আল্লাহর পথে দাওয়াত।

আল্লাহর পথে দাওয়াত। শুধু মাত্র দ্বীন প্রচারের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
(1)

06/09/2024

আলহামদুলিল্লাহ
আল্লাহু আকবার

আমার যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন আমি মাদ্রাসায় অধ্যায়ণরত। একদিন দুপুরে আমার মাদ্রাসায় কল যায়। বাসায় ফিরতে বলা হয়েছে। মাদ্রাসা থ...
06/09/2024

আমার যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন আমি মাদ্রাসায় অধ্যায়ণরত। একদিন দুপুরে আমার মাদ্রাসায় কল যায়। বাসায় ফিরতে বলা হয়েছে। মাদ্রাসা থেকে ফিরে দেখলাম আমার বাসায় কিছু মেহমান। আমাকে চিন্তিত দেখে আমার আব্বু হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললেন,
'আমার বেটি তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন?'

প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম,
'আব্বু আমাদের বাসায় কিসের এতো আয়োজন চলছে? আপনার কোনো মেহমান আসবে?'

আব্বু হাসলো। তারপর ভাবুক কন্ঠে বলল,
'আমার মেয়ে তো বুদ্ধিমতী! সে কি কিছুই বুঝেনি কেন এতো আয়োজন?'

সত্যিই আমি তখন পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারিনি। নিভু নিভু চোখে উত্তর দিলাম,
'আমাকে মাফ করবেন! সত্যিই আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।'

তিনি আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। মুচকি হেসে বললেন,
'আজ আমার কন্যা সাওদার বিয়ে যে..!'

বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো। আমার বিয়ে অথচ আমি কিছুই জানিনা। আব্বুর উপর রাগ হয়নি। তিনি পিতা! আমার ভালো-মন্দের দিকে খেয়াল রাখা তাঁর দায়িত্ব। এতোদিন আমার জন্য এতোকিছু করেছেন আমি কোনো দ্বিমত পোষণ করিনি; তবে আজ কেন করবো? লজ্জা পাচ্ছিলাম। লজ্জা লজ্জা মুখ করে সেখান থেকে ছুটে এলাম নিজের ঘরে।

সুন্দরমত আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। খুব বেশি ধুমধামে আমার বিয়েটা হয়নি। তবে যেমন করে হয়েছে একদম আমার মনের মতো। মসজিদে আমার বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়ে শেষে খেজুর ছিটানো। ওয়াল্লাহি! পুরো দেশের মানুষ খাইয়েও যদি আমার বিয়ে দেওয়া হতো আমি এতোটা খুশি হতাম না, যতটা খুশি হয়েছি মসজিদে বিয়ে হওয়াতে এবং তবারক হিসেবে সবাইকে খেজুর দেওয়াতে।

বিদায় বেলা! আমাকে নেওয়ার জন্য পাঁচজন মানুষ এসেছেন। আমার যাওজ, আমার ননদী, আমার শাশুড়ি, মামা শ্বশুর এবং আমার চাচা শ্বশুর। খুব দরকারি কাজ থাকায় আমার শ্বশুর আসতে পারেননি। বাড়ি ছাড়ার আগে আমি আমার আব্বুর সামনাসামনি দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছিলো আমার হৃদয়টা কেউ দু'টো ভাগ করে দিয়েছে। লক্ষ্য করলাম তাঁর চোখে পানি টলমল করছে। আমার মাথায় হাত রেখে কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললেন,

'আব্বাজানের উপর মনঃকষ্ট রেখো না। আব্বাজান তোমায় খুব খুব ভালোবাসে। ভালোবাসায় সবাইকে বেঁধে রেখো। শাশুড়িকে কখনো দুঃখ দিও না। চেষ্টা করবে তুমি থাকতে যেনো তোমার শাশুড়ি ব্যথা না পায়। তোমার স্বামীর উপর সবচেয়ে বেশি হক্ব কিন্তু তার মায়ের। জানো কন্যা! একটি সংসারকে সুখী রাখতে হলে সর্বপ্রথম ভালোবাসতে হয়। নিজের সাথে বেঁধে নিতে হয়। তোমার সংসারের প্রত্যেকজন সদস্যকে নিয়ে তুমি সুখী থেকো। আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক।'

তাঁর চোখ দিয়ে পানি গড়াতে শুরু করলো। তিনি আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন,
'দু'আ করি নবী কন্যাদের মতো তোমার জীবন সুন্দর হোক। রব তোমাকে সবর, তাওয়াককুল এবং তাকওয়া দান করুন।'

কাঁদতে কাঁদতে তিনি কথাগুলো বললেন। আমি অনুভব করলাম তাঁর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট না হলে পুরুষ মানুষ কখনো কাঁদেনা।

চলে এলাম শ্বশুর বাড়িতে। খুব সুন্দর পরিবেশ। সবাই আমাকে আপন করে নিলো। আমার শাশুড়ি আম্মু অসম্ভব ভালো মানুষ। তার ব্যবহার আমাকে প্রথম দিনই মুগ্ধ করেছে। তিনি আমায় গ্রহণ করেছেন তাঁর কন্যা রূপে। আলহামদুলিল্লাহ এটা আমার কাছে অনেক বড় কিছু!

এদের সাথে আমার খুব ভালো সময় যাচ্ছিলো। বিয়ের এক সপ্তাহ শেষ হলো। আজ আমার শ্বশুর বাসায় এসেছেন। তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমার যেমন আগ্রহ তেমন তাঁরও। বড় পুত্রবধূ আমি। সুন্দর করে একটা ঘোমটা টেনে ড্রয়িং রুমে গেলাম। যেখানে তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি গিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলললাম,
'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।'

তিনি জবাবে বললেন,
'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ আমার বউমা। মাশাআল্লাহ আপনার সালাম তো খুব সুন্দর।'

মুচকি হেসে বললাম,
'আপনি কেমন আছেন আব্বু?'

'আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। এখন আপনাকে দেখে এবং আপনার মুখে আব্বু সম্বোধন শুনে আরো ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ আ'লা কুল্লি হাল।'

তিনি আমাকে ইশারা করে নিজের পাশে বসতে বললেন। আমি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলাম তাই সোফায় না বসে নিচে বসলাম। শ্বশুর আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
'কি চান আপনি আমার থেকে? কোন জিনিস পেলে আপনি খুশি হবেন?'

কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলাম,
'আব্বু! আপনি সবাইকে অনেক সুন্দর সুন্দর নাসীহত করেন। আপনার নাসীহত পাওয়ার আশায় কতজন আপনার কাছে ছুটে আসে। আজ আমি আপনাকে আমার সামনে পেয়েছি নিজের শ্বশুর হিসেবে। কত সৌভাগ্য আমার আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই আপনি আমাকে কিছু নাসীহত দেন যার দ্বারা আমার উপকার হবে। আর এই মূহুর্তে আপনার থেকে এটা পেলেই আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।'

শ্বশুরের মুখে হাসি। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললেন,
'আমার কন্যা! আপনার কথায় আমি অত্যন্ত খুশি।
ইচ্ছে করছে আপনাকে একবার মা ডাকি। ঠিক যেভাবে আমি আমার আম্মাকে ডাকতাম।'

বুকের ভেতর ধপ করে শব্দ করলো। কি জবাব দিবো আমি তাঁকে। একরকম ভাবনায় পড়ে গেলাম। ভাবনাচিন্তা ফেলে আমি তাঁকে বললাম,
'আপনি আমাকে মা ডাকবেন এযে বড়ই আনন্দের কথা। তবে এই ভেবে আমার ভয় হচ্ছে আমি কি আপনার এই সম্মানের যোগ্য? আমি কি সবসময় আপনাকে আপনার মায়ের মতো আগলে রাখতো পারবো?'

