Emrana Begum Chowdhury

Emrana Begum Chowdhury **মাটির নিচে ফিরে যাওয়ার পূর্বে আল্লাহর দিকে ফিরে এসো😍
**ঈমান যেনো বেঈমান না হয়😍
(3)

25/10/2024
হজরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর ১২ পুত্রের মধ্যে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে বেশি স্নেহ করতেন। মূলত সৌন্দর্যের কারণে শিশুকালে তিনি সবারই প...
06/10/2024

হজরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর ১২ পুত্রের মধ্যে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে বেশি স্নেহ করতেন। মূলত সৌন্দর্যের কারণে শিশুকালে তিনি সবারই প্রিয়পাত্র ছিলেন, যা তাঁর সৎ ভাইয়েরা সহ্য করতে পারতেন না। এই ভাইয়েরা হজরত ইউসুফ (আ.)-কে শিশু অবস্থায় তাদের পিতার কাছ থেকে দূরে সরানোর ঘৃণ্য চক্রান্ত করেন। তারা বাবা ইয়াকুব (আ.)-এর কাছে ইউসুফ (আ.)-কে তাদের সঙ্গে বাইরে খেলতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চান। ইয়াকুব (আ.) কখনো পুত্র ইউসুফ (আ.)-কে চোখের আড়াল করতেন না। তাই তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলতে পারে উল্লেখ করে নিষেধ করেন, তবে উপর্যুপরি অনুরোধ এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কথা বলে সৎ ভাইয়েরা বাবাকে রাজি করান এবং ইউসুফ (আ.)-কে খেলতে নিয়ে যান। এরপর তাকে প্রথমে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেও বড় ভাইয়ের পরামর্শে হত্যার বদলে কূপে ফেলে দেওয়া হয়। আর তার কাপড়ে রক্ত মাখিয়ে তা বাড়িতে বাবাকে দেখান এবং ইউসুফ (আ.)-কে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন। বাবা হজরত ইয়াকুব (আ.) এ ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়েন এবং পুত্রশোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখ সাদা এবং অন্ধ হয়ে যান। পবিত্র কোরআনের সূরা ইউসুফের ৮ থেকে ১৮ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।

ঘটনাচক্রে তিনি একটি কাফেলার গোলাম সঙ্গী হয়ে মিশর যাত্রা শুরু করেন।

মিসরের দাস-দাসী বিক্রির হাটে সুদর্শন ইউসুফ (আ.)-এর আগমনে সাড়া ফেলে দেয় এবং তার মূল্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। সবশেষে ইউসুফ (আ.)-এর ওজনের সমপরিমাণ সোনা, মৃগনাভী এবং রেশমি বস্ত্রের বিনিময়ে তাকে কিনে নেন ‘অজিজে মিসর’ অর্থাৎ মিসরের অর্থ ও খাদ্যমন্ত্রীতুল্য রাজসভার একজন সদস্য। কোনো কোনো বর্ণনায় তাকে মিসরের তৎকালীন আমালেকা জাতীয় সম্রাট বায়য়াদ ইবনে ওয়াসাদের অর্থমন্ত্রী ‘কিতফি’ কিংবা ‘ইতফি’ বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি তাকে তার স্ত্রী জুলায়খার হাতে সমর্পণ করেন। সে তার স্ত্রীকে ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দেন এবং এই ইউসুফ (আ.) তাদের বিশেষ উপকারে আসবেন বলে প্রত্যাশা করেন। এভাবেই ইউসুফ (আ.) এবং জুলেখার পরিচয় হয়।

পবিত্র কোরআনে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে নিয়ে সর্বাধিক আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার নেপথ্যে থাকা প্রধান দুই চরিত্রের নাম সরাসরি উল্লিখিত হয়নি। সূরা ইউসুফে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে ক্রয়কারীকে ‘আজিজ’ বা মন্ত্রী হিসেবে এবং তার স্ত্রীকে ‘আজিজের স্ত্রী’ বা ‘তার স্ত্রী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তবে তাফসির এবং ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, এই আজিজের স্ত্রীই হলেন ইতিহাস-খ্যাত ‘জুলেখা’। আবার অনেকের মতে, তাঁর প্রকৃত নাম রঙ্গিল আর উপাধি হলো জুলেখা।

জুলেখার ঘরেই কৈশোর পেরিয়ে যুবক হয়ে ওঠেন ইউসুফ (আ.)। জুলেখা ক্রমেই যুবক ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। মূর্তি উপাসক জুলেখা তার ঘরে থাকা মূর্তির সামনে অন্যায় আবদার করতে ভয় পেতেন বলে কাপড় দিয়ে মূর্তির চোখ ঢেকে দিয়ে ইউসুফ (আ.)-কে নানাভাবে প্রলুব্ধ করতে সচেষ্ট ছিলেন। অন্যদিকে আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী ইউসুফ (আ.) আল্লাহ প্রদত্ত ইমানের শক্তিতে সব ধোঁকা ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে ছিলেন এবং সব সময় জুলেখাকে এ পথ ছাড়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু ইউসুফ (আ.)-এর প্রেমে পাগল জুলেখা ছিলেন একরোখা।

সূরা ইউসুফের ২৩ নং আয়াত অনুসারে একদা জুলেখা ইউসুফ (আ.)-কে ঘরে পেয়ে দরজা বন্ধ করে দেন এবং তার প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু ইউসুফ (আ.) মহান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, ধৈর্য, ইমান এবং ভীতির কারণে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাফসির ও আরবি সাহিত্যমতে, এ সময় হজরত ইউসুফ (আ.) আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচতে ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি দিলে অলৌকিকভাবে আরবি লেখা দেখতে পান। এ ছাড়াও ঘরে মূর্তির দিকে তাকিয়ে তিনি ‘আজিজ’-এর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান এবং ঘরের দরজায় আজিজের উপস্থিতি অনুভব করেন। এরপর হজরত ইউসুফ (আ.) নিজেকে পবিত্র রাখার জন্য বন্ধ দরজার দিকে দৌড়ে যান।

এ সময় জুলেখা পেছন থেকে ইউসুফ (আ.)-কে জাপটে ধরলে তার পরিধেয় জামা পেছন থেকে ছিঁড়ে যায়। অলৌকিকভাবে এ সময় ঘরের বন্ধ দরজা (কারও মতে বাইরে থেকে বন্ধ দরজা) খুলে যায় এবং ইউসুফ (আ.) ও জুলেখা দরজার বাইরে জুলেখার স্বামী আজিজকে দেখতে পান। ঠিক তখনই চতুর জুলেখা তার ভোল পাল্টে ফেলেন এবং সূরা ইউসুফের ২৫ নং আয়াত অনুসারে এ সময় ইউসুফ (আ.)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো বা অন্য কোনো কঠিন শাস্তির দাবি করেন। ২৬ নং আয়াতে বর্ণিত, এ সময় ইউসুফ (আ.) প্রকৃত সত্য তুলে ধরেন এবং জুলেখার পরিবারের একজন সঠিক সাক্ষ্য প্রদান করেন। পবিত্র কোরআনে এই সাক্ষ্য প্রদানকারীর বিস্তারিত পরিচয় নেই। তবে তাফসির এবং প্রচলিত বর্ণনা অনুসারে এই সাক্ষী ছিল একটি নিতান্ত কন্যাশিশু, যার মুখে তখনো স্পষ্ট করে কথা ফোটেনি।

