Bindas Life

Bindas Life মনে হয় আপনাদের সাথে আর বেশি দিন থাকতে পারব না ।
(52)

06/12/2024

#পারমিতা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Nabila_Ahmed

মিতা বিছানায় শুয়ে নিজের হাতের কব্জির দিকে তাকিয়ে আছে। শক্ত করে চেপে ধরাতে অরিয়নের আঙ্গুলের ছাপ বসে রয়েছে। অরিয়নের এই রূপটা তো কোনদিন দেখেনি মিতা। আফরিনের শরীরে কোনোদিন কোনো ফুলের টোকাও দিতে দেখেনি মিতা। "আমি আফরিন না তাই?" কথাটা বিরবির করে বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মিতা।

"ভালোবাসলে কি এতোটাই কষ্ট হয়? তার অবহেলা কেনো সহ্য করা যায় না?" ভাবতে থাকে মিতা।
" আফরিনের সাথে অরিয়নের সম্পর্ক ৬ বছরের ছিলো মিতা, ও কীভাবে সহ্য করছে আফরিনের চলে যাওয়া? তাও অন্যের সাথে?তোর কষ্ট কি ওর থেকেও বেশি?" নিজের মন প্রশ্ন করে মিতাকে। "আমি সব জানি, আমি জানি আপুকে ভুলা সম্ভব নয়, আমি ভুলে যেতে বলছিও না। আমি শুধু বলছি তুমি মুভ অন করো, যেভাবে আপু করেছে, তোমার মনের কোণে আমাকে একটু জায়গা দাও" নিজের মনের করা প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজেই দেয় মিতা।

ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ বন্ধ হতেই নিজের চোখ মুছে উঠে বসে মিতা। গতকাল রাতে ক্লান্ত থাকার কারণে রুম বা আশে পাশের কিছুই ভালো ভাবে খেয়াল করেনি মিতা। তবে এখন যখন বিছানায় উঠে বসলো তখন সব কিছু একবার ভালো করে দেখে নিচ্ছে। রুমটা আকারে অনেক বড়। ডাবল বেড, ড্রেসিং টেবিল, কাপড় রাখার জন্য আলমারি, একপাশে সোফা সেট রাখা। রুমের দেওয়াল গ্রে কালারের। বেড সীট থেকে শুরু করে সব আসবাবপত্র সাদা রঙের। রুমের আসবাবপত্র আর ইন্টোরিয়র দেখে মনে হচ্ছে রুমটা সাজানো হয়েছে ১৮শতকের থিমে। একেবারে পুরাতন ডিজাইনের নয় আবার একদম নতুন ও নয়। রুমটা একটা এলিগেন্ট এলিগেন্ট ভাব দিচ্ছে।

অরিয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও আর না তাকিয়ে সরাসরি নিজের কাপড় নিতে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বেবি ব্লু কালারের শার্ট আর নেভি ব্লু কালারের প্যান্ট বের করে পরে নেয়। মিতা আড় চোখে দেখছে অরিয়ন কি করছে। অরিয়নের কাপড় পরা হলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আচরিয়ে নেয়। সোফার পাশেই রাখা টেলিফোন নিয়ে কল দেয় অরিয়ন।

--Bonjour, service en chambre ?
(হ্যালো, রুম সার্ভিস?)

--Je veux commander le petit-déjeune.
(ব্রেকফাস্ট অর্ডার করতে চাই)

--405.

--Un verre de lait, des crêpes, une omelette aux œufs, des fruits et de l'eau.
(এক গ্লাস দুধ, প্যানকেকস, ডিমের অমলেট, ফল এবং পানি)

অরিয়ন ফোনে কি কথা বললো মিতা কিছুই বুঝেনি। তবে এটা ফ্রান্সের ভাষাই হবে বলে মনে হচ্ছে মিতার। অরিয়ন অন্য ভাষা বলতে পারে সে সম্পর্কে কোনো আইডিয়াও ছিলো না মিতার। সব থেকে বড় কথা ভাষাটা যেন একদম বেমানানও লাগলো না অরিয়নের মুখে।

অরিয়ন ফোন রেখে কোনো কথা না বলে আবারও আলমারি থেকে নিজের জ্যাকেট বের করে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। এই অচেনা শহরে বা এই রুমে মিতা কি করবে তা যেন একবারও ভাবলো না অরিয়ন।

অরিয়ন রুম থেকে বের হতেই মিতা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে যেতে দু পা এগোতেই আবারও দু পা পেছনে এসে সামনের দিকে তাকাতেই যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো মিতার। সামনের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে প্যারিসের সেই বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার। ছবিতে না যত সুন্দর লাগতো এই দিনের আলোতে জানালা থেকে দেখতে তা যেন আরও হাজারগুন বেড়ে গেলো। গতকাল রাতে রুমে প্রবেশ করে কোনোদিকে তাকানোর সুযোগ হওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিতা কিন্তু আজ চোখের সামনে সব স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারছে।

জানালার দিকে এগিয়ে গিয়ে আশে পাশের জায়গা গুলো ভালো করে দেখে নিচ্ছে মিতা। সামান্য রাস্তাঘাটও এতোটা সুন্দর হতে পারে তা জানা ছিলো না মিতার। সবকিছু যেন শিল্পীর আকাঁ ছবি মনে হচ্ছে।
দরজায় নক করতেই ঘোর কাটে মিতার। অরিয়ন ভেবে দরজা খুলতে চলে যায় মিতা। দরজা খুলতেই সামনে দেখতে পায় সুদর্শন এক পুরুষকে। লোকটির পরনের পোশাক দেখে বুঝতে পারে সে এই হোটেলের একজন। হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রে তে কি আছে তা দেখা যাচ্ছে না।

--Bonjour. Your breakfast mam.
মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলে লোকটি।

ব্রেকফাস্ট? মিতা তো কোনোকিছু অর্ডার করেনি। পরক্ষণেই মনে পড়ে অরিয়ন ফোন করেছিলো। তাহলে হয়তো দু জনের জন্য ব্রেকফাস্ট আনিয়েছে, ভাবে মিতা।

--May i?
মিতা কিছু বলার আগেই লোকটি রুমে ট্রে নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি চায়।

মিতা মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দেয়। ট্রে হাতে রুমে প্রবেশ করে সোফার সাথে রাখা টি টেবিলের কাছাকাছি ট্রে রাখে লোকটি।

--Thank you mam.

আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় লোকটি। রুমের দরজা আটকিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায় মিতা। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ট্রে যেমন ছিলো তেমন ই রাখা দেখে বুঝতে পারে অরিয়ন আসেনি। অরিয়ন আসলে একসাথে খাওয়া শুরু করবে বলে বেলকনিতে রাখা সোফায় গিয়ে বসে মিতা। ডিসেম্বরের ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া এক অন্য রকম অনুভূতি দিচ্ছে। বড়দিন উপলক্ষে আশে পাশের সব কিছু খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, তা এখন সোফায় বসে বসে খেয়াল করলো মিতা।

মোবাইলে কল বাজতেই আশপাশ থেকে নিজের ধ্যান সরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায় মিতা। মায়া চৌধুরী কল করেছে।

--হ্যালো, মা।

--আমি ভালো আছি, তুমি আর বাবা কেমন আছো?

--না তেমন খারাপ লাগেনি, অরিয়ন ভাইয়া আমাকে দেখে রেখেছিলো।

--হ্যাঁ আনন্দ করবো, হ্যাঁ হ্যাঁ পিকও পাঠাবো।

--ওকে মা, আল্লাহ হাফেজ।

কল কেটে মিতা কতক্ষণ সোফায় বসে সব কিছু দেখতে ব্যস্ত ছিলো জানেনা। শুধু জানে পেটে প্রচন্ড খুদা আর অরিয়নেরও আসার কোনো নাম নেই। নিজের জায়গা থেকে উঠে ট্রে থেকে ঢাকনা সরাতেই যেন মন ভেঙ্গে গেলো মিতার। আর কতবার মন ভাঙ্গবে মিতার? ট্রে তে খাবার শুধু একজনের। তার মানে অরিয়ন রুমে মিতার সাথে খাবে না তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।

নিজে নাস্তা শেষ করে বসে রইল মিতা। দুপুরে দরজায় নক শুনতেই অরিয়ন এসেছে ভেবে দৌড়ে দরজা খুলে মিতা। দুপুরের খাবার নিয়ে আবারও এসেছিলো লোকটি, যাওয়ার সময় সকালের ট্রে নিয়ে গেছে।

"কেয়ার যখন করোই না, তাহলে খাই না খাই তার এতো চিন্তা কেনো" মনে মনে ভাবে মিতা। দুপুরে একা একাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মিতা। অচেনা শহরে আর কি করবে জানেনা। যেমন রাগ হচ্ছে তেমন ইচ্ছে করছে অরিয়নকে কামড়ে ধরে ইচ্ছামতো শাস্তি দিতে।

রুমের মধ্যে শব্দ শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে মিতা। সোফায় বসে নিজের জুতার ফিতা খুলতে ব্যস্ত অরিয়ন। "দরজা তো লক? তাহলে কি চাবি দিয়ে খুলে ভিতরে এসেছে?" ভাবতে ভাবতে জানালার দিকে তাকায় মিতা। দিনের আলো দেখা যাচ্ছে না। "সন্ধ্যা হয়ে গেলো আর বুঝতেই পারলাম না?" মনে মনে ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা।
অরিয়নের সামনে গিয়ে কোমরে দু হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অরিয়ন মিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও না দেখার অভিনয় করে নিজের জুতা খুলে একপাশে রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে টিপতে থাকে।