আমার শ্বশুর চোখ বন্ধ করে বললেন,
'میری بیٹی!
تمہارے سسر لوگوں کو غلط سمجھتے ہیں, لیکن ماں نہیں پہچانتی!'
(আমার বেটি!
তোমার শ্বশুর মানুষ চিনতে ভুল করে কিন্তু মা চিনতে নয়!)

ভীষণ কান্না পেলো আমার। নিজেকে সংযত রেখে বললাম,
'আমার পাওনা!'

'জ্বি আম্মা আপনার পাওনা আপনি পাবেন। আমি আজ আপনাকে যে কথাগুলো বলবো আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবেন আশা করছি।

আমরা কেউ যখন বাসায় থাকবো না তখন আপনি এবং আপনার শাশুড়ি আম্মু একসাথে থাকবেন। সময় কাটানোর জন্য আপনারা বসে গল্প করবেন, কথা বলবেন। খুব ভালো। রব আপনাদের একসাথে রাখুন। কিন্তু আম্মা সবসময় খেয়াল রাখবেন কথা বলতে বলতে না কারো গীবত করে ফেলেন। গীবত বড়ই ভয়ানক। এটার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।

আপনি এবং আপনার শাশুড়ি আম্মু দু'জন যখন একা বাসায় থাকবেন;তখন কুরআনকে নিজেদের সঙ্গী রূপে গ্রহণ করবেন। একজন আরেকজনকে তেলাওয়াত করে শুনাবেন। ইনশাআল্লাহ এতে আপনারা অহেতুক কথা বলা থেকে বেঁচে যাবেন।

নিজেকে সবসময় যিকিরে মশগুল রাখবেন। জিহ্বাকে থামতে দিবেন না, সবসময় যিকির করতে থাকবেন। যিকির করতে করতে একসময় আপনার জিহ্বা চালু হয়ে যাবে; তখন যিকির ছাড়া কিছুতেই মন বসবে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের পরকালীন জীবনে কিছু করার উত্তম মাধ্যম হলো যিকির। যিকিরে যেই অন্তর মশগুল থাকে সেই অন্তরে খারাপ চিন্তা আসে না।

আম্মা! আপনি ছোটবেলা থেকে পর্দার ভেতর বেড়ে উঠেছেন। আমি চাই আপনি সেটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকুন। আল্লাহ না করুক কখনো যদি খারাপ কিছুর সম্মুখীন হতে হয় তখনও নিজের পর্দাকে আঁকড়ে ধরে রাখবেন। বলুন নারীর কাছে তার ইজ্জ্বতের চেয়ে বড় আর কি? পর্দা ছাড়া নারীকে সম্মান দিতে পারে আছে কি এমন কিছু?

মা! আপনার শাশুড়ির সাথে চলাফেরায় মাঝেমধ্যে হয়তো কথা কাটাকাটি হতে পারে। কিন্তু চেষ্টা করবেন এমন যেনো না হয়। আর যদি হয়েও যায় চুপসে যাবেন, পিছিয়ে আসবেন। তাঁকে বলার সুযোগ দিবেন। বয়স হয়েছে, মেজাজ এখন খিটখিটে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। দুজনে যদি একসাথে বলতে থাকেন তাহলে অনেক বড় সমস্যা হবে। তাই সবসময় নিজেকে পিছিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। দেখবেন শান্ত হয়ে গেলে তিনিই আপনাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলবে। আপনাদের দুজনের সম্পর্ক জান্নাত পর্যন্ত স্থায়ী হোক, আমীন।

শেষ যে কথাটা বলবো আম্মা সেটা খুবই জরুরি।
একটু মন দিয়ে শুনুন। আপনি আমার ঘরের বউ। আপনার স্বামী পড়ালেখা করছে। সবসময় হয়তো আপনার আবদার গুলো পূরণ করতে পারবে না। মন খারাপ করার দরকার নেই, আপনার বাবার বাড়িতেও বলার কোনো দরকার নেই। যতদিন আমি আছি আপনার শ্বশুর। ততদিন আপনি আপনার শাশুড়ির মাধ্যমে আমার কাছে চাইবেন। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করবো আপনার শখ পূরণ করার। আম্মা! আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ আপনার বাবার বাড়িতে কখনো কিছু চাইবেন না। তাঁরা অনেক করেছেন, ছোটবেলা থেকে আপনাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন, আপনার চাহিদা গুলো পূরণ করেছেন। এজন্য আমার তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা। আপনি তাঁদের কাছে এমন কিছু বলবেন না বা এমন কিছু চাইবেন না যাতে আপনার শ্বশুরকে লজ্জা পেতে হয়।

আল্লাহ আমাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছে আমি ততটুকু দিয়ে আপনার শখ পূরণ করবো ইনশাআল্লাহ। রব আমাদের ভালো রাখুক, আমাদের সংসারটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিক, আমীন।

কথাগুলো বলে আমার শ্বশুর আমার হাতে একটা বক্স এগিয়ে দিলেন। আমি সবার সামনেই সেটা খুললাম। একটা কুরআন, একটা হিজাব, একটা তাসবিহ, একটা আতর, একটা জায়নামাজ, একটা সুরমা আর একটা ডায়মন্ডের রিং। ডায়মন্ডের রিংয়ের উপর ছোট্ট করে লেখা এটা আপনার শাশুড়ি আম্মু দিয়েছেন। সত্যি বলতে দুনিয়ায় আমি এতো ভালো উপহার আর পাইনি। আমি শেখানেই কাঁদতে শুরু করলাম। আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে শাশুড়ি আম্মু জিজ্ঞেস করলেন,
'তোমার কি হাদিয়া পছন্দ হয়নি সাওদা?'

কতটা পছন্দ হয়েছিলো আমি মুখে প্রকাশ করতে পারবো না। কাঁদতে কাঁদতে শুধু এতোটুকু বললাম,
'মাশাআল্লাহ! আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আপনারা আমার পাওয়া সেরা হাদিয়া।'

।।সেরা হাদিয়া।।
~জুয়াইরিয়া কাজিমা

05/09/2024
নির্জন এক নিঝুম রাত...আকাশে হাজারো তারার মেলা।রূপোর থালার মত পূর্ণিমার চাঁদটা যেন আজ খুব আনন্দ করে তার রূপোলী শুভ্র কিরণ...
05/09/2024

নির্জন এক নিঝুম রাত...আকাশে হাজারো তারার মেলা।রূপোর থালার মত পূর্ণিমার চাঁদটা যেন আজ খুব আনন্দ করে তার রূপোলী শুভ্র কিরণ ছড়াচ্ছে...!আশেপাশের বকুল ফুলগুলো যেন আজ একটু বেশিই সুবাস ছড়াচ্ছে...চারপাশে বয়ে যাওয়া এক শীতল হাওয়া যেন পরিবেশটাকে আরো শান্ত করে তুলছে...!আশেপাশে সজীবতা ও মাটির এক মিষ্টি গন্ধ...আশেপাশের বেলীফুলের মোহ মোহ গন্ধে আর জোছনা ভরা রাতের নির্জনতায় মনটা আজ খুবই ভালো আব্দুল্লাহ সাহেবের।যানজট আর কোলাহলের এ ব্যাস্ত শহরে এমন এক রাত উপভোগ করা দুরূহও বটে!

