26/11/2024
কিছু সংযোজন , কিছু কথা।।
"...কেন তিনি (মানবেন্দ্রনাথ রায়)কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক পরিধির বাইরে চলে গেলেন, বা তাঁকে বাইরে বের করে দেওয়া হল , স্তালিন, জিনোভিয়েব বা বুখারিনের সঙ্গে কী কী প্রশ্নে তাঁর মতবিরোধ হয়েছিল , তা তিনি নিজে কোথাও প্রকাশ্য ভাবে আলোচনা করেননি, অন্য কাউকে করতে দেখিনি। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। অবশ্য আমার জানার বাইরেও এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কিছু কথা থাকতেই পারে। অথচ রায় মার্ক্সবাদী শিবির থেকে বেরিয়ে গেলেও নিজে কোথাও কমুনিস্ট আন্তর্জাতিক বা স্তালিন প্রমুখ সোভিএট্ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর বহিস্কার বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে প্রকাশ্য নিন্দা বা বিরোধিতা করে কিছু লেখেননি। তাঁর এই মহত্ব ও ঔদার্যও তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল করে তোলেনি। বরং একবার শিবির বহির্ভূত হওয়ার ফলে আমরা মার্ক্সবাদীরা, বিভিন্ন বামপন্থী দলের কর্মী নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা তাঁর প্রতি পঞ্চাশ-ষাটের দশক পর্যন্ত প্রবল বিরূপ ছিলাম।পরে বিরূপতা কাটলেও বোধ হয় রায় সম্পর্কে আমরা অনেকটা উদাসীন থেকে গিয়েছিলাম। তাঁর নাম নেওয়াও পাপ, রচনাবলী পড়ে দেখাতো অনেক দূরের কথা--এরকম একটা মনোভাব আমাদের অনেকের মধ্যে আজও বেশ শক্ত হয়ে চেপে বসে আছে। তাঁর সমসাময়িক বা পরবর্তী কালের মার্ক্সবাদী নেতাদের মধ্যে যাঁরা অন্তত মুখে স্বীকার করেছেন , তাঁরা রায়ের কাছে অনেক কিছু শিখেছেন , তাঁরাও কোথায় কী পেয়েছেন, বা কী নিয়েছেন ,ঋণস্বীকৃতির ছলেও তার কিছু উল্লেখ করেননি”। প্রবন্ধকার শ্রী মুখোপাধ্যায় আরও মন্তব্য করেন যে “এমনকি, তাঁর দর্শনে কোথায় কী কী ভুল হয়েছে , কোন কোন প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে তাঁদের মতপার্থক্য , তাও তাঁরা কেউ মুখ ফস্কে বলতে চাননি। অনেকটা যেন নৈ:শব্দের বান মেরে তাঁকে আমরা চিন্তা-মননের জগতে একঘরে এবং অপ্রাসঙ্গিক করে রাখার চেষ্টা করেছি।" (অশোক মুখোপাধ্যায় , মুক্ত মন মুক্ত চিন্তা , এপ্রিল- সেপ্টেম্বর,২০২৪) . এম. এন রায়ের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে যাদের মন উত্তরহীন -প্রশ্নে বিচলিত, অথবা কেন তাঁর নাম উচ্চারিত হয়না, সেই উত্তর পেতে অশোক মুখোপাধ্যায় লিখিত একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধের এই ক্ষুদ্র অংশটি কিছু সাহায্য করতে পারে। প্রসঙ্গত, আমি একটু সংযোজন করতে চাই।
প্রথমতঃ “ এমনকি, তাঁর দর্শনে কোথায় কী কী ভুল হয়েছে , কোন কোন প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে তাঁদের মতপার্থক্য” , এ বিষয়ে কিছু আলোচনা পাওয়া যায়, অন্তত আমি পেয়েছি। সবকিছু হাতের সামনে নেই, তবু এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করব সম্প্রতি প্রকাশিত আর এস পি সংগঠনের মুখপত্র গনবার্তা,( শারদীয় সংখ্যা , ২০২৪ , ১৪৩১) র নাম উল্লেখ করতে চাই। সেখানে মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক দেবেশ রায়চৌধুরীর অনেক পুরনো একটি প্রবন্ধের অনুবাদ উল্লেখ করছি। (M.N.Roy’s