26/01/2025
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
(قَدِيمٌ بِلَا ابْتِدَاءٍ دَائِمٌ بِلَا انْتِهَاءٍ)
তিনি কাদীম (অনাদি, অবিনশ্বর), তার কোনো শুরু নেই। তিনি অনন্ত-চিরন্তন, তার কোনো অন্ত নেই।[আকিদাতুত ত্বহাবী]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
তিনিই الأَوَّلُ (প্রথম), তিনিই الآخِرُ (সর্বশেষ), তিনিই الظَّاهِرُ (সবকিছুর উপরে), তিনিই الْبَاطِنُ (মাখলুকের অতি নিকটে), আর তিনি সর্ব বিষয়ে عَلِيم (মহাজ্ঞানী)। (সূরা হাদীদ: ৩)।
নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দু‘আয় বলেছেন,
اللَّهُمَّ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ
‘‘হে আল্লাহ! তুমিই সর্বপ্রথম, তোমার পূর্বে কেউ ছিল না। তুমিই সর্বশেষ, তোমার পর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না’’
আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নামসমূহের অন্যতম আল-আওয়াল এবং আল-আখের নামের অর্থেই ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ قَدِيمٌ بِلَا ابْتِدَاءٍ، دَائِمٌ بِلَا انْتِهَاءٍ ‘‘অনাদি, অবিনশ্বর, প্রাক্তন, যার কোনো শুরু নেই এবং তিনি অনন্ত-চিরন্তন, যার কোনো অন্ত নেই’’ এ অংশটি ব্যবহার করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলার সিফাতসমূহ থেকে এ দু’টি বিশেষণ মানুষের ফিতরাত তথা সৃষ্টিগত স্বভাবের মধ্যেই বদ্ধমূল রয়েছে। কেননা এ বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, সমস্ত সৃষ্টিই এমন এক সত্তা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়, যিনি নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল। এ বিশ্বাস অতীতে সূচনাহীন সৃষ্টির অস্তিত্ব এবং ভবিষ্যতে সৃষ্টির পরিসমাপ্তি বিহীন সৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার ধারণাকে বাতিল সাব্যস্ত করে।
আমরা প্রাণী, জীবজন্তু, গাছপালা, উদ্ভিদ, খনিজদ্রব্য, মহাশূন্যের বিভিন্ন ঘটনা যেমন মেঘ, বৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করি। এসব জিনিস এবং এ রকম অন্যান্য বস্তু সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। কেননা অসম্ভব জিনিসের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর যা সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, তা নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল হয় না। কেননা যে নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল হয়, সে কখনো অস্তিত্বহীন হয় না। সৃষ্টিজগতের এ জিনিসগুলো ছিল না। অতঃপর অস্তিত্ব ধারণ করেছে। এগুলোর অস্তিত্ব না থাকা অস্তিত্ব থাকার পরিপন্থী। আর অস্তিত্ব থাকা অস্তিত্ব ধারণ করা অসম্ভব হওয়ার ধারণার পরিপন্থী। আর যে বস্তু অস্তিত্ব গ্রহণ করা কিংবা না করার সম্ভাবনা রাখে সে নিজে নিজেই অস্তিত্ব গ্রহণ করতে পারে না।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمْ الْخَالِقُونَ أَمْ خَلَقُوا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بَل لاَ يُوقِنُونَ
‘‘তারা কি কোন কিছু ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে? না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না কি তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না’’। (সূরা তূর: ৩৫-৩৬)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এখানে বলছেন, তারা কোন জিনিস ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে না কি তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে?
