13/09/2023
২৮ সফর, ১৪৪৫ হিজরি;
ইমামুত্ব ত্বরিকত, সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ, ইমামে রাব্বানী, কাইয়্যুমে জামানী, গাউছে ছামদানী, শেখ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:)এঁর ৪১১তম মহাপবিত্র ফাতেহা শরীফ।
হযরত রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিস মোবারকে উনাকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ উল্লেখ করে নিজ নামের সাথে মিল রেখে তাঁর নাম আহমদ হবে বলে উল্লেখ করেছেন। উনার পিতার নাম হযরত শেখ মাখদুম আব্দুল আহাদ (রহ:)। তিনি ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)-এঁর ২৮তম অধস্তন পুরুষ।
তাঁর কুনিয়াত- আবুল বারাকাত, লকব-বদরুদ্দিন এবং তিনি প্রথম কাইয়্যুম রূপে পরিচিত।
নাম মুবারক: শেখ আহমদ ফারুকী।
উনার পূর্ণ নাম হয়: ইমামে রাব্বানী কাইয়্যুমে জামানী, মাহবুবে সোবাহানী শেখ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:)।
তিনি বাবার দিক থেকে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমেনীন ওমর ফারুক (রাদি.) ও মায়ের দিক থেকে হযরত ইমাম হোসাইন (রাদি.) এঁর বংশীয়। উনাকে দেখতে ও উনার তাওয়াফের খেদমতে খানায়ে কাবা সেরহিন্দ শরীফে তাশরীফ নিয়ে এসেছিলো। উনি চার তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত তবে সকল তরিকার সংস্কারকৃত রাসুল পাকের (দরূদ) নির্দেশ মোতাবেক নিজ নামে তরিকায়ে নকশেবন্দিয়া মুজাদ্দেদীয়া প্রতিষ্ঠা করেন।
উনার প্রথম পীর ও মুর্শিদ: উনার পিতা হযরত মাখদুম আবদুল আহাদ (রহ.) এবং পরে তিনি নকশেবন্দিয়া তরিকার মহান ওলি, বুজুর্গে মারেফাত, যিনি আপন পীরের নির্দেশে শেখ আহমদ ফারুকীকে বায়াত করানোর জন্য দিল্লি আগমন করেন, নকশেবন্দিয়া তরিকার অমুল্য রত্ন হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ (রহ.) এঁর হাতে বায়াত হন।
জন্মঃ ৯৭১ হিজরির ১৪ শাওয়াল, জুমাআর রাতে সোবহে সাদিকের সময়। ২৬ জুন ১৫৬৪ (মুঘল আমলে)
ওফাতঃ ১০৩৪ হিজরির২৮ মতান্তরে ২৭ সফর।
মাজার মোবারক: সেরহিন্দ শরীফ, পাঞ্জাব, ভারত।
ইমাম আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী (রহ:) হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন উঁচু স্তরের সূফী সাধক। তিনি ফিকহের হানাফী ধারা ও নকশেবন্দিয়া সূফি তরিকার অনুসারী এবং নক্সবন্দীয়া- মুজাদ্দিদীয়া ত্বরিকার প্রবর্তক ও ইমাম। তিনি একাদশ হিজরির মহান সংস্কারক তথা মুজাদ্দিদ রূপে আবির্ভুত হয়ে বাদশা আকবরের প্রবর্তিত সর্ব ধর্মের মিশ্রিত দ্বীনে ইলাহীর বিরুদ্ধে জিহাদ করে দ্বীন ইসলামকে পুনঃজীবিত করেন।
