09/10/2024
"লন্ডনে কিংবদন্তি বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব ২০২৪” সফলভাবে সম্পন্ন ; গানের মাধ্যমে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও প্রেমের জয়গান গেয়েছেন তিনি,,
জেসমিন মনসুর,
"গনতন্ত্রের মাতৃভূমি নামে খ্যাত মাল্টি ন্যাশনাল ও
মাল্টি কালচারাল এর বৃটেনের কমিউনিটির নানা শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ও আনন্দঘন পরিবেশে জাঁকজমক পুর্ণ ভাবে অর্ধ শতাধিক সুনামধন্য শিল্পীদের অংশ গ্রহণে আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি. বাংলাদেশের প্রাণের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে এই প্রথমবারের মতো আরিয়ান ফিল্ম এবং গ্লোব টিভি আয়োজিত বাউল শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব ২০২৪” সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ইউকে বিডি টিভির কালচারাল ডিরেক্টর ও উৎসব কমিটির সেক্রেটারি হেলেন ইসলাম , সুপ্রভা সিদ্দিকী, হাফসা ইসলাম ,শেখ নুরুল ইসলাম এবং মতিউর রহমান তাজ এর সঞ্চালনায় ব্রিটেনের দূর - দূরান্ত থেকে আগত বিশিষ্টজন ও প্রচুর বাউলসংগীত ভক্ত,ও বিপুল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে গত ৬ই অক্টোবর রোববার দুপুর ১২ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত
ব্রাডি আর্টস সেন্টারের দুটি মঞ্চে একযোগে পুরো দিন ব্যাপী এই প্রাণবন্ত উৎসবমুখর পোগ্রামে অর্ধ শতাধিক সুনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় বাউল শাহ আব্দুল করিমের গান, জারি, সারি, ভাটিয়ালী, আরও ছিলো বাউল শাহ আব্দুল করিমের জীবনী নিয়ে প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’, ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, দিওয়ানা বানাইছে’, ‘বন্ধুরে কই পাব সখী গো’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু’, ‘তুমি বিনে আকুল পরাণ’সহ এই শিল্পীর জনপ্রিয় অন্যান্য গান গাওয়া হয় অনুষ্ঠানে। উৎসব প্রাজ্ঞণে বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টল, পিঠা, কাপড়, জুয়েলারীর, মেহেদী, ফটো ফ্রেম, সহ রকমারি স্টলেমও ছিলো উপচে উপচে পড়া ভিড়।
অনুষ্ঠানে লোক উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে লন্ডনের সামাজিক সাংস্কৃতিক, ও কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় তারা হলেন আনোয়ার চৌধুরী, আহবাব হোসেন, আলাউর রহমান, শেখ আলীউর রহমান, সিরাজ হক , জ্যোৎস্না ইসলাম, আকলু মিয়া, মাহি ফেরদৌস জলিল, ও তাজরুল ইসলাম তাজ ।
প্রাণবন্ত উৎসবমুখর এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, বৃটেনের নিউহ্যাম কাউন্সিলের চেয়ার রহিমা রহমান, লন্ডন বরো অফ বার্কিং এন্ড ডেগেনহ্যাম কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার মঈন কাদরি, টাওয়ার হ্যামলেটেস এর সাবেক স্পীকার আহবাব হোসেন, প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক অকাউন্টেন্ট মাহমুদ এ রউফ ,
কমিউনিটি লিডার সিরাজ হক, রেডব্রিজ কাউন্সিলের সাবেক মেয়র জ্যোৎস্না ইসলাম, চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার্স চেয়ারম্যান মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব মাহি ফেরদৌস জলিল, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের কেন্দ্রীয় কনভেনার বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর,
কবি মুজিবুল হক মনি, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আখলু মিয়া, কাউন্সিলার সাম ইসলাম , কাউন্সিলার ফয়জুর রহমান চৌধুরী, কাউন্সিলার, মুজিবুর রহমান জসিম, ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম ইউকের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ শাফি কাদির সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে লোক উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে লন্ডনের সামাজিক সাংস্কৃতিক, ও কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় তারা হলেন আনোয়ার চৌধুরী, আহবাব হোসেন, আলাউর রহমান, শেখ আলীউর রহমান, সিরাজ হক , জ্যোৎস্না ইসলাম, আকলু মিয়া, মাহি ফেরদৌস জলিল, ও তাজরুল ইসলাম তাজ ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা কিংবদন্তি বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম তাঁর সৃষ্টিজুড়ে আছে মানুষের, সাম্যের ও প্রেমের জয়গান। মরমী এই শিল্পীকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে, তাঁর সৃষ্টি যেন মানুষের মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকে এজন্য শিল্পকর্মকে প্রচার-প্রসার এবং তাঁর সৃষ্টিকে অনন্যতায় স্মরণ করতে এরকম উৎসব প্রতি বছর উদযাপন করা উচিৎ বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন আব্দুল করিম
