Shaik Usman bin Rashid

Shaik Usman bin Rashid আকিদায় আশ'আরি, মাতুরিদী।
মাযহাব "ফিক্বহে হানাফি" অনুসারি।

পেজের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।

দ্বীন প্রচার এবং ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারনা পৌঁছে দিতে আমি আপনাদের মাঝে ইসলামিক গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় তুলে ধরবো। এর পাশাপাশি, নিয়মিত শেয়ার করবো:

🔰 ওয়াজ
🔰 মাহফিল
🔰 কুরআন তেলাওয়াত
🔰 সুরা
🔰 কেরাত
🔰 ইসলামিক গান
🔰 গজল
🔰 হামদ
🔰 নাথ
🔰 সহ অন্যান্য ইসলামিক সচেতনতামূলক পোস্ট

দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে এবং ইসলামের প্রতি গভীর ধারণা লাভ করতে, পেজটি লাইক ও ফলো দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

ধন্যবাদ।

05/06/2025

মুকাতিল ইবন সুলাইমানের মাজলিসে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন আসমান থেকে এক লোক অবতরণ করল, যার পরণে ছিল সাদা পোশাক, সে বাগদাদের সর্বোচ্চ মিনার থেকে ঘোষণা করছিল, “লোকেরা কী হারিয়েছে?!”

মুকাতিল বললেন, “তোমার স্বপ্ন সত্য হয়ে থাকলে বিশ্ব সবচেয়ে বড় ‘আলিমকে হারাবে।” সত্য সত্যই আবূ হানীফার মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছল। মুকাতিল ইন্না লিল্লাহ.... পড়ে বললেন, “এমন ব্যক্তি বিদায় নিলেন, যিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর সমস্যা দূর করতেন।”

حدثت عن محمد بن منصور المروزي، قال: حدثنا أحمد بن يحيى الباهلي، قال: حدثنا عبد الحكم بن ميسرة قال: كنت في حلقة مقاتل بن سليمان فقام إليه رجل فقال: يا أبا الحسن رأيت البارحة في المنام كأن رجلاً من السماء أنزل عليه ثياب بيض، فقام على منارة المسيب ببغداد، وهي أطول منارة، فنادى ماذا فقد الناس؟ ماذا فقد الناس؟ فقال له مقاتل: لئن صدقت رؤياك لتفقدن أعلم أهل الدنيا فأصبحنا فإذا أبو حنيفة قد مات رحمة الله عليه، قال: فقال مقاتل: مات أبو حنيفة؟ قالوا: نعم، فبكى واشتد بكاؤه، وقال: مات من كان يفرج عن أمة محمد ﷺ.

(কাশফুল আছারিশ শারীফা, ২/৪০৮)

তথাকথিত আহলে হাদীস নামধারী কিছু বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, কুরবানীর মতো একটি বড় ইবাদতকে ঐচ্ছিক বলে চালানো...
04/06/2025

তথাকথিত আহলে হাদীস নামধারী কিছু বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, কুরবানীর মতো একটি বড় ইবাদতকে ঐচ্ছিক বলে চালানোর চেষ্টা করেন। তাদের মতে, কারো যদি বিপুল পরিমাণ সম্পদও থাকে, তবুও কুরবানী না দিলেও কোনো অসুবিধা নেই। তারা কুরবানীকে “মন চাইলে করবে, না চাইলে নয়”—এমন ইচ্ছাধীন আমল বলে দাবী করে থাকেন।

অবাক হতে হয়, কুরআন-হাদীসের দাবীদার এই দলটি নিজেদেরকেই কেবল বিশুদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী মনে করে। তারা এমন দাবি তোলে যেন শত শত বছর ধরে ইসলামি জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত পৃথিবীখ্যাত ইমামগণ—তারা কিছুই বুঝতেন না! অথচ বাস্তবতা হলো, এদের অনেকেই কুরআন-হাদীসের একটি আরবী বাক্য বিশ্লেষণ করার প্রকৃত যোগ্যতাও রাখেন না। নিজেদের সীমিত জ্ঞানকে তারা ইলম মনে করে, আর প্রকৃত আলিমদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।

তাদের যুক্তির ভ্রান্তি: 🤡

এই কথিত পণ্ডিতরা কুরবানীকে ঐচ্ছিক প্রমাণের জন্য যেসব যুক্তি দেন, তার একটি হলো—কিছু হাদীসে কুরবানীকে "সুন্নাহ" বলা হয়েছে। তাই তারা বলেন, যেহেতু সুন্নাহ, অতএব কুরবানী না দিলেও সমস্যা নেই।

প্রতিউত্তর: 🎤

এটি একটি গুরুতর ভুল ব্যাখ্যা। তারা "সুন্নাহ" শব্দের অর্থ করেন—ইচ্ছাধীন আমল, অর্থাৎ ইচ্ছা হলে করবে, না হলে ছেড়ে দেবে। অথচ ইসলামী পরিভাষায় সুন্নাহ মানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাচার, আদর্শ, রীতি-নীতি। কখনো কখনো শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান—যা বাস্তবে ফরজ বা ওয়াজিব—তাও হাদীসে “সুন্নাহ” হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ: 📌

বিবাহ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِى فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى

বিবাহ আমার সুন্নাহ। যে আমার সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।

(ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৮৯৬ – সহীহ সনদ)

তাহলে কি কেউ এই হাদীস দেখিয়ে বলবে, বিবাহও ঐচ্ছিক? মোটেই না। বরং শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ বিবাহ না করে, তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে তিরস্কারযোগ্য।

দাড়ি রাখা সম্পর্কেও এসেছে:

দাড়ি রাখা ও গোঁফ ছোট করা সকল নবী-রসুলদের সুন্নাহ।‌ (মুসলিম: ১/১২৯)

এখানে সকল ফুকাহারা একমত যে, দাড়ি রাখা পুরুষদের জন্য ওয়াজিব এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জোর তাগিদ রয়েছে। সুতরাং, সুন্নাহ মানেই ঐচ্ছিক নয়— বরং,‌ এটি নির্ভর করে উক্ত সুন্নাহর গুরুত্ব, উৎস ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনার ওপর। অনেক সময় কোনো বিষয়ে রাসূল ﷺ বারবার জোর দেন, এবং সে আমল ত্যাগকারীদের জন্য কঠিন হুঁশিয়ারি দেন—তখন তা ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ে উন্নীত হয়, যদিও শব্দগতভাবে “সুন্নাহ” বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কঠিন হুঁশিয়ারি:

> مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا

যার সামর্থ্য আছে অথচ কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে।

(মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: হাদীস ৩১২৩;
(ইবনে মাজাহ: ২/১০৪৪)

এই হাদীসটি স্পষ্ট করে দেয়—কুরবানী আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য শুধু সুপারিশকৃত নয়, বরং তা ওয়াজিব বিধান।

🎤মন্তব্য: 🗣️
শুধু"সুন্নাহ" শব্দ দেখেই কোনো ইবাদতকে ইচ্ছাধীন বলে মনে করা মারাত্মক ভ্রান্তি। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ, রীতি ও জীবনাচারকে সম্মান ও অনুসরণ করাই ঈমানদারের পরিচয়। কুরবানীর মত গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে হালকাভাবে নেওয়া এবং জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ফতোয়া প্রদান—এই প্রবণতা মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। আমাদের উচিত প্রকৃত উলামা ও ফুকাহার ব্যাখ্যার প্রতি আস্থা রাখা এবং যথাযথ জ্ঞান ব্যতীত ইসলামী বিধান নিয়ে মন্তব্য না করা।

