Md Shohag 2.0

Md Shohag 2.0 লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)

আমার ছেলে  #আরিয়ান_হাসান_আরাফ আমার ছেলের জন্য  সবাই দোয়া করবেন ❤️❤️
28/12/2023

আমার ছেলে

#আরিয়ান_হাসান_আরাফ

আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন ❤️❤️

28/12/2023

নকল ডাক্তার!
সত্যিকারের ভালোবাসার কাহিনি

আমরা এক কলেজেই পড়তাম। সে দুই ব্যাচ জুনিয়র। শুরু থেকেই তাকে আমার ভীষণ পছন্দ। কিন্তু সে আমাকে পাত্তা দিত না। কারণ, ওর একটা সম্পর্ক ছিল। দুজনের রসায়ন দারুণ। কিন্তু ছেলেটা একসময় ওকে ধোঁকা দেয়। তখন প্রচণ্ড ধাক্কা খায় মেয়েটি। তখন ফেসবুকে আমাদের ধীরে ধীরে কথা শুরু হলো। অনেক ‘টেক কেয়ার’ নেওয়া শুরু করলাম মেয়েটির। কিন্তু তারপরও আমাকে পছন্দ করত না। আমি তো নাছোড়বান্দা।

আব্বুর ইচ্ছা, ছেলে মেডিকেলে পড়ে ডাক্তার হোক। তারও ইচ্ছা আমি ডাক্তার হই। কিন্তু আমার শখ—সংগঠন, লেখালেখি আর ভ্রমণ। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা না থাকলেও রংপুরে কোচিং করেছিলাম মেডিকেলে ভর্তির। কোর্চিং পর্ব শেষ হলো। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। কোথাও চান্স পাচ্ছিলাম না।

এমন সময় মেয়েটি আমার সঙ্গে নরম সুরে কথা বলা শুরু করল। মনে হলো মন একটু গলেছে। নিয়মিত আমার খোঁজ নিত। আমি পড়াশোনায় আগ্রহী হলাম। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পেলাম।

এভাবেই চলল বছর দুই। তখন আমাদের খুব ভালো বোঝাপড়া। আমাকে সব সময় পাশে থেকে সাপোর্ট দিত। খুব ভালোই চলছিল। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় সবকিছু যেন ওলট–পালট হয়ে গেল। তখন সে ভর্তি হয়েছে রুয়েটে। আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা আমাদের বাবারা ছাড়া সবাই জানত। ওর মা আমাকে সহ্য করতে পারত না। কারণ একটাই, ওরা উচ্চবংশীয়। সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলো।

তারও কিছুদিন পর, আমি ওর জীবন থেকে মুছে যাই যাই অবস্থা। তখনই একটা বুদ্ধি আঁটলাম। ওর পছন্দ—ডাক্তার।

তাই ফেসবুকে ডাক্তার হিসেবে একটা ফেইক আইডি খুললাম। কয়েকজন বন্ধু বানালাম। তারপর ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম।

অ্যাকসেপ্ট করল। কথা শুরু হলো ডাক্তার হিসেবে। আমার এক মেডিকেল বন্ধুর কাছে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান নিলাম। মাঝেমধ্যে কথার মধ্যে মেডিকেলীয় টার্ম যোগ করতাম। ওর মনের কথা বলে দিতাম। ও অবাক হয়ে বলল, কীভাবে ওকে এত জলদি বুঝতে পারি।

ও আমাকেই সন্দেহ করত। সন্দেহ দূর করার জন্য কয়েকটা ছবি পাঠালাম আরেকজনের। সন্দেহ দূর হলো না। ফোন নম্বর নিল। আমার এক বন্ধুকে ধরিয়ে দিলাম। আমার সে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলল।

সন্দেহ পুরোপুরি দূর হলো ওর। ফেইক হয়ে ওর সঙ্গে ভালোই বন্ধুত্ব গড়ে তুললাম। এক মাস খুব ভালো কাটছিল আমার।

ওকে তো আমি জানি, কিন্তু ওর কাছে আমি অজানা একজন। আমি ওকে ডাক্তার হয়ে প্রপোজ করি।

আমাকে মুখের ওপর না করে দিয়ে, তার সত্যিকার প্রেমের কথা জানাল। সে প্রেমের নায়ক আমি। এখন আমরা একসঙ্গে পথ চলছি। রোজ, তোমায় অনেক ভালোবাসি।

