06/12/2024
#পারমিতা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Nabila_Ahmed
মিতা বিছানায় শুয়ে নিজের হাতের কব্জির দিকে তাকিয়ে আছে। শক্ত করে চেপে ধরাতে অরিয়নের আঙ্গুলের ছাপ বসে রয়েছে। অরিয়নের এই রূপটা তো কোনদিন দেখেনি মিতা। আফরিনের শরীরে কোনোদিন কোনো ফুলের টোকাও দিতে দেখেনি মিতা। "আমি আফরিন না তাই?" কথাটা বিরবির করে বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মিতা।
"ভালোবাসলে কি এতোটাই কষ্ট হয়? তার অবহেলা কেনো সহ্য করা যায় না?" ভাবতে থাকে মিতা।
" আফরিনের সাথে অরিয়নের সম্পর্ক ৬ বছরের ছিলো মিতা, ও কীভাবে সহ্য করছে আফরিনের চলে যাওয়া? তাও অন্যের সাথে?তোর কষ্ট কি ওর থেকেও বেশি?" নিজের মন প্রশ্ন করে মিতাকে। "আমি সব জানি, আমি জানি আপুকে ভুলা সম্ভব নয়, আমি ভুলে যেতে বলছিও না। আমি শুধু বলছি তুমি মুভ অন করো, যেভাবে আপু করেছে, তোমার মনের কোণে আমাকে একটু জায়গা দাও" নিজের মনের করা প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজেই দেয় মিতা।
ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ বন্ধ হতেই নিজের চোখ মুছে উঠে বসে মিতা। গতকাল রাতে ক্লান্ত থাকার কারণে রুম বা আশে পাশের কিছুই ভালো ভাবে খেয়াল করেনি মিতা। তবে এখন যখন বিছানায় উঠে বসলো তখন সব কিছু একবার ভালো করে দেখে নিচ্ছে। রুমটা আকারে অনেক বড়। ডাবল বেড, ড্রেসিং টেবিল, কাপড় রাখার জন্য আলমারি, একপাশে সোফা সেট রাখা। রুমের দেওয়াল গ্রে কালারের। বেড সীট থেকে শুরু করে সব আসবাবপত্র সাদা রঙের। রুমের আসবাবপত্র আর ইন্টোরিয়র দেখে মনে হচ্ছে রুমটা সাজানো হয়েছে ১৮শতকের থিমে। একেবারে পুরাতন ডিজাইনের নয় আবার একদম নতুন ও নয়। রুমটা একটা এলিগেন্ট এলিগেন্ট ভাব দিচ্ছে।
অরিয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও আর না তাকিয়ে সরাসরি নিজের কাপড় নিতে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বেবি ব্লু কালারের শার্ট আর নেভি ব্লু কালারের প্যান্ট বের করে পরে নেয়। মিতা আড় চোখে দেখছে অরিয়ন কি করছে। অরিয়নের কাপড় পরা হলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আচরিয়ে নেয়। সোফার পাশেই রাখা টেলিফোন নিয়ে কল দেয় অরিয়ন।
--Bonjour, service en chambre ?
(হ্যালো, রুম সার্ভিস?)
--Je veux commander le petit-déjeune.
(ব্রেকফাস্ট অর্ডার করতে চাই)
--405.
--Un verre de lait, des crêpes, une omelette aux œufs, des fruits et de l'eau.
(এক গ্লাস দুধ, প্যানকেকস, ডিমের অমলেট, ফল এবং পানি)
অরিয়ন ফোনে কি কথা বললো মিতা কিছুই বুঝেনি। তবে এটা ফ্রান্সের ভাষাই হবে বলে মনে হচ্ছে মিতার। অরিয়ন অন্য ভাষা বলতে পারে সে সম্পর্কে কোনো আইডিয়াও ছিলো না মিতার। সব থেকে বড় কথা ভাষাটা যেন একদম বেমানানও লাগলো না অরিয়নের মুখে।
অরিয়ন ফোন রেখে কোনো কথা না বলে আবারও আলমারি থেকে নিজের জ্যাকেট বের করে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। এই অচেনা শহরে বা এই রুমে মিতা কি করবে তা যেন একবারও ভাবলো না অরিয়ন।
অরিয়ন রুম থেকে বের হতেই মিতা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে যেতে দু পা এগোতেই আবারও দু পা পেছনে এসে সামনের দিকে তাকাতেই যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো মিতার। সামনের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে প্যারিসের সেই বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার। ছবিতে না যত সুন্দর লাগতো এই দিনের আলোতে জানালা থেকে দেখতে তা যেন আরও হাজারগুন বেড়ে গেলো। গতকাল রাতে রুমে প্রবেশ করে কোনোদিকে তাকানোর সুযোগ হওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিতা কিন্তু আজ চোখের সামনে সব স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারছে।
জানালার দিকে এগিয়ে গিয়ে আশে পাশের জায়গা গুলো ভালো করে দেখে নিচ্ছে মিতা। সামান্য রাস্তাঘাটও এতোটা সুন্দর হতে পারে তা জানা ছিলো না মিতার। সবকিছু যেন শিল্পীর আকাঁ ছবি মনে হচ্ছে।
দরজায় নক করতেই ঘোর কাটে মিতার। অরিয়ন ভেবে দরজা খুলতে চলে যায় মিতা। দরজা খুলতেই সামনে দেখতে পায় সুদর্শন এক পুরুষকে। লোকটির পরনের পোশাক দেখে বুঝতে পারে সে এই হোটেলের একজন। হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রে তে কি আছে তা দেখা যাচ্ছে না।
--Bonjour. Your breakfast mam.
মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলে লোকটি।
ব্রেকফাস্ট? মিতা তো কোনোকিছু অর্ডার করেনি। পরক্ষণেই মনে পড়ে অরিয়ন ফোন করেছিলো। তাহলে হয়তো দু জনের জন্য ব্রেকফাস্ট আনিয়েছে, ভাবে মিতা।
--May i?
মিতা কিছু বলার আগেই লোকটি রুমে ট্রে নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি চায়।
মিতা মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দেয়। ট্রে হাতে রুমে প্রবেশ করে সোফার সাথে রাখা টি টেবিলের কাছাকাছি ট্রে রাখে লোকটি।
--Thank you mam.
আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় লোকটি। রুমের দরজা আটকিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায় মিতা। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ট্রে যেমন ছিলো তেমন ই রাখা দেখে বুঝতে পারে অরিয়ন আসেনি। অরিয়ন আসলে একসাথে খাওয়া শুরু করবে বলে বেলকনিতে রাখা সোফায় গিয়ে বসে মিতা। ডিসেম্বরের ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া এক অন্য রকম অনুভূতি দিচ্ছে। বড়দিন উপলক্ষে আশে পাশের সব কিছু খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, তা এখন সোফায় বসে বসে খেয়াল করলো মিতা।
মোবাইলে কল বাজতেই আশপাশ থেকে নিজের ধ্যান সরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায় মিতা। মায়া চৌধুরী কল করেছে।
--হ্যালো, মা।
--আমি ভালো আছি, তুমি আর বাবা কেমন আছো?
--না তেমন খারাপ লাগেনি, অরিয়ন ভাইয়া আমাকে দেখে রেখেছিলো।
--হ্যাঁ আনন্দ করবো, হ্যাঁ হ্যাঁ পিকও পাঠাবো।
--ওকে মা, আল্লাহ হাফেজ।
কল কেটে মিতা কতক্ষণ সোফায় বসে সব কিছু দেখতে ব্যস্ত ছিলো জানেনা। শুধু জানে পেটে প্রচন্ড খুদা আর অরিয়নেরও আসার কোনো নাম নেই। নিজের জায়গা থেকে উঠে ট্রে থেকে ঢাকনা সরাতেই যেন মন ভেঙ্গে গেলো মিতার। আর কতবার মন ভাঙ্গবে মিতার? ট্রে তে খাবার শুধু একজনের। তার মানে অরিয়ন রুমে মিতার সাথে খাবে না তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।
নিজে নাস্তা শেষ করে বসে রইল মিতা। দুপুরে দরজায় নক শুনতেই অরিয়ন এসেছে ভেবে দৌড়ে দরজা খুলে মিতা। দুপুরের খাবার নিয়ে আবারও এসেছিলো লোকটি, যাওয়ার সময় সকালের ট্রে নিয়ে গেছে।
"কেয়ার যখন করোই না, তাহলে খাই না খাই তার এতো চিন্তা কেনো" মনে মনে ভাবে মিতা। দুপুরে একা একাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মিতা। অচেনা শহরে আর কি করবে জানেনা। যেমন রাগ হচ্ছে তেমন ইচ্ছে করছে অরিয়নকে কামড়ে ধরে ইচ্ছামতো শাস্তি দিতে।
রুমের মধ্যে শব্দ শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে মিতা। সোফায় বসে নিজের জুতার ফিতা খুলতে ব্যস্ত অরিয়ন। "দরজা তো লক? তাহলে কি চাবি দিয়ে খুলে ভিতরে এসেছে?" ভাবতে ভাবতে জানালার দিকে তাকায় মিতা। দিনের আলো দেখা যাচ্ছে না। "সন্ধ্যা হয়ে গেলো আর বুঝতেই পারলাম না?" মনে মনে ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা।
অরিয়নের সামনে গিয়ে কোমরে দু হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অরিয়ন মিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও না দেখার অভিনয় করে নিজের জুতা খুলে একপাশে রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে টিপতে থাকে।
মিতাও কিছু না বলে ভ্রু কুচকে, দাঁতে দাঁত চেপে অরিয়নের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল।
--কি হয়েছে? ঘাড়ের উপর এসে দাঁড়িয়েছিস কেনো?
