16/01/2024
যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী একদিন শিষ্য কৃষ্ণরাম সহ কাশীতে গঙ্গার রাণামহল ঘাটে বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছেন। এক আগন্তুক এসে যোগীরাজকে করজোড়ে প্রণাম করে তাঁদের সঙ্গী হয়ে আলাপ জমাল। হাঁটতে হাঁটতে ঐ আগন্তুক যোগীরাজকে বলে- 'যদি অভয় দেন তবে একটি কথা জানতে পারি?' যোগীরাজ বলেন-'অনায়াসে বলতে পারো'! বিনীতভাবে আগন্তুক জানতে চায়- 'শুনেছি আপনি ধ্যান করেন। কিন্তু কোন্ দেবতার ধ্যান করেন'? মুখে হাসি নিয়ে যোগীরাজ উত্তর দিলেন- 'তা তো জানি না'! আগন্তুক পুনরায় জানতে চাইল- 'নিশ্চয়ই কৃষ্ণ, শিব, কালী এইসব কোনো দেবদেবীর ধ্যান করেন'? যোগীরাজ বলেন- 'কৃষ্ণ, শিব, কালী, তুমি, আমি সকলের মধ্যে যিনি আছেন তাঁরই ধ্যান করি'। বিস্মিত হয়ে আগন্তুক প্রশ্ন করে- 'আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না'! যোগীরাজ বলেন- 'আমিও তোমাকে বোঝাতে পারবো না, তুমিও বুঝবে না'।
যোগীরাজের মতে- 'কেউ যখন মন্দিরে গিয়ে প্রণাম করে তখন সংশ্লিষ্ট লোক কী মন্দিরকে প্রণাম করে? না কী ঐ মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবদেবীকে প্রণাম করে'? দেবদেবী ছাড়া মন্দির মূল্যহীন। আর ঈশ্বর তো সব জায়গাতেই আছেন। মন্দিরের বিগ্রহের মধ্যে আছেন যেমন সত্য, তেমনি তোমার ভেতরে আছেন তাও সত্য। ঈশ্বর যখন তোমার ভেতরে রয়েছেন এবং এটা সর্বাপেক্ষা কাছে। সুতরাং কাছের বস্তুকে খোঁজাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই বলে যোগীরাজ সাকার পূজা বিরোধী ছিলেন না। বরং বলতেন, সাকার পূজায় মন স্থির হয়, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধার উৎকর্ষ হয়। কালক্রমে আত্মসাধনা প্রাপ্ত হলে সাকার পূজা গৌণ হয়ে যাবে। রত্নখনির সন্ধান পেলেও খনন করা ছাড়া যেমন রত্ন পাওয়া যায় না, তেমনি আত্মকর্ম ছাড়া নিজের (আত্মার) সাক্ষাৎ পাওয়ার উপায় নেই।...