28/12/2023

ত্রিশ মিনিট - ভালবাসার গল্প
এক
আমার স্ত্রীর বিয়ের আগে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল। যেদিন আমি ওকে দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন অনেকক্ষন বসে ছিলাম সোফায় কোন এক প্রতিবন্ধির মত। সবাই যখন এই কথা সেই কথা নিয়ে হাসাহাসিতে ব্যস্ত আমি তখন অপেক্ষা করছিলাম জেনিয়া কখন আসবে। ত্রিশ মিনিট পর ও সবার সামনে এসে সালাম দিয়ে ঠিক আমার সামনা সামনি বসে। যেই আমি ওর আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সেই আমি মুহুর্তের মধ্যে অস্বস্থিবোধ করছিলাম। বিষয়টা অস্বস্থি না ও বলা যেতে পারে। কেমন যেন সমস্ত নার্ভাস আমাকে আচ্ছোন্ন করে তার করে নিয়েছিল। সবাই যখন ওকে টুকটাক কিছু আস্ক করতে লাগলো আমি তখন আড় চোখে ওকে বার বার দেখছিলাম। খানিক বাদে আমার মামা কৌশলে আমাদের দুজনকে কথা বলার জন্য ব্যবস্থা করে দেয়। ছাদে এসে দুজনে কিছুক্ষন নিরবতা পালন করলাম। আমি কি বলে ওর সাথে কথা বলবো বুঝতে পারছিলাম না। সে মাথায় ঘুমটা দিয়ে জড়োসড়ো চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ইতস্তত হয়ে তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “আপনার নাম কি?” সে আমার দিকে একটু তাকায়। এই তাকানোর মাঝে একটা অর্থ বুঝা যাচ্ছিল সেট হলো “ঢং ধরেন? নাম তো ঠিকই জানেন।” সে আস্তে করে জানায় জেনিয়া।” আমি বললাম “নামটা সুন্দর, আপনার মত “সে চুপ করে তাকিয়ে থাকে। এরপর চারপাশটায় আবার নিরবতা ভর করে। কিন্তু এই নিরবতা আমাকে বেশিক্ষন পর্যন্ত গ্রাস করতে পারেনি। ফের ইতস্তত হয়ে বললাম “আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন না?” তারপর সে ইতস্তত হয়ে বললো “আমি জানি আপনার নাম জাহেদ।” আমি একটা মৃদু হাসি দিলাম। বিকেল বেলার রোদ্দুর ছায়াটা আস্তে আস্তে করে হারিয়ে যাচ্ছিল আর আকাশের মেঘ গুলো আমাদের মাথার উপর দিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছিল। এই ছায়া আর আকাশের মেঘের সংমিশ্রনে পড়ন্ত বিকেলের উন্মাদ করা সৌন্দর্যের প্রফুল্লতা আভা আমি দেখতে পেয়েছিলাম। আমি ভাবছিলাম ওকে আর কি বলা যায়। যেই আমি বলতে যাবো পাত্র হিসেবে আমাকে আপনার কেমন লেগেছে জানতে পারি? কিন্তু এই কথা বলার আগেই জেনিয়া গম্ভীর হয়ে আমাকে বললো “আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।” আমি মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিয়ে বললাম “বলুন।” সে আরও একটু সময় নিল। তারপর আামার দিকে তাকিয়ে বললো “আমি বুঝতে পারছি না আপনাকে কথাটা কিভাবে বলবো বা আামার বলার উচিৎ কিনা। আসলে আমার একজনের সাথে রিলেশন আছে।” ওর মুখে এমন কথা শুনে আমি কিছুক্ষন চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে বিষয়টা আমি মারত্নক ভাবে নেইনি। কারণ এ সময়টায় এসব বিষয় হরহামেশা হয়। আমি বললাম “পরিবারকে জানাননি কেন?” সে বললো “বলার মত একটা পরিস্থিতি থাকতে হয়। সে পরিস্থিতিটা আমার জন্য আসেনি। আবিদ চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। ভেবেছিলাম চাকরিটা পাওয়ার পরই বিষয়টা নিয়ে বাসায় কথা বলবো। কিন্তু তা আর হলো কই?” আমি কিছু না বলে ছাদে গম্ভীর হয়ে ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম তারপর পায়চারি করছিলাম। সে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যে এই আমি এমন ভাবে পায়চারি করছি কেন। অনেকক্ষন পর আমি পায়চারি বন্ধ করে বললাম "আপনাদের সম্পর্কটা কি খুব গভীর?" সে কি প্রত্যুত্তর দিবে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু আমার এই কথার ধরনটা ঠিকি বুঝতে পেরেছিল। তারপর সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই জানালো "আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কোন সম্পর্কই হয়নি। সম্পর্কটা শুধু ভালোবাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই প্রান্ত থেক অপর প্রান্তের মানুষটাকে মিস করার মত শত শত অনুভূতিটাই হচ্ছে আমাদের সম্পর্ক।" আমি একটু মাথা চুলকিয়ে বললাম “ঠিকাছে আপনাকে আমি সাহয্য করতে পারি” সে আমার সাহায্যের কথা শুনে ভ্যাবাচিকা খেয়ে বললো “কি রকম?” আমি বললাম "আবিদের সাথেই যেন আপনার বিয়েটা হয় এই ব্যাপারে একটু হেল্প না হয় করলাম তবে একটা শর্ত আছে। শর্তটা পরে বলছি। প্রথমে আমি আপনার বাবা মায়ের কাছ থেকে সময় নিব এই যে আপনি আর আমি দুজন দুজনকে ভালোভাবে চেনা, জানার একটু প্রয়োজন আছে। দুজনে একটু বুঝে তারপর ডিসিশন জানাবো। আর শর্তটা হচ্ছে আবিদকে আমি চাকরি দিব তবে আবিদের চাকরি হওয়ার পরও এই বিষয়টা বাসায় জানাবেন না। এই জন্য জানাবেন না, কারণ মানুষ পরিবর্তনশীল। টাকা, পয়সা মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়। আমার সাথে আবিদকেও বুঝার দরকার আছে। বুঝার পর তার পরিবর্তন আপনার কাছে যদি পছন্দ না হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করতে হবে, রাজি? এটাই শর্ত।" সে আমার শর্ত শুনে ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে বললো "আমার আবিদ কখনো এমন হবে না" তারপর জেনিয়া আমার শর্তে রাজি হয়েছিল। এই শর্তটা আমি না দিয়ে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতে পারতাম। কিন্তু এই শহরের পড়ন্ত বিকেলের উন্মাদ করা সৌন্দর্যের মাঝে তার শরীরের স্নিগ্ধ গন্ধটা আমার ভিতরটাকে যখন নাড়িয়ে দিল তখন আমি আমার মাঝে ছিলাম না। যেন আমি সূর্যের উত্তাপ রোদ্দুর থেকে বাঁচার জন্য জেনিয়া নামক ছায়ার আচলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কথা বলার ত্রিশ মিনিট পর পবিবারের সবাইকে বিষয়টা বললাম আমাদের দুজনের একটু ভালোভাবে চেনা জানার প্রয়োজন আছে। তারা আমাদের কথায় সম্মতি জানায়।
