27/12/2021
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে খেলাফত মজলিসের সংলাপ অনুষ্ঠিত।
___________-___________
ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১:
খেলাফত মজলিস কর্তৃক ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ ৫ দফা প্রস্তাব পেশ! নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদের সাথে বঙ্গভবনে বৈঠক করেছে খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ। আজ ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গভবনে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল। বৈঠকে মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির নিকট নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও সদস্যবৃন্দ নিয়োগ, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষকরণ, নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা ও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে ৫ দফা প্রস্তাব পেশ করেন।
এ সময় একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবসমুহ তুলে ধরা হয়:
১. আইন প্রণয়ন ঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের দাবী অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এখনও এ আইনটি করতে না পারাটা দুঃখজনক। তাই আমরা মনেকরি বাছাই কমিটি গঠন ইত্যাদি অন্তর্বর্তীকালীন পদ্ধতি পরিববর্তন করে কমিশন গঠনের জন্য আইন তৈরী অতীব জরুরী। আইনটি এমন হতে হবে যাতে একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন, দক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হয় এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিতর্কের অবসান ঘটে।
২. নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও সদস্যবৃন্দ নিয়োগ
ক. প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন একজন সৎ, মেধাবী, দক্ষ, সাহসী, দলনিরপেক্ষ এবং প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি আপিল বিভাগের একজন প্রাক্তন বিচারপতি অথবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব হতে পারেন। তিনি বিচার বিভাগ বা সরকারী পদ হতে অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নহেন বা ছিলেন না এমন হতে হবে।
খ. নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ নিয়োগঃ একজন আলেম ও একজন নারীসহ সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, দক্ষ, প্রাজ্ঞ ও সাহসী, দলনিরপেক্ষ ও অবিতর্কিত চারজন কমিশনার নিযুক্ত হবেন।
৩. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষকরণ
ক. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচনের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রনালয়-সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিশেষতঃ মাঠ পর্যায়ের বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন যারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের পুরোপুরি অধীনে থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন বোধে বদলীসহ প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন- এমন বিধান থাকতে হবে।
খ. নির্বাচনকালীন সময়ে কোন নির্বাচনী এলাকা বা সমগ্র এলাকায় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন বোধ হলে এবং নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের চাহিদা পেশ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে ও যথাযথভাবে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন করবেন।
গ. সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় বাজেট পূরণ, পর্যাপ্ত নিজস্ব জনশক্তি নিয়োগ ও দক্ষতা সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪. নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা
ক, নির্বাচনকে অর্থ ও পেশী শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন প্রণয়ন ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
খ. ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করা ও যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনীকে সংশ্লিষ্ট করতে হবে।
গ. সকল প্রার্থীর ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রচারণা ছাড়া অন্যান্য আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব ও ব্যয় নির্বাচন কমিশন বহন করবে, এমন ব্যবস্থা করা। নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন গুরুতর অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল এমনকি নির্বাচিত হলেও তার পদ বাতিল ঘোষণা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫. নির্বাচনকালীন সরকার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংষ্কৃতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অবিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব। বিগত বহু বছরের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে তাই বলে। শুধু তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনই সর্বাধিক নিরপেক্ষ হয়েছে বলে সর্বজন স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর আগে বা পরে আর কোন নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও অবাধ বলে স্বীকৃত হয়নি। তাই বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় নির্বাচনকালীন একটি সরকার গঠন করা আবশ্যক। এর জন্য নি¤েœাক্ত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে:
ক. বিদায়ী সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। প্রয়োজনে সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে।
খ. সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। যা নিছক “তত্ত¡াবধায়ক” হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে অর্থাৎ শুধু সরকারের দৈনন্দিন কার্য সম্পাদন করবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।
গ. এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আলাপ আলোচনা এখনই শুরু করা যেতে পারে।
সংগৃহীত।