18/12/2024
এই পরিস্থিতিতে আইসা আমার আপনার সামনে দুইটা পথ খোলা আছে।
রাগ করে, অভিমান করে ঘরে ফেরত যাওয়া।
রাগ করে, অভিমান করে, আরও বেশি এক হওয়া।
সময়টা খুব অসহায় ফিলিংস এর, আমি জানি। বিশেষ করে আমরা যারা কোন দলের ব্যানারে আন্দোলনে যাইনি, আমরা এখন একা।
বুড়ো, অথর্ব সরকার আমাদের বাঁচাতে পারছে না। আওয়ামীলীগ আমাদের পাড়ায় মহল্লায় খুঁজে খুঁজে বেড়াইতেছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো বের করে দিয়েছে লকলকে জিহ্বা, বলতেছে, গদি দাও। গদি দাও। আমাদের গদি দিলেই কেবল সমাধান।
এই সেইমভাবেই ৯০ এর অভ্যুথান হাইজ্যাক করা হয়েছিল। ২০০৯ এ হাসিনাকে বানানো হয়েছিলো মেসিয়াহ। হাসিনা তারপর কী করেছে, আমরা জানি।
দেশটাকে বাপের তালুক বানিয়ে আমাদের বানিয়েছে প্রজা।
যদি আবারও ঘরে ঢুকে যান রাগ করে, আবারও আপনাকে সেই প্রজাই হতে হবে।
মনে রাখতে হবে, দেশটা আমার আপনার। দেশটার মালিক আমি, আপনি। এইখানে রাগ থাকবে, অভিমান থাকবে, না পাওয়া থাকবে। বাট তাই বলে আমরা যেন সব ছেড়ে না দিই।
আমাদের স্লোগান মনে আছে? ইনকিলাব জিন্দাবাদ। লং লিভ দ্য রেভুল্যুশন। বিপ্লব সফল বা ব্যর্থ হয় না কখনো। বিপ্লবকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। যে বিপ্লব যতদিন বেঁচে থাকে, সেই বিপ্লব তত বেশি সফল হয়।
আজ প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে, আমরা খুব সম্ভবত ক্লান্ত। ভীত। ক্ষুব্ধ।
এই ক্লান্তিটা অগ্রাহ্য করবেন না। তবে বেশি প্রশ্রয়ও দিয়েন না।
আমাদের মায়েরা মাঝেমধ্যেই অভিমান করে বলে, আমি বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু তারা কি যায়? যায় না। যায় না বলেই আমরা বেঁচে থাকি। সংসারে কমতি থাকে, ঝগড়া থাকে। বাট সংসারটা তো টিকে থাকে।
আমাদের বিপ্লবটাও অমন।
অভিমান আছে, ঝগড়া আছে, থাকুক। দোষ যার, তারে গালি দেন। সমালোচনা করেন। বাট এক মুহুর্তের জন্যও ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তা কইরেন না। ঘরে ফেরা যাবে না। ৯০ এর প্রজন্ম যেই ভুল করেছে, সেই ভুল যেন আমরা না করি।
৩ আগস্ট রাত ১২ টা। ফেসবুকে লিখেছি, ডাইনিটার শেষ চলে এসেছে। অথচ মনের মধ্যে ঝড়। আন্দোলন ব্যর্থ হলে তখন কী করবো? কত বছরের জেল হবে? আন্দোলন কি থেমে যাবে?
ঠিক এমন সময়, দেখি সাদা এক ওয়ালে একটা বাচ্চা ছেলে লিখছে, হাসিনা তোর অনেক গুণ পুলিশ দিয়ে করলি খুন।
আমার সব ভয়, সব আতঙ্ক দূর হয়ে গেল। মনে হলো, এই তো আন্দোলন চলতেছে। মানুষ ঘুমায়নি। জেগে আছে।
এই জেগে থাকাটা এখনও থাকতে হবে।
আমাদের উপর সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে, আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, একেকদিন একেক গ্রুপ নামানো হচ্ছে, ভয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, সামনে কীভাবে আগাবো?
বাট পেছনে তাকালেও কি অসম্ভব লাগে না?
পৃথিবীর নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার তখন প্রশাসন আর ভারতকে নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো, সেইটা ওভারকাম করা কি খুব সম্ভব ছিলো?
এখনও মনে হলে কি রূপকথা মনে হয় না?
কে জানে, এই অস্থির সময়ের সামনেও হয়তো আল্লাহ তাআলা অমন কোন রূপকথাই লিখে রেখেছেন?