'আজ খুব করে মনে পড়ছে আমাতুল্লাহকে!বেলীফুল তার ভারী পছন্দের ফুল ছিল।আমার স্বল্প উপার্জনের কারণে তাকে খুব দামী কিছু না দিতে পারলেও মাঝে মাঝে তার জন্য এক গোছা বেলীফুল এনে তার খোপায় বেঁধে দিতাম। সে যে এতেই খুব সন্তুষ্ট ছিল তা তার মিষ্টি মুখের মুচকি হাসি দেখলেই বোঝা যেত..!(১)আর আজকের মত এমনই এক জোছনা রাতে তার সাথে আমার প্রথম মনের ভাব হয়েছিল।পরনে লাল টুকটুকে শাড়ি,হাত-পা তার মেহেদী দিয়ে রাঙানো,চোখ দুটিতে ঘন কালো কাজলের প্রলেপ!ঠোঁট দুটো ছিল তার গোলাপ ফুলের পাপড়ির মত লালচে গোলাপি!সে তার দীর্ঘ পল্লব বিশিষ্ট চোখদুটিকে প্রসারিত করে সেদিন আমায় বলেছিল,
"আজ আমরা অর্ধেক দ্বীন পূরণ করেছি।(২)আজ থেকে শুরু আমাদের সীরাতুল মুস্তাকিমের দিকে একসাথে এগিয়ে যাওয়া!আজ থেকে আমরা কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে প্রবলভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব ইন শা আল্লাহ!(৩) দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে আখিরাতে দুজনে একসাথে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন বুনবো।জীবনে বিপদ-আপদের প্রতিটি অধ্যায়ে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করব।(৪)কেননা আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন(৫)! আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাতে যাওয়া...!"

কথাগুলো শুনতে শুনতেই লক্ষ্য করলাম তার চোখে-মুখে উজ্জ্বলতার আভাস!একবুক আশা নিয়ে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!তার হাস্যজ্জ্বল চেহারায় হঠাৎ করেই এক অজানা আবেগে দু'ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো,অশ্রুগুলো ভিজিয়ে দিল তার পাপড়িগুলোকে!সেদিন তার কথাগুলো আমাকে গভীরভাবে অভিভূত করেছিল..!কত মিষ্টি,প্রশান্তিময় ঈমানী চিন্তাচেতনা তার..!সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম সে আমার যোগ্য জীবনসঙ্গিনী..!এবং সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল আমাদের পথচলা...।'

ভাবছিলেন আব্দুল্লাহ সাহেব। মনের ভেতরকার স্মৃতির পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখছিলেন কল্পনায়...।প্রিয়তমা আমাতুল্লাহর সাথে জিবনের কত রকম স্বপ্নই না বুনেছিলেন তিনি!আজ তার মনে পড়ছে জিবনের অতীত থেকে শুরু করে বর্তমানে ঘটে যাওয়া একেকটি অধ্যায় কিভাবে তিনি সবর করে পার করেছেন। দুনিয়াটা কতই না ক্ষণস্থায়ী! হাটিহাটি পা পা করে শুরু হয় মানুষের জীবন তারপর শৈশব থেকে কৈশোর,যৌবন পার করে মানুষ উপনীত হয় বৃদ্ধতে।আজ এমন এক জোছনা ভরা সুন্দর রাতে পাশে নেই তার প্রিয়তমা আমাতুল্লাহ!বিয়ের ৯ বছর পর এই তুচ্ছ দুনিয়া ছেড়ে সে চলে গিয়েছে আখিরাতের প্রথম ধাপ কবরে।আর আব্দুল্লাহ সাহেবের জন্য রেখে গেছেন তাদের সন্তান মুহাম্মাদ ও মুবাসশিরা কে।আজ তারাও শৈশব পার করে যৌবনে এসে পৌছেছে।আর এখন আব্দুল্লাহ সাহেব বার্ধক্যের নানা ব্যাধির ভারে জীবনের শেষ সময়ে এসে হাসপাতালের এক বিছানায় শুয়ে নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আমাতুল্লাহ চলে যাওয়ার আগের দিন রাতে খুব মন খারাপ ছিল আমাতুল্লাহর।মুবাসশিরা তখনো পৃথিবীতে আসেনি তবে তার আগমনের সময় প্রায়ই হয়ে এসেছিল। ৭ বছর বয়সী মুহাম্মদকে ঘুম পাড়িয়ে সে বারান্দায় আমার কাছে এলো।সেদিন তাকে খুব মায়াবী লাগছিল।হটাৎ দেখি সে অশ্রুভেজা চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব আর তখনই সে বলতে লাগলো," আমি যদি মারা যাই তবে আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করবেন এবং ভাববেন এটা আল্লাহর তরফ হতে পরিক্ষা।(৬) আমাদের দুনিয়ায় বোনা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই যদি আমার মৃত্যু হয় তবে আমায় ক্ষমা করে দিবেন। সে স্বপ্নগুলো নাহয় জান্নাতেই পূরণ হবে! দুজনের মধ্যে যদি আমি সবার আগে মারা যাই তাহলে মুহাম্মদ ও আমাদের অনাগত সন্তানের খেয়াল রাখবেন। তাদের দ্বীনদার সন্তান বানিয়ে বড় করবেন।আর আমার জন্য কখনই কষ্ট পাবেন না, পারলে দুআ করবেন। আমি জান্নাতী হলে জান্নাতে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকব,কেমন?"একথা বলে এক মিশ্র আবেগে অশ্রুভেজা চোখেই মুচকি হেসে কোনরকম নিজেকে আড়াল করে ওখান থেকে চলে গিয়েছিল সে।তার চোখ যে অশ্রুসিক্ত ছিল তা সে আমার থেকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও প্রথম থেকেই আমি তা লক্ষ্য করেছিলাম।কেন জানিনা তার মায়াবী চেহারা দেখে সেদিন খুব দুআ করেছিলাম আমাদের ও আমাদের সন্তানদের জন্য।

