28/08/2024
১.
খুব সন্তর্পণে ট্রেনের কেবিনে এসে বসলো মুনতাহা। কালো বোরখার নিচের অংশে দৌড়াতে গিয়ে কাদা লেগে গেছে। কেবিনের স্বচ্ছ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো, বর্ষাস্নাত ভূমি তখনও এক শান্ত পরিবেশ ধারণ করে আছে। মানুষ নেই কোথাও, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘরে বসে সু-সম্পর্কের চাষাবাদ করছে হয়তোবা তারা। সন্তানদের আবদারে কারো কারো ঘরে ভাজা-পোড়ার আয়োজনও শুরু হতে পারে। খিঁচুড়ী, মুরগী ভূনা, বেগুন ভাজা .... ভাবতে ভাবতে শিরশির করে ওঠে মুনতাহার পুরো শরীর। এতোটা পথ পাগলের মতো দৌড়েছে শুধু। আর বৃষ্টিতে ভিজে, কাদাযুক্ত পথ মাড়াতে গিয়ে জুতাও হারিয়েছে। অজু করবার সময় পায়ে অনেক বড় কাটা দাগ দেখে বুঝলো, রক্তও ঝরেছে বেশ। আর এখন হুট করেই এলোপাথাড়ী জ্বর এসে দিশেহারা করে দিলো ওকে ...।
খালাতো বোন মারিয়াম খুব ঠান্ডা মাথায় ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে মুনতাহাকে। ব্যাগের ভেতরে খাবার, ঔষধ থাকবে এরকম চিন্তাও করেনি। কারণ আসবার আগে মুনতাহা নিজের রেগুলার ঔষধগুলো তোলেনি। কিন্তু ব্যাগ খুলে দেখলো, ছোট ছোট পোটলা করা। সবটাতেই আলাদা করে লিখে দেয়া - ঔষধের কৌটা, নাস্তা, চায়ের ফ্লাক্স, গরম পানির ফ্লাক্স, পানির বোতল, রাতের খাবার, সকালের নাস্তার হট-পট। মুনতাহা অঝোরে কেঁদে ফেলে একটা জিনিস দেখে, পাশেই সযত্নে সুগন্ধিযুক্ত স্মৃতির পশরা সাজানো মারিয়ামের তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া ছুরিটি। গোলাপী তোয়ালে, কোথাও কোথাও ছোপ-ছোপ রক্তে ভিজে গেছে।
২.
মুনতাহা এশার নামাজে হাউ-মাউ করে কাঁদে। পাগলের মতো করে কাঁদতে থাকে, বিগত রাতটির জন্য ক্ষমা, অসুস্থতা আর ভয়াবহ একাকী এই জার্নি নিয়ে কাঁদে, মারিয়ামের অবস্থার জন্য কাঁদে। ট্রেনের টি টি এসে টিকিট দেখে গেছেন। মুনতাহা ফিরছে ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে। মারিয়ামের বাড়ি, কলকাতা শহরে। ছিমছাম, ছোট্ট মফস্বলের মতো, নির্বিঘ্ন এলাকায়। তিনজন সন্তান আর স্বামী নিয়ে মারিয়ামের সংসার। বিগত পনেরো দিন আগে মুনতাহা চিকিৎসার জন্য মামার সাথে ওর বাসায় গিয়ে উঠেছিলো। মারিয়ামের হাজবেন্ড ব্যাবসায়িক কাজে, দুইমাসের জন্য সিংগাপুর চলে যাওয়ায়, মুনতাহাকে মারিয়ামের বাসায় রেখে মামা দেশে ফেরেন। খুব কাছের কাজিন (খালাতো) ওরা, বন্ধুর মতো সম্পর্ক। মারিয়াম মামাকে, আর মুনতাহার বাবা-মাকে আশ্বাস দিয়েছিলো যে, ডাক্তার সে নিজেই দেখাতে পারবে। মুনতাহা একটু পেছনে ফেরে। যেদিন মামা দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিতে নিতে বললেন,
- "মারিয়াম, ছেলে-মেয়েদেরকে রেখে ডাক্তারের কাছে ছোটা-ছুটি কঠিন হয়ে যাবে না মা?"