মিতাও কিছু না বলে ভ্রু কুচকে, দাঁতে দাঁত চেপে অরিয়নের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল।

--কি হয়েছে? ঘাড়ের উপর এসে দাঁড়িয়েছিস কেনো?
মিতাকে আর ইগনোর করতে না পেরে শেষমেষ মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।

মিতা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ গম্ভীর করে নিজের দু হাত দিয়ে অরিয়নের চুলগুলো মুঠকরে ধরে টানতে থাকে রাগে।

--কি হয়েছে জানোনা? কেনো দাঁড়িয়েছি বলছি দাঁড়াও।
রাগন্ত মিতা চুল টানতে টানতে বলে।

মিতার এহেন কাজে যেন অপ্রস্তুত হয়ে পরে অরিয়ন। মিতা এমন কিছু করবে তা ভাবতেও পারেনা অরিয়ন। নিজের মাথায় ব্যাথা অনুভব করতেই নিজের হাত দিয়ে মিতার হাত ধরে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে অরিয়ন।

--কি করছিস ছাড়, ছাড় বলছি পরী।
নিজের হাত দিয়ে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন।

--সারাদিন আমি রুমের মধ্যে বন্ধি ছিলাম।
কথাটা বলে আরও জোরে চুল টানতে থাকে মিতা।

অরিয়ন আর মিতার টানাটানিতে সোফায় বসে থাকা অরিয়নের কোলের উপর উঠে বসেছে মিতা। তাও চুল ছাড়াতে পারছে না অরিয়ন।

--ছাড় বলছি পরী, না হয়..না হয়।
কথাটা বলেই নিজের ডান হাত দিয়ে পরীর চুল মুঠ করে টেনে ধরে অরিয়ন।

মিতা এবার নিজের মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলেও অরিয়নের চুল ছাড়লো না।

--ছাড়, না হয় কীভাবে ছাড়...
অরিয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিয়নের কানের নিচের দিকে গলায় কামড় বসিয়ে দেয় মিতা।

--ফা**
মিতার চুল শক্ত করে টেনে ধরে গোংরানি দিয়ে উঠে অরিয়ন।

অরিয়নের এতোক্ষণ চুল ছাড়ানো যেন সবটাই অভিনয় ছিলো, মিতার হাত নিমিষেই চুল থেকে ছাড়িয়ে মিতাকে সোফার উপর ঠাস করে শুয়িয়ে দেয়। পরক্ষণেই নিজের হাত দিয়ে মিতার মুখ চেপে ধরে। রাগন্ত চোখে মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতাও যেন অরিয়নকে দেখে ভয় পেলো না, রাগে গা শিরশির করছে মিতার। নিজেও রাগন্ত চোখে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে।

--এতো বড় সাহস তোর।
মিতার দু গাল নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে অরিয়ন।

--যা করেছি বেশ করেছি।
গম্ভীর কন্ঠে বলে মিতা।

মিতার সাহস দেখে যেন অরিয়নের রাগ আরও বেড়ে গেলো। মাথায় কি চাপলো নিজেও জানে না।

--আহ..
হুট করে অরিয়ন মিতার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়, ব্যাথায় মিতাও চিৎকার করে উঠে।

এখন যখন নিজে ব্যাথা অনুভব করছে তখন ভাবছে কেনই বা অরিয়নকে কামড়ানোর বুদ্ধিটা আসলো মিতার মাথায়। রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। অরিয়নের কামড়ে মনে হচ্ছে ঘাড় থেকে কেউ মাংস তুলে নিতে চাচ্ছে।
নিজের থেকে অরিয়নকে ছাড়ানোর জন্য আবারও নিজের হাত অরিয়নের পেছনের চুলগুলো শক্ত করে ধরে।

মিতার গলার মাংস দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতেই যেন মিষ্টি এক ঘ্রাণ এসে পৌঁছালো অরিয়নের নাকে। ঘ্রাণটা যেন নেশার মতো কাজ করছে হঠাৎ করে। সব কিছু যেন নিজের জায়গায় চুপ করে রইল। নিজের চুলে মিতার টান অনুভব করতেই যেন এক অন্যরকম কিছু অনুভব করতে শুরু করলো অরিয়ন। কামড়ানো জায়গায় নিজের ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করতেই নড়েচড়ে উঠে মিতা।

এতোক্ষণ যেখানে কামড়ের কারণে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছিলো মিতা এখন সেখানেই অরিয়নের চুমু দেওয়া অনুভব করছে মিতা।

--অরিয়ন?
ধীরে ধীরে বলে উঠে মিতা।

অরিয়ন যেন কিছুই শুনতে পেলো না। গলাতে একের পর এক চুমু দিয়ে যাচ্ছে।

--অরিয়ন?
আবারও ডাক দেয় মিতা।

অরিয়ন এবার একটু নড়েচড়ে উঠে। মনে হচ্ছে ডাক দেওয়াতে বিরক্ত হচ্ছে। শরীরের অঙ্গভঙ্গিতে তেমনই মনে হলো মিতার।

--অরিয়ন?
এবার জোরে ডাক দেয় মিতা।

মিতার ডাক শুনে যেন ঘোর কেটে গেলো অরিয়নের। কি করছিলো তা যেন পাথরের মতো এসে মাথায় আঘাত করলো। তার থেকে বড় কথা কার সাথে করছিলো তা। এক লাফে মিতার উপর থেকে উঠে গিয়ে সোফার এক কর্ণারে গিয়ে বসে অরিয়ন।

অরিয়ন সরে যেতেই মিতাও উঠে বসে সোফাতে। এক কর্ণারে বসে থাকা অরিয়নের দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখতে পায় নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে সোফা ধরে রেখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরা, মাথা আর গলার রগগুলো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে রাগ উঠার কারণে।

--রেডি হয়ে নে।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন।

--কেনো?
জিজ্ঞেস করে মিতা।

--কেনো জানিস না? এখানে এসেছি কি কামড়াকামড়ি করতে? বাইরে বের হবো তাই।
রাগ হয়ে চেচিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।

রাগটা কি মিতার উপর হচ্ছে নাকি নিজের উপর তা নিজেই বুঝতে পারছে না অরিয়ন।

মিতার আর কোনো কথা না বলে নিজের জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

****************

মিতা আর অরিয়ন যখন হোটেল থেকে বের হলো তখন রাত হয়ে গিয়েছে। মিতা জিন্স, টপস আর ওভারকোট পরে বের হয়েছে। হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা পড়ায় ওভারকোট পরতে হয়েছে। ভীরের মধ্যে এক পাশ করে হাটতে হাটতে আশেপাশের সব কিছু আগ্রহ নিয়ে দেখছে মিতা।

কোথায় যাচ্ছে তা মিতা ভালোই জানে। ডিসেম্বরে প্যারিসে প্রচুর ভীর হয়। যার কারণে গাড়ি নেওয়ার থেকে কাছের পথ হাটা বেস্ট। তাই অরিয়ন আর মিতা হাটা শুরু করেছে আইফেল টাওয়ার এর উদ্দেশ্যে। বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হওয়ার সময় জানালার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পায়, রাতের আইফেল টাওয়ার। যার সৌন্দর্য বর্ণনা করা কথায় অসম্ভব। হঠাৎ করেই কয়েক মিনিটের জন্য পুরো আইফেল টাওয়ারের লাইট গুলো ক্রমাগত জ্বলতে ও নিভতে থাকে, যার কারণে আইফেল টাওয়ার দেখতে আরও বেশি সুন্দর লাগে।

রাস্তায় হাটতে থাকা মিতা যতো হাটছে ততোই আইফেল টাওয়ারের কাছাকাছি যাচ্ছে। মিতার পিছনে হাটতে থাকা অরিয়নের দৃষ্টি যেন ক্ষণিকের জন্যও মিতার থেকে সরছে না। মিতার হাত, চোখ যেখানে যেখানে যাচ্ছে অরিয়নের দৃষ্টিও যেন সেখানে সেখানে যাচ্ছে। আনমনে হাটতে থাকা মিতা পেছনের দিকে তাকাতেই মুখ গম্ভীর করে নেয় অরিয়ন।

এই প্রথমবার, অরিয়নের সামনে হাটতে থাকা পরীকে দেখে মনে হয়নি, সেই ৫ বছরের ছোট পরী হাটছে। মনে হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারী হাটছে। যেই নারীর দিকে আকর্ষণ নিয়ে কোনো পুরুষ তাকাতে পারে।

সব কিছু থেকে বেখবর মিতা লক্ষ্য করেনি,গম্ভীর মুখ করা চেহারায় এক অজানা হাসি ফুটে উঠেছে।

চলবে.......

06/12/2024

#তোমাতেই_আসক্ত
#পর্ব:২১
#তানিশা সুলতানা

নিজের ওষ্ঠের ওপর হাত রাখে আদ্রিতা। মাথা ভনভন করছে। কি হয়ে গেলো তার সাথে? কি ছিলো এটা?

