22/12/2024
— একটি হাদিছের তাহক্বীক।
তালাকে ছালাছা সম্পর্কিত একটি ফতোয়া তে আত-তাহরীক্ব (আহলে-হাদিছ আন্দোলন বাংলাদেশ পরিচালিত) একটি হাদিছ দ্বারা দলিল দিয়ে বলেছেন এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে তা এক তালাক হিসেবে গণ্য হবে।
তারা এখানে নিজে তাহক্বীক করেন নাই, বরং শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানীর তাক্বলীদ করার মাধ্যমে এই হাদিছকে হাসান বলেছেন, যা সঠিক নয়। আল্লাহ আমাদের দ্ব'ঈফ হাদিছ ও অন্ধ তাক্বলীদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক দ্বীন অনুসরণ করার তাওফীক দান করুক।
যাইহোক, শায়েখ আলবানী তার কিতাব সহীহ সুনান আবু দাউদ এ এই হাদিছকে হাসান বলেছেন। ইমাম হাকেম এটিকে মুসতাদরাক এ সহীহ বলেছেন কিন্তু যাহাবী তার সাথে একমত নন, এবং আমরা জানি যাহাবীর তাসদিক্ব ছারা হাকেমের একার হুকুম গ্রহনযোগ্য নয়।
قلت: حديث حسن في الباب، وصححه الحاكم، وردَّه الذهبي قائلًا: "الخبر خطأ، عبد يزيد لم يدرك الإسلام"، وقال: "المعروف أن صاحب القصة ركانة.
[ সহীহ সুনান আবু দাউদ, আলবানী ৬/৩৯৯ ]
এই হাদিছ সম্পর্কে শায়েখ শোআইব আরনাউত বলেছেন, সনদ টি দ্ব'ঈফ (إسناده ضعيف)। দেখুন সুনান আবু দাউদ, শোআইব আরনাউত এর তাহক্বীক ৩/৫১৮, হাদিছ নম্বর ২১৯৬।
এই হাদিছ দ্ব'ঈফ হবার কারণ —
ইবনে জুরাইজ এর রেওয়ায়েতে ইবহাম, আর মুবহাম হাদিছ দ্ব'ঈফ কারণ মুবহাম রাবি সিক্বাহ না গায়রে সিক্বাহ তা জানা নেই। এ তা ছারাও মুহাম্মদ ইবনে সাওর সান'আনীর বর্ণনায় তাঁর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি হচ্ছেন মুহাম্মদ ইবনু উবাইদুল্লাহ ইবনে রাফি' যিনি গ্রহনযোগ্য নন।
ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী (৭৪৮ হি.) বলেছেন : মুহাম্মাদ দুর্বল। তিনি আরো বলেন : এই রেওয়ায়েত ভুল, আবদু ইয়াযীদ ইসলাম গ্রহণ করেননি।
فيه محمد بن عبد الله بن أبي رافع وهو واه، والخبر خطأ عبد يزيد لم يدرك الإِسلام.
[ মুখতাসারুস সিদরাক, ইবনুল মুলাক্বিন ২/৯৬১ ]
এটি ইমাম আবদুর রাজ্জাক সান'আনী তাঁর মুসান্নাফ এ ইবনে সুরাইজ থেকে বর্ণনা করেছেন, এবং তার মাধ্যমে ইমাম আবু বকর বাইহাক্বী তাঁর সুনানুল কুবরা ৭/৩৩৯-এ বর্ণনা করেছেন।
ইমাম হাকেম নিশাপুরী তার মুসতাদরাক ২/৪৯১ এ মুহাম্মদ ইবনে সাও্য থেকে, ইবনে জুরাইজ থেকে, মুহাম্মদ ইবনে উবাইদুল্লাহ ইবনে আবি রাফি থেকে, ইকরিমা থেকে, ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম খাত্তাবী (৩৮৮ হি.) বলেন :
في إسناد هذا الحديث مقال، لأن ابن جريج إنما رواه عن بعض بني أبي رافع، ولم يسمه، والمجهول لا تقوم به الحجة. وحكي أيضًا أن الإمام أحمد بن حنبل كان يضعف طرق هذا الحديث كلها.
