04/07/2024
গোপালের ভোগ।
লিখেছেন সুপ্রিয়া দাস।
Golpo Kutir is a content publisher & online bookseller based in Kolkata, India.
(823)
Golpo Kutir is Bengal’s first ever online fictional content publisher with 7 million readers per month and focuses mainly on Bengali tales. We are one of the ultimate destinations for all the happenings in the Bengali cultural world.
গোপালের ভোগ।
লিখেছেন সুপ্রিয়া দাস।
ভালো থেকো বাবা।
লিখেছেন রাণা চ্যাটার্জী।
#গুরুবচন।
সাবিরের ঘরের উঠোনে গোটা গ্রামটা ভেঙে পড়েছে। আর কিছুক্ষণ পরই রুবেলের ডেডবডি এসে যাবে। রুবেলের মোবাইলের লাষ্ট ফোনের কল দেখে সেনাবাহিনী থেকে অমিতকে যোগাযোগ করতেই কিছুক্ষণ চুপ হয়ে যায় অমিত— "রুবেল কা ঘর জানে কা রোড ম্যাপ আপকো পাতা হ্যায় জী? উহ্ কাল দেশকে লিয়ে শহীদ হো গ্যায়ে।"
"শহীদ!"
কথোপকথনে জানতে পারে গতকাল জঙ্গীদের সাথে এনকাউন্টারে মারা গেছে রুবেল। লম্বা, সুঠাম শরীরের বন্ধু রুবেলের কথাটা মনে পড়ে অমিতের— "জানিস ভাই, আব্বু আর টানতে পারছে না। এতগুলো পেট, কিছু একটা করতে হবে।"
তারপর নবম শ্রেনী পাশ করে একদিন চলে গেল সেনাবাহিনীতে, দেশের উত্তরের সীমান্তে— "জানিস বেশ কিছুদিন জঙ্গীদের উৎপাতটা বেড়েছে এখানে, গতকাল একজন ধরাও পড়েছে, বয়স পনেরো কী ষোলো। জানা গেল টাকার জন্য জঙ্গীদের হয়ে রেইকি করতে এসেছিল। অনিচ্ছা স্বত্বেও দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে বাধ্য করা হয়েছে তাকে জঙ্গীদের সঙ্গী হতে।" শেষ সেই ফোনের কথা এখনো কানে বাজছে অমিতের।
কফিন বন্দী ডেডবডিটা কবরে নামাতেই গর্জে ওঠা গান স্যালুটের সঙ্গে লুঙ্গী, গেঞ্জী পড়া কুঁজো শরীরের সাবির চাচা এক মুঠো মাটি কবরে ছিটিয়ে চীৎকার করে ওঠে, "পরিবারের এতগুলো পেট বাঁচাতে শহীদ হয়ে গেলি বাপ..."
স্টেশনে নেমে সমীরণ এক ঝলক চারপাশটা দেখে নিল। সেই পুরনো স্মৃতি, চায়ের দোকান, পরোটা ভাজার গন্ধ, মানুষের কোলাহল কিছুই পরিবর্তন হয়নি! সানগ্লাসটা নামিয়ে যখন স্টেশনের কর্নারে চায়ের দোকানে নজর পড়ল ফ্ল্যাশব্যাকে সমীরণের বছর পাঁচেকের রিপ্লে কেমন যেন সিনেমাটিক কায়দায় ধরা দিল। সে দেখতে পেল এই সেই চায়ের দোকানে পাশের টুলটিতে পাঁচ বছর আগের সমীরণ যখন সর্বস্ব হারিয়ে হতাশ হয়ে বসেছিল ঠিক তখনই সে লক্ষ্য করে এক বছর ষাটেকের বৃদ্ধ এক মনে বাঁশি বাজিয়ে চলেছে। কোনো দাবি নেই, নেই কোনো ভিক্ষাবৃত্তি— শুধু নিরন্তর শিল্প সাধনার সত্ব যেন মা সরস্বতী বেশে ধরা দিয়েছে বাঁশির সুরেলা মূর্ছনায়। বুড়ো এক দৃষ্টিতে স্মিত হেসে তাকিয়ে আছে সমীরণের দিকে। ফাটকা ব্যবসায় অর্থ উপার্জনের নোংরা জালে জড়িয়ে পড়া বছর ত্রিশের সমীরণ যেন আধমরা বছর ষাটেকের বুড়ো!