এটি জানা কথা যে, কোনো সৃষ্টিই নিজে নিজেকে সৃষ্টি করেনি। সুতরাং যে সৃষ্টি নিজেকে সৃষ্টি করতে পারে না এবং নিজেকে নিজেই অস্তিত্বহীন করতে পারে না, নিজে নিজেই অস্তিত্বে আসা তার পক্ষে অসম্ভব। বরং কেউ তাকে সৃষ্টি করেছে বলেই সে অস্তিত্বে এসেছে। অথচ তার আগে তা ছিল অস্তিত্বহীন। যে বস্তুর অস্তিত্বশীলতা তার অস্তিত্বহীনতার স্থলাভিষিক্ত হয় এবং অস্তিত্বহীনতা এর অস্তিত্বশীলতার স্থলাভিষিক্ত হয়, তার পক্ষে নিজে নিজেই অস্তিত্বে আসা সম্ভব নয় এবং তার অস্তিত্বহীন হওয়া আবশ্যক নয়।
অধিকন্তু, Yasin Hosen Shishir.এর মতো নাস্তিকরা আগেও ছিলো এখনও আছে। তারা আল্লাহর অস্তিত্ব আগেও অস্বীকার করতো এখনও করছে। এবং এটা এখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।আল্লাহ তাআলার মহান সত্তার অনন্যতা ও সাদৃশ্যহীনতা সম্পর্কে এজমালী আকীদা সাধারণত সকলেরই আছে। সকলেই বিশ্বাস করে এবং বলে, আল্লাহর সত্তা ও গুণ কোনো মাখলূকের মতো নয়; তিনি মাখলূকের সাদৃশ্য থেকে সর্বোতভাবে মুক্ত ও পবিত্র। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই কোনো গুণ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে বা গুণ সম্পর্কে আলোচনার ক্ষেত্রে সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে মাখলূকের সাথে সাদৃশ্য সাব্যস্ত করে। এমনকি আলোচনার শুরুতে বা শেষে সাদৃশ্যহীনতার কথা স্বীকার করলেও মাঝখানে ব্যাখ্যা ও তফসীল বয়ানের সময় কার্যত মাখলূকের সাথে সাদৃশ্যায়ন করে থাকে।
অনেকেই আছেন, এজমালীভাবে মহান আল্লাহ তাআলার পবিত্র সত্তার অনন্যতা ও সাদৃশ্যহীনতা বিশ্বাস করা সত্ত্বেও সিফাত সম্পর্কে তফসীলী আলোচনার সময় তফসীলীভাবে তাঁর অনন্যতা ও সাদৃশ্যমুক্ত হওয়ার কথা বলতে চান না; বরং তফসীলীভাবে মহান সত্তার অনন্যতা বয়ান করাকে অস্বীকার করেন, অপছন্দ করেন এবং এটাকে বিদআত মনে করেন। আর তাই তাদেরকে বলতে শোনা যায়, আল্লাহ তাআলাকে ‘নিরাকার-নিরাধার’ বলা যাবে না। কিংবা বলেন, অল্লাহকে সাকারও বলা যাবে না, নিরাকারও বলা যাবে না। এসব দাবি ও ধারণা আসলে অজ্ঞতাপ্রসূত এবং কূটতর্কের অন্তর্ভুক্ত। তারা ধরে নিয়েছে, দ্বীনুল ইসলামে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে যে পবিত্রতা এবং সাদৃশ্যহীনতা ও অনন্যতার বিশ্বাস, তা এক মুজমাল ও অস্পষ্ট ধারণা। নাউযুবিল্লাহ। অথচ আল্লাহ তাআলার সাদৃশ্যহীনতা সম্পর্কে কুরআন কারীমের বক্তব্য মুহকাম ও দ্ব্যর্থহীন এবং আম ও ব্যাপক-
وَ لَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ.