Concept of State From Marxism to New Humanism: An Assessment of M.N.Roy’s Thought. By Debesh Roychowdhury. Society and Change, Vol.V Nos 2-3, January to June, 1988, PP. 263-282) "মার্ক্সবাদ থেকে নব মানবতাবাদ : এম. এন. রায়ের চিন্তা ধারার মূল্যায়ন” -এই শিরোনামে। দেবেশ রায়চৌধুরী একজন কমুনিস্ট তাত্ত্বিক হিসাবেই মানবেন্দ্রনাথের চিন্তার মূল্যায়ন করেছেন। পাঠক এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত হতে বা না হতে পারেন, মতানৈক্য বোধ করতে পারেন, তবে পড়তে ভালো লাগবে ও যুক্তিকে শান দেবে, এটুকু বলা যায়. .. দীর্ঘ প্রবন্ধটি ১৯৮৮ সালে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। জার্নালটির সম্পাদক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ইংরেজি সংখ্যাটি এখন পাওয়া না যেতে পারে। তবে হাতের কাছে অনুবাদটি পড়ে দেখতে পারেন। এই সঙ্গে মনে করতে চাই , অধ্যাপক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাদের মাস্টারমশাই ছিলেন, এবং পি এইচ ডি কাজের জন্য কলকাতায় রবীন্দ্রভারতীর গ্রন্থাগারিক রেডিক্যাল হিউম্যানিস্ট ডক্টর সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে বুদ্ধদেব স্যারের কাছে কাজ করার সুপারিশ করে বলেছিলেন যে 'এম.এন রায় সম্পর্কে গবেষণার জন্য এখানে (কলকাতায়) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যোগ্যতম ব্যক্তি'। গান্ধীর নন-কোঅপারেশন ও সত্যাগ্রহী আন্দোলনের উপর তাঁর অথেন্টিক গ্রন্থ, মাস্টার ডিগ্রীতে যা আমাদের পাঠ্য ছিল। অথচ তিনি গান্ধীবাদী বা রায়বাদী ছিলেন না, সেটা সকলেই জানে।
২) দ্বিতীয়ত উল্লেখ করতে চাই যে, বহুদিন আগে, সম্ভবত নব্বই দশকের প্রথম দিকে, অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায় ( d. 26th November 2023) একাডেমিক দৃষ্টিকোন থেকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন এম.এন. রায়ের রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে। ‘দেশ কাল ও সমাজ’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে রায়ের জাতীয়তাবাদ থেকে মার্ক্সবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ ও নব মানবতাবাদ দর্শনে উত্তরণের পথে বিভিন্ন বাঁক ও জটিলতা নিয়ে আলোচনার প্রারম্ভিক চেষ্টা করেন এবং স্যার নিজস্ব মত, বলা যায় দ্বিমত, উচ্চারণ করেছিলেন।
বাংলার বিখ্যাত সাংবাদিক তুষার কান্তি ঘোষ, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, তৎকালীন আনন্দবাজর গোষ্ঠীর অনেক বাঙালি রায়ের বুদ্ধিমত্তা ও তাঁর বৈচিত্রপূর্ণ রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বিশেষ শ্রদ্ধা ও সমীহ বোধ করতেন। দেরাদুনে তাঁর মৃত্যুর পর আনন্দবাজারের একটা কার্টুন ছবি সেই প্রমান দিয়েছিল। ক্যালকাটা হাই কোর্টের বিচারপতি ফনি ভূষণ চক্রবর্তী (১৯৬১), বাংলার অধ্যাপক বি.