সেই দিন ওই মুহূর্তে সমীরণের ধমনী শিরায় স্রোত বয়েছিল পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত সংগীতের ঝংকার। ঠিক করেছিল ছেড়ে দেওয়া রেওয়াজ সে শুরু করবে, করেওছিল। আজ মহাপাত্র মিউজিক্যাল ট্রুপ এন্ড কোম্পানির মালিক সমীরণ মহাপাত্র দাঁড়িয়ে আছে কৃতজ্ঞতা জানাতে সেই বাঁশিওয়ালাকে যার জন্য আজ তার মৃত শিল্পসত্তা উদ্ভাসিত। কিন্তু সেই জায়গা এখন ফাঁকা, একটু এগিয়ে সমীরণ সেই চা-ওয়ালা ভাইকে বয়স্ক বাঁশিওয়ালা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, বছর দু'য়েক আগে উনি সম্ভবত ইহলোক ত্যাগ করেছেন। আফসোসে সমীরণ যখন চোখ বন্ধ করল তখনই অকস্মাৎ সমীরণ আবার দেখতে পেল যেন সেই ভদ্রলোক ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছেন, মুখে তাঁর সেই হাসি— এ কী! এ কী দেখছে সমীরণ! এ তো সাক্ষাৎ দেবদর্শন। ভগবানকে উদ্দেশ্য করে সমীরণের দু'চোখ বেয়ে পড়ছে অঝোরে বারিধারা যেন এ তার নিবেদিত অর্ঘ্য। তার মানসচক্ষে দেবদর্শন।
জুতোটা তাকে রাখা আছে বহুদিন। বেশ পুরু ধুলো বালির আস্তরণ এখন সেই জুতোর ওপর। অনির্বাণ জুতোর তাক পরিস্কার করার সময় এই জুতোটাকেও ঝাড়পোঁছ করে, রোদে দেয়। একবার তো মুচির কাছ থেকে রিফু করেও এনেছিল। সেই দেখে অনিন্দিতা বলেছিল, "কী দরকার, এই জুতো কেউ তো আর পরে না। ফেলে দিলেও তো পারো।"
নাহ, বাবার ব্যবহার করা রবারের জুতোটা ফেলেনি অনির্বাণ। স্পষ্ট মনে আছে এই জুতোটা পায়ে দিয়েই বাবা হেঁটে যেত মাথা উঁচু করে। দৃঢ় পায়ে ভেঙে দিত সামনে ধেয়ে আসা সমস্ত বাধা। অবশেষে স্বাচ্ছন্দের হাতছানি। প্রতিমাসের শেষে মাস মাইনের অঙ্গীকার। অবশ্য এখন অনির্বাণের কাছে সেসব মৃত স্বপ্ন। অকারণ ডামাডোলে তার নিজের কষ্টার্জিত স্কুল চাকরিটাও এখন লাল ফিতের ফাঁসে আঁটোসাঁটো বন্দী। অথচ সংসারের হাঁ মুখটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রতিদিন।
কিছু কিনতে গেলে কেঁপে যাচ্ছে হাত। জুতোর শুকতলা ছিঁড়ে এসেছে। এই মুহূর্তে নতুন একপাটি না হলে রাস্তায় বেরোনো দায়। কী মনে হতে বাবার পুরনো রাবারের জুতোটাতে পা গলালো অনির্বাণ। দেখে এতোদিনের অব্যবহারেও মলিনতা লাগেনি এতটুকুও।
দায়, দায়িত্ব, কর্তব্য পালনের সাথে বাবার মতো আপোষহীন লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটাও যেন জুতোটা পায়ে দেবার সাথে সাথেই সঞ্চারিত হয়ে গেল অনির্বাণের মধ্যে।
এন.এইচ. টু-এর আন্ডারপাসের নিচে এক পাগলি এসে জুটেছে ক'দিন। সম্বল বলতে তার কয়েকটি পুটুলি আর একটি ছেঁড়া কম্বল। তাহলেও নিত্য সংসারের জ্বালা থেকে বোধহয় নিজেকে মুক্ত করেছে সে।
দিন দুয়েক এভাবে যাবার পর রাস্তার ওপারে দোতলা বাড়ির গিন্নীর নজরে এল ওই পাগলি।
"আহারে বেচারি, ফুটপাতে কেমন পড়ে আছে! ওগো শুনছো? ওই পাগলিটাকে স্টোর রুমে রাখা ঐ পুরনো কার্লঅনের গদ্দাটা দিয়ে এসো না!" অনিচ্ছা সত্ত্বেও অবিনাশবাবু গদ্দাটা পাগলিটাকে দিতে গেলে, দাঁত খিচিয়ে তেড়ে এলো সে। ভয়ে গদ্দা ফেলে অবিনাশবাবু দূরে সরে গেল। রাগে ও ভয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগল, "ভালো করতে নেই তোদের। ঠাণ্ডায় মর এরপর, পাগলি!"
