01/07/2024
কানাডা ভিজিট ভিসা নিয়ে সমগ্র সিলেটজুড়ে যে হাইপ উঠেছে, তাতে কিছু খুবজরুরি বিষয় জানা প্রত্যেক সিলেটী-বাংলাদেশীর জানা প্রয়োজন মনে করছি। গ্রুপের সাথে অপ্রাসঙ্গিক হলেও প্রতারণা থেকে, বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই বিষয়গুলো প্রত্যেক কানাডা-ভিজিট প্রত্যাশীর জানা প্রয়োজন মনে করছি।
……………………………………….
কানাডা ভিজিট ভিসা যাঁরা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে করাচ্ছেন, তাঁরা মনে চাইলে তিনটা বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। যদি মনে না চায়, তাহলে আমারে দুইটা গালি দিয়া চলে যান, মাইন্ড করবো না।
০১. UCI Number of Client ID
এই নাম্বারটা আপনাকে যখন কানাডিয়ান অথরিটি (IRCC) আপনাকে প্রভাইড করবে, তখন আপনার জানা থাকা উচিত যে, এই নাম্বার আপনি মরে গেলেও আর চেঞ্জ হবে না। ভিজিটে রিফিউজ খান আর সাকসেসফুল হন, পরবর্তীতে আপনার এই নাম্বার লাগতেই পারে। ভিজিটে না হয়ে যদি পরে আপনার বা আপনার সন্তানের জন্য স্টাডি পারমিটে এপ্লাই করতে চান, তাহলে এই নাম্বার লাগবে। আপনি যদি এটা হারিয়ে ফেলেন, তাহলে কী পরিস্থিতির উদ্ভব হবে আল্লাহ মালুম।
সেজন্য নাম্বারটা আপনার এজেন্সির কাছ থেকে বা আপনার VFS-এ জমা দেওয়া ফাইল থেকে সংরক্ষণ করে রাখুন।
০২. লগিন এক্সেস:
লগিন এক্সেসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
* ইমেইল ও ইমেইলের পাসওয়ার্ড
* আবেদনকৃত ওয়েবসাইটের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড
* ওয়েবসাইটে দেওয়া সিকিউরিটি কুয়েশ্চনগুলোর আনসার।
উপরে দেওয়া এই বিষয়গুলোর এক্সেস যদি আপনার কাছে না নিতে পারেন, ইভেন ভিসা হবার পরও, তাহলে ঝামেলায় পড়া লাগতে পারে। আর যদি এজেন্সির অযোগ্যতায় ভিসা না হয়, এবং আপনি পুনরায় এপ্লাই করতে চান, তাহলেও তো এগুলো লাগবেই। মনে রাখবেন, কোনো কম্পিউটার এক্সপার্ট বা ইমিগ্রেশনের কোনো বড়কর্তারও আপনাকে হেল্প করার মুরোদ থাকবে না, যদি এগুলার এক্সেস আপনার কাছে না থাকে। এগুলো অন্যের কাছে থাকা মানে আপনার কাছে আসলে কিছুই নেই, আপনি জাস্ট-এ-বোগাস।
০৩. ডকুমেন্টেশনের কপি:
খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এটা যে, কোনো এজেন্সি যদি তার ডকুমেন্টেশন সিস্টেম কাস্টমারদের দিয়ে দেয়, এবং সেই ডকুমেন্টস অন্য এজেন্সির হাতে পড়ে, তাহলে তাদের সিক্রেট বলে কিছুই থাকবে না। ইভেন, কাস্টমার নিজেই যদি একটা এজেন্সি খুলে বসতে চায়, তাহলে দুতিনটা সেক্টরের কয়েকটা এক্সপার্ট লোক হায়ার করতে পারলেই ওইটা সম্ভব, ডালভাত একটা ব্যাপার।
কিন্তু, একজন সাধারণ এপ্লিক্যান্ট হিসেবে আপনার অধিকার আছে, এবং এটা জরুরি ব্যাপারও যে, আপনার কী কী সহায়-সম্পত্তি দেখানো হলো, কীভাবে দেখানো হলো, আপনার এডিশনাল ডকুমেন্টস (কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ) যা যা দেখানো হলো, সেগুলো সম্পর্কে আপনার আইডিয়া থাকার দরকার আছে। নাহলে ভিসা হয়ে গেলেও ইমিগ্রেশনে আপনি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না। আর