এন দাশগুপ্ত ,মানবেন্দ্রনাথের উপর গ্রন্থ লেখেন। শোনা যায়, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখোপাধ্যায় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সম্পর্কে গভীর শ্রদ্ধাবশত হাওড়া জেলার আমতায় রায়ের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে রাষ্ট্রপতি হবার পরেও আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। স্কুলটির নাম তাজপুর এম. এন. রায় ইনস্টিটিউশন,১৮৯৫, এবং সরকার শিক্ষাবিভাগ পরিচালনা করে, (প্রতিষ্ঠাতার নাম প্রায় হারিয়ে গেছে)। প্রফেসর অমল মুখোপাধ্যায় এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় দুজনেই সিউড়ি কলেজে অধ্যাপক গৌরীপদ ভট্টাচার্যের ছাত্র ছাত্র ছিলেন। ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের কথা বাদ দিয়েই বলছি। যেমন, প্রফেসর নির্মল চন্দ্র ভট্টাচার্য এশিয়াটিক সোসাইটিতে ১৯৭৬ সনে এক দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন কেবলমাত্র রায়ের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ধারণার উপর, সেই বক্তৃতা পরে গ্রন্থ রূপে প্রকাশ করেছিল এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৮০ সালে। বইটির নাম- ‘সোশ্যাল এন্ড পলিটিকাল আইডিয়াস অফ এ ম. এন .রায়'। ইদানিং কালের মার্ক্সবাদী চিন্তাবিদ অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত বিভিন্ন আলোচনা সভায় এম .এন রায়ের উপর আলোচনা করেছেন। এম. এন রায়কে বুঝতে তাদের ভুল হয়েছিল, একথা তিনিও স্বীকার করেছেন। কলকাতা জিজ্ঞাসা দপ্তরে তিনি গিয়েছেন এবং শিবনারায়ণ রায়ের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা ছিল, তবে নিজের লেখায় তিনি এসব কথা লিখেছেন কিনা জানা নেই। মানবেন্দ্র অনুগামীদের কথা ছেড়ে দিয়ে বলা যায় যে, অধ্যাপক অম্লান দত্ত, নিরঞ্জন ধর, আবু সৈয়দ আইয়ুব প্রমুখ রায়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দর্শন ও নৈতিকতা নিয়ে সমূহ আলোচনা করেছেন। তাদের গ্রন্থ এর সাক্ষ্য দেয়। বাংলা ভাষায় রায়ের গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছে খুব কম, তাই এখানে চর্চার জায়গাটা বিস্তার লাভ করেনি। বাংলা ভাষায় তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থ নেই বললেই চলে। জীবনের প্রধান সময়টা তাঁকে বিদেশে থাকতে হয়েছে , বিভিন্ন বিদেশি ভাষা আয়ত্ত করে সেই সব দেশে কমুনিস্ট আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়েছে।মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়। ভারতে ফিরে এসে জেলে থাকার সময় যে পড়াশোনা তিনি করতেন, সব বিভিন্ন বিদেশি ভাষার বই; জেল-মুক্তির পর দক্ষিণ ভারত, পশ্চিম ভারতে এবং উত্তর ভারতে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা বেশি ছিল এবং নিজের মাতৃভুমি বঙ্গে তাঁর বসবাসের স্থায়িত্ব কম থাকার একটা কারন কলকাতার গরম , হয়ত দীর্ঘদিন ইউরোপিয়ান জলবায়ুতে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে অসুবিধা হতো। অন্ধ্র প্রদেশে ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাম স্তরে এম.এন রায়ের ব্যাপক চর্চা হয়েছে। জি. ডি. পারেখ ও ডাক্তার ইন্দুমতী পারেখ মহারাষ্ট্রে রায়ের নামে এম.এন রায় হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পাস তৈরি করেন। ক্যাম্পাসটি ছিল সেন্টার ফর দ্যা স্টাডি অফ সোশ্যাল চেঞ্জ। আর, এল, নিগম (R.L.Nigam) ছাড়াও সাধারণ চিন্তাশীল নাগরিকগন ভারতীয় সমাজ সংস্কৃতি-অর্থনীতি রাজনীতি পরিবর্তনের বৈপ্লবিক ধারণার দ্বারা আলোড়িত হয়েছেন। রায়ের জীবদ্দশায় রেডিক্যাল পার্টি ও হিউম্যানিস্ট মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, পরবর্তী কালে তাঁরা রায়ের উপর ছোট আকারে যা লিখেছেন, সেগুলিও অমূল্য সম্পদ। সেগুলিকে বাংলায় অনুবাদ করতে পারলে বাঙলা-ভাষীদের কাছে রায় সম্পর্কে পরিচয়ের বিস্তার হতো।