যখন জুলায়খার স্বামী বুজতে পারল। তাকে তিরস্কার করল এবং বাইরে বিষয়টা না ছরানো জন্য বলে। কিন্তু বিষয়টা আর গোপন থাকে নি। যখন শহরের মহিলারা তাকে নিয়ে কটূক্তি করতে লাগল। তখন সে সবার জন্য একটি ভোজসভার আয়োজন করল

মহান আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি সদয় হন এবং তাঁকে ঘটনাক্রমে কিছুদিন কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করেন।

সূরা ইউসুফের ৩০ নং আয়াত অনুসারে এ ঘটনার পর শহরজুড়ে জুলেখার কুকীর্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর আরব সাহিত্য মতে, রাজপ্রাসাদে যারা আজিজ বিরোধী ছিল, তারা এ ঘটনায় বহুমাত্রিক রং ছড়িয়ে প্রচার করতে থাকে। সূরা ইউসুফের পরবর্তী আয়াতগুলোতে এ ঘটনার পরিসমাপ্তি টানা হয়। এতে বলা হয়, আজিজের স্ত্রী (জুলেখা) যখন এই ষড়যন্ত্র বা অপবাদের ব্যাপক প্রচার সম্পর্কে অবগত হন, তখন শহরের গণ্যমান্য মহিলাদের তিনি এক ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানান।

এই ভোজে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে প্রত্যেকের জন্য ফল এবং তা কাটার জন্য একটি করে ধারালো ছুরি দেওয়া হয়। শহরের নারীরা যখন ছুরি দিয়ে ফল কাটায় ব্যস্ত, ঠিক তখন জুলেখা তাঁর পূর্ব পরিকল্পনা মতো পাশের কক্ষে থাকা ইউসুফ (আ.)-কে মহিলাদের সামনে আসতে হুকুম করেন। অত্যন্ত আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী হজরত ইউসুফ (আ.) যখন সামনে উপস্থিত হন, তখন তাঁর সৌন্দর্যের মোহে নারীরা তাঁর দিকে তাকিয়ে ফলের বদলে ধারালো ছুরি দিয়ে নিজ নিজ আঙ্গুল কেটে ফেলেন। এই সুযোগে জুলেখা সবার উদ্দেশে বলেন যে, এই সেই সুপুরুষ ইউসুফ (আ.), যার জন্য মহিলারা তার নিন্দা করছেন। সূরা ইউসুফের ৩১ নং আয়াত মতে, মহিলাদের মন্তব্য ছিল- ‘এ তো মানুষ নন, এ তো এক মহান ফেরেশতা’। এ সময় জুলেখা আবারও তাঁর কূটচাল প্রয়োগ করেন এবং একদিকে ইউসুফ (আ.)-কে পবিত্র বলে সাক্ষ্য দেন আর অন্যদিকে ভবিষ্যতে ইউসুফ (আ.) তাঁর কথার অবাধ্য হলে অপমানিত হওয়ার এবং কারাগারে নিক্ষেপ করার হুমকি দেন। কিছু মহিলাও এতে সায় দেন ও ইন্ধন জোগান। সূরা ইউসুফের ৩৩ নং আয়াত অনুসারে এ সময় হজরত ইউসুফ (আ.) মহান আল্লাহর কাছে কুচক্রী মহিলাদের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং অপবিত্র ভোগ-বিলাসের পরিবর্তে কারাবাসই উত্তম বলে ফরিয়াদ জানান। তিনি উপলব্ধি করেন যে, কারাগারই হতে পারে তাঁর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, অন্যথায় কুচক্রী জুলেখা ও অন্য নারীর প্রলোভন ও ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচা দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠবে। মহান আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি সদয় হন এবং তাঁকে ঘটনাক্রমে কিছুদিন কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করেন।

সূরা ইউসুফের পরবর্তী অংশে কারাগার থেকে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর মুক্তি, রাজার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে রাজ দরবারে আকর্ষণীয় পদ লাভ, মিসরের দুর্ভিক্ষ, সৎ ভাইদের উচিত শিক্ষাদান, আপন ছোটভাই বেনিয়ামিনকে কাছে রাখা, পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া এবং সবশেষে পিতা-মাতাকে রাজদরবারে বসিয়ে সম্মান প্রদানের বর্ণনা রয়েছে। তবে আজিজের স্ত্রী বা জুলেখা সম্পর্কে পরবর্তীতে আর কোনো বর্ণনা পবিত্র কোরআনে দেওয়া হয়নি, হাদিসেও এ সংক্রান্ত বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

হাদিস বা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ না থাকলেও বিভিন্ন সাহিত্যে ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে জুলেখার পুনর্মিলনের বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি সাহিত্যধারা মতে, সময়ের বিবর্তনে মিসরের আজিজ (জুলেখার স্বামী) মৃত্যুবরণ করার পর তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে তাদের কোলজুড়ে দুই পুত্র আফরাইম ইবনে ইউসুফ এবং মায়শা ইবনে ইউসুফের জন্মের বর্ণনাও পাওয়া যায়।

হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনু ইস্রাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল। তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁরপর থেকে শেষনবী ম...
06/10/2024

হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনু ইস্রাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল। তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁরপর থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন নবী আগমন করেননি। এই সময়টাকে فترة الرسل বা ‘রাসূল আগমনের বিরতিকাল’ বলা হয়। ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত কাল পূর্বে হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মাদী শরী‘আত অনুসরণে ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম করবেন। তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে বিশ্ব সংস্কারে ব্রতী হবেন। তাই তাঁর সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত ধারণা দেওয়া অত্যন্ত যরূরী বিবেচনা করে আল্লাহ পাক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মূসা (আঃ)-এর অনুসারী হওয়ার দাবীদার ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই স্বীকার করেনি। অত্যন্ত লজ্জাষ্করভাবে তারা তাঁকে জনৈক ইউসুফ মিস্ত্রীর জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছে (নাঊযুবিল্লাহ)। অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও অনুসারী হবার দাবীদার খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ (তওবাহ ৯/৩০) বানিয়েছে’। বরং ত্রিত্ববাদী খৃষ্টানরা তাঁকে সরাসরি ‘আল্লাহ’ সাব্যস্ত করেছে এবং বলেছে যে, তিনি হ’লেন তিন আল্লাহর একজন (ثَالِثُ ثَلَثَةٍ =মায়েদাহ ৭৩)। অর্থাৎ ঈসা, মারিয়াম ও আল্লাহ প্রত্যেকেই আল্লাহ এবং তারা এটাকে ‘বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য’ বলে ক্ষান্ত হয়। অথচ এরূপ ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করেছেন (মায়েদাহ ৫/৭২-৭৩)। কুরআন তাঁর সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছে। আমরা এখন সেদিকে মনোনিবেশ করব।

উল্লেখ্য যে, হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট ১৫টি সূরায় ৯৮টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

হজরত জাকারিয়া [আ.] গাছের ভেতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কথাটি কতটুকু সহিহ?হযরত যাকারিয়া আ. সম্পর্কে লোকমুখে শুনা যায় যে, ...
06/10/2024

হজরত জাকারিয়া [আ.] গাছের ভেতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কথাটি কতটুকু সহিহ?