কিন্তু...ঠিক পরের দিনই ছোট্ট মুবাসশিরাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার আমাতুল্লাহ মারা যায়। একথা ভাবতেই আব্দুল্লাহ সাহেবের বুকটা ফেঁটে যেতে চাইলো। চোখ দিয়ে অজস্র ধারায় অশ্রু টপটপ করে গড়িয়ে পড়তে লাগলো! আমাতুল্লাহর কথা মনে পড়লেই সিজদায় লুটিয়ে পড়ে কান্না করে দুআ করেন সবসময় আব্দুল্লাহ সাহেব। সেদিন তার বলে যাওয়া কথাগুলো যেন আজও তার কানে ভেসে আসে! আবারো মনে মনে ভাবতে থাকেন আব্দুল্লাহ সাহেব...হয়তো আমি তার কথা রাখতে পেরেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক সংগ্রাম আর সবর করে আমার সন্তানদের দ্বীনদার(৭) বানিয়ে একা একাই বড় করেছি।সবসময় আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করেছি। এখন আমার দায়িত্ব শেষ। জানিনা আল্লাহর কাছে কতটুকু প্রিয় হতে পেরেছি। জানিনা আমাতুল্লাহ আর আমি পরকালে একসাথে জান্নাতে থাকতে পারব কিনা। জানিনা আমাতুল্লাহ তার বারযাখ জীবনে কেমন আছে, জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে ভাগ্যবতী হতে পেরেছে কিনা।

কত জানা-অজানা পাপ হয়তো জমে আছে আমার আমলনামায়। মাঝে মাঝে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে পাপী ব্যাক্তি মনে হয়। জেনে না জেনে কত ধরনের পাপ যে আমরা করেই যাচ্ছি তার দিকে আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই! আমরা কেবলই ছুটে যাচ্ছি এ মিছে দুনিয়ার পিছে! আজকাল এ জাহেলিয়াত সমাজে পাপের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে অনেকে তো কিছু পাপকে পাপ হিসেবেই দেখেনা। দেখে আধুনিকতা ও সংস্কৃতি হিসেবে! গীবত,মিথ্যা বলা,গালি দেওয়া,যিনা,বাদ্যযন্ত্র যুক্ত গান-বাজনা শোনা,বিধর্মীদের সংস্কৃতির অনুসরণ,সুদ,ঘুষ ইত্যাদি আরো নানা হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ(৮)তো আমাদের "Daily Routine" হয়ে উঠেছে! আজকাল এমন কোনো মজলিস পাওয়া দুস্কর যেখানে গীবত(৯) নেই! এ সমাজে এগুলো এড়িয়ে দ্বীন পালনে অটল থাকা জলন্ত কয়লা হাতে রাখার মত কঠিন(১০)হলেও মুমিন ব্যাক্তি ঠিকই এগুলোকে উপেক্ষা করে তার ঈমানের শক্তিতে দ্বীন পালনে অটল থাকতে পারবে। দ্বীন পালনে বাধা আসলে সবর করতে হবে।(১১) আমি তা পেরেছি কিনা জানিনা তবে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। আল্লাহু আলম।

ভয় হয়! সংশয় হয়! যদি আমার ঈমানী মৃত্যু না হয়! যদি আল্লাহ আমার কোনো জানা কিংবা অজানা পাপের কারণে আমার উপর নারাজ হয়ে থাকেন! তাহলে তো আমি জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবো!আমি যতই আমল করি না কেন আমার দয়াময় রব্বের অনুগ্রহ ছাড়া তো জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব!(১৩) তাহলে কি আমি আমার আমাতুল্লাহর সাথে জান্নাতে যেতে পারবো না?! কিন্তু.. কিন্তু আল্লাহ যে আমাকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন!(১২)তিনি তো অসীম দয়ালু। তিনি ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। দয়াময় রব্ব আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি অবশ্যই আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না ইন শা আল্লাহ।
"আল্লাহুম্মাগফিরলি! হে আল্লাহ,আমায় ক্ষমা করুন!"

আশা এবং নিরাশার মধ্যবর্তী এ কোন গোলকধাঁধায় ফেঁসে গিয়েছি আমি!
হে আল্লাহ,আমি যে আমার আমাতুল্লাহর সাথে জান্নাতে যেতে চাই! আমার মহান রব্বকে ভালোবেসে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। আমি আল্লাহ ও রাসুলের(সা.) পরে যে আমার প্রিয়তমা আমাতুল্লাহকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি! আমাদের মধ্যে এ ভালোবাসা যে স্বয়ং আল্লাহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এটা যে রব্বের পক্ষ হতে দেওয়া এক প্রশান্তিময় ভালোবাসা!আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসা কত যে মধুর তা কেবল একজন আল্লাহপ্রেমীর দ্বারাই বোঝা সম্ভব!(১৪)

রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে হঠাৎ আব্দুল্লাহ সাহেবের ভাবনার ছেদ ঘটে! বৃষ্টি তার খুব প্রিয়। তার স্ত্রী আমাতুল্লাহর সাথে কত যে বৃষ্টিতে ভেজার সুন্নাহ পালন হয়েছে তার!(১৫) বৃষ্টি এলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত আমাতুল্লাহ।প্রায়ই তারা দুজনে ছাদে গিয়ে বৃষ্টিবিলাস করতেন আর একে অপরের জন্য গোপনে দুআ করতেন কারণ বৃষ্টি যে তৎক্ষনাৎ মহান রব্বের পক্ষ হতে আসে।(১৬)এসময় দুআও কবুল হয়।(১৭) আমাতুল্লাহ যাওয়ার পর একাই বৃষ্টিবিলাস করে আসছেন আব্দুল্লাহ সাহেব। আজও তিনি প্রিয়তমার জন্য দুআ করে যান গোপনে। কিন্তু হাসপাতালে শয্যাশায়ী হওয়ায় আজ তার বৃষ্টিতে ভেজা হলো না। তবে আব্দুল্লাহ সাহেব দমবার পাত্র নন। দুআ করার সুযোগটা তিনি হাতছাড়া না করে রব্বের নিকট একটি দুআ করে বসেন-
"হে আমার রব্ব! দয়া করে আমাকে ঈমানী মৃত্যু দান করবেন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ও আমার আমাতুল্লাহকে জান্নাতী হিসেবে কবুল করুন! আমি এবং আমার পরিবার যেন অনন্তকাল জান্নাতে থাকতে পারি! আমিন..।"

দুআটি করতে করতেই হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন তার সামনে কে যেন এগিয়ে আসছে তার দিকে! তাকে দেখেই কেন যেন আব্দুল্লাহ সাহেবের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো একটি সুস্পষ্ট বাক্য!তার দুআ কি তবে এক্ষুণিই কবুল হতে যাচ্ছে? বাক্যটি পড়ার পর আব্দুল্লাহ সাহেবের চোখ বন্ধ হয়ে এলো।এক মুহূর্তের জন্য মনে পড়ে গেল তার জীবনের সকল অধ্যায়!
অতঃপর,নিরব নিথর দেহটি পড়ে রইলো হাসপাতালের বিছানার এক কোণে!মুখটি তার হাস্যোজ্জ্বল!হয়তো তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তার রব্ব,তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন! মালাকুল মউত হয়তো জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে তার রুহুটাকে দেহ থেকে আলাদা করে জান্নাতে অপেক্ষারত তার প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনী আমাতুল্লাহর কাছে নিয়ে যাচ্ছে!তার জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে! আর সে যে বাক্যটি উচ্চারণ করছিল;সেটা মুমিনের চিরচেনা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্যঃ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)......।"❤️

