03/01/2022
#অপেক্ষা
#শ্রীজন্যা_সেনগুপ্ত
"ক্রিং! ক্রিং! ক্রিং! ক্রিং!" রঞ্জা বিরক্তির সাথে ঘুম থেকে উঠে বসলো আর রাগে গজগজ করতে লাগলো, "এই সাতসকালে কোন পাগল আমার রসগোল্লার মত মিস্টি, ক্ষীরের মত গাঢ় ঘুমের ১২ টা, ১৩ টা, বাজিয়ে আনন্দ পাচ্ছে তার কখনো ভালো হবে না", আবার ফোন টা বেজে উঠলো। রঞ্জা রাগে ফোনটা হাতে নিল, কলার এর নাম দেখে ওর মাথায় রক্ত চড়ে গেল, কল করছে কে না দেবু ওর চিরশত্রু, যদিও খারাপ না ছেলেটা, দেখতে হ্যান্ডসাম কিন্তু সবসময় ওর সাথে ঝগড়া, মারামারি করবে আর ওর পেছনে লাগবে, ওকে বিরক্ত করে। কিন্তু যখন ও কাঁদে বা কষ্ট পায় তখন ঠিক মজা করে ওকে হাসিয়ে ছাড়ে। এইসব ভাবতে ভাবতে ফোন টা ধরে বললো "কিরে উজবুক? সকালে আর" কথাটা শেষ হতে না দিয়ে ওপাশ থেকে দেবু চিৎকার করে উঠলো," কিরে লেডিস কুম্ভকর্ণ? তোর জন্য কি এবার অফিসকেও কুম্ভকর্ণ এর মামা হতে হবে? কটা বাজে দেখ! প্রতিদিন নিজেও দেরি করবি আর আমারও দেরি করবি তুই শুঁটকি..." । রঞ্জা ঘড়ির দিকে দেখে চমকে গেলো ৯টা বেজে গেছে। ও তাড়াতাড়ি স্নান করে বেরোল এমন সময় আবার দেবু ফোন করলো "শোন রঞ্জিনি আজ একটু ভালো করে সাজিস, আজ তোর সাথে আমার গার্লফ্রেন্ড মানে আমার প্রেমিকা, মানে আমার সুইটহার্ট এর সাথে দেখা করাবো, তো বেশি আটাময়দা মাখিস না তাহলে আমার ডার্লিং আবার ভয় পেয়ে যাবে তোর মতো পেত্নী কে দেখে। শোন তোর ওই বেবিপিংক রঙের শাড়িটা পরিস, দেখ তোকেও তো আবার আমার বন্ধু বলে পরিচয় দিতে হবে।" বলেই ফোন টা কেটে দিলো রঞ্জার কথাটা শুনলোই না। কিন্তু দেবুর গার্লফ্রেন্ড এর কথা শুনে ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, কেনো তা ও নিজেও জানেনা।
দেবু মানে দেবাশীষ আর রঞ্জিনী স্কুল থেকেই একে অপরের বন্ধু। সারাদিন ঝগড়া করে কিন্তু তাও একসাথেই ইকোনমিকস এ Honours কমপ্লিট করে MBA টাও একসাথেই করলো এখন একই অফিস এ চাকরি ও করছে। এই কিছু দিন হলো অফিস খুলেছে করোনা যা চোখ রঙালো। তবে রঞ্জা আর দেবাশীষ এর ঝগড়াটা ঠিক স্যানিটাইজার আর করোনার সম্পর্কের মত আর বন্ধুত্বটা ঠিক রসমালাই এর মত।
রঞ্জিনী মন খারাপ নিয়েই তৈরি হলো অফিসের জন্য আজ 14th February, চারিদিকে প্রেম প্রেম গন্ধ কিন্তু ও যেনো কিছু হারিয়ে ফেলেছে। খুব কান্না পেলো ওর। বাইরে গিয়ে দেখলো দেবাশীষ তার 4 wheeler টা নিয়ে দাড়িয়ে আছে গেটের কাছে, ও কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়ল। দেবাশীষ তো হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ওর চোখে চোখ পড়তেই দেবাশীষ বললো "বাহ! ভালই লাগছে তোকে, যাইহোক শুঁটকি তোকে আমার বন্ধু বলে পরিচয় দিতে পারবো আমার প্রেমিকার সামনে 😅"। রঞ্জা কিছুই বললো না, দেবাশীষ একাই বকবক করে যেতে লাগলো। গাড়ী পার্কিং এর সময় দেবু বললো "আজ কেউ বকবক করে আমার মাথা খায়নি, আজ আমার লাকি ডে, বুঝতেই পারছি ডার্লিং তুমি কতটা লাকি আমার জন্য, আজ রঞ্জা আমার সাথে ঝগড়া করেনি🤔🤔🤔"।
