02/08/2022
সপ্তাহে একবার খালাম্মার ফোন কনফার্ম। ইস্যু একটাই। একমাত্র কণ্যার পাত্র চাই। পাত্রের বিশেষ কিছু লাগবে না। সুশিক্ষিত হলেই হবে। শর্ত একটাই। পাত্রকে পরিপূর্ণ ইসলামিষ্ট হতে হবে। প্রথমে কথার কথা ভেবে গুরুত্ব দেই নি। খালাম্মার অব্যাহত ফোনকল সিরিয়াস হতে বাধ্য করলো।
মিশন স্টার্ট। খালাম্মার মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ নেয়াটা ইনিশিয়াল রেসপন্সিবিলি। ডিফারেন্ট এঙ্গেল থেকে খোঁজ নেয়া শুরু করলাম। সবাই পজেটিভ ফিডব্যাক দিচ্ছিল। পাত্রীর মেধা, একাডেমিক রেজাল্ট, নৈতিকতা নিয়ে সন্তোষজনক প্রোফাইল পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ, বলে আগ বাড়লাম।
খালাম্মাকে বললাম, মেয়ের সিভি পাঠিয়ে দিন। একজন উপযুক্ত পাত্রের সন্ধানও পেয়ে গেলাম। মেইলে পাত্রের কাছে সিভি ফরোয়ার্ড করলাম। খানিক পরেই পাত্র একবার আলহামদুলিল্লাহ, আরেকবার ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ পড়ে ইনিশিয়াল ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিলেন। ঘটকালির প্রথমটাতেই এমন সাফল্যের হাতছানি আমাকেও ছুঁয়ে গেল। কেউ সামনে থাকলে দেখতে পেতো- চেহারায় কী যেন বিজয়ীর দ্যুতি!
পরের শুক্রবার আনুষ্ঠানিকতা শুরু। পাত্রীর বাসায় পাত্রপক্ষ। কণ্যা দর্শনান্তে আংটি বদল এবং ওয়ালিমার ডেইট ফিক্সড। আমি আরেকবার আলহামদুলিল্লাহ পড়লাম। ১৫ দিন পরেই শুভ পরিণতি।
পাত্রী দেখার পরেরদিন পাত্র আমাকে ফেসবুক ইনবক্সে অগ্রিম ধন্যবাদ জানিয়ে বিয়ের দিনের চীফ এরেঞ্জার হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার সাথে আমার থেকে সেই দায়িত্ব পালনের স্বীকারোক্তিও আদায় করে ছাড়লেন। চ্যাটিং এর শেষে ছোট্ট করে বললেন, 'ওর ফেসবুক আইডিটা দরকার ছিল।' তাড়াহুড়োর ফাঁকে পাত্রীর ফেসবুক আইডি লিংক সংগ্রহ পাত্রকে ইনবক্স করলাম।
দুদিন পরেই পাত্র সরাসরি আমার অফিসে এলেন। পাত্রীর ফেসবুক প্রোফাইল রীতিমত রিসার্চ করে এসেছেন। ল্যাপটপে পাত্রীর স্ট্যাটাস দেখাচ্ছিলেন আর সেই স্ট্যাটাসের সাইকোলজি বর্ণনা করছিলেন। পাত্রীর বিভিন্ন সময়ের চেক ইন, পেইজ লাইক, স্ট্যাটাস আপডেট, শেয়ার, লাইক,কমেন্ট, ফ্রেন্ডস ট্যাগ, প্রোপাইল পিকচার, কভার পিকচার দেখিয়ে পাত্রী সম্পর্কে একটা অবজার্ভেশন দিয়ে নরম গলায় বললেন - আমি সরি ভাই। আপনি ক্ষমা করুন।
পাত্রের অবজার্ভেশনের বিপরীতে আমি শক্ত কোন লজিক দিতে পারি নি। সত্যিই মেয়েটির ফেসবুক প্রোফাইল তার রুচি, কৃষ্টি, পছন্দ, দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন, চিন্তা ও মনোজগতকে রিপ্রেজেন্ট করেছে। আমি নিশ্চুপ ছিলাম।
ভাবনার সমূদ্রে ডুব দিলাম। বিয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সোস্যাল মিডিয়া কেমন ইম্প্যাকট রাখছে! আগে বর অথবা কণে উভয়ের বাহ্যিক অবস্থান দেখে অন্তরের ব্যাপারগুলোতে আস্থা রেখেই সিদ্ধান্ত নিতো। আস্থা না রেখে উপায়ও ছিল না। একজনের ভেতরটা দেখার উপায় কী ছিল?
সোস্যাল মিডিয়া আজ সেই ভেতরটাকেও দৃশ্যমান করে দিয়েছে। একজনের সত্যিকারের ভেতরটা কেমন, তার সোস্যাল মিডিয়া একটিভিজম পর্যবেক্ষণ করলে ধারণা পাওয়া সম্ভব।
উপরের পাত্রীর আইডি একটা দিক মাত্র। শুধু মেয়েদের আইডি নয়; ছেলেদের সোস্যাল মিডিয়ার একটিভিজমও বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং পর্যবেক্ষণ করা উচিৎ। ভার্চুয়াল লাইফ হয়তো বাস্তব জীবনের জেরোস্কপি নয়; তবে রিফ্লেকশন তো বটেই।
সবার বোধদয় হোক।
(সংগৃহীত)
#পরিপূর্ণ_ইসলামিষ্ট #পাত্র_চাই #বিয়ে
Adnan Ahmed