মারিয়াম আশ্বস্ত করে বলল,
- "না মামা, আমার বড় মেয়েটাতো আলহামদুলিল্লাহ ক্লাস এইটে উঠলো, ওর কাছেই ছোটদেরকে রেখে যেতে পারবো। চিন্তা করবেন না। অনেক বছর পর মুনতাহার সাথে দেখা হলো, একটু আড্ডা, গল্পও জমে আছে আমাদের ...।
আর আপনাদের জামাই তো দেশের বাইরেই বেশিরভাগ সময় থাকেন, বাজার সহ যাবতীয় কাজ ওদেরকে বাসায় রেখে গিয়েই করি।"
মুনতাহা হেসেছিলো সেদিন। নিখাঁদ বন্ধুত্বের মতো, বোনের মতো এই আবদার, সম্পর্কের হক্ব মেটানোর জন্য এই চাওয়া কতটা পরিতৃপ্তির হতে পারে। মুনতাহা জটিল অসুস্থতা বহন করে যাচ্ছে জন্ম থেকেই। হার্টের ছিদ্র মাঝে মাঝেই শ্বাসকষ্টের তীব্রতায় হারিয়ে দেয় এক যন্ত্রণার জগতে। সেটার শেষ চিকিৎসা নিতে এখানে এসেছে সে।
৩.
খুব সুন্দর সময় কাটছে মুনতাহার। মারিয়াম আর ওর বাচ্চাদেরকে নিয়ে আনন্দে হৈ-হুল্লোড়ে, খানিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ধারণ করে ফেলা মারিয়াম আর ওর সন্তানদেরকে ইসলামের সৌন্দর্য পৌঁছে দিতেও কার্পণ্য করছে না সে। ওরাও একটু একটু করে খালামণির কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করে যায় অবলীলায় ....।
কফি-শপ, চকলেট-বার, পার্কে যাওয়া, এসবও চলছে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি। মুনতাহা রাত এলে, নির্জনে রব্বে কারীমের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়। বিয়ে হয়ে গেলে মুনতাহারও সন্তান থাকতো হয়তো। যখনই হার্টের এই সমস্যার কথা পাত্রপক্ষ জেনেছে, কেউ আর এগোয়নি। এতে কষ্ট নেই ওর। আল্লাহ্ যেভাবে রেখেছেন, তাতেই ভালো কিছু আছে বলে বিশ্বাস করে সে।
এক ভোরে গল্পের পশরা নিয়ে বসেছে মুনতাহা ও মারিয়াম। চায়ের মগ হাতে বেলকনির সবুজাভ ও ফুলেল বাগানে বসে কথা বলছিলো।
মারিয়াম হেসে হেসে বলল,
-"তোমাকে এতো ছোটবেলা থেকেই ছেলে-পেলেগুলো টিজ করতো! আমার মনে হলেই হাসি পায়।"
মুনতাহাও হাসে,
-"আমার খুব রাগ হতো, এখনও রাগ উঠে যায় মাঝে। তুমি জানোনা, তোমার বিয়ের পরপর, ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। বিরক্তের চরম পর্যায় যখন, তখন থেকে ব্যাগে চাকু রাখতাম। সেটা এখনো রাখি আমি।"
মারিয়াম অবাক কন্ঠে,
-"এখনতো পুরোই পর্দা করে চলো, টিজিং কমেনি?"
-"কমেছে, আলহামদুলিল্লাহ, তাও রাখি। এখনো আছে জানো!"
অনেক কথা আর হাসির রোল পড়ে যায় স্মৃতিচারণের মাধ্যমে। রান্নাঘরে দু'জন মিলেই নাস্তাও বানিয়ে নেয়।
৪.
রাতে ডিনার শেষে শুয়ে পড়ে মুনতাহা, শরীরও ঠিক নেই আজ। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় কম ডোজের স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়েছিলো। আনুমানিক রাত ২:৩০ মিনিটে ঘরে কারো ঢোকার শব্দ পায়, ঘোরলাগা অবস্থার মধ্যেও। ঘুমের মধ্যে হয়তো ভুল ভাবছে এরকম চিন্তা করে পাশ ফিরে আবার ঘুমাতে যায়। .. কিন্তু না খুব কাছাকাছি কারো উপস্থিতি অনুভব করে আতঙ্কে বলল,
- "কে? মারিয়াম? এভাবে ভয় দেখাচ্ছো কেন?"
হঠাৎ মুনতাহার মুখ চেপে ধরে কোন পুরুষ, ওর সমস্ত ঘুম এক নিমিষেই পালিয়ে যায় .... বালিশের নিচে রাখা ছুরিটি হাতে তুলে নেয় মুনতাহা। না পারছে চিৎকার করতে, না পারছে হাত ঘুরিয়ে ছুরিটি ব্যবহার করতে ...
মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকতে থাকে। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে সরাসরি গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়ে শক্ত কন্ঠে "আল্লাহু আকবার" বলে ওঠে! আলো জ্বলে ওঠে খানিক পরেই। ভয় জড়িত মারিয়ামের দৃষ্টি, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা স্বামীর শরীরে নিবদ্ধ হয়! মুনতাহা এতো রক্ত আর পরিস্থিতি দেখে ভীত হয়ে পড়ে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ফজরের সুললিত আযান এসে, সুমধুর তান ছড়িয়ে যাচ্ছে মারিয়ামের কানে। মুনতাহাকে অন্য একটি রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। ফিরে এসে খুন হওয়া স্বামীকে অনেক কষ্টে খাটে উঠায়। শরীরের রক্ত মুছে দেয়। এসির শীতলতা শেষ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। মোটা কম্বলে জড়িয়ে দেয়। মেঝের রক্তগুলো মুছে নেয়। গোসল সেরে এসে লাশের পাশেই কনকনে শীতার্ত অনুভূতি নিয়ে আবদ্ধ ঘরে একবার অশ্রুমিশ্রিত কন্ঠে চিৎকার করে বলে ওঠে,
- "দিনের এই প্রথমভাগে, পবিত্র এই সময়ে, আজ আমি তৃপ্তিভরে নামাজ আদায় করবো হে প্রভূ! আপনার শাহী দরবারে সিজদাহে অবনত হয়ে যাবো হে রব্ব!"
৫.
মুনতাহার জ্ঞান ফিরে আসে, ফজরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে যাচ্ছে এমন মুহুর্তে। কম্পিত শরীরে উঠতে না পেরে ওখানেই আদায় করে নেয়। মারিয়ামকে কিছু বলতে চায় সে। মারিয়াম শান্ত হয়ে মুনতাহার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল,
-"তোমার কিছু বলতে হবে না। আমি বলি তোমাকে, এ যাবৎ যত তরুণী আত্মীয়া আমার বাসায় এসেছে, পল্লবের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অনেককেই সে রেইপ করেছে। আর কাউকে বললে কোন না কোনোভাবে খুন করবে বলে হুমকী দিয়ে রেখেছিলো। কেউ মুখ খোলেনি, এই বাড়ি মুখিও হয়নি আর কখনো। আমরা কলকাতার বিশ-পঁচিশ পরিবারের আত্মীয়ের বাসায় যাবার আমন্ত্রণ পাই না। ভয়েই তারা দুরে থাকেন। শুধু যে নারী কেন্দ্রিক সমস্যা, তা কিন্তু নয়। মুরুব্বি আত্মীয়দের সাথে আচরণ ও খারাপ। আমাকে, বাচ্চাদেরকে নামাজ পড়তে দিতো না। নাস্তিকতা ওর মগজে। আমার মোবাইল সম্পুর্ন রুপে ট্র্যাকিং করা। কোথাও কার ও সাথে কথা বললে, সব জানে। আমাকে বলেছিলো কাউকে কিছু বললে বাচ্চাদেরকে হত্যা করবে। আমি ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম একদিন, বাচ্চাদেরকে নিয়ে চলে যাবো দুরে, সেদিন আরোও হিংস্র হয়ে উঠেছিলো। খুব মারতো আমাকে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে মুখ বেঁধে পিটাতো! বাচ্চারা মাঝে মাঝেই টের পেয়ে নিজেরা নিজেরা জড়াজড়ি করে কাঁদতো। আমি ফোনে কাউকে তোমার আসার ব্যাপারে বলিনি, জেনে যাবে সেই ভয়ে। আর ভেবেছিলাম যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ বিজনেস ট্যুর, সেরকম অবস্থায় তো ওসব বাদ দিয়ে আসবে না। কিন্তু ছোট মেয়েটা সম্ভবত মাকে ফোনে তোমার ব্যাপারে বলেছিল, আমার যতটুকু মনে হচ্ছে। এই লোক যে এসেছে আমি জানতাম না সত্যিই। ভেতর থেকে লক করে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম মেইন গেইট।ওর কাছে তো চাবীর কপি আছে। আর দেখো ......