জাহিদুল ইসলাম জনি 🖋️
(ছহীহ হানাফী ফিক্বহ )

সালাতে আস্তে ‘আমিন’ বললে সমস্যা কোথায়❓নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই ইবাদতের মধ্যে কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোত...
02/06/2025

সালাতে আস্তে ‘আমিন’ বললে সমস্যা কোথায়❓

নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই ইবাদতের মধ্যে কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোতে বেশ কিছু বৈধ মতপার্থক্য বিদ্যমান। এর মধ্যে একটি হলো—সুরা ফাতিহা শেষে ‘আমিন’ বলা এবং তা জোরে বা আস্তে বলার পদ্ধতি। অথচ, আজ কিছু গোষ্ঠী এই ইখতিলাফকে কেন্দ্র করে এমন চরমপন্থায় লিপ্ত হয়েছে, যা শুধুই বিভ্রান্তি ও অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টি করছে।

১. আমিন 🤲

সুরা ফাতিহা শেষে ‘আমিন’ বলা সুন্নাহসম্মত এবং সর্বসম্মত পদ্ধতি। এটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, আমিন হলো দুআর অংশ, এবং দুআ জোরে বা আস্তে উভয়ভাবেই করা বৈধ। অতএব, জোরে বা আস্তে ‘আমিন’ বলা— উভয়ই শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য এবং যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আমল করলেও কোন সমস্যা নেই।

২. মতবৈচিত্র্য 🔤

চার মাযহাবের ইমামগণ এবং ফকীহগণ আমিন বলার পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন, কিন্তু একে অপরকে ভুল কিংবা বিদয়াতি বলে কখনোই গালী দেননি। অতএব, আজ যারা আস্তে আমিন বলাকে “বিদ’আত” বলছেন বা একে সুন্নাহ বিরোধী তকমা দিচ্ছেন, তারা সহীহ ইখতিলাফের আদব লঙ্ঘন করছেন।

৩. বাড়াবাড়ি ও দ্বীমুখো নীতি ◀️

কিছু আহলে হাদীস নামধারী গোষ্ঠীরা প্রচার করে থাকেন—জোরে ‘আমিন’ না বললে নাকি সুন্নাহ আদায় হয় না! কেউ কেউ এমন দাবি পর্যন্ত করেন যে, যদি তাদের “জোরে আমিন” বলার সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তারা প্রয়োজনে ফাঁসির মঞ্চেও যেতে প্রস্তুত। তবুও জোরে আমিন বলা ছাড়বেন না। তারা এটিকে এতটাই আবেগঘন ইস্যু বানিয়ে ফেলেন যে, জোরে আমিন না বলা যেন কোনো মস্ত বড় অপরাধ।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের পরিবারের নারীরা মসজিদে গিয়ে কখনোই জোরে ‘আমিন’ বলেন না। অথচ তারাই আবার দৃঢ়ভাবে দাবি করেন—নারী ও পুরুষের নামাজে কোনো পার্থক্য নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে: যদি সত্যিই নারী-পুরুষের নামাজে কোনো পার্থক্য না থাকে, তবে কেন তাদের নারীরা ইমামের ফাতিহা শেষ হওয়ার পর জোরে আমিন বলেন না? যদি আস্তে আমিন বলা সুন্নাহবিরোধী হয়, তাহলে তাদের পরিবারের নারীরা কি সুন্নাহ পালনের বাইরে? নাকি তাদের কণ্ঠে মসজিদ ‘গমগম’ করানোর মতো উচ্চশক্তি নেই বলেই কি চুপ থাকা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়?

৪. মুনাফিক্বী 💢

এই তথাকথিত "আহলে হাদীস" নামধারী গোষ্ঠীর কথাবার্তা শুনলে মনে হয় যেন নবীর হাদীসের প্রতি তাদের গভীর অনুরাগ। মুখে “সুন্নাহর প্রেম” দেখালেও বাস্তবে, ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধান তারা উপেক্ষা করেন বা হালকা মনে করেন।

উদাহরণস্বরূপ: তারা কুরবানির বিধানকে ঐচ্ছিক মনে করেন। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ কুরবানি না দিলে তারা তা সমস্যা মনে করে না। বিতির নামায, যা রাসুলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের সুস্পষ্ট আমল দ্বারা প্রমাণিত, তারা তা ঐচ্ছিক বলে দাবি করেন। কুরআন তেলাওয়াতের শুদ্ধ উচ্চারণ (তাজবীদ) ও বিশুদ্ধতা রক্ষা করার গুরুত্বকে তারা অনেক সময় গৌণ মনে করেন। জুমু,আর দুই আযান, যা খলিফা ওসমান রা.-এর আমল থেকে প্রবর্তিত ও সাহাবীগণের সর্বসম্মত অনুমোদিত, তা তারা অপ্রয়োজনীয় মনে করে থাকেন। বিশ রাকাত তারাবীহ, যা যুগের পর যুগ মুসলিম উম্মাহ পালন করে আসছে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। আরবী ভাষায়, সুন্নাহসম্মত পদ্ধতিতে জুমুয়ার খুতবা দেওয়াকে তারা বিদ'য়াত বলে থাকেন। রমযানে সাহরীর শেষ সীমারেখা অতিক্রম করে (সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পরেও) খাওয়া-দাওয়ার অনুমোদন দিয়ে থাকেন, যা সুস্পষ্ট হাদীসের পরিপন্থী।

এইভাবে বহু জায়গায় তারা সুন্নাহর প্রতিষ্ঠিত আমলসমূহ পরিবর্তন করেছেন এবং হালকা বা অবহেলা করে থাকেন। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো—কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্পষ্ট হাদীস থাকার পরেও তারা “পরিস্থিতির দোহাই” দিয়ে সুন্নাহ পরিত্যাগকে বৈধ মনে করেন। যেমন:

বসে প্রস্রাব করা সুন্নাহ, তবু তারা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করাকে স্বাভাবিক বলে থাকেন। মাটিতে দস্তরখানা বিছিয়ে বসে খাওয়া সুন্নাহ, কিন্তু তারা চেয়ার-টেবিলে বসে খাওয়াকে সহজেই অনুমোদন করেন। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে: এসমস্ত‌ ক্ষেত্রে এদের কেউ কি কখনো বলেন যে— “ প্রয়োজনে ফাঁসির কাঠগড়ায় গেলেও আমরা সুন্নাহ ছাড়বো না”? উত্তর হচ্ছে: না। এসব ক্ষেত্রে তারা “পরিস্থিতির বিবেচনা” ও “ঐচ্ছিকতা”-র অজুহাত তুলে ধরে সুন্নাহ থেকে পিছিয়ে যান।