একজন জাত বাউল, দার্শনিক, পর্যটক এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পক্ষেই ছিল তার সংগ্রাম। গানের মাধ্যমে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও প্রেমের জয়গান গেয়েছেন তিনি,তার প্রতিটি কথা ছিল সাম্প্রদায়িকতার অব্যর্থ হাতিয়ার। তিনি জাত-পাত, শ্রেণি-বিদ্বেষ ভুলে মানুষকে সবসময় অসাম্প্রদায়িক জীবন-যাপনের পথে টেনেছেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক গ্লোব টিভির ফাউন্ডার্স চেয়ারম্যান তাজরুল ইসলাম তাজ ও ইউকে বিডি টিভির ভাইস চেয়ারম্যান উৎসব কমিটির চেয়ার
শেখ নুরুল ইসলাম তাদের বক্তব্যে আগত সবার সহযোগিতার মাধ্যমে এবারকার উৎসব সফল করা সম্ভব হয়েছে এজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামী বছর ও এ ধরনের উৎসব আরও ব্যাপক ও বড়পরিসরে করার ইচ্ছা রয়েছে বলে উল্লেখ করে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। দেশ বিদেশের বাঙ্গালীদের প্রিয় এক গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পি। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা বাউল গানের জীবন্ত কিংবদন্তী প্রায় দেড় সুর সহ সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন। শাহ আব্দুল করিম শহুরে মানুষের কাছে যতটা আগে পরিচিত হয়েছেন তার অনেক পূর্বে গ্রামের মানুষের কছে জনপ্রিয় ও সমাদৃত হয়েছিলেন। জারি, সারি, ভাটিয়ালী, জীবন তত্ব, প্রেম, বিচ্ছেদ, জাগরনের গান ও দেশের গান সহ প্রায় ১৫০০ গানের এ রচয়িতা ১২ ই সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে সিলেটের নুরজাহান পলি ক্লিনিকে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে একই ক্লিনিকে ১১ ই সেপ্টেম্বর তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।আব্দুল করিম সম্পর্কে না জানা তথ্যঃঅত্যান্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন বাউল গানের জীবন্ত এ কিংবদন্তী। দারিদ্রতা পরিবারকে এমনভাবে আকড়ে ধরে রেখেছিল যে প্রতিবেলার খাবার যোগান দিতেও তার বাবার কষ্ট হত। জীবনে মাত্র ২ বার বিদ্যালয়ে পা দিয়েছিলেন এ বাউল সাধক। পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ার তার উপর চাপটা বেশি ছিল। এজন্য তিনি চাকরি তে যোগ দেন। কষ্টে আকড়ে ধরা জীবনে তিনি ঈদের দিনেও ছুটি পেতেন না। দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়,অবিচার,কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি যখন গান গাইতেন তখন তা ধর্মীয় বিধি নিষেদের বলে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে সরলা বলেও ডাকতে। বেশ কয়েকটি গান তিনি সরলার নাম দিয়ে লিখেছেন ও গেয়েছেন। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যায় করতে কিন্তু কোন কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। জানা যায়, তিনি শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।শাহ আব্দুল করিমের প্রপ্তিঃস্বল্পশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।প্রকাশিত বইঃবাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোলমেলা। এছাড়াও তাঁর রচনাসমগ্র ‘অমনিবাস’ সম্প্রতি বাজারে এসেছে।সম্মাননাঃবাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলা একাডেমি তার দশটি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। এছাড়া দ্বিতীয় সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে এই বাউল সম্রাটকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ২০০০ সালে কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক ও পেয়েছিলেন এই বাউল সম্রাট।।