হযরত গাউছুল আজম শেখ সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) পাঁচ’শ বছর পূর্বে মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.)'র আগমন সংবাদ অবগত হয়ে নিজ খেরকা মোবারক খাস কামালতে পরিপূর্ণ করে সাহেবজাদা হযরত তাজুদ্দিন আব্দুর রাজ্জাক (রহ.)-কে প্রদান করে অসিয়ত করেন যে, মুজাদ্দেদ আলফে সানী শেখ আহমদের আবির্ভাব ঘটলে যেন এই খেরকা তার নিকট হাওলা করে দেওয়া হয়। উক্ত খেরকা আমানত স্বরূপ ক্রমাগতভাবে খলিফাগণের মাধ্যমে সর্বশেষ হযরত শাহ্ সেকেন্দার কায়থলী (রহ.)'র নিকট এসে পৌঁছে। তিনি ছিলেন বংশের শেষ খলিফা এবং মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.)-এর সমসাময়িক। তিনি একদিন স্বপ্নে দেখলেন, তার দাদা কাদেরিয়া তরিকার বিখ্যাত বুযুর্গ হযরত শাহ কামাল কায়থলী (রহ.) তাকে বলছেন, গাউসে আজম (রহ.)-এর অসিয়ত অনুযায়ী হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.)-কে খেরকা শরীফ হাওলা করে দাও। হযরত শাহ সেকেন্দার (রহ.) ভাবলেন ঘরের নিয়ামত ঘরেই থাক। তাই তিনি খেরকা শরীফ প্রদানের ব্যাপারে উৎসাহ বোধ করলেন না। কিছুদিন পরে পুনরায় হযরত শাহ কামাল কায়থলী (রহ.) স্বপ্নে তাহাকে খেরকা প্রদানের জন্য তাগিদ দিলেন। কিন্তু তবুও তিনি তা দিলেন না। বিলম্ব দেখে হযরত শাহ কামাল কায়থলী (রহ.) পূনবার স্বপ্নে রাগতঃস্বরে বললেন, যদি তুমি পরকালের নিরাপত্তা কামনা কর এবং তরিকার নেসবত অটুট রাখতে চাও, তবে খেরকা শরীফ আজই হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.)-এর নিকট পেশ কর। নতুবা নেসবত ও কামালত সব সলব করে লওয়া হবে। স্বপ্ন দেখে হযরত শাহ সেকেন্দার (রহ.) ভীত হয়ে পড়লেন, অতি প্রত্যুষে তিনি খেরকা শরীফ নিয়ে হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.)-এর বাসগৃহ অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) ফজরের নামাজের পর মোরাকাবায় ছিলেন। মোরাকাবা হতে ফারেগ হবার পর, শাহ্ সাহেব তার সাক্ষাৎ করে সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং খেরকা শরীফ তার হাওলা করে দিলেন। হযরত নির্জন কক্ষে গমন করে খেরকা শরীফ পরম শ্রদ্ধাভরে পরিধান করলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, তাকে কেন্দ্র করে বিষ্ময়কর ঘটনার প্রকাশ হতে লাগল। খেরকা শরীফ পরিধান করার সঙ্গে-সঙ্গে কাদেরিয়া তরিকার নেসবত প্রবল হল। কাদেরিয়া নূর তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। নকশবন্দিয়া নেসবত কিছুক্ষণ স্থির হয়ে গেল। পুনরায় নকশবন্দিয়া নেসবত প্রবল হল এবং কাদেরিয়া নেসবতকে ঢেকে ফেলল। পর্যায়ক্রমে কয়েকবার এইরূপ ঘটল।
ইতোমধ্যে হযরত গাউছে পাক (রহ.) তাশরীফ আনলেন। তাশরীফ আনলেন সৈয়্যেদেনা আমিরুল মুমেনীন হযরত আলী (কাররামুল্লাহু ওয়াজহাহু) এবং কাদেরিয়া তরিকার অন্যান্য বিশিষ্ট বুযুর্গগণ। কিছুক্ষণ পর আসলেন গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ও তার সিলসিলার অন্যান্য বুযুর্গবৃন্দ। অতঃপর হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.) ও সৈয়্যেদেনা আমিরুল মুমেনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)সহ সিলসিলার সমস্ত বুযুর্গগণ হাজির হলেন। ক্রমে-ক্রমে কিবরিয়া, আলিয়া, সোহ্রাওয়ার্দিয়া বুযুর্গগণও আসিয়া উপস্থিত হলেন। এইবার আলোচনা শুরু হল, প্রথমে উভয় হযরতের মধ্যে ইশারা বিনিময় হল। হযরত গাউছে আজম (রহ.) বললেন, হযরত মুজাদ্দেদ (রহ.) শৈশবকালে আমার তরিকার বুযুর্গ হযরত শাহ কামাল কায়থলী (রহ.)