স্প্যানিশ,ইংরেজি, ও অন্যান্য ইউরোপিয়ান ভাষায় এম. এন রায়ের বস্তুবাদী দর্শনের চর্চা হয়ে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থাবলীতে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ ও লেখার ঋণ স্বীকার দুষ্প্রাপ্য নয়। বাংলার বাইরে এম. এন. রায় চর্চা যথেষ্ট পরিমানে ছিল, আজও কিছু আছে, তবে কালের নিয়মে কমে এসেছে। সরকারি বদান্যতা বিহীন একলা চলার দম সকলের থাকে না। আগে তালিকায় অনেক অনুগামী ও অনুরাগীদের নাম ছিল, বর্তমানে অনেক নাম বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছে। রায়ের জীবদ্দশাতেই চল্লিশ দশকের শেষদিকে তাঁর চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনার শুরু। যুক্তিপূর্ণ আলোচনা যত বিরূপ হোক না কেন, রায় নিজে তা এন্ডোর্স করতেন। একটা উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। প্রফেসর এ.বি শাহ , (ভারতীয় সেক্যুলার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা) নব-মানবতাবাদের ২২টি থিসিসের কোনো বিশেষ অংশের উপর ক্রিটিকাল আলোচনা করেছিলেন এবং সেই লেখাটি নিজের সাপ্তাহিক পত্রিকায় রায় প্রকাশ করেছিলেন। অত্যন্ত উঁচু মানের বৌদ্ধিক শক্তির অধিকারী তথা ‘ইন্টেলেকচুয়াল ম্যাভেরিক’ এই গুজরাটি লেখকের প্রবন্ধটি পাছে অন্য কারো হাতে অবহেলিত হয়, এই জন্য রায় পত্রিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শিবনারায়ণ রায়ের কাছে নোট পাঠিয়ে বলে দেন- এ. বি. শাহর লেখাটি যেন অবশ্যই ছাপা হয় । শাহ সম্পর্কে রায়ের মন্তব্য ছিল “this chap has first rate mind”, “and his views have to be taken quite seriously. We are going to publish his piece in our weekly. Either you write a rejoinder, or I shall have to do it myself. I do not care to have some other radical tangling up with him.” এই বাক্যাংশ প্রমান করে রায়ের বৌদ্ধিক স্তর কতটা জড়তা -মুক্ত ছিল। সংকীর্ণ ইগো -আমিত্ব তাঁর বৌদ্ধিক সত্তাকে কখনো প্রভাবিত করতে পারেনি। এখানেই তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য। কিন্তু তা উপলব্ধি করার মত সমর্থ আমরা হয়ে উঠতে পারিনি । আর সেই কারনেই “তাঁর এই মহত্ব ও ঔদার্যও তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল করে তোলেনি”। যাঁরা অনুভব করতে পেরেছিলেন তাঁদের কয়েকজন ভারতীয় বিদেশে থেকেও বিদেশের রাজনীতির সঙ্গে রায়কে নিয়ে চর্চা করে যাচ্ছেন। যেমন, আমার চেনা একজন কামেস্বর ওয়ালি (K.C.Wali) , যিনি মনে করেন “A Thinking man is lost in the feeling monster of the masses” . আর একজন নারিশেটি ইনাইয়া। ব্রিটিশ জেলে বসে লেখা রায়ের বিরাট ভলিউম থেকে একটা বড় অংশের উপর ইনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পি. এইচ. ডি করেন। আশি বছর বয়সেও তিনি অবিরাম রায়ের ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ভারতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্টিশনার ভি.