মিতাকে আর ইগনোর করতে না পেরে শেষমেষ মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
মিতা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ গম্ভীর করে নিজের দু হাত দিয়ে অরিয়নের চুলগুলো মুঠকরে ধরে টানতে থাকে রাগে।
--কি হয়েছে জানোনা? কেনো দাঁড়িয়েছি বলছি দাঁড়াও।
রাগন্ত মিতা চুল টানতে টানতে বলে।
মিতার এহেন কাজে যেন অপ্রস্তুত হয়ে পরে অরিয়ন। মিতা এমন কিছু করবে তা ভাবতেও পারেনা অরিয়ন। নিজের মাথায় ব্যাথা অনুভব করতেই নিজের হাত দিয়ে মিতার হাত ধরে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে অরিয়ন।
--কি করছিস ছাড়, ছাড় বলছি পরী।
নিজের হাত দিয়ে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন।
--সারাদিন আমি রুমের মধ্যে বন্ধি ছিলাম।
কথাটা বলে আরও জোরে চুল টানতে থাকে মিতা।
অরিয়ন আর মিতার টানাটানিতে সোফায় বসে থাকা অরিয়নের কোলের উপর উঠে বসেছে মিতা। তাও চুল ছাড়াতে পারছে না অরিয়ন।
--ছাড় বলছি পরী, না হয়..না হয়।
কথাটা বলেই নিজের ডান হাত দিয়ে পরীর চুল মুঠ করে টেনে ধরে অরিয়ন।
মিতা এবার নিজের মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলেও অরিয়নের চুল ছাড়লো না।
--ছাড়, না হয় কীভাবে ছাড়...
অরিয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিয়নের কানের নিচের দিকে গলায় কামড় বসিয়ে দেয় মিতা।
--ফা**
মিতার চুল শক্ত করে টেনে ধরে গোংরানি দিয়ে উঠে অরিয়ন।
অরিয়নের এতোক্ষণ চুল ছাড়ানো যেন সবটাই অভিনয় ছিলো, মিতার হাত নিমিষেই চুল থেকে ছাড়িয়ে মিতাকে সোফার উপর ঠাস করে শুয়িয়ে দেয়। পরক্ষণেই নিজের হাত দিয়ে মিতার মুখ চেপে ধরে। রাগন্ত চোখে মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতাও যেন অরিয়নকে দেখে ভয় পেলো না, রাগে গা শিরশির করছে মিতার। নিজেও রাগন্ত চোখে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে।
--এতো বড় সাহস তোর।
মিতার দু গাল নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে অরিয়ন।
--যা করেছি বেশ করেছি।
গম্ভীর কন্ঠে বলে মিতা।
মিতার সাহস দেখে যেন অরিয়নের রাগ আরও বেড়ে গেলো। মাথায় কি চাপলো নিজেও জানে না।
--আহ..
হুট করে অরিয়ন মিতার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়, ব্যাথায় মিতাও চিৎকার করে উঠে।
এখন যখন নিজে ব্যাথা অনুভব করছে তখন ভাবছে কেনই বা অরিয়নকে কামড়ানোর বুদ্ধিটা আসলো মিতার মাথায়। রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। অরিয়নের কামড়ে মনে হচ্ছে ঘাড় থেকে কেউ মাংস তুলে নিতে চাচ্ছে।
নিজের থেকে অরিয়নকে ছাড়ানোর জন্য আবারও নিজের হাত অরিয়নের পেছনের চুলগুলো শক্ত করে ধরে।
মিতার গলার মাংস দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতেই যেন মিষ্টি এক ঘ্রাণ এসে পৌঁছালো অরিয়নের নাকে। ঘ্রাণটা যেন নেশার মতো কাজ করছে হঠাৎ করে। সব কিছু যেন নিজের জায়গায় চুপ করে রইল। নিজের চুলে মিতার টান অনুভব করতেই যেন এক অন্যরকম কিছু অনুভব করতে শুরু করলো অরিয়ন। কামড়ানো জায়গায় নিজের ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করতেই নড়েচড়ে উঠে মিতা।
এতোক্ষণ যেখানে কামড়ের কারণে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছিলো মিতা এখন সেখানেই অরিয়নের চুমু দেওয়া অনুভব করছে মিতা।
--অরিয়ন?
