22/11/2024
আজ থেকে শুরু হলো আলংগিরি শ্রী শ্রী রাধাগোকুলানন্দ জিউ রাসষ্টমী মেলা।আজ আপনাদের সাথে সংক্ষেপে মন্দিরের পূর্ব ইতিহাস ভাগ করে নেবো।বি: দ্র:- (প্রচলিত জনশ্রুতি ও সামান্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে এটা লেখা হয়েছে। তাই কিছুটা বাস্তব ও কিছুটা কাল্পনিক) © কপিরাইট ও স্বত্ব এই পেজের জন্য প্রযোজ্য।
তাহলে শুরু করা যাক.........
সময়টা সম্ভবত ১৫৬০ থেকে ১৫৭০সাল। আরো মঠ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করার উদ্যেশে, এক দিব্য কৃষ্ণ মূর্তি সাথে নিয়ে শ্যামানন্দ এগিয়ে চলেছে ওড়িশার দিকে। সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন শ্রী রসিকানন্দ, শ্রী পরমানন্দ, শ্রী বিমলানন্দ ও প্রসাদ দাস। পথে নানা গাছগাছালিপূর্ন, ফুল লতায় সুসজ্জিত, মনোরম নির্জন স্থান ও পাশে একটি পুকুর দেখে, রাত্রিবাস ও বিশ্রামের জন্য সাথে থাকা কষ্টিপাথরের ত্রিভঙ্গ কৃষ্ণমূর্তিকে গাছের তলায় স্থাপন করে সেবাপুজা ও নামগানে মত্ত হলেন। স্থানীয় ধর্মপ্রাণ জমিদার চৌধুরী দিব্যসিংহ করমহাপাত্র খবর পেয়ে, নানা উপচার সহ কৃষ্ণমূর্তি দর্শন করতে এলেন। সেই অপূর্ব মূর্তি দর্শন করে বিমোহিত হয়ে গেলেন জমিদার। পাঁচ সাধুর সঙ্গে পরিচয়পর্ব ও সেবাপুজার শেষে জমিদার এই অপূর্ব দিব্য কৃষ্ণমূর্তি এই স্থানে স্থাপন করার অনুরোধ করলে সাধুগণ বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন। দোর্দন্ড প্রতাপ কালাপাহাড়ের আক্রমণে সনাতন ধর্ম বিপন্ন, তাই সাধুগণ এই মূর্তি উৎকল রাজ্যের রাজধানীর কাছাকাছি স্থাপন করতে চান। সাধুদের নিরাপত্তা সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করে ব্যথিত মনে বাড়ী ফিরে এলেন জমিদার।
কিন্তু পর দিন ঘটলো অপ্রত্যাশিত ঘটনা। যথাবিহীত সেবাপুজার পর সাধুগণ যাওয়ার আয়োজন সমাধা করে মূর্তিকে তুলেতে এসে দেখলেন আশ্চর্য ঘটনা। মূর্তি অবিচল, বহু চেষ্টা করেও, বহু স্তবস্তুতি, নামগান করেও মূর্তিকে একচুল নড়ানো গেল না। শ্যামানন্দ চোখের জলে বুক ভাসিয়ে, কৃষ্ণনাম করতে করতে সমাধিস্থ হলেন। খবর চাউর হতেই স্থানীয় লোকজন, মূর্তি সহ সাধুগনের চারদিকে ভিড় করে আনন্দে, ভক্তিতে আপ্লুত। এমন দৃশ্য দেখে কেউ হাসছেন, কেউ কাঁদছেন, কেউ হরিনাম কেউ কৃষ্ণনাম, কেউ স্তবস্তুতি মন্ত্রোচ্চারন করছেন। এই দৈবীঘটনা আনন্দ কোলাহলে গাছপালায় ঘেরা নির্জন স্থান যেন ভক্ত পরিপূর্ণ ব্রজভূমি গোকুলধাম।
© কপিরাইট ও স্বত্ব এই পেজের জন্য প্রযোজ্য।
সমাধিস্থ শ্যামানন্দ দেখছেন, গোকুলে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে গরু চরাচ্ছেন বালক শ্রীকৃষ্ণ। কখনও তিনি খেলা করছেন। কখনও বাঁশী বাজাচ্ছেন আপনমনে। শ্যামানন্দ যেন সেই বাঁশীর শব্দ নিজের কানে শুনতে পেলেন। অশ্রু বিগলিত শ্যামানন্দ চোখ খুলে তিনি তাকালেন সেই মূর্তির দিকে। কিন্তু এ কি! কোথায় পাথরের অচল মূর্তি! গাছতলা আলো করে বাঁশী হাতে দাঁড়িয়ে গোকুলের সেই বালক কানাই।
জমিদার চৌধুরী দিব্যসিংহ করমহাপাত্রের আর্থিক নিবেদন ও তত্বাবধানে সেই গাছগাছালি পূর্ন মনোরম স্থানে তৈরী হলো মঠ। শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ জিউ নামে মন্দিরে স্থাপিত হলেন সেই কষ্টিপাথরে তৈরি অপরূপ ত্রিভঙ্গ মূর্তি। সমাধিস্থ শ্যামানন্দের গোকুলাধিপতির সেই বালক রূপের সেবা সহ মঠের অধিকারীর দ্বায়িত্ব কিশোর বয়সী প্রসাদ দাস কে অর্পণ করে, শ্রী বিমলানন্দ শ্রী পরমানন্দ ও শ্রী রসিকানন্দকে সাথে নিয়ে পূজ্যপাদ শ্যমানন্দ এগিয়ে গেলেন বালেশ্বরের পথে।জমিদার চৌধুরী দিব্যসিংহ করমহাপাত্র ও মঠের প্রথম মোহন্ত প্রসাদ দাস অধিকারী পরম যত্নে নিত্য আরাধ্য শ্রী শ্রী রাধা গোকুলানন্দ জিউ মন্দির ও মঠ ধীরে ধীরে গড়ে উঠল।
© কপিরাইট ও স্বত্ব এই পেজের জন্য প্রযোজ্য।