mahato_vai_amit

mahato_vai_amit ব্লগ লিখিয়ে, জঙ্গলমহলের কলমচি। অমিত মাহাত।

19/10/2024

রাবণের চিতা ঃ অমিত মাহাত

(ছয় বছর আগের একটি লেখা রি-পোস্ট করলাম।)

# # #
আজকের দিনটা কারও কাছে আনন্দের কারওবা বেদনার। আজ যে দশেরা। রাবণের চিতা জ্বালানো হয়। এ চিতা চির বহ্নিমান। নেভে না। কিন্তু আমি এই চিতা জ্বালানোর আনন্দে খুশি হতে পারলাম কই? এ মাটির পূর্বপুরুষেরা আজও তাদের উত্তর পুরুষের নামই রাখে রাবণ। কিন্তু কেন রাখে? এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পৃথিবীর ঘড়িটা চব্বিশ ঘন্টায় যতবার পাক খায়। ততবারই আমার মাথাও পাক খাচ্ছে। ভাববেন না মদ পেটে পড়ে এমন হচ্ছে। কিছু সোজা কথায় আসি। রাবণ কে? আপনি বলবেন রাক্ষস রাজা। ছোটমাথা বলবে দশমাথার রাজা। সত্যিই রাক্ষস রাজা রাবণের দশ মাথা ছিল? আপনি বলবেন ছিল অতীতে। আমিও বলছি। আচ্ছা বলুন মাথায় কি থাকে? আপনি বলবেন বুদ্ধি। আমিও সহমত। এবার প্রশ্ন রাবণ কে? উত্তর দশ মাথার সমান বুদ্ধির অধিকারি হল রারণ। কি তাই তো ? তাহলে আপনি রাবণ পোড়াবেন কেন? আপনার মাথায় কি কিছু নেই? উত্তরে আপনি বলবেন রাবণ অশুভ শক্তির প্রতীক। তাহলে রাম কেন রাবণের কাছে নতজানু হয়েছিল রাজ্যচালনা আর রাজনৈতিক শিক্ষা নেওয়ার৷ এটি রামায়ন স্বীকার করেছে। রামের শিক্ষক হল রাবণ। রাম শুভ শক্তির আধার৷ কিংবা রামরাজ্য। অথচ শিক্ষা নিল রাজকাজ চালানোর। সেই রাবণ খারাপ। এখানে খারাপ কে? বালী সুগ্রীবের লড়াই বিভাজন আনল রাম। বধ হল বালী। স্বয়ম্ভু নামক অনার্যের মুন্ডুছেদন হল তপস্যা করার অপরাধে। কারন সে হল শুদ্র। ছোটলোক। আসলে শুদ্র জাগরন হোক সেদিনের রামরাজ্য চায়নি। আজকের ব্রাহ্মন্যবাদি শক্তিও চাইছে না শুদ্ররা জাগুক। অধিকার বুঝে নিক। তাই রাবণ পোড়ানো।

(মরিচ ঝাঁপি কান্ড সম্পর্কে কিছুটা জানতাম। লেখাটা ফেসবুকেই পেলাম, পুরোটা সত্যি কি না জানি না। যদি পুরোটা সত্যি হয় তো ভয়...
24/07/2024

(মরিচ ঝাঁপি কান্ড সম্পর্কে কিছুটা জানতাম। লেখাটা ফেসবুকেই পেলাম, পুরোটা সত্যি কি না জানি না। যদি পুরোটা সত্যি হয় তো ভয়ঙ্কর ঘটনা। অনেক বড় লেখা, সময় নিয়ে পড়বেন)
********************
👇👇👇

বাস্তবের মুখোমুখি সুন্দরবন ও মরিচঝাঁপি।

একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে মেঘনা তো অপর দিকে ব্রহ্মপুত্র। তিন নদী ও নদের অববাহিকায় তৈরি বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের বৃহত্তম ডেল্টা। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্য়ানগ্রোভ অরণ্য এই সুন্দরবন।

#নামকরণ
বাংলায় সুন্দরবনের আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা বন অথবা বনভূমি। বিশ্বের বৃহত্তম ডেল্টাকে সুন্দরী গাছের স্বর্গরাজ্য বলা হয়। সেই থেকে এর নামও নাকি সুন্দরবন। জলপথে সেই স্থানে পৌঁছে সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় অবশিষ্ট থাকে না।

#ভৌগলিক গঠন
প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার অংশ রয়েছে বাংলাদেশে। ওপার বাংলার খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলা সুন্দরবনের অন্তর্গত। এপার বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরীর জঙ্গল। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ বা ১৮৭৪ বর্গকিলোমিটার অংশে নদী-নালা, খাঁড়ি, বিলের একাধিপত্য। বাকিটা স্থলভাগ। বনের ঘনত্ব ও ব্যাপকতা এতটাই যে, ১৯৯২ সালে ইরানের রামসার কনভেনশনে সুন্দরবনকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বৃহৎ ডেল্টাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দেয় ইউনেস্কো।

#ইতিহাস
কথিত আছে, মুঘল আমলে এক স্থানীয় রাজা গোটা বনের ইজারা নেন। ১৭৫৭ সালে মুঘলদের হাত থেকে সুন্দরবনের দখল কার্যত চলে যায় ইংরেজদের কাছে। সুবিশাল বনের মানচিত্র তৈরি করে ফেলা হয় রাতারাতি। ১৮২৮ সালে খাতায়-কলমে স্থানের স্বত্বাধিকার পায় ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৮৬০ সালে সুন্দরবনকে সাংগঠনিক ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়। ১৮৭৯-তে বনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন বাংলা প্রদেশের নবনির্মিত বন বিভাগকে।

বলা হয়, অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমান অবস্থার নাকি দ্বিগুন ছিল। জনসংখ্যার চাপ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বনের আয়তন সঙ্কুচিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। সেসব জানতে জানতেই জলপথে পৌঁছে যাওয়া বনভূমিতে।

এবার আসি জনসংখ্যার বিপুল চাপ ও শরনার্থীদের আগমনে আবিষ্কার হলো মরিচঝাপি জঙ্গল।আসলে এটা ঝিলা কম্পাটমেন্ট একাদিকে গাড়াল নদী অপর দিকে ঝিলা নদী আর উওর দিকে কুমীরমারি নদী। আর মরিচঝাপির ওল্টোদিকে গ্রাম বলতে সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরী,কাকমারী,দাস পাড়া,পরশমনি, সর্দার পাড়া, কাঙ্জিলালের ঘের,মেটেরদুনে হুলো। ছোটমোল্লাখালীর নয় নম্বর, পঞ্চরাম কুমীরমারীর পালামারির খেয়াখাট থেকে পশ্চিম ও পূর্ব পাড়া পর্যন্ত।