৫. আসল সমস্যা 🙇

আসলে তারা মুলত ভারসাম্যহীনতা ও অহংকারপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মুসলিম সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। তারা চাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু আমলকে—যেমন, জোরে ‘আমিন’ বলা, বুকে হাত বাঁধা ইত্যাদি—কে "সুন্নাহর মূল মপকাঠি বানাতে। ফলে যারা এসব করে না, তাদেরকে তারা সুন্নাহবিরোধী বলার চেষ্টা করে। অথচ অনেক ক্ষেত্রে মূল সুন্নাহ তারা নিজেরাই পালন করে না। যেমন, তাদের মসজিদে অনেক মুসল্লী আছেন যারা মুখে দাড়ি রাখেননি, কিন্তু তারা তাঁদের স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেন। কিন্তু যদি কেউ আস্তে ‘আমিন’ বলে, নাভীর নিচে হাত বাঁধে বা রাফউল ইয়াদায়ন না করে, তবে তার দিকে এমনভাবে তাকানো হয় যেন তিনি একজন আজব প্রাণী। এ ধরনের মানসিকতা থেকেই বোঝা যায়—তাদের সমস্যা সুন্নাহর প্রতি ভালোবাসা নয়, বরং নির্দিষ্ট কিছু আঙ্গিকগত আমলকে কেন্দ্র করে একটি দলীয় মনোভাব প্রতিষ্ঠা করা।

পরিশেষে: 🥀

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বিভেদকামী, হিংসুটে, আত্মম্ভরী কথিত “সুন্নাহপ্রেমী” নামধারী আহলে হাদীস গোষ্ঠীর বিভ্রান্তি ও বাড়াবাড়ি থেকে হিফাজত করুন। আমাদেরকে সহীহ জ্ঞান, ইখলাস এবং উম্মাহর ঐক্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাখুন। ফিক্বহী ইখতিলাফকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করে—একটি ভারসাম্যপূর্ণ,সুন্নাহভিত্তিক ও আদবসম্পন্ন দ্বীনি সমাজ গড়ার তাওফিক দান করুন। আামীন, ছুম্মা আমিন।

জাহিদুল ইসলাম জনি 🖋️

ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রহ.) সম্পর্কিত বিশ্লেষণে মুখ্য গ্রন্থসমূহ:ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রহ.)—আকীদা, কালামশাস্ত্র ও আহল...
01/06/2025

ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রহ.) সম্পর্কিত বিশ্লেষণে মুখ্য গ্রন্থসমূহ:

ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রহ.)—আকীদা, কালামশাস্ত্র ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠায় যিনি এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব—তাঁর জীবন, চিন্তাধারা ও মানহাজ সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হলে কেবল এক-দুইটি সূত্র নয়; বরং বহু নির্ভরযোগ্য রিজাল, তারীখ ও আকীদা বিষয়ক গ্রন্থসমূহের শরণাপন্ন হতে হয়। বিশেষত নিম্নোক্ত কিতাবসমূহে তাঁর জীবন ও অবদানের মূল্যবান আলোচনা পাওয়া যায়:

📚 প্রধান গ্রন্থসমূহ যেগুলোয় ইমাম আশ'আরী (রহ.)-এর বর্ণনা রয়েছে:

১. তাবাকাতুশ শাফিইয়্যাহ আল-কুবরা – ইমাম তাজুদ্দিন আস-সুবকী (রহ.)- শাফিয়ী ইমামগণের জীবনীসমূহ নিয়ে লিখিত এ সুবৃহৎ গ্রন্থে ইমাম আশ‘আরী (রহ.)-এর চিন্তা ও অবদান বর্ণিত হয়েছে সযত্নে।

২. তাবাকাতুশ শাফিইয়্যাহ – ইবনে কাজী শুহবা (রহ.)- এটি ইমাম সুবকীর কিতাবের সংক্ষিপ্তরূপ, যেখানে ইমাম আশ‘আরী (রহ.)-এর পরিচিতি নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় পাওয়া যায়।

৩. শাজারাতুয্-যাহাব – ইবনে আহমাদ-- ঐতিহাসিক শৃঙ্খলাভুক্ত বংশানুক্রম ও মনীষীদের জীবনীমূলক তথ্যের এক মূল্যবান সংকলন।

৪. আল-কামেল ফিত-তারীখ – ইবনুল আসীর (রহ.)- এই বিশাল তারীখ গ্রন্থে ইমাম আশ‘আরী (রহ.) ও তাঁর যুগের প্রেক্ষাপট বিবৃত হয়েছে। এটি মু'তাযিলা যুগোত্তর প্রতিক্রিয়াও তুলে ধরে।

৫. তাবঈনু কিয্ববিল মুপ্তারী – হাফেয ইবনে আসাকির (রহ.)- ইমাম আশ‘আরী (রহ.)-এর জীবনী, তাঁর তাওবা, মতান্তর এবং তাঁর মানহাজের পক্ষ অবলম্বনকারী ইমামগণের তালিকা এতে সুসংহতভাবে এসেছে। এটি আশ'আরী আকীদার অন্যতম মৌলিক দলীলভিত্তিক রচনা।

৬. আল-মাদারিক – কাজী ‘ইয়ায (রহ.)-- মাগরিব অঞ্চলের ইমামদের বর্ণনা নিয়ে লেখা হলেও ইমাম আশ‘আরী (রহ.)-এর ব্যাপারেও অনেক তথ্য প্রদান করেছে।

৭. তারীখে বাগদাদ – ইমাম খতীব আল-বাগদাদী (রহ.)-- বাগদাদের ইমামদের জীবনী নিয়ে প্রণীত গ্রন্থ, যাতে আশ‘আরী (রহ.)-এর যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও লেখনীসমূহের উল্লেখ রয়েছে।

৮. তাবাকাতুশ শাফিইয়্যাহ – আস-সানয়ী (রহ.)-- শাফিই মাজহাবের ইমামগণের মাঝে ইমাম আশ'আরী (রহ.)-এর অবদান কিভাবে গৃহীত হয়েছে তা এতে প্রতিফলিত হয়।

৯. আদ-দীবাজুল মাযহাব – ইবনে ফারহুন (রহ.)-- ইমামদের জীবনী সংক্রান্ত গ্রন্থ, যাতে আশ‘আরী মানহাজের মর্যাদা এবং ধারাবাহিকতা সংরক্ষিত রয়েছে।

🕌 ইমাম আশ‘আরী (রহ.)-এর মানহাজের উত্তরাধিকার:

ইমাম আশ'আরী (রহ.) আকীদার ময়দানে যে আদর্শিক সংগ্রাম ও বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা কেবল তাঁর ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং তাঁর রেখে যাওয়া মানহাজকে বরণ করে নেন পরবর্তী যুগের অসংখ্য ইমাম ও আলিমগণ। বিশেষ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বগণ—যেমন: ইমাম আবু বকর আল-ইব্রাহিমি, ইমাম আবুল কাসিম আল-কুশায়রী, ইমাম আল-বায়হাকী, ইমাম হারামাইন আল-জুয়াইনী, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ.), ইমাম ইবনে আসাকির, ইমাম ইযযুদ্দিন ইবনুস সালাহ, ইমাম সাবুনী, ইমাম রাজী,
ইমাম তাজুদ্দিন সুবকী ইত্যাদি।

সুতারাং ইমাম আশ'আরী (রহ.) ছিলেন এমন একজন মুজাদ্দিদ, যিনি মু'তাযিলা, ফালাসিফা, জাহমিয়‍্যাহ, খারেজীসহ বিভিন্ন ভ্রান্ত গোষ্ঠীর বিপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা অনুসারে বিশুদ্ধ ঈমানি বুনিয়াদ স্থাপন করেছেন। তাঁর সংগ্রাম, তাওবা, চিন্তা এবং মানহাজ—এসব কিছুই পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

() কোরবানির গোশতের সামাজিক বণ্টন : শরয়ী দৃষ্টিকোণ-----------------------------------------------------------------কোরবান...
30/05/2025

