OBC.
iii) The main loophole of the Bill - there is no timeline of Implementationwhich is very important. The Bill merely reads that it shall come into effect “after an exercise of delimitation is for this purpose after the relevant figures for the first Census taken after commencement of the Constitution (one hundred and twenty eight Amendment ) Act 2023 has been published”. Moreover, it does not specify the cycle of elections from which women will get their due share to fulfil their long pending aspiration.
iv) After delimitation, after Census, and after election, the Bill will be implemented, as the Government says. In this process, it is to wait for six years! So, why the government is in hurry to pass the Bill? Is it to make the women obliged? Is that only to gain trust of women voters?
The BJP has to clarify it. Because after six years, we don’t know what will happen. This Bill failed several times before. The Indian political leaders of today have been in a deep rooted feudalistic mind set. To them, woman is only a s*x identity, not accomplished human being. Mulayam Singh Yadab justified his adverse vote against the Bill saying that it will 'encourage the male Parliamentarian to engage in wolf-whistling towards their female colleague’! We can't hope that this mind- set will be changed soon. Besides, doubt remains about the philosophy of ‘Sangha Parivar’ regarding women. They believe in ‘Hindu’ women ideal hood, not in modern women of being able to take decision for state and society sitting on the floor of Parliament.
The people concerned say that it is unnecessarily linked to the Census, because Seats are not going to be decided on the number of female voters. Similarly delimitation has also nothing to do with the method of reservation. Hence according to them, this is nothing but to delay the procedure. They ask when this bill will be actualised ‘after, after and after’!
Our view : We suggest it is the high time for the ruling party to implement the Bill being passed unanimously, if it does not want to repeat the fate of UCC Bill. In different context, Purnima Banerjee proposed that ‘in respect of the number of women now occupying seats in the Assembly, if any of the women vacate their seats, they should be filled up by women’ This ‘provision would be a good starting point for reservation in the Upper house, not just for women but also for SC/ST and other minorities’ .
Above all, the Government has to take a role of firm decision beyond election -politics to win the women vote really!

Source: The Indian Express and other News papers,

i Renuka Ray (1904-1997), Freedom fighter, social activist and politician.nominated to Central Legislative Assembly , , a member of Constituent, a member of Constituent Assembly (1946-47)

ii. Purnima Banerjee-(1911-1951), Indian Independence Activist and member of Constituent Assembly of India.

Address

Kolkata

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Society of Social Scientists - SOSS posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share