02/17/2024
বিরহের গল্প- সই। বিচ্ছেদের ছোট গল্পঃ-
জানি হয়তো আজ আমি তোমার মন খারাপের কারণ। তবু জেনে রেখো তোমায় ছাড়া জীবনটা বড় শুন্য। কিছু দীর্ঘশ্বাস কষ্ট গুলোকে ভাষা দিতে চেয়েও পারে না। জেনো তোমার জন্মদিন আমি ভুলি নি এতো বছর পরেও। তোমার জন্মদিনে, তোমার জন্য টিউলিপ কিনেছিলাম। কিন্তু কেন জানিনা ফুলটা তোমার উপর ভীষণ অভিমান করেছে। তোমার কাছে যেতে চায়না। আমাকেও যেতে দেয়না। শেষে আমি টিউলিপটাকে তোমার ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখলাম । ফুলেরও অভিমান হয়। শুধু আমার অভিমান হতে নেই।
এই ডাইরীর পাতায় আজীবন বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে ছাড়া। ফুলদানীতে চারবছরের পুরনো শুকনো গোলাপটা ফেলতে গিয়ে হাঁতে কাটা ফুটলো। জানিনা আরো কত স্মৃতি চিহ্ন ছড়িয়ে আছে এই ঘরের আনাচে কানাচে। আজ থেকে কোনোদিন দেখতে হবেনা ভালোবাসার চিহ্ন গোলাপকে। আমি দূরে থেকেও তোমার ভালো চাইবো। ভালো থেকো, আমার অপূর্ণ ভালোবাসা।
হয়তো পৃথিবীতে যে কটা প্রেম হয় তার সমাপ্তিটা বিচ্ছেদেই হয়। কিন্তু আমাদের তো তা হয়নি। ভালো চাকরি ছিলো না বলে আমাদের এক হওয়াটা আটকে যায়নি। মনে আছে তুমি বিজুদাকে বলেছিলে ও লেখা চালিয়ে যাবে সারা জীবন, কারণ আমি চাকরি করে সংসার চালাবো। তুমি চাকুরীও পেলে তবুও আমরা আজ আলাদা।
জানি তাতে কারো কিছু যায় আসে না। এই পৃথিবীর বুকেই বেঁচে থাকবো দুজন দুজনার দীর্ঘশ্বাসে। কিংবা প্রতিহিংসায়। জানি তুমি আমাকে ভীষন ঘৃণা করো কিন্তু কেন সেটা জানা হয়নি? তাই বারবার নিজেকে শেষ করতে গিয়েও শেষ করতে পারি নি।
কাল পয়লা বৈশাখ অনেক বছর পর বাড়িতে আছি। ঘরটা গুছনো হলো , তুমি তো সেই দিন অফিসে যাবে বলে বেড়িয়ে ছিলে, তাই আলমারিতে ভরা তোমার জামা কাপড়, পুঁটলি করে রাখতে বললাম। ভাবলাম এবার সুন্দরবনে ঝড়বাদলা হলে ত্রান পাঠাবো। মা বললো “যেমন আছে তেমনি থাক।“ তোমার বাক্সটা পেলাম, আমার দেওয়া চকলেটের রেপ্যার, ট্রামের টিকিট, তাজমহল এর সামনে থেকে কিনে দেওয়া চাবির রিং,ভাঙা কাঁচের চুড়ি, শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া রজনী গন্ধার মালা, সব যত্ন করে রাখা ছিলো আলমারীতে আমার অগোচরেই ।
তোমার টাকা বাচিঁয়ে কিনে দেয়া টি-শার্টটা ঘোরদোর মোছার জন্য দিয়ে দিলাম, আসলে জানি তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে পারোনি কোন দিনই। নয়তো তুমি আমাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে। লোকজনের সাজানো গল্প শুনে বিশ্বাস করতে না যে, আমি অন্য কারো সাথে সম্পর্ক লিপ্ত হয়েছি। কিন্তু আজ তুমি নেই বহুদিন হয়ে গেলো। কিন্তু ওই বিচ্ছেদকে আজো আমি বিচ্ছেদ মনে করি না।
বিচ্ছেদ কেবল একটি শব্দমাত্র। তুমি যতোই অন্যকারোর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাও। বহুবছর পরেও আজ তুমি নিশ্চয়ই আমার কথা মনে করো। আমি মনে করি না তোমার কথা। কারণ আমি তো তোমাকে ভুলিনি কোনোদিন। তোমাকে অনুভব করি প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাসে। আত্নিক বিচ্ছেদের ঘটনা কভু হয়নি আমার, যা হয়েছে তা শরীরের থেকে শরীরে। আর কিছু টা সময়ের। আমার ভালোবাসায় কোন বিচ্ছেদ নেই। একজীবন কেবল পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা আছে, কাছে না থেকেও তোমার ভালো চাওয়া আছে।
তীব্র স্রোতে নদীর মাঝখানে ডুবন্তপ্রায় মানুষ যেমন সামান্য খরকুটোও সামনে পেলে বাঁচবার আশায় তা আকড়ে ধরতে চায়, আমি সেরকম সম্পর্কটাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলাম। তোমার অফিসের দিদিরা আমার ব্যর্থ চেষ্টাটার নাম দিয়েছিলো আমার চালাকি। বন্ধুরা বলেছে পাগলামি। শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। সবার সব ধারনা হিসেব নিকেষকে ভুল প্রমাণিত করে আমাদের ডিভোর্সের নোটিশটা তুমি পাঠিয়ে দিলে। কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই মুক্তি চেয়েছিলে তুমি, তাই দিয়ে দিলাম একটা সই। শুধু একটা সই যদি এই একটা সই-এই সব শেষ। আমাদের বিয়ের সময় কত্তো ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল তোমাকে, কিন্তু কম ঝমেলায় আমাদের বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে ভাবতে পারিনি।
ঠিক একটা জীবনের জন্ম-মৃত্যুর মতো একটা সম্পর্ক। মৃত্যু যখন হয় তখন কয়েকটা সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায়। কিন্তু একটা মানব শিশুর জীবন আসে অনেকটা সময় ধরে! মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর আলো দেখতে দশ মাস দশ দিন সময়ের প্রয়োজন হয় তার। মৃত্যুর আগে যেমন একটা মানুষ বাঁচবার আকাঙ্ক্ষায় ছটপট করে। আমাদের সংসারটা সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখবার জন্য ঠিক তেমনি চেষ্টা করেছিলাম আমি, কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছি শুধু অপমান। এখন সব বদলে গেছে। বদলাতে চেষ্টা করছি নিজেকে