() কোরবানির গোশতের সামাজিক বণ্টন : শরয়ী দৃষ্টিকোণ
-----------------------------------------------------------------
কোরবানির গোশত কোরবানিদাতার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিলি-বণ্টন করা ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ। নববী যুগ থেকেই এ পদ্ধতি চলে আসছে। সামাজিকভাবে সমাজপতিদের নেতৃত্বে কোরবানির গোশত বণ্টনের কোনো দৃষ্টান্ত সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের পুণ্যময় যুগে পাওয়া যায় না। তার পরও নতুন চালু হওয়া এ সামাজিক বণ্টন-প্রথা বেশ গুরুত্বের সাথে দেশের বহু এলাকায় পালিত হচ্ছে।
সামাজিক বণ্টনের ধরণ :
কোরবানির গোশতের প্রচলিত সামাজিক বণ্টনের ধরণ, স্থানভেদে সামান্য ভিন্নতার সঙ্গে অনেকটা এমন- প্রত্যেক কোরবানিদাতা তার কোরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ মসজিদে দিয়ে আসেন। মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে সবার জমাকৃত গোশত সমাজের ধনী-গরীব সকলের মাঝে সমান করে বণ্টন করা হয়।
এ পদ্ধতির একটাই মাত্র সুবিধা, তা হলো- কোরবানিদাতার বাড়িতে ভিক্ষুকদের ভিড় থাকে না এবং সমাজের সকল গরীবের গোশত প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। এ সুবিধাটির কারণেই সমাজপতিরা উক্ত পদ্ধতিকে পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু এ পদ্ধতিতে বেশ কিছু শরয়ী সমস্যা রয়েছে। একারণে এ ধরনের পদক্ষেপ মূলত ভালো নিয়তে ভুল পদক্ষেপ বলে গণ্য। আর শুধু নিয়ত ভালো হলেই কাজ ভালো হয় না। ভালো কাজ সেটাই যার পদ্ধতিটিও সঠিক।
প্রচলিত সামাজিক-প্রথার শরয়ী সমস্যাবলী :
সামাজিকভাবে কোরবানির গোশত বণ্টন-প্রথাটি অনেকগুলো কারণে শরীয়তসম্মত নয়। সেগুলোর অন্যতম হলো-
১. ব্যক্তিগত আমলকে সম্মিলিতরূপ দেওয়া :
প্রচলিত গোশত বণ্টন-পদ্ধতির মাধ্যমে একটি ‘ইনফিরাদী’ তথা ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদনযোগ্য আমলকে সম্মিলিত রূপ দেওয়া হয়। কেননা কোরবানী একটি ব্যক্তিগতভাবে আদায়যোগ্য আমল। ঈদের দিন সম্মিলিতভাবে জামাতে নামায আদায় করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোরবানির পশু কোথায় জবাই করবে, গোশত কিভাবে বন্টন করবে এ বিষয়গুলো শরীয়ত সম্পূর্ণরূপে কুরবানীদাতার ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দিয়েছে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে একত্রিত হতে বলেছেন। কিন্তু কোরবানির পশু জবাই করার জন্য কোনো বিশেষ স্থান নির্ধারণ করেননি বা সবাইকে বিশেষ কোনো স্থানে একত্রিতও হতে বলেননি। গোশতের ব্যাপারে বলেছেন, নিজে খাও, অন্যকে খাওয়াও, দান করো এবং ইচ্ছা হলে কিছু সংরক্ষণ করো। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে একথা বলেননি যে, তোমরা গোশতের একটি অংশ আমার কাছে নিয়ে আসো আমি তা বণ্টন করে দিবো কিংবা এই আদেশও দেননি যে, তোমরা নিজেদের এলাকা ও মহল্লার কোরবানির গোশতের একটি অংশ একস্থানে জমা করবে এবং এলাকার নেতৃস্থানীয় লোকেরা তা বণ্টন করবে।
আর এভাবে কোনো ব্যক্তিগত পর্যায়ের আমলকে মনগড়া সম্মিলিতরূপ দেওয়া শরীয়তসম্মত নয়।
২. শরীয়তের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যাহত করা :
এ ধরনের ব্যবস্থাপনার দ্বারা শরীয়তের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। কেননা শরীয়ত তো বিশেষ উদ্দেশ্যেই কোরবানির এ আমলটিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখেছে।
৩. ঐচ্ছিক বিষয়কে অপরিহার্য বানানো :
কোরবানির গোশত আদৌ বিতরণ করা হবে কি-না, বিতরণ করা হলে কতটুকু অংশ বিতরণ করা হবে তা সম্পূর্ণ কোরবানিদাতার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি তার কোরবানীর গোশত কী পরিমাণ নিজে রাখবেন, কী পরিমাণ অন্যকে খাওয়াবেন, কী পরিমাণ সদকা করবেন এবং কী পরিমাণ আগামীর জন্য সংরক্ষণ করবেন এগুলো সম্পূর্ণ তার ইচ্ছাধীন। শরীয়ত তাকে কোনো কিছুতেই বাধ্য করেনি।
এজন্য যে কোরবানীদাতার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি তিনি যদি সব গোশত তার পরিবারের জন্য রেখে দেন তবে শরীয়তে এটারও সুযোগ রয়েছে। অবশ্য গরীব-মিসকীন ও পাড়া প্রতিবেশীকে সামর্থ্যানুযায়ী দান করাও মানবতা ও ঈমানের দাবি। আবার যার সামর্থ্য আছে তিনি যদি অল্প কিছু গোশত নিজেদের জন্য রেখে বাকি সব গোশত দান করে দেন তবে এটাও ভালো কাজ।
মোটকথা, কোরবানীর গোশত দান করার বিষয়টি শরীয়ত সম্পূর্ণভাবে কোরবানীদাতার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছে। এখানে অন্য কারো অনুপ্রবেশ অনুমোদিত নয়। এবিষয়ে কারো বাধ্যবাধকতা আরোপের কোনো অধিকার নেই। কিন্তু প্রচলিত সামাজিক বণ্টন পদ্ধতিতে সমাজপতিরা কোরবানিদাতার এ ঐচ্ছিক অধিকারটি হরণ করে।
৪. অংশগ্রহণ না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া :
কোরবানীর গোশতের নির্ধারিত একটি অংশ সামাজের জন্য দিতে সকল কোরবানীতাকে মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে বা বাধ্যবাধকতার পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে বাধ্য করা হয়। তাই কোথাও কোথাও গোশত না দিলে সমাজচ্যুত করার হুমকিও দেওয়া হয়। আবার কোথাও জোরালো কোনো হুমকি না থাকলেও সমাজের লোকদের বাঁকাদৃষ্টি ও তীর্যক মন্তব্যের ভয়ে সমাজপতিদের নির্ধারিত অংশ দিতে কোরবানিদাতা বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন। যা আল্লাহ তাআলা বাধ্যতামূলক করেননি; বরং ঐচ্ছিক রেখেছেন সমাজ ও সমাজপতিরা তা বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছে।
৫. স্বাধীন বিবেচনা বাঁধাগ্রস্ত করা :
অনেক মানুষ নিজেদের বিবেচনামতো কোরবানীর গোশত নানাজনকে হাদিয়া কিংবা সদকা করতে চান। পরিচিত কোনো গরীব-মিসকিন বা আত্মীয়-স্বজনকে অন্যদের তুলনায় হয়তো একটু বেশি দিতে চান। কোরবানী যেহেতু ব্যক্তিগত ইবাদত তাই গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রেও কোরবানীদাতার উক্ত ব্যক্তিগত বিবেচনাবোধ অনুযায়ী কাজ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই সামাজিক বাধ্যবাধকতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে সামাজিক রীতি অনুযায়ী কাজ করতে হয়। নিজের স্বাধীন বিবেচনামতো করতে পারেন না।
কেউ বলতে পারে, কোরবানিদাতা তো অনেক সময় কোনো চাপ প্রয়োগ ছাড়াই নিজে থেকে সমাজে গোশত দিয়ে থাকে। তাই তা হাদিয়া বা সদকা হিসেবে গণ্য হবে। এ যুক্তি ঠিক নয়। কেননা হাদিয়া বা উপহার তো সেটাই যা সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেয়া হয়। যাতে কোনো সামাজিক চাপ কিংবা প্রথাগত বাধ্য-বাধকতা থাকে না। অন্যথায় তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হয়ে যায়। হাদীস শরীফে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছেন,
ألا ولا يحل لامرئ من مال أخيه شيء إلا بطيب نفس منه.
‘সাবধান! কারো জন্য তার ভাইয়ের কিছুমাত্র সম্পদও বৈধ নয়, যদি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি না থাকে।’
[মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৪৮৮; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস : ২৮৮৩; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস : ৫৪৯২]
অর্থাৎ কেউ কিছু দিলেই তা ভোগ করা হালাল হয় না, যে পর্যন্ত না সে তা খুশি মনে দেয়। কোনো ক্ষেত্রই এ বিধানের বাইরে নয়। সুতরাং কেউ যদি বাধ্য হয়ে প্রথাগত কারণে নিজের কোরবানির গোশত সমাজের জন্য দেয় তবে তা গ্রহণ করা কারো জন্যই বৈধ নয়। তাহলে সমাজপতিদের পক্ষ থেকে যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ গোশত বাধ্যতামূলক দাবি করা হয় তবে তা কীভাবে বৈধ হবে? এ তো হাদিয়া বা সদকা নয়, সরাসরি পরস্বহরণ।
অতএব কোরবানির গোশত বণ্টনকে সামাজিক রূপ দেওয়া শুদ্ধ নয়।
৬. হাদিয়া বা সদকা গ্রহণে বাধ্য করা :