হযরত যাকারিয়া আ. সম্পর্কে লোকমুখে শুনা যায় যে, তাকে কাফেররা হত্যার জন্য ঘিরে নিলে তিনি নিরুপায় হয়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলে গাছ দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। তিনি ঐ গাছের মধ্যে আশ্রয় নেন। গাছ পূর্ববৎ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর জামার আচল বের হয়ে থাকায় কাফেররা চিনে ফেলে এবং অস্ত্র দিয়ে গাছ চিরে, এতে নবীও দুই ভাগ হয়ে যান। এরূপ একটি কাহিনী শুনা যায়। এটা কতটুকু সত্য? বর্ণিত ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সহীহ হাদীসে তা পাওয়া যায় না। ইবনে কাছীর রাহ. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া(২/২২৮-২২৯) গ্রন্থে এই ঘটনাটি খুবই আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। সুতরাং তা বর্ণনা করা যাবে না। হযরত যাকারিয়া আ. ও অন্যান্য নবীদের সম্পর্কে করআন মজীদ ও সহীহ হাদীসে যতটুকু বর্ণনা আছে ততটুকু জানাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তাই হযরত যাকারিয়া আ.-এর সম্পর্কে কুরআন মজীদের কয়েকটি আয়াতের তরজমা ও একটি সহীহ হাদীসের অনুবাদ পেশ করা হল। (তরজমা) আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ, তার বান্দা যাকারিয়া আ.-এর প্রতি, যখন তিনি নিজ পালনকর্তাকে গোপনে আহবান করেছিলেন। তিনি প্রার্থনা করলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার অস্থিসমূহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়ে গেছে। (মাথার সমস্ত চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে)। হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনো বিফল মনোরথ হইনি। আর আমি আমার পরে স্বজনবর্গ হতে আশঙ্কা করছি ( যে, তারা শরীয়তের এবং ধর্মের সেবা করবে না।) এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব আপনি বিশেষভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একজন ওয়ারিশ (পুত্র) দান করুন। সে আমার এবং ইয়াকুব-এর বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার পালনকর্তা! তাকে আপনি সন্তোষজনক করুন। (আল্লাহ তাআলা বললেন,) যে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে আমি এ নামে কারো নামকরণ করিনি। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা! কেমন করে আমার পুত্র হবে, অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা। আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত। তিনি বললেন, এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেন, এটা আমার জন্য সহজ। ... (সূরা মারইয়াম : ১-১১) সহীহ মুসলিমে (২/২৬৮) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং পেশায় তিনি ছিলেন একজন ছুতার। [শরহুন নববী মুসলিম ১৫/১৩৫] কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরাগুলোতেও তার সম্বন্ধে আলোচনা আছে। [সূরা আলইমরান : ৩৭-৪১; সূরা আম্বিয়া : ৯০-৯৮; সূরা আনআম : ৮৫; সূরা হুদ : ৭২-৭৩।]

হযরত হারুন (আঃ) এর জীবনী।নাম হারুন। তিনি আল্লাহর একজন নবী। মূসা কালিমুল্লাহ (আঃ) এর বড় ভাই। তিন বছরের বড় তিনি মুসা (আ:) ...
06/10/2024

হযরত হারুন (আঃ) এর জীবনী।

নাম হারুন। তিনি আল্লাহর একজন নবী। মূসা কালিমুল্লাহ (আঃ) এর বড় ভাই। তিন বছরের বড় তিনি মুসা (আ:) চেয়ে। আল্লাহ যখন মুসা (আঃ) কে রাসুল নিয়োগ করেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন তিনি যেনো তাঁর ভাই হারুনকেও নবী নিয়োগ করে তাঁর হাত শক্ত করেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং হারুন (আ:)কে মুসার সহযোগী নবী নিয়োগ করেন। হযরত হারুন ছিলেন বনী ইসরাইলদের শ নবী, তিনি ছিলেন সুবক্তা।

দাওয়াতী ও সাংগঠনিক জীবন

মহান আল্লাহ বলেন –
“আমি মূসা ও হারুনের প্রতি অনুগ্রহ করেছি। তাঁদের উভয়কে আমি উদ্ধার করেছি মহাকষ্ট থেকে। আমি তাঁদের সাহায্য করেছি। ফলে তারা বিজয়ী হয়েছে। তাঁদের আমি সঠিক পথ দেখিয়েছি। তাঁদের উভয়কে আমি সুস্পষ্ট কিতাব দান করেছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাঁদের উভয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছি। মুসা ও হারুনের প্রতি বর্ষিত হোক সালাম। এভাবেই আমি উপকারী লোকদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। আসলে ওরা দু’জনেই ছিলো আমার প্রতি বিশ্বস্ত দাস।” (সূরা আস সাফফাত, আয়াত ১১৪-১২২)

আল্লাহর এ বানী থেকে হযরত হারুনের সঠিক মর্যাদা বুঝা যায়। তিনি ভাই মুসার সাথে ফেরাউনের দরবারে উপস্থিত হন। ফেরাউনকে দাওয়াত প্রদান করেন। ফেরাউন তাঁদের দুজনকেই মিথ্যাবাদী বলে অস্বীকার করে। সে বলে, এরা দুই ভাই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার জন্যে এসেছে। অতপর ফেরাউন হযরত মুসা ও হারুন দুজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। অতপর মুসা ও হারুনের সাথে ফেরাউনের যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়, তাঁর পরিনতিতে আল্লাহ ফেরাউনকে ধংস ও নির্মূল করে দেন। ফেরাউন ডুবে মরার পর সিনাই উপত্যকায় থাকাকালে হযরত মুসা হযরত হারুনকে নিজের খলিফা বা ভারপ্রাপ্ত নেতা মনোনীত করে চল্লিশ দিনের জন্যে তূর পাহাড়ে নির্জনবাসে যান। হযরত হারুন ভারপ্রাপ্ত নেতা থাকাকালেই সামেরি গ-বাছুর বানিয়ে সেটার পূজা করতে বলে সকলকে। হারুন তাঁকে বারন করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জাতি দ্বিধাবিভক্ত হবার উপক্রম হয়ে পড়ায় তিনি সেই পদক্ষেপ নেননি। হযরত মুসা চল্লিশ দিন পর তাওরাত নিয়ে ফেরত এসে হযরত হারুনের উপর ক্রোধান্বিত হন। এ ঘটনাটি কুরআনে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে –

“(গ-বাছুর পুজাকরতে নিষেধ করে) হারুন তাঁদের বলেছিলো, হে আমার জাতি তোমরা তো পরীক্ষায় পড়েছো। তোমাদের প্রভু বড় করুনাময়। কাজেই তোমরা আমার অনুসরন করো এবং আমার নির্দেশ মানো। কিন্তু তারা তাঁকে বলে দিলো মুসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এর পূজা করবো। মুসা ফিরে এসে বললো- হে হারুন তুমি যখন দেখলে এরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন এদেরকে আমার অনুসরনের পথে আনতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তুমি কি আমার হুকুম অমান্য করলে? হারুন বললো- হে আমার সহোদর ভাই, আমার দারি ও চুল ধরে টেনোনা। আমার ভয় হচ্ছিলো তুমি এসে বলবে- হারুন তুমি কেন বনী ইসরাইলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলে? কেন আমার কথা রক্ষা করোনি।” (সূরা তোয়াহা, আয়াত ৯০-৯৪)

অন্যস্থানে বলা হয়েছে-
“মুসা নিজের ভাইয়ের চুল ধরে টানলো। হারু বললো – হে আমার সহোদর, এই লোকগুলো আমায় কোণঠাসা করে ফেলেছিলো এবং আমাকে হত্যা করার জন্যে উদ্যত হয়েছিলো। কাজেই তুমি শত্রুদের কাছে আমায় হেয় করোনা এবং আমাকে যালিম গণ্য করোনা। তখন মুসা দোয়া করলো – হে প্রভু, আমাকে আর আমার ভাইকে ক্ষমা করে দাও। আর আমাদেরকে রবেশ করাও তোমার অনুগ্রহের মধ্যে। তুমিই তো সব দয়াবানের বড় দয়াবান।” (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৫০-১৫১)

এ থেকে বুঝা যায়, হযরত হারুন জীবনের ঝুকি নিয়েও নিজ কওমকে সত্য পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে জাতির মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি হোক এটা তিনি চাননি। আসলে তিনি ছিলেন বড়ই প্রজ্ঞাবান ও মহান রাসুল।

হযরত মুসা (আঃ) এর মৃত্যুর এগারো মাস পূর্বে তিনি ইন্তেকাল করেন। ভাই মুসার মতই তিনি ছিলেন একজন বলিষ্ঠ সংগ্রামী পুরুষ। তারা দুই ভাই নেতৃত্ব প্রদান করেন এক বিশাল জাতির।

হজরত মুসা (আ.)-এর কাহিনি আমরা কেবল মোজেজা বা মুখরোচক আশ্চর্য ঘটনা হিসাবেই শুনে থাকি। লাঠির আঘাতে লোহিত সাগরের পানি দুই দ...
06/10/2024

হজরত মুসা (আ.)-এর কাহিনি আমরা কেবল মোজেজা বা মুখরোচক আশ্চর্য ঘটনা হিসাবেই শুনে থাকি। লাঠির আঘাতে লোহিত সাগরের পানি দুই দিকে সরে গিয়ে তলদেশ বের হয়ে আসা, তারপর বনি ইসরাইলের সাগরের ওপারে চলে যাওয়ার পর ফেরাউন বাহিনীর ডুবে মরা মুসা (আ.)-এর কাহিনি বলতে কেবল এ সবেই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখা হয়, অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয় না।

অথচ এ কাহিনির প্রকৃত মর্ম হলো প্রত্যেক মানুষের জন্য জরুরি যে নিজ জাতিকে জুলুম ও জিল্লতি থেকে উদ্ধার করে উন্নতির পথ প্রদর্শন করা। বনি ইসরাইল নেহায়েত অসহায় অবস্থায় ছিল, শাসকশ্রেণি তাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করত আর কন্যাসন্তানদের জোরপূর্বক সেবাদাসী বানিয়ে রাখত।

মুসা (আ.)-এর কাহিনি সেসব গুণ অর্জনের শিক্ষা দেয় যার মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ জাতিকে উন্নত করার ক্ষমতায় বলিয়ান হতে সক্ষম।

আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে নির্দেশ করেন, তুমি এবং তোমার ভাই হারুন, দুজনেই ফেরাউনের কাছে যাও। আল্লাহ বলেন-যাও তার কাছে এবং বলো, আমরা তোমার রবের প্রেরিত, বনি ইসরাইলকে আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দাও এবং তাদের কষ্ট দিও না। আমরা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি তোমার রবের নিদর্শন এবং শান্তি তার জন্য যে সঠিক পথ অনুসরণ করে।

(সূরা ত-হা, আয়াত ৪৭)-এর সঙ্গে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন তার জাতিকে যেন অতীতের বিভিন্ন জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস শুনিয়ে সতর্ক করা হয়।

ইরশাদ করেন : আমি এর আগে মুসাকেও নিজের নিদর্শনাবলিসহকারে পাঠিয়ে ছিলাম। তাকেও আমি হুকুম দিয়েছিলাম, নিজের সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে এসো এবং তাদের আল্লাহর সময় (ইতিহাস) স্মরণ করাও। এ ঘটনাবলির মধ্যে বিরাট নিদর্শন রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সবর করে ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৫)।

হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি (রহ.) তার কিতাব ‘ফাওজুল কাবির’-এর তৃতীয় পৃষ্ঠায় লিখেন : আলোচ্য আয়াতে দতাজকির বি-আইয়ামিল্লাহ ‘বা আল্লাহর সময় স্মরণ করানো-মানে ওইসব ঘটনার বর্ণনা উদ্দিষ্ট করা হয়েছে যেখানে নেককার বান্দাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে আর নাফরমান বান্দাদের আজাব দেওয়া হয়েছে।

এরপর আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : আর আমি মুসা ও তার ভাইকে ইশারা করলাম এই বলে যে, মিসরে নিজের কওমের জন্য কিছু ঘরের বন্দোবস্ত করো, নিজেদের ওই ঘরগুলোকে কেবলায় পরিণত করো এবং নামাজ কায়েম করো। আর ইমানদারদের সুখবর দাও। (সূরা ইউনুস, আয়াত ৮৭)। অর্থাৎ এখন তোমাদের মুক্তির সময় কাছাকাছি চলে এসেছে।

খেয়াল করে দেখুন, একটা মৃত জাতিকে জিন্দা করার জন্য আল্লাহতায়ালা ‘পূর্বকালের বিভিন্ন জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস এবং সফলতার পূর্ণ আশা’ হৃদয়ে বদ্ধমূল করার শিক্ষা দিচ্ছেন। এ দুই বিষয়ের শিক্ষার যে কী ফায়দা, ওই জামানার মানুষজন খুব ভালো করেই তা বুঝে নিয়েছিল।

তারপর দেখুন, ফেরাউনের জাদুকরেরা যখন হজরত মুসা (আ.)-এর ধর্ম কবুল করে নিল, তখন ফেরাউন বলল : এখন আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেব এবং খেজুর গাছের কাণ্ডে তোমাদের ক্রুশবিদ্ধ করব। (সূরা ত-হা, আয়াত ৭১)।

তখন তারা জওয়াব দিল : যা করার করতে পার। (সূরা ত-হা, আয়াত ৭২)।

হজরত মুসা (আ.) ও সঙ্গী-সাথিরা নিজেদের মূল উদ্দেশ্য ও মাকসাদের পরিপূর্ণতার জন্য সব রকমের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন। এভাবেই তারা সফল হয়েছেন এবং দুশমনেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।

