19/12/2023
🌼⚜ এই জগতে মানুষেরা সকাম কর্মের সিদ্ধি কামনা করে এবং তাই তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে। সকাম কর্মের ফল অবশ্যই অতি শীঘ্রই লাভ হয়।
🌼 তাৎপর্য
🌼🌿 এই জড় জগতের দেব-দেবীদের সম্বন্ধে বিষয়াসক্ত লোকদের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে। অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন বেশ কিছু লোক, যারা নিজেদের মহাপণ্ডিত বলে লোক ঠকায়, তারা এই সমস্ত দেব-দেবীকে ভগবানের বিভিন্ন রূপ বলে মনে করে এবং তাদের ভ্রান্ত প্রচারের ফলে জনসাধারণও সেই কথা সত্য বলে মনে করে। প্রকৃতপক্ষে, এই সমস্ত দেব-দেবী ভগবানের বিভিন্ন রূপ নন, তাঁরা হচ্ছেন ভগবানের বিভিন্ন অংশ-বিশেষ। ভগবান হচ্ছেন এক আর অবিচ্ছেদ্য অংশেরা হচ্ছে বহু। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ-“ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর।" বিভিন্ন দেব-দেবী হচ্ছেন শক্তিপ্রাপ্ত যাতে তাঁরা এই জড় জগৎকে পরিচালনা করতে পারেন। এই সমস্ত দেব-দেবীও হচ্ছেন জড় জগতের বিভিন্ন শক্তিসম্পন্ন জীব (নিত্যানাম্), তাই তাঁরা কোন অবস্থাতেই ভগবানের সমকক্ষ হতে পারেন না। যে মনে করে যে শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীবিষ্ণু, শ্রীনারায়ণ ও বিভিন্ন দেব-দেবী একই পর্যায়ভুক্ত, তার কোন রকম শাস্ত্রজ্ঞান নেই, তাকে বলা হয় নাস্তিক অথবা পাষণ্ডী। এমন কি দেবাদিদেব মহাদেব এবং আদি পিতামহ ব্রহ্মাকেও ভগবানের সঙ্গে তুলনা করা চলে না। প্রকৃতপক্ষে শিব, ব্রহ্মা আদি দেবতারা নিরন্তর ভগবানের সেবা করেন (শিববিরিঞ্চিনুতম্)। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানব-সমাজে অনেক নেতা আছে, যাদেরকে মূর্খ লোকেরা 'ভগবানে নরত্ব আরোপ', এই ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে অবতার জ্ঞানে পূজা করে। ইহ দেবতাঃ বলতে এই জড় জগতের কোন শক্তিশালী মানুষকে অথবা দেবতাকে বোঝায়। কিন্তু ভগবান শ্রীনারায়ণ, শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর, তিনি-এই জড় জগতের তত্ত্ব নন। তিনি জড় জগতের অতীত চিন্ময় জগতে অবস্থান করেন। এমন কি মায়াবাদ দর্শনের প্রণেতা শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য বলে গেছেন, নারায়ণ অথবা শ্রীকৃষ্ণ এই জড় জগতের অতীত।
🌼🌿 কিন্তু মূর্খ লোকেরা (হৃতজ্ঞান) তা সত্ত্বেও তাৎকালিক ফল লাভ করার আশায় বিভিন্ন জড় দেব-দেবীর পূজা করে চলে। এই সমস্ত মূর্খ লোকগুলি বুঝতে পারে না, বিভিন্ন দেব-দেবীকে পূজা করার ফলে যে ফল লাভ হয়, তা অনিত্য। যিনি প্রকৃত বুদ্ধিমান, তিনি ভগবানেরই সেবা করেন। তুচ্ছ ও অনিত্য লাভের জন্য বিভিন্ন দেব-দেবীকে পূজা করা নিষ্প্রয়োজন। জড়া প্রকৃতির বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত দেব-দেবী এবং তাঁদের উপাসকেরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। দেব-দেবীদের দেওয়া বরও হচ্ছে জড় এবং অনিত্য। জড় জগৎ, জড় জগতের বাসিন্দা, এমন কি বিভিন্ন দেব-দেবী এবং তাঁদের উপাসকেরা সকলেই হচ্ছে মহাজাগতিক সমুদ্রের বুদ্বুদ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই জগতের মানব-সমাজ ভূসম্পত্তি, পরিবার-পরিজন, ভোগের সামগ্রী আদি অনিত্য জড় ঐশ্বর্য লাভের আশায় উন্মাদ। এই প্রকার অনিত্য বস্তু লাভের জন্য মানুষেরা মানব-সমাজে বিভিন্ন দেব-দেবীর অথবা শক্তিশালী কোন ব্যক্তির পূজা করে। কোন রাজনৈতিক নেতাকে পূজা করে যদি ক্ষমতা লাভ করা যায়, সেটিকে তারা পরম প্রাপ্তি বলে মনে করে।এই সমস্ত মূর্খ লোকেরা জড় জগতের দুঃখকষ্ট থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত হবার জন্য ভগবানের শরণাগত হতে আগ্রহী নয়। পক্ষান্তরে, সকলেই তাদের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধন করার জন্য ব্যস্ত এবং তুচ্ছ একটু ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করার জন্য এরা দেব-দেবী নামক বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত জীবদের আরাধনার প্রতি আকর্ষিত হয়। এই শ্লোক থেকে বোঝা যায়,
💞🥀 খুব কম মানুষই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণের শরণাগত হয়। অধিকাংশ মানুষই সর্বক্ষণ চিন্তা করছে কিভাবে আরও একটু বেশি ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করা যায়। আর এই সমস্ত ভোগবাসনা চরিতার্থ করবার জন্য তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে 'এটি দাও' 'ওটি দাও' বলে কাঙ্গালপনা করে তাদের সময় নষ্ট করছে।🌿
জয় শ্রীমদ্ভাগবত গীতা 🙏🧡🚩🚩