অনেক মানুষ আছেন যারা প্রত্যেকের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে চান না। আর শরীয়তও কাউকে সব মানুষের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু প্রচলিত সামাজিক রীতির কারণে প্রত্যেকেই অন্য সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বলাবাহুল্য, এই ধরনের বাধ্যবাধকতাহীন বিষয়াদিতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা মোটেই দুরস্ত নয়।
৭. গোশত প্রদানে মনগড়া শর্ত আরোপ করা :
অন্য সমাজের মসজিদে নামায পড়লে কোরবানির গোশতের ভাগ না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় কোথাও কোথাও।
অথচ কোরবানির গোশত প্রদানে ইসলাম কোনো শর্ত রাখেনি। এমনকি অমুসলিমদেরও কোরবানির গোশত দেওয়ার অনুমতি ইসলামে আছে। ইসলাম যা নিঃশর্তে প্রদান করতে বলেছে, তা প্রদানের জন্য নিজেদের মসজিদে নামায পড়ার শর্ত দেওয়ার অধিকার সমাজপতিদের নেই।
৮. হাদিয়া দেয়ার পর কিছু অংশ ফিরিয়ে নেয়া :
প্রচলিত বণ্টন পদ্ধতিতে সমাজের সবাইকে গোশতের ভাগ দেওয়া হয়। যারা কোরবানী করেনি তাদেরকে দেওয়া হয়, আবার যারা কোরবানী করেছেন তাদেরও দেওয়া হয়। ফল দাঁড়াচ্ছে, সমাজের জন্য গোশত দেওয়ার পর তার কিছু অংশ কোরবানিদাতারা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অথচ কাউকে কোনো কিছু দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়া একটি ঘৃণিত কাজ, নিকৃষ্ট স্বভাব। হাদিসে এর উপমা দেওয়া হয়েছে নিজের বমি নিজেই খাওয়ার সাথে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﺮﺟﻞ ﺃﻥ ﻳﻌﻄﻲ ﻋﻄﻴﺔ، ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﻓﻴﻬﺎ، ﻓﻤﺜﻠﻪ ﻣﺜﻞ اﻟﻜﻠﺐ ﺃﻛﻞ ﺣﺘﻰ ﺇﺫا ﺷﺒﻊ ﻗﺎء، ﺛﻢ ﻋﺎﺩ ﻓﻲ ﻗﻴﺌﻪ.
‘কোনো ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় কাউকে কিছু দান করার পর তা ফিরিয়ে নেওয়া। এর দৃষ্টান্ত হলো, কুকুরের মতো। কুকুর যখন খেতে খেতে পরিতৃপ্ত হয়ে যায়, তখন সে বমি করে। কিছুক্ষণ পরে নিজেই আবার নিজের সেই বমি চেটে চেটে খায়।’
[মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২২১৩১]
৯. গরীবের প্রাপ্যাংশ ধনীদের দেওয়া :
কোরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব। এক ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা। আরেক ভাগ গরীবদের মাঝে বিলি করা, আর অপর ভাগ আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের মাঝে বিলি করা। প্রচলিত সামাজিক বণ্টনে যারা কোরবানির গোশত সমাজে জমা দেয় তারা কিন্তু গরীবের ভাগটাই সেখানে জমা দেয়। যার জন্য বাড়িতে কোনো গরীব, মিসকীন বা ভিক্ষুক আসলে তাদের সোজা বলে দেয়, গরীবের ভাগ আমরা মসজিদে দিয়ে দিয়েছি। অথচ মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও সমাজপতিরা কোরবানির গোশতে গরীবদের সেই ভাগটুকু সমাজের ধনী, গরীব, স্বচ্ছল, অস্বচ্ছল নির্বিশেষে সবাইকে দেয়। এটা গরীব লোকদের প্রাপ্যতা নষ্ট বা হ্রাস করার শামিল।
১০. অন্য মহল্লার গরীবদের গোশত না দেওয়া :
সাধারণত প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে অনেক পাড়া, মহল্লা এমন থাকে যেখানকার বেশিরভাগ লোকই কোরবানী দেয় না। মহল্লাবাসীর অধিকাংশই দরিদ্র, দিনমজুর। কিন্তু পাশের মহল্লায়, গ্রামে অনেকেই কোরবানী দেয়। আগে এ ধরনের মহল্লার দরিদ্ররা কোরবানীর দিন আশ-পাশের পাড়া-মহল্লার কোরবানীদাতাদের বাড়িতে যেত। সবার থেকে কিছু কিছু গোশত পেত। যাতে তাদের দু’এক দিনের খাবার অনায়াসেই চলে যেত। পরিতৃপ্ত হয়ে তারা গোশত খেত।
কিন্তু সামাজিক বণ্টন প্রথার রেওয়াজ তাদের গোশত খাওয়ার এ সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা পাশের মহল্লার কোরবানিদাতাদের বাড়িতে গেলে গোশত পায় না। কোরবানিদাতা উত্তর দেয়, গরিবের ভাগ মসজিদে দিয়েছি। তোমরা মসজিদে যাও। আর মসজিদে গেলে সমাজপতিরা তাদের উত্তর দেয়, খাতায় তোমাদের নাম নেই। তোমরা এ সমাজের নও। তোমাদেরকে আমরা গোশত দিতে পারবো না।
১১. গোশত কাটাকাটির জন্য মসজিদের বারান্দা ব্যবহার করা :
অনেক এলাকায় গোটা সমাজের কোরবানীর গোশত কাটা এবং তা বণ্টনের বন্দোবস্ত করার জন্য উপযুক্ত জায়গা থাকে না। তখন স্বাভাবিকভাবেই কারো বাড়ির আঙ্গিনা বা বাংলা ঘর ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি বছর বাড়ির মালিক তার বাড়িতে এসব কাজকর্ম করার জন্য খুশিমনে অনুমতি দিবেন এমনটি নাও হতে পারে। অনেক সময় তো এই নিয়ে ঝগড়া-বিবাদও হতে দেখা যায়। কোনো কোনো স্থানে তো এমন কাণ্ড করা হয় যে, কোনো উপযুক্ত জায়গা না থাকায় মসজিদের মধ্যে এই কাজ আরম্ভ করা হয়- নাউযুবিল্লাহ। এর দ্বারা মসজিদের সম্মান ও পবিত্রতা কী পরিমাণ বিনষ্ট হয় তা তো খুব সহজেই অনুমেয়।
১২. অন্যের গীবত-শেকায়েতের দ্বার উন্মুক্ত করা :
এ ধরনের সামাজিক প্রথার আরেকটি ক্ষতি হলো, সমাজের লোকজনের মধ্যে একটি গুঞ্জন সৃষ্টি হয় যে, অমুকের সম্পদ সন্দেহজনক, অমুকের আয়-রোজগার হারাম, কিন্তু তার কোরবানির গোশতও সবাইকে খেতে হচ্ছে! ইত্যাদি। এখন এ জাতীয় কথাবার্তা শুধু অনুমান নির্ভর হোক বা বাস্তবভিত্তিক উভয় ক্ষেত্রেই এ ধরনের আলোচনা-সমালোচনা দ্বারা সমাজের মধ্যে অনৈক্য ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় এবং ঝগড়া-বিবাদের সূত্রপাত ঘটে। এর দ্বারা একদিকে যেমন সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্যদিকে কুধারণা ও গীবত-শেকায়েতের গুনাহে লিপ্ত হতে হয়।
তাছাড়া বাস্তবিকই যদি সমাজের কিছু মানুষ এমন থাকে যাদের আয়-রোজগার হারাম পন্থায় হয় তাহলে সেক্ষেত্রে জেনেবুঝে তাদের কোরবানির গোশত সমাজের সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যে একটি গুনাহর কাজ তা তো বলাই বাহুল্য। এ ধরনের কোরবানির গোশত হাদিয়া হিসেবে বণ্টন করা এবং ব্যবহার করা কোনোটাই জায়েয নয়।
১৩. গোশত গ্রহণ ও বণ্টন পদ্ধতিতে সমস্যা :
যেসব অঞ্চলে ‘সমাজ’ প্রথা চালু আছে সেসব অঞ্চলের সর্বত্র গোশত গ্রহণ ও বণ্টনের পদ্ধতি এক নয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এই কাজ করা হয়। প্রত্যেক পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা ও আপত্তিকর বিষয় বিদ্যমান রয়েছে। সবগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কেননা উপরোল্লেখিত আপত্তিগুলোই এই মূল পদ্ধতি বর্জণীয় হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
যদি প্রচলিত এই প্রথায় ভিন্ন কোনো সমস্যা না-ও থাকে তবুও এই সমস্যা তো অবশ্যই আছে যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে যে বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ের কাজ ছিল এবং কোরবানীদাতার ইচ্ছা- স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল তাতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এই মৌলিক সমস্যাই উপরোক্ত প্রথা আপত্তিকর ও বর্জণীয় হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
সারকথা, উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে জানা গেল যে, শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক প্রত্যেককে তার কোরবানির বিষয়ে স্বাধীন রাখতে হবে। কোরবানিদাতা নিজ দায়িত্ব ও বিবেচনামতো যাকে যে পরিমাণ হাদিয়া করতে চায় করবে এবং গরীব মিসকীনকে যে পরিমাণ সদকা করতে চায় করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় থেকে শত শত বছর যাবত এ পদ্ধতি চলমান ছিল এবং এখনও সুন্নতের অনুসারী আলেম ওলামা ও দ্বীনদার মানুষের মধ্যে এই পদ্ধতিই চালু রয়েছে।
আর এ পদ্ধতিই অবলম্বন করা জরুরী। বিশেষত এই ফিতনার যুগে নানামুখী ঝামেলা ও মনোমালিন্য থেকে মুক্ত থাকার এটিই একমাত্র পন্থা এবং স্বাভাবিকভাবে সমাজের শান্তিপ্রিয় মানুষজনও এই পন্থা গ্রহণ করতে চান।
পরিশেষে বলবো, জুমআ ও ঈদের দিন মসজিদ ও ঈদগাহে ইমাম এবং খতীব সাহেবদের এ বিষয়টি মানুষকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শরীয়তের আহকাম সঠিকভাবে বোঝার এবং আন্তরিকভাবে তার উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