যদি ভিসা না হয়, এবং আপনি অন্য কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবারও আবেদন করতে চান (আমি আপনাকে এজেন্সি পাল্টাতে বলছি না, তবে যদি এজেন্সি রি-এপ্লাই করতে গড়িমসি করে বা খারাপ ব্যবহার করে, তাহলে তো সাধারণ মানুষেরও মাথা বিগড়ায়), অথবা ধরেন আপনি পরবর্তিতে স্টাডি ভিসায় এপ্লাই করতে চান, সেক্ষেত্রে তো আপনার সেইম ডকুমেন্টস হাতে থাকা লাগবে। নাহলে আগের ডকুমেন্টে দেখা গেলো, আপনি সিলেট শহরে তিনটা বিল্ডিংয়ের মালিক, আবার পরের ডকুমেন্টে দেখা গেলো, দিরাই-শাল্লার হাওরে দুইশো একর জমির মালিক আপনি; দুইটা এপ্লিকেশনে এরকম পরস্পরবিরোধীতা যখন দেখা যাবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার ভিসা হবে কিনা, সে ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক।
আমার তিনটা এজেন্সিতে কাজের অভিজ্ঞতা বলে, যেকোনো এজেন্সিতে গেলেই তারা পয়লা জিজ্ঞেস করে, উদ্দীষ্ট দেশে আপনার কোনো রিফিউজ আছে কিনা। থাকলেও এপ্লাই করা যাবে, যদি আপনি ডাটা দিতে না পারেন। ডাটা দিতে না পারলে এজেন্সির প্রচেষ্টা জাস্ট একটা পণ্ডশ্রম হিসেবে পরিগণিত হবে, যে পরিস্থিতিতে কেউই পড়তে চাইবে না।
******************************************************
সো, এই পরিস্থিতিতে আমার সাজেশন কী?
সাজেশন হলো, আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমেই ভিজিটের জন্য এপ্লাই করেন না কেন, আগেভাগেই শর্ত জুড়ে দেন, প্রয়োজনে ডিড-ডকুমেন্ট করেন যে, আপনাকে এই ডাটাগুলা যেন তারা প্রভাইড করে। না করলে যে এজেন্সি এগুলা দেবে, তাদের কাছে যান।
মনে রাখবেন, আপনার তথ্যে আপনার পরিপূর্ণ অধিকার আছে। আগের দুনিয়ায় জাল পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশ যাওয়া যেত, কিন্তু এই দুনিয়ায় পাসপোর্ট দূরে থাক, আপনার প্রত্যেকটা অতিক্ষুদ্র কাগজের টুকরাও একেকটা অ্যাম্বেসি স্টোর করে রাখতে পারে। সেই অনুমতি দিয়েই আপনি এপ্লিকেশনটা করছেন (কানাডিয়ান গভ. তো একবার বায়োমেট্রিক দিলে ১০ বছর সেটা প্রফেশনালি সংরক্ষণ করেই রাখে, না জানিয়ে আরো কত বছর রাখবে তার কী নিশ্চয়তা আছে?)।
আমি ছোটখাটো এক মানুষ, যা বুঝি তা বললাম। ভুলচুক হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রত্যেক মানুষের তথ্য-অধিকারের পক্ষে সবসময়। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আমি কাস্টমারকে জ্ঞানী ও বুঝদার বানানোর পক্ষে, যদিও প্রতারণা ছাড়া বড়লোক হওয়া কঠিন বিষয়। কিন্তু যখন শুনি একটা মানুষ তাঁর জমি বিক্রি করে একটা এজেন্সির হাতে বিদেশে যাবার জন্য টাকা তুলে দেয়, তখন প্রতারণা করে দ্রুত বড়লোক হবার ইচ্ছেটা পানি হয়ে যায়। প্রতারণার ১০১টা রাস্তা আমারও জানা আছে, কারো যদি শয়তানি কায়কারবারে পেইড সার্ভিস নেওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে একবার আকাম একটা দিয়ে দেখতে পারেন।
বাট, আল্লাহ সবাইকে সর্বোচ্চ হালাল ইনকামের তওফিক দিন। সবাইকে বুঝ দিন, ধৈর্য দিন, তওফিক দিন, যেন কোনো মানুষই আর প্রতারণার শিকার না হয়।
Sheikh Express BD