হজরত মুসা (আ.)-এর কাহিনিতে বৈচিত্র্যের মধ্যেও জাতিগত ঐক্য বজায় রাখার ওপর খুব জোর দেওয়া হয়েছে। মুসা (আ.) যখন তুর পাহাড়ে আল্লাহর সাক্ষাতে যান এবং হজরত হারুন (আ.)-কে তার স্থলাভিষিক্ত করেন, তখন বনি ইসরাইলে একদল গোমরাহ হয়ে গিয়ে গরুর বাছুর পূজা করতে শুরু করে।

হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড় থেকে ফিরে এসে যখন দেখলেন তার জাতির এ অবস্থা, তিনি ভয়ানক রেগে গিয়ে হজরত হারুন (আ.)-এর চুল-দাড়ি ধরে বললেন : (মুসা) বললেন, হে হারুন! তুমি যখন দেখলে এরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন আমার পথে চলা থেকে কিসে তোমাকে বিরত রেখেছিল?... তুমি কি আমার হুকুম অমান্য করেছ? (সূরা ত-হা, আয়াত ৯২-৯৩)। মানে তারা যখন গোমরাহ হয়ে যাচ্ছে, তুমি কেন জোর-জবরদস্তি করে হলেও তাদের বাধা দাওনি?

উত্তরে হজরত হারুন (আ.) বললেন : আমার আশঙ্কা ছিল তুমি এসে বলবে যে, তুমি বনি ইসরাইলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা রক্ষা করনি। (সূরা ত-হা, আয়াত ৯৪)-এর মানে হজরত হারুন (আ.) যখন তার জাতিকে সংশোধনের চেষ্টা করে কামিয়াব হননি, তখন কিছু সময়ের জন্য তাদের গোমরাহির ওপর নিশ্চুপ ছিলেন, সেটাও এক বৃহৎ স্বার্থে যে, এখন যদি তাদের গোমরাহি বন্ধ করার জন্য জোর-জবরদস্তি করি, তাহলে সম্ভাবনা আছে পুরো জাতি খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে, ঐক্যবদ্ধ থাকবে না।

এখানে লক্ষণীয় যে, একজন পয়গম্বর বিচ্ছিন্নতা বা অনৈক্যের বিপরীতে বাছুর পূজার মতো শিরকি কাণ্ডেও কিছু সময়ের জন্য নীরবতা পালন করেছেন। বাস্তবতা হলো যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো জাতি একতাবদ্ধ থাকে, তালিম-তরবিয়ত তাদেরকে খুব ভালোভাবে প্রভাবিত করে। আর যখন তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা দেখা দেবে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য, কোনোভাবেই তারা সফলকাম হতে পারবে না।

হযরত সোলায়মান (আ) এর জীবনী।আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষপর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন।যার সঠিক সংখ্যার কো...
06/10/2024

হযরত সোলায়মান (আ) এর জীবনী।

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষপর্যন্ত অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন।যার সঠিক সংখ্যার কোনোসুস্পষ্ট তথ্য নেই।কুরআনের বর্ণনা মতে এ সকল নবী-রাসূলদেরমধ্যে তিনি যাদেরকে নবুয়ত দানের পাশাপাশি রাজত্ব ও হিকমত প্রদান করেছেন, তাদের মধ্যেহজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম অন্যতম সংক্ষেপে তার রাজত্বের বিবরণ তুলে ধরা হলো-

জন্ম পরিচিতি
সুলাইমান আলাইহিস সালাম হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের ১৯ সন্তানের মধ্যে একজন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে নবুয়ত লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও নবুয়ত দান করেন। তিনি শাম ও ইরাক অঞ্চলে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া রাজ্যের বাদশাহি লাভ করেন।

শৈশব কাল
আল্লাহ তাআলা হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে শৈশবেই প্রখর মেধা ও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায়- তাঁর পিতার (দাউদ আলাইহিস সালাম) দরবারে বকরির পাল ও শষ্যক্ষেত্র বিনষ্টের বিচারের ফয়সালায়। হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম বিচারে তাঁর দেয়া ফয়সালা বাতিল করে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের ফয়সালা বহাল রাখেন। তাছাড়া দুই মহিলার ‘এক সন্তান’কে উভয়ের সন্তান বলে দাবির ফয়সালায় হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের দরবারে উপস্থিত হলেন। দাউদ আলাইহিস সালাম বয়স্ক মহিলাকে সন্তান প্রদানের ফয়সালা দেন। সে ফয়সালাও সুলাইমান আলাইহিস সালাম তীক্ষ্ণ মেধার মাধ্যমে সঠিক রায় দেন। যা পিতার ফয়সালার বিপরীতে যায়। হজরত দাউদ নিজের ফয়সালা বাতিল করে পুত্র সুলাইমান আলাইহিস সালামের ফয়সালা বলবৎ রাখেন।

রাজত্বকাল
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পিতার মৃত্যুর পর শৈশবেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি রাজত্বের দায়ভার গ্রহণ করেন। রাজত্ব লাভের চতুর্থ বৎসর হতে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৫৩ বছরের দুনিয়ার জিন্দেগিতে ৪০ বছর যাবত রাজ্য পরিচালনা করেন। তবে কত বৎসর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেছিলেন, তা সঠিক জানা যায়নি। তবে তাঁর রাজ্য ছিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ও শক্তিশালী রাজ্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ, আল্লাহ তাআলা দাউদ আলাইহিস সালামের ন্যায় হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকেও বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেন এবং তাঁকে নিয়ামত দান করেন। তাঁর প্রতি

আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- বায়ু প্রবাহ অনুগত হওয়া।
আল্লাহ বলেন- ‘আর আমি বায়ুকে সুলাইমানের অধীন করেছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করতো। (সুরা সাবা : আয়াত ১২)

‘তামা’কে তরল ধাতুতে পরিণত করে নহর প্রবাহিত করা। আল্লাহ বলেন- ‘আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝর্ণা প্রবাহিত করেছিলাম।’ (সুরা সাবা : আয়াত ১২) জিন জাতি তাঁর অধীনস্থ হওয়া। আল্লাহ বলেন- ‘কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।’ (সুরা সাবা : আয়াত ১২) পক্ষীকুলকে অনুগত করা।

আল্লাহ বলেন- ‘সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হে লোক সকল! আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।’ (সুরা নমল : আয়াত ১৬)
পিপীলিকার ভাষা বুঝার ক্ষমতা।

আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছলো, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে
দান করেছ।’ (সুরা নমল : আয়াত ১৮-১৯)

অতুলনীয় সাম্রাজ্য লাভ। আল্লাহ বলেন, ‘সোলায়মান বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা ছোয়াদ : আয়াত ৩৫)

প্রাপ্ত অনুগ্রহ রাজির হিসাব না রাখার অনুমতি পাওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘এবং অন্য আরও অনেককে অধীন করে দিলাম, যারা আবদ্ধ থাকত শৃঙ্খলে। এগুলো আমার অনুগ্রহ, অতএব, এগুলো কাউকে দাও অথবা নিজে রেখে দাও-এর কোন হিসেব দিতে হবে না। (সুরা ছোয়াদ : আয়াত ৩৯-৪০)

ওফাত
বিশাল সাম্রাজ্যের বাদশা ও আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ৫৩ বছর জীবিত ছিলেন। ৪০ বছর রাজত্ব পরিচালনা করেন। সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুনিয়ায় আগমনের ১৫৪৬ বছর পূর্বে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বর্ণিত নবী-রাসুলদের জীবনী ও নবুয়তের বর্ণনাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করার এবং

কুরআন-
সুন্নাহর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সুলাইমান (আঃ) এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ উল্লেখ কর?

