13/04/2022
আমরা আমাদের স্বপ্নের সমান!
লিখেছেন: Mahmudul Hasan
****
সাখাওয়াত ভাই দুই দিন আগে বিজনেস মডেল নিয়ে ইউনিক আইডিয়ার কথা লিখতে বলেছিলেন। অনেকগুলো পয়েন্ট নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আমার পক্ষে বিজনেস আইডিয়া দেয়া অনেক কঠিন; আমি যেটা পারি তা আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করছি।
বাংলা ভাষা যারা ধারণ করেন, কথা বলতে পারেন তারাই বাঙালী। বাঙালীদের আড্ডার ইতিহাস যদি পড়ি তাহলে আমার চোখে যে চিত্র ভেসে ওঠে; একটা বড় গাছ (যেমন বট গাছ, বকুল গাছ, কৃষ্ণচুড়া গাছ)-এর নিচে সুর করে একজন পুঁথি পড়ছে বা গল্প বলছে আর বাকিরা গাছতলায় গোল হয়ে সেই গল্প শুনছে। শুধুমাত্র শুনে না বরং গল্পে হাসির কিছু থাকলে হাসাহাসি করে কুটি কুটি হয়ে পড়ছে একজনের গায়ের উপর আরেকজন আর কান্নার কথা থাকলে কেঁদে ভাসিয়ে ফেলছে, পুথি শুনছে। কখনো রাতে কুপি জ্বালিয়ে সবার সামনে রাতে পুঁথি-পাবন পড়ত অথবা খুব গরমে ভর দুপুরে সবাই মিলে গাছতলায় গামছা দিয়ে ঘাম মুছে একে অন্যের দুঃখ আনন্দ শেয়ার করত।
আমার কাছে নট ফর সেল ক্লাবের নিজস্ব অফিসের আইডিয়া এই চিত্র থেকে ওঠে আসে। এখন এই আইডিয়া ডেভেলপ করতে নূন্যতম কী পরিমান জমি হলে হবে তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা শুরু করি গত শুক্রবার থেকে। আমি দেখেছি মাত্র ৩ শতাংশ জমিতে অনেকগুলো ফাংশন সলভ হয়, ( প্রতি শতাংশ সমান ৪৩৫.৬ স্কয়ার ফুট)। মিনিমাম ফাংশন হিসেবে অফিস রুম, নিচে বিশাল ১৩ ফুট বাই ৩৩ ফুট এর লাইব্রেরী। উপরেও অফিস এবং ফুডকোর্ট সাথে কিচেন ফাংশন হিসেবে ধরে ৩৪ ফুট বাই ৪০ ফুট জমিতে নকশা করে ২ তলা ক্লাব ডিজাইন করেছি।
এখন ২ তলা কেন!? উত্তরঃ সাশ্রয়ী, ফাউন্ডেশন খরচ কম, ওয়াল স্ল্যাব ফাউন্ডেশন সিষ্টেমে আরও খরচ কমানো সম্ভব, মাত্র ৭-৮ টন রড লাগে, ব্রিক লাগে।
আড়ং এর নিজস্ব টেকচার আছে, কনসেপ্ট আছে যা আড়ংকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, খেয়াল করলে দেখবেন প্রতিটি টেকচার সিলেকশন করেছে বাঙালী হেরিটেজকে কেন্দ্র করে।
ঠিক তেমনি নট ফর সেল ক্লাব যদি একটি নির্দিষ্ট কনসেপ্ট ডেভেলপ করে নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে সারা বাংলাদেশে পদচিহ্ন রাখতে পারে তাহলে ব্যাপারটা খুবই চমৎকার হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত জেলা শহর থেকে ৪/৫ কিঃ মিঃ দূরে হয়, তারও ১/২ কিঃমিঃ দূরে জমির দাম হয় সাধারণত এক দেড় লাখ টাকা মাত্র, অনেক জেলা শহরের একটু বাইরের দিকে জমির দাম কম হয়। এগুলোতে ধারাবাহিক ভাবে মাত্র ৩ শতাংশ জমি কিনে নিজস্ব ক্লাব থাকলে একটা চমৎকার সামাজিক আড্ডার জায়গা হয়। সবাই আসবে, সেই গাছটি ঘিরে আড্ডা দিবে, বই পড়বে, বই কিনবে, বই নিয়ে গল্প করতে করবে, খাওয়া দাওয়া করবে, এমনকি নীতিনির্ধারকরা আরও ফাংশন এড করতে পারেন, যেমন সেলুন, মুদির দোকান, সিনেপ্লেক্স ইত্যাদি।
এখন নিষিক্ত ভাই যদি বেশী জমি কিনে দেন তাহলেকি একই কনসেপ্ট ডেভেলপ করা সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। সেই গাছটি ঘিরে বিনোদনের স্পেস বাড়ানো যেতে পারে।
মানুষ যেমন এখন আগের পদচিহ্ন খুঁজে খুঁজে ইতিহাস খুঁজে বের করে ঠিক তেমনি নট ফর সেল ক্লাবের এমন সব ফুট প্রিন্ট রাখা উচিত যেন তা সবার জন্য শিক্ষনীয় হয়, আইডেন্টিটিক্যাল হয়, একটা নির্দিষ্ট টেকচার ডেভেলপ করে, সহজেই চেনা যায়, সবাই যেন নট ফর সেল ক্লাবে যেতে গর্ববোধ করে। জমি যত দূরেই হোক না কেন সেই স্পেস, সেই সুখ, সেই দুঃখ শেয়ার করার জায়গা মানুষ ঠিকই খুঁজে বের করবে; নকশা, কনসেপ্ট মানুষকে গাইড করবে।
আমি সাধারণ সদস্য হিসেবে আপনাদেরকে চাপিয়ে দিতে পারি না, সেই সক্ষমতাও আমার নাই, শুধুমাত্র আইডিয়া শেয়ার করছি। কিন্তু যেসব উপাদান ক্লাবের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা অবশ্যই ভালো কনসেপ্ট থেকে আসা উচিত। তাহলে ব্র্যান্ডিং হয়ে যায়।
এসব নীতিনির্ধারকরা যেন চিন্তা করেন একারণে একটা উদাহারণ দেয়ার চেষ্টা করি। যেমন NPL-এর লোগো বনাম বাতিঘরের লোগো, ২ টা পাশাপাশি রেখে একবার ভেবে দেখবেন বাতিঘর কি পরিমাণ ডমিনেটিং! বাতিঘর কত কথা বলে! তারপর আড়ং এর লোগোর টেকচার, ফর্ম কতটা কনসেপ্টচুয়াল চিন্তা করে বানানো, লোগ নিজেই কথা বলে!
অপর দিকে সবুজ জেলি কালার দিয়ে কোন কিছুই মিন করে না! লোগ হচ্ছে খুবই ছোট্ট কম্পোজিশনের জায়গা যেখানে কোম্পানির অনেক কথা বলে দেয়, আইডেন্টিটি, চিন্তা ভাবনা ধারণ করে।
একটা স্টার্টআপ কোম্পানি কে কি এত কিছু বলা উচিত!? বাস্তব সম্মত!? হ্যাঁ বলা উচিত কারণ ৫ বছর পর এই স্টেপগুলোই কোম্পানির ফুটপ্রিন্ট!
নট ফর সেল ক্লাবে অনেক আইডিয়া ইউনিক, চমৎকার, যে পরিমাণ পরিশ্রম করে মেধাবী লোকজন এই ক্লাবের পিছনে আছেন তাদের কাছে অসাধারণ আইডিয়াগুলো, কনসেপ্টগুলো যেন বাস্তবায়ন হয় এই আশা আমরা সবসময় করি। পিচ যতই খারাপ থাকুক টেম্পারটমেন্ট ধরে রাখা জরুরী, বিশেষকরে যেসব পদচিহ্ন সবসময় কথা বলে সেগুলোতে অবশ্যই নিজস্বতার কনসেপ্টগুলো দিয়ে দিলে অসাধারণ ইতিহাস তৈরি হবে।
আমার ধারণা সামনে আরও সুন্দর গুছানো ভালোবাসার নট ফর সেল ক্লাব আমরা পাবো। কোম্পানি কিংবা ক্লাব ডেভেলপ করতে টাকাতো সবাই খরচ করে কিন্তু প্রত্যেকটা পদচিহ্নে একটা করে গল্প লিখে যেতে পারে কয় জন!? যদি পারা যায় তবে শত বছর বেঁচে থাকে সেই কাজগুলো।
নিষিক্ত ভাই বলেন, নট ফর সেল ক্লাব ইতিহাস রচনা করবে। আমিও তাই মনে করি, এই আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছাশক্তি লাগে, নট ফর সেল ক্লাবের সেই জিনিস সবসময়ই ছিল, আছে।
আমি মনে করি, নট ফর সেল ক্লাব আমার বক্তব্যকে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিবেচনা করার সক্ষমতা রাখে।
সংযুক্তিঃ ইমেজ এবং বিল্ডিং-এর এনিমেশন ইউটিউবে আপলোড করে লিংক দেয়া হল।
https://youtu.be/4QVDl65gSJc