আবরার তাসনিন এখনো তাকিয়ে আছে আদ্রিতার অধর পানে। যেনো মৌমাছি মধুর সন্ধান পেয়েছে। এবং সমস্ত মধু নিজ আহরণে না নিয়ে আসা পর্যন্ত নজর ফেরাবে না বা শান্ত হবে না। আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। মৃদু স্বরে বলে "আ...পনি আমার ভাই। এটা ঠিক হলো না।

আবরার বোধহয় বিরক্ত হলো। ফোঁস করে শ্বাস টেনে আদ্রিতার গালে হাত রাখে এবং দাঁতে দাঁত চেপে বলে

"হাজব্যান্ড এ'ম ইউওর লাইফ পার্টনার। এন্ড ইটস ট্রুথ

আদ্রিতা শুনতে পেলো কি? বা বুঝতে পারলো কি?

আদ্রিতার নজর পড়ে দূরে অবস্থিত ভা ঙা ট্যাক্সির পানে। মুহুর্তেই কেঁপে ওঠে আদ্রিতার সমস্ত সত্তা। কাঁপা গলায় অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে

" আসিফ আদনান

আবরার বোধহয় মজা পেলো। আদ্রিতার কানে ওষ্ঠ ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে

"গেম ইহ ওভার ফাস্ট কিসস অলওয়েজ স্পেশাল ডে তেই করা উচিত।

#গল্প_তোমাতেই_আসক্ত

06/12/2024

এই পোস্টটি সামনে আসলে লাইক কমেন্ট করে নিজের উপস্থিতি দিন ।

কিছু পোষ্ট করব ।

 #প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৫৪হাতে, পায়ে মুজা পরে গায়ে মোটা এক সোয়েট শার্ট পরা সত্বেও ঠান্ডায় যেন...
05/12/2024

#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫৪

হাতে, পায়ে মুজা পরে গায়ে মোটা এক সোয়েট শার্ট পরা সত্বেও ঠান্ডায় যেন পৌষ'র দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। এয়ারপোর্টে নামা মাত্রই পৌষ'র শরীর অচল হয়েছে। প্লেনে ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা হলো ওর। বমি করেছে তিনবার। ফ্লাই করার সময় যখন প্রথম ধাপে বমিটা হলো তখন তৌসিফ বেচারা প্রতিপক্ষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সময় পায় নি। হুটহাট করেই যেন বমির দৃশ্যটা হলো। পৌষ হয়তো নিজেও বুঝতে পারে নি এমন কিছু হবে। তৌসিফ খুঁতখুঁত করা পুরুষ। সে নাক কুঁচকালো না। বমির টক গন্ধেও তার যেখানে নিজের বমি পাওয়ার কথা সেখানে কি না তৌসিফ ছিলো বিচলিত। কতক্ষণে পৌষ'কে ধরবে এটাতেই মগ্ন ছিলো ও। দ্বিতীয় দফায় প্লেন একবার ঝাঁকি খেলো তখন পৌষ তলিয়ে দিলো যদিও ততটা না। তৃতীয় বমি হলো ল্যান্ডিং এর সময়। শরীর কহিল হলেও সদা সচেষ্ট ছিলো পৌষ তার জামাই এর টাকা উসুল করতে। এই যেমন প্লেনে যতবার খাবার সার্ভ করা হয়েছে ততবারই একটার জায়গায় দুটো নিয়েছে ও। তৌসিফ যা খাবে না তা সহ নিয়েছে। নিজের ব্যাগে যতটা পেরেছে শুকনো খাবার ভরেছে। মাঝে চকলেট সার্ভ করা হয়েছিলো পৌষ দুটো নিয়ে আবার ডেকে দুটো নিলো। তৌসিফ না পেরে একবার চাপা স্বরে ধমকালেও পৌষ দ্বিতীয় বেগে বলে উঠে,

-- লাখ টাকার সোধ আমি তুলব না? আমি তো পারলে এদের দিয়ে হাত-পা টিপিয়ে নিতাম। আশ্চর্য আমার আর বমি কেন আসছে না? ওরা পরিষ্কার করবে। টাকা আমি উসুল করেই যাব। আমার জামাই এর হালাল টাকা।

তৌসিফ এহেন পা'গলামি দেখে বিরক্ত হয় না। তার ভালোলাগে সবটা৷ এই দুষ্ট পাখি কতক্ষণই বা টইটই করবে? একটু পরেই ক্লান্ত হয়ে যাবে। তৌসিফ তখন অতীত থেকে ঘুরে আসে একটু আকটু। পিয়াসী অবশ্য এসবে কোনরূপ পাত্তা দিতো না। দুই মাস অন্তর তাদের একটা করে ট্রিপ দেয়া হতো। প্রতি মাসে তাকে স্বর্ণ দেয়া হতো। মূলত পিয়াসী ছিলো বিলাসীতা প্রিয়। তৌসিফও দুই হাত খুলে উজাড় করে দিয়েছিলো। নিজের সবটা ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছিলো। হাজার চেয়েও ছোট্ট একটা তৌসিফ ও পায় নি। হয়তো ভাগ্যে ছিলো এই দুর্দান্ত পৌষরাত যার ঔরসে আসবে তৌসিফে'র সন্তান।

আপাতত তৌসিফে'র এক বাহুর ভাজে পৌষ'র এক হাত ঢুকানো। তৌসিফ অন্য হাতে ফোনে কাউকে কল দিচ্ছে। পৌষ পরপর দুটো হাঁচি দেয়া মাত্রই তৌসিফ ওকে টেনে কাছে নিলো। নিজের পরণে থাকা জ্যাকেটের জিপ এক টানে খুলে পৌষ'র মাথাটা নিলো সেখানে। উষ্ণ, তপ্ত একখানা বুক। শক্ত অথচ অতি কোমল পৌষ'র জন্য। পৌষ নাক টেনে শ্বাস নিলো। তৌসিফে'র ঘ্রাণ তখন পৌষ'র নাসারন্ধ্র ভেদ করে হৃদপিণ্ড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তৌসিফ ওকে ওভাবে নিয়েই ফোনে গম্ভীর কণ্ঠে শুধু বললো,

-- কাম ফাস্ট।

অপর পাশের ব্যাক্তির কথা শোনা গেলো না। পৌষ কাঁপতে কাঁপতে বললো,

-- কে আসবে নিতে? এখানে কেউ চেনা আছে আপনার?

তৌসিফ বউয়ের লাল হয়ে আসা নাকটা টেনে ধরে। বরফের মতো ঠান্ডা সেটা। তৌসিফ ঝুঁকে আলতো চুমু দিলো তাতে। পৌষ সরে যেতেই ওকে টেনে কাছে নেয় ও। পৌষ কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

-- এখানে কত মানুষ।

-- ইটস অস্ট্রেলিয়া হানি।

-- তাতে কি? লজ্জা শরম ভুলে গুলিয়ে খেয়ে ফেলবেন আপনি?

-- যার যার হক বুঝে নিতে হয়।

-- শুনেছি বুড়োরা বউ আদর করে বেশি।

ঝলমলে, গ্লোয়িং তৌসিফে'র মুখটায় আচমকাই আঁধার ছেঁয়ে গেলো। সুন্দর ঠোঁটটায় থাকা হাসিটুকু যেন গিলে ফেললো ও। পৌষ অবাক হয়ে সেকেন্ডের ব্যবধানে তৌসিফে'র পরিবর্তন দেখে। অবাক হতে গিয়েও যেন হয় না। জামাই তার এসব নিয়ে খুবই সচেতন। পৌষ হাত উঁচু করে তৌসিফে'র গালের দাঁড়িতে রেখে হেসে দিয়ে বললো,

-- মাফ চাইছি ভাই। আপনি জোয়ান। আমি বুড়ি। কুড়িতে এমনিতেই মেয়েরা বুড়ি। আমার তো কুড়ি পার হয়েছে।

তৌসিফে'র আধার সরলো না। পৌষ হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরে বুকে। তৌসিফ এক হাতে ধরে ওদের সামনে থামা গাড়িতে উঠলো। পৌষ তৌসিফে'র গা ঘেঁষে বসে একদম। তৌসিফ মানুষটা গরম গরম। আশেপাশে প্রচুর ঠান্ডা সাথে বাতাস বইছে। সুন্দর রাস্তা দেখে পৌষ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। বাড়ী-ঘর খুব কম এখানে। মাঝে শুধু গাছপালা। রাস্তাটাও ফাঁকাই বলা চলে। মাঝেমধ্যে দুই একটা গাড়ি যাচ্ছে। তৌসিফে'র বাহু বন্ধনে থেকে এতটুকুই দেখে পৌষ।
হোটেলে পৌঁছাতেই পৌষ অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। এটা মূলত তার কাছে হোটেল লাগছে না। আলিসান বাড়ীই বলা চলে। চার নাম্বার ফ্লোরে লিফট থামতেই পৌষ দেখলো কিচেন সহ একটা এক রুমের বিশাল জায়গা। বাথরুম দেখে দুটো ঢোক গিলে ও। কাঁচের গ্লাসের বাইরে দৃষ্টি দিয়ে আরেক দফা অবাক হলো পৌষ। চোখ জুড়ানো এক সুন্দর দৃশ্য। সময়টা রাত হওয়াতে আগুন জ্বালিয়ে কেউ কেউ ড্রিংক করছে। খাওয়া দাওয়াও চলছে। তৌসিফ গায়ের কোর্ট খুলতে খুলতে ডাকলো,

-- হানিই?

-- হুঁ?

