10/01/2025
#মিষ্টি_একটি_প্রেম
্ব
#রিপন_আহমদ
রিপন আর সুমির বিয়ের পর তাদের সংসার জীবনের সূচনা হয়। শুরুতে দুজনেই নতুন জীবনের এই পরিবর্তনটা উপভোগ করছিল। রিপন চাকরিতে যোগ দেয়, আর সুমি নিজের কাজের পাশাপাশি সংসারের খেয়াল রাখতে শুরু করে। তাদের দুজনের এই নতুন দায়িত্বগুলো যেন তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল।
প্রতিদিন সকালেই রিপন সুমিকে বলে, “তোমার জন্য আমার দিনগুলো সহজ হয়ে যায়, সুমি।”
সুমি হেসে বলে, “আমিও তোমার পাশে থাকলেই সবকিছু সুন্দর মনে হয়।”
ছোটখাটো সমস্যা ও বোঝাপড়া
তবে জীবনের সবকিছুই মসৃণ নয়। সংসার জীবনে ছোটখাটো মনোমালিন্য শুরু হতে থাকে। কখনও রান্না নিয়ে, কখনও সময় নিয়ে, আবার কখনও পরিবারকে সময় দেওয়ার মতো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে।
কিন্তু রিপন আর সুমি দুজনেই বুঝতে পারে, জীবনে এই ধরনের ছোটখাটো ঝগড়াঝাটি খুব স্বাভাবিক। তাই তারা একে অপরের সঙ্গে প্রতিবার মন খুলে কথা বলে সব সমস্যা মিটিয়ে নেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যেকোনো সমস্যায় চুপ না থেকে আলোচনা করে সমাধান খুঁজবে।
একদিন রাতে রিপন বলে, “আমরা যদি সবকিছু শেয়ার করি, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে, তাই না?”
সুমি সম্মতি জানায়। এভাবেই তাদের সম্পর্কটায় আরো গভীর বোঝাপড়া তৈরি হয়।
নতুন স্বপ্ন – সন্তান আগমন
কয়েক বছর পর, তাদের জীবনে নতুন এক স্বপ্ন যুক্ত হয়। সুমি সন্তানসম্ভবা হয়। এই খুশির সংবাদ রিপনের কাছে এক আলাদা আনন্দের মুহূর্ত এনে দেয়। সে প্রতিদিন সুমির দেখাশোনা করতে আরও যত্নশীল হয়ে ওঠে। সুমির প্রতিটি প্রয়োজন, চাওয়া-পাওয়া মেটাতে রিপন সবসময় পাশে থাকে।
সুমিও আনন্দের সঙ্গে মা হওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তারা দুজনেই বুঝতে পারে, তাদের জীবনের এই নতুন অতিথি তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর ও পূর্ণতা দেবে।
সন্তানের আগমন!
অবশেষে সেই বিশেষ দিন আসে। সুমি ও রিপনের জীবনে এক ছোট্ট পরী আসে, যাকে দেখে তারা দুজনেই মুগ্ধ হয়ে যায়। এই নতুন অতিথি তাদের ভালোবাসাকে এক অন্যরকম পরিপূর্ণতায় পৌঁছে দেয়।
রিপন প্রথমবার মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে, “আমাদের জীবনের সবকিছু যেন এখন পূর্ণ হয়ে গেলো।”
সুমি ক্লান্ত শরীরেও মৃদু হাসি দিয়ে বলে, “এই আমাদের ভালোবাসার পরিণতি। আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়।”
রিপন ও সুমি তাদের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরু করে। প্রতিদিন নতুন নতুন দায়িত্ব আসে, কিন্তু ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা এই পরিবার সবকিছু সামলে নেয়। তারা জানে, যত কঠিন সময়ই আসুক, তারা একে অপরের পাশে থাকলে সবকিছু সহজ হবে।
রিপন ও সুমির এই গল্প ছিল ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বোঝাপড়া আর একে অপরকে সবসময় সমর্থন করার এক চিরন্তন উদাহরণ। এভাবেই তাদের ভালোবাসার গল্প এগিয়ে চলে, যেখানে প্রতিটি অধ্যায়েই থাকে ভালোবাসার নতুন নতুন রঙ।
সন্তান জন্মের পর রিপন ও সুমির জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। এখন তাদের দিন কাটে মেয়ের যত্ন নেওয়া, তার ছোট ছোট চাহিদা মেটানো, আর নতুন বাবা-মা হিসেবে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়। ছোট্ট মেয়েটির হাসি তাদের জীবনের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়, কিন্তু দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে।
একদিন সুমি রিপনকে বলে, “তোমার মনে হয় না, আমাদের নিজেদের জন্য খুব কম সময় থাকে এখন?”
