30/04/2022
চিৎপুর রবীন্দ্রসরণীর ট্রামলাইন ধরে এগোলেই যে রাস্তাটা নাখোদা মসজিদের সামনে দিয়ে এম জি রোডের দিকে গেছে ওটাই জাকারিয়া ষ্ট্রীট; এই জাকারিয়া ষ্ট্রীট যে হাজি নূর মহম্মদ জাকারিয়ার নামে নামাঙ্কিত, তিনি ছিলেন দরিদ্র মুসলমান সমাজের হিতৈষী নেতা ও কাচ্ছি মোমিন সম্প্রদায়ের এক জনপ্রিয় ব্যাবসায়ী। আজকের বানিজ্য কেন্দ্রিক ঘিঞ্জি জাকারিয়া ষ্ট্রীট একসময় পুরোনো কলকাতার ধনীদের ঘিঞ্জি আবাসিক এলাকাসহ ছোট বড় মুসলমান বস্তিতে ঘেরা ছিল; আঠারো শতকের শেষের দিক থেকে এইসব মুসলমান বস্তির জমির মালিকানা বিক্রি হয়ে যেতে থাকে ধনী মাড়োয়ারি ব্যাবসায়ীদের হাতে; পরবর্তীকালে তারও হাতবদল ঘটে। সেইথেকেই বদলাতে শুরু করে এখানকার চরিত্রও।
পুরোনো কলকাতার মূলত মুসলিম সম্প্রদায় অধ্যুষিত এই অঞ্চল সময়ের সাথে ইতিহাসের পাতায় নানা সংঘাত পেরিয়ে এসে আজকের জেন জেড এর কাছে সেকুলার কলকাতার কাবাব লেন কিংবা মুঘল ফুড ষ্ট্রীট নামেই বেশী পরিচিত। রমজান মাসে এই অঞ্চলের রূপটাই যেন বদলে যায়। অধুনা ভ্লগারদের রীতিমতো ফুড ট্রেল রমজান মাসের জাকারিয়া। রাস্তা জুড়ে দুপাশে ফ্রূট সালাড, খেজুর, কিশমিশ, আখরোট, আমন্ড, কাজু, পেস্তার ড্রাই ফ্রূট মিক্স, শালপাতার বস্তায় ভরা উপচে পড়া ভিন্ন মাপের লাচ্চা, সিমাই, বিস্কুট, শীরমাল, বাখারখানি, গরমে ক্লান্ত পথিকের তেষ্টা মেটাতে ঠাণ্ডা ফালুদা আর রঙিন শরবৎ এর অস্থায়ী দোকানীদের পসরায় সেজে ওঠে রমজানের জাকারিয়া। একদিকে গাওয়া ঘী এ চোবানো শীরমাল, বাখারখানির গন্ধ অন্যদিকে জাফরানি দুধে ভিজানো ঘীএ ভাজা কাজু পেস্তা ছড়ানো মুচমুচে শাহী টুকরা আর বরফ, দুধ, ব্রু আব জা আর তরমুজের টুকরো দিয়ে তৈরী শরবৎ এ মহব্বতের ডাক ফেরাতে পারবে না কোনো অ-খাদ্য রসিকও!
নাখোদা মসজিদের ঠিক উল্টোদিকের ফুটে পরপর তাসকিন, সুফিয়া, দিল্লি সিক্স এর মতো স্থায়ী দোকানগুলোও রাস্তার ওপর স্টল লাগাতে বাধ্য হয় ইফতারের ভিড় মেটাতে। আর ঠিক এখান থেকেই শুরু কাবাব লেনের। জাকারিয়া ষ্ট্রীট যেন তার প্রাণ ফিরে পায় ঈদের বাজারের কেনাকাটা সেইসাথে বিকেলের আজান, শরবৎ এ মহব্বত, শাহী টুকরা, শীরমান, কিংবা গনগনে আগুনে সেঁকা সুতা কাবাব, চিকেন আফগানির গন্ধে। মুখে মিলিয়ে যাওয়া মাটন চাপ, সুতী কাবাব কিংবা আফগানী চিকেন, তাওয়া চাঙ্গেজী, মালাই টিক্কা, মাহী আকবরীর স্বাদ আর গন্ধ ভুলিয়ে দেয় মে মাসের ঘর্মাক্ত ক্লান্তিকেও। সুফিয়ার বৃদ্ধ চাচা সারাদিন রমজানে উপোসী থেকেও তৃপ্তি লাভ করে তার মুসলিম কিংবা অমুসলিম ভাইদের হাতে হালিম ভর্তি বাটি তুলে দিয়েই।
নাখোদার আজানের সুরে সন্ধ্যে নামে চিৎপুর জাকারিয়াতে। নামাজ শেষে এবার খাবার ভাগ করে নেয়ার পালা। রমজানের আলোর রোশনাই এ জাকারিয়া আরো ঝলমলে। একশো বছরেরও বেশী পুরোনো ‘হাজি আলাউদ্দিন স্যুইটস’ এ ভিড় উপচে পড়া ভিড়, দোকানি হাত নেড়ে জানান দেয় সেদিনের মতো তাদের ঈদ স্পেশাল বিখ্যাত বত্তিশী হালুয়া শেষ। সন্ধ্যে নামতেই ভিড় বাড়তে থাকে জাকারিয়া ষ্ট্রীটে জমে ওঠে ঈদের বাজার। লেখা - অর্পিতা দে
https://youtu.be/PYrPr3tIvWw
জাকারিয়া ষ্ট্রীট সেকুলার কলকাতার অন্যতম পরিচিতি। প্রতিবছর রামজান মাসে এই জাকারিয়া ষ্ট্রীট যেন তার প্রাণ ফিরে প.....