(তাঁর সদৃশ কেউই নেই।)
এবং-
لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌ
(তাঁর অনুরূপ বলতে কিছুই নেই।)
কুরআন কারীমের এসব বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন ও ব্যাপক অর্থবোধক। ভাষাগত বিচারে এতে কোনো দ্ব্যর্থতা ও অস্পষ্টতা নেই। আরবী ভাষার উসলূব ও বাকরীতি সম্পর্কে সচেতন যে কেউ বুঝবেন, পূর্বোক্ত আয়াতদুটির নফী সর্বব্যাপী। অর্থাৎ কেউই বা কোনো কিছুই কোনো দিক থেকেই তাঁর সদৃশ নয়, তাঁর মতো বলতে কিছুই নেই, থাকতে পারে না। তাই এর দ্ব্যর্থহীনতা ও ব্যাপকতার বিষয়ে সলফের যামানা থেকে অজ পর্যন্ত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর সকল ইমামের ইজমা ও ঐকমত্য রয়েছে। কেউই এর ব্যাপকতাকে অস্বীকার করেননি। আয়াতের এধরনের উমূম ও ব্যাপকতা কতয়ী ও অকাট্য। আয়াতের এধরনের ব্যাপকতাকে অস্বীকার করা গোমরাহী।
এখন একটু ভাবুন, মাখলূকের যেকোনো কিছুর সাথে খালিকের সাদৃশ্যহীনতার এই সর্বব্যাপী বক্তব্যের ওপর আপনি কীভাবে আমল করবেন? এর প্রায়োগিক রূপ কী?
একথা স্পষ্ট যে, এই সর্বব্যাপী বক্তব্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তাঁর অস্তিত্বের ক্ষেত্রে, স্থিতির ক্ষেত্রে, প্রতিটি গুণের ক্ষেত্রে এবং তাঁর প্রতিটি ক্রিয়ার ক্ষেত্রে। এখন এই সর্বব্যাপী নীতি সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগের সময় প্রত্যেক ক্ষেত্রের জন্য বিশেষ কোনো নস থাকা আবশ্যক নয়; বরং আকলে সলীম তথা সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে এই সর্বব্যাপী নীতির প্রয়োগ করা জরুরি। আকীদার কথা বলুন কিংবা ফিকহী বিধানের কথা বা আখলাকের কথা- সর্বক্ষেত্রেই তো ইসলামের এধরনের মৌলিক ও সর্বব্যাপী শিক্ষা রয়েছে, যেগুলোকে আকলে সালীমের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হয়। যদিও এই সাদৃশ্যহীনতার অনেক দিক ও ক্ষেত্র সম্পর্কে খাস আয়াত ও হাদীস এবং আছারে সাহাবাও পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, যখনই কোনো ব্যক্তি বিদআত ও গোমরাহীর শিকার হয়ে আল্লাহ সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা বা ভুল কথা উদ্ভাবন করেছে তখনই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর মুজতাহিদ ইমামগণ তার খণ্ডনে এধরনের ব্যাপক অর্থবোধক আয়াত ও হাদীস প্রয়োগ করেছেন।
সর্বোপরি বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি নিরসনের জন্য একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাশবীহ বা সাদৃশ্য নফী করার অর্থ কখনোই সিফাত ও গুণাবলিকে নফী করা নয়। অতীতে এমন গোমরাহ ফেরকা ছিল এবং বর্তমানেও এমন ভ্রান্ত ধর্ম ও মতবাদে বিশ্বাসী রয়েছে, যারা মনে করে, সৃষ্টিকর্তার যে কোনো গুণ বর্ণনা করার মানেই হল সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা, তাই তারা স্রষ্টাকে নির্গূণ সত্তারূপে ধারণা করে এবং তাঁর জন্য গুণবাচক যে কোনো শব্দ ও অভিধা ব্যবহার করাকে পরিহার করে। নাউযুবিল্লাহ।
সঠিক কথা হল, আল্লাহ তাআলা যেমন সকল উৎকৃষ্ট গুণের অধিকারী, তদ্রূপ তিনি গুণাবলির ক্ষেত্রে মাখলূকের সাদৃশ্য হতেও চিরপবিত্র। কুরআন মাজীদের বিখ্যাত এই আয়াতটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন-
فَاطِرُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ جَعَلَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا وَّ مِنَ الْاَنْعَامِ اَزْوَاجًا يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ.
তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তিনি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও সৃষ্টি করেছেন জোড়া। এর মাধ্যমে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। তাঁর অনুরূপ বলতে কিছু নেই। তিনিই সব কথা শোনেন, সবকিছু দেখেন। -সূরা শূরা (৪২) : ১১
লক্ষ করুন, এতে শুরুতে ও শেষে আল্লাহ তাআলার গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। আর মাঝখানে মাখলূকের সাথে তাঁর সাদৃশ্য সম্পূর্ণরূপে নাকচ করা হয়েছে। সুতরাং কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত শব্দে আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করার পাশাপাশি সেসব সিফাতের অর্থ ও মর্মের ক্ষেত্রে মাখলূকের সাদৃশ্য হতে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করাও জরুরি। এ দুয়ের মাঝে কোনো বৈপরীত্য নেই।
তাই তো প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম আবু জাফর তহাবী রাহ. (ওফাত : ৩২১ হি.) এব্যাপারে সতর্ক করে বলেন-
ومن لم يتوقَّ النفيَ والتشبيهَ زلَّ ولم يُصِب التنزيهَ، فإن ربَّنا جل وعلا موصوفٌ بصفات الوحدانية، منعوتٌ بنُعوت الفردانية، ليس في معناه أحدٌ من البرية .
যারা সিফাতের ক্ষেত্রে যুগপৎভাবে অস্বীকৃতি এবং সাদৃশ্যায়ন থেকে পরহেয করে না, তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয় এবং যথার্থভাবে রবের পবিত্রতা বর্ণনায় এবং পবিত্রতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়। কেননা আমাদের মহামহিম রব অনন্য সব গুণে গুণান্বিত এবং অনুপম সব বিশেষণে বিশেষিত। সৃষ্টিজগতের কেউই তাঁর সমার্থক নয়। -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৬৩, হিন্দুস্তানী নুসখা
ইমাম তহাবী রাহ. তাঁর বর্ণিত উপরোক্ত নীতিটি যথাযথ প্রয়োগও করেছেন।
যেমন তিনি আল্লাহ তাআলার কালাম গুণ সম্পর্কে বলেন-
وإن القرآن كلامُ الله، منه بدا بلا كيفية قولاً، وأنزله على رسوله وَحيًا.
নিশ্চয়ই কুরআন হল আল্লাহর কালাম; যা সবধরনের কাইফিয়্যাত ও ধরন-ধারণমুক্ত বাণী হিসেবে তাঁর থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং ওহী মারফত তিনি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিল করেছেন। -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৫৪-৫৫, হিন্দুস্তানী নুসখা
গযব ও ক্রোধ এবং রিযা ও সন্তুষ্টি- এই দুই গুণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন-
والله يغضب ويرضى لا كأحد من الورى.
তিনি ক্রোধান্বিত হন এবং সন্তুষ্ট হন, কিন্তু সেই ক্রোধ ও সন্তুষ্টি কোনো মাখলূকের মতো নয়। -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ১৩৫-১৩৬ হিন্দুস্তানী নুসখা
এমনিভাবে জান্নাতে মুমিন বান্দাগণ আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভে ধন্য হবে- এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন-
والرؤية حق لأهل الجنة بغير إحاطة ولا كيفية.