অমনোযোগী উত্তরে তৌসিফ এগিয়ে এলো। জুতা খুলে দিতে বলতেই পৌষ ফিরে ওর দিকে। পিটপিট করে তাকিয়ে বসে জুতা খুলতে খুলতে বলে,

-- হানিমুনে বউ দিয়ে কেউ কাজ করায়?

-- আমার বউ করে।

-- জামাই করায়।

-- বাইরে কি দেখছিলো আমার তোতাপাখি?

-- ওখানে পার্টি হচ্ছে মনে হয়।

-- হ্যাঁ। আমরাও ইনভাইটেড। হোটেলের তরফ থেকেই এটা।

পৌষ এক জুতা খুলেই লাফিয়ে উঠে। ঝলমলে গলায় বলে,

-- চলুন তাহলে।

তৌসিফ এক ভ্রুঁ উঁচু করে বললো,

-- হুয়াই?

-- পা*গল আপনি? দাওয়াত দিলো যাব না? ওখানে খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে। রাতে ওখানে খেলাম তাহলে টাকা বাঁচলো তো নাকি? এখানে আর খাব কেন?

তৌসিফ নাক কুঁচকে হাসলো। পৌষ সেইদিকে তাকিয়ে রইলো। এভাবে তৌসিফ যখন হাসে তখন তাকে মারাত্মক লাগে। পৌষ অবাক হয়ে তখন সেই হাসি গিলে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই পুরুষ এত সুন্দর কেন? কোন কপাল পুড়ি একে ছেড়ে গেলো? তার কি মন চায় না এই হাসি আজন্মভর তাকিয়ে দেখতে? তার কি বুকে উত্তাল প্রেমের ঢেউ উঠতো না এই হাসি দেখে? পৌষ তো পা'গল বনে যায়। তার আত্মাটা কেমন ছলকে উঠে। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। মন চায় সেই অনুভূতি পুষে রেখে দিতে। বড়ই সুন্দর এক অনুভূতি। প্রমময় অনুভূতি।

#চলবে....

[ ছোট পর্বের জন্য খুবই দুঃখীত। সামনে ফাইনাল পরিক্ষা তাই একটু ব্যস্ত।]

05/12/2024

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধৃতি ধীর পায়ে বাইরে বেরিয়ে আসে৷ বাইরে এসেই সে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
"একটি মেয়ের জীবনে কিছু সিদ্ধান্ত খুব ভেবেচিন্তে নিতে হয়। বিয়েও ঠিক সেই রকমই একটা সিদ্ধান্ত। আমি তাড়াহুড়ো করে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। আগে আমাকে আমার জীবনটা গুছিয়ে নিতে হবে৷ এ কয়েক মাস যাবত যে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমি গেছি সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আর সে জন্যই আমি অনুরোধ জানিয়ে বলছি,আমাকে এখন এই বিষয় নিয়ে যেন আর কোন রকম কোন জোরাজুরি করা না হয়। আশা করি, আমার এই কথাটা আপনারা রাখবেন।"

আলমগীর পাটোয়ারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
"তোমার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই ধৃতি৷ তুমি নিজের জীবনের ব্যাপারে যা ভেবেছ তাতে ভুল নেই। তবে আমার পরামর্শ যত দ্রুত নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিয়ে জীবনটা নতুন ভাবে শুরু করতে পারবে তোমার জন্য ততোটাই ভালো।"

আকাশও বলে,
"তোমার জীবন গুছিয়ে দিতে পাশে থাকতে পারি তো? একজন বন্ধু হিসেবে?"

ধৃতি মৃদু হাসে। আকাশ বুঝতে পারে ধৃতির ইশারা ইতিবাচক। সে মনে মনে বলে,
"এক সময় তোমার সাথে প্রেমের ধাঁরায় ভেসে যাব, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তবে তার আগে আমাদের সুন্দর একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। একে অপরকে আরো বেশি চিনতে হবে, জানতে হবে। এই সময়টাই আমি চাই।"

এদিকে আরশাদ উদ্বিগ্নতার সাথে ধৃতিকে জিজ্ঞেস করে,
"আমার প্রতি তোমার কি মনোভাব ধৃতি? এই বিষয়টা দয়া করে পরিস্কার করো।"

ধৃতি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
"এই ব্যাপারটা আমি আরো অনেক আগে ক্লিয়ার করেছি আরশাদ সাহেব। আপনার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র রাগ নেই। আপনি আমার অনেক উপকারও করেছেন, আমার কঠিন সময়ে আমাকে সাহায্য করেছিলেন সেসব ঋণ হয়তো আমি কখনোই শোধ করতে পারব না। তবে কি জানেন, যখন প্রসঙ্গ একজন জীবনসঙ্গীর তখন জীবনে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গীর বেশি প্রয়োজন। আপনি মানুষ হিসেবে যথেষ্ট ভালো, তবে আপনার মধ্যে কিছু খারাপ গুণও আছে যা আপনাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে আমার পক্ষে কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মানছি,পৃথিবীর কোন মানুষই পারফেক্ট নয়, সবারই কোন না কোন দোষ ত্রুটি রয়েছে এমনকি আমি নিজেও সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নই৷ তবে প্রত্যেকের নিজের জীবনসঙ্গীর থেকে কিছু চাওয়ার থাকে। আমারও তেমন কিছু চাওয়া আছে। আমি বেশি কিছু কিন্তু চাই না শুধু এমন একজনকে চাই, যিনি আমাকে পর্যাপ্ত সম্মান দেবেন, আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন। আর বিশ্বাস এমন একটা জিনিস, যা হারালে কখনো আর ফেরত আসে না। আপনার উপর আমি অনেক বেশি বিশ্বাস করেছিলাম আরশাদ সাহেব। যখন আপনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমি সত্যি তখন অনেক খুশি হয়েছিলাম। আপনার সাথে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ কিন্তু বিয়ের মঞ্চে...আমি জানি যা ঘটেছে তাতে করে আপনাকেও সম্পূর্ণ দোষ দেয়া যায় না। আপনার মা আপনার থেকে সত্য লুকিয়ে ঠিক করে নি। কিন্তু সেই মুহুর্তে আপনার প্রতি আমার বিশ্বাস, আশা, আকাঙ্খা সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এখন আমি আর তা চাইলেও ফেরত আনতে পারব না। এত তিক্ত স্মৃতি নিয়ে আপনার সাথে নতুন করে আমি একটা সম্পর্ক শুরু করতে পারব না। তাই আমি আজ একটা ব্যাপার আপনাকে পরিস্কার করে বলে দিতে চাই। আর সেটা হলো আমার পক্ষে আপনাকে নিয়ে ভাবা আর কখনোই সম্ভব না। আমাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু..এটাই আমার সিদ্ধান্ত।"

আরশাদের মনোবল একদম ভেঙে যায়। এতদিন তার মনে যেটুকু আশার সঞ্চার ঘটেছিল তা যেন মুহুর্তের মধ্যে ধসে পড়ে। আরশাদ ব্যথিত স্বরে বলে,
"আর একটা সুযোগও কি আমি পাবো না ধৃতি?"

"সম্ভব নয়।"

আরশাদ আর কথা বাড়ায় না। ধৃতির দৃঢ অবস্থান তাকে বুঝিয়ে দেয় এখন সে যাই বলুক না কেন ধৃতি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না। ধৃতির জীবনে তার আর কোন যায়গা হবে না। এসব ভেবেই আরশাদ বলে ওঠে,
"তুমি যদি আমাকে সত্যিই আর সুযোগ দিতে না চাও তাহলে...আমিও তোমায় জোর করবো না। আমি চাই, তোমাকে..তোমাকে খুশি দেখতে। সেই খুশিতে যদি আমার অংশীদারিত্ব নাও থাকে তবুও আমি চাই তোমাকে সর্বোচ্চ খুশি দেখতে। সেই খুশিটা অন্য কারো সাথে হলেও.."

বলেই আরশাদ তাকায় আকাশের দিকে। ধৃতি বলে ওঠে,
"আপনাকে ধন্যবাদ আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর জন্য।"

আরশাদ গম্ভীর স্বরে পিছন ফিরে তাকায়। এখানে সবার সামনে নিজের চোখের জল ফেলতে চায় না সে। তাই ধীরে পায়ে আরশাদ বেরিয়ে এলো ধৃতির বাইরে থেকে৷ বাইরে বেরিয়ে এসে অঝোর ধারায় চোখের জল বিসর্জন দিতে লাগল। জীবনে এই প্রথম ভালোবাসার কষ্টটা অনুভব করল আরশাদ। ছোটবেলায় পড়া দেবদাসের গল্পটার কথা মনে পড়ছে আরশাদের। তাই সে নিজেকে দেবদাসের সাথে তুলনা করছিল। তুলনা করে দেখছিল, তার জীবনও দেবদাসের মতোই হয়ে গেছে। তবে সে ঘুরে দাঁড়াবে৷ একটা মেয়ের জন্য কষ্টে ডুবে থাকবে না। প্রয়োজনে বিজনেসের কাজে আরো ডুবে যাবে। যাতে করে এই ক্ষতটা ভুলে উঠতে পারে। এই চিন্তা থেকেই সে নিজের কোম্পানির ম্যানেজারকে ফোন করে বলে,
"গত কয়েক দিনের যে ফাইল গুলো জমে আছে সেগুলো আমার ডেস্কে সাজিয়ে রাখুন৷ আমি শীঘ্রই অফিসে ফিরে সেগুলো দেখছি।"

বলেই ফোন রেখে দিয়ে সে বলে,
"এই শহরের বেস্ট বিজনেসম্যান আমি। এত সহজে আমার ভেঙে পড়লে চলবে না।"

বলেই আরশাদ সামনের দিকে পা বাড়ায়।

★★★
সময় এগিয়ে যায় তার নিজস্ব গতিতে। এভাবেই দেখতে দেখতে ৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই ৩ মাসে ধৃতি নিজের জীবন অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। নিজের পড়াশোনায় আবারো শুরু করেছে। যাতে করে জীবনে আবারো এগিয়ে যেতে পারে। ধৃতি এবং আকাশ এখন অনেক ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেছে।

ধৃতি ও আকাশ একসাথে হেটে বেড়াচ্ছে ভার্সিটির অঙ্গনে। ধৃতি আকাশকে জিজ্ঞেস করল,
"আপনার নতুন কেসের ব্যাপারে কি হলো?"