এই হাদীসের সানাদে কালাম (সমালোচনা) রয়েছে, কারণ ইবনু জুরাইজ এটি আবি রাফির বংশের সদস্য থেকে রেওয়ায়েত করেছেন, তবে তার নাম উল্লেখ করেননি, এবং মাজহুল ব্যক্তি দ্বারা বর্ণিত খাবার দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও, এটি থেকেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল এই হাদিছের সকল সনদই দুর্বল মনে করতেন।
— [ মা'আলিমুস সুনান, খাত্তাবী ৩/২৩৬ ]
হাফিজ ইবনু হাজার আসক্বালানী (৮৫২ হি.) বলেন :
إن أبا داود رجح أن ركانة إنما طلق امرأته البتة كما أخرجه هو من طريق آل بيت ركانة وهو تعليل قوي، لجواز أن يكون بعض رواته حمل البتة على الثلاث، فقال: طلقها ثلاثا، فبهذه النكتة يقف الاستدلال بحديث ابن عباس.
আবু দাউদ বলেছেন যে রুকানাহ তার স্ত্রীকৈ একবার তালাক দিয়েছিলেন, যেমনটি তার পরিবারের বর্ণনায় পাওয়া যায়। কারণ এটি সম্ভবত যে রাবী কেউ البتة (আল-বাত্তা, চুড়ান্ত) শব্দটিকে তিন তালাক হিসেবে বুঝেছিলেন এবং তাই বলেছিলেন, 'তিনি তাকে তিন তালাক দিয়েছেন'। সুতরাং এই সূক্ষ্ম বিষয়টির কারণে ইবন আব্বাস রা. এর হাদিছ দ্বারা দলীল প্রদান গ্রহনযোগ্য নয়।
— [ ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার ৯/৩৬৩ ]
এই হাদিছ দ্ব'ঈফ হবার বিষয়ে আরো একটি কারণ, যেমনটি শায়েখ মুহাদ্দিছ আব্দুর রহমান মুআল্লিমি বর্ণনা বলেন :
معارضته بفتوى ابن عباس بوقوع الثلاث كما تقدم من رواية مجاهد وغيره؛ فلا يُظنُّ بابن عباس أنه كان عنده هذا الحكم عن النبي - صلى الله عليه وآله وسلم - ثم يفتي بخلافه إلا بمرجِّح ظهر له.
(এই হাদিছ) ইবনু আব্বাসের ফতোয়ার বিপরীত যে তিন তালাক একসাথে দেয়া যায়, যেমনটি (তার ছাত্র) মুজাহিদ এবং অন্যান্যরা রিওয়ায়াত করেছেন। তাই ইবনু আব্বাসের ব্যাপারে এমন ধারণা করা উচিত নয় যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি রায় পেয়েছিলেন কিন্তু নিজে তার বিপরীত ফতোয়া দিয়েছেন, যদি না কোনো স্পষ্ট দলিল পাওয়া যায়।
[ আল-ফাওয়াইদুল হাদিছ, মুআল্লিমি (পৃষ্ঠা ২১৬) ]
এই ফতোয়া (৩ তালাক দিলে ১ তালাক হয়) সম্পর্কে শায়েখ মুআল্লিমি আরো বলেন, "এটি একটি শায মাযহাব/রায়, তাই এর উপর আমল করা উচিত নয়।"
أنه مذهب ش*ذ فلا يعمل به.
[ আল-ফাওয়াইদুল হাদিছ, মুআল্লিমি (পৃষ্ঠা ২১৭) ]
এই হাদিছ সম্পর্কে শায়েখ শো'আইব আরনাউত বিস্তারিত আলোচনা করেন ইমাম আহমাদের মুসনাদ এর ২৩৮৭ নম্বর হাদিছের টিকায় যার দ্বারা এই হাদিছের দ্ব'ঈফ হওয়া সূর্যের আলোর মতো স্পষ্ট। তাই আমাদের উচিত নয় স্পষ্ট দলিলের বিপরীতে শায়েখ আলবানীর তাক্বলিদ করা।