গল্পের নামঃ মুমিনের শেষ ঠিকানা।
লেখাঃনাবিলা ইয়াসমিন।

🌸রেফারেন্স সমুহঃ
(১) অল্পতে তুষ্ট থাকাঃ-ইবনে মাজাহঃ ৪১৩৮
(২)বায়হাকী,৫৪৮৬
(৩)কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ সম্পর্কিত আয়াতঃ (৩:১০২), (৩:১৩২), (৩:১৭২),(৪:৫৯)
৪)আল্লাহর উপর ভরসাঃ (৩:১৫৯), (১৪:১৯), (২৫:৫৮), (৮:২), (৬৫:৩), (৩:১৬০)
(৫)সুরা আলে ইমরানঃ ১৪৬
(৬)আল্লাহর পরিক্ষা ও সবর সম্পর্কেঃ ২:১৫৫
(৭)মুসলিমঃ১৬৩১
(৮)সুরা নিসাঃ৩১
(৯) গীবতঃ মুসলিম ২৫৮৯,আবু দাউদ৪৮৭৪,৪৮৭৫,৪৮৭৮,৪৮৮০
(১০)তিরমিযি:২২৬০
(১১)কুরআন ৩:১৮৬
(১২)সুরা বাকারাহঃ২১৪,আলে ইমরানঃ১৩৯,আল জুমারঃ৫৩,কুরআন ৩৯:৫৩,১২:৮৭
(১৩)আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে যাওয়া অসম্ভবঃসহিহ মুসলিমঃ ৬৮৫২
(১৪) আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসাঃ মুসলিম২৪২৭,মিশকাত হা/৫০০৬,বুখারী ৬৬০,১৪২৩,৬৮০৬
(১৫)মুসলিম ৮৯৮
(১৬)মুসলিমঃ৮৯৮
(১৭)আবু দাউদঃ২৫৪০

আসসালামু আলাইকুম,
জাযাকুমুল্লাহ খায়ের।

#জাগরণএক্সক্লুসিভ
#আমারকলমেজাগরণ২

29/08/2024


28/08/2024

১.
খুব সন্তর্পণে ট্রেনের কেবিনে এসে বসলো মুনতাহা। কালো বোরখার নিচের অংশে দৌড়াতে গিয়ে কাদা লেগে গেছে। কেবিনের স্বচ্ছ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো, বর্ষাস্নাত ভূমি তখনও এক শান্ত পরিবেশ ধারণ করে আছে। মানুষ নেই কোথাও, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘরে বসে সু-সম্পর্কের চাষাবাদ করছে হয়তোবা তারা। সন্তানদের আবদারে কারো কারো ঘরে ভাজা-পোড়ার আয়োজনও শুরু হতে পারে। খিঁচুড়ী, মুরগী ভূনা, বেগুন ভাজা .... ভাবতে ভাবতে শিরশির করে ওঠে মুনতাহার পুরো শরীর। এতোটা পথ পাগলের মতো দৌড়েছে শুধু। আর বৃষ্টিতে ভিজে, কাদাযুক্ত পথ মাড়াতে গিয়ে জুতাও হারিয়েছে। অজু করবার সময় পায়ে অনেক বড় কাটা দাগ দেখে বুঝলো, রক্তও ঝরেছে বেশ। আর এখন হুট করেই এলোপাথাড়ী জ্বর এসে দিশেহারা করে দিলো ওকে ...।

খালাতো বোন মারিয়াম খুব ঠান্ডা মাথায় ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে মুনতাহাকে। ব্যাগের ভেতরে খাবার, ঔষধ থাকবে এরকম চিন্তাও করেনি। কারণ আসবার আগে মুনতাহা নিজের রেগুলার ঔষধগুলো তোলেনি। কিন্তু ব্যাগ খুলে দেখলো, ছোট ছোট পোটলা করা। সবটাতেই আলাদা করে লিখে দেয়া - ঔষধের কৌটা, নাস্তা, চায়ের ফ্লাক্স, গরম পানির ফ্লাক্স, পানির বোতল, রাতের খাবার, সকালের নাস্তার হট-পট। মুনতাহা অঝোরে কেঁদে ফেলে একটা জিনিস দেখে, পাশেই সযত্নে সুগন্ধিযুক্ত স্মৃতির পশরা সাজানো মারিয়ামের তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া ছুরিটি। গোলাপী তোয়ালে, কোথাও কোথাও ছোপ-ছোপ রক্তে ভিজে গেছে।

২.
মুনতাহা এশার নামাজে হাউ-মাউ করে কাঁদে। পাগলের মতো করে কাঁদতে থাকে, বিগত রাতটির জন্য ক্ষমা, অসুস্থতা আর ভয়াবহ একাকী এই জার্নি নিয়ে কাঁদে, মারিয়ামের অবস্থার জন্য কাঁদে। ট্রেনের টি টি এসে টিকিট দেখে গেছেন। মুনতাহা ফিরছে ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে। মারিয়ামের বাড়ি, কলকাতা শহরে। ছিমছাম, ছোট্ট মফস্বলের মতো, নির্বিঘ্ন এলাকায়। তিনজন সন্তান আর স্বামী নিয়ে মারিয়ামের সংসার। বিগত পনেরো দিন আগে মুনতাহা চিকিৎসার জন্য মামার সাথে ওর বাসায় গিয়ে উঠেছিলো। মারিয়ামের হাজবেন্ড ব্যাবসায়িক কাজে, দুইমাসের জন্য সিংগাপুর চলে যাওয়ায়, মুনতাহাকে মারিয়ামের বাসায় রেখে মামা দেশে ফেরেন। খুব কাছের কাজিন (খালাতো) ওরা, বন্ধুর মতো সম্পর্ক। মারিয়াম মামাকে, আর মুনতাহার বাবা-মাকে আশ্বাস দিয়েছিলো যে, ডাক্তার সে নিজেই দেখাতে পারবে। মুনতাহা একটু পেছনে ফেরে। যেদিন মামা দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিতে নিতে বললেন,
- "মারিয়াম, ছেলে-মেয়েদেরকে রেখে ডাক্তারের কাছে ছোটা-ছুটি কঠিন হয়ে যাবে না মা?"
মারিয়াম আশ্বস্ত করে বলল,
- "না মামা, আমার বড় মেয়েটাতো আলহামদুলিল্লাহ ক্লাস এইটে উঠলো, ওর কাছেই ছোটদেরকে রেখে যেতে পারবো। চিন্তা করবেন না। অনেক বছর পর মুনতাহার সাথে দেখা হলো, একটু আড্ডা, গল্পও জমে আছে আমাদের ...।
আর আপনাদের জামাই তো দেশের বাইরেই বেশিরভাগ সময় থাকেন, বাজার সহ যাবতীয় কাজ ওদেরকে বাসায় রেখে গিয়েই করি।"

মুনতাহা হেসেছিলো সেদিন। নিখাঁদ বন্ধুত্বের মতো, বোনের মতো এই আবদার, সম্পর্কের হক্ব মেটানোর জন্য এই চাওয়া কতটা পরিতৃপ্তির হতে পারে। মুনতাহা জটিল অসুস্থতা বহন করে যাচ্ছে জন্ম থেকেই। হার্টের ছিদ্র মাঝে মাঝেই শ্বাসকষ্টের তীব্রতায় হারিয়ে দেয় এক যন্ত্রণার জগতে। সেটার শেষ চিকিৎসা নিতে এখানে এসেছে সে।