জান্নাতবাসীরা আল্লাহর দর্শন লাভ করবে- একথা সত্য, কিন্তু সেই দর্শন হবে দৃষ্টিসীমা দ্বারা পরিবেষ্টন করা ছাড়া এবং কোনো কাইফিয়্যাত ও ধরন-ধারণ ছাড়া। -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৫৮-৫৯, হিন্দুস্তানী নুসখা
এতক্ষণের আলোচনার সারসংক্ষেপ হল, আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বের এবং তাঁর গুণাবলির অনন্যতা সম্পর্কে আকীদা রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরি। তবে সেই আকীদা সাধারণত এজমালীভাবে থাকাই যথেষ্ঠ, যতক্ষণ না কোনো ব্যক্তির মনে কোনো বিষয়ে এর বিপরীত কোনো ধারণা ও কথার জন্ম হয়। তখন সেই ব্যক্তির উপর আকীদা বিশুদ্ধ করার জন্য ঐ বিষয়ে আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা ও অনন্যতার তফসীলী আকীদা জানা ও আকীদা রাখা জরুরি হয়ে যায়। এমনিভাবে যখন কোনো ব্যক্তির কাছে আল্লাহ তাআলার যাত বা সিফাত সম্বন্ধে বিদআতী ও বাতিলপন্থীদের কোনো ভ্রান্ত ধারণা ও কথাবার্তা পৌঁছে, তখন ঈমানের হেফাজতের জন্য তফসীলীভাবে তাঁর যাত ও সিফাতের অনন্যতার আকীদা সম্পর্কে জানা জরুরি হয়ে পড়ে।
মহান আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব আমাদের দৃষ্টিগোচর ও দৃষ্টির অগোচর যত অস্তিÍত্ব আছে সব অস্তিত্বের অতীত। তাঁর অস্তিত্ব অন্য কোনো অস্তিত্বের মতো নয়। তাঁর অস্তিত্ব সর্বোতভাবে অনন্য। তাই তাঁর অস্তিত্বের অনন্যতা সম্পর্কে আকীদা রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরি। আমরা এখন তাঁর সত্তাগত অনন্যতার আলোচনার শুরতেই এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি সম্পর্কে জানব।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম আবু জাফর তহাবী রাহ. (ওফাত : ৩২১ হি.) তাঁর বিখ্যাত আকীদা গ্রন্থে মহান আল্লাহ তাআলার পবিত্র সত্তার অনন্যতা সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সমৃদ্ধ ভাষায় সর্বব্যাপী মূলনীতি উল্লেখ করেছেন-
لا تَبْلُغُه الأَوهامُ ولا تُدْرِكُه الأفهامُ، ولا يُشبِهُ الأنامَ.
কারও কল্পনা তাঁর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, মানুষের সমঝ-বুঝ তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না এবং তিনি জগতের অন্য কোনো কিছুর মতো নন -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৩৫-৩৬, হিন্দুস্তানী নুসখা
লক্ষ করুন, ইমাম তহাবী রাহ. উপরোক্ত মূলনীতিটিতে মাখলূকের সাথে আল্লাহ তাআলার সাদৃশ্য কত ব্যাপকভাবে ও সূক্ষ্মভাবে নাকচ করেছেন! যার সারমর্ম হল, আমরা দুচোখ দিয়ে যা কিছু দেখি, কান দিয়ে যা কিছু শুনি, নাক দিয়ে যত ঘ্রাণ অনুভব করি, জিহ্বা দিয়ে যত স্বাদ অনুভব করি, ত্বক দিয়ে যা কিছু উপলব্ধি করি, অন্তর দিয়ে যা কিছু কল্পনা করি, তিনি সেরকম কিছু নন; তিনি এসবের ঊর্ধ্বে।
অথচ কল্পনার পরিধি পঞ্চেন্দ্রিয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপক। কারণ যেসব বস্তু ও বিষয়কে বাস্তবে পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না, কল্পনাশক্তি দিয়ে সেসব অনুমান করা যায়। এই কল্পনা শক্তি দিয়ে মানুষ কত অবাস্তব বিষয়ের ছবি আঁকে, অনুমান করে এবং পরিকল্পনা করে। কিন্তু মহামহিম আল্লাহর সত্তার হাকীকত এতটাই অনন্য যে, কল্পনা দিয়ে তাঁকে অনুমান করা যায় না। করা সম্ভবও নয়। কেননা তিনি তো অন্য কিছুর মতো নন, যে তার সাথে তুলনা করে তাঁকে অনুমান করা যাবে। তিনি তো দেহধারী কোনো সত্তা নন, যে তাঁর কোনো রূপ বা আকৃতি অনুমান করা যাবে; বরং তিনি হলেন নিরাকার-নিরাধার অনুপম সত্তা।
আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য যে জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন তা কেমন- সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ، وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ.
যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শোনেনি এবং যা কোনো মানুষের অন্তর কখনো কল্পনাও করেনি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮২৪
একটু ভাবুন, গায়েবের জগতের জান্নাত, যা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি, তা যখন এত বেমিছাল, তখন মহান আল্লাহ তাআলা, যিনি সব গায়েবের চেয়ে বেশি গায়েব, তিনি কত বেমেছাল, তিনি মানুষের কল্পনার কত ঊর্ধ্বে।
মনে রাখতে হবে, উপরোক্ত মূলনীতিটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর সর্বজন স্বীকৃত মূলনীতি। আল্লাহ তাআলার সত্তাগত যেকোনো সিফাতের মর্ম বোঝার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা জরুরি। তাঁর যেকোনো সিফাতের এমন ব্যাখ্যা পরিহার করা জরুরি, যা মানুষের কল্পনাযোগ্য এবং কোনো মাখলূকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এরপর দেখুন, ইমাম তহাবী রাহ. আল্লাহ তাআলার ওপর মানবীয় গুণ আরোপের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন-
ومن وَصَفَ الله بمعنى من معاني البشر فقد كفر، فمن أبصر هذا اعتبر، وعن مثل قول الكفار انزجر، وعلم أنه بصفاته ليس كالبشر.
যারা আল্লাহ তাআলাকে মানবীয় কোনো বৈশিষ্ট্যে বিশেষিত করে তারা মূলত কুফরে লিপ্ত হয়। সুতরাং যারা এবিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হয় তারা সঠিক শিক্ষা লাভ করে, তারা কাফেরদের মতো কথা বলা থেকে বিরত থাকে এবং তারা বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর গুণাবলির ক্ষেত্রে মানুষের মতো নন। -আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৫৭-৫৮, হিন্দুস্তানী নুসখা
আল্লাহ তাআলার সত্তাগত অনন্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তিনি দেহ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকার-আকৃতি থেকে চিরপবিত্র। কেননা দেহ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং আকার-আকৃতি থাকা মাখলূকের বৈশিষ্ট্য এবং তার মুখাপেক্ষিতা, সীমাবদ্ধতা ও নশ্বরতার প্রকাশ। বরং এসব হল সাদৃশ্যের প্রকাশ্য দিক এবং কল্পনার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। তাই কুরআন ও হাদীসের এবং অকাট্য যুক্তি-বুদ্ধির যেসব দলীল-প্রমাণ দ্বারা তাঁর সাদৃশ্যহীনতা, অমুখাপেক্ষিতা, অকল্পনীয়তা, অসীমতা ও চিরন্তনতা প্রমাণিত, সেসব দলীল-প্রমাণ দ্বারা একথাও প্রমাণিত যে, তিনি দেহ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকার-আকৃতি থেকে চিরপবিত্র।
আমরা জানি, জগতে যত মাখলূক ও সৃষ্টি রয়েছে তার অন্যতম প্রকার হচ্ছে পদার্থ বা বস্তু এবং এই পদার্থের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দেহধারী হওয়া। দেহ বলা হয় অংশবিশিষ্ট বা অঙ্গবিশিষ্ট এমন যেকোনো বস্তুকে, যা কোনো স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যার বিস্তৃতি রয়েছে অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা রয়েছে। জগতে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ রয়েছে; কঠিন, তরল, বায়বীয় ইত্যাদি। কিছু পদার্থ রয়েছে, যা স্থূলদেহী, যেমন মানুষসহ সকল দৃশ্যমান প্রাণী, উদ্ভিদ ও অন্যান্য জড়পদার্থ। আর কিছু আছে সূক্ষ্মদেহী, যেমন আলো, বাতাস, রূহ ও আত্মা এবং আগুনের তৈরি জিন ও নূরের তৈরি ফিরিশতা ইত্যাদি।