"কেসটা তো সমাধানের পথে এগিয়ে গেছে। আমিই জিতব ইনশাআল্লাহ। জীবনে কোন কেসই আমি হারিনি।"

ধৃতি মৃদু হেসে বলে,
"ভীষণ ট্যালেন্ডেড আপনি।"

"তো আপনি নিজের জীবনের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিলেন ধৃতি?"

ধৃতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
"আমি চাই কোন সমাজসেবা মূলক সংগঠনে যুক্ত হতে। অসহায় মেয়েদের পাশে দাড়াতে। আমাদের সমাজে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা প্রতিনিয়ত অত্যাচার এবং নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে কিন্তু প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে যে সমাজ কি বলবে, কি প্রভাব পড়বে। আমি এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে চাই। এইসব মেয়েদের সহায় উঠতে চাই। ব্যস, এটুকুই।"

"অনেক সুন্দর ভাবনা। এই যাত্রায় আমাকে আপনার পাশে নেবেন তো?"

ধৃতি হেসে বলে,
"আপনি থাকতে চাইলে আমার আপত্তি নেই।"

"আমি সবসময় আপনার পাশে থাকতে চাই ধৃতি।"

আবেগঘন কন্ঠে বলে ওঠে আকাশ৷

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

 #গল্প_রং #৪৫(অবশিষ্ট অংশ)Tonni-Tonu বাইরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে ইতিমধ‍্যেই। সুভা জানালার গ্রীল ধরে শূন‍্যে দৃষ্টিতে দাঁ...
05/12/2024

#গল্প_রং
#৪৫(অবশিষ্ট অংশ)
Tonni-Tonu

বাইরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে ইতিমধ‍্যেই। সুভা জানালার গ্রীল ধরে শূন‍্যে দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে। সুমন এখনো ফেরেনি। বাবার ঔষধ খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। হাত শূন‍্য। একরাতের ঔষধের যতোটুকু খরচ ততোটুকু টাকা হাতে থাকলে এই ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সে বেরিয়ে যেতো। কিন্তু তারও উপায় নেই। দীর্ঘশ্বাস জমে আছে বুকে। সুমনের অপেক্ষা করা বৃথা মনে হচ্ছে। নিজেই মায়ের কাছে যায় সুভা।

--মা.... আমি মেডিসিনের টাকা অনেক আগেই সুমনকে দিয়েছি। কাজের প্রেশারে আমি খবর নিতে পারিনি। তাছাড়া টাকা দিলে ঠিক সময়েই মেডিসিন এনে দেয়। এইবার কেনো এমন করলো....
-- বাজার টাও আনেনি। প্রতিমাসে তো সময় মতোই বাজার আনে।

-- তুমি আমাকে দিনের বেলায় বলবে না? একটা ব‍্যবস্থা করা যেতো..... শেষ বেলায় কেউ বলে?

-- সুমনকে বল আজকের ঔষধটা অন্তত আনতে। কাল না হয় পুরো মাসের ঔষধ আনা যাবে।
-- এই বৃষ্টির রাতে কোথায় থেকে মেডিসিন আনবো এখন?

-- সুমনকে কল দে....

-- ওর ফোন বন্ধ....!

--তাহলে এখন কি হবে সুভা। ঔষধ না খেলে যে....

সুভার মনটা অশান্তির ছোঁয়ায় কানায় কানায় ভরে ওঠে। আর কতো সহ‍্য করবে? কতো সহ‍্য করা যায়? তারা কি কখনো বুঝবে না-- নিজের কাছে একটা কড়ি সে রাখে না। কখনো না। সুভা নীরব গলায় বলে,

--আমার কাছে সত‍্যিই টাকা নেই। থাকলে আমি ঠিকই চলে যেতাম মা।

সুভার মা আশ্বস্ত করে বলেন,

-- আলমারিতে দুই চার টাকা রাখতে রাখতে হাজার পাঁচেক টাকা জমতে পারে। দেখি গুণে কতো আছে।

--তোমাদের সম্বলস্বরুপ দু-চার টাকা থাকলেও আমার হাত সত‍্যিই শূন‍্য। পৃথিবীতে আমার জন‍্য সত‍্যিই অবশিষ্ট কিছুই নেই।

মনের কথাগুলো চুপচাপ নিঃশব্দে বলে গেলো সুভা। তবে তা কেউ জানলো না। কেউ শুনলো না।

*
*
*
আলমারি খুলে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুভার মা। খুঁচরো পয়সা জমানো মাটির ব‍্যাংকটা ভাঙা। তালা দেয়ার ড্রয়ারে সোনার অলংকার গুলো নেই। তিনি চিৎকার দিয়ে বলেন,

-- আল্লাহ্! আমার টাকা গয়না কই গেলো?

সুভা দৌড়ে আসে। ড্রয়ার টেনে দেখে শূন‍্য ড্রয়ার। মাটির ব‍্যাংকটাও ভাঙা। অশনী সংকেত যেনো ধরনী কাঁপিয়ে হুংকার দিচ্ছে। কিসের সংকেত দিচ্ছে এসব?

সুভা নিস্তব্ধ, নিশ্চল। হিসাব যেনো মিলছেই না। ঠিক সে সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। সুভা মলিন মুখটা নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দেয়। এতো রাতে সুমন ছাড়া কেউ আসার কথা নয়। তবে দরজা খুলে সুমনের বন্ধুকে দেখতে পায়। সুভা বলে,

-- তাপস তুমি এতো রাতে? সুমন কই?

--ওকেই তো ডাকতে এলাম। ফোন বন্ধ তাই বাসায় এলাম।

-- ও তো এখনো ফেরেনি।
-- এতো রাতে কোথায় গেছে?

--ও আজ বাসায় ই আসেনি। ফোন ও অফ....

-- কিন্তু ওকে তো খুব দরকার...না হলে চলবেই না আপু...
--আমাকে বলতে পারো। ও চলে এলেই আমি বলবো...
-- আসলে কিভাবে যে বলি!!!
--নো প্রবলেম! ইউ ক‍্যান সে...

-- একচুয়েলি ও সেদিন বললো -- আংকেল নাকি খুব অসুস্থ। টাকা লাগবে সাত দিনের জন‍্য। এর পরে সুভা আপু ম‍্যানেজ করে দিয়ে দিবে। আমার কাছে সেমিস্টার ফি ছিলো। খুব রিকুয়েস্ট করলো যেনো টাকাটা ওকে দেই। আমি ভাবলাম যেহেতু বিপদ। আর ভার্সিটিতে টাকা সাত দিন পরে দিলেও তেমন কিছু হবে না। পরে দিয়ে দিলাম। প্রায় দশ দিন হয়ে গেছে। এখনো টাকাটা দেয় নি। যদি আমার টাকা হতো এটা কোনো ম‍্যাটার ছিলো না। ভার্সিটি থেকে বাবা কে কল দিলে ট্রাস্ট মি আপু বাবা উল্টাপাল্টা ভেবে নিবে। সন্দেহ করবে। টাকাটা যদি কালকের মধ‍্যে একটু ম‍্যানেজ করে সুমন দিত।

কথাগুলো তীরের মতো গেথে গেথে পড়ছে সুভার। তবে দগ্ধ হওয়া ক্ষত ঢেকে মুখে সুন্দর হাসি ঝুলিয়ে সুভা বললো-- আমি তো জানতাম না ভাই! সুমন পরিবারের জন‍্য এতো চিন্তা করে জানা ছিলো না। কালকের মধ‍্যে আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো। ভেতরে এসে বসো।

-- আজকে না আপু। আরেকদিন আসবো। আজ যাই। কিছু মনে করবেন না আপু প্লিজ...

-- আরে নাহ....

তাপস চলে যায়। দরজা লাগায় সুভা। পেছনে তার মা দাঁড়িয়ে। দু"জনের চোখে চোখে কথা হয়। অশুভ কিছুর আঁচ দুজনের হৃদয়েই উঁকি দিচ্ছে। সুভা নিস্তব্ধ,নিরব। বুকটা ভারী হচ্ছে ক্রমেই.........

