26/05/2023
জীবন নিয়ে আমাদের কতোই না অভিযোগ!
এই মেয়েটার কথা চিন্তা করে একটু ভাবুনতো।
গত কয়েকদিন ধরে একজন যাবতজীবন সাজা প্রাপ্ত কয়েদি জেল খানা থেকে দেখা করার জন্য বার বার ফোন দিচ্ছে।হাজারও ব্যাস্ততার মাঝে সিদ্ধান্ত নিলাম দেখা করতে যাবো। কিন্ত জেলে থাকা আর জেল খানার গার্ড সহ অন্যান্যদের অবস্থার কথা মনে হলে যেতে মন চাইনা। তার পরেও গেলাম।যথারীতি টিকিট কেটে ভিতরে পাঠিয়ে বসে আছি।হঠাৎ একটা মেয়ের দিকে চোখ যেতেই কেমন যেন মায়া লাগলো। মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? উত্তরে বল্ল সাদিয়া। জিজ্ঞেস করলাম কি জন্য এসেছো? বাবার সাথে দেখা করতে।সাথে কে এসেছে? কেউ না। অবাক হলাম! বয়স ৭/৮ বছর হবে।একাই এসেছে। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাড়ি কোথায়? মেয়েটি বল্ল নজিপুর। বাড়িতে কে কে থাকে? বল্ল শুধুই সৎ মা।তোমার নিজের মা নেই?
আছে তবে ফেলে রেখে চলে গেছে।মা কোন খবর নেয়না।সৎ মা দেখতে পারেনা। খারাপ লাগলে বাবাকে জেল খানায় দেখতে আসি।বাবার খোঁজ খবর কেউ নেয়না শুধু আমি রাখি।বাবার সাথে দেখা হয়? হ্যাঁ হয়, আংকেলরা ব্যাবস্থা করে দেয়। আমি তার বিষয়ে খিয়াল রাখলাম সে কি ভাবে বাবার সাথে দেখা করে আর কি কি করে।হটাৎ ডাক আসলো সাদিয়ার বাবা এসেছে পিছে পিছে গেলাম। ভিতর থেকে বাবা মেয়েকে দেখে হাউ মাউ করে কাঁদছে।বাইরে থেকে মেয়ে বাবার জন্য কান্না করছে।বাবা, মেয়ের এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলামনা। মনে মনে খুব খুশি হলাম আমার চার মেয়ের কথা মনে করে।মেয়েরা বাবাদের জন্য কত বড় নিয়ামাত।সময় শেষ হলে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা বের হয়ে এসে বাবার পিসিতে ৫০০ শত টাকা দিচ্ছে।আমিও কিছু টাকা দিলাম।পরে জিজ্ঞেস করলাম মা তোমার বাবা কে যে টাকা দিলে এই টাকা কোথায় পাও? সে বললো বাবার জন্য মানুষের দারে দারে ঘুরে টাকা তুলি।আবারও চোখে পানি চলে আসলো। ছোট্ট একটা মেয়ে এই বয়সে বাবার জন্য সংগ্রাম করছে।বাবা জেল থেকে বের হয়ে তার এই মেয়ের কথা কত টুকু মনে রাখবে জানিনা তবে আমার মনের পাতায় চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবে।স্যালুট মা তোমাকে বাবার প্রতি তোমার ভালবাসা চির অটুট থাকুক।
-আইনুল হক