©

আল্লাহর হাত, চোখ ইত্যাদী দ্বারা কী উদ্দেশ্য?ইমাম বায়হাক্বী (রহ.) বলেন ((وأن نفسه ليس بجسم ، وأن وجهه ليس بصورة ، وأن يده...
28/05/2025

আল্লাহর হাত, চোখ ইত্যাদী দ্বারা কী উদ্দেশ্য?

ইমাম বায়হাক্বী (রহ.) বলেন ((وأن نفسه ليس بجسم ، وأن وجهه ليس بصورة ، وأن يده ليست بجارحة ، وأن عينه ليست بحدقة ، وإنما هذه أوصاف جاء بها التوقيف))

অর্থাৎ আল্লাহতালার নফস (জাত ও সত্তা) ❝শরীর❞ নয়। তাঁর চেহারা "আকৃতি" নয়। তাঁর হাত ❝অঙ্গ❞ নয়। তাঁর চোখ "চোখের মণি" নয়। এগুলো আল্লাহতালার সিফাত তথা গুণাবলী মাত্র। এ ব্যাপারে আমরা চুপ থাকবো। (আল ইতিক্বাদ ওয়াল হিদায়া ইলা সাবীলির রাশাদ ১৫৭, ইমাম বায়হাক্বী)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

ইমাম বায়হাক্বীর “আল আসমা ওয়াস সিফাত” কিতাবে আল্লাহ'র সিফাত এর ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি আরও লিখেন ((وأما ذكر الصورة في هذه القصة فإن الذي يجب علينا وعلى كل مسلم أن يعلمه : أن ربنا ليس بذي صورة ولا هيئة ، فإن الصورة تقتضي الكيفية وهي عن الله وعن صفاته منفية ، وقد يتأول معناها على وجهين))

অর্থাৎ এ ঘটনায় যে আকৃতির কথা আছে, এ ব্যাপারে সকল মুসলমানের এ কথা জানা ওয়াজিব যে, আমাদের রব আকৃতি বিশিষ্ট কোনো সত্তা নন। কারণ, আকৃতি "ধরণ ও স্বরূপ"-কে দাবী করে। অথচ আল্লাহতালা এবং তাঁর সিফাত ধরণ থেকে পবিত্র। এর অর্থের তাবিল দুইভাবে করা হয়। (আল আসমা ওয়াস সিফাত ২:১৮৪)।