এম.তারকুণ্ডে নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার এমন একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ( Father of the Civil Liberties Movement )। জরুরী অবস্থা কালে জয়প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গে একত্রে সিটিজেনস ফর ডেমোক্রেসি (CFD )এবং পিপলস' ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (PUCL ) নাম দুটি এন. জি. ও. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নয়া দিল্লিতে আই .আর.আই ইনস্টিটিউটে (IRI) প্রতি বছর এম.এন. রায় মেমোরিয়াল লেকচার আয়োজিত হয় এবং সেখানে বক্ত্রতা দিতে আসেন দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী, হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের অবসর প্রাপ্ত বিচারক, পার্লিয়ামেণ্টের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গের রেডিক্যাল এসোসিয়েশনের অফিসেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকে যোগদান করতেন, যারা সকলে রায়পন্থী নন, অনেকে বামপন্থীও ছিলেন, কিন্তু রায় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং শ্রদ্ধা পোষণ করতেন।
রায়ের মতো কালা পাহাড়ি ব্যক্তিত্বকে 'ব্রাত্য' করার পিছনে কারণ গুলি বোঝার চেষ্টা করা যায়। উল্লেখযোগ্য যে কম্যুনিস্ট পর্বে মার্কসবাদকে মানবেন্দ্রনাথ কী ভাবে বুঝতেন, অন্যান্য মার্কসবাদী যেমন স্তালিন, জিনোভিয়েব বা বুখারিনের ,( (এবং বরোদিন ) তাদের সঙ্গে তাঁর মার্ক্সবাদ অনুভবের পার্থক্য কী ছিল , তা নিজে যেমন পরিষ্কার ভাবে বলেন নি, তেমনি সেই বিষয়ে তাঁর সেই সময়ের লেখা পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থ পড়ে দেখার সুযোগ ভারতে অনেকের ছিলনা, তেমনি মতাদর্শগত দিক থেকে তখন সময়টাও খুব ক্রিটিকাল ছিল। উক্ত নামগুলির সঙ্গে রায়ের কমুনিজম চিন্তার পার্থক্য নিয়ে মতভেদ হয়েছে রাশিয়াতে বসেই। স্তালিন ছাড়া পলিটব্যুরোর কয়েকজন সদস্য রায়ের মতভেদকে সহজ ভাবে নিতে পারেন নি। সোভিয়েত রাশিয়ার প্রকল্প অনুসারে চীন মিশন সফল না হওয়ায় স্তালিনও রায়ের প্রতি বন্ধুত্বকে ম্লান হতে দেন। এই মতভেদের প্রধান কারন খুঁজলে দেখা যায় যে কার্ল মার্ক্সের দর্শনে হিউম্যানিজম অংশটির প্রতি রায় যতটা আকৃষ্ট হয়েছিলেন, ততটা বোধ করি প্রলেতারিয়েত শ্রেনী এবং (লেনিনের মতে) পার্টির একচ্ছত্র ক্ষমতার প্রতি নয় । কারণ তিনি অন্তস্থলে এক হার্ডকোর হিউম্যানিস্ট হিসাবে মানব-হিতে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর জীবনীকার ও গবেষকদের এইরকমই সিদ্ধান্ত। বিশেষত , দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধ উত্তর পর্বে মার্কসবাদ রায়ের মনকে তৃপ্ত করতে পারলনা , তিনি মার্ক্সবাদ অতিক্রম করে ‘নব মানবতাবাদ’ নামে এক নুতন রাষ্ট্র দর্শন আবিষ্কার করলেন । সেটা অত কম সময়ে বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব ছিল। পুরোনো ধ্যান ধারণা ভেঙে যাচ্ছে , বিদেশ থেকে নুতন নুতন মতাদর্শ ভারতীয় তথা বাঙালিদের মনকে উদ্বেলিত করছে, সেসব অনুকরণের প্রবণতা শক্তিশালী হচ্ছে, এমত অবস্থায় পরিচিত ভাবনাকে আবার নুতন ঝাকুনি দেয়ার বিষয় বুঝবার