05/10/2024
জে. ওয়াকার উজ জামান ছিলেন বিধায়ই আমরা সেনাবাহিনীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাত্র জনতার পাশে পেয়েছি। সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া ৫ আগষ্টের বিজয় সম্ভব ছিলোনা,এটাই বাস্তবতা। আজ সেনাবাহিনী ও জেনারেল ওয়াকার উজ জামান ও ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব কে নিয়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত বিষদগার করতে ব্যস্ত, যা অত্যন্ত রাজনৈতিক জ্ঞান বহির্ভূত কাজ বলে আমি মনে করি।সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী না থাকলে আজ দেশে গৃহ যুদ্ধ লেগে যেতো। আইনশৃংখলার চরম অবনতি হতো। পুলিশের হাতকে শক্তিশালী করতে সেনাবাহিনীর ভুমিকা অপরিসীম।৫ আগষ্টের পরে সকল থানা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, যা আবার ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে সেনাবাহিনী। মেজিষ্ট্রিসি পাওয়ার না থাকায় সঠিক ভাবে আইন প্রয়োগ করা যায়নি কয়েকদিন।পরবর্তিতে মেজিষ্ট্রেসি পাওয়ার পাওয়ায় সব যায়গায় আইনশৃংখলার উন্নতি হচ্ছে।বিমান বাহিনী ও নৌ বাহিনী যৌথ ভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীকে।এই মুহুর্তে দেশ গঠনে তারা ঐক্যবদ্ধ। সেনা বাহিনীকে বিতর্কিত তাঁরাই করবে যারা আওয়ামীলীগের সহযোগীতা করতে বদ্ধপরিকর, কিংবা ভিনদেশি কারো এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।
আপনি, আমি, আমরা গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কখনোই সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারিনি।কারণ, বিরোধী কাউকেই সরকার দাঁড়াতে দেয়নি। তখন কোন বাহিনীও আমাদেরকে সাহায্য করার উদ্দ্যোগ নেয়নি। এই প্রথম সেনাবাহিনী দেশবাসীর পাশে দাড়িয়ে বিজয় অর্জনে সাহায্য করেছে, যে কারণে জে. ওয়াকার উজ জামান সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানানো দরকার। কোন কোন ব্যাক্তি ওয়াকার উজ জামান কে হাসিনার আত্বীয় বলে জুলাই বিপ্লব থেকে দূরে রাখতে চান, অথচ তিনিই আজ আমাদের সকলের কাছে মহানায়ক হওয়ার কথা।কারণ, গত ১৬ বছরে অন্য কোন সেনা প্রধান আমাদেরকে উদ্ধারে এভাবে পাশে দাড়ায়নি।আত্বীয়তা কখনোই সত্যিকারের আদর্শ দাবিয়ে রাখতে পারেনা।এই দেশে বহু রাজনৈতিক নেতার পরিবার অন্য রাজনৈতিক দলের আত্বীয়,তাহলে তারাও কি সবাই বেঈমান হয়ে যাবে?
সেনা প্রধানের আন্তরিকতার জন্যই আয়নাঘরে বন্দী জে. আমান আল আযমী, মীর আরমানকে মুক্ত পেয়েছি। জুলাই বিপ্লবের কারণেই আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত।সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা মুক্ত ভাবে রাজনীতি করছে। আবার হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছে। শেখ হাসিনার আক্রোশে বন্ধ হওয়া জামায়াত শিবিরও রাজনীতি করতে পারছে, আবার সকল আদর্শের রাজনৈতিক দলও নিবন্ধন পাচ্ছে।এগুলো সবই আজ আমাদের আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবের সফলতা হিসেবে মনে করি। সেনা প্রধান কেন ক্ষমতা দেখাচ্ছে বলে কেউ মন্তব্য করছেন! আসলে আপনি জানেন কি যে এই সেনাবাহিনী ছাড়া তত্বাবধায়ক সরকার ১ দিনও টিকতে পারবেনা। এটা কোন নির্বাচিত সরকার নয়, এটা বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত তত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকারকে ফাংশনিং করতে হলে যৌথ বাহিনীর সহযোগীতা লাগবেই। বরং আমিতো দেখছি, জেনারেল ওয়াকার উজ জামান চাইলে আরো ক্ষমতা দেখাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা দেখাচ্ছেন না। যখন যেই কাজ প্রয়োজন সেটাই তিনি করে যাচ্ছেন। একজন সৎ সেনা প্রধানের বিরুদ্ধাচারন করে কি করতে চাচ্ছেন? দেশে বিদেশী শক্তি বৃদ্ধি নাকি কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন?
ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব আজ তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ায় আমরা বিশ্বের কাছে সম্মানীত হয়েছি। সবাই আমাদেরকে গ্রহন করে নিচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের সঠিক ইতিহাস বিশ্বের কাছে পৌছে দিচ্ছেন তিনি। তাকে নিয়েও বিষদগার করা মানে এই সরকারকে অস্বীকার করা। ইউনুস সাহেব না থাকলে আমরা ভাবমূর্তি সংকটে পরে যেতাম।ইউনুস সাহেবের বিকল্প আমাদের কি আছে? ড. ইউনুস সাহেব ছাত্রদের প্রশংসা করছেন বলে আপনার অভিযোগ? তাহলে আবু সাঈদ কি ছাত্র নয়? বিশ্বের কাছে ছাত্রদের প্রশংসা করার মাধ্যমেই জুলাই বিপ্লবের গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে। তাতেও দোষের কি দেখলেন? সেনা বাহিনী সরকারকে সাহায্য করছে, তাই তাদের প্রশংসা করছে ড. ইউনুস তাতেও সমস্যা কই পেলেন?
স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে রক্ষা করা কঠিন। ৫ই আগষ্টের স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমাদেরকে যেখানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা সেখানে ঐক্য না হয়ে বিভাজন তৈরিতে কেউ কেউ কলকাঠি নাড়ছেন! যা মোটেও কাম্য নয়।এই সরকার শক্তিশালী হলেই আমরা গণতান্ত্রিক পথে আগাতে সহজ হবে। কিন্তু এই সরকারকে শত্রু বানিয়ে বা সাহায্য না করে কখনোই ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের বাংলাদেশে এই প্রথম বিটিভিও স্বাধীনভাবে কাজ করছে, যা গত ৫৩ বছরে কেউ দেখেনি। এটাই স্বাধীনতা যে, সবাই সবার মত প্রকাশে এগিয়ে যাবে। তার পরেও কি কারণে সেনাবাহিনী, সেনা প্রধান ও ড. ইউনুস কে নিয়ে পরিকল্পিত মিথ্যাচার? এই মিথ্যাচারে কি কল্যান পাবে বাংলাদেশ?
সময় থাকতে সাবাইকে সচেতন হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ন্যায় অন্যায় বুঝে কথা বলতে হবে। বাস্তবতা মেনে নিয়ে পথ চলতে হবে। আমাদের এই মুহুর্তের সব চাইতে বড় অর্জন হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ। বাকী দোষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দায়িত্বশীল আচরন করে পথ চলতে হবে। ১৬ বছরের সব কয়লা এক দিনে মুছে যাবেনা, তাই সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে পথ চলতে হবে।
✍️ড. ফয়জুল হক