ধীরে ধীরে বলে উঠে মিতা।
অরিয়ন যেন কিছুই শুনতে পেলো না। গলাতে একের পর এক চুমু দিয়ে যাচ্ছে।
--অরিয়ন?
আবারও ডাক দেয় মিতা।
অরিয়ন এবার একটু নড়েচড়ে উঠে। মনে হচ্ছে ডাক দেওয়াতে বিরক্ত হচ্ছে। শরীরের অঙ্গভঙ্গিতে তেমনই মনে হলো মিতার।
--অরিয়ন?
এবার জোরে ডাক দেয় মিতা।
মিতার ডাক শুনে যেন ঘোর কেটে গেলো অরিয়নের। কি করছিলো তা যেন পাথরের মতো এসে মাথায় আঘাত করলো। তার থেকে বড় কথা কার সাথে করছিলো তা। এক লাফে মিতার উপর থেকে উঠে গিয়ে সোফার এক কর্ণারে গিয়ে বসে অরিয়ন।
অরিয়ন সরে যেতেই মিতাও উঠে বসে সোফাতে। এক কর্ণারে বসে থাকা অরিয়নের দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখতে পায় নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে সোফা ধরে রেখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরা, মাথা আর গলার রগগুলো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে রাগ উঠার কারণে।
--রেডি হয়ে নে।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে অরিয়ন।
--কেনো?
জিজ্ঞেস করে মিতা।
--কেনো জানিস না? এখানে এসেছি কি কামড়াকামড়ি করতে? বাইরে বের হবো তাই।
রাগ হয়ে চেচিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।
রাগটা কি মিতার উপর হচ্ছে নাকি নিজের উপর তা নিজেই বুঝতে পারছে না অরিয়ন।
মিতার আর কোনো কথা না বলে নিজের জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
****************
মিতা আর অরিয়ন যখন হোটেল থেকে বের হলো তখন রাত হয়ে গিয়েছে। মিতা জিন্স, টপস আর ওভারকোট পরে বের হয়েছে। হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা পড়ায় ওভারকোট পরতে হয়েছে। ভীরের মধ্যে এক পাশ করে হাটতে হাটতে আশেপাশের সব কিছু আগ্রহ নিয়ে দেখছে মিতা।
কোথায় যাচ্ছে তা মিতা ভালোই জানে। ডিসেম্বরে প্যারিসে প্রচুর ভীর হয়। যার কারণে গাড়ি নেওয়ার থেকে কাছের পথ হাটা বেস্ট। তাই অরিয়ন আর মিতা হাটা শুরু করেছে আইফেল টাওয়ার এর উদ্দেশ্যে। বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হওয়ার সময় জানালার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পায়, রাতের আইফেল টাওয়ার। যার সৌন্দর্য বর্ণনা করা কথায় অসম্ভব। হঠাৎ করেই কয়েক মিনিটের জন্য পুরো আইফেল টাওয়ারের লাইট গুলো ক্রমাগত জ্বলতে ও নিভতে থাকে, যার কারণে আইফেল টাওয়ার দেখতে আরও বেশি সুন্দর লাগে।
রাস্তায় হাটতে থাকা মিতা যতো হাটছে ততোই আইফেল টাওয়ারের কাছাকাছি যাচ্ছে। মিতার পিছনে হাটতে থাকা অরিয়নের দৃষ্টি যেন ক্ষণিকের জন্যও মিতার থেকে সরছে না। মিতার হাত, চোখ যেখানে যেখানে যাচ্ছে অরিয়নের দৃষ্টিও যেন সেখানে সেখানে যাচ্ছে। আনমনে হাটতে থাকা মিতা পেছনের দিকে তাকাতেই মুখ গম্ভীর করে নেয় অরিয়ন।
এই প্রথমবার, অরিয়নের সামনে হাটতে থাকা পরীকে দেখে মনে হয়নি, সেই ৫ বছরের ছোট পরী হাটছে। মনে হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারী হাটছে। যেই নারীর দিকে আকর্ষণ নিয়ে কোনো পুরুষ তাকাতে পারে।
সব কিছু থেকে বেখবর মিতা লক্ষ্য করেনি,গম্ভীর মুখ করা চেহারায় এক অজানা হাসি ফুটে উঠেছে।
চলবে.......