______________________

মার্জিয়া বেগম অপ্রত‍্যাশিত ঘটনা স্বচক্ষে অবলোকন করে নিজের মনকে সামাল দিতে পারছেন না। জ্ঞান হারানোর পর সাফিন আহমেদ আর শিশির মার্জিয়া বেগমকে বিছানায় নিয়ে আসেন।একটা লাল রঙের মগের ছোট হাতল ধরে মামির মাথায় পানি ঢেলে চলেছে তিথি।তবে জ্ঞান ফেরার মামির রাক্ষুসে দৃষ্টি দেখে দূরে সরে গেছে সে। কুটুস মাথা মুছে দিচ্ছে। মার্জিয়া বেগম অনর্গল উল্টাপাল্টা বলেই চলেছেন। শিশির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরবে সবটা সয়ে যাচ্ছে। সয়ে এসেছে এতকাল। তিথির পক্ষ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই বাসায় ছোট খাটো যুদ্ধ বেঁধে যেতো। শান্তির জন‍্য তাকে চুপ থাকতে হতো। শিশির বা সাফিন আহমেদ এর সামনে মার্জিয়া বেগম তিথির গায়ে হাত তুলতেন না। তবে কুটুস ঠিকই খবর দিতো শিশিরকে। তবে মাকে বোঝানোর সাধ‍্য তার ছিলো না। তবে আজ সব সহ‍্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। মার্জিয়া বেগম রাক্ষুসে হুংকার দিয়ে বলে ওঠেন,

--ওকে আমার সামনে থেকে যেতে বল। র*ক্তে*র দোষ এসব। আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়েকে আমি রাখবো না। আবার দয়ার শরীর ফেলেও দিতে পারিনি। তাই এই দিন দেখতে হলো। দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষছি এতো দিন।

এককোণে নিরবে তিক্ত চোখের জল চোখ ফেটে বের হচ্ছে তিথির, হৃদয় টা ছিড়ে যাচ্ছে। এই দিনের ই ভয় পেয়েছিলো সে। আজ সেই ঘটনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই মূহুর্তে কি হতে চলেছে? বিচ্ছেদ? চির জীবনের জন‍্য শিশির কে হারাতে হবে। আচ্ছা জীবনের কোন দুঃখটা বেশী? পরিবার হারানো? জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বড় হয়ে ওঠা? নাকি ভালবাসার মানুষটাকে হারানো। এক জীবনে সব হারিয়ে ফেলবে সে? একটা মানুষের সব হারিয়ে যায়?? কিছুই কি অবশিষ্ট থাকে না! গভীর ভাবনার ছেদ ঘটে মার্জিয়া বেগমের হুংকারে,

-- এক সপ্তাহের মধ‍্যেই ঐ মেয়ের বিয়ের ব‍্যবস্থা করবে। ওকে আমি আর এখানে রাখবো না। আর এক সপ্তাহের মধ‍্যে আমি আমার ছেলেকেও বিয়ে করাবো।

বুলেটের গতিতে বুক ছিদ্র হয়ে যায় তিথির। চোখ ফেটে উপচে ওঠে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। শরীরের ভার রাখতে না পেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকায় তিথি। শিশির তখনও নিস্তব্ধ, নিরব। ধৈর্যের পরীক্ষা চলছে তার। সাফিন আহমেদ বলেন,

--শিশিরের আম্মা। খুব বেশী-ই হয়ে যাচ্ছে না এখন? তুমি কি কখনো নিজের জেদের বাইরে যেতে পারো না।

হুরমুরিয়ে উঠে বসেন মার্জিয়া বেগম। শরীর ওড়না জড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে,-- শোনো তোমার জন‍্য, তোমার বোনের জন‍্যে আমার ভাই জীবনে এতটুকু শান্তি পায়নি। তোমাদের র*ক্ত খারাপ।তোমার বোন এক সময়ে র*ঙ্গ*লীলা করে আমার পুরো পরিবারের সম্মান নষ্ট করেছে। আবার একটা জন্ম দিয়ে গেছে সেইটা আমার জীবন ধ্বংস করছে। কখনো কিচ্ছু বলতে পারিনি আমি.... এদের জন‍্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে.....

সাফিন আহমেদ হুংকার দিয়ে বলে,

-- স্টপ ইট। অনেক হয়েছে। বাচ্চা শুধু আমার বোনের নাকি তোমার ভাইয়েরও ছিলো। ভাগ‍্যিস আমার বোনের মতো হয়েছে তিথি,তোমার ভাইয়ের মতো হলে তো ক্রিমিনাল হতো।

-- এতো বড় কথা তুমি বলতে পারলে? আমার ভাইয়ের জীবন তুমি আর তোমার বোন মিলে নষ্ট করেও শান্ত হলে না। ভাই টা আমার ধুকে ধুকে বিদেশে পড়ে আছে।

শিশির এইবার কথা ছাড়ে,

--তোমার ভাই রঙ্গমঞ্চ করে বসে ছিলো। তপন চৌধুরী একটা বড় মাপের ক্রিমিনাল। শীঘ্রই সব সত‍্য উন্মোচন হবে। টিভির হেড লাইনে তপন চৌধুরী ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না।

-- সরে যা চোখের সামনে থেকে। তোরা বাপ ছেলে মিলে এখন নিজেদের দোষ ঢাকতে উল্টাপাল্টা কথা বলবি।

--এই কয়দিন নিউজ চেক করো। তোমার ভাই কি জিনিস তুমি নিজেই দেখতে পাবে......

-- আমি কিচ্ছু জানতে চাই না। আমি শুধু আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পারবো না। তিথির মা আমার ভাইয়ের জীবন নষ্ট করে দিছে। এখন তোর জীবনটাও তিথি খেয়ে দিবে। এসব কবে থেকে চলছে কে জানে?নতুন পাপের জন্ম হলো কি না উপরওয়ালা জানেন।

-- এনাফ ইজ এনাফ মা।লিমিট ক্রস করে ফেলছো তুমি।বার বার ওকে দোষারোপ করছো। ও আমার রুমে এসেছে। আমার পারমিশন ছাড়া ঢুকতে পেরেছে কি? ও দোষী হলে আমিও দোষী। তার চেয়ে বড় কথা আমি কোনো পাপ করিনি। আমি বাবার অনুমতি নিয়ে ওকে বিয়ে করেছি।

অতঃপর কিছু সময়ের জন‍্যে নিরব পরিবেশ। আকাশ থেকে একখন্ড ভারী বরফ যেনো মার্জিয়া বেগমের মাথায় এসে পড়ে। থেমে যায় তিথির হৃদয়ের স্পন্দন। এই মূহুর্তে যে কি হবে?

অতঃপর তিথির হৃদয়ের কাঁপনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। শক্তিহীন অসাড় শরীর নিয়ে নিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ে। মার্জিয়া বেগম চিৎকার দিয়ে বলে,

-- আল্লাহ্!তলে তলে এতো কিছু।

বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। হাত পা বাচ্চাদের মতো ছুড়তে থাকে। মূহুর্তেই তান্ডব শুরু দেয় মার্জিয়া বেগম। বালিস ছুড়ে ফেলে দেয়। বিছানার চাদর খামছে জড় করে ফেলে। রুষ্ট, ক্রুদ্ধ হয়ে মার্জিয়া বেগম ফোঁস ফোঁস করতে থাকেন। সাফিন আহমেদ পাশে বসে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও শান্ত হয় না মার্জিয়া বেগম। অশান্ত হয়ে হাতের কাছের টিভির রিমোর্ট সজোরে ছুড়ে দেয় তিথির দিকে। চোখ নিবদ্ধ রাখা তিথি অপ্রত‍্যাশিত তীব্র আঘাতে চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাথে সাথে গোল বলের মতো ফুলে ওঠে চোখের পাশ। বহু আঘাত সহ‍্য করেছে চোখের পানি মরা নদীর মতো শুকিয়ে গেছিলো তবে প্রকাশ‍্য সবার সামনে আজ অপমানিত হয়ে হৃদয়ের দহনের উত্তাপে চোখ দিয়ে গরম জল অঝোর ধারায় ঝড়ছে।

মার্জিয়া বেগমের বিগড়ে যাওয়া হিংস্ররূপের কৃতকর্ম নিজের চোখে দেখে শিশিরের নিজের হৃদয়টাও কেঁপে ওঠে। এভাবেই অত‍্যাচারিত হতো মেয়েটা। পৃথিবীর সকল নিয়ম বাঁধা-বিপত্তি লাজ লজ্জা সব ভুলে যায় শিশির। বাবা-মা কুটুসের উপস্থিতিতে জীর্ণ হৃদয়ের আঘাতে আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়া মেয়েটিকে বলিষ্ঠ হাতে টেনে তুলে বুকের মধ‍্যে নেয়। তার মা যে এতো নির্মম-নির্দয় তা সত‍্যিই তার জানা ছিলো না। গত দিনেও কি মিষ্টি ভাষায় বলেছিলো যাকে অনুভব করিস তাকেই বিয়ে করবি। অথচ সেখানে তিথিকে সে সহ‍্য-ই করতে পারছে না। পারছে না তো ভালো কথা তাই বলে এভাবে মারবে। শিশির সুরক্ষার চাদরে ঢেকে বুকে আগলে রাখে তিথিকে। এরপর বলে,

-- এভাবেই মারতে তাই না? কি জন‍্য? ওর মা তোমার ভাইকে ঠকিয়েছে বলে? তোমার বাবার বাসার মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে বলে?? মান সম্মান নষ্ট হয়েছে বলে?
এসব যখন হয়েছে তিথি একটা ছোট্ট বাচ্চা। ওর কি দোষ?