পরিশেষে বলব, কেয়ামতের মৌলিক আলামতের মাঝে অন্যতম একটি আলামত হল, মূর্খ লোকদের কাছ থেকে মানুষ দ্বীন শিখতে শুরু করবে। ফলে তারা উভয়ই ভ্রষ্টতার চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে। আকীদা, হাদীস, ফিকহ এ সমস্ত ইলম নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল কাদের? আর স্যোসাল মিডিয়ায় তা করছে কারা? বড্ড আশ্চর্যের ব্যাপার! আল্লাহ আমাদের ঈমান ও আমল হেফাজত করুন।

ইমাম যাহাবি ও মুজাসসিমা ফেরকার বিরুদ্ধাচরণ: একটি ঐতিহাসিক দলিল --প্রখ্যাত হাফেজ ও ইতিহাসবিদ ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবি রাহিম...
28/05/2025

ইমাম যাহাবি ও মুজাসসিমা ফেরকার বিরুদ্ধাচরণ: একটি ঐতিহাসিক দলিল --

প্রখ্যাত হাফেজ ও ইতিহাসবিদ ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ তাযকিরাতুল হুফ্‌ফায–এ “আব্দারী” নামক এক বর্ণনাকারীর সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন, যেখানে তিনি তাঁর ভ্রান্ত আক্বিদা এবং দেহবাদী মানসিকতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

ইমাম যাহাবি বলেন:
وكان سيئ الاعتقاد، يعتقد من أحاديث الصفات ظاهرها، بلغني أنه قال في {يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ} وضرب على ساقه فقال: ساق كساقي هذه.
قلت: هذه حكاية منقطعة، وهذا قول الضلال المجسمة، وما أعتقد أن بلغ بالعبدري هذا.
অর্থ: আব্দারী ছিল দুর্বল আক্বিদার ব্যক্তি। সে গুণবাচক হাদীসসমূহের বাহ্যিক অর্থ বিশ্বাস করত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, সে আল্লাহর বাণী — “يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ” (সেদিন পায়ের নলা উন্মোচিত করা হবে) — এর ব্যাখ্যায় নিজের পায়ে হাত দিয়ে বলেছে, "এই পায়ের মতোই পা।"

এরপর ইমাম যাহাবি বলেন:
"এই ঘটনাটি সনদ বিচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয়। আর এই ধরনের বক্তব্য পথভ্রষ্ট মুজাসসিমা ফেরকার আকিদা। আমি বিশ্বাস করি না যে আব্দারী এমন কথা বলেছে।"

এরপর তিনি আরো একটি বর্ণনা উল্লেখ করেন:
وبلغني أنه قال: إن أهل البدع يحتجون بقوله تعالى: {لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ} أي: في الإلهية, أما في الصورة فهو مثلي ومثلك.
قلت: تعالى الله عن ذلك وتقدس، وهذا لا يتفوه به مؤمن، فإن الله تعالى لا مثل له أبدًا.
অর্থ: আরো শোনা যায়, সে বলেছে — "বিদআতি লোকেরা {لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ} এই আয়াতে দলীল ধরে, অথচ এর অর্থ হলো কেবল ইলাহিয়্যাতে আল্লাহর কোনো সদৃশ্য নেই; কিন্তু আকৃতির দিক থেকে তিনি আমার এবং তোমার মতো।"
এ সম্পর্কে ইমাম যাহাবি বলেন:
“আল্লাহ্ এই অপবাদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে, তিনি অতীব পবিত্র ও মহান। এ ধরণের কথা কোনো ঈমানদার মুখেও আনতে পারে না। নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো সাদৃশ্য কখনোই নেই।” (তাযকিরাতুল হুফ্‌ফায, ইমাম যাহাবি, ৪৮/৪)

যাহাবির আকিদা: আহলে হক আক্বিদার প্রতিফলন--

ইমাম যাহাবির আকিদা নিয়ে যারা সন্দেহ সৃষ্টি করে, তাদের জেনে রাখা উচিত — যদিও তিনি নিজেকে আশআ’রি বলে পরিচয় দেননি, তথাপি তাঁর বহু বিশ্বাস আশআ’রি আকিদার সঙ্গেই সাযুজ্যপূর্ণ। তিনি একাধিক জায়গায় মুজাসসিমা বা দেহবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাঁর মতের বিরোধিতা রয়েছে ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহর সঙ্গেও বহু বিষয়ে। গবেষকরা বলছেন, অন্তত আটটি আকিদাগত মৌলিক মাসআলায় হাফেজ যাহাবি ও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুমাল্লাহর মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান।

❖ আমাদের বার্তা:

যারা নিজেদেরকে ‘সালাফি’ দাবি করে এবং আল্লাহর গুণবাচক আয়াত ও হাদীসের অর্থে চরম বাহ্যিকতা অবলম্বন করে, তাদের উচিত এই ঐতিহাসিক সত্যগুলো জানা ও মানা। যদি ইমাম যাহাবির এই স্পষ্ট বক্তব্য তাঁদের পছন্দ না হয়, তবে কি এবার তাঁকেও ‘জাহমি’ বলে আখ্যায়িত করবেন?

🔸 আল্লাহ তাআলা আমাদের আকিদার ইমামগণের প্রতি রহম করুন।
🔸 আহলে হক আকিদা ও ইলমে কালামকে সঠিকভাবে বুঝার তাওফিক দিন।

আশআরি আকিদা: ইসলামের মূলধারায় একটি স্বীকৃত ও সুপ্রতিষ্ঠিত দর্শন--ইতিহাসের পরতে পরতে ইসলামী আকিদাগত পরিসরে বিভিন্ন চিন্তা...
27/05/2025

আশআরি আকিদা: ইসলামের মূলধারায় একটি স্বীকৃত ও সুপ্রতিষ্ঠিত দর্শন--

ইতিহাসের পরতে পরতে ইসলামী আকিদাগত পরিসরে বিভিন্ন চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছে। তবে এর ভেতর অন্যতম গ্রহণযোগ্য ও মূলধারার প্রতিনিধিত্বকারী মত হলো আশআরি আকিদা, যা ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরি (রহ.)-এর মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পায়। এই আকিদা নিছক কোন তাত্ত্বিক কল্পনা নয়; বরং এটি ছিল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বিশ্বাসগত মূলনীতি সমূহকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও দলীলভিত্তিক পরিভাষায় সংরক্ষণের একটি সফল প্রয়াস। এর সুস্পষ্ট স্বীকৃতি আমরা কালজয়ী বহু ইমাম ও ইতিহাসবিদের লেখনিতে পাই।

১. আশআরি আকিদা – আহলুস সুন্নাহর প্রকৃতই ব্যাখ্যা

শাইখুল ইসলাম ও আল-ইমাম আল-আশআরি, হাফিয তাজুদ্দীন আস-সুবকি (রহ.) অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলেন:
وَلَا يخفى أَن الأشاعرة إِنَّمَا هم نفس أهل السّنة أَو هم أقرب النَّاس إِلَى أهل السّنة
“এটি কারো নিকট অস্পষ্ট নয় যে আশআরিগণই মূলত আহলুস সুন্নাহ, অথবা অন্য সকলের তুলনায় তাঁরাই আহলুস সুন্নাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী।” (আত-তাবাকাত আশ-শাফি‘ইয়্যাহ আল-কুবরা, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১৪৪)

এই বক্তব্য প্রমাণ করে, আশআরি আকিদা ছিল ইসলামের মূলধারার প্রতিনিধিত্বকারী দর্শন, যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর ভিত্তিভূমির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