৩.
খুব সুন্দর সময় কাটছে মুনতাহার। মারিয়াম আর ওর বাচ্চাদেরকে নিয়ে আনন্দে হৈ-হুল্লোড়ে, খানিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ধারণ করে ফেলা মারিয়াম আর ওর সন্তানদেরকে ইসলামের সৌন্দর্য পৌঁছে দিতেও কার্পণ্য করছে না সে। ওরাও একটু একটু করে খালামণির কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করে যায় অবলীলায় ....।

কফি-শপ, চকলেট-বার, পার্কে যাওয়া, এসবও চলছে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি। মুনতাহা রাত এলে, নির্জনে রব্বে কারীমের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়। বিয়ে হয়ে গেলে মুনতাহারও সন্তান থাকতো হয়তো। যখনই হার্টের এই সমস্যার কথা পাত্রপক্ষ জেনেছে, কেউ আর এগোয়নি। এতে কষ্ট নেই ওর। আল্লাহ্ যেভাবে রেখেছেন, তাতেই ভালো কিছু আছে বলে বিশ্বাস করে সে।

এক ভোরে গল্পের পশরা নিয়ে বসেছে মুনতাহা ও মারিয়াম। চায়ের মগ হাতে বেলকনির সবুজাভ ও ফুলেল বাগানে বসে কথা বলছিলো।
মারিয়াম হেসে হেসে বলল,
-"তোমাকে এতো ছোটবেলা থেকেই ছেলে-পেলেগুলো টিজ করতো! আমার মনে হলেই হাসি পায়।"
মুনতাহাও হাসে,
-"আমার খুব রাগ হতো, এখনও রাগ উঠে যায় মাঝে। তুমি জানোনা, তোমার বিয়ের পরপর, ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। বিরক্তের চরম পর্যায় যখন, তখন থেকে ব্যাগে চাকু রাখতাম। সেটা এখনো রাখি আমি।"
মারিয়াম অবাক কন্ঠে,
-"এখনতো পুরোই পর্দা করে চলো, টিজিং কমেনি?"
-"কমেছে, আলহামদুলিল্লাহ, তাও রাখি। এখনো আছে জানো!"
অনেক কথা আর হাসির রোল পড়ে যায় স্মৃতিচারণের মাধ্যমে। রান্নাঘরে দু'জন মিলেই নাস্তাও বানিয়ে নেয়।

৪.
রাতে ডিনার শেষে শুয়ে পড়ে মুনতাহা, শরীরও ঠিক নেই আজ। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় কম ডোজের স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়েছিলো। আনুমানিক রাত ২:৩০ মিনিটে ঘরে কারো ঢোকার শব্দ পায়, ঘোরলাগা অবস্থার মধ্যেও। ঘুমের মধ্যে হয়তো ভুল ভাবছে এরকম চিন্তা করে পাশ ফিরে আবার ঘুমাতে যায়। .. কিন্তু না খুব কাছাকাছি কারো উপস্থিতি অনুভব করে আতঙ্কে বলল,
- "কে? মারিয়াম? এভাবে ভয় দেখাচ্ছো কেন?"

হঠাৎ মুনতাহার মুখ চেপে ধরে কোন পুরুষ, ওর সমস্ত ঘুম এক নিমিষেই পালিয়ে যায় .... বালিশের নিচে রাখা ছুরিটি হাতে তুলে নেয় মুনতাহা। না পারছে চিৎকার করতে, না পারছে হাত ঘুরিয়ে ছুরিটি ব্যবহার করতে ...
মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকতে থাকে। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে সরাসরি গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়ে শক্ত কন্ঠে "আল্লাহু আকবার" বলে ওঠে! আলো জ্বলে ওঠে খানিক পরেই। ভয় জড়িত মারিয়ামের দৃষ্টি, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা স্বামীর শরীরে নিবদ্ধ হয়! মুনতাহা এতো রক্ত আর পরিস্থিতি দেখে ভীত হয়ে পড়ে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ফজরের সুললিত আযান এসে, সুমধুর তান ছড়িয়ে যাচ্ছে মারিয়ামের কানে। মুনতাহাকে অন্য একটি রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। ফিরে এসে খুন হওয়া স্বামীকে অনেক কষ্টে খাটে উঠায়। শরীরের রক্ত মুছে দেয়। এসির শীতলতা শেষ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। মোটা কম্বলে জড়িয়ে দেয়। মেঝের রক্তগুলো মুছে নেয়। গোসল সেরে এসে লাশের পাশেই কনকনে শীতার্ত অনুভূতি নিয়ে আবদ্ধ ঘরে একবার অশ্রুমিশ্রিত কন্ঠে চিৎকার করে বলে ওঠে,
- "দিনের এই প্রথমভাগে, পবিত্র এই সময়ে, আজ আমি তৃপ্তিভরে নামাজ আদায় করবো হে প্রভূ! আপনার শাহী দরবারে সিজদাহে অবনত হয়ে যাবো হে রব্ব!"

৫.
মুনতাহার জ্ঞান ফিরে আসে, ফজরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে যাচ্ছে এমন মুহুর্তে। কম্পিত শরীরে উঠতে না পেরে ওখানেই আদায় করে নেয়। মারিয়ামকে কিছু বলতে চায় সে। মারিয়াম শান্ত হয়ে মুনতাহার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল,

-"তোমার কিছু বলতে হবে না। আমি বলি তোমাকে, এ যাবৎ যত তরুণী আত্মীয়া আমার বাসায় এসেছে, পল্লবের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অনেককেই সে রেইপ করেছে। আর কাউকে বললে কোন না কোনোভাবে খুন করবে বলে হুমকী দিয়ে রেখেছিলো। কেউ মুখ খোলেনি, এই বাড়ি মুখিও হয়নি আর কখনো। আমরা কলকাতার বিশ-পঁচিশ পরিবারের আত্মীয়ের বাসায় যাবার আমন্ত্রণ পাই না। ভয়েই তারা দুরে থাকেন। শুধু যে নারী কেন্দ্রিক সমস্যা, তা কিন্তু নয়। মুরুব্বি আত্মীয়দের সাথে আচরণ ও খারাপ। আমাকে, বাচ্চাদেরকে নামাজ পড়তে দিতো না। নাস্তিকতা ওর মগজে। আমার মোবাইল সম্পুর্ন রুপে ট্র্যাকিং করা। কোথাও কার ও সাথে কথা বললে, সব জানে। আমাকে বলেছিলো কাউকে কিছু বললে বাচ্চাদেরকে হত্যা করবে। আমি ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম একদিন, বাচ্চাদেরকে নিয়ে চলে যাবো দুরে, সেদিন আরোও হিংস্র হয়ে উঠেছিলো। খুব মারতো আমাকে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে মুখ বেঁধে পিটাতো! বাচ্চারা মাঝে মাঝেই টের পেয়ে নিজেরা নিজেরা জড়াজড়ি করে কাঁদতো। আমি ফোনে কাউকে তোমার আসার ব্যাপারে বলিনি, জেনে যাবে সেই ভয়ে। আর ভেবেছিলাম যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ বিজনেস ট্যুর, সেরকম অবস্থায় তো ওসব বাদ দিয়ে আসবে না। কিন্তু ছোট মেয়েটা সম্ভবত মাকে ফোনে তোমার ব্যাপারে বলেছিল, আমার যতটুকু মনে হচ্ছে। এই লোক যে এসেছে আমি জানতাম না সত্যিই। ভেতর থেকে লক করে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম মেইন গেইট।ওর কাছে তো চাবীর কপি আছে। আর দেখো ......

মুনতাহা তুমি আমার যে উপকারটা করলে বলে বুঝাতে পারবো না। আমি ঐ ঘরের জানালার গ্লাস আর শিক হ্যান্ড গ্লাভস লাগিয়ে ভেঙে রেখেছি, সবাই যেন বোঝে শত্রুতাজনিত হামলা। আমি তোমার জন্য অনলাইনে একটা কেবিনের টিকিট কেটে দিয়েছি,অন্য মোবাইলের মাধ্যমে। এটা কিছুদিন আগে গোপনে কিনেছিলাম। এই নাও ম্যাপ, এই অনুযায়ী চলে যাবে। যাত্রাপথে গ্রাম সামনে আসবে একটা, ঐ গ্রাম ধরে এগিয়ে যেও। কারণ শহর দিয়ে গেলে একটু পরেই তোমাকে সন্দেহজনক ভাবে ধরে ফেলবে। এই শহরে এই লোকের অনেক প্রভাব।

মুনতাহা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শান্ত, নির্লিপ্ত মারিয়ামের দিকে, কম্পিত কন্ঠে বলল - আমি তাহলে একজনকে খুন করে চারজন মানুষকে জীবন্ত লাশ থেকে বাঁচিয়ে তুলেছি? ভুল করিনি?আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেবেন আমাকে?

মারিয়াম এবার হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুনতাহাকে। একদম ঠিক বলেছো একদম ঠিক। যাও, চলে যাও, দেরী করো না। এসব মিটে গেলে এসো আবার। বাকী চিকিৎসা, ঘোরাঘুরি তখন হবে। আপাতত বাড়ীর কাউকে বলিও না। আমি অন্যভাবে ম্যানেজ করে নেবো পরে। বললে বাবা-মা আসতে চাইবেন। তোমার হুট করে চলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, আর তুমি এখানে থাকলে পুলিশের জেরার মুখে সত্য গোপন রাখতে পারবে না।

৬.
ট্রেনের কামরায় এসবই বারবার মনে পড়ে যাওয়ায় অনবরত কেঁদে যাচ্ছে মুনতাহা। খাবার মুখে ওঠে না ওর। বেশ কয়েকটা গ্রাম, ভ্যানে করে পেরুতে পেরুতে সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। পরে আর কোনো বাহন পায়নি। ট্রেনের সময়ও খুব কম ছিলো, নিরুপায় হয়ে দৌড়াতে হয়েছে। রেল-লাইন ধরে দৌড়েছে।

জীবনে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হবে ভাবেইনি মুনতাহা! মারিয়াম আর বাচ্চাগুলোর এতোদিনের ভয়াবহ জীবন-যাপন অন্তরকে মুষড়ে দিচ্ছে অনায়াসে। এশার নামাজ আদায় করে নেয় সে। প্রচন্ড মাথা ধরেছে, শ্বাসকষ্ট উঠে যাচ্ছে আবার, জ্বরও বেড়েছে বেশ। বাংলাদেশে পৌঁছাতে এখনো বেশ কিছু সময় বাকী। একটু ফ্ল্যাক্স থেকে চা ঢেলে নেয়, সাথে মারিয়ামের বানিয়ে দেয়া রুটি। এরপর ঔষধ গুলো খেয়ে নেয়। খুব জানতে ইচ্ছে করে মারিয়াম কিভাবে সব ম্যানেজ করলো, কিন্তু ফোন করা যাবে না। ফোন করলে ও বিপদে পড়ে যাবে। মারিয়াম পরে নিজেই জানাবে বলে কথা দিয়েছে!

রাত্রীর অন্ধকার পেরিয়ে একটি ট্রেন স-শব্দে এগিয়ে চলেছে যাত্রীদেরকে সাথে নিয়ে। প্রত্যেককে গন্তব্যে পৌঁছে দেবার দায় নিয়ে যেন ছুটে চলেছে দুর্বার গতিবেগে! কেবিনে বেহুশ ঘুমে আচ্ছন্ন মুনতাহা, আরশে আযীমের মহান স্বত্তার কাছে সবটুকু সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত যেন!

(সমাজের আনাচে-কানাচে গোপন থাকা এই গল্পগুলো আমরা হয়তো খুব কম জানি, কিন্তু এমনও ঘটে কারো কারো জীবনে। )

গল্পের নামঃ লুকায়িত গল্প

লেখকের নামঃ নাসরিন সুলতানা



#আমারকলমেজাগরণ২

#জাগরণএক্সক্লুসিভ

23/10/2023



Send a message to learn more

30/04/2023

বাংলা একাডেমির তাদের কার্যক্রম দেখানোর জন্যে এই যে কিছুদিন পর পর এইটা ঐটা বানানে হুদাই হাত দেয় তা না করে কিছু সমর্থক শব্দ / এক কথায় প্রকাশ তাদের ভান্ডারে সংযুক্ত করলেই পারে। এই যেমন—

প্রতিবন্ধী= টিকটকার
টোকাই= টিকটকার
স্বাধীনতার-অপশক্তি / দেশদ্রোহী= বিএনপি, জামায়াত
ফ্রি খাদ্য সন্ধানকারী= ফুড ব্লগার
দেশি খনতেন্ত খ্রিয়েথর= আবর্জনা
বি-বাড়িয়া= (না এইটা নিয়ে বলবো না...)
নির্লজ্জ= বাফুফে সভাপতি
ফ্রড= বিদ্যানন্দ
টাকার বিনিময়ে কাজ করি= ইমো ফ্রিল্যান্সার
দেশ ও জাতির বোঝা= কোটাধারী
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব= সরকারি চাকুরিজীবী
টক্সিক= ফেমিনিস্ট, বিটিএস আর্মি, দেশি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফ্যান...
দেশপ্রেমিক= লীগ সমর্থনকারী
কলুর বলদ= প্রাইভেট কোম্পানির নিম্নপদের চাকুরিজীবী

20/04/2023

হে আল্লাহ, আমাদেরকে শেষ সময়ে ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। রমযানের সুবর্ণ সুযোগের যথোপযুক্ত ব্যবহার না করার গাফলতি মার্জনা করুন। জীবনে বার বার রমযানের এই মহা দৌলত পাওয়া ও তার সদ্ব্যবহারের তাওফীক দান করুন।

©Ahmadullah

❑ লাইলাতুল ক্বদর:লাইলাতুল ক্বদর কোন দিনে, এটা আল্লাহ আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে জানান নেই। তবে বিভিন্ন হাদীস সমূহ একত্রিত করে ...
04/04/2023

❑ লাইলাতুল ক্বদর:

লাইলাতুল ক্বদর কোন দিনে, এটা আল্লাহ আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে জানান নেই। তবে বিভিন্ন হাদীস সমূহ একত্রিত করে এতোটুকু বলা যায়ঃ লাইলাতুল ক্বদর রমযান মাসের শেষ দশ দিনের যেকোন এক বেজোড় রাত্রিতে রয়েছে। অর্থাৎ, রমযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখ রাতে। এর মাঝে কোন কোন আলেম মনে করেন, এটা ২৭ তারিখের রাতে রয়েছে। কিন্তু এটার উপরে নির্ভর করা উচিত নয়। ২৭ তারিখে লাইলাতুল ক্বদর আশা করে সেইদিন ইবাদতের ব্যপারে বেশি জোর দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ অনুযায়ী রমযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে - এই সবগুলো রাতেই লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করতে হবে।

❑ লাইলাতুল ক্বদরের রাতটি চেনার কিছু আলামত হাদীসে পাওয়া যায়। তা নিন্মরুপঃ

(১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
(২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
(৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
(৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
(৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
(৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
(৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।

[সহীহ ইবনু খুযাইমাহঃ ২১৯০, সহীহ বুখারীঃ ২০২১, সহীহ মুসলিমঃ ৭৬২]

❑ লাইলাতুল ক্বদরে যেই আমলগুলো করা যেতে পারেঃ

(১) নামাযঃ দুই রাকাত, দুই রাকাত করে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের নামায পড়বেন। এই নামাযে সুরা ক্বদর বা সুরা ইখলাস এতোবার পড়তে হবে, এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অন্য যেকোনো নফল নামাযের মতোই দুই রাকাত নফল নামায পড়বেন। চেষ্টা করবেন দীর্ঘ কিরাতে নামায লম্বা করার জন্য। বড় সুরা না পারলে এক রাকাতে ছোট সুরা ২-৩টা পড়ে বড় করা যাবে।

নিচের আমলগুলো ঋতুবতী নারীসহ সকলেই করতে পারবেনঃ

(২) কুরআন তেলাওয়াত। আরবী কুরআন স্পর্শ না করে ঋতুবতী নারীরা মুখস্থ অথবা বাংলা অর্থ দেওয়া আছে এমন কুরআন থেকে, মোবাইল থেকে বা হাতে রুমাল বা কাপড় দিয়ে স্পর্শ করে কুরআন পড়তে পড়তে পারবে, আলেমদের এই মতটাই সঠিক। তবে সন্দেহের কারণে কেউ কুরআন তেলাওয়াত করতে না করতে চাইলে, অথবা যেই সমস্ত আলেম ঋতুবতী নারীদের কুরআন তেলাওয়াত হারাম মনে করেন, এটার সাথে একমত হলে, কুরআনের তাফসীর, হাদীস, দ্বীনি অন্যান্য বই-পুস্তক পড়তে পারেন।

(৩) তওবাহঃ সারা জীবনের সমস্ত গুনাহর জন্য কান্নাকাটি করে তওবাহ করা ও মাফ চাওয়া। বাংলা বা আরবী যেকোনো ভাষায়, অতীতের ভুলের জন্য লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে ভবিষ্যতে আর না করার সংকল্প নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আরবীতে করতে চাইলে - আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি – হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, এতোটুকু পড়ে বা কুরআন-হাদীসের অন্য দুয়া দিয়ে তওবাহ করা যাবে।

(৪) দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যানের জন্য দুয়া করা। নিজের জন্য, মাতা পিতা বা ভাই বোন, স্ত্রী-সন্তান, মযলুম, জীবিত ও মৃত সমস্ত মুসলমানদের জন্য দুয়া করতে হবে।

(৫) জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়ার জন্য দুয়া করতে হবে।

(৬) যিকির-আযকারঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ১০০বার, ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহাদাহু লা শারীকালাহু...... ১০ বার বা ১০০ বার করে সহ, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। আরো দুয়া পড়ার জন্য হিসনুল মুসলিম দেখুন। মুখস্থ না পারলে বই খুলে পড়তে পারবেন। আরবী দুয়াগুলো না পারলে বাংলাতেই পড়ুন।

(৭) দুরুদঃ দুরুদের ইব্রাহীম বা নামাযে যেই দুরুদ পড়া হয় সেটা পড়াই সবচাইতে বেশি সওয়াব। আর দুরুদের হাজারী, লাখী, জামিল, মাহী, দুরুদে আকবর এইরকম যত্তগুলো দুরুদ দেওয়া আছে ওযীফার বেদাতী কিতাবে – এইসবগুলো দুরুদ হচ্ছে বানোয়াট বেদাতী দুরুদ, এর ফযীলত যা দেওয়া আছে সমস্তটাই হচ্ছে ধোঁকা। এইগুলো পড়া বেদাত।

(৮) সাধ্যমতো কিছু দান-সাদাকাহ করতে পারেন। দান ছোট হোক, কোনটাই কম নয়, এমনকি হাদীস শুকনো একটা খেজুর দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্যে চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।

(৯) জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্যে ফকীর মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটা ইবাদত, সুতরাং শবে কদরের রাতে সম্ভব হলে গরীবকে খাবার দিতে পারেন।

(১০) রাতের বেলা সুরা ইখলার তেলাওয়াত করা সুন্নত। সুতরাং শবে কদরের রাত্রিগুলোতে সুরা ইখলাস পড়তে পারেন। সুরা ইখলাস তিন বার পড়লে একবার কুরান খতম দেওয়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। সুরা ইখলাস দশ বার পড়লে আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটা প্রাসাদ নির্মান করবেন (মুসনাদে আহমাদ)

(১১) প্রতিদিন রাতের বেলা সুরা মুলক ও সুরা সিজদাহ পড়া সুন্নত। সুতরাং আপনারা কুরান তেলাওয়াতের সময় এই দুইটি সুরা পড়ে নেবেন।

(১২) এছাড়া ওয়াক্ত মতো নামাযগুলো সুন্দরভাবে আদায় করবেন, সুন্নত নামায সহকারে। ফরয নামাযের পরে যিকিরগুলো করবেন, নামায দীর্ঘ ও সুন্দর করতে চাইলে রুকু সিজদাহর তাসবীহ বেশি করে পড়বেন, নামাযে বিভিন্ন সময়ে যেই দুয়া আছে সেইগুলো পড়বেন। নামাযে বেশি বেশি দুয়া করবেন।

(১৩) ঘুমানোর পূর্বের যিকির-আযকারগুলো করবেন। আযানের জবাব ও দুয়া পড়বেন।

(১৪) তাহিয়াতুল ওযুর নামায পড়তে পারেন। তওবাহর নামায পড়তে পারেন।

(১৫) আরো যত সুন্নতী যিকির আযকার আছে করতে পারেন।

ফটো কার্টেসী : The Path of Righteousness

Dirección

Ronda De Sant Pere
Barcelona
08010

Teléfono

+8801863351754

Página web

Notificaciones

Sé el primero en enterarse y déjanos enviarle un correo electrónico cuando আল্লাহর পথে দাওয়াত। publique noticias y promociones. Su dirección de correo electrónico no se utilizará para ningún otro fin, y puede darse de baja en cualquier momento.

Contato La Empresa

Enviar un mensaje a আল্লাহর পথে দাওয়াত।:

Videos

Compartir

Categoría