-- ওকে আমি অকারণে কোনোদিন মারিনি। ওর মাকে ভালোবেসে মাথায় তুলেছিলাম। সুশিক্ষা দিতে পারিনি, শাসন করিনি বলেই মাথায় উঠেছিলো। তাই ওকে শাসন করেছি। যখন তর্ক করেছে তখন মেরেছি।

-- আজ কোন অন‍্যায়ে ওকে মারলে?

-- এতো শাসনে রেখেও ও আমার ভাতে ছাঁই ঢেলে দিলো।

-- ও কিচ্ছু করেনি। অন‍্যায় করলে করেছি আমি। ওকে আমি জোর করে বিয়ে করেছি। তাহলে ওকে মারলে আমাকে মারছো না কেনো। আমি ছেলে বলে?

মার্জিয়া বেগম তেড়ে আসেন,

-- লজ্জার মাথা খেয়েছিস নাকি। ছেড়ে দে ওকে। নির্লজ্জ, বেহায়া হয়েছিস?ওদের বংশধরের নেইচার ই এমন। যাকে ধরে পাগল বানিয়ে ছাড়ে।

-- ও আমাদের না মা। তোমাদের বংশধর। আমার ফুপি যতেষ্ঠ ভালো মেয়ে ছিলো।

রাগের তোড়ে কাঁপতে থাকা মার্জিয়া বেগম শক্ত হাতে কষে থাপ্পড় দেয় শিশিরের গালে। তীব্র শব্দে চোখ তুলে তাকায় তিথি। হৃদপিন্ড থেমে যায়। তারপর সচল হয়। এর পরেই চোখের পানি আর কষ্টের দহনে তিথি কাঁপতে থাকে। এই জন‍্যেই বিয়ে করতে চায়নি সে। এই দিন দেখতে হবে তার জানা ছিলো। শিশির চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে। অতঃপর দুই সেকেন্ডে নেয়া সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়,

-- যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে।সেদিন আমাকে ডেকো মা। আমি আসবো......

তিথিকে বুক থেকে সরিয়ে কোমল হাত শক্ত হাতের বন্ধনে আকড়ে ধরের শিশির। ধীর শান্ত গলায় বলে,

-- চল!

তিথি থেমে যায়। বিস্মিত নয়নে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,

-- কোথায়??

-- তোর সুখের সন্ধানে।

--কোথাও যাবো না আমি। তুমি মামির কথা মেনে নাও। মায়ের বিপক্ষে যেও না। রিকুয়েস্ট। পায়ে ধরছি তোমার।

-- ন‍্যায়ের পক্ষে আমি। তাই অন‍্যায় যেই করুক আমি তার অপজিটেই থাকবো। কথা বাড়াস না চল।

মার্জিয়া বেগম ছেলের এহেম কান্ডে হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে। তার চোখের সামনে হাত ধরে টেনে তিথিকে নিয়ে যাচ্ছে শিশির। মার্জিয়া বেগম শূন‍্যে চোখে তাকিয়ে আছে।

___________

নির্জন, নিভৃতে, নিরালায় বৃষ্টিমুখর রাতে ফাঁকা, শূন‍্য কক্ষে ভালোবাসার আলোচনায় মশগুল দুটো শূন‍্য হৃদয়ের মানুষ বসে আছে।সেখানে লৌহকঠিন বুকে মিশে আছে কোমলমতি নারীর এলোকেশী মাথা,বলিষ্ট গুরুগম্বীর পুরুষের লৌহশক্ত বুকের খাঁচার অন্তরালে হৃদয় নামক যন্ত্রটি দূর্বার গতিতে কাঁপছে,সেই মধুর শব্দ কান পেতে শুনে হদয়ের কথা বোঝার বৃথা চেষ্টা করছে সিনথিয়া। লৌহকঠিন, পাথুরে হৃদয়ের ভাষা বোঝা কি এতই সহজ? কি বলতে চাচ্ছে-- ঐ ইস্পাত কঠিন হৃদয়? কিসের কাঁপন চলছে? সে ভাষা বোঝার সাধ‍্য কোমল হৃদয়ের নারীর নেই। তবে সে আধার কক্ষে ঘন আখিপল্লব বুঝে ঘন শ্বাস টেনে টেনে অনুভব করছে-- লৌহকঠিন কম্পমান হৃদয়ের সাথে তার হৃদয়ের কম্পন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। উত্তপ্ত বুকে কান পেতে নিজের শান্ত হৃদয় ক্রমেই তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে তার,কম্পমান হৃদয়ের উপর থেকে অশান্ত সিনথিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। তবে তার আগেই বলিষ্ঠ হাতের বাধনে ইস্পাত কঠিন পাজরে মিশিয়ে নেয় তাকে ইরফাদ। তারপর বরফ ভেজা ঠান্ডা আবেশে ঘন জড়ানো গলায় বলে,

-- কি শুনলে??

সিনথিয়া ইরফাদের বুকের উষ্ণ ওমে মাথা ঠেকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-- আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। তাহলে হৃদয় কেনো কাঁপছে আমার ছোঁয়ায়?

-- তোমার প্রশ্নেই তো উত্তর রয়েছে। হৃদয় ছুঁতে পারে কয় জন? তুমি তো হৃদয় ছুঁয়েছো?

সহসাই বুক থেকে ছুটে যায় সিনথিয়া। বিস্মিত নয়য়ে চোখ গোল গোল করে ইরফাদের চোখের দিকে তাকায়। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,

--কবে? কখন? কিভাবে?

-- তুমি আমাকে কখন, কবে, কোন মূহুর্ত থেকে ভালোবেসেছো বলতে পারবে?

সিনথিয়া কোমল করে মাথা দোলায়। যার অর্থ না। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,

-- তোমার কখন মনে হয়েছে তুমি আমার প্রতি দূর্বল।

-- জানিনা! তবে ঐ ডায়েরিটা পড়ে-- আমি নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। আমার কষ্ট হয়েছে,যন্ত্রণা ভোলাতে ইচ্ছে করেছে, আগলে রাখতে ইচ্ছে করেছে।

-- ঐটুকু বুকে আমাকে আগলে রাখতে পারবে?

সিনথিয়া দম নেয়। তারপর বলে,

-- হৃদয়ের ভালোবাসার পরিধি বিশাল। কেনো পারবো না। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট কনফিডেন্ট।

--ভালোবাসা যদি ঐ ডায়েরি পড়ার পর হয়ে থাকে তাহলে ঐটা ভালোবাসা না ঐটা "করুণা"। তবে তুমি সত‍্যিই ভালোবেসেছো!সে ভালোবাসা অনেক আগেই জন্মেছে সিনথি ?

-- সত‍্যি!!!

-- হুম....

-- তাই কি হয়? আপনি তো সবটা জানেন। একজনের কাছে ঠকে গিয়ে আরেকজনকে ভালোবাসা যায়?

-- ভালোবাসার রঙ বদলায়। ভুল মানুষকে ভালোবেসে যখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, সব হারিয়ে যখন শূন‍্য লাগে তখন যত্ন পেলে, শেলটার পেলে সে ক্ষত সেরে যায়। সেখানে নতুন করে ফুল ফোটে।

-- আপনি কি আমাকে শেলটার দিয়েছেন? যত্ন করেছেন?

-- নাহ! দেখো সবার জীবনের গল্প সেইম নয়। তোমার গল্পে তুমি নির্মম ভাবে ঠকেছো,সব হারিয়ে যখন তুমি শূন‍্য হয়েছো। তোমার পাশে পৃথিবীর কেউ ছিলো না। শুধু আমি ছাড়া। ঐকারণেই তুমি নিজেই ভরসার জায়গায় আমাকে রেখেছো, আমাকে আকড়ে ধরেছো।

-- আপনার যায়গায় অন‍্যকেউ যদি থাকতো। আমি কি সেইম কাজ টাই করতাম? আবার ভুল হতো?

-- হয়তো? হয়তো না! কারণ ভালোবাসা সবার জন‍্য আসে না। সবাই হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না। এই উত্তর তো একমাত্র তুমিই দিতে পারো। কেনো ভালোবেসেছিলে আমাকে?

সিনথিয়া কিছুক্ষণ নিরবে ভাবে! উত্তর খুঁজে বেড়ায়। কোমল গলায় বলে,

-- আমি না আপনার মতো কাউকে কখনো দেখিনি। আপনি ইউনিক, ওয়ান পিছ। আপনার সততা, মেয়েদের প্রতি সম্মান, দায়িত্ববোধ, ন‍্যায়, নিষ্ঠা, কঠিন হৃদয়ের আড়ালের বন্ধুসুলভ একটা সুন্দর কোমল মন, তীক্ষ্ণ মগজধারী আপনি।সব দিক থেকেই তো আপনি বেষ্ট। সব মেয়েদের ড্রিম তো এমন একজন লাইফ-পার্টনার চায়। যে মানুষটা চোখ দেখেই হৃদয় পড়তে পারে এমন ক্ষমতাধারী মানুষকে যে কেউ ই চাইবে। আপনি অসাধারণ....হয়তো এই কারণেই ভুল থেকে বের হওয়ার আগেই আমি নতুন করে ভালোবাসতে পেরেছি। এছাড়া সম্ভব ছিলো না। তবে সত‍্যিই জানিনা কবে, কখন একটা সফট কর্ণার তৈরী হয়েছে।

-- কিন্তু আমি তো জানি। তুমি প্রথম থেকেই আমাকে খুঁজেছো, আমার বুকের ওম চেয়েছো সিনথি.....