তো দেহধারী হওয়া যেহেতু একশ্রেণির মাখলূকের বৈশিষ্ট্য, তাই আল্লাহ তাআলকে যদি দেহধারী বলা হয় তবে তা হবে আল্লাহকে মাখলূকের সমশ্রেণি বিশ্বাস করার নামান্তর। এমনিভাবে আল্লাহকে যদি সাকার বলা হয় তবে তা হবে আল্লাহ তাআলার অসংখ্য সদৃশ ও সমশ্রেণি সাব্যস্তের নামান্তর, যা ওহীর শিক্ষা ও সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাছাড়া দেহত্ব হল সীমাবদ্ধতা এবং নশ্বরত্বের প্রমাণ। সুতরাং আল্লাহ তাআলা দেহধারী হওয়া কিংবা সাকার হওয়া অসম্ভব। তাই তিনি দেহধারী নন; স্থূলদেহীও নন, সূক্ষ্মদেহীও নন, তিনি এসবের ঊর্ধ্বে।
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা যেহেতু দেহধারী নন তাই দেহগত যত বৈশিষ্ট্য আছে, তা থেকে তিনি চিরপবিত্র। আমরা জানি, দেহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অংশবিশিষ্ট হওয়া, বিভাজ্য হওয়া, স্থানের গণ্ডিতে আবদ্ধ হওয়া এবং আকার-আকৃতিবিশিষ্ট হওয়া। সুতরাং আল্লাহ তাআলা অংশ বা অঙ্গবিশিষ্ট নন, স্থানের গণ্ডিতে আবদ্ধ নন এবং আকার-আকৃতিবিশিষ্টও নন; বরং তিনি নিরাকার- নিরাধার বেমেছাল সত্তা।
বস্তুত দ্বীনুল ইসলাম হল শিরকমুক্ত খালেস তাওহীদের ধর্ম। এতে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্যে সৃষ্টিকে শরীক করার যেমন অবকাশ নেই, তেমনি সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যে স্রষ্টাকে শরীক করারও কোনো অবকাশ নেই। সর্বোপরি ইসলামে মূর্তিপূজা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। তাই বাস্তবে ইলাহ ও ঈশ্বরের মূর্তি বানানো যেমন হারাম, তেমনি অন্তরে তাঁর মূর্তি কল্পনা করাও হারাম। কেউ মাটি বা পাথর দিয়ে মূর্তি বানিয়ে পূজা করলে তা যেমন শিরক, তেমনি মনের মধ্যে ভাবমূর্তি তৈরি করে তার পূজা করাও শিরক। আর তাই ইসলামে স্রষ্টাকে সাকার ও মূর্তিরূপে কল্পনা করার কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং কেউ যখন স্রষ্টাকে মাখলূকের মতো সাকার ও দেহধারী মনে করেন, মানুষের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী মনে করেন তখন সে মূলত স্রষ্টাকে মূর্তিরূপেই কল্পনা করেন। এখন সে যত ক্ষুদ্র মূর্তিই কল্পনা করুক, যেমন সরিষাদানার মতো আর যত বৃহৎ মূর্তিই কল্পনা করুক, যেমন পাহাড়ের সমান বা আসমানের সমান; মূর্তিকে সে যমীনে স্থাপন করুক বা সপ্ত আসমানের ওপরে স্থাপন করুক- সর্বাবস্থায় তা মূর্তিপূজারূপেই বিবেচিত হবে। এ বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ইমাম গাযালী রাহ.। তিনি বলেছেন-
فإِنَّ مَنْ خَطَر ببَالِه أنَّ اللهَ جِسمٌ مُرَكَّبٌ من أَعضاءٍ، فهو عابدُ صَنَمٍ، وأنَّ كلَّ جِسمٍ مخلوقٌ، وعبادةُ الصنمِ كفرٌ، لأنَّه مخلوقٌ، وكان مخلوقاً، لأنه جسمٌ، فمن عَبَدَ جسماً فهو كافرٌ بإجماعِ الأئمةِ؛ السلفِ منهم والخلفِ.