দুই
অফিস শেষে বাসায় এসেছি ত্রিশ মিনিট হয়ে গেছে। এই ত্রিশ মিনিটে আমার বাসার দেয়ালের চারপাশে ছায়ার উদাসীনতা লক্ষ্য করছি। একটু পর জেনিয়া আমার কাছে এসে খুব ইতস্তত হয়ে বললো “আপনাকে চা দিব?” আমি বললাম ”না থাক। এখন চা খাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।” তারপর সে ভিতরের রুমে চলে যায়। গত পরশু রাত থেকে জেনিয়া আমাকে খুব ভয় করে। আমার সাথে কথা বলার সময় তার কথা গুলো যেন গলার ভিতরই আটকে থাকে। গত দুই দিন আগে রাতে আমি যখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ঠিক ত্রিশ মিনিট পর হঠাৎ আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। তারপর দেখলাম ও বারান্দায় ফোনে কথা বলছে। জিজ্ঞেস করাতে বলে আবিদ ফোন করেছে। আমি তার উপর ভীষন রেগে গিয়েছিলাম। আজকাল মানুষের অনুভূতি গুলো নিয়ে খেলতে আমার ভিতরে অদ্ভুত ইচ্ছে কাজ করে। আমি জেনিয়াকে ডাকলাম। ও চুপ করে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি ওকে বললাম “অস্বস্থিবোধ করছো কেন মেয়ে? আমি তোমার স্বামী। বিয়ের পর একজন স্ত্রীর কাছে তার স্বামীই সবচেয়ে আপন বন্ধু। এই বন্ধুর সাথে হেসে কথা বলতে হয় আর বিষন্নতাটা লুকিয়ে রাখতে হয়।” তারপর ওর হাত ধরে আমার পাশে বসিয়ে বললাম “আসার সময় মেহেদী নিয়ে আসছি। দেখি হাত দাও তোমাকে মেহেদী দিয়ে দেই। যদিও আমি মেহেদী দিতে পারি না। আচ্ছা আমি মেহেদী যেমনই দিয়ে দেই যদি হাতটা বিচ্ছিরি দেখায় তাহলে কি মন খারাপ করবে?” সে মাথা নাড়িয়ে বুঝায়, না। আমি মেহেদীর টিউভটা খুলে ওর হাতে এলোমেলো করে এঁকে দিচ্ছি। আমি একদম মেহেদী দিতে পারি না। আর ও এই দৃশ্যটা চুপ করে তার চোখে এঁকে নিচ্ছে। আমি বললাম “সুন্দর হচ্ছে না?” সে বলে “খুব সুন্দর” আমি ওর চোখে তাঁকালাম তারপর একটু রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললাম “মিথ্যে বলো কেন? এটাকে সুন্দর বলে? তুমি দেখছি সত্যটাই বলতে পারো না। খুব খারাপ জেনিয়া খুব খারাপ। আর কখনো মিথ্যে বলবে না কেমন?” আমার কথার কি প্রত্যুত্তর দিবে সে বুঝতে পারে না। আমি মেহেদী দিতেই দিতেই বললাম “আমার কাছে কথাটা লুকিয়ে রেখেছো কেন বলোতো?” সে বলে “কোন কথা?” আমি একটু হেসে বললাম “গতকাল আমি বাসায় ত্রিশ মিনিট আগে এসেছি। কিন্তু তোমায় বাসায় দেখতে পাইনি। বাসায় তুমি আসার পর যখন তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম তখন তুমি বললে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে। আমি আর কিছু বলিনি। এতোটা সময় পার হয়ে গেলো অথচ তুমি আমার কাছে এখনো সত্যটা বলোনি। আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমার সত্যটা শোনার জন্য। অফিস থেকে ফেরার পথে আমি কিন্তু ঠিকি তোমাকে দেখেছি তোমার পুরানো বয় ফ্রেন্ডের সাথে।” সে চুপ করে থাকলো। এই চুপ থাকার অর্থ আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমি বললাম “উত্তর দাও মেয়ে।” সে তারপরও চুপ করে থাকলো। আমি বললাম “কি ভুল হয়ে গেছে?” সে মাথা নেড়ে বুঝায় ভুল হয়ে গেছে। আমি একটু হেসে বললাম “আর এমন করবে না কেমন? আমার খুব রাগ হয়। আমি মানুষটা অনেক ভালো। কিন্তু এই ভালো মানুষটার রাগ যখন বেড়ে যায় তখন কি করে ফেলি নিজেই ভেবে পাইনা। পরে আমি খুব অনুশোচনা করি এই কাজটা কি আমিই করেছি? আমাকে এমন অনুশোচনায় ফেলবে না ঠিকাছে?” সে ভয় পেয়ে যায়। আমি বললাম “এই দেখো মেয়ে ভয় পেয়েছে। আমার কি দোষ বলো। আমি তো তোমার বয় ফ্রেন্ডকে একটা চাকরি দিয়েছিলাম। তোমাদের সম্পর্কের একটা নাম দিতে চেয়েছিলাম। তোমার বয় ফ্রেন্ডের প্রতি তোমার অগাড় বিশ্বাস ছিল। কিন্তু তোমার এই বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছে ও। আচ্ছা এই কথা বাদ। তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ত্রিশ দিন হয়েছে আজ। এই ত্রিশ দিনে আমার প্রতি তোমার চোখে ভালোবাসাটা দেখতে পাইনি আমি। জানো আমার খুব ইচ্ছে হয় তোমাক নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। রাতরে রুপালি চাঁদের আলো দেখতে। তোমাকে ভালোবাসতে। আমাকে তুমি না ভালোবাসো। শুধু আমার ইচ্ছে গুলোকে একটা প্রাণ দিয়ে কেমন?” জেনিয়া চুপ করে রইলো। আমি তার চোখের কোনে জল দেখছি। সে জল হাত দিয়ে মুছে বললাম “এতো নড়ছো কেন? মেহেদী দিচ্ছি তো।”
তিন