সারাদিন শেষে অফিস থেকে বেরোতে সাতটা বেজে গেল। দেবাশীষ ওকে নিয়ে একটা খুব সুন্দর ক্যাফে তে নিয়ে গেলো। রঞ্জা দেখলো ক্যাফেটা খুব সুন্দর করে সাজানো আর কেউ নেই দেবু নাকি স্পেস্যালি ওর গার্লফ্রেন্ড এর জন্য বুক করেছে। তারপর খাবার অর্ডার দিল দেবু। অনেকক্ষণ কেটে গেলো কিন্তু কেউ এলো না। তখন দেবাশীষ তার গার্লফ্রেন্ডের জন্য কেনা গিফটটা রঞ্জিনী কে দিয়ে বললো এটা তুই একটু রাখ আমি আসছি এক্ষুনি মেয়েটার তো এতক্ষণে চলে আসার কথা।
কিছুক্ষণ কেটে গেলো কিন্তু দেবাশীষ আসছে না দেখে রঞ্জার মাথা গরম হতে লাগলো ও দেবু কে কল করল তখন দেবু বললো যে ও যেনো বাড়ি চলে যায় দেবুর দেরি হবে আর দেবুর গার্লফ্রেন্ড আজ আসবে না কোনো কারণে কাল আসবে বলেই কল রেখে দিলো। রঞ্জা কোনো মতে বাড়ি ফিরলো দিয়ে কাঁদতে লাগলো তারপর রাগে গিফ্ট প্যাকটা ছিঁড়ে দিলো। তখন ও দেখতে পেলো ভেতরে একটা কার্ড এর একটা চকলেট বক্স। ও কার্ড টা খুলে পড়তে লাগলো
"প্রিয় রঞ্জা ,
সত্যি আমি খুব ভয় পাই রে তোকে। তাই তোকে আজ সামনে এই সত্যি টা বলতে পারলাম নারে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড সব কিছু । তুই আমার শীতের ঝরাপাতা, তুই আমার বসন্তের দোল, তুই আমার গ্রীষ্মের কালবৈশাখী, তুই আমার চোখের জল , তুই আমার ঠোঁটের হাসি, তুই আমার সব। তোকে রাগতে আমি সব থেকে মজা পাই। তোর চোখে জল দেখলে আমার সব থেকে বেশি কষ্ট হয়। তোর মুখের হাসি তে আমার মনে গোলাপ আর প্রজাপতির বাগান তৈরি হয়। তুই আমার সারাটা জীবন কে রঞ্জিত করেছিস রে রঞ্জিনী । আমি তোকে খুব ভালবাসিরে। কিন্তু তোকে প্রচুর ভয় পাই।
বল না তুই আমাকে তোর রাগ হতে দিবি, আমায় তোর দুষ্টু মিষ্টি অভিমান বানাবি আমায় তোর ঠোঁট ফোলানো কান্না বানাবি। আমাকে তোর করে নিবি প্লিজ।"
ইতি তোর,
দেবু
রঞ্জীনি আনন্দে খেন্দে ফেললো কারণ এই ঝগড়া আর মারপিটের মধ্যেই ও নিজেও দেবুকে আপন করে নিয়েছে আর তার জন্যই ওর এত কষ্ট হচ্ছিল। ও ঘরের মধ্যে চিৎকার করে বলতে লাগলো "কেনো এতো দেরি করলি এই সত্যি টা বলতে" তখন পিছন থেকে কেউ ওকে জড়িয়ে ধরলো। আর ওকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বললো "নে দেখ এই আমার দুষ্টু মিষ্টি ডার্লিং, আমার গার্লফ্রেন্ড।" আসলে ও বুঝতেই পারেনি ওর ঘরে আগে থেকে অপেক্ষা করছিল ওর জন্য আর এই স্পর্শ টা যে ওর খুব চেনা।