তৎক্ষণাৎ একটি বছর দশকের মেয়ে একটি পাতায় করে কিছু পান্তাভাত ও আলুচচ্চরি নিয়ে এল পাগলির কাছে। তা দেখে পাগলির মুখে কী হাসি, সাথে সাথে গোগ্রাসে তা খেতে লাগল আর অন্য হাতে মেয়েটির মাথায় হাত বুলাতে থাকলো, যেন সে এক অসীম পরিতৃপ্তি!
দূর থেকে দেখে অবিনাশবাবু বুঝতে পারলেন পাগলির আসলে দু'মুঠো খাবারের দরকার ছিল!
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আজ বড্ড চুপচাপ বিপদতারণ। তপতীর নজর এড়াল না। জানতে চাইল, “অমন চুপ করে আছ কেন? শরীর খারাপ নাকি?” মাথা নেড়ে ‘না’ বোঝালেন বিপদতারণ।
“তাহলে কেউ কিছু বলেছে?” আবার মাথা নেড়ে ‘না’ বললেন।
“তাহলে কী হয়েছে খোলাখুলি বলো।”
“কিছুই হয়নি।”
“খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?”
“চা খাব এক কাপ।” চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে তপতী বলল, “এবার বলো, আজ হঠাৎ এত চুপচাপ কেন?”
“দশ-বারোজনের মধ্যে আজ বিকালের আড্ডায় মাত্র আমরা দু'জন ছিলাম। বাকিরা সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। কেউ আসেনি। ফলে আড্ডাটা মোটেই জমেনি। বিকালের আড্ডাটা টনিকের কাজ করে। সেই টনিকে আজ বেজায় ঘাটতি।”
হেসে ফেললেন তপতী, বললেন— “ফোনে কথা বলেই তাহলে টনিকের ঘাটতি মিটিয়ে নাও।”
মিত্র আর গুপ্তবাবুর আজ মেগা কম্পিটিশন। এক সপ্তাহ ধরে নানান তোড়জোড়, কে কাকে হারাতে পারে, দু'জনেই প্রস্তুতির খামতি রাখছে না। অগ্রিম মাছের অর্ডার দিয়ে রেখেছে, শিবচরণকে প্রায় একই সুরে দু'জনেই বলে রেখেছে, "ফার্স্ট ক্লাস মাছ চাই শিবে।" সকালে মিত্রবাবু তো বিকেলে গুপ্তবাবুর হুমকি!