এবার আসি বাস্তবের মুখোমুখি #মরিচঝাঁপি

দুই যুগের উদ্বাস্তু জীবন শেষে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশ লাগোয়া সুন্দরবনের মরিচঝাঁপিতে শেষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। নির্বাচনে জেতার জন্য উদ্বাস্তুবান্ধব জ্যোতি বসুর বাম দলই তাদের ডেকে এনেছিলো। জ্যোতি বসু খোদ একসময় রিফ্যুজি সমস্যা নিয়ে দেনদরবার করেছেন বিধান রায় সরকারের সঙ্গে, নিজের ভাবনাচিন্তা বাতলেছেন, সম্ভাব্য পুনর্বাসনের রূপরেখা দিয়েছেন যার মধ্যে সুন্দরবনও ছিলো। ‘৭৫সালের ২৫ জানুয়ারি ভিলাইয়ে এক জনসভায় নিজে বলেছেন, সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে, উদ্বাস্তুদের সেখানে নিয়ে যাবে। ক্ষমতায় আসার বছরখানেক আগে সিপিএম সরকারের মন্ত্রী ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা রাম চ্যাটার্জি সহ কয়েকজনকে দণ্ডকারণ্যে পাঠিয়ে এসব রিফ্যুজিকে পশ্চিমবঙ্গ ফেরার আমন্ত্রণ জানানো হয়। বলা হয় পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ কোটি বাঙালী দশ কোটি হাত তুলে তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। মালকানগিরিতে রাম চ্যাটার্জি আবেগঘন বক্তৃতায় বললেন : মাতৃভূমি তোদের দুহাত তুলে ডাকছে, ওরে অবুঝ সন্তান, তোরা ছুটে আয় । মিঠে সেসব মিছে কথাকে সত্যি ভেবে ভুলেছিলো রিফ্যুজিরা।

১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে উদ্বেল হয়ে ওঠে তারা। এবার তারা ফিরতে পারবে, এমন জায়গায় যেখানে তাদের মতো বাংলায় কথা বলে মানুষ। ১৯৭৮ সালের মার্চ নাগাদ সহায় সম্বল যা ছিলো বিক্রি করে দণ্ডকারণ্য থেকে স্বপ্নের এলডোরাডোতে রওয়ানা হয় দেড় লাখ রিফ্যুজি। কিন্তু সেখানে অপেক্ষায় ছিলো ভিন্ন এক বাস্তবতা। নির্বাচনের আগের বামফ্রন্ট আর ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের কথাবার্তায় তখন ব্যাপক ফারাক। বদলে গেছে তাদের পলিসি। নেতারা বললেন, তারা বললেই চলে আসতে হবে নাকি! পুলিশ পিটিয়ে খেদালো অনেককে, জেলে পুরলো অনেককে। ভাঙা হৃদয় নিয়ে ফিরে এলো অনেকে। কিন্তু মরিয়া কিছু থেকে গেলো। উদ্বাস্তু সমিতি অনেক আগেই খোঁজখবর নিয়ে বসত গড়ার জন্য পছন্দ করে এসেছিলো মরিচঝাঁপি, যার ঠিকানা দিয়েছিলেন বাম নেতারাই। কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের লাগোয়া ১২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি দ্বীপ। ’৭৮ এর শেষ নাগাদ সেখানে ঠাঁই নিলো ৩০ হাজার সর্বহারা মানুষ।
চরঘেরী গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ মন্ডল, কালীপদ মৃধা,কিরন মন্ডল বিভিন্ন তথ্য উঠে এলো।
- ওরা শুধু দন্ডকারন্য নয় বাংলাদেশ থেকেও অনেক এসেছিলো ও দেশের হিন্দু ও মুসলিম গন্ডগোল পাশাপাশি একটি ভালো থাকার জন্যে। আমাদের সাথে অনেকের আত্মীয় সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। এমন কি অনেক টাকা পয়সা আমাদের জমা রেখে যেতো। কখন কি হয় সে ভয়। ভশ তো সব সময় ছিলো। এ দিকে সরকারের সাথে লড়াই আবার অপর দিকে বাঘের সাথে লড়াই।

- ওরাই বলে ধীরেন হাট বাজার তো সব সরের পারে।কি করে কি যে করি।
- এক কাজ করো তোমাগো তো ণৌকা আছে। তোমাগো গ্রাম থেকে যদি হ্যালেঙ্চা, মাটিপড়া শাক, কচু শাক, নোনা চাপড়ি যদি নিয়ে যাও তাহলে লোক গুলো অন্তত শাক সেদ্ধ করে খেতে পারবে।
- কি বললবো আমাদেরই তো সংসার চলে না। আটা ঘোটা, খুদের ভাত খেয়ে অধিকাংশ দিন যায়। বাবা লোকের বাড়ি ধানে মাইনে খাটে। সে সময় গেছে। মনে করলেই। ভয় হয়। সে সব দিন যেন আর না আসে।
- য়াইহোক আমরা কজন মিলে মরিচ ঝাঁপির জন্যে চালকো ব্যাবসা শুরু করি। পাঁচ - ছয়জন মিলে প্রতিদিন দুই থেকে তিন বস্তা চাল তৈরী করা হতো। ধান সেন্ধ, ওঠোনে রোদ দেওয়া, তারপর ঢেঁকি তে পাদ দেওয়া, দুজন ঢেঁকিতে পাদ দেওয়া ধান ওল্টে দেওয়া আর একজন কূলোতে চাল পরিষ্কার করা। অনেক খাটনি ছিলো।এদিকে ভোরের জোয়ারে এক হালি আর দুই দাড়ি নৌকা নিয়ে পৌঁছে যেতাম।গাড়াল দিয়ে কাকসাঁর ভিতর দিয়ে যেতে হতো। কেনাকাটা করে আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে যেতো। তখন চালের দাম ছিল 1 টাকা 50 পয়সা থেকে 1 টাকা 70 পয়সা যা পরিশ্রম হতো পয়সা উসুল হত না কিন্তু কি করব কাজ তো কিছু করতে হবে সব আতকপালি বিক্রি করা হতো আর যখন আমরা চাল নিয়ে যেতাম সঙ্গে বুনো কচু কলার-থোর কলার মোচা নিয়ে যাওয়া হতো তারপরে অবশ্য দুটো বাজার হয়েছিল একটা বড় বাজার আর একটা ছোট বাজার নামে পরিচিত ছিল।
সে সব অনেক গপ্পো।

কিন্তু ক্ষমতায় গিয়েই জ্যোতিবাবুরা ভুলে গেলো প্রতিশ্রুতি। লাখ খানেক উদ্বাস্তুকে ফেরত পাঠালো দণ্ডকারণ্যে। কিন্তু হাজার চল্লিশেক তবু রয়ে গেলো মাটি কামড়ে। বাঘের কামড় খাবে, তবু দণ্ডকারণ্যে ফিরে যাবে না। দুর্গম দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে বসতি গড়লো তারা। সরকারকে সাফ জানিয়ে দিলো, কোনো সাহায্য লাগবে না, শুধু বাধা না দিলেই খুশি।
এদেরও কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো। জ্যোতি বসু উদ্বাস্তু নেতাদের বললেন, যাচ্ছো ঠিক আছে, কিন্তু তোমাদের কোনো রকম সহায়তা করা হবে না। যা করার নিজেদেরই করে নিতে হবে। রিফ্যুজিরা মেনে নিয়েছিলো । একদম সহায়তা করেনি তাও ঠিক নয়। এদের বেকারি এবং ফিশিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিলো, যা ছিলো একরকম মেনে নেওয়ারই নামান্তর। সাত মাসের নিরলস পরিশ্রমে ফসল ফলালো রিফ্যুজিরা। আবাদী জমিতে ফসল ফলানোর পাশাপাশি মাছের ঘের তুলে বছরে ২০ কোটি রূপি সরকারকে লাভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলো তারা। মরিচঝাঁপির সাফল্য উঠে এলো গণমাধ্যমেও। নিজেরাই সেখানে গড়ে তুললো জনপদ। মাটির রাস্তা তৈরি করলো, নদী থেকে নোনা মাছ ধরে খায়, বড় মাছ পেলে পাশের কুমীরমারি, ছোট মোল্লাখালি,সাতজেলিয়া বাজারে বিক্রি করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তায় নিজেরাই স্কুল বসালো। স্বপ্ন দেখলো নতুন করে।