চেয়ে হয়ত বিরূপতা তৈরি করতে পারে। শোনা যায়, তৎকালীন জাতীয়তাবাদী পুঁজিপতি নেতৃত্ব প্রতিদিন রায়ের প্রকাশিত পত্রিকাগুলি পড়ছেন, আর সংশয়ে ভুগছেন ; কারন, পুঁজিবাদ ও দেশীয় জাতীয়তাবাদের বুর্জোয়া স্বার্থ বিরোধী কমুনিস্ট রায়কে নাহয় চেনা গেল, কিন্তু কমুনিজমের বাইরে গিয়ে তিনি তবে কার স্বার্থের কথা বলছেন ?, ষষ্ঠ কঙগরেসে কমিন্টার্নের গোঁড়ামি প্রসূত অনুসৃত নীতিগুলির সঙ্গে একমত নন, অতএব তিনি বহিস্কৃত, তাহলে তাঁর পায়ের নিচে মাটি কোথায়, তিনি তখন 'no where' । এমন মানুষ যার পিছনে কোনো অথরিটির অনুমোদন থাকেনা, তাঁর কথা কে শুনবে। গান্ধীপন্থী মুখ্যমন্ত্রী (১৯৪৮) ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়কে বলতে শোনা যায়- কংগ্রেস অনুগামীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলছেন, 'তোমরা যেন আবার গিয়ে এম.এন. রায়ের দলে ভিড়ে যেও না '! এদেশে তখন গান্ধীপন্থার বাইরে স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র বসু অসুবিধায় পড়েছেন, রায় তখন সুভাষ বসুর পশে দাঁড়িয়েছেন। সেই সময়টাকে মনে রাখলে আমরা বুঝতে পারি এম এন রায় কেন ব্রাত্য হয়ে উঠলেন। সেই পরম্পরাগত অথরিটি-ঝোঁকা মানসিকতার পরিবর্তন এদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আজই বা কতটা আছে ? যে মুষ্টিমেয়রা আছেন , তারা সর্ব ক্ষেত্রে একা থাকেন, কোনও প্রত্যাশায় শাসকের ছত্রছায়ায় থাকা তাদের জীবন শৈলীর বাইরে।
অপরদিকে, শাসক বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তে এম.এন রায়ের নাম নেই , কারণ ‘সেখানে বস্তুবাদের চাহিদা কম’ । আর একটু পেছনে তাকিয়ে দেখা যায়। জহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসু বিস্ময় -বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে রায়কে দেখেছেন, কিন্তু আধিপত্যবাদী ক্ষমতা- রাজনীতির বিষয়ের সঙ্গে জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ধারণায় পার্থক্য ইত্যাদি রায়কে নেহেরু-সুভাষ থেকে আলাদা করে দেয় , তাঁরা হাত মেলাতে পারলেন না। বিশেষত প্রচুর পড়াশোনা করা পন্ডিত নেহেরু দেশের স্বাধীনতায় রায়ের সুগভীর আত্মত্যাগ এবং রায়ের স্বকীয় বোধের মার্ক্সবাদ / সমাজতন্ত্রবাদ সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন। আমরা অনেকেই জানিনা যে ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রথম দিকে নেহেরু রায়ের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রায়ের সঙ্গে দ্বিমত হয়। তা হোক , কিন্তু রায়ের এই পরোক্ষ অবদানের কথা কি তিনি স্বীকার করে গেছেন? দেরাদুনে রায়ের মৃত্যু শয্যায় তিনি গিয়ে দেখা করেছেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সরকারি ভাবে রায়ের স্মৃতি রক্ষায় কিছু কি করেছেন? জওহরলাল, সুভাষচন্দ্র প্রমুখ কমুনিজম বিযুক্ত সমাজতন্ত্রবাদী, অপরদিকে রায় তখনও কমুনিস্ট বলেই পরিচিত। কবল তাই নয়, রায়ের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারি স্তরে বিরূপতা অথবা ঔদাসীন্য ইত্যাদির কারন আরও গভীরে। সোভিয়েট রাশিয়াপন্থী ভারতীয় কমিউনিস্টদের কাছে রায় একজন 'জাতিচ্যুত' ছাড়া কেউ নন।. ক্ষমতা-নিস্পৃহ রায়কে তাঁরা চিনতে ভুল করলেন, নাকি অন্য কিছু?