১. নবুঅত ও খেলাফত একত্রে একই ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া সম্ভব।

২. ধর্মই রাজনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। ধর্মীয় রাজনীতির মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

৩. প্রকৃত মহান তিনিই, যিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয়েও অহংকারী হন না। বরং সর্বদা আল্লাহর প্রতি বিনীত থাকেন।

৪. শত্রুমুক্ত কোন মানুষ দুনিয়াতে নেই। সুলায়মানের মত একচ্ছত্র এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাদশাহর বিরুদ্ধেও চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার চালানো হয়েছে।

৫. সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে প্রজাসাধারণের কাজ করলেও তারা অনেক সময় না বুঝে বিরোধিতা করে। যেমন বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় আল্লাহ বাকী সময়ের জন্য সুলায়মানের প্রাণহীন দেহকে লাঠিতে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন জিন মিস্ত্রী ও জোগাড়েদের ভয় দেখানোর জন্য। যাতে তারা কাজ ফেলে রেখে চলে না যায় এবং নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হবার সুযোগ না পায়।

হজরত দাউদ (আ) এর জীবনীআল্লাহর নবী হজরত দাউদ (সা) বনি ইসরাইল সম্প্রদায় থেকে নবী হিসেবে দুনিয়ায় আগমণ করেন। তাঁর পিতার ন...
06/10/2024

হজরত দাউদ (আ) এর জীবনী

আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (সা) বনি ইসরাইল সম্প্রদায় থেকে নবী হিসেবে দুনিয়ায় আগমণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইশা। হজরত দাউদ (আ) খুব সাহসী ও নির্ভিক ছিলেন। তিনি বীরত্বের জন্য সবার শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। আল্লাহ তাঁকে নবীর মর্যাদার পাশাপাশি রাজার সম্মানও দান করেন। তিনি ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্দান ও হিজাজ শাসন করেন। দাউদ (আ) ‘জবুর’ কিতাব লাভ করেছিলেন।

আল্লাহ তাঁকে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা দান করেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত সুমিষ্ঠ। তিনি মধুর সুরে জবুর কিতাব তেলাওয়াত করলে পশু-পাখি, এমনকি পাহাড়-পর্বতও আল্লাহর প্রশংসায় মেতে উঠতো। আল্লাহর সাহায্যে তিনি গুলতি দিয়ে তখনকার অত্যাচারী শাসক জালুতকে হত্যা করেন এবং বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করেন। তাঁর জীবনের আরো অনেক চমকপ্রদ ও শিক্ষণীয় ঘটনা।

মহান আল্লাহ হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের প্রতি যে অসংখ্য অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলেন সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন বাইতুল লাহমের ইয়াহুদা গোত্রের একজন সাধারণ যুবক। ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের জালুতের মতো এক বিশাল দেহী ভয়ংকর শত্রুকে হত্যা করে তিনি রাতারাতি বনী ইরাঈলের নয়নমণিতে পরিণত হন। এ ঘটনা থেকেই তার উত্থান শুরু হয়।

এমনকি তালুতের ইন্তিকালের পরে প্রথমে তাকে ‘হাবরূনে’ (বর্তমান আল খালীল) ইয়াহুদিয়ার শাসনকর্তা করা হয়। এর কয়েক বছর পর সকল বনী ইসরাঈল গোত্র সর্বসম্মতভাবে তাকে নিজেদের বাদশাহ নির্বাচিত করে এবং তিনি জেরুসালেম জয় করে ইসরাঈলী রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন। তারই নেতৃত্বে ইতিহাসে প্রথমবার এমন একটি আল্লাহর অনুগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় যার সীমানা আকাবা উপসাগর থেকে ফোরাত নদীর পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এসব অনুগ্রহের সাথে সাথে আল্লাহ তাকে আরো দান করেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ইনসাফ, ন্যায়নিষ্ঠা, আল্লাহভীতি, আল্লাহর বন্দেগীও তার প্রতি আনুগত্যশীলতা।

দাউদ আলাইহিস সালামের জন্য নয় বরং “তার সাথে” পাহাড় ও পাখীদেরকে অনুগত করা হয়েছিল এবং সে কারণে তারাও হযরত দাউদের (আ) সাথে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতো। একথাটিই সূরা সাদ-এ বলা হয়েছেঃ “আমি তার সাথে পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম। সকাল-সাঁজে তারা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। আর পাখিদেরকেও অনুগত করা হয়েছিল। তারা একত্র হতো, সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করতো”।

সূরা সাবায় এর ওপর অতিরিক্ত বলা হয়েছে: ()”পাহাড়গুলোকে আমি হুকুম দিয়েছিলাম যে, তার সাথে সাথে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করো এবং এই একই হুকুম পাখিদেরকেও দিয়েছিলাম। এ বক্তব্যগুলো থেকে যেকথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, হযরত দাউদ যখন আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা গীতি গাইতেন তখন তাঁর উচ্চতর ও সুরেলা আওয়াজ পাহাড় গুঞ্জরিত হতো, পাখিরা থেমে যেতো এবং একটা অপূর্ব মূর্ছনার সৃষ্টি হতো।

এ অর্থের সমর্থন একটি হাদীস থেকে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একবার হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রা) কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল অসাধারণ সুরেলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার আওয়াজ শুনে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং অনেকক্ষণ শুনতে থাকলেন। তার পড়া শেষ হলে তিনি বললেনঃ () অর্থাৎ এ ব্যক্তি দাউদের সুরেলা কণ্ঠের একটা অংশ পেয়েছে।

সূরা সবায় এর ওপর আরো বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে: “আর আমি তার জন্য লোহা নরম করে দিয়েছি (এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছি) যে পূর্ণমাপের বর্ম তৈরী করো এবং বুনন করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিমাণ রক্ষা করো”। এ থেকে জানা যায়, আল্লাহ হযরত দাউদকে লোহা ব্যবহার করার ক্ষমতা দান করেছিলেন। বিশেষ করে, যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বর্ম নির্মাণের কায়দা কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান যুগের ঐতিহাসিক ও প্রত্মতাত্বিক গবেষণা ও অনুসন্ধান থেকে এ আয়াতের অর্থের ওপর যে আলোকপাত হয় তা হচ্ছে এই যে, পৃথিবীতে লৌহ যুগ() শুরু হয় খৃস্টপূর্ব ১২০০ ও ১০০০অব্দের মাঝামাঝি সময়ে।