سواءٌ كان ذلك الجسمُ كَثِيفاً كالجِبالِ الصُمِّ الصلابِ، أو لَطِيفاً كالهَواءِ والمَاءِ، وسواءٌ كان مُظْلَماً كالأرضِ،
أو مُشْرِقاً كالشمسِ والقمرِ والكواكبِ، أو مُشِفًّا لا لونَ له كالهواءِ، أو عظيماً كالعرشِ والكرسيِ والسماءِ،
أو صَغِيراً كالذَّرَّةِ والهَباءِ، أو جَمَاداً كالحِجارةِ، أو حَيْواناً كالإنسانِ، فالجِسْمُ صَنَمٌ، فَبِأَن يُقدَّرَ حُسْنُه وجَمالُه،
أو عِظَمُه أو صِغَرُه، أو صَلابتُه ونَقَاؤُه...، لا يَخْرُجُ عن كونِه صنماً.
যার অন্তরে এই ধারণা হয় যে, ‘আল্লাহ হলেন বিভিন্ন অঙ্গযুক্ত দেহধারী সত্তা’ সে মূলত মূর্তিপূজারী। কেননা প্রত্যেক দেহধারীই হল মাখলূক এবং যেকোনো মূর্তির ইবাদত কুফর হওয়ার কারণ এটাই যে, মূর্তি হল মাখলূক। আর যেকোনো মূর্তিই মাখলূক হওয়ার প্রমাণ এটাই যে, সে দেহধারী। তাই যে ব্যক্তি দেহধারী বস্তুর ইবাদত করে সে সকল ইমামদের মতে কাফের; অর্থাৎ সালাফ ও খালাফ সকল ইমামদের মতেই সে কাফের।
এখন সেই ধারণাকৃত দেহধারী মাবূদ শক্ত কঠিন পাহাড়সম স্থূলদেহী হোক কিংবা বায়ু বা বাতাসের মতো নরম ও সূক্ষ্মদেহী হোক। ভূমি ও মাটির মতো অন্ধকার বস্তু হোক কিংবা চাঁদ-সুরুজ-তারকার মতো আলোকিত বস্তু হোক কিংবা বাতাসের মতো বর্ণহীন স্বচ্ছ পাতলা বস্তু হোক। আসমান-আরশ-কুরসীর মতো বৃহৎ বস্তু হোক কিংবা যাররা ও অণু-পরমাণুর মতো ক্ষুদ্র বস্তু হোক। পাথরের মতো নিষ্প্রাণ জড়পদার্থ হোক কিংবা মানুষের মতো কোনো প্রাণী হোক। মোটকথা, প্রত্যেক দেহধারী বস্তুকেই ‘সনাম’ বা মূর্তি বলা হয়; এখন সেই দেহধারী বস্তুর সৌন্দর্য যা-ই হোক, তার কলেবর যত ছোট বা বড় হোক এবং তা যত স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ হোক সর্ব অবস্থায় তা মূর্তি বা মূর্ত বস্তু। -ইলজামুল আওয়াম আন ইলমিল কালাম, ইমাম গাযালী, পৃ. ৫২, (দারুল মিনহাজ)
এটা শুধু ইমাম গাযালীর বক্তব্য নয়, বরং এর আগে ও পরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আরও অনেক আলেম এমন কথা বলেছেন। কোনো কোনো সালাফ সংক্ষেপে বলতেন-
المُمَثِّل يَعْبُدُ صَنَماً.
(দেহবাদী মূলত মূর্তিপূজা করে।)
আর তাই সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর ইমামদের মুজমা আলাইহি ও মুতাওয়ারাছ আকীদা হল, আল্লাহ তাআলা মাখলূকের মতো সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং সীমা ও পরিসীমা থেকে চিরপবিত্র।
পরিশেষে জানতে চাই,দেহবাদী, আকার আকৃতি, সীমাবদ্ধ তা আকিদাপন্থী মুর্তিপুজারী নাস্তিক কি এই যামানায় নেই?