মফস্বলি এলাকায় দু'জনের প্রতিযোগিতা সকলেই উপভোগ করে, যেমন গতবছর মাঘে মিত্রবাবু মেয়ের বিয়ে দিয়ে সারা ফেলে দিয়েছিলেন, আর গুপ্তবাবু ফাল্গুনে। পরিচিতদের মধ্যে প্রায় দু'মাস চর্চার বিষয় ছিল, কে জয়ী? ভোট মোটামুটি ফিফটি ফিফটি।
ফাইনাল ডে, দুই বাড়ির জামাই উপস্থিত, প্রথম জামাইষষ্ঠী। নানাবিধ রান্নার পদ থরে থরে সাজিয়ে পরিবেশন করেছে শাশুড়ি মা। মিত্র বাড়িতে ইয়াব্বড়ো সাইজের চিংড়ি মালাইকারি, গুপ্ত বাড়িতে দই ইলিশ। মিত্রবাবু আর গুপ্তবাবু দু'জনের মুখে তৃপ্তির ছটা— যেন সেরা জামাই আদরে আমিই সেরা।
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অলরেডি ছবি ঘোরাঘুরি করছে। এবারও জনমত নিরিক্ষায় ফিফটি ফিফটি। সন্ধ্যার দিকে একটা ভিডিও শেয়ার হতেই, সবাই কমেন্ট করছে, "এই না হলে আমাদের মেয়ে।"
বাগানের এক কোণে মিত্রবাবুর মেয়ে স্নেহা, ইলিশ আর গুপ্তবাবুর মেয়ে দিয়া, চিংড়ি পরম সুখে খাচ্ছে, একে অন্যের মায়ের রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
স্নেহা হেসে বলছে, "বাবা আর কাকু কী মারাত্মক কম্পিটিশন দিয়ে জামাই ষষ্ঠী করল আনন্দের সাথে।" দিয়া আঙুল চাটতে চাটতে বলছে, "সে যাইহোক, আমাদের প্রিয় মাছ বদলাবদলি করে খাওয়াতেও কম আনন্দ নেই।"
স্নেহা, হাত শূন্যে ছুঁড়ে বলছে, "এমন জামাই ষষ্ঠী জিন্দাবাদ।"
ওভারব্রিজের নীচে, পাবলিক টয়লেটের তীব্র অ্যামোনিয়ার ঝাঁজ সহ্য করে বসে আছে বছর সত্তরের বুড়িটা। একে এত গরম তারপর আবার নিত্য যাত্রীর ভীড়, কোথাও আবার সান্ধ্যকালীন আড্ডা, সন্ধ্যার মুখে জমজমাট স্টেশন। গরম আমাকেও অস্থির করেছে কিন্তু একমাত্র স্থির ওই বুড়িটা। সামনের মেলানো মলিন চটের উপরে দুটো সাদা বেগুন, কিছু সাদা লঙ্কা, অল্প গাঁঠি কচু আর চারটে হাঁসের ডিম নিয়ে বসে আছে, মশায় ছেঁকে ধরেছে।
"এগুলো সব নিলে মোট কততে দেবে?" তেজলো বুড়ি তোবড়ানো গালে হাসি ফুটে উঠল, "আপনি একশো দেন বাবু, দিয়ে আমিও চলে যাই। লালগোলা থাকি তো!"
"নিশ্চই ছেলেমেয়ে দেখেনা?"
"উপরওয়ালা একাই তো পাঠিয়েছেন বাবু, একাই ফিরব! পেটের টানও আমারই, নাও বাপ।"
কোনো ক্ষেদ নেই, উষ্মা নেই, দিলাম একশো টাকা। যদিও রান্না করার ইচ্ছা আমার নেই আজ। রুটি তরকা কিনতাম হয়তো। একাই তো থাকি, মা-বাবা ভিন শহরে, পেটের টান! সবাইই একা বুড়ির কথায়। আজ প্রথমবার সবজি দিয়ে খিচুড়ি হলো আমার ছোট্ট রান্না ঘরে, ডিমও ভাজব একটা।
ঘাম।
লিখেছেন আফতাব হোসেন।
প্রতিশ্রুতি।
লিখেছেন পিয়ালী হাইত।
আইবুড়ো ভাত।
লিখেছেন অস্মিতা মাহাতো।
ব্র্যান্ড।
লিখেছেন সুমন্ত চ্যাটার্জী।
দেশভাগ।
লিখেছেন অরিত্র সান্যাল।
আধুনিকা।
লিখেছেন রিঙ্কু চট্টোপাধ্যায়।
“জানো, আজ রায়বাড়ির বৌদিকে দাদা এত্ত বড় একটা ফুলের তোড়া, কত্ত সুন্দর শাড়ি আর একটা সেন্ট এনে দিল। আমার সামনেই জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলল— হ্যাপি বার্থডে সোনামণি। আই লাভ ইউ।”
মলয়ার স্বামী রঘু কাঁধে গামছা নিয়ে গম্ভীর মুখে তার কথা শুনতে শুনতে নিজের রিক্সার হ্যান্ডেলটা ধরে ক্রমশঃ বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে গেল।
মলয়ার চোখে জল। কেমন মানুষ! নিজে তো কোনোদিন একটু ভালবাসা দেখাল না উপরন্তু লোকের কথা বললেও সাড়া করে না।
রোজকার কাজের দিন চলতে থাকে যেমন তেমন। হঠাৎ একদিন রায়বাড়ির বৌদির খুব পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। মলয়া কাজ সেরে সবে বেরোবে এমন সময় বৌদি ডেকে ওকে বলল, “দাদাকে ফোনে পাচ্ছি না রে। তুই একটু পাশের বাড়ির উমাদিকে ডেকে দে না...”