আর এটিই ছিল হযরত দাউদ আলাহিস সালামের যুগ। প্রথম দিকে সিরিয়া ও এশিয়া মাইনরের হিত্তী (Hittites) জাতি লোহা ব্যবহার করে। ২০০০ থেকে ১২০০খৃস্ট পূবাব্দ পর্যন্ত এ জাতির উত্থান দেখা যায়। তারা লোহা গলাবার ও নির্মাণের একটা জটিল পদ্ধতি জানতো। সারা দুনিয়ার দৃষ্টি থেকে তারা একে কঠোরভাবে গোপন রাখে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে যে লোহা তৈরী করা হতো তা সোনা রূপার মতো এত বেশী মূল্যবান হতো যে, তা সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যেতো না। পরে ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাঈলকে যেভাবে গোপন রাখে।

তালূতের রাজত্বের পূর্বে হিত্তী ও ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাঈলকে যেভাবে উপর্যুপরি পরাজিত করে ফিলিস্তীন থেকে প্রায় বেদখল করে দিয়েছিল বাইবেলের বর্ণনা মতে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল এই যে, তারা লোহার রথ ব্যবহার করতো এবং তাদের কাছে লোহার তৈরী অন্যান্য অস্ত্রও থাকতো। (যিহোশূয়১৭:১৬ বিচারকর্তৃগণ ১:১৯, ৪:২-৩)খৃস্ট পূর্ব ১০২০ অব্দে তালুত যখন আল্লাহর হুকুমে বনী ইসরাঈলদের শাসক পদে অধিষ্ঠিত হন তখন তিনি তাদেরকে পরপর কয়েকবার পরাজিত করে ফিলিস্তীনের বেশীর ভাগ অংশ তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন। তারপর হযরত দাউদ(১০০৪-৯৬৫খৃঃ পূঃ) শুধুমাত্র ফিলিস্তিনীন ও ট্রান্স জর্দানই নয় বরং সিরিয়াও বড় অংশে ইসরাঈলী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময়ে লৌহ নির্মাণ শিল্পের যে গোপন কলাকৌশল হিত্তী ও ফিলিস্তীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা উন্মোচিত হয়ে যায় এবং কেবলমাত্র উন্মোচিত হয়েই থেমে যায়নি বরং লৌহ নির্মাণের এমন পদ্ধতিও উদ্ভাবিত হয় যার ফলে সাধারণ ব্যবহারের জন্য লোহার কম দামের জিনিসপত্রও তৈরী হতে থাকে। ফিলিস্তীনের দক্ষিণে আদূম এলাকা আকরিক লোহায়(Iron Ore) সমৃদ্ধ ছিল।

সম্প্রতি এ এলাকায় যে প্রত্মতাত্বিক খননকার্য চালানো হয় তার ফলে এমন অনেক জায়গার প্রত্মতাত্বিক নিদর্শনসমূহ পাওয়া গেছে যেখানে লোহা গলাবার চুল্লী বসানো ছিল। আকাবা ও আইলার সাথে সংযুক্ত হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের জামানার বন্দর ইসয়ুন জাবেরের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে যে চুল্লী পাওয়া গেছে তা পর্যবেক্ষণের পরে অনুমান করা হয়েছে যে, তার মধ্যে এমনসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো যা আজকের অত্যাধুনিক যুগের এ প্রয়োগ করা হয়।

এখন স্বাভাবিকভাবেই হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম সবার আগে ও সবচেয়ে বেশী করে এ নতুন আবিস্কারকে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকবেন। কারণ কিছুকাল আগেই আশপাশের শত্রু জাতিরা এ লোহার অস্ত্র ব্যবহার করে তাঁর জাতির জীবন ধারণ কঠিন করে দিয়েছিল।
দাঊদ (আঃ)-এর জীবনীতে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ:

১. নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান ও আমানতদার হওয়া। আরও প্রয়োজন প্রজ্ঞা, ন্যায়নিষ্ঠা ও উন্নতমানের বাগ্মিতা। যার সব কয়টি গুণ হযরত দাঊদ (আঃ)-এর মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে ছিল।

২. এলাহী বিধান দ্বীন ও দুনিয়া দু’টিকেই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। বরং দ্বীনদার শাসকের হাতেই দুনিয়া শান্তিময় ও নিরাপদ থাকে। হযরত দাঊদ-এর শাসনকাল তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।

৩. দ্বীনদার শাসককে আল্লাহ বারবার পরীক্ষা করেন। যাতে তার দ্বীনদারী অক্ষুণ্ণ থাকে। দাঊদ (আঃ) সে পরীক্ষা দিয়েছেন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন। বস্ত্ততঃ তিনি ছিলেন আল্লাহর দিকে সদা প্রত্যাবর্তনশীল।

৪. যে শাসক যত বেশী আল্লাহর শুকরগুযারী করেন, আল্লাহ তার প্রতি তত বেশী সদয় হন এবং ঐ রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি নাযিল করেন। বস্ত্ততঃ দাঊদ (আঃ) সর্বাধিক ইবাদতগুযার ছিলেন এবং একদিন অন্তর একদিন ছিয়াম পালন করতেন।

৫. যে শাসক আল্লাহর প্রতি অনুগত হন, আল্লাহ দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে তার প্রতি অনুগত করে দেন। যেমন দাঊদ (আঃ)-এর জন্য পাহাড়-পর্বত, পক্ষীকুল এবং লোহাকে অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল।

ওজনে কম দিয়ে ধ্বংস হওয়া একটি জাতির গল্প!মাদইয়ান সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছেন হজরত শোয়াইব (আ.)। হজরত শোয়াইব (আ.) ছিলেন...
06/10/2024

ওজনে কম দিয়ে ধ্বংস হওয়া একটি জাতির গল্প!