আমি বর্মন সুবল হাউলী, সুবল হাউলী প্রভাসপাইক, নিহার রঞ্জন মন্ডল আমরা এই সময় মরিচঝাঁপি কেটে ফেলা গাছ৫০ পয়সা মন কিনে নিতাম. সেই গাছ মানে জ্বালানি বাসন্তী, গোসাবা হাড়োয়া, কানমারী বিক্রি করতাম সেই সময় আটটা মন কাঠ বিক্রি করা হতো। একটা নৌকা ৮০মণ করে কাট যেত। সপ্তাহে আমরা দুটো করে খেপ দেওয়া হতো। তবে এটা ঠিক একটা জঙ্গলের গরান, ধুঁধুল, পশুর গোমো গাছ সব গাছ কেটে এক নিমেষে পরিষ্কার করে ফেলেছিল এগুলো তো সব আমাদের চোখের সামনে দেখা।

কোনো রকম সরকারী সাহায্য ছাড়া, পার্টির আনুকূল্য ছাড়াই জঙ্গলে অশিক্ষিত ছোটজাতের মানুষ স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। এটা হয়তো তার মার্ক্সবাদের অলিখিত লঙ্ঘন। এই উদাহরণ লালদের জন্য ব্যাপক সমস্যা। নির্দেশ পাঠালেন, এদের জায়গা ছাড়তে হবে। এরা সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট করছে, বাঘের অভয়ারণ্য এদের কারণে বিপন্ন! সব যুক্তিতেই বাকোয়াস্ ছিলো তা। রিজার্ভ ফরেস্টের মানচিত্রে মরিচঝাপির ওই জায়গাটুকু অন্তর্ভূক্ত ছিলো না কোনোকালেই। আমরা যদি দেখি এটি হ্যামিল্টন আবাদ নামেই পরিচিত। গুগল ম্যাপ সার্চ করলেই দেখতে পাবেন।

সিদ্ধান্তটা সার্বিকভাবে আরেকটু আগেই নেওয়া হয়েছিলো। ‘৭৮এর ১লা জুলাই সিপিএমের রাজ্যকমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- যেসব উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। চালালো নারকীয় তাণ্ডব। বামফ্রন্টের শরীকদলের নেতাই যাকে বর্ণনা করেছেন ‘জালিয়ানওয়ালাবাগকেও হার মানানো তাণ্ডব’ বলে!
বাঘ নয়, বামফ্রন্ট সরকারই খেলো তাদের। রাতের আঁধারে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো মরিচঝাঁপি থেকে। পাঠিয়ে দেওয়া হলো দণ্ডকারণ্যে আবার। আর সেই রাতের আঁধারে কতো লোক মারা পড়লো তা কেউ জানে না। অভিযোগ আছে বস্তায় করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টাইগার প্রজেক্টে, বাঘের খাদ্য হিসেবে। আর বাকীগুলো ফেলে দেওযা হয় গভীর সমুদ্রে।

উদ্বাস্তুরা যখন মরিচঝাঁপিতে আশ্রয় নিয়েছিলো, তখন পশ্চিমবঙ্গের বাবুরা অনেকেই জানতেন না । কিন্তু অনেকেই জানতেন, খবর রাখতেন। শঙ্খ ঘোষ একাধিক কবিতা লিখেছেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একাধিকবার সশরীরে গিয়েছেন মরিচঝাঁপিতে, আনন্দবাজারে লিখেছেন তাদের দুর্দশার কথা। অনেক সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মীও ছিলেন উদ্বাস্তুদের পাশে।

কিন্তু জ্যোতি বসু সরকার একাই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেন।ধর্মের বলি হওয়া লাখো বাঙালির কান্নার মরিচঝাঁপি, জ্যোতি বসু সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা আর নৃশংসতার মরিচঝাঁপি, বাঘের মতো মনোবল নিয়ে তবু বেঁচে থাকা বাঙালি হিন্দুর বার বার মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াবার মরিচঝাঁপি, আমাদের খুব অন্তর্গত বেদনা, কান্না আর লজ্জার মরিচঝাঁপি।
সাতচল্লিশে ভারতে নমঃশূদ্ররা যায় নি। অধিকাংশই থেকে গিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে। কী নির্মম নির্যাতন সহ্য করে থেকেছে–মারা গেছে–শেষ মেষ চলে গেছে ভারতে–মরিচঝাঁপির মত এলাকায়। একাত্তরে লবণহ্রদে এই নমশূদ্ররা পশুর চেয়েও অধম জীবন যাপন করেছে। তখন মৃত্যু ছিল নিত্যসঙ্গী।
নমশূদ্রদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে–সবাই। বৃটেন, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ– কে করে নি তাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার।বাম রাজনীতিক জ্যোতি বসুতো সাম্যবাদী নেতা ছিলেন। এইছিলো তাঁর সাম্যবাদের নমুনা।শুধু তা নয় আজও যদি আমরা দেকি সুন্দরবনের পৌন্ড্র খএিয় ও নমঃ শুদ্র যারা আছে তাদেরকেও সরকার মানুষ বলে মনে করে কিনা সন্দেহ আছে। চারিদিকে শুধু উন্নয়নের বন্যা। তাইতো প্রতি বছর নদীর বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার উর্বর চাষের জমি নোনা জলে ভেসে যায়।অতীত থেকে বর্তমান শুধু সেই আর্তনাদের আর্তচিৎকার বাড়ি গেলো, মিষ্টি জলের পুকুর গেলো, মাঠের শষ্যে গেলো। শুধু থাকলো ভোটের কার্ড,রেশন কার্ড,আধার কার্ড। ব্যাঙ্কের বই। ভোট আসে যায় ভিক্ষা কিন্তু পেছন ছাড়ে না। সরকারের আদৌ সুস্হায়ী উন্নয়নের কি চিন্তাভাবনা আছে। ভালো আছি ভালো থেকো ভোট এলে খবর দিও।

তখন এতো খবর সবর বেরোতো না।তবে স্হানীয় পার্টিরা এদের সাথে রাজনীতি করতো। তখন তো এখানে আর এস পি জোর বেশি। হঠাৎই করে জানতে পারলাম ওদের মুখে। যে এপারের লোক ও পারে যেতে পারবে না। চাল, শাক সব্জী, মিষ্টি জল দেওয়া যাবে না। হাটে হাটে পার্টির লোক ক্যানেসএা পিটিয়ে ডেড়ি দিচ্ছে। ওপারপ গেলে তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। চরম দুর্দশার চিত্রটা শুধু মনে পড়ে। রাতে ওরা এসে বলে ছেলেমেয়েগুলো তোমরা রাখো। আমাগো যা হয় হবে। গ্রামের লোকেরা কিছু করতে পারছে না পার্টি র ভয়ে।
আমার ও সে বছর বড়ছেলে হয়। আর্থিক অনটন। চিন্তায় ঘুম হয় না। ওরা মাঝে মাঝে চিতকার করে ওঠে। রাতের দিকে এই আওয়াজ আরো প্রবল হয়ে উঠে।এক একটা রাত আমাদের কাছে হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।
আমার শ্বশুর মশাই হরেন্দ্রনাথ মন্ডল আমার কাছে দেড় হাজার টাকায় জমি বন্ধক রেখে মরিচঝাঁপি গিয়েছিল। বেশি জমি পাবে বলে। পেয়েও ছিল বাংলাদেশের সতীশ গোলদারের কাছে১৫০০ টাকা দিয়ে একটি ১০ বিঘার প্লট পায়
ম্যাপ অনুযায়ী যদি আমরা দেখি তাহলে ছোটমোল্লাখালি ৯ নম্বরের ঠিক উল্টো দিকে
। ঘরবাড়ি করে আট মাস বসবাস করেছিল। পরে পুলিশের তাড়া খেয়ে নদী সাঁতরে স্বামী-স্ত্রী চলে আসে। খুবই প্যাথেটিক ঘটনা। সেই সময়ে মিষ্টি জলের জন্য প্রথমে ওরা কুমিরমারি থেকে পুকুরের জল আনতো।একসময় পুকুরের জল কমতে থাকায়। পুকুরের মালিকেরা আর জল দিতে চায় না। তখন মরিচঝাঁপি সাতটি টিউবওয়েল বসানো হয়। জলের সমস্যা অনেকাংশেই মিটলো কিন্তু জলই তো শেষ কথা নয় বাঁচতে গেলে তো আরো অনেক কিছুরই দরকার। তবে সে সুযোগটা তারা আর বেশিদিন পায়নি।