সেই থেকে টানা পনেরো দিন বৌদি হাসপাতালে ভর্তি। অথচ, দাদা বাড়ি আসে-যায় হাসপাতালে বৌদিকে দেখতে যাওয়ারও সময় পায়না। বৌদিকে বাপের বাড়ির লোকেরা দেখাশোনা করে।
বৌদি তিনমাস পর বাড়ি ফিরল ভালোয় ভালোয়। কিন্তু মলয়ার হলো ধূম জ্বর! এত জ্বরে তাকেও হসপিটালে ভর্তি করতে হলো। অবাক হয়ে মলয়া দেখল— রঘু তাঁর রিক্সায় তালা ঝুলিয়ে চারটে দিন একনাগাড়ে তার জন্য হাসপাতালে বসে রইল। ওষুধ, পথ্য সবকিছু জোগাড় করে, দিনে একবার হাসপাতালে বেডের পাশে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
মলয়া ভাবে এটাই কি সত্যিকারের প্রেম?
কন্যা দান।
লিখেছেন ঈশিকা প্রধান।
👨👦👨👧
“বেডসীট, গামছা, শাড়ি, তোয়ালা আছে-এ-এ-এ...” সাদা কাপড়ে বাঁধা বস্তা সাইকেলে চাপিয়ে রাস্তায় যেতে যেতে হাঁক দিল ফেরিওয়ালা। হাঁক কানে এল নমিতার। জানালার ফাঁক দিয়ে সে উঁকি দিল। দেখল, রাস্তার ধারে একটা গাছতলায় সাইকেল ঠেকিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে একজন ফেরিওয়ালা। ক’দিন আগে থেকে প্রলয়কে বলেছে একটা বেডসীট আনার জন্য, আনেনি। সে দরজা খুলে বাইরে বেরোল। দেখতে পেয়ে ফেরিওয়ালা বলল, “দিদি, ভাল ভাল শাড়ি, বেডসীট, গামছা, তোয়ালা আছে। লাগবে নাকি?”
নমিতা হাত নেড়ে ডাকল। ফেরিওয়ালা সাইকেল ঠেলে বাড়ির সামনে এগিয়ে এসে বস্তা খুলে দিয়ে বলল, “দেখুন দিদি, কোনটা পছন্দ।”
পছন্দ করে একটা বেডসীট কিনল নমিতা। দামাদাম করে ঠিক হল, তিনশো তিরিশ টাকা। নমিতা টাকা এনে ধরিয়ে দিতে ফেরিওয়ালা বলল, “দিদি, একটা অনুরোধ ছিল। এই গ্রামের রাস্তায় কোথাও খাবারের দোকান দেখতে পাইনি। খুব খিদে পেয়েছে। আপনাকে তিরিশ টাকা দিতে হবে না। তিনশো দিলেই হবে। বিনিময়ে কিছু খেতে দেবেন?”