তদুপরি, তাঁর অকস্মাৎ অকাল মৃত্যু ওই দর্শন চর্চার উপর প্রায় যবনিকা টেনে দিল। তাঁর উত্তরসূরীগণ তখনও সবাই পূর্বের চিন্তার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। এ বিষয়ে রায় সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন, তাই বিভিন্ন স্টাডি ক্যাম্পে তিনি সেসব মনস্তত্ব নিয়ে আলোচনাও করেছেন ।
আশোক মুখোপাধ্যায় লিখছেন: মার্কসবাদকে অতিক্রম করে নবমানবতাবাদের প্রতিষ্ঠাকালেও রায় তাঁর ইংরেজি মুখ পত্রের নাম দিয়েছিলেন The Marxian Way এবং এই সময় একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন What is Marxism?(1943) এবং তার মধ্যে তিনি মার্ক্সবাদের যে দার্শনিক-নৈতিক ব্যাখ্যা দেন তা এক কথায় সত্যিই অনবদ্য। শুধু তখন কেন, আজ পর্যন্ত কোনো মার্ক্সবাদীকে ঠিক এইভাবে বিষয়টিকে রাখতে দেখা যায় না." । বামপন্থী রাজনীতিকগন রাজনীতির চক্র থেকে বেরিয়ে এম, এন রায়ের The Marxian Way, The Humanist Way জার্নালগুলো পড়ার সময় করতে পারেননি, তথা প্রয়োজন বোধ করেননি। কমিউনিস্টরা ভাববাদী দর্শনের কঠোর সমালোচক, অথচ বস্তুবাদী বৈপ্লবিক দর্শনের চর্চা তাঁরা কতটুকু করেছেন? এম. এন. রায়ের Materialism: An outline of the History of Scientific Thought’ বইখানা আদৌ কোন বাঙালি মার্ক্সবাদী পড়েছেন কিনা জানা যায়না (১৯৪০, ১৯৫১)।
যাঁরা কিছু পড়েছেন বা শিখেছেন, তাঁরাও স্বীকার করতে ভয় পেয়েছেন কেন? এই প্রশ্নটিও কেউ ভাবেননি । তাই তাদের নব প্রজন্ম উজ্জ্বল বুদ্ধির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বস্তুবাদী দর্শনের যথার্থ অনুসন্ধিৎসু হতে পারেনি। দুর্ভাগ্য এই যে অনেক বাঙালির "জ্ঞানী -গুণী " অহংকার এম.এন রায়ের কাছে পৌঁছতে দেয়নি। অশোক মুখোপাধ্যায় এই খন্ড চিত্রে অনেক না বলা কথা তুলে ধরেছেন। বামপন্থীরা অনেকেই জানেন না যে চিন্তার ভিন্নতা সত্ত্বেও জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মানবেন্দ্রনাথ ও তাঁর প্রধান উত্তরসূরিদের উপর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন, তবে প্রদর্শন করতেন কিনা তা তেমনটা জানা যায়নি, যেহেতু প্রকাশ্য কাজকর্মে তা দেখা যায়নি । তবে বাংলার রেডিকাল হিউম্যানিস্টরাও সম্পর্ক স্থাপনে কোন উদ্যোগ নিয়েছেন, এমন তথ্যও নেই.। বরং শোনা যায়, রেডিক্যাল নেতৃত্ব যদি একটু এগিয়ে আসতেন (আপ্রোচ করতেন), তাহলে জ্যোতি বসুর সময়ে, এমন কি বুদ্ধদেব বাবুর সময়ে সল্টলেকে রাডিক্যালদের স্থায়ী অফিস ভবন পাওয়া কঠিন ছিলনা। প্রথম দিকে, বিশেষত কমিউনিস্ট পার্টির নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে রায়ের সম্পর্কে যে ভুল ধারণার বীজ বপন হয়েছিল, পরবর্তী কালে সেটা কেটে যায়। তথাপি কোথায় ‘ কিন্তু’ ছিল ?
শ্রী মুখোপাধ্যায়ের মতে রায়কে দু' ভাবে কমিউনিস্ট পার্টি ব্যবহার করতে পারতো। প্রথমে বস্তুবাদী যুক্তিবাদী জ্ঞানের চর্চায় রায়ের কাছ থেকে নেবার মতো অনেক কিছু ছিল.এবং তা করলে বিজ্ঞান আন্দোলন , বিজ্ঞান- দর্শন চর্চা অনেক এগিয়ে যেতো। আর একটি হল, জ্ঞান চর্চার রীতিনীতির দিক থেকেও রায়ের চর্চা আবশ্যিক ছিল, এবং সেখান থেকে কতটা নিতে হবে এবং কতটা বাতিল করতে হবে, এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলে "আমরা সমান ভাবেই উপকৃত হতাম"।
এর উত্তরে আমাদের মনে হয়, রায়ের বিদ্যাবুদ্ধির পরিচিতির অভাবে তাঁকে ব্যবহার করার কথা কারও মাথায় আসেনি। অথবা এর পিছনে সম্ভাব্য কারন রায়ের দর্শন ও রাজনীতির সঙ্গে কিছু মৌলিক পার্থক্যকে তারা জনসমক্ষে আসতে দিতে চায় নি। রায়ের যে যুক্তিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক রাজনীতি অনুশীলনের (সাইন্টিফিক পলিটিক্স) কথা বলা হয়েছে , তা সি পি এম রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতা- কেন্দ্রিক ও আমলা প্রধান ব্যবস্থায় দলীয় রাজনীতির ময়দানে সম্ভব নয়। দল ও শ্রেণী স্বার্থের মানদন্ডে অহিংসা, ন্যায় ও সাম্যের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। কাজেই কার্ল মার্ক্সের তাত্ত্বিক আদর্শের প্রেরনা একদিকে পড়ে থাকুক। বাস্তব রাজনীতির প্রয়োগে সর্বহারা শ্রেণীর বকলমে দলীয় গোষ্ঠী স্বার্থ প্রাধান্য বিস্তার করে, তারপর সব ইতিহাস। রায় প্রদর্শিত মুক্ত বিজ্ঞান চর্চার দ্বারা নিজের পায়ে কে আর কুড়াল মারবে , মূল প্রশ্ন সেটা। অন্তত এদেশে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে - বক্তৃতায় যতই ভালো কথা থাকুক, প্রকৃত শিক্ষা তথা বিজ্ঞান ও দর্শন চর্চায় জনসাধারণকে আলোকিত করা দলীয় রাজনীতির চোরাগলিতে হারিয়ে যায়। রাজনীতিকরা বিদ্বান নন, বিদ্যা চর্চার বালাই তাদের থাকেনা বললেই চলে, অন্যদেরকেও করাবার তাগিদ তারা অনুভব করতে পারেন না, তাদের জীবন চর্যায় সময় দখল করে নেয় ভোট-রাজনীতির গ্রামার অনুসারে দল ও ক্ষমতা বিস্তারের প্রবল মোহ। আধিপত্যের মনস্তত্ব যুক্তি বোধ ও বিবেচনা শক্তিকে কাবু করে রাখে। অর্ধ শিক্ষিত ভোটার সমাজ সেটাকেই গণতন্ত্রের মানদণ্ড ভেবে নেয়। সে যাই হোক , রাজনীতিকদের এক বিশেষ সুবিধা হল , ক্ষমতার নিয়মে তারা বিদ্বানদের শাসন করেন। ইতিহাসবিদকে, বৈজ্ঞানিককে তারা নিয়ন্ত্রণ করে দলীয় স্বার্থের কাজে ব্যবহার করেন। অনেকে চোখ বুজে থেকেছেন নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশনের ভেতরে; সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে রায়ের নুতন রাষ্ট্র ভাবনাকে তারা ‘কষ্ট কল্পনা’ বলে এড়িয়ে গেছেন। হয়ত প্রচলিত ধারনায় অভ্যস্ত রাজনীতির বাইরে না আসতে পারলে সেটা বোঝা যায়না। যেমন, ঘরের থেকে বাইরে না এলে সমগ্র ঘরটাকে দেখা যায়না। অতএব পঁচাত্তর বছরের স্বাধীনতার পরেও একজন হার্ডকোর স্বাধীনতা বিপ্লবী ও দার্শনিকের নাম সর্বত্র অনুচ্চারিত! তাতে আমরা আশ্চর্য হব কেন ? ? এম. এন রায়কে ‘একঘরে’ যদি করা হয়, তাতে সারা ভারতবর্ষে কার কি লাভ, অন্তত আমরা বাঙালীরা খুব লাভবান হয়েছি কি? এই আত্মা জিজ্ঞাসা জাগাতে পারলেই উত্তর মিলবে আশা রাখি। রেডিক্যাল মুভমেন্টের লক্ষ্য সেটাই। সেই পথে কাজ করে চলেছে মনি দাশগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত গোবরডাঙা রেনেসাঁ ইনস্টিটিউট, এবং দীপক দা পরিচালিত গোবরডাঙা বিজ্ঞান পরিষদ। তাছাড়াও কিছু সঙগঠন এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত।
26/11/24
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>