রিপন হেসে বলে, “হ্যাঁ, হয়তো কিছুটা। তবে এই মুহূর্তগুলোও বিশেষ, তাই না? আমাদের ভালোবাসার প্রতিফলনকে বড় হতে দেখতে পারছি, এটা তো অনেক বড় সুখ।”
তাদের কথা বলা হয়তো আগের মতো নিয়মিত না হলেও, তাদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও গভীর হয়। এখন তাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তই কেবল তাদের দুজনের জন্য নয়, বরং ছোট্ট মেয়েটার ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই নেওয়া হয়।
একদিন সুমি সিদ্ধান্ত নেয়, সন্তান হওয়ার পর একটু বিরতি নিয়েছে বলে এবার তার ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। সে আবার চাকরির জন্য আবেদন করতে শুরু করে। রিপন তাকে সবসময় উৎসাহ দেয়। সে বলে, “তুমি নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করো, সুমি। আমি আছি আমাদের ছোট্ট মেয়ের দেখাশোনা করতে।”
এই সমর্থন পেয়ে সুমি অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। একসময় সুমি একটি ভালো চাকরি পায়। তার এই সফলতায় রিপনও অনেক খুশি হয়। তারা বুঝতে পারে, ভালোবাসা মানে কেবল একসঙ্গে সময় কাটানো নয়, বরং একে অপরের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের পথেও সঙ্গী হওয়া।
মেয়েটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। রিপন ও সুমি একসঙ্গে তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তারা মেয়েকে শুধু বইয়ের পড়া নয়, জীবনের বিভিন্ন মূল্যবোধ ও আদর্শ শেখানোর চেষ্টা করে।
একদিন মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে রিপনের কাছে জানতে চায়, “বাবা, ভালোবাসা কী?”
রিপন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বলে, “ভালোবাসা মানে এমন একজনের জন্য সবসময় পাশে থাকা, যে তোমাকে বুঝবে, তোমার সুখ-দুঃখে থাকবে, আর তোমার স্বপ্ন পূরণে উৎসাহ দেবে। যেমন আমি আর তোমার মা আছি একে অপরের জন্য।”
এই মুহূর্তগুলোতে সুমি ও রিপন নিজেদের মধ্যে নতুন করে ভালোবাসার অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। তারা বোঝে, তাদের গল্পের ছায়া এখন মেয়ের মধ্যেও রয়ে যাচ্ছে।
বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। রিপন ও সুমির জীবন অনেক পরিবর্তন হলেও তাদের ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার গভীরতা আরও বাড়তে থাকে। তাদের মধ্যে যত্ন, স্নেহ আর কৃতজ্ঞতা আগের মতোই অটুট।
একদিন রাতে তারা দুজন পুরনো দিনের কথা মনে করে। সুমি বলে, “কত কিছু বদলে গেছে, তাই না? তবে আমরা এখনো আগের মতোই একে অপরের পাশে আছি।”
রিপন সুমির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে, “তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা, সুমি। আমি কৃতজ্ঞ তোমার জন্য। তুমি আমাকে সবসময়ই পূর্ণতা দিয়েছো।”
সুমির চোখে জল এসে যায়। সে বলে, “তুমি না থাকলে হয়তো জীবনটা এভাবে সুন্দর হতো না, রিপন। তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার গল্প অসম্পূর্ণ।”
তারা একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তাদের ভালোবাসার গল্পটি যেন প্রতিটি পরীক্ষার পর আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এইভাবেই রিপন ও সুমির জীবন এগিয়ে চলে। তাদের গল্প এক চিরন্তন ভালোবাসার গল্প, যা জীবনের বিভিন্ন সময়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, আর ছোটখাটো সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে আরও গভীর হয়।
তাদের গল্প যেন সময়ের সঙ্গে আরও মজবুত হয়ে যায়, একে অপরের প্রতি অগাধ আস্থা আর বিশ্বাসের মাধ্যমে। তাদের জীবনকে দেখে তাদের মেয়ে, পরিবারের সবাই, এমনকি বন্ধুরাও বুঝতে পারে, সত্যিকারের ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি সেই দায়িত্ব, শ্রদ্ধা আর আন্তরিকতার বন্ধন যা কখনোই ছিন্ন হয় না।
রিপন আর সুমির এই চিরন্তন ভালোবাসার গল্পটি একদিন তাদের মেয়ের কাছে এক সুন্দর উদাহরণ হিসেবে থেকে যায়, আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভালোবাসার গল্প আরও অনেকের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।
........চলবে........
বিদ্র: গল্পটি কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।।