মুনতাহা তুমি আমার যে উপকারটা করলে বলে বুঝাতে পারবো না। আমি ঐ ঘরের জানালার গ্লাস আর শিক হ্যান্ড গ্লাভস লাগিয়ে ভেঙে রেখেছি, সবাই যেন বোঝে শত্রুতাজনিত হামলা। আমি তোমার জন্য অনলাইনে একটা কেবিনের টিকিট কেটে দিয়েছি,অন্য মোবাইলের মাধ্যমে। এটা কিছুদিন আগে গোপনে কিনেছিলাম। এই নাও ম্যাপ, এই অনুযায়ী চলে যাবে। যাত্রাপথে গ্রাম সামনে আসবে একটা, ঐ গ্রাম ধরে এগিয়ে যেও। কারণ শহর দিয়ে গেলে একটু পরেই তোমাকে সন্দেহজনক ভাবে ধরে ফেলবে। এই শহরে এই লোকের অনেক প্রভাব।
মুনতাহা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শান্ত, নির্লিপ্ত মারিয়ামের দিকে, কম্পিত কন্ঠে বলল - আমি তাহলে একজনকে খুন করে চারজন মানুষকে জীবন্ত লাশ থেকে বাঁচিয়ে তুলেছি? ভুল করিনি?আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেবেন আমাকে?
মারিয়াম এবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুনতাহাকে। একদম ঠিক বলেছো একদম ঠিক। যাও, চলে যাও, দেরী করো না। এসব মিটে গেলে এসো আবার। বাকী চিকিৎসা, ঘোরাঘুরি তখন হবে। আপাতত বাড়ীর কাউকে বলিও না। আমি অন্যভাবে ম্যানেজ করে নেবো পরে। বললে বাবা-মা আসতে চাইবেন। তোমার হুট করে চলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, আর তুমি এখানে থাকলে পুলিশের জেরার মুখে সত্য গোপন রাখতে পারবে না।
৬.
ট্রেনের কামরায় এসবই বারবার মনে পড়ে যাওয়ায় অনবরত কেঁদে যাচ্ছে মুনতাহা। খাবার মুখে ওঠে না ওর। বেশ কয়েকটা গ্রাম, ভ্যানে করে পেরুতে পেরুতে সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। পরে আর কোনো বাহন পায়নি। ট্রেনের সময়ও খুব কম ছিলো, নিরুপায় হয়ে দৌড়াতে হয়েছে। রেল-লাইন ধরে দৌড়েছে।
জীবনে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হবে ভাবেইনি মুনতাহা! মারিয়াম আর বাচ্চাগুলোর এতোদিনের ভয়াবহ জীবন-যাপন অন্তরকে মুষড়ে দিচ্ছে অনায়াসে। এশার নামাজ আদায় করে নেয় সে। প্রচন্ড মাথা ধরেছে, শ্বাসকষ্ট উঠে যাচ্ছে আবার, জ্বরও বেড়েছে বেশ। বাংলাদেশে পৌঁছাতে এখনো বেশ কিছু সময় বাকী। একটু ফ্ল্যাক্স থেকে চা ঢেলে নেয়, সাথে মারিয়ামের বানিয়ে দেয়া রুটি। এরপর ঔষধ গুলো খেয়ে নেয়। খুব জানতে ইচ্ছে করে মারিয়াম কিভাবে সব ম্যানেজ করলো, কিন্তু ফোন করা যাবে না। ফোন করলে ও বিপদে পড়ে যাবে। মারিয়াম পরে নিজেই জানাবে বলে কথা দিয়েছে!
রাত্রীর অন্ধকার পেরিয়ে একটি ট্রেন স-শব্দে এগিয়ে চলেছে যাত্রীদেরকে সাথে নিয়ে। প্রত্যেককে গন্তব্যে পৌঁছে দেবার দায় নিয়ে যেন ছুটে চলেছে দুর্বার গতিবেগে! কেবিনে বেহুশ ঘুমে আচ্ছন্ন মুনতাহা, আরশে আযীমের মহান স্বত্তার কাছে সবটুকু সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত যেন!
(সমাজের আনাচে-কানাচে গোপন থাকা এই গল্পগুলো আমরা হয়তো খুব কম জানি, কিন্তু এমনও ঘটে কারো কারো জীবনে। )
গল্পের নামঃ লুকায়িত গল্প
লেখকের নামঃ নাসরিন সুলতানা
#আমারকলমেজাগরণ২
#জাগরণএক্সক্লুসিভ