এই সন্ধ্যার সময়টায় আমি আবিদের সাথে দেখা করতে এসেছি রেস্টুরেন্টে। তার চেহারাটায় কেমন যেন বিষন্নতার ছোয়া লেগে আছে। এই বিষন্নতার মাঝে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম ভালোবাসার মর্যাদা না রাখার এক মানুষকে। আমি খুব শান্ত ভাবে বললাম “কি খাবেন?” সে মাথা নেড়ে বুঝায় কিছু খাবে না। আমি বললাম “আপনাকে এখানে ডাকার কারণ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন?” সে আমার দিকে অদ্ভুত মায়া মায়া দৃষ্টিতে তাকায়। আমি সেই অদ্ভুত মায়া মায়া দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বললাম “যে মানুষটা আপনার ছিল সেই মানুষটা এখন আপনার না। সে মানুষটা এখন অন্যকারো। অন্যজন এই মানুষটাকে নিয়ে স্বপ্ন আঁকে। আর এই স্বপ্নের মাঝে আপনি ঢুকে যাচ্ছেন। এটাকে কি ভদ্রতা বলে বলুন?” সে কি প্রত্যুত্তর দিবে ভেবে পায় না। আমি তার চুপ থাকা দেখে বললাম “আর কখনো ওকে ডিস্টার্ব করবেন না ঠিকাছে? ফের যদি ডিস্টার্ব করেন আপনার সাথে খুব খারাপ হবে মি. আবিদ সাহেব।” এটা বলে আমি চেয়ার থেকে উঠে আবার বললাম “মানুষটাকেও হারিয়েছেন আর চাকরিটাকেও হারিয়েছেন। এই কার্ডটা রাখেন। এটা আমার বন্ধুর কার্ড। জীবনটাকে আবার নতুন করে সাঁজান পরিবারের কথা চিন্তা করে। চাকরি করার ইচ্ছা হলে ওর সাথে দেখা করবেন। ওকে আমি বলে রেখেছি সব। চললাম। বেস্ট অব লাক।
মাঝে মাঝে আমি অনুধাবন করি এই আমি মানুষটা এমন কেন? নিজের ভিতরের অনুভূতিকে একটা রুপ দিতে চেতনায় অন্যের অনুভূতির মাঝে প্রবেশ করে নিজের করে নেই। আমার খুব ইচ্ছে করে অনেক অনেক দুরে গিয়ে আমার ভাবনা গুলোকে নিয়ে একটু ভাবতে। এই ভাবনার মাঝে আলো আর আঁধারটাকে খঁজে বের করতাম। খঁজে বের করতাম এই আলো আঁধারের মাঝে আমি কোথায় আছি?
ত্রিশ মিনিট পরে আমি বাসায় আসতেই জেনিয়ার মুখটা দেখে আমার ভিতরটা ধক করে উঠে। তার মুখে লেগে থাকা বিষন্ন ছাপ্টা আমি যখন দেখি আমাকে একটা ক্লান্তির ছায়া ঘিরে ধরে। এই ক্লান্তিটা আমার সমস্থ দেহকে অবশ অনুভূতির দেয়ালে আচ্ছোন্ন করে ফেলে। আমি তাকে বললাম "এখন থেকে আবিদ তোমাকে আর ডিস্টার্ব করবে না।" সে চুপ করে থাকে। আমিও চুপ করে থাকি। এই চুপ থাকার মাঝে আমি বুঝতে পারছিলাম আমাদের দুজনের দুরুত্বটা।
পোশাক চেঞ্জ আর ফ্রেশ হওয়ার ত্রিশ মিনিট পর ও আমার সামনে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি বললাম "কিছু বলবে?" সে শাড়ির আচল আঙ্গুলের মাঝে পেচিয়ে আমাকে খুব ইতস্তত করে বললো "জীবনটা এমন কেন বলতে পারেন? যাকে এতো এতো ভালোবাসলাম সেই আমার সাথে এমন করলো। কেন করলো এমন আমার সাথে?" আমি চুপ করে থাকি। এই কথার কি প্রত্যুত্তর দিব বুঝতে পারি না। আমার মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়ে উদ্ভট পাগল মনে হয়। আমার চুপ থাকা দেখে জেনিয়া আবার বললো "ঐদিন আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন আবিদ ফোন করে খুব কান্না করেছিল। আমার ভিতরটার মাঝে বিষাদের ছায়া বাসা বেধে গিয়েছে। আমি ওকে বুঝালাম এখন আমার একটা সংসার আছে। তুমি আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখিও না। তারপর শেষবারের মত আমার সাথে একবার দেখা করতে চেয়েছে। আপনাকে আমি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আপনি কি ভাবছেন আমি জানি না। আমাকে মাফ করবেন। আপনি তো আমার স্বামী। স্বামীর কাছে এই বিষয়টা আড়াল করা আমার একদম উচিৎ হয়নি।" এইটা বলেই ও থামলো। ওর চোখের কোনে জল আসে। এতো ঝড়ের মাঝে সময়ের বিষন্নতায় তার সব অনুভূতি ত্যাগ করে আমার অনুভূতির দরজায় সে। জেনিয়া চোখের জল মুছে বললো "খেতে আসেন। আপনার পছন্দের খিচুড়ি রান্না করেছি।" এই কথার উত্তরে কি বলা যায় আমি ভাবছিলাম। তার এই কথার মাঝে নিশব্দ কান্না গুলোকে আমি দেখতে পাচ্ছি। আমার দেয়ালের চারপাশে বিষন্নতা গ্রাস করে। কিন্ত এই বিষন্নতা তৈরি করতে আমার তো কোন দোষ নেই। শর্ত অনুযায়ী সে আমার।
পরিশিষ্ট।
সারা রাত বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে শহরটা ভিজে গিয়ে এই সকাল বেলা একটা স্নিগ্ধ শিতল আভা ছড়ালো তখন আমি মগ্ন হয়ে বারান্দার চেয়ারটায় বসে চুপসে যাওয়া শহরটা দেখি। ইদানিং প্রায় আমার ইচ্ছে করে এই রকম ভিজা শহরের বুকে জেনিয়ার সাথে নীল রঙ্গা অনুভূতিতে জড়াতে। তার চোখে চোখ রেখে আমার অন্তরালের কথা তার অন্তরালে সমর্পন করতে। কিন্তু আমি কেন যেন পারি না। আমার ভিতরটায় একটা জড়াতা এসে ভর করে। এই জড়তা আমাকে জব্দ করে আমার সমস্থ দেহকে ক্লান্তিময় করে তুলে। এই চুপসে যাওয়া শহরটা দেখার ত্রিশ মিনিট পর জেনিয়া এসে ইতস্তত হয়ে বললো "অফিসে যাবেন না?" আমি তাকে বলি "না। আজ আর যেতে ইচ্ছে করছে না।" সে আচ্ছা বলে আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল। আমি তাকে বললাম "শুনো।" সে আমার দিকে ফিরে তাকায়। আমি বললাম "তোমাকে আজকে সব বলা দরকার। তুমি এখনো বিষয়টার মূল কারণ জানো না। আবিদকে আমার অফিসের ম্যানেজারকে বলে চাকরি দিয়েছিলাম ঠিকই। চাকরি দেওয়ার পর আমার চিন্তা ভাবনায় অন্য কিছু ছিল। আবিদের ভালোবাসার পরীক্ষা করার। অফিসের কলিগ নাদিয়াকে যখন বিষয়টা খুলে বলেছিলাম তার ঠিক দু দিন পর নাদিয়া আমার কথা মত কাজ করতে রাজি হয়। এরপর শুরু হয় নাদিয়ার কাজ। আবিদের সাথে ন্যাকামো করে কথা বলা, লাঞ্চ আওয়ারে তার সাথে লাঞ্চ করা। যদিও আবিদ প্রথমে রাজি হতো না। এরপর বাহিরে ঘুরতে যাওয়া, রিকশায় চড়া। এক পর্যায়ে তাদের ভাব আদান প্রদান করা ভেরে যাচ্ছিল। তবে আমি নাদিয়াকে খুব শতর্ক থাকতে বলেছিলাম যাই করো খুব সাবধানে করবে। এইভাবে এক মাস অতিক্রম হয়। এই এক মাস মানে ত্রিশ দিন পর তুমি আমাকে ফোন করলে। বললে তোমার মন ভালো না। আবিদ তোমার সাথে এখন কথা কম বলে। যখনই ফোন করো তখনই নাকি আবিদ বলে ব্যস্ত আছি। আমি তোমাকে শান্তনা দিয়েছিলাম। ঐদিকে আমি নাদিয়াকে কনগ্রাচুলেশন জানিয়ে বললাম তোমার কাজ চালিয়ে যাও মেয়ে। এরপর আরও একটা মাস কাটার পর কাঙ্ক্ষিত সময় আসলো। আবিদ নাদিয়াকে প্রপোজ করলো। বিষয়টা যে এতো দ্রুত কার্যকর হবে আমি ভাবিনি। বেশির ভাগ পুরুষই নারীর প্রতি দুর্বল বুঝলে। নাদিয়া যখন আবিদকে বললো তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে তার কি হবে? আবিদ কি বলেছিল জানো? তুমি নাকি একদম সাধাসিদে একটা মেয়ে। তুমি নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলতে, লুকিয়ে দেখা করতে। ঠিকমত সময় দিতে পারতে না। কোথাও যেতে বললে যেতে পারতে না। নাদিয়ার সাথে মিশে যে অনুভূতিটা পেয়েছে সে অনুভূতিটা তোমার কাছ থেকে পায়নি। এরপর আবিদ তোমাকে ইগনর করতে লাগলো। ফিরিয়ে দিল তোমাকে। তারপর আমি আর একটুও দেরি করিনি। নাদিয়াকে ফাইনাল চালটা দিতে বললাম। নাদিয়াও ফাইনাল চালটা ঠিকঠাক মত দিল। আবিদ কে বলে দিয়েছিল একজন ভালো বন্ধু, ভালো কলিগ হয়ে তার সাথে মিশতে চেয়েছে লাভার হয়ে নয়।"
এইটুকু বলে আমি থামলাম। জেনিয়া চুপ করে থাকলো। আমি চেয়ার থেকে উঠে আবার বললাম "বিশ্বাস করো আবিদ যদি এই পরীক্ষায় জিতে যেত আমি সত্যি সত্যি তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থাটা করে দিতাম। যার জন্য এতো কিছু করতে যাবো তাকে তো একটু পরীক্ষা করতেই পারি তাই নয়কি?। নাদিয়া যখন আবিদকে ফিরিয়ে দিল সে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। অফিসে তার অনুপস্থিত বাড়তে লাগলো। আর এই অনুপস্থিতির জন্য তাকে চাকরি থেকে নক আউট করলো। " আমার এতো গুলা কথা শুনার পর জেনিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। তারপর বললো "সে আমাকে ভালোবেসেছে ঠিক আছে। কিন্তু আমার প্রতি তার ভালোবাসাটা মজবুত ছিল না।" আমি তাকে বললাম "চাইলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। আবিদের কাছে চলে যেতে পারো। আমি চাইনা আমাদের জীবনটা এভাবে ধূসর ভাবে কাটুক। যে জীবনে আমি আলপনা খুঁজে পাই না।" সে বললো "এমন কথা আর কখনো মুখে আনবেন না। আমি সাদাসিধে একটা মেয়ে ঠিকাছে। কিন্তু আমার জীবনটা এতো সস্তা না। নাস্তা খেতে আসুন।" এইটা বলেই ও ভিতরে চলে যায়। আর আমি ভাবছি জেনিয়ার ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে পারবো কি আমি?
"কি ব্যাপার হ্যা? জনাবের লেখা কি শেষ হয়নি? একটু পর আসছি। পাঁচ মিনিট পর আসছি। এই তো আর একটু করে করেই ত্রিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে। খাবে না নাকি? আমি আর কতক্ষন বসে থাকবো? আমি আর খাবার গরম করতে পারবো না।"
আমি পিসি থেকে মুখ সরিয়ে জেনিয়ার দিকে তাকালাম তারপর বললাম "ম্যাডাম আর একটু বাকি।" জেনিয়া আমার হাত ধরে বললো "আর একটুও না। উঠো তুমি। তোমার এই "ত্রিশ মিনিট" এর গল্পের বাকি অংশ পরে লিখিও। আর আমি বুঝি না, তোমার গল্পের চরিত্রে আমার নাম কেন দাও তুমি?" আমি ওর কথা শুনে হাসলাম। আসলে আমি গল্প লিখছিলাম। অফিস থেকে এসেই কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর ভাল্লাগছিল না। ভাবলাম কিছু একটা লিখি। আর লিখার শুরুতে জেনিয়া আমার পাশে বসেছিল। গল্পে ওর নাম দেখে ও আমাকে বকে চলে গিয়েছিল। আমার হাসি দেখে ও আবার বললো "কি উঠবে না তুমি? আমার কিন্তু ক্ষিধে লেগেছে। তুমি না খেলে আমারও যে খেতে ইচ্ছে করে না, এইটা কি জনাব বুঝে নাহ।" আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম "আজ নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি খাইয়ে দিও।" সে বলে "ঠিকাছে জনাব এবার চলেন।" আমি ওর সাথে খেতে গেলাম। ও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে। ও গল্পের কাহিনী জানতে চাইলে আমি খেতে খেতে শোনাতে থাকি। জেনিয়া আমাকে বললো "তাহলে বেচারা আবিদের কি হবে?" আমি বললাম "চাকরিতে জয়েন করে আবার নতুন করে জীবনকে নিয়ে ভাববে। আমাদের জীবনটাই না এমন।" জেনিয়া চুপ করে আমাকে লোকমা দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকে। আর আমি ওর চোখের মাঝে তাকিয়ে খেতে থাকি। সে বলে "এমন করে কি দেখো হ্যাঁ?" আমি কিছু বলিনা। আমি সেই চোখের মাঝে আমাকে নিয়ে তার ভয়ংকর সুন্দর ভালোবাসাকে দেখতে পাই। এমন ভয়ংকর সুন্দর ভালোবাসা গুলোর মাঝে আমার জড়িয়ে থাকতে খুব ইচ্ছে করে। এমন মায়া মায়া ভালোবাসাকে আমার হারাতে একটুও ইচ্ছে করে না...
গল্প: ত্রিশ মিনিট।

28/12/2023

তোমায় ছুঁয়ে দিলাম
চোখটা মেলে দেখ তুমি,
আমি আছি দাড়িয়ে
তোমায় ছুঁয়ে দিলাম কথা যাবোনা
হাতটা আমার ধরো আবার,
দিয়েছি বাড়িয়ে
জরিয়ে হাত রাখবো আমি,
দেবো না আর ছাড়িয়ে,,,
অভিমানে কেন যে আজ ভালোবাসার
শেষটা টানছো,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, এমন
কেনো করছো,
কাছে এনে আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছ,,,
এমন কেনো করছো
পাশে রবে বলে চলে যাচ্ছ
এমন কেনো করছো
কাঁদিয়ে আমায় নিজে কি সুখ পাচ্ছ,,

28/12/2023

জীবনের চাকা - ভালবাসার গল্প
— বিয়ে করবেন আমাকে?
আনিকার মুখ থেকে কথা টা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো উদয়। আনিকা তাঁর বস। সে যে কোম্পানির কুকার। সাবলীল বাংলায় বলতে গেলে বাবুর্চি। আনিকা সে কোম্পানির মালিক। উদয় সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কারণ আনিকা মেয়ে টা ভীষণ গল্পপ্রিয়। হয়তো গল্পের প্রথম লাইন বলেছে।
— থেমে গেলেন কেনো? গল্পের বাঁকি অংশ বলবেন না?
আনিকা চেয়ার টা সোজা করে বসে— আমি সবসময় গল্প পড়তে ভালবাসি। ভীষণ বইপ্রিয় একটা মেয়ে। মাঝে মাঝে দারোয়ানকে ডেকেও তাঁর সাথে গল্প করি। কেউ ভালো পায় কেউ পাগলামু বলে। কিন্তু আমি আজকে কোনো গল্প করছি না। আমি মন থেকেই বলছি।
উদয় বিপদে পড়ে গেলো। আনিকা আবার তাঁর চরিত্রের পরীক্ষা নিচ্ছে না তো? না কী সে লোভী কী না তা ঘেঁটে দেখছে? কোনোরকম জবাব দিলো— আমি অল্প শিক্ষিত একটা ছেলে। গ্রাম থেকে এসেছি। বড় ছেলে বিধায় পুরো পরিবারটাকে আমাকেই দেখতে হয়। বাবা অসুস্থ। যে টাকা বেতন দেন। তা দিয়ে কোনোরকম বাবার ঔষধপত্র কিনে টেনেটুনে চলে যায়। কিন্তু আমি লোভী নই বস।
আনিকা কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে বললো— আপনি কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। আপনার এই ব্যাপার টা আমাকে খুব হিংসে ধরায়। তাছাড়া আপনি যা ভাবছেন আসলে আমি তা করছি না সত্যি। আমি আপনার ব্যাপারে সব জানি। আপনি লোভী নন। তা আমি অনেক আগেই বুঝেছি। লোভী নন সে কারণেই তো আপনাকে আমার আরো বেশি ভালো লাগে। কথাগুলো সরাসরি বলছি বলে ভাববেন না আবার মেয়ের লজ্জাশরম কম।
উদয় আনিকার চোখে এবার লুব্ধক দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়৷ এবার সে নিশ্চিত। আনিকা সত্যি সত্যিই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে, কিন্তু কেনো? সে তো দেখতেও খুব সুদর্শন নয় যে শুধু চেহারা দেখে সব ভুলে যাবে। উত্তর দিলো— বিদেশী গল্প পড়তে পড়তে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বস৷
আনিকা হাসলো।
তবে শব্দ করে নয়৷ বললো— জানি আমি দেখতে সুন্দরী না। প্রতিটা সাধারণ মেয়ের মতো রান্না করতে পারি না। শাড়ি পড়তে পারি না। আরো অনেক কিছু। এসব আপনার অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমার আপনাকে ভালো লেগেছে। বিয়ের প্রস্তাবও দিলাম। বাকীটা আপনার হাতে। আমি কাউকে জোর করতে পছন্দ করি না, জানেনই তো।
উদয় চলে আসলো পাকঘরে।
উদয়।
পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকে হোটেলে কাজ করেছে। তাঁর রান্নার হাত ভালো। গ্রামে সুনাম আছে। সে সুবাদে এই কোম্পানির কুকার হিসেবে যোগ দিয়েছে। অন্য জায়গার থেকে এখানে খুব ভালো বেতন পায় সে।
মিথ্যে বলে না সচারচর। কিন্তু একটা বড় মিথ্যে সে অনেক আগে আনিকার কোম্পানির কাছে বলেছে। সে অবিবাহিত!
একটি মাত্র মিথ্যা!
বিবাহিত থাকার পরেও একটু ভালো মাইনের চাকুরী পাবে বিধায় বলেছিলো সে অবিবাহিত। এই কুকার পদে কোম্পানির লোকেরা বিবাহিত লোক নিবে না। বিবাহিতদের না কী পিছুটান বেশি। কাজ করে না মন দিয়ে। সারাদিন বৌয়ের সাথে ফুসুরফুসুর করে।
উদয় কাজে ফাঁকি দেয়নি।
সায়েরা৷
উদয়ের বৌয়ের নাম। গ্রামের সহজ সরল সাধারণ একটি মেয়ে। সাত বছর প্রেম করে তাঁকে বিয়ে করেছে উদয়। আবার বিয়ের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে কদিন আগে। একটা ছেলে আছে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করাবে ভাবছে।
উদয়ের রাতে ঘুম হচ্ছে না।
সে কী অনেক বড় অপরাধই করে ফেললো না কী এখানে নিজেকে অবিবাহিত বলে? সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু এই মিথ্যে টা খুব প্রয়োজন পড়ে গিয়েছিলো তাঁর পরিবারের জন্য! সায়েরাকে আজকের কথা না বলে শান্তি পাচ্ছে না উদয়। ফোন দেয়ার সাথে সাথে সায়েরা ধরে বললো— আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?
উদয় সালামের জবাব দিয়ে— ভাল নেই। আজকে এক কাহিনী ঘটেছে।
তারপর পুরো ব্যাপার টা খুলে বললো উদয়। সব শুনে সায়েরা খুব শক্ত ভাবে বললো— চলে আসো তুমি। কাজের অভাব হবে না। কিন্তু আমি তোমার বুকে অন্য কেউ শুয়ে আছে তা কল্পনা করতে পারবো না।
— দেখছি কী করা যায়।
নিচক এক যন্ত্রণায় পড়ে গেলো উদয়। তাঁর বৌকে সে খুব ভালবাসে। সায়েরা হয়তো আরো বেশি ভালবাসে। তাঁদের একটা সন্তানও আছে। অসুস্থ বাবা বাড়িতে। সব কিছু মিলিয়ে চাকুরীটাও দরকার। আনিকা তাঁর বিবাহিত জীবনের কথা জেনে গেলে চাকরীচ্যুত করবে। আনিকা হাজার টা ভুল সহ্য করতে পারে। কিন্তু একটিও মিথ্যে নয়।
আবার এরকম ভালো বেতনের চাকুরী সে আর কোথাও পাবে না তাও নিশ্চিত। এসব ভাবতে ভাবতে যখন মাথা টা হাল্কা ধরলো তখন আনিকার ফোন! মাঝ রাত্তিরে আনিকার ফোন পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। এর আগে কোনোদিন আনিকা রাত্তিরে ফোন দেয়নি।
উদয় ফোন তুললো— বস, আপনি এতো রাত্তিরে?
— হ্যাঁ। বিরক্ত করলাম না তো?
— তা না ঠিক।
— অনেকক্ষণ ফোন ব্যস্ত পেয়েছি। কার সাথে কথা বলছিলেন জানতে পারি?
— বাবা ফোন করেছিলো।
— আপনার গলার আওয়াজ বলে দিচ্ছে মিথ্যে বলছেন। দেখুন আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না। কিন্তু আমার জানা দরকার। কেনো তা আপনি ভালো করে জানেন। তা আপনি বলবেন কী?
— মাফ করবেন বস। আমিও এক কথা দুইবার বলি না।
আনিকা ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে বললো— যদি আপনার প্রেমিকা না থাকে তো দরজা টা খুলুন। আর থাকলে দরকার নেই। আমি আপনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি!
উদয় তড়িঘড়ি করে উঠে রুমের বাতিগুলো জ্বালালো। অফিসের রান্না করার রুমের এক কোণে থাকে সে। এভাবে এখানে আনিকা এসে পড়বে সে কল্পনা ও করতে পারেনি। দরজা খুলে দেখলো আনিকা শাড়ি পড়ে এসেছে! হাতে চুড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক! সব কিছু মিলিয়ে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। যে কেউ একবার তাকালে চোখ ফেরাতে চাইবে না।
তবে উদয় চোখ ফেরালো। কোনো অপরূপার দিকে চোখ গেলে তাঁর সায়েরার কথা মনে পড়ে যায়। আনিকা নীরবতা ভেঙে বললো— ভিতরে ঢুকতে বলবেন না?
— আপনার অফিস, আপনার কর্মচারী। আমি বলার কে?
আনিকা লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে রুমে ঢুকে বললো— আমি আজকে আপনার সাথে থাকবো।
উদয় চমকে উঠে— জ্বী? মানে?
— ভয় পাবেন না। আপনার সাথে নয় ঠিক, আপনার রুমে। আপনি আমার রুমে একটি রাত কাটাবেন আর আমি আপনার রুমে। আপনি আমার বিয়ের প্রস্তাব মানেন আর না মানেন এটা মানতেই হবে।
উদয়ের এ সি রুমে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছে নেই। কিন্তু সায়েরা ছাড়া অন্য কোনো নারীর সাথে বিছানায় যাওয়ার কথা ভাবার আগেই মরণ চায় আল্লাহ্'র কাছে। উদয় রাজি হয়ে গেলো। আনিকা মুচকি হেসে বললো— আপনি তো আমার দিকে তাকাচ্ছেনই না।
— তা না। আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।
— প্রথমবার কারো জন্য সেজেছি। শাড়ি পড়েছি, কাজল দিয়েছি।
উদয় না শোনার মতো করে রইলো। আনিকা আবার গলা বাড়ালো— আপনি বিরক্ত হচ্ছেন৷ যান বাইরে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
উদয় আচ্ছা বলে গাড়িতে এসে উঠে বসলো। গাড়িচালক তাঁকে এমন সম্মান করছে মনে হচ্ছে সে ইতিমধ্যেই আনিকার স্বামী হয়ে গিয়েছে। সহ্য হচ্ছে না উদয়ের। নিজেকে সামলিয়ে নিলো। বেশিদূর নয় আনিকার বাড়ি। গাড়িচালকই আনিকার শুবারঘর দেখিয়ে দিলো।
উদয় আনিকার নীদ্রাকক্ষে ঢুকে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। পুরো রুমের জুড়ে উদয়ের ছবি টানানো। দেখে বুঝা যায় স্পষ্ট কেউ লুকিয়ে তুলেছে। বিছানায় বড় করে উদয় লেখা। কোলবালিশ সহ চায়ের কাপটাতেও! সায়েরা আজকের রাতের কথা জানতে পারলে কষ্টে মরেই যাবে। ভালো লাগছে না।
সায়েরাকে আবার ফোন দিলো। সায়েরাকে উদয় জাগিয়ে রাখে না। বেশি রাত পর্যন্ত সায়েরা চাইলেও কথা বলে না। তবে আজকে উদয়ের আবদার সারা রাত কথা বলতে হবে। সায়েরাও খুশি হলো। তেরো বছর পিছনে ফিরে গিয়েছে দুজন। ভোরবেলা পর্যন্ত কথা বলেছে।
সকালে আনিকা নিজের বাড়ি ফিরে এলো। উদয় ও অফিসে। দিন দিন আনিকা যেভাবে উদয়ের নেশায় মেতে উঠছে তা ভালো লক্ষ্মণ না। ভয় পাচ্ছে সামনাসামনি সায়েরার কথা বলে দিতে আনিকাকে। সায়েরাও বারবার ফোন করছে। এরকম স্বস্তি অস্বস্তিতে একটা সপ্তাহ কেটে গেলো।
কয়েকদিন ধরেই আনিকাকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। সে চাইলেই ব্যক্তিগত ডাক্তার রাখতে পারে তবুও রাখে না। আজকে এক নিঠুর বাণী শুনে আসলো ডাক্তারের মুখে। একটা মেয়ের জন্য এর থেকে বেশি দুঃখ কষ্ট আর হয় না। যখন ডাক্তার বলে— আপনি কোনোদিন মা হতে পারবেন না!
বাড়িতে ফিরে রুম বন্ধ করে একটানা কয়েক ঘণ্টা কান্না করেছে। মা বাবাও বেঁচে নেই যে তাঁদের কুলে মাথা রেখে কাঁদবে। আঠারো বছর থাকাকালীন তাঁরা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিলো আনিকা। উদয়ের সব ছবি তুলে ফেলেছে দেয়াল থেকে। কোলবালিশ, চায়ের কাপ ও ফেলে দিয়েছে। আর যাবে না উদয়ের কাছে সে ভালবাসা চাইতে। সে ভেবে পাচ্ছে না তাঁর এতো টাকা পয়সা দিয়ে কী আসবে যাবে? যদি না কেউ আম্মু আম্মু বলে গলায় জড়িয়ে ধরে? ঠিক করে নিয়েছে উদয় ছুটি কাটিয়ে আসলেই সব কিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবে।
উদয় সকালে ছুটি নিয়েছে।
আনিকার কাছে ছুটি হলেও উদয় আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। বাড়িতে গিয়ে ফোনে আনিকার কাছে মিথ্যে কথা বলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবে। সায়েরাকে আসার কথা জানায়নি। হঠাৎ উদয়কে দেখে সায়েরার মুখের অবস্থা কেমন জানি হয়ে যায়। উদয়ের এই দৃশ্য'টা খুব প্রিয় সেজন্যই জানায়নি।
বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত্রি দ্বিপ্রহর হয়ে যায়। দরজার তালার একটা চাবি উদয়ের কাছে থাকে। সেজন্য সায়েরাকে ডাকেনি।
সকালে উঠে যখন দেখবে সায়েরা তাঁর বুকে। সায়েরা চমকে উঠবে। সায়েরা জেগে যাবে ভেবে আস্তে আস্তে দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকলো উদয়।
রুমে ঢুকার পর খাট নাড়াচাড়ার করার শব্দ শুনে উদয় বাতি জ্বালালো। দেখলো ছেলে টা ঘুমিয়ে আছে। আর সায়েরা কোনো পুরুষের সাথে প্রেমলীলায় মক্ত আছে! রুমের বাতি জ্বালানোর পরেও তাঁদের হুঁশ হলো না! উদয় এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলো না।
বুকে যেন কেউ চাকু মেরে কলিজা বের করে নিয়েছে। সায়েরা বলে জোরে একটা চিৎকার দিলো। পাশের রুমের অসুস্থ বাবা সজাগ হয়ে গেলো। ছেলে টা সজাগ হয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে সায়েরা আর তাঁর খাটের সঙ্গীও।
সঙ্গীটাকে পালানোর সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় উদয়। তাঁর দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি। এই সঙ্গী আর কেউ না, যে তাঁকে এতো ভালো বেতনের একটা চাকুরীর খোঁজ দিয়েছিলো। তাঁর টাকা পয়সার অভাব নেই। এম পি এর ছেলে। ছেলে টা বাবাকে দেখে খুশি হয়েছে বেজায়। এতো কিছু বুঝেনি।
ছেলে টা আবার ঘুমিয়ে গেলে সায়েরাকে কান্নাসিক্ত নরম গলায় উদয় একটি কথাই জিজ্ঞেস করে— কথা ছিলো আমরা সারাজীবন গাছ তলায় থাকবো তবুও আলাদা হবো না। আর না জানি কবেই তুমি আমার থেকে আলাদা হয়ে গেছো। বলো না কেনো? ছেলেটার কথা একবার ও ভাবলে না?
সায়েরা মুখের উপর বলে দেয়— আমার কথা কে ভাববে? বছরে একটা শাড়ি ছাড়া কী দিতে পারিস তুই?
উদয় নিরুত্তর।
এরকম এক টা দিন উদয়ের জীবনে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি। সে বুঝতে পারছে সায়েরা আর তাঁর সাত বছরের প্রেমিকা সায়েরা বা সাত বছরের স্ত্রী সায়েরা, দুটোর একটাও নেই। এক কাপড়ে চলে যায় বাইরে। সেখানে তাঁর প্রেমিক বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকালে উঠে ছেলে ফারায মাকে খুঁজছে। মা যে নেই। ছেড়ে চলে গিয়েছে।
উদয় লুকায়নি৷ স্পষ্ট বলে দিয়েছে মা তোমাকে, আমাদের ছেড়ে ভালো থাকতে চলে গিয়েছে। তারপর থেকে ফারায নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকছে। বাবার অসুস্থতা একটু না অনেক বেশিই বেড়ে গিয়েছে। এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে সায়েরা চলে যাওয়ার তিন দিনের মাথায়'ই মারা যান!
এর ভিতরে উদয়ের ফোন বন্ধ ছিলো একটানা এক সপ্তাহ।
সে কারণে আনিকার ফোন ধরতে পারেনি সে।
আজকে ছেলেকে নিয়ে আবার আনিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে উদয়। দরকার পড়লে আনিকার পায়ে পড়ে মাফ চাইবে। চাকুরী ছেড়ে দিবে। ছেলেটাকে নিয়ে গ্রামেই থাকবে।
আনিকার সামনে উদয় আর তাঁর ছেলে। আনিকা উদয়ের ছেলেটাকে খেয়াল করছে ভালো করে। ঠিক নাকের বাম পাশে একটা তিল ফারাযের, আর আনিকার ও সেখানেই সেরকম একটা তিল! ছেলেটাকে কাছে ডাকতে ইচ্ছে হলেও ডাকেনি। মনের অবস্থা মৃত্যু শয্যাশায়ী তাঁর।
আনিকা কষ্ট হলেও উদয়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে ক্ষমা চেয়ে নিলো। আনিকার এরকম অবস্থাতে কীভাবে সে বলবে যে ছেলে টা দাঁড়িয়ে আছে পাশে সে তাঁরই সন্তান? উদয় বলেনি। ভেবেছিলো চলে যাবে। আনিকা শেষে বললো— পিচ্চি টা কে?
— ভাতিজা।
এ কথা শুনে ফারায কান্না করে দিয়ে বললো— আমি তোমার ভাতিজা আব্বু? তুমিও মায়ের মতো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তাহলে? আমাকে বিক্রি করে দিতে এসেছো এখানে না? আমি কী এতোই খাই পড়ি?
আনিকা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক হয়েই বললো— আপনার ছেলে? আপনার মতোই হয়েছে। কথার কড়া জবাব দিয়ে দেয়।
আনিকার এরকম স্বাভাবিক আচরণে উদয় অবাক হয়। আনিকার যে আর কিছু আসে যায় না উদয় বিবাহিত না কী অবিবাহিত তা নিয়ে৷ বরং উদয়ের ছেলেটাকে দেখে ভালোই লেগেছে। নাকের বাম পাশের তিলটার জন্য ভুলতেও পারবে না কোনোদিন। উদয় চলে যায়নি, বা আনিকাও চাকরীচ্যুত করেনি মিথ্যে বলার জন্য।
অবশ্যই করতো, শুধু ছেলেটার জন্য। নাহয় আনিকা মিথ্যে সহ্য করার বেটি নয়। শত যাই হোক। অফিসের পাশেই ছোট্ট বাসা নিয়েছে উদয়। বাপ ছেলে ভালোই থাকে। একটা স্কুলে ভর্তি করিয়েছে ফারাযকে। আনিকা রোজ লুকিয়ে একবার দেখা করে আসে। উদয়কে জানয়ে দেয় না।
ফারাযকে মানা করে দেওয়াতে সে ও বলে না। বাঘের গল্প শুনাচ্ছিলো ফারাযকে উদয়। ঘুমাচ্ছে না সে। হটাৎ বলে উঠলো— আচ্ছা আব্বু, আম্মু ডাক টা কী খুব খারাপ? আম্মু ডাকলে কেউ কষ্ট পায়? তোমার অফিসের আন্টিকে আজকে আম্মু ডেকেছিলাম আর উনি সমানে কান্না করলো কেনো?
উদয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো— কখন?
— কখন আবার, দুপুরে। রোজই তো আমার জন্য টিফিনে এটা ওটা আনে। তুমি নাকি পাঠাও। আবার তোমাকে বলতেও নিষেধ করে। কিন্তু আজকে উনি অনেক কান্না করেছে। আমার ভালো লাগছে না। ফোন দাও না স্যরি বলি।
উদয় আবার বিড়ম্বনায় পড়ে গেলো। ফোন দিতে বাধ্য হলো প্রায়। নাহলে ঘুমুচ্ছেই না। আনিকা ফোন ধরতেই ফারায বললো— স্যরি আন্টি। আমি আপনাকে কাঁদিয়েছি আজ।
আনিকার নীরব কান্নার শব্দ শুনতে পারছে উদয়। জবাব দিলো— রোজ কাঁদাবে এভাবে আম্মু বলে?
— আচ্ছা।
এভাবে ওরা কথা বলতেই আছে। পিচ্চি ছেলে টা কতো কথা বলতে পারে। উদয় ভাবছে কে জন্ম দিলো আর কে মা হলো!
এভাবেই একটু একটু ফারাযকে নিয়েই ফেলেছে আনিকা। ছেলে টা তাঁর কাছে আসতেই চায় না। এক চাঁদনী রাতে আনিকাকে ফোন দিয়ে বললো— পৃথিবীর চাঁদ আকাশে। আর আমার চাঁদ টা আপনার কাছে। তাঁকে ছাড়া আমার ঘুম হয় না।
— নিয়ে যান এসে। আমি কী আটকে রেখেছি?
— না, কিন্তু চাইলে আমাকে আটকে রাখতে পারেন।
— আমার এত সাহস নেই।
ফোন টা কেটে আনিকা ঠিকই খুশিতে আত্মহারা। নয় তারিখ তাঁদের বিয়ে হয়। হানিমুন করতে যায় গ্রামের বাড়ি। এখন উদয় অফিসের না হলেও ঘরের কুকার। শ্বশুরবাড়িতে সে থাকে না।
সেই ছোট্ট বাসাতেই থাকে। আনিকারও সেখানে থাকতে কোনো আপত্তি নেই। লোকেরা কতকিছু বলে। আনিকা সেদিকে কান দেয় না।
কিছু বছর পরের কথা।
সূর্যি মামা এখনো উঁকি দেয়নি।
আনিকা উদয়কে ডেকে বললো— আচ্ছা তোমার রক্তের গ্রুপ কী?
— ও পজেটিভ।
— তাহলে জলদি উঠো। একজনকে রক্ত দিতে হবে। সঠিক সময়ে না দিতে পারলে উনি ও মারা যাবেন। উনার পেটের সন্তান ও মারা যাবে।
— তোমার ও তো ও পজেটিভ। তুমি ফারাযকে নিয়ে যাও। একেবারে স্কুলে দিয়ে এসো। আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।
— খালি ঘুম আর ঘুম। এই ঘুমই আমার এক নাম্বার সতিন। কবে এই সতিনটাকে ছাড়বে বলো?
— কালকে ছাড়বো। আজকে যাও।
— মনে থাকে যেন।
রোজই এক কথা বলে উদয়। আনিকারও উদয়কে এ নিয়ে বকতে ভালো লাগে।
ফারাযকে নিয়ে আনিকা রক্ত দিতে চলে গেলো। এর পর আরো দুই ঘণ্টা ঘুমানোর পর উঠলো উদয়। ভুলে ফারাযের স্কুল ব্যাগটাই রেখে গেছে তাড়াহুড়োয়। ফোন দিবে বলে ফোন তুলতেই আনিকার ফোন— ঘুম থেকে উঠা হয়েছে মহারাজের? তাহলে ফারাযের ব্যাগ টা স্কুলে দিয়ে আসা হোক। আমি অফিসে যাচ্ছি।
— আচ্ছা, তারপর কী রক্ত দিলে?
— হুম। কিন্তু একটা ব্যাপার কী জানো? মহিলা টা কীভাবে যেন ফারাযের দিকে তাকাচ্ছিলো!
— মহিলা? কী বলো? ফারাযের দিকে কীভাবে তাকাবে কেনো? আচ্ছা নাম কী উনার?
— সায়েরা আক্তার। উনার স্বামীটাও কী খচ্চর। একবার ও না কী দেখতে আসে না! সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে কী জানো? জীবনের প্রথম কাউকে রক্ত দিলাম আর সে তারপর এক ঘণ্টাও বাঁচলো না! বাচ্চা সহ মারা গেলো!
উদয় চুপ হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর বললো— ডিজিল্যাব হাসপাতালেই তো? কত নাম্বার কেভিনে?
— ৭৭, কেনো? আচ্ছা আমার সময় নেই। পরে কথা হবে। তুমি ফারাযের ব্যাগ টা জলদি দিয়ে যাও।
— আচ্ছা লক্ষ্মীটা।
— ঢং, রাখছি।
উদয় তাড়াহুড়ো করে ফারাযকে ব্যাগ দিয়ে হাসপাতে যায়। ৭৭ নাম্বার কেভিনে গিয়ে দেখে। এই সায়েরা আক্তার আর কেউ নয়। তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা, স্ত্রী এবং ছেলের আম্মু'ই!
সায়েরাকে দেখে নিজের অজান্তেই উদয়ের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো— দুর্ভাগ্য তোমার সায়েরা। এতো ভালো একটা মেয়ের রক্ত নিয়েও বাঁচতে পারলে না। পরপারে আল্লাহ্ তোমাকে ভালো রাখুক।

Address

Tangail
1997

Telephone

+8801704352523

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Md Shohag 2.0 posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Md Shohag 2.0:

Videos

Share