সিনথিয়ার ভেতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে,

-- মানে???

-- তোমার মনে আছে সিনথি? গারদে থাকাকালীন কেউ তোমার রুমে গিয়েছিলো?তুমি ভয় পেয়ে পরেরদিন আমাকে কল দিয়েছিলে!

-- হুম! তবে ভয়টা পরে কেটে গিয়েছিলো।

--কিভাবে?

--সেদিন রাতে একটা স্নিগ্ধ ভেজা ভেজা স্মেল পেয়েছিলাম। নেক্সট একই স্মেল আমি আপনার শরীর থেকে পেয়েছি। মিলে গেলো.... সেদিন আমার ঐখানে আপনিই গিয়েছিলেন।

-- যে স্মেল তুমি আমার শরীর থেকে পেয়েছিলে সেদিন একই স্মেল তোমার শরীরে পাওনি?

সিনথিয়া ক্রমেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কি হয়েছিলো সে রাতে? কি বলতে চাচ্ছে ইরফাদ!! ইরফাদের গলা আরেকটু শীতল,

-- সেদিন রাতেও তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে সিনথি.....

দূর্বার হৃদপিন্ড ঝনঝন করে শব্দ করে উঠছে সিনথিয়ার, পেটের মধ‍্যে অনুভূতিরা ছলকে ছলকে উঠছে!! অপ্রত্যাশিত ঘটনা শুনে নিজেই থ হয়ে গেছে সিনথিয়া। ইরফাদের চাহুনি নরম কোমল। ভিষণ আলাদা লাগছে আজ। ইরফাদ ঘন শ্বাস ফেলে বলে,

-- ঐদিন আমি জানতে পারি একটা চিঠি আছে তোমার কাছে। আর যেহেতু দেখার চাঞ্চ একবার। তাই আমি ই গিয়েছিলাম। তুমি তখন গভীর ঘুমে। বালিসটা যেহেতু ওয়াল ঘেঁষে অন‍্যেপাশ দিয়ে চেক করার ওয়ে ছিলো না। বাধ‍্য হয়ে তোমার উপর ঝুকে চেক করতে হয়েছে।ঐসময়ে ঘুমের ঘোরে অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছো সিনথি। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে।আমি জোর করে ছাড়াতে গেলে তোমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো।এতো রাতে এভাবে আমাকে দেখলে তুমি ভুল বুঝতে।একবার ঠকে গেছো, আরেকবার এমন ভাবে দেখলে পুরো পুরুষ সমাজের উপর তোমার অবিশ্বাস জন্মাতো। তোমার হাত নরম হয়ে আসা অবধি আমি অপেক্ষা করেছি।

-- কিন্ত আমি যে পায়ের শব্দ পেলাম। মনে হলো এই মাত্র কেউ আসলো....

--নাহ সিনথি.... অনেকটা সময় পর তোমাকে বাধ‍্য হয়ে ছাড়াতে হয়েছে। আর তখন তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।

-- আপনার কি তখন থেকে আমার প্রতি সফট কর্ণার ছিলো?

-- তখন পর্যন্তও ছিলো না। তবে পরের বারও সেইম ঘটনা ঘটেছে।তোমার মনে আছে!! আমার উপর এট‍্যাক হয়েছিলো সে রাতের কথা?

-- হুম হুম.... অনেকদিন জানতেও চেয়েছি আপনি বলেননি!

--সেদিন তুমি তো ঘুমিয়ে গেছিলে। প্রথমে এটা ভাবলেও পরে আমি বুঝতে পারি তুমি ঘুমাওনি। ততোক্ষণে আমার একটা কল এসে যায়।ঐ রাতে একটা ক্রাইম হয়। আমি ঐরাস্তায়-ই ছিলাম। আমাকে কল করেন জাবির। আমার যেতেই হতো।তোমাকে নেয়া তো পসিবল না। গাড়িতে ক্লোরোফর্মের একটা স্প্রে করা হয়। ঐজন‍্যে সে রাতে তোমার জ্ঞান ছিলো না। আমি গাড়ি পার্ক করে বেরিয়ে যাই। আমার কিছু বিষয় তদন্ত করার। কাজ শেষ করে আমি ফিরছিলাম। কিন্তু কেউ একজন এই বিষয়টা টের পায়। আমাকে দেখে যদিও বোঝার উপায় ছিলো না আমি কে? তবে তারা আমার পিছু নেয়। এট দ‍্যা মিডটাইম-- আমি যখন গাড়িতে উঠি তারা এট‍্যাক করে। ফাইটিং চলে। যেহেতু আমি মাস্ক পড়া তাই তাদের কিছু লোক তোমার মুখ দেখতে চায়। ওদের একাংশ গাড়িতে উঠে আসে। অপর সাইডের ডোর খুলে তোমার মুখটা আমি আমার বুকের মধ‍্যে ঢেকে ফেলি। ওখানেই বিপত্তি। ধারালো ছু*রিকাঘাতে আমার পিঠ তখন বিধ্বস্ত। রক্তে রঞ্জিত শার্ট। একহাতে তুমি আর অন‍্যহাতে স্ট্রিয়ারিং ঘুড়িয়ে সেইভজোনে আসি। তোমার তখন ঘুম ছাড়া ছাড়া ভাব। আমার শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছিলো।গাড়ির দরজায় ক্রমেই শরীর ছেড়ে দিচ্ছিলাম আমি। সেদিন রাতেও আমাকে একটা সেকেন্ডের জন‍্য ছাড়োনি তুমি। দুহাতে খামছে ধরে পড়ে ছিলে বুকের মধ‍্যে। তুমি ছিলে আমার বুকের মধ‍্যে ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো। সেদিন থেকে আলাদা একটা অনুভূতি ছিলো তোমার প্রতি। তবে আমি তলিয়ে ভেবে দেখিনি। মাথায় নেইনি বিষয়টা.....

সিনথিয়ার ভেতরটা থরথর করে কাঁপছে। এতোকিছু হয়ে গেছে। সে তো কিচ্ছু জানতো না। হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো ইরফাদের কথায় গলে যাচ্ছে সিনথিয়া। দুটো বুকের মাঝে একহাত সমপরিমাণ দূরত্ব কমিয়ে গলা ইরফাদের জড়িয়ে ধরে সিনথিয়া। দুটো হৃদয় একসাথে মিশেগিয়ে একই গতিয়ে দাপিয়ে কাঁপিয়ে চলছে। ঠান্ডা ভেজা আবেশে বুজে আসছে সিনথিয়ার গলা। আবছা গলায় বলে,
-- তাহলে এতো টা দূরত্ব কেনো বাড়ালেন? কেনো দূরে রাখলেন আমাকে?

ইরফাদের গলায় পরিপক্ব জ্ঞানের আভাস,

-- আমি তো বাচ্চা নই। তুমি ভুল করলেও কি আমি ভুল করতে পারি? আমি সত‍্যেই চাইনি এমন কিছু হোক। আমি এড়িয়ে চলেছি শেষ পর্যন্ত। আমি শেষ অবধি চেয়েছি তোমার মন থেকে ইরফাদ নামক অস্তিত্ব মুছে যাক।

--আমি কি এতোই অযোগ‍্য??
-- সিনথি! আমার লাইফে একটা এক্সিডেন্ট আছে।তুমি ভুল সিদ্ধান্ত নিবে কেনো? তুমি ভুল করলে ভুলটা সংশোধন করার চেষ্টা আমাকে করতেই হবে....
-- আমি ভুল করিনি। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম। এইবার আমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেই নি। একটুও না একটুও না। অনুভব যখন করেছিলেন-ই আমাকে এতোটা দূরে নাই রাখতেন।

-- স্বর্ণ পুড়ে পুড়েই খাঁটি হয় সিনথি। একটু কষ্ট করে সুখটা ভালোভাবে অনুভব করা যায়।

--সব জেনেও একটুও মায়া হলো না আমার জন‍্য? শুধু দূরে ঠেলে দিলেন? একটু ভালোবাসলে কি হতো?

-- অনুভব তো করেছি সিনথি। আবেগে নিজেকে ঠেলে না দিয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। ভালোবাসা হয়তো আগে জন্ম নেয়নি। তবে তুমি হৃদয় ছুঁয়েছো সেদিন-ই যেদিন অজান্তেই আমার আমার বুকে পড়েছিলে গুণে গুণে আটত্রিশটা মিনিট। হৃদয়টা সেদিনও এভাবেই কাঁপছিলো। এভাবেই.....

সিনথিয়া নিরব গলায় বলে,
--কবে ভালোবাসবেন আমাকে?

কম্পমান উষ্ণ বুকের আলিঙ্গন থেকে সিনথিয়া ছাড়িয়ে নেয় ইরফাদ। এলোকেশী চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে হাত হাত দিয়ে ঠান্ডা ভেজা ভেজা নরম নরম দুটো চুমু খায় সিনথিয়ার কপালে, চোখের পাতায়। অতঃপর গলার স্বর হয় হীমশীতল,

-- ভালোবাসি তো..... ভয়াল খেলাঘরের অশুভ ছায়া থেকে যেই মূহুর্তে তোমাকে বুকে আগলে নিয়েছি, যখন আল্লাহ্ কে সাক্ষী রেখে "কবুল" বলেছি। আমি তখন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি সিনথি। আর ভালোবাসবো অনন্ত কাল।

চলবে???

Address

Dhaka
Tangail

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bindas Life posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share