নমিতার মনে পড়ে গেল, তার মায়ের কথা। তিনি বলতেন, ‘অতিথি দেব ভবঃ’। তিরিশ টাকা ফেরত না নিলেও সে ফেরিওয়ালার অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারল না। বাড়ির সকলের খাওয়া হয়ে গেছে। কেবল নিজের খাওয়া বাকি। সেই খাবার ফেরিওয়ালাকে দিয়ে দিলে নিজেকে রান্না করে খেতে হবে। তা হোক, বারান্দায় আসন পেতে বসিয়ে নিজের ভাত, তরকারি ফেরিওয়ালাকে খাওয়াল নমিতা। খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির হাসি হেসে বলল, “দিদি, দেবতা স্বর্গ থেকে নেমে আসে না। মানুষের মধ্যেই দেবতার অবস্থান। আজ আপনি আমার কাছে দেবতা।”
অনেকদিন পর আজ ডঃ সুদীপ সান্যাল শত ব্যস্ততার মাঝেও তার বৃদ্ধ বাবার সাথে দু'দণ্ড বসে কথা বলার অবকাশ পেয়েছেন। কথা যে একেবারেই হয়না এমনটা নয়, তবে প্রয়োজনের বাইরে খুব একটা হয়ে ওঠে না।
হঠাৎই সতীশবাবু ছেলেকে প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা বাবু, তুই যখন ছোট ছিলিস, তখন আমি তোকে কত্ত গল্প শোনাতাম আর তুই বলতিস বড় হলে আমিও এমনটা করতে পারব, যেখানে খুশি যেতে পারব একা একাই। আজ তো তুই অনেক বড় হয়েছিস— ক্ষমতা থাকলেও যখন যা চেয়েছিস সব করতে পেরেছিস?”
“তুমি হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছ, বাবা?”
“সত্যি কথা বলতো, এখন কি সেসব ইচ্ছা আর জাগে না?”
“ইচ্ছে করলেও উপায় কোথায়? কর্মজীবনে বন্দি এখন। অবসর নিয়ে তারপর একে একে সব সাধ মেটাব।”
“আর যদি তখনও না পারিস?”
“তবে আর কী! ভুলে যেতে হবে।”
“আর যদি ভুলতেও না পারিস?”
“তুমিও কি সব ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছ, বাবা?”
“পারিনি রে, আজ আশির দোরগোড়ায় এসে ভুলতেও পারিনি, তাই তো...”
“তাই তো কী?" কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সতীশবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “কিছু আক্ষেপ, কিছু অপেক্ষা আর উত্তর খুঁজে না পাওয়া কিছু অনন্ত জিজ্ঞাসার একটাই উত্তর— জন্মান্তর।”
আত্মসম্মানবোধ।
লিখেছেন শৌনক ঠাকুর।
সংসার।
লিখেছেন সঞ্চারী বসু সর্বাধিকারী।
দীপার আজও সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল। সারারাত কোমড়ের যন্ত্রণায় ছটফট করেছে সে। ঘড়িতে ন'টা বাজে, মিলি বৌদির মুখটা মনে হতেই মনে মনে ভয় পেয়ে গেল দীপা, বৌদি কাজে যেতে দেরি হলে খুব বিরক্ত হয়। দীপা ঠিক সাতটার মধ্যে ঢুকে যায় কাজে। রাতে রুটি-তরকারি রেডি করে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাড়ি যায়।
শিখাকে বিয়ে করে রঞ্জন দীপাকে তাড়িয়ে দিলে সেইদিন থেকে শুরু হয় দীপার জীবন যুদ্ধের লড়াই। রঞ্জনের বাড়ি থেকে চলে আসার একমাসের মধ্যেই দীপা বোঝে সে সন্তানসম্ভবা। নিজের আত্মসম্মান নিয়ে দীপা শুরু করেছে তার লড়াই, তার সন্তানকে নিয়ে সে একাই লড়াই করবে।
দীপার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি থাকে, বৌদির বাড়ি ভয়ে ভয়ে ঢুকল দীপা— "দীপা আজ থেকে তোকে আর আমার বাড়ি কাজ করতে হবে না, তোর এই মাসের মাইনেটা নিয়ে তুই বাড়ি চলে যা..." বৌদি বলল।