র জিহবা চুষিয়া তরিকার সমুদয় কামালত হাসিল করিয়াছিলেন। সেই কারণে আমার তরিকার খেদমত করবার জন্য তার উপর আমার দাবী প্রথম। হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.) বললেন, আমার সিলসিলার খলিফা হযরত বাকী বিল্লাহ (রহ.)-এর মাধ্যমে তিনি রসুলেপাক (দরূদ)-এর বিশেষ আমানত পাইয়াছেন, অতঃএব তিনি আমার সিলসিলার খেদমত করবেন। গরীবে নেওয়াজ খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) বলিয়া উঠিলেন, তার পূর্ব পুরুষগণ ছিলেন আমারই সিলসিলাভুক্ত। তিনি আমাদেরই কোলে প্রতিপালিত হইয়াছেন এবং সর্বপ্রথম আমার তরিকার খেলাফত লাভ করেন। তাই সর্বাপেক্ষা আমার দাবী অগ্রগণ্য। কিবরীয়া আলিয়া ও সোহ্রাওয়ার্দিয়া বুযুর্গগণও তাহাদের নিজ নিজ দাবীর স্বপক্ষে দলিল পেশ করলেন। বহুক্ষণ ধরিয়া আলোচনা চলিল, কেহই দাবী ছাড়িতে চান না। এই গুরুত্বপূর্ণ ও মনোহর মাহফিলে অংশগ্রহণ করিবার জন্য, এত অধিক সংখ্যায় অলি-আল্লাহগণের রুহ মোবারক উপস্থিত হলেন যে, সেরহিন্দ শরীফের শহর ও শহরতলীর কোন জায়গায় খালি রইল না। অবশেষে এই জটিল বিষয়ের নিষ্পত্তি করার জন্য স্বয়ং হযরত রাসুলে পাক (দরূদ) তাশরীফ আনলেন। অতঃপর হুযুর বললেন, আপনারা আপনাদের নেসবতের কামালতসমূহ সম্পূর্ণরূপে হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানীকে সোপর্দ করুন। ইনি আপনাদের সকলেরই খলিফা, আপনারা সকলেই তাহার নিকট হইতে সমানভাবে পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।
কিন্তু যেহেতু নবীদের পরে শ্রেষ্ঠমানব হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাদিঃ) হইতে নকশবন্দিয়া তরিকার উৎপত্তি এবং ইহাতে আজিমাতের সহিত সুন্নতের অনুসরণ ও বেদাত বর্জন করা হয়। তাই তাজদীদের সংস্কারের বিশেষ খেদমত সম্পাদনের ক্ষেত্রে এই তরিকাটি সর্বাপেক্ষা যোগ্যতাপূর্ণ। সব সমস্যার সমাধান হইয়া গেল। রসুলুল্লাহ (সাঃ)-এঁর নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যেকই নিজ নিজ তরিকার পরিপূর্ণ কামালত হযরত মুজাদ্দেদ (রহ.)-কে প্রদান করিলেন। ইহার সহিত যুক্ত হইল ‘আলফে সানী’ মুজাদ্দেদের খাস কামালত ও নেসবত এবং রসুলে পাক (দরুদ) কর্তৃক প্রদত্ত খাস কামালতসমূহ। ইহা ছাড়াও মিশ্রিত হইল ‘কাইয়্যূমিয়াত’, ‘ইমামত’ ও ‘খাজি নাতুর’ রহমত প্রভৃতি বিশেষ কামালত। জন্ম নিল এক সমষ্টিভুত তরিকা। সর্বপ্রকার কামালতের আধার নতুন এই সিলসিলার নাম হইল তরিকায়ে নকশেবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) একদিন মুরাকাবার হালতে ছিলেন। সেই সময় উনার উপর ইলহাম হলো:“গাফারতুলাকা ওয়া মান তাওয়াসসালা বিকা বিওয়াসিতাতীন আও বি-গাইরে ওয়াসিতাতীন ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ।” অর্থ: “আপনাকে ক্ষমা করা হলো এবং আপনাকে যারা উছীলা হিসেবে গ্রহণ করবে সরাসরি অথবা মধ্যস্থতার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হলো।” সুবহানাল্লাহ!
শৈশবের কয়েকটি ঘটনা
যে বৃক্ষ ভবিষ্যতে প্রকাশ্য মহীