19/08/2024
ঝাড়গ্রাম মানে আপনাদের অনেকের কাছেই উইকেন্ডে হোমস্টে বা রিসর্টে বসে মহুল আর দেশী মুরগি খেয়ে আড্ডা, সোমবার কলকাতা ফিরে এসে 'শাল পলাশের বেলপাহাড়িতে' বলে নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা। তাই হাতি মৃত্যু নিয়ে পুরো ঝাড়গ্রামের ধ্বংস হয়ে যাওয়া, পুরো ঝাড়গ্রাম জেলার মানুষের মৃত্যু কামনা আপনাদের কাছে সহজ। নাড়ির যোগ তো কিছু নেই, দীঘা পুরী দার্জিলিং-এর বাইরে ঝাড়গ্রাম আরও একটা ঘোরার জায়গা ছাড়া কিছু নয় আপনাদের কাছে!
কিন্তু ঝাড়গ্রাম আপনাদের এই অবসরযাপনের বাইজীবাড়ি নয়। যখন আপনারা কলকাতা ও আশেপাশে শেষ গাছটা কেটে হাইরাইজ বিল্ডিং তুলছেন৷ নিজের বাপ দাদার ভিটে প্রমোটারকে বিক্রি করে পাখিদের শেষ আস্তানাগুলো কেড়ে নিচ্ছেন তখন আমরা জঙ্গল, পাখি, জঙ্গলের প্রাণীদের আগলে রাখি বুকে করেই৷
আপনারা যখন কলকাতার উপকণ্ঠে নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য পশু পাখীদের বন্দি করে রাখেন আর বিকেলে বাদাম ভাজা খেতে খেতে বাচ্চাকে দেখান, ওই দেখ বাবু হিপোপটেমাসের বাচ্চা, ওই দেখ শিম্পাঞ্জি, তখন আমাদের এখানের জঙ্গলে হাতির বাচ্চা তার মায়ের সঙ্গে পুকুরে এসে স্নান করে নিজের মতো, অন্য পাড়ে আমরা সাঁতার কাটি সহাবস্থানে।
আজ বলে নয়, ১০০ বছর বা তারও আগে থেকে গোটা ঝাড়গ্রাম বেলপাহাড়ি গোপীবল্লভপুর লালগড় বাঁকুড়ার একটা অংশের জঙ্গলে হাতিদের অবাধ বিচরণ, যে অঞ্চলটার মানুষের মৃত্যু কামনা করছেন, সেই অঞ্চলটার মানুষরা হাতিকে ঠাকুর বলে, নিজেদের পরিবারের একজন বলে মনে করে অনেকে৷ আপনাদের মতো সিজিনাল পশুপ্রেমী নই আমরা। প্রত্যেকটা উৎসবে জঙ্গলের প্রাণীদের জন্য জঙ্গলের সামনে খাবার রেখে আসে গ্রামের মানুষ, বাসি না খেতে পারা খাবার নয়, নিজেরা খাওয়ার আগের প্রথম খাবার।
ঝাড়গ্রামে নৃশংসভাবে একটা হাতিকে মেরে ফেলা হয়েছে। খুব অল্প কয়েকজন অতি উৎসাহে এটা করেছে, এমন নয় যে গোটা ঝাড়গ্রামের মানুষ এটাকে সমর্থন করছে বা বলছে হ্যাঁ ঠিক হয়েছে! যেরকম বকর ইদের দিনে কোলকাতার বিশেষ বিশেষ এলাকায় পশু রক্তে বান ডাকলেও আপনারা যেমন খাদ্য স্বাধীনতার দোহায় দিয়ে সেটাকে ঘুরিয়ে সমর্থন করেন, ঝাড়গ্রামের কোনও মানুষ এই হাতি হত্যাকে সেরকম ভাবে সমর্থন করছে না।
আপনাদের জানা নেই আহত হাতি নজরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মানুষ বনদপ্তর নিয়োজিত অদক্ষ হুলাটিমকে হাতি অত্যাচারের থেকে বিরত রাখে এবং ডি এফ ও র কাছে কৈফিয়ত চাই। দোহাতির মারা যাওয়ার প্রথম প্রতিবাদও ঝাড়গ্রামেই হয়েছে, যারা এ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগও ঝাড়গ্রামের মানুষই করেছে৷ এরকম ঘটনা যাতে আর কখনও না ঘটে তার জন্য একাধিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে৷ অবশ্য তাতে আপনাদের কী! ঝাড়গ্রামের মানুষ একটা বন্য বা ভূমিকম্পে শেষ হয়ে যাক এটা চেয়ে পোস্ট দিয়ে জ্বালা মেটালেই হল...
একটা পার্কস্ট্রিট, একটা আর জি কর, এরকম অনেক অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনার জন্য আমরা তো কেউ কলকাতার ধ্বংস হওয়া চাইছি না?
আপনি কলকাতার মানুষ হোন বা অন্য যে কোনও জায়গার, আপনার এলাকায় নিশ্চয় কিছু খারাপ লোক থাকে, আপনার এলাকাতেও নিশ্চয় কখনও না কখনও কোন ভয়ঙ্কর অমানবিক ঘটনা ঘটেছে৷ তা বলে আপনি চাইবেন একটা ভূমিকম্পে পুরো এলাকাটা ধসে যাক, একটা আগুনে সবাই পুড়ে যাক? আমরা চাই এরকম?
জঙ্গলমহলের মানুষের প্রতি এত হিং সা কেন? হাতিটাতো ছুতো, এই বিদ্বেষ তো শহুরে প্রভুর নেটিভ ইন্ডিয়ার জন্য, তা আমরা বুঝি৷
ঝাড়গ্রাম, গোটা জঙ্গলমহলে হাতি, মানুষ থেকে কাঠবিড়ালি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে। আগামীতেও থাকবে, জঙ্গলমহল পরিবারের একটি হাতি খুন হয়েছে আমরা এর শেষ দেখে ছাড়বো, এর বিরুদ্ধে যতদূর যেতে হয় যাবো। এরকম ঘটনা যাতে যাতে না ঘটে তার ব্যবস্থা করব, কিন্তু আমাদের জঙ্গলমহলবাসীর প্রতি আপনাদের ঘৃণার জবাবও আমরা দেবো...
#সংগ্রিহিত