মাইনের কথা ভুলে কাঁদতে কাঁদতে মেইন গেটের দিকে পা বাড়াতেই মিলি বৌদি ডাকল, "আজ থেকে টানা একবছর তুই বাড়িতেই থাকবি, বাচ্চা হওয়ার পরেও যে সন্তানের ও নিজের প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে রে বোন! আমিও যে মা, একবছর পর তুই আবার কাজ করবি, কিন্তু ততদিন প্রত্যেক মাসের মাইনে আমি নিজে গিয়ে তোর বাড়িতে দিয়ে আসব, আর ওষুধপত্র যা লাগবে শুধু ফোন করে জানিয়ে দিবি, চলে যাব নিয়ে। সাবধানে থাকিস।"
কেঁদে ফেলে দীপা, বহুদিন পর কারোর ভালোবাসার, সহমর্মিতার ছোঁওয়া পেল। এই সহমর্মিতাটুকুই বেঁচে থাক প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালোবাসারূপে।
আর্তনাদ।
লিখেছেন সঞ্চারী বসু সর্বাধিকারী।
ভিটের টানে।
লিখেছেন গৌরী বিশ্বাস মৌ।
শিক্ষা।
লিখেছেন দীপা বিশ্বাস।
ছোট বউ গলা হাঁকিয়ে ডাকল, "দিদি, মেহুল ফোন করেছে।" মুখের ঘাম মুছতে মুছতে প্রতীভাদেবী ধমকের সুরে বলল, "শনিবার এলি না কেন? ঐ প্রাইভেট চাকরিটা ছেড়ে পারিবারিক ব্যবসা দেখ বুঝলি?" মেহুল উত্তরে একটা কথাই বলল, "মা আমি জুঁইকে বিয়ে করেছি।"
সেদিন গোঁড়া মুখার্জী পরিবারে সারাদিন ধরে ঝড় বয়ে গেল। একে তো ভালোবাসা-বাসি, তারপর স্বজাত নয়। কলকাতাতে ছোট্ট ভাড়া বাড়িতে ভালোই চলছিল মেহুল ও জুঁই-এর সংসার। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হঠাৎ এক সন্ধ্যায় বেপরোয়া একটি গাড়ি মেহুলের প্রাণ নিল। সংসারে প্রাণ ও মান দুই বাঁচাতে শুরু হলো জুঁইয়ের জীবন সংগ্ৰাম। মুখার্জী পরিবারে মেহুলের মৃত্যু সংবাদ পৌঁছানোর কয়েক মাসের মধ্যেই হঠাৎ স্ট্রোকে মারা গেলেন মেহুলের বাবা, পরিবারের কর্তা! প্রতীভাদেবী একা হয়ে গেলেন মুখার্জী পরিবারে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতীভাদেবী অনুভব করতে লাগলেন সবাই যেন তাঁকে উপেক্ষা করছে। ক্ষোভ-অভিমানে প্রতীভাদেবী এক সন্ধ্যায় উদ্দেশ্যেহীন ভাবে সবার অজান্তে ট্রেনে উঠে পড়ে। দু'-চোখে জল, সংসারে আজ সে একা। হঠাৎ, "কাকিমা আপনি কোথায় যাবেন?"
"কে বাবা?" আমি উত্তম, মেহুলের বন্ধু, মনে আছে?" প্রতীভাদেবীর মনে পড়ল, ছোটবেলায় মেহুলকে উত্তমের সাথে সে মিশতে দিতো না। সবাই বলতো উত্তম পড়াশোনা ছেড়ে বকে গেছে। মেহুল ও জুঁইয়ের সাথে উত্তমের বরাবরই সম্পর্ক ছিলো। মেহুল চলে যাবার পরেও উত্তমই জুঁইকে ছোটো বোনের মতো আগলে রাখে। শেষে, হাতিবাগানের ছোট্ট ভাড়া ঘরে স্বামী ও ছেলের ফটোর নীচে দিব্যি আছে প্রতীভাদেবী ও জুঁই। লড়াই আছে ঠিকই কিন্তু উপেক্ষা নেই। এক সন্ধ্যায় চায়ে চুমক দিতে দিতে প্রতীভাদেবী জুঁইয়ের হাতটা ধরে বলল, "হ্যাঁ রে, তুই আমাকে এত যত্নে রাখিস কেন?"
জুঁই হেসে বলল, "মা আমি আজও মেহুলকে ভালোবাসি, আমি ওর চোখ দিয়েই সংসারকে দেখি।" দু'জনে বাকরুদ্ধ হয়ে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো।
054 Kalipada Mukherjee Road P S Behala
Kolkata
700008
Be the first to know and let us send you an email when Golpo Kutir posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.
Send a message to Golpo Kutir:
শারদীয় গল্প কুটির ১৪৩০-এ রয়েছে প্রখ্যাত লেখক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়-এর বড় গল্প - 'নন্দিনী ফেরেনি'। #golpokutirsharodiyo1430 #golpokutir #Sharodiyo1430 Tridib Kumar Chatterjee
শ্রদ্ধেয় রজতাভ দত্তকে আন্তরিক ধন্যবাদ। শারদীয় গল্প কুটির ১৪৩০ পাওয়া যাচ্ছে কলেজ স্ট্রিটের দে'জ, অরণ্যমন, শব্দ, ই-বুক লিস্ট, প্ল্যাটফর্ম এবং কলকাতা বুক সেল্ফে। বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে : অক্ষর ডট কমে। . #golpokutirsharodiyo1430 #sharodiyo #pujosonkha
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়কে আন্তরিক ধন্যবাদ। শারদীয় গল্প কুটির ১৪৩০ এখন পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে এবং কলেজ স্ট্রিটে।
শারদীয় গল্প কুটির ১৪৩০-এ থাকছে কমলেশ কুমার-এর সম্পূর্ণ উপন্যাস 'হংসমিথুন'। #golpokutirsharodiyo1430 #golpokutir #KamleshKumar Kamalesh Kumar
শারদীয় গল্প কুটিরে থাকছে নীলাঞ্জন-এর অ্যাম্বাসাডার। নীলাঞ্জন-এর কাছে শারদীয়-র অনুভূতি কেমন? #golpokutirsharodiyo1430 #golpokutir #rjnilanjan Rj Nilanjan
শারদীয় গল্প কুটিরে থাকছে অভিমন্যু রায়-এর সম্পূর্ণ উপন্যাস 'সব মিথ্যে মিথ্যে নয়'। #sharodiyo1430 #golpokutirsharodiyo1430 #golpokutir Arindam Dighal
শারদীয় গল্প কুটিরে থাকছে রাজা ভট্টাচার্য-র 'সমান্তরাল'। #sharodiyo1430 #golpokutirsharodiyo1430 Raja Bhattacharjee
একটি মানুষ যদি প্রতিদিন সক্রিয়ভাবে তার মানবিকতার পরিচয় দেয়, তাঁর সব প্রশংসাই কম। চিনে নিন তেমনই একজন মানুষ- অরুন্ধতী রায়কে। যিনি একজন জরুরী স্বাস্থ্য চিকিৎসা প্রদানকারী হওয়ার পাশাপাশি ৪৫টি পশুর প্রতিপালক। তাঁর বাড়িতে রয়েছে মোট ৩৫টি কুকুর এবং ১০টি বিড়াল। অরুন্ধতী রায়-এর ছোট্ট অবেদন আমরা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, সম্ভব হলে বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত... Gpay - 9831321187 Bank Details Acc 1768000109031617 IFSC Code- PUNB0318100 Arundhati Roy Punjab National Bank
এই নববর্ষে আসতে চলেছে গল্প কুটির রোমহর্ষক সংকলন ১৪২৯। তার আগে দেখে নেওয়া যাক বিনোদ ঘোষাল-এর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা কেমন! Binod Ghoshal #RomhorshokSonkolon1429 #GolpoKutir
মহালয়া আসলেই একরাশ স্মৃতির ভিড় ... --------------------------------------------------- Illustrattion: Sougato Ghosh | Visual Effects: Sounak Baidya | Voice: Arpita Banerjee | Concept: Pratim Raha
গল্প কুটির শারদীয় ১৪২৮ পাওয়া যাচ্ছে ফ্লিপকার্টে। 👉 https://bit.ly/3BIJMSl
Golpo Kutir is Bengal’s first ever digital story telling platform with 1 million readers (as of now) which has its focus mainly on Bengali tales. With that, Feature stories, film reviews, celebrity interviews, live chat shows, short entertaining videos on social media trendings as well as exclusive articles - Golpo Kutir is that package of entertainment to the millions of Bengali youths across the world. We are one of the ultimate destination to all the happenings in the Bengali cultural world.