02/01/2024
🌿ব্রহ্মচারী বাবার লীলা- প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা🌿
একবার এক বড় রকমের ফৌজদারী মামলা শুরু হয়। তখন বাবার কয়েকজন ভক্ত প্রকৃত সত্য প্রমাণ করবার জন্য বাবাকে সাক্ষী দেবার জন্য অনুনয় বিনয় করতে থাকে বারবার ।
বাবা প্রথমে রাজী হলেন না। তিনি বললেন, আমি চালচুলোহীন মানুষ, কখন কোথায় থাকি তার ঠিক নেই। আমাকে আবার মামলা; মোকদ্দমায়, জড়াচ্ছিস কেন ? আমার দ্বারা ওসব হবে না।
ভক্তরা তবু ছাড়ল না। অবশেষে ভক্তগণের একান্ত অনুরোধে এবং প্রকৃত সত্য প্রমাণের জন্য বাবা রাজী হলেন সাক্ষী দিতে।
মামলাটি হচ্ছিল নারায়ণগঞ্জে জয়েন্ট ম্যাজিস্টেটের আদালতে । সেখানে সাক্ষী হিসাবে বাবাকে উপস্থিত করা হলো। যে ঘরে মামলা হচ্ছিল, সে ঘর লোকে লোকারণ্য। লোকনাথ বাবা সাক্ষী দিতে এসেছেন শুনে বহু লোক এসে ভিড় করেছে তাঁকে দেখার জন্য। দর্শকদের মধ্যে অনেকে তাঁর পরিচিত ছিল, আবার অনেকে তাঁর নাম শুনে দেখতে এসেছে ।
বাবা আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষীর কাঠগড়াতে গিয়ে দাঁড়াতেই সব লোকজন মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল। উপস্থিত সকলের মধ্যেই শ্রদ্ধার, ভাব জাগল। সকলেই কৌতূহলী হয়ে উঠল তাঁর কথা শোনার জন্য ।
ম্যাজিস্টেট লোকনাথ বাবার জটাজুটমন্ডিত দীর্ঘ দেহ'টির দিকে একবার তাকিয়েই প্রশ্ন করলেন, আপনার বয়স কত?
লোকনাথ বাবা সহজ ভাবে উত্তর দিলেন, দেড়শো বছরের বেশী ।
কথাটা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন ম্যাজিস্টেট । ভাবলেন, কোন মানুষ কখনো দেড়শো বছর জীবিত থাকতে পারে না। পরে আবার ভাবলেন, যোগী সাধু পুরুষদের পক্ষে হয়ত বা সম্ভব হলেও হতে পারে।
কিন্তু বিপক্ষের আইনজীবীরা একথা বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাঁরা বললেন, সাক্ষী দিতে এসে ন্যায়ালয়ে দাঁড়িয়ে অবান্তর কথা বলা, যুক্তিসঙ্গত নয় এবং তা অপরাধ বলে গণ্য হয় ।
বাবা তখন সহজ সরলভাবে বললেন, বেশ, আমার কথা তোমাদের বিশ্বাস না হয়, তোমাদের খুশিমত বয়সটা লিখে নাও।
বিপক্ষের উকীল বলল, সাক্ষী বয়সে অতি বৃদ্ধ এবং তাঁর দৃষ্টি ক্ষীণ ।সুতরাং যে ঘটনার সাক্ষ্য দিতে এসেছেন, তা দেখা তাঁর পক্ষে সন্তব নয়।
এইটাই প্রমাণ করার জন্য তিনি নানাভাবে জেরা করতে লাগলেন লোকনাথ বাবাকে । কিন্তু বাবা অবিচলিতভাবে সব জেরার ঠিক ঠিক উত্তর, দিলেন । কোন মতেই তাকে হতবুদ্ধি করা গেল না।
শেষে বিপক্ষের উকীল বাবাকে বলল, আপনি যে বয়সের কথা বললেন তাতে বোঝা যায় , এই বয়সে দূরের কোন জিনিস বা ঘটনাকে ঠিকমত, প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। অতএব আপনি যে তা প্রত্যক্ষ করেছেন দূর থেকে, সেকথা কি ভাবে মেনে নেওয়া যায় ?
বাবা একথা শুনে উকীলবাবুকে কাছে ডাকলেন ।
সাক্ষী হয়ত তাকে কোন গোপন কথা বলবে ভেবে উকীল সঙ্গে সঙ্গে বাবার কাছে গেলেন ।
আদালত ঘরের দরজা দিয়ে দূরে একটা আমগাছ দেখা যাচ্ছিল। বাবা; উকীলবাবুকে সেই গাছকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ গাছটাতে কি- কোন প্রাণীকে উঠতে দেখতে পাচ্ছ?
উকীলবাবু মনে মনে ভাবলেন এ প্রশ্ন অবান্তর । তাই তিনি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন, না, কিছুই ত দেখতে পাচ্ছি না।
আদালতে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বাবাকে চিনত, তারা বুঝতে পারল, এটা বাবার এক লীলা । বুঝল, বাবা তাঁর স্বভাবসুলভ সর্বজ্ঞতার দ্বারা দুরের সব জিনসকেই প্রত্যক্ষ করতে পারেন । সুতরাং এটা মোটেই অসম্ভব নয় তাঁর পক্ষে । আর যারা তাঁকে চিনত না, তারা কৌতূহলী হয়ে দুরের গাছটাকে ভাল করে খুটিয়ে দেখতে লাগল । কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। তারা সবাই একবাক্যে উকীলের কথার প্রতিধ্বনি করে বলল, না, কিছুই দেখছি না।
বাবা একটু হেসে বললেন, আশ্চর্যের কথা! তোমরা বয়সে যুবক তোমাদের দৃষ্টিশক্তি বেশ প্রখর । অথচ এত কাছের জিনিসকেও দেখতে পাচ্ছ না! এটা খুবই দুঃখের কথা ।
উকীলবাবু তখন বললেন, বেশ, আপনিই বলুন, দূরে ঐ আমগাছে কোন প্রাণী উঠছে।
বাবা সহজভাবে বললেন, একটু ভাল করে দেখলেই দেখতে পাবে, একদল লাল পিঁপড়ে সারি বেধে গাছটার উপরে উঠছে।
বাবার কথা শুনে আদালতের সব লোক বিস্মিত হলো। কথাটা সত্য কি মিথ্যা তার প্রমাণের জন্য তারা গাছের কাছে ছুটে গেল, গিয়ে দেখল, সত্যিই একদল লাল পিঁপড়ে সারি দিয়ে গাছে উঠছে।
তারা ফিরে এসে একথা জানাতেই ম্যাজিস্ট্রেট হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি এবার বুঝতে পারলেন, লোকনাথ ব্রহ্মচারী একজন সাধারণ সন্ন্যাসী নন। তিনি যোগসিদ্ধ পুরুষ ৷ তাই যোগবলে তিনি দূরের অদৃশ্য জিনিসকেও প্রত্যক্ষ করতে পারেন ।
এই কথা বুঝতে পেরে তিনি লোকনাথ বাবার কথা সত্য বলে মেনে নিয়ে সেইমত রায় দিলেন।
জয় বাবা লোকনাথ।