30/11/2024
আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ হাইস্পীড ট্রেনে করে বেইজিং থেকে গুয়াংজু আসছিলাম। দূরত্ব প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। সাড়ে ৭ ঘন্টার জার্নি।
আমার পাশের সিটে বসেছে একটা চাইনিজ মেয়ে। ট্রেন চলছে দূর্বার গতিতে। হঠাৎ মেয়েটা কি যেন খোজা আরম্ভ করলো। খুজতে খুজতে পুরাই তোলপার। সিট উল্টে, ফ্লোরে শুয়ে খুজতে থাকল। বুঝলাম গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়েছে।
আমাকে প্যাং পং করে কি যেন জিজ্ঞেস করল। চাইনিজরা ইংলিশ জানেনা। একদম ওয়ান টু পর্যন্ত জানে না।
তো মোবাইলে ট্রান্সলেটর ওপেন করে জিজ্ঞেস করলাম কি খুজছো? বলে ইয়ারফোন। মনে মনে গালি দিলাম। ফকিন্নির ফকিন্নি, একটা ইয়ারফোন এভাবে খুঁজতে হয়! আমি সিট ছেড়ে দাড়িয়ে গেলাম, সে খুজছে।
আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি দরজার সামনে পুলিশ দাড়িয়ে আছে। আমাকে প্যং পং করে কি যেন জিজ্ঞেস করছে। ট্রান্সলেটর দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, টিকেট দেখাব? সে বলল না।
অমনি মেয়েটা দেখি দৌড়ে এদিকে আসছে। পুলিশকে বলছে, "ছেড়ে দেন ওসি সাহেব ছেড়ে দেন। ও গরীব হতে পারে, কিন্তু চোর না সে আমার ইয়ারফোন চুরি করেনি। এই যে ইয়ারফোন পেয়েছি।"
ততক্ষনে আমার মেজাজ তুঙ্গে। একটা ইয়ারফোনের জন্য পুলিশকে জানাতে হয়! মানে তোদের দেশেই ইয়ারফোন তৈরি হয়, সারা দুনিয়াতে এক্সপোর্ট করস। মানে সিরিয়াসলি!!!
সিটে গিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। প্রেস্টিজে গভীরে লাগসে বিষয়টা। জীবনের কলঙ্কজনক অধ্যায়।
কিছুক্ষন পর আমাকে ডেকে ফোনটা দেখালো। ট্রান্সলেটরে লিখা, তোমাকে বিব্রত করার জন্য আমি দু:খিত।
যাক কিছুটা রক্ষা।এরপর আমাকে ব্যগ থেকে বিস্কুট টাইপ কিছু একটা দিলো। বলল, এটা আমাদের অঞ্চলের খুবই জনপ্রিয় খাবার। তোমাকে দিলাম।
এবার ঠিক আছে। শান্তি শান্তি লাগছে। ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক, চিরদিনই তুমি যে আমার। যুগে যুগে আমি তোমারই 😛
এরপর দেখি পাশের সিটের চাইনিজ ছেলেটাকেও বিস্কুট দিয়ে ক্ষমা চাইলো। পুলিশ দিয়ে ওই ছেলের বডি পর্যন্ত চেক করিয়েছে। আমি ওয়াশরুমে থাকায় চেক করতে পারেনি। ভাই, আমি ভিনদেশী মানুষ ঠিক আছে, তাই বলে নিজের দেশী ভাইকে চোর ভাববি!
একটু পর ট্রেন থামলো। জাংজুডং স্টেশনে মেয়েটা নেমে গেলো।
চাইনিজরা এমনিতে খুব ভালো। অনেক হেল্পফুল। ভাষা বুঝে না, কিন্তু যথেষ্ট ট্রাই করে। বিরক্ত হয় না।
এবার পাশে বসলো এক কানাডিয়ান ভদ্রলোক। সাথে তার মেয়ে। জীবন গতিময়। ট্রেন ৩৫০ কিমি গতিতে আবার ছুটতে আরম্ভ করল।
ভদ্রলোক চাইনিজ। কিন্তু ২০ বছর আগে দেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিল। কানাডার নাগরিকত্ব নিতে গিয়ে চায়নার নাগরিকত্ব হারিয়েছে। এখন আবার দেশে ফিরে এসে নাগরিকত্ব নেয়ার ট্রাই করছে। কারণ কানাডার অপার স্বাধীনতায় মেয়েকে মানুষ করতে পারছিলো না।
হোমওয়ার্ক না করলে কিছু বলা যায় না। স্কুলে টিচাররা শাসন করে না। তাই চায়নায় ফিরে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।
কানাডায় ব্যাংকার হিসেবে কাজ করতো। এখন চায়নায় ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক।
এই প্রথম কোন চাইনিজের সাথে মন খুলে কথা বললাম। পুরো জার্নিতে অনেক্ষন আড্ডা হলো। কেউ একটু ইংরেজী বলতে পারলেই কেমন আপন আপন লাগে। বাংলাদেশকে ভালোই চিনে।
জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের দেশে হাইস্পীড ট্রেন আছে?
মনে মনে বললাম, আমাদের ট্রেনের যে স্পীড, রকেটেরও এতো স্পীড নাই। আর টেসলা ছাড়াতো আমরা চড়িই না।
আমাকে উইচ্যাটে এড করলো। বলল, যদি বিজনেস করতে চাও আমাকে নক দিও। এখানে অনেক চীপ প্রাইসে ইলেক্ট্রনিকস পাবা। দেশে নিয়ে বিক্রি করবা।
লোকটার জ্ঞানের গভীরতা অনেক। ইলন মাস্ক থেকে শুরু করে ট্রাম্প, আমেরিকা, রাশিয়া অনেক বিষয়ে কথা হলো।
বলল, আমরা থ্রি ডাইমেনশন দেখি। কিন্তু ফোর্থ বা ফিফথ ডাইমেনশনও থাকতে পারে যা আমরা অনুধাবন করতে পারি না। সেখানে সৃষ্টিকর্তা অনেক কিছু আড়াল করে রেখেছেন হয়তো।
সর্বশেষ একটা কথা বলল, ভবিষ্যতে রিলিজিয়াস পার্সনরাই টিকে থাকবে। চায়না গত ২০ বছরে আশংকাজনক হারে জনসংখ্যা কমছে। সবাই নিজের লাইফ উপভোগ করতে চায়। কিন্তু রিলিজিয়াসরা একটা নিয়মের মধ্যে চলে।
তবে শিক্ষা ছাড়া রিলিজিয়াস ভয়ংকর। ডাক্তার ছুড়ি দিয়ে মানুষের পেট কেটে জীবন বাঁচায়, আবার টেরোরিস্ট ছুড়ি দিয়ে মানুষ মারে। রিলিজিয়নটা হলো ছুড়ির মতো। এডুকেশন থাকলে এই ছুড়ি দিয়ে তুমি মানুষকে হেল্প করবা। এডুকেশন না থাকলে ধর্মান্ধ হয়ে মানুষের ক্ষতি করবা।
-