২. রাসূল (সা.)-এর স্বপ্নে প্রশংসিত আকিদা: আশআরি ও সুফি ঐতিহ্য

ইমাম আবু মুহাম্মদ আফীফুদ্দীন আল-ইয়াফেয়ী (রহ.) তাঁর বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নের উল্লেখ করেন, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ ইমাম গাজ্জালীর কিতাব ইহইয়াউ উলূমিদ্দীনের প্রশংসা করেছেন। তিনি লেখেন:
ومعلوم أن كتاب الإحياء مشتمل على عقيدة الأشعرية وعلى مذهب الصوفية، وقد استحسن النبي - صلى الله عليه وآله وسلم - ذلك، وصاحباه...
“এটি সর্বজনবিদিত যে ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ গ্রন্থটি আশআরি আকিদা ও সুফি মতবাদের উপর রচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই সাহাবী এটিকে পছন্দ করেছেন।” (মিরআতুল জিনান ও ইবরাতুল ইয়াকযান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২৫২)

এই স্বপ্ন ও বিশ্লেষণ প্রমাণ করে যে আশআরি আকিদা শুধু ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং আত্মিক ও নববী মান্যতার সঙ্গেও সংযুক্ত।

৩. আশআরি আকিদা: ইবনু কাসীরের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম পথ

ইবনে তায়মিয়ার যুগসঙ্গী, বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীর ইবনে কাসীর-এর প্রণেতা, ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) আশআরি আকিদাকে আহলুস সুন্নাহর পথ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন:.. فإنها من أصح الطرق وللمذهب... وهذه طريقة السلف والأئمة من أهل السنة والجماعة...
“আশআরির পথ – বিশেষত মু‘তাযিলা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর – সর্বোত্তম ও সহীহ মাজহাব। এটি সালাফ ও আহলুস সুন্নাহর ইমামদের পথ।” (তাবাকাতুশ শাফি‘ইইন, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪২৭)

এতে স্পষ্ট হয় যে, সালাফের নামে আজ যেসব নতুন নতুন আকিদাগত বিচ্যুতি তুলে ধরা হয়, সেগুলোর সাথে ইমামগণের ঐতিহ্যিক পথের কোন সাদৃশ্য নেই।

সুতারাং আশআরি আকিদা কোনো বিচ্যুত দর্শন নয় বরং এটি আহলুস সুন্নাহর মূলধারার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বিশ্বখ্যাত ইমামগণের বক্তব্য ও ইতিহাস এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করে। সালাফের নামে যেসব গোষ্ঠী এই আকিদাকে বিদআত, বিচ্যুতি কিংবা ফিলসফি বলে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা প্রকৃতপক্ষে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর ঐতিহ্য ও ইজমা থেকে বিচ্যুত একটি দল মাত্র।

আধুনিক যুগের তথাকথিত “আহলে হাদীস”: সত্যিকার আহলে হাদীস নয়, এক আত্মপরিচয়হীন গোষ্ঠী--“আহলে হাদীস” অর্থাৎ হাদীসের অনুসারী—এ...
19/05/2025

আধুনিক যুগের তথাকথিত “আহলে হাদীস”: সত্যিকার আহলে হাদীস নয়, এক আত্মপরিচয়হীন গোষ্ঠী--

“আহলে হাদীস” অর্থাৎ হাদীসের অনুসারী—এই নামে যে একটি দল নিজেদের পরিচয় দেয়, তারা আদতে সেই খাঁটি আহলে হাদীসের কোনো ধারক নয়, যারা খায়রুল কুরুন (সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন) যুগে ছিলেন।

এই নামধারী গোষ্ঠীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো—
তারা বিশ্ববরেণ্য, শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ, ঈমানদার আলিমগণ—যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ ইত্যাদিদের অনুসরণকে বর্জন করে, অথচ সেইসব আলিমদের ইলমই ছিল কুরআন-সুন্নাহর প্রকৃত ব্যাখ্যার প্রধান উৎস।
তারা বলে—“আমরা মাযহাব মানি না, কেবল হাদীস মানি।” অথচ বাস্তবতা হলো, তারা হাদীস বুঝতে গিয়ে আজগুবি সব ব্যাখ্যা করে, যেগুলো কখনো সাহাবা-তাবেঈন কিংবা চার মাযহাবের কোনো ইমাম বলেননি।

আহলে হাদীস দাবিদারদের বৈশিষ্ট্য:

১. ইলমের নয়, চিৎকারের অনুসারী:
তারা ইলমের আলোকে নয়, বরং ইউটিউব, ফেসবুক আর গলা চড়িয়ে বলার ভিত্তিতে দ্বীনকে ব্যাখ্যা করে। সাহাবিদের মতো নম্রতা, আলেমদের মতো গভীর চিন্তা তাদের নেই।

২. মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো:
তাদের অনেক “শাইখ” মিথ্যা হাদীস প্রচার করে, সঠিক তাফসীর বিকৃত করে, উম্মতের ঐক্য ভেঙে দেয়। আর এদের অনেকেই এমন বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়, যেগুলোতে উলামায়ে উম্মত একমত।

৩. ফেতনাবাজি ও বিভাজনের পক্ষে:
তাদের দাওয়াতের ফলশ্রুতি—উম্মাহর ঐক্য নষ্ট, আলেমদের অপমান, সাধারণ মুসলিমদের দ্বীনের প্রতি বিষোদ্গার। দ্বীনের মৌলিক শিষ্টাচার ও একতা তারা নষ্ট করে।

৪. মাযহাববিরোধী অথচ নিজেরাই এক “নতুন মাযহাব” সৃষ্টি করে:
তারা মুখে বলে “মাযহাব মানি না”—কিন্তু বাস্তবে “শাইখ ফালান”, “শাইখ তেলান” এর ব্যাখাকে শেষ কথা বলে মানে। এটাই তো একধরনের নতুন মাযহাব! তবে এই মাযহাবের কোনো ইমাম নেই, নেই ইজতিহাদী শর্ত পূরণ, নেই পরম্পরা।

সত্যিকার আহলে হাদীস কারা?

আসল আহলে হাদীস ছিলেন সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং চার মাযহাবের ইমামগণ ও তাদের অনুসারীরা।
তারা কুরআন-সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে ইজতিহাদ করেছেন, হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন, সহীহ ও যঈফ হাদীস চিহ্নিত করেছেন এবং উম্মতের জন্য সুস্পষ্ট পথ রেখেছেন।

উপসংহার:

এই তথাকথিত “আহলে হাদীস” গোষ্ঠী মূলত এক বিভ্রান্ত দল। তারা উম্মতের সুপ্রাচীন ইজমা ও ইলমী ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে অজ্ঞ “শাইখদের” ফতোয়া আর বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকে নস্যাৎ করতে চায়। তারা আহলে হাদীস নয়, বরং আহলে গলাবাজ, আহলে ফেতনা, আহলে বিভ্রান্তি!

সুতরাং, প্রকৃত আহলে হাদীস হতে হলে—
চার মাযহাবের একটির অনুসরণ করতে হবে,
ইজতিহাদীর ক্ষমতা না থাকলে তাক্বলীদ করতে হবে,
এবং উম্মতের ঐক্য ও ইলমের ধারাবাহিকতাকে মান্য করতে হবে।

Address

গ্রাম/হলহলিয়া, থানা/তাহিরপুর, জেলা/সুনাম গঞ্জ
Sylhet

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Shaik Usman bin Rashid posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category