গত ১৫ বছর আমরা রাজনৈতিক "ঝামেলা" থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি। এক পাল জানোয়ারকে দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিয়েছি। বাট আমরা কি বাঁচতে পেরেছি?
পারিনি।
প্রথমে ক্যান্টনমেন্টে অফিসার মেরেছে। রাজপথে আমার ভাই বিশ্বজিতকে মেরেছে। হলে আমার ভাই আবরার ফাহাদকে মেরেছে। ঘরে ঢুকে সাগর আর রুনিকে হত্যা করেছে।
আপনি যত শান্তিতে থাকতে চাইবেন, রাজনীতি আপনার উপর তত অশান্তি চাপাবে।
আর আপনি যখন বাঘের মতো ঘুরে দাঁড়াবেন, জানোয়ারের দল লেজ গুটাইয়া পালাইয়া যাইতে বাধ্য হবে।
সো, ঘরে ফিরে যাওয়ার আর কোন পথ নাই।
হাসিনাকে তাড়ানোর আন্দোলনে যেমন করে ছিলাম, হাসিনার বানানো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বদলানোর আন্দোলনেও যদি তেমন করে থাকি, ওউন করি, আমাদের ভবিষ্যত সুন্দর হতে বাধ্য।
সরকারের একটা পক্ষ চেয়েছিলো পিলখানা ম্যাসাকারের বিচার না করতে। আমাদের প্রতিবাদে করতে বাধ্য হলো।
অথচ রাগ করে ঘরে চলে গেলে কি এইটা আর হতো?
হতো না। এটাই একমাত্র পথ।
আমাদের ভাইয়েরা মরলে আমরা ভয় পেয়ে যদি ঘরে ঢুকে যাই, তাহলে দিনশেষে তো ওরাই জিতলো। বরং যতবেশি শক্তি নিয়ে ঘুরে দাড়াবো, যতবার পাল্টা হুঙ্কার দিতে পারবো,দেশটা ততবার আমার হবে, আপনার হবে।
বহুদিন পর এই দেশের পুরো প্রজন্ম সরকারের, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটা কাজ, প্রতিটা কথাকে প্রশ্ন করতে শিখেছে। চ্যালেঞ্জ করতে শিখেছে।
এইখান থেকে আর ফিরে আসার সুযোগ নাই।
বরং আরো বেশি করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, হাসিনাকেই তো আমরা গুনি নাই, আর কাউকে গুনার টাইম আছে? অভিমান করে দূরে সরে গেলে আবু সাঈদ, ওয়াসিম বা মুগ্ধরা আমাদের ক্ষমা করবে কোনদিন?
বরং যতবার আমাদের উপর আঘাত আসবে, সে সরকার, রাজনৈতিক দল বা প্রতিবেশি দেশ, যেই হোক না কেন, যতবার এই দেশ কেউ বাপের মনে করবে, ততবার আমাদের একসাথে বলতে পারতে হবে, লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না।
৯০ কে আমরা আমাদের হাত থেকে হাইজ্যাক হতে দিয়েছি, ২৪ এর মালিকানা যেন আমরা কোন রাগ বা হতাশা থেকে কারো হাতে তুলে না দিই।
যতই বাঁধা আসুক, আমাদের প্রাণের ইনকিলাবকে যেন আমরা এক মুহূর্তের জন্যও ডিজওউন না করি।
এক মুহুর্তের জন্যও পেছানোর সুযোগ নাই। হাসিনা নাই। বাট হাসিনা হওয়ার অপেক্ষাতে অনেকেই আছে। এই মুহুর্তে পিছাইয়া যাওয়া মানেই, দেশের মালিকানা আবারও কারো হাতে তুলে দেওয়া।
তাই হতাশা যতই আসুক, রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাইয়েন না। বরং আমাদের কথা হবে একটাই, জানি শুধু লড়তে হবে,এ লড়াইয়ে জিততে হবে....।
হাজারো শহীদ রক্ত দিয়ে যে বিপ্লব আমার আপনার হাতে এনে ফেলেছে, এই বিপ্লবকে সামনে এগিয়ে নেওয়াই আমার আপনার একমাত্র কর্তব্য।
কোন হতাশা, ভয় বা অভিমান যেন আমাদের এই কর্তব্য থেকে দূরে সরাইয়া দিতে না পারে।
ভাল লাগল তাই কথা গোলো সবার সাথে শেয়ার করলাম।
Copy post