মাদইয়ান সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছেন হজরত শোয়াইব (আ.)। হজরত শোয়াইব (আ.) ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.) এর তৃতীয় স্ত্রী কাতুরার ঘরের পুত্র মাদইয়ানের বংশধর। এ জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) এর এই বংশধরকে বনি কাতুরা বলা হয়। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, হজরত শোয়াইব (আ.) হজরত সালেহ (আ.) এর বংশোদ্ভূত নবী ছিলেন। যেহেতু তিনি মাদইয়ান সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছেন, তাই পরবর্তী সময়ে তার নামেই তার কওমের নাম হয়ে যায় কওমে শোয়াইব। বর্তমান সিরিয়ার মুয়ান নামক স্থানে সে কওমে শোয়াইবের বসবাস ছিল বলে জানা যায়। কোরআনে কারিমের কোথাও তাদের ‘আসহাবে মাদইয়ান’ ও ‘আহলে মাদইয়ান’ নামে উলেস্নখ করা হয়েছে। আবার কোথাও ‘আসহাবে আইকা’ নামে উলেস্নখ করা হয়েছে। আসহাবে আইকা ও মাদইয়ান একই সম্প্রদায়ের দুই নাম, নাকি তারা পৃথক পৃথক সম্প্রদায়- সে ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ থাকলেও প্রসিদ্ধ মতানুসারে মাদইয়ান ও আসহাবে আইকা একই সম্প্রদায়। যাদের পিতার দিকে সম্বোধন করে মাদইয়ান বলা হতো আর ভৌগোলিক দিক থেকে আসহাবে আইকা বলা হতো। আইকা অর্থ বনজঙ্গল। এ জায়গার মাটি অত্যমত্ম উর্বর হওয়ায় সে স্থানে ফলফলাদিসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি বেশি হতো। তাই কোরআনে কারিমে তাকে ‘আইকা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। মাদইয়ানবাসী পার্থিব লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে পাস্পরিক লেনদেনের সময় ওজনে কমবেশি করে মানুষের হক আত্মসাৎ করত। মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শরিক স্থাপন করত। গাছপালা ও মূর্তি পূজায় তারা লিপ্ত থাকত। লেনদেনের ক্ষত্রে দুর্নীতি, প্রতারণা, ছিনতাই, রাহাজানি ও মজুদদারির মতো জঘন্য অন্যায় তারা করত। এসব পাপে তারা এমনভাবে লিপ্ত ছিল যে, তারা কখনোই উপলব্ধি করত না, তারা অন্যায় করছে বা তারা যা করছে তা গর্হিত কাজ। বরং তারা অবাধ্যতা প্রদর্শন করতে পেরে আনন্দ বোধ করত। এভাবে তারা ভূপৃষ্ঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত। তাদের কাছে পাঠানো হলো হজরত শোয়াইব (আ.)কে। হজরত শোয়াইব (আ.) সর্বপ্রথম তাদের তাওহিদের দাওয়াত দিলেন। বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করো, যিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।’ (সুরা আরাফ : ৮৫)। তাওহিদের দাওয়াত দেয়ার পরপরই হজরত শোয়াইব (আ.) তাদেরকে তাদের কুকর্ম ওজনে কম দেয়ার হীন মানসিকতাকে দূর করার দাওয়াত দিলেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না। আজ আমি তোমাদের ভালো অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাদের ব্যাপারে পরিবেশ নষ্টকারী দ্বীনের আজাবের ভয় পাচ্ছি। হে আমার কওম! ন্যায়-নিষ্ঠার সঙ্গে ওজন পূর্ণরূপে করো। লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না। আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ (সুরা আরাফ : ৮৪-৮৫)। ‘মানুষের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না।’ এ কথা থেকে বোঝা যায়, ওজনে কম দেয়া যেমন হারাম, তেমনি হারাম অপরের অধিকারে হসত্মক্ষপ করা। হজরত শোয়াইব (আ.) তাদের আরও উপদেশ দিলেন, মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে তাদের সম্পদ গ্রহণ করার জন্য রাসত্মাঘাটে ওৎপেতে বসে থেকো না। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা পথেঘাটে এই উদ্দেশ্যে বসে থেকো না যে, আল্লাহ তায়ালার বিশ্বাসীদের হুমকি দেবে, আল্লাহ তায়ালার পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। স্মরণ করো যখন তোমরা সংখ্যায় ছিলে কম, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অধিক করেছেন এবং লক্ষ্য করো কিরূপ অশুভ পরিণতি হয়েছে ফিতনাকারীদের।’ (সূরা আরাফ, আয়াত নং : ৮৫)। আয়াতের শেষাংশে তাদের ভীতি প্রদর্শন করার জন্য বলা হয়েছে- পূর্ববর্তী ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কওমের করুণ পরিণতির দিকে লক্ষ্য করো, কওমে নূহ, আদ, সামুদ ও কওমে লুতের ওপর কী ভীষণ গজব নাজিল হয়েছিল। তাই তোমরা এ ধরনের আজাব আসার আগেই সতর্ক হয়ে যাও। এভাবে হজরত শোয়াইব (আ.) তাদের বিভিন্নভাবে নবীসুলভ সহনশীলতার সঙ্গে বুঝিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে তিনি শুধু উপহাস-পরিহাসই পেয়েছেন। অবশেষে তারা যখন সীমা লঙ্ঘন করে ফেলল তখন আল্লাহ তায়ালার আজাব এসে গেল। প্রথমে কয়েকদিন তাদের অঞ্চলে ভীষণ গরম পড়ল। গোটা জাতি ছটফট করতে লাগল। অতঃপর কাছের একটি ময়দানের ওপর গাঢ় মেঘমালা দেখা গেল। ময়দানে ছায়া পড়ল। শীতল বাতাস বইতে লাগল। এলাকার সবাই সেই ময়দানে জমায়েত হলো। বলতে লাগল এই মেঘ আমাদের ওপর বৃষ্টি নাজিল করবে। যখন সবাই সেখানে সমবেত হলো, তখন মেঘমালা থেকে অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হতে শুরু হলো। নিচের দিকে শুরু হলো ভূমিকম্প। ফলে সবাই সেখানে নাসত্মানাবুদ ও ধ্বংস হয়ে গেল। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘তাদের ভীষণ ভূমিকম্প পাকড়াও করল। ফলে তারা নিজেদের গৃহের অভ্যমত্মরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।’ (সূরা আরাফ : ৯১)। তাফসিরকাররা এ সীদ্ধামেত্ম উপনীত হলেন যে, তাদের ওপর মোট তিন ধরনের আজাব অবতীর্ণ হয়েছিল। এক. মেঘমালা থেকে অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হয়, দুই. এরপর বিকট শব্দ শোনা যায়, তিন. সর্বশেষ ভূমিকম্প হয়। এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, হজরত শোয়াইব (আ.) এর সম্প্রদায়ের ওপর প্রথমে এমন আজাব চাপিয়ে দেয়া হয়, যেন জাহান্নামের দরজা তাদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। ফলে তাদের শ্বাস রুদ্ধ হতে থাকে। তখন ছায়া তো দূরের কথা, পানিতেও তাদের শামিত্ম ছিল না। অতঃপর তারা অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ভূগর্ভস্থ কক্ষ প্রবেশ করে দেখল, সেখানে আরও বেশি গরম। তখন তারা অস্থির হয়ে ময়দানের দিকে ধাবিত হলো। সেখানে আল্লাহ তায়ালা একটি ঘন কালো মেঘ পাঠিয়ে দিলেন, যার নিচে শীতল বাতাস বইছিল। তারা সবাই গরমে দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে মেঘের নিচে এসে ভিড় করল। তখন মেঘমালা থেকে তাদের ওপর অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হতে শুরু হলো এবং ভূমিকম্পও হলো। অপরদিকে বিকট গর্জনও তাদের পাকড়াও করল। ফলে তারা সবাই ভস্মসত্মূপে পরিণত হলো। (আলবাহরুল মুহিত)। বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন লোকের অভাব নেই, যারা হজরত শোয়াইব (আ.) এর কওম যে অপরাধ করেছে সেরকম অপরাধে লিপ্ত। এ ঘটনায় তাদের জন্য রয়েছে সর্তকবাণী। সুতরাং যারা ওজনে কম দেন তাদের এ ঘটনা থেকে শিক্ষা অর্জন করা উচিত।

Address

London

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Emrana Begum Chowdhury posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Emrana Begum Chowdhury:

Videos

Share