18/09/2025
হুগলির হরিপাল থানার ইলিপুরের মোড়ে গতকাল বিকেলে সাকিরুল ইসলাম নামে এক ফেরিওয়ালাকে ঐ গ্রামের কয়েকজন অধিবাসী বহিরাগত বলে আখ্যা দেয় ও তার কাছ থেকে পরিচয়পত্র হিসেবে পাসপোর্ট চাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তাকে জোর করে জয় শ্রী রাম বলতে বলে। সাকিরুল তা বলতে অস্বীকার করলে তাকে মারধর করা হয়, তার গালের দাড়ি ধরে টানাটানি করে হেনস্থাও করা হয়। তবে, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যান্য নারী-পুরুষ সেই সময় এই ঘটনার প্রতিবাদ করে ও তাকে রক্ষা করে বলে জানা গেছে। সাকিরুল পরে কাছের অনন্তপুর গ্রামে গিয়ে এই ঘটনা কথা জানালে সেখানকার মানুষজন পথ অবরোধ করেন ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। পুলিশ গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, সাকিরুলের বাড়ি মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘি থানার পুলা ডাঙায়। সে কাপড়, বিছানার চাদর ইত্যাদি ফেরি করে বেড়াই। বর্তমানে ডানকুনির মথুর ডিঙ্গিতে ভাড়ায় থাকে।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই ধরণের অনভিপ্রেত, ন্যাক্কারজনক ঘটনা ইদানিং বেড়ে গেছে। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে 'বহিরাগত', 'বাংলাদেশী', 'ঘুসপেটিয়া' ইত্যাদি বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর লাগাতার অত্যাচার চলছে। একদিকে বাংলায় কথা বলার জন্য ভাষা বিদ্বেষের শিকার, অন্যদিকে, মুসলমান হওয়ার জন্য ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার। দুটোই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষকে সইতে হচ্ছে। এখন আবার নিজের রাজ্যেও পরবাসীর যন্ত্রণার শিকার এই বাঙালি মুসলমান। এটা এমন একটি মারাত্মক আকার নিচ্ছে, যে সমাজ জীবনে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। কয়েকদিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরে এই ঘটনা আমরা প্রতক্ষ করেছি। এখন হুগলিতেও এই ঘটনা ঘটছে এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গেলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই বিদ্বেষমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। তার জন্য ব্যাপক মানুষকে সামিল করা আমাদের আশু কাজ।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত, যারা সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে, ধর্মে-ধর্মে বিভেদ লাগানোর চেষ্টা করছে, সম্প্রীতির এই বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে, সাম্প্রদায়িক ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চাইছে, তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক, এই দাবি জানাই রাজ্য সরকারের কাছে
সক্রিয়ভাবে গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়টিকে দেখতে হবে। Prevention of Communal and Targeted Violence Bill অর্থাৎ সামাজিক ও পরিকল্পিত হিংসা প্রতিরোধ বিলটি বিধানসভায় এনে আইনে পরিনত করার জন্য সরকারকে সদর্থক উদ্যোগ নিতে হবে। এই আইন এনে এইধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে প্রতিরোধ করার বিষয়ে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে।