15/03/2024
সংবাদপত্র থেকে সংগ্রহ।
নানাবিধ উপকার থাকলেও টক দই খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। এতে শারীরিক জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া সম্ভব।
হজমে দই, বিশেষ করে টক দইয়ের কার্যকারিতার কথা কমবেশি সকলেরই জানা। স্বাদের পাশাপাশি নানাবিধ পুষ্টিগুণ থাকায় অনেকেই নিয়মিত শেষ পাতে টক দই খেতে পছন্দ করেন।
টক দইয়ে দুধের চেয়ে বেশি ক্যলসিয়াম, ভিটামিন পাওয়া যায়। টক দইয়ে থাকে বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও ফসফরাসের মতো উপাদান। তাই নিয়মিত টক দই খেলে পাওয়া যায় অনেক উপকার।
যাদের দুধ খেলে হজমে সমস্যা হয়, দুধের বিকল্প হিসেবে তারা খেতে পারেন দই, বিশেষ করে, টক দই। নিয়মিত টক দই গ্রহণে যেমন আপনার হজমের সমস্যা কাটাবে, তেমনি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।
আজকে চলুন জেনে নেই টক দইয়ের উপকারিতা ও এটি গ্রহণে কী কী নিয়ম মানলে সমস্যা এড়িয়ে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যাবে।
উপকারিতা
টক দইয়ের উপকারিতা পেতে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ঘরেই এটি তৈরি করে নিন। টক দই শরীরের যেসব কাজে লাগে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
পেটের যেকোনো সমস্যায় উপকার মেলে টক দই খেলে। দইয়ে থাকে উপকারি ব্যাকটেরিয়া যা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও টক দই পেটে আলসার হওয়ার ঝুঁকিও কমায় বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়।
টক দই শরীরে টক্সিন (বিষ) জমতে বাধা দেয়। ফলে অকালবার্ধক্য রোধ করে। তাই নিজেকে ফিট ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে নিয়মিত টক দই খেতে পারেন।
টক দই রক্তের শ্বেতকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় বলে গবেষণা থেকে জানা যায়। শ্বেতকণিকা রোগ প্রতিরোধে সামনের সারির সৈনিকের কাজ করে। ফলে নিয়মিত টক দই খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে টক দই। টক দই খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়। তাই যারা বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা নিজেদের খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন টক দই।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের জন্য বেশ উপকারী এই খাবারটি। দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখে। এতে রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে।
চর্মরোগ প্রতিরোধেও কাজে লাগে টক দই। দইয়ে প্রাকৃতিকভাবে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। এতে বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
টক দইয়ে থাকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দাঁত ও হাঁড় মজবুত করে। এছাড়া অস্টিওপরোসিস, আরথ্রাইটিসের হাঁড়ের রোগ প্রতিরোধেও ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এটি।
মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে যারা খাবারের ওপর নির্ভরশীল, তারা টক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, টক দইয়ে আছে এমন সব উপাদান, যা বিষণ্ণতা দূর করে এবং মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
যাদের মুখের আলসার আছে, তারা দিনে ২-৩ বার টক দই লাগাতে পারেন। সমপরিমাণে টক দই ও মধু মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খেলেও মুখের ঘা দূর হয় বলে জানা যায়।
এ ছাড়া সকালে বা দুপুরে খাওয়ার আগে বা খালি পেটে দই খেলে এর সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায় বলে গবেষণা থেকে জানা যায়।
সতর্কতা
বেশ উপাকারী হলেও টক দই খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। তাহলে অ্যাসিডিক এ খাবারটি থেকে হওয়া যেকোনো সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
দই গরম করে বা রোদে রেখে খাওয়া উচিত নয়।
সন্ধ্যার পর টক দই না খাওয়াই ভালো, এতে হজমে সমস্যা হতে পারে।
ফ্রিজ থেকে বের করেই ঠাণ্ডা দই খাবেন না, এতে ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশি হতে পারে। কারণ দই একটি ঘন খাবার ফলে পেটে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত ঠাণ্ডা থাকে এটি।
সর্দি বা কাশি থাকলে দই এড়িয়ে চলাই উত্তম।
টক দইয়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়।
যাদের বাত, হাপানি, কিডনি ও অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে বা যারা লিকোরিয়া রোগী, তারা টক দই খেতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমিতভাবে খেতে পারেন।
এছাড়া বিভিন্ন গবেষণা ও আয়ুর্বেদের দাবি, যত উপকারীই হোক না কেন, রোজ টক দই না খাওয়াই ভালো।
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, মাছ ও মাংসের মতো গুরুপাক খাবারের সঙ্গে টক দই খাওয়া ঠিক নয়। এতে খাবার হজমের সময় শরীরে টক্সিন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে অন্যান্য রোগ সৃষ্টির কারণ।