১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু উৎখাতের প্রথম পর্যায়। ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হলো অর্থনৈতিক অবরোধ। ৩০টি লঞ্চ অধিগ্রহণ করে মরিচঝাঁপিকে ঘিরে ফেললো জ্যোতি বসুর পুলিশ।
গাড়াল ঝিলা আর ও দিকের কুমীর নদীতে লঞ্চে লঞ্চে ছয়লাপ। সুন্দরবনের মানুষ কোনদিন এই রকম আক্রমণ দেখিনী। গ্রামের লোকজন সব ভেড়ির ওপর দাড়িয়ে দেখতো পুলিশের সব কান্ডকারখানা। পার্টির লোককে খাঁকি জামা আর হাফপ্যান্ট পরিয়ে পুলিশ বানিয়ে দিয়েছিল হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল মোটা মোটা বেতের লাঠি।

সংবাদমাধ্যমের জন্য জারি হলো ১৪৪ ধারা, মরিচঝাঁপি তাদের জন্য অগম্য এবং নিষিদ্ধ। এ নিয়ে কিছু লেখা যাবে না, বলাও যাবে না। রিফ্যুজিদের টিউবওয়েল থেকে শুরু করে ক্ষেতিজমি, মাছের ঘের, নৌকা সব নষ্ট করে ফেলা হলো। বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা পান করে। প্রাণ বাচানো চেষ্টা করছিলো। তারা ও সেখানে বিষ মিশানো হলো। সে বিষে মরলো অসংখ্য শিশু। বাইরে থেকে খাবার আনার কোনো জো নেই, রসদ পাওয়ার জো নেই। ৩১ জানুয়ারি কিছু মরিয়া যুবক পাশের কুমীরমারি থেকে খাবার আনতে সাঁতরে ব্যারিকেড ভাঙলো। পুলিশের গুলিতে মরতে হলো তাদের ৩৬ জনকে। মানুষ ততদিনে বাঁচার জন্য ঘাস খেতে শুরু করেছে!

বিপন্ন এই মানবিকতায় উদ্বিগ্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের যারাই সাহায্যের হাত বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন, তাদের সে হাত ঠেকিয়ে দিয়েছে বামফ্রন্ট। সরকারী এবং দলীয় তরফে। জগদ্দরদী মাদার তেরেসা পর্যন্ত জানালেন, আক্রান্ত মরিচঝাঁপিতে কিছু করতে তিনি অপারগ! সাহায্যপ্রার্থী সুব্রত চ্যাটার্জিকে বললেন, সর‍্যি উই কান্ট গো, নাইদার উই কান এক্সপ্লেইন হোয়াই উই কান্ট…। এদিকে অনাহারে মরতে শুরু করেছে মানুষ। যা-তা খেয়ে অসুখে মরছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। গুলিতে যাদের মারা হচ্ছে, তাদের লাশ নগদে গুম করে ফেলা হচ্ছে। হয় লঞ্চে তুলে জলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, নয়তো ডাম্প করা হচ্ছে টাইগার প্রজেক্টে। বাঘের আহার জোগাতে। জ্যোতি বসু ওদিকে সংবাদ মাধ্যমে বলে চলেছেন- সুন্দরবনে এসব উদ্বাস্তু আসলে সিআইএর চক্রান্ত বাস্তবায়ন করছে, তারা সশস্ত্র ট্রেনিং নিচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে লোক এসে এখানে আশ্রয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ঘাত ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে তার কাছে পাকা খবর আছে।

মে মাসের শুরুতে যাকে বলে ফাইনাল অ্যাসল্ট। কাহিনীটা খতম করার সিদ্ধান্ত নিলেন জ্যোতি বসু। পুলিশের হাত শক্ত করতে যোগ দিলো সিপিএম ক্যাডাররা। পার্টির নির্দেশ বলে কথা! আশেপাশের দ্বীপগুলোতে কঠোর আদেশ জারি হলো- এতদিন যা সাহায্য করার করেছো, খবরদার আর নয়। ১৩ মে মরিচঝাঁপিতে নরক ভেঙ্গে পড়লো। গভীর রাত থেকে সেখানে শুরু হলো বর্বর এক নৃশংসতা। টানা তিনদিন চললো আক্রমণ। নৌকা করে লোক যখন পালাচ্ছে তখন তার ওপর লঞ্চ তুলে দেওয়া হলো। লাশগুম এবং নৌকা ভাঙার জন্য থাকলো আলাদা পুরষ্কার- নগদ টাকায়। লেলিয়ে দেওয়া পার্টিজান গুণ্ডারা ঘরে ঘরে আগুন দিলো, সামনে যে পড়েছে তার ওপর চললো আঘাত, নারী হলে তাকে হতে হলো ধর্ষিতা। আগুনে পুড়ে ছাই হলো শ’খানেক শিশু। তাদের তুলে আনার সময়টা দেওয়া হলো না মায়েদের। পলায়নপরদের ওপর গুলি চলছে পুলিশের। দুঃস্বপ্নের একাত্তরই ফিরে এলো মরিচঝাঁপির ওই বাঙালী রিফ্যুজিদের ওপর। তফাৎ এরা ধর্মেও এক, ভাষায়ও।

অবশেষে সাফ মরিচঝাঁপি। সম্পূর্ণ এলাকায় কোনো স্থাপনা নেই যা দাঁড়িয়ে আছে। ধংসস্তুপ কথাটার আক্ষরিক এক প্রদর্শনী চারদিক জুড়ে। পোড়া ছাইয়ের মাঝে হয়তো উকি মেরে আছে ঘুমের মধ্যেই লাশ হয়ে যাওয়া কোনো শিশুর রোস্ট। সরকারী নিষেধাজ্ঞার ঘেরে ক্যাজুয়ালটির সঠিক সংখ্যাটা এখনও অজানা। কারো মতো শয়ে শয়ে, কারো মতে হাজারে হাজার। লাশ জলে ভেসে গেছে,
- অনেকে বলে বাঘে খেয়েছে কিন্তু আমরা জানি গাঙের ধারে দিনরাত জঙ্গলের ওপর আমাগো সংসার চলে। বাঘ গাঙে ভেসে যাওয়া মড়া মানুষ খায় না। সে সময় তো সাপে কাটতো মাঝে মধ্যেই।
এক কথায় সাপের উৎপাত ছিলো। মশারি টানিয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হতো যদি মা মনসার কৃপায় বেঁচে যায়। তখন ডাক্তার বৈদ্য তেমন ছিলো না। কখনো কখনো দেখেছি কলার ভেলা জঙ্গলের পাশে জোয়ারে পাড়ের গায় লেগে আছে। আমরা তখন নদীর মাঝে গেরাপি করে রান্নাবান্না করছি। বাঘ ঐ ভেলার ধারে বসে আছে। কিন্তু শোকাশুকি কিছুই করছে। খানিকক্ষণ বাদে লম্বাচওড়া হাই তুলে বনের ভিতর ঢুকে গেলো।

কিন্তু বহু লোক ও অল্প বয়সী ছেলেদের তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। বিভিন্ন সাংবাদিকদের প্রচারিত হিসাব অনুসারে ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু অবরোধ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত অনাহারে ৯৪ জন এবং বিনা চিকিৎসায় ১৭৭ জন শিশু মারা গেছে। ধর্ষিতা নারীর সংখ্যা ২৪ জন, মারা গেছেন ২৩৯ জন। অনাহারে আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। আহত ১৫০, নিখোজ ১২৮ জন এবং গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছেন ৫০০ জন। অন্যান্য ভাষ্যে সংখ্যাটা কয়েকগুণ। এদের অনেকেই দন্ডকারণ্যে আবার ফিরে গেছেন। কেউবা পালিয়ে কলকাতায় এসে এখন ফুচকা বিক্রি করেন, হকারি করছেন। অনেকেই জানেন না তার স্বজনদের কে কোথায় আছে, বেচে আছে কিনা মরে গেছে। মেয়েরা হয়ে গেছেন পতিতা!বারাসাতের, হ্রদয়পুর রেললাইন ও কদম্বগাছি এলাকায় এদের অনেককেই পাওয়া যাবে। প্রকৃত লড়াই করা মানুষগুলোর অনেক বয়স হয়েছে। কেউ বা মারা গেছেন। মরিচ ঝাঁপির কথা তুললেই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। আবার অনেকে ভয়তে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।ও সব শুনে আপনার কি হবে। কি করতে পারবেন। ছাড়ুন না, ও সব কথা। তবে অনেকে লুকিয়ে থেকে সাতজেলিয়া,ছোটমোল্লাখালি, কুমীরমারি,পুইজালি,পারঘুমটে। মরিচঝাঁপির কত কাঠানোর জন্যে পুনরায় ঝড়খালি জঙ্গল কেটে ওপার বাংলা ও এপার বাংলার বহু পরিবারকে টাকার বিনিময়ে জায়গা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়।
মরিচঝাঁপি অভয়ারন্য নষ্ট হচ্ছিল। আর ঝড়খালি বুঝি সুন্দরবনের বাইরের কোন জেলা মনে হয়।

@ উমাশঙ্কর মন্ডল।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

ছোটনাগ পুরের মালভূমির স্বাভাবিক উদ্ভিদ কালো ভেলা,জঙ্গলমহলের অতি সুস্বাদু ফলের  মধ্যে কালো ভেলা।এই ফল পোড়া অত্যন্ত সুস্ব...
19/05/2024

ছোটনাগ পুরের মালভূমির স্বাভাবিক উদ্ভিদ কালো ভেলা,জঙ্গলমহলের অতি সুস্বাদু ফলের মধ্যে কালো ভেলা।এই ফল পোড়া অত্যন্ত সুস্বাদু।এই ফলটা শুকিয়ে খেতে হয় ,খুব মিষ্টি ,রস যুক্ত ফল খেলে ঠোঁট ও লিভার পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
তাই বলা হয় ।

"রাম কাকা হে রাম কাকা বিচ বাইরে
ফলটি পাকা এর নাম ভেলা পাকা"

বড় আকৃতির সুদর্শন পাতা দেখে গাছটি খুব সহজেই চেনা যায়। ভেলা মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষ। এই গাছের প্রশাখা, পত্রবৃন্তক এবং পাতা ক্ষুদ্র রোমে আবৃত থাকে। পাতা দীর্ঘ, চওড়া, পুরু এবং আগার দিকে গোলাকার। কচি পাতার রং কাঁচা সবুজ হলেও পরিণত পাতা দেখতে কালচে সবুজ। পাতার বৃন্ত স্থূলকায় এবং আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা। ফুল ফোটার মৌসুম বসন্তকাল। ফুলের বিন্যাস অসম, বিক্ষিপ্ত এবং স্থূলকার ধরনের। ফুল মিশ্রবাসী, ছোট ও গুচ্ছিত। দলবৃতির তুলনায় বেশ বড়, আয়তাকার এবং সবুজাভ সাদা রঙের। ফলগুলো ডালের আগায় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকে। সাধারণত মে-জুন মাসের দিকে এ গাছের ফল পাকতে শুরু করে। ফল তির্যকভাবে আয়তাকার এবং আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। পাকা ফলের ওপরের অংশ কালচে এবং নিচের দিকটা কমলা রঙের। ফলের নিচের অংশ খাওয়া যায়। ওপরের অংশ থেকে এক ধরনের আঠালো রস পাওয়া যায়। এই রস ধোপারা কাপড় চিহ্নিত করার কালি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

কালো ভেলা নাম করন পিছনে কারণ বোধহয়, ফলটি ভেলা বা ভল্ল মত দেখতে বলে। আসলে একপাশ রসাল ফলের মতো, অন্যপাশ শুকনো, বড়শির মতো বাঁকানো বলে এর এই রকম নাম । সংস্কৃত 'ভল্ল' অর্থ বড়শি। গ্রামাঞ্চলে কুয়ার জলে ভাঁড় বা বালতি হারালে বড়শি আকৃতির 'ভল্লাকাঁটা' নামিয়ে উপরে ওঠানো হতো। সেই 'ভল্ল' মতো দেখতে বলেই এর রূপ নাম।
যদিও বাংলায় 'ভেলা' শব্দটি ভল্ল-র সরল স্নিগ্ধ রূপ। মহাভারতে উল্লিখিত নাম ভল্লাতক। বেদে নাকি এই ফলের উল্লেখ আছে অরুষ্কর নামে যা ব্রণ-চিকিৎসা ব্যাবহৃত হতো।
তবে কালো ভেলা জঙ্গল মহলের স্বাভাবিক উদ্ভিদটি হলেও এর অবিলম্বে সংরক্ষণ প্রয়োজন। নাহলে আগামীতে বিলুপ্তির সম্ভবনা রয়েছে। রাঢ় বাংলার লোক হলে নিশ্চয়ই পাকা ভেলা অনেক খেয়েছেন| কেন্দ , পিয়াল , কুসুম , মহুয়া, ভেলা , কেশর এইগুলো ভালোভাবেই চেনেন জঙ্গল মহলের মানুষরা।
মানভূঁইঞা প্রবাদ-আছে-
"নিম্ , হত্তকি , ভেলা ।
এই তিন থাইকতে মরি গেলা ।।"
আসলে নিম,হরিতকী, বহড়া,আমলকী, ভেলা এইগুলি দারুণ ভেসজ গুন সম্পন্ন ফল।বাঁকুড়া নাকি "ভেলাই ডিহা" নামে গ্রাম আছে।এই 'গাদর ভেলা" একটি অত্যন্ত উপকারী ফল। এর পাকা ফল কেউ যদি বছরে দু-তিনটা পুড়িয়ে খায় তাহলে তার জীবনে কোনদিন সুগারের অসুখ হবে না।
ভেলা ফলের বীজ বাদে আগার রসালো অংশটা অল্প পুড়িয়ে খেতে ভালো লাগে.. বীজে কালো রংয়ের, আগুনের তাপে যে রস বের হয় তা ওষুধি গুণ রয়েছে.. বর্ষাকালে পা কাটলে লাগালে. পায়ের পাতায় কোনো ঘা সহজেই সেরে যেতো ।
ফলটা পুড়িয়ে যে রস পাওয়া যায় তা গবাদী পশুর ঘায়ে লাগালে সেরে যায় ।

নজর যাতে না লাগে তার জন্য আগে ভেলাইকড়ি বাঁধা হত।
পিয়াল,কেন্দ,বৈচী,ভুড়রু, ভেলাই, কুসুম এমন অনেক গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
আসলে সংরক্ষনের ব‍্যাপারে স্থানীয় দের ই অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে।সব বীজগুলো যাতে কেউ পুড়িয়ে না খায়ে ফেলা হয় , সেদিকে নজর রাখতে হবে।বীজ সংগ্রহ করে ব‍্যক্তি উদ‍্যোগে চারা তৈরী করে বর্ষার সময় তা রোপণ করতে হবে। এই রকম ছোট খাটো উদ্যোগ নিয়ে ও সংরক্ষনের হতে পারে এই বৃক্ষের।

_______________________________
#জঙ্গলমহল

যখন ছোট ছিলাম ঃ অমিত মাহাত তখন কতই বা বয়েস। নয় কি দশ হবে। হাফপ্যান্ট পরতাম। স্যাণ্ডো গেঞ্জি আদাড়ে বাদাড়ের খোঁচায় ছিঁড়ে য...
07/04/2024

যখন ছোট ছিলাম ঃ অমিত মাহাত

তখন কতই বা বয়েস। নয় কি দশ হবে। হাফপ্যান্ট পরতাম। স্যাণ্ডো গেঞ্জি আদাড়ে বাদাড়ের খোঁচায় ছিঁড়ে যেত বলে মা কিনে দিত জালগেঞ্জি। ছিদ্রওয়ালা।এর অদ্ভুত কদর তখন। গরম পড়লে শুরু হয়ে যেত সকালের স্কুল। দশটায় ছুটি। আমাদের ছিল চাষের ছুটি। গ্রামের স্কুলের মাস্টার মশাই চাষ করতেন৷ হাল বাইতেন। ধান রুইতেন। আমিও মায়ের হাত ধরে জমিনে চলে যেতাম। জ্যাঠা হাল বাইতেন। মা খাবার পৌঁছে দিত। আমি জলঘটি হাতে ধরে হাঁটা লাগাতাম।

আমাদের জমি। নামো শোল তলাবিল। সেখানে যেতে হলে হাঁটতে হত অনেকটাই। মাঝে একটি খাল পড়ে। খালের কোনো নাম নেই। বড়রা বলত শলের নালা। সরু লিকলিকে তেলুয়া সাপের মত এই খাল। নিরন ধরন বাদে বারোমাস জল বইতে থাকে। তবে নিরন দিনে সরু সে খাল আরও সরু হয়ে দীর্ঘ ধরনের মাসে শুকনো অমরি ডাঙ হয়ে পড়ে থাকে।
জ্যেঠার তখন জলতেষ্টা পায়। আমি বাড়িয়ে দিই জলের ঘটি। জঙলিজটা শুণ্ডওলা ধান বীজতলার বাতালি বেশিদিন থাকবে না। এক দুদিনের মধ্যে ফেলতে হবে বীজ।
-"লে তো বোঁটা টা ধর। শুধু জাঁক্যে রাখবি। হঁ। দু বেঢ়া ঘুরা। ডাহিনের টাকে ঠকড়ায় ঘুরাবি। বাঁয়ের টাকে একদমেই পইনা দিবি নাই। নাইলে দিবেক চম্পট। যেমন চলছে। চলুক। "

জ্যেঠার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে এইভাবে শিখে গেলাম। লাঙ্গল চালানো। অদ্ভুত মজার জিনিষ এটা শিখতে কিছু সাবধানতা মেনে চললেই হল। খুব সহজ ব্যাপার। সেবার হল কি । জ্যেঠার খাওয়া তখনও হয়নি। ইচ্ছে করেই দিলাম এক ঘা বাঁয়ের গরুটিকে। দেখি না। কী হয় তারপর? আর যা হল তা বলবার নয়। বাঁয়ের টি একছুটে এগোতে গিয়ে ডাইনের টিকে যাকে বলে গহলানো অবস্থা। দিলাম শক্ত করে দু ঘা ডাইনের হালিয়াটিকে। তাতে যদি ওদের পায়ের গতিতে সামঞ্জস্যতা ফেরে। তা ফেরাতে ঘেমে একসা ওই বয়সেই। সমতা ফিরল বটে। লাঙ্গল আর চলল না। দুজন দুদিকে মাথা ঘুরিয়ে যাকে বলে মুড় পুচকার আগের অবস্থা।
জেঠা চেঁচাতে শুরু করলেন -"অরে সামটা ডাইনের টাকে। "কথামতো সামটাতে গেলাম বটে। পারলাম না। উল্টে আড়জুয়ালি অবস্থায় হাল ছেড়ে ব্যালার বাটের মতোই অপেক্ষায় রইলাম।

কতক্ষণ বাদে খেয়ে উঠবে জ্যেঠা। তারই অপেক্ষা।
# # #
ভাদুই ডাহিতে নিমগাছের ছায়ায় বসে জ্যেঠা তখন ঝিমোচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কয়েকটা মরা শামুখের শুকনো খোল। একটি কাঠি কুড়িয়ে দু টুকরো করে তার মাথায় শামুখ দুটিকে রেখে জ্যেঠার ছাতির উপরে ফেলে দিলাম। খানিকবাদে শামুখের ভেতর থেকে কয়েক জোড়া পিঁপড়ে সটান বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছাতির নরম মাংসে দিল এক কামড়।
এবার ধড়ফড়িয়ে উঠতে হল। -" হেঁ রে চিমটি কাটলিস? "
-"নাই তো। "
-এই গামছায় জোরসে হাওয়া কর তো। "
-"তাইলে একটা গল্প বল। "
-"আগে হাওয়া কর। বেজায় গরম। "
ঘুমোচ্ছিল ভালো। এখন গামছায় হাওয়া করতে হবে। আর জ্যেঠা চোখ বুজে ঘুমোবে সেটি হচ্ছে না। আমি আব্দার জুড়ে দিই -"জ্যেঠা সেই কিছুমিছুর গল্পটা বল। সেই যে একটা বোকা তাঁতি শ্বশুর ঘরে ঢেঁকিশালে ফঅর ফঅর করে হাগে দিল। ওই টা। "
-"ধুউর বোকা। ওটা রাতে শুনবিস। "
-তাইলে সেই টা জ্যেঠা। নাড়ির ব্যাটা গৈমদা' আর ভুঁড়া শিয়ালের মুরগি খাওয়ার গল্পটা হোক। "
-"কালকেই শুনলিস যে...। "
-"তবে বাঁদরের আর চটি পাইখের টা বল! কবে বলবিস? ভোখ পাইয়ে গেল যে। "

# # #

রামায়ণের গল্প। সীতা উদ্ধার শেষ। রামচন্দ্র কিস্কিন্ধা ছেড়ে যখন অযোদ্ধার পথে পা বাড়াবেন মনে করেছেন। ঠিক সেই সময় একদল বানর সেনা তাঁকে ঘিরে ধরলেন।
বানরদের সদ্দার যে ছিল সে রামচন্দ্রের পায়ে ধরে ফেলে বলল -প্রভু সেই তো চলেই যাচ্ছেন। আমাদের একটা উপকার করে যান।
-সেই তো। তোরাও তো আমার কম উপকার করিস নি। তোদের জন্যিই লঙ্কা বিজয় সম্ভব হল। বল কী উপকার করে যাব। হাতে কিন্তু সময় কম।
-উপকার নয় একটি আশীর্বাদ করুন প্রভু।
-আশীর্বাদ?
-হ্যাঁ প্রভু।
-বল কী বর চাস?
-প্রভু। এই বর দিন। যাতে আমরাও আপনার মতো রাজা হতে পারি।
-ও। তোরাও রাজা হবিস? এ তো ভালো কথা। আশীর্বাদ করলাম তোরা শিগগিরই রাজা হবিস।
-কবে আসবে সুদিন?
-এখন তো রামের যুগ। তোরা রাজা হবিস কলিতে।

সেই কলিতে সেবার তুমুল ঝড়ঝাপটা আর বৃষ্টি। চড়াই পাখিটি বাঁশঝাড়ের ভেতরের সামান্য বাসার ভেতর থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে উঁকি মারতেই দেখতে পেল একটি ন্যাড়া গাছের তলায় বসে ভিজছে এক হনু। এবং ঠকঠক করে কাঁপছে দেখে চড়াইটি বলল -ও ভাই ভিজছিস ক্যানে? তুই যদি আমাদের মতো ঘর বনাতে পারতিস, ভিজতেই হত না।
-বটে রে ব্যাটা জ্ঞান দিচ্ছে বলে এক লম্বা লাফে বানর সেনার উত্তরপুরুষ টু উঠে পড়ল বাঁশ ঝাড়ের উপর। আর টেনে হিঁচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল চড়াইএর বাসা। চড়াইকেও ভিজতে হল তারপর।

গল্প শেষ হতে জ্যেঠা বলল -" কী বুঝলিস "

আমার তখন অল্প বয়েস। যা বুঝলাম তাই অনেক।

ভোটের ভূতে  মুতে ভেজালো  ভালো মানুষের মাথা খানা... ঘাসের ডগা ছাগল খেলো পাঁকে পদ্ম আর ফোটে  না।  কেউ সিকি কেউ বা আনা  ওরে...
11/03/2024

ভোটের ভূতে মুতে ভেজালো ভালো মানুষের মাথা খানা...

ঘাসের ডগা ছাগল খেলো পাঁকে পদ্ম আর ফোটে না।

কেউ সিকি কেউ বা আনা
ওরে ভরে গেল পেচ্ছাপ খানা
ও কাজ করে না, তোমার মাথা কাজ করে না...

ও ভালো মানুষ , তোরই মাথায় জমছে যে সব আবর্জনা।

রঙ।। ওরে ভোটের ভূতে মুতে ভেজালো ভালো মানুষের মাথা খানা।।
কলমে -অমিত মাহাত

অখন্ড দেশ এক সুতোয় বাঁধা। এক তারে গলা মেলাই জাতীয় সঙ্গীতে। স্কুলে যখন ভরতি হলাম। ইতিহাস তার আদিম যুগে টেনে নিয়ে গেল। ছোট...
31/01/2024

অখন্ড দেশ এক সুতোয় বাঁধা। এক তারে গলা মেলাই জাতীয় সঙ্গীতে।
স্কুলে যখন ভরতি হলাম। ইতিহাস তার আদিম যুগে টেনে নিয়ে গেল। ছোট্ট হাত ধরে। প্রকৃতির বিচিত্র রূপ। বিচিত্র খাদ্যাভ্যেস। আগুনের ব্যবহার। চাকা। বয়নশিল্প। এসে যাওয়ায় ন্যাংটো মানুষ গাছের ছালচামড়া ফেলে বস্ত্রাবৃত হল।
টোটেমবাদ। গোষ্ঠি। দাসপ্রথা। লড়াই।

আরও যখন বড় হলাম। আমাদের শেখানো হল। 'সবার উপরে মানুষ সত্য। ' 'নানাজাতি নানাভাষা নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান। '

ক্লাস এইট। পাল্টে গেল সিলেবাস। বিশ্ব ইতিহাস ঢুকে পড়ল। রক্তাক্ত হচ্ছিলাম। মনে প্রাণে পালাতে চাইতাম। ইতিহাস থেকে মুখ ফেরাতে চাইতাম। মানবিক প্রবৃত্তিগুলো আশ্চর্য রক্তক্ষরণে মথিত করত।

মাধ্যমিক। জীবনটা আমার উলটপালট হয়ে গেল।
সিলেবাস নিজেই পাল্টালাম উচ্চমাধ্যমিকে। তারপর আর স্কুল মুখো হয়নি । স্কুল তার ভালোবাসার হাতটি সরিয়ে নিল আমার কাঁধ থেকে। আমার শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে।

এদিক থেকে গো মুখ্যু আমি।

কিন্তু আজ এ কি হচ্ছে? দেশজুড়ে এত অবিশ্বাস ঢুকে পড়ল কোন পথে? বিবিধের মাঝে মিলন মহান সত্যিই কি কবি কল্পনায় থাকবে? বাস্তবে তো উল্টো হচ্ছে৷ ছাত্রবিক্ষোভে প্রকাশ্যে গুলি চালাচ্ছে এক যুবক। ধর্মীয় পরিচয় এখন রাজনৈতিক মেরুকরন ছাড়া আর কি। স্কুল পাঠ্য বইএর শুরুতে এরপরেও লেখা হবে। ধর্মনিরপেক্ষ, গনতান্ত্রিক এইসব শব্দগুলো। সংবিধানের কিছু ধারা উল্লিখিত থাকবে অধিকার প্রসঙ্গে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকটি সোজাসুজি সিলেবাস পড়ায় হয়ত লেকচার দেবেন ভবিষ্যতেও। বইএর দ্বিতীয়পাতার কালো অক্ষরগুলো, একটি শব্দও মন থেকে শেখানোর চেষ্টা করবেন না।

হিন্দুত্ববাদী ছাত্রটি দেশি পিস্তল তুলে তো নেবেই। ভাতৃত্ববোধ তো শিক্ষক শেখান নি তাকে।

অখন্ড দেশ। আজ খন্ডবিভক্ত। ধর্মীয় মোড়ক। রাজনীতির নেতারা এই বিভাজনের সুড়সুড়ি দেবে। আর আপনার থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। আপনার মন থেকে এইভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। পরস্পর থেকে।

জাতীয় সঙ্গীত দাঁড়িয়ে গাইছি ঠিকই। একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। এইভাবনা রবীন্দ্রনাথ থেকে নিচ্ছি না।

02/12/2023

অণুগল্প

সাপিনীর বিষ কিংবা ভবিতব্য ঃ অমিত মাহাত

একা না হলে লেখা আসে না।

একা না হলে হস্তমৈথুনের স্পৃহাও জাগে না। একা হই, লিখি। উঠে গিয়ে হস্তমৈথুন করি।

ছটপটানি শুরু হয়।

আলো আর খোলাচোখ এই দুটো জিনিস আমাকে বেশিদূর যেতে দেয় না। পারিও না। উঠে গিয়ে অন্ধকার নামানোর আয়োজন করি।

অন্ধকারে কতদূর চলে যাই। অন্ধকার মেয়ে হয়ে উন্মুক্ত করে দেয় ওর খোলাপিঠ ।

অন্ধকার তখন আরও বেশি মোহময়। অন্ধকারের মোহশক্তি আমাকে অবশ করে। খোলাপিঠে অন্ধকার মেখে ও মেয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে উঠে যায়। ঠিক যেমন, মা তার কোলের ছেলেকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আগুনের কাছে, খিদের কাছে ফিরে ফিরে যায়।

চোখ বন্ধ করলে, অন্ধকারের সেই মেয়েটি আমার দিকে পেছন ফিরে ধীরগমনে দুরত্ব রচনা করে। ওর মুখ কখনও কেন যে দেখি নি। মনে করার চেষ্টা করি। পারি না।

সে কখন, কীভাবে আসে? কীভাবে ঘুম পাড়ায়? এসব কিছুই মনে করতে পারি না। ওর তবে কি আসা নেই, যাওয়া আছে। ও যখন উঠে যায়, আমি ওর খোলাপিঠ দেখি।

ওর খোলাপিঠে অন্ধকার খেলা করে। অন্ধকার আমাকে নিয়েও খেলে। খেলাচ্ছলে গিলে খায় আমার ভবিতব্য।

18/09/2023

কুড়মিদের থামাতে হবে। আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। ঠিক এই রকম একটি জিগির তোলা হচ্ছে।

এর আগেও শালবনীর ঘটনায় কুড়মি ও সাঁওতালদের লাগিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। ভাইপো ও প্রশাসনিক সহযোগিতায়। প্রশাসনের লাভের লাভ কিছুই হয় নি। উল্টে কুড়মি পারদ আরও চড়ল। যার ফল পঞ্চায়েত নির্বাচনে। বিজেপি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল জংগল মহলে। কুড়মির কাপড় খুলতে গিয়ে নিজেরাই ন্যাংটা হল। সেই জায়গায় প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে চলে এল কুড়মি।

এই জ্বালা নিতে পারছে না। কি শাসক কি বিরোধী। কি তৃণমূল কি বিজেপি।

ঝাড়গ্রামের কুড়মি নেতাদের তো ঠান্ডা করা গেল।(সত্যিই কি ঠান্ডা করা গেছে?) এবার পুরুলিয়াকে থামাতে হবে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই অজিত বাবুর ভিডিও ভাইরাল করা হল। রেল টেকা আন্দোলনের ঠিক আগে আগে। অতেব জাগো হিন্দু। রাস্তায় নামো। কুড়মিদের ঠেকাও। এর আগে সাঁওতালদের রাস্তায় নামানো হয়েছিল কুড়মিদের বিরুদ্ধে। এবার হিন্দুত্ব সুড়সুড়ি!

বেআইনি জমায়েত, পুলিশকে আঘাত এইরকম জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করা হল সতেরো জন কুড়মি নেতৃত্ব আন্দোলনকারিদের।

অনেক চক্রান্ত হবে। অনেক ষড়যন্ত্র হবে। অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হবে। অনেক মিথ্যা মামলা হবে। কিন্তু এই করে কি কুড়মি আন্দোলন দমন করা যায়? না যাবে?

13/09/2023

একেক সময়ে শ্মশানে এলে মনে হয়, এই যে দেহভান্ড বয়ে বেড়াচ্ছি, এই যে একটা গোটা শরীর নিত্যদিন যা বহন করে চলেছি, তা যদি কোনও এক গাছের নীচে কিংবা কোনও এক নদীর পাড়ে ফেলে রেখে চলে যাওয়া যেত।

দুদিন তিন দিন ফিরলাম না আর। শরীরের মায়া পড়ে থাকুক, যেখানে ফেলে রেখে চলে যেতে চাইছি।

ধরা যাক আর ফিরলাম না। একটি মাস কেটে গেল। বছর কাটল। আমি আর ফিরতে পারলাম না ।
সেই যে নদী পেরিয়ে চলে এলাম। দীর্ঘদিন। দীর্ঘকাল।

শরীরহীন এক জার্নি যেদিন থেমে যাবে। সেদিন হয়তো পুরনো পথে ফিরতে চাইব।

একদিন সে ফেলে রাখা শরীরের টানে হয় তো ফিরলাম। যে ঘাট আমাকে পার করে দিয়েছিল। ফেরার সময় সে ঘাট আমাকে চিনতেই পারল না।

নদীকে জানালাম, আমি ফিরতে চাই।

নদী বলল, যাও। ভেসে যাও। অনন্তকাল ধরে
আমিও ফিরতে চেয়েছি পাহাড়ে। গিরিকন্দরে। পারি নি।



বাস্তবে ফিরতে বুঝলাম। দেহটি তখনও পুড়ছে। প্রিয়জন। প্রিয়মানুষ। প্রিয়শরীর পুড়ে ছাই হবে। শরীর পোড়ার গন্ধ। বাতাসে। বাতাসে কুন্ডলী পাকিয়ে সে শরীর ধোঁয়া হয়ে উঠে যাচ্ছে উপরে।

শরতের কাশবন বসন্তে খুঁজে পাওয়া যাবে না আর।

কলমে - অমিত মাহাত Amit Mahato

08/09/2023

ভাদর গাথা ঃ অমিত মাহাত

# # #.কোই গে কি রাঁধলি?
-কি আর রাঁধব দিদি? বিলের গেঁঢ়ি আর বাড়ির অল। আর কি পাবি?
-হামদের অ কনঅ নাই। সঁল্লা শাগ। পুটকার বাপ অ নাই। আর বেসাতির জ্বালা! হেঁগে বড়অ বাঁধ যাবিস? সিনাতে?
-যাব কি দুধের ছানা কঁকাবেক যে!
পুটকা মাঁঞ গেল মাছ শিকারে। মাহাত ঘরের বাঁধ। যাবার পথে মাঝ কুলহিএ কাদা। ছানারা সে কাদায় নাচ লাগঁায়ছে। করম পরব আসছে যে।। বুল্টি আগ দহলি নাচছে। জাওয়া গীত শিখে লিছে নানি বুঢ়ির কাছে। ..
চার কুইনা পখৈর টি সনাবাঁধা ঘাট গো
চার কুনে উঠে মাগুর মাছ।
জালে ধরিব মাছ খঁচলে ধরিব গো
ঝালঅ বাঁটনা দিয়ে লহকে রাঁধিব।
লহকে রাঁধিব মাছ মহকে খাইব গো
হাত অ ধুয়ে মাচিলায় বসিব।
মাচিলায় বসিএ পায়রা...

কই গে কথা যাছিস? পায়রার আর বাঁকুড়ার বাজার দেখা হইল্য নাই। জালি ঝুমকা কদমের কলি কিনাও নাই হইল্য। পুটকার মাঁঞকে টেকায় দিল বুল্টির নানিবুঢ়িটা।
-আয় গে দুবেড়া নাচেলে।
আর খঁচলে মাছ ধরা নাই হৈল্য মাহাত বাঁধে। ছানা গাকে জাওয়া নাচের টেরনিং দিতে হবেক যে দুদিন বাদে পরব।
আর তরকারির কি হবেক? ঘরে নুন হলৈদ সউব সিরাঁঞেছে। জাওয়া যে দিলি তরাহ হলৈদ কথা পালি গো...? দকানিকে নাম দিব হলৈদ বেপারি। পহিল গীত এ উচড়ন। তরকারি যা হোক হবেক। -আদাড়ে বাদাড়ে ঝিঁগা বিলের পুঁঠি মাছে গো... লাল লৈট্যায় ধব লৈট্যায় মেসায়েঁ রাঁধিব।। আহা অমৃত । জীবন উপভোগ করতে হয় এভাবেই। যেটা পুটকার মাঁঞ জানে।

Address

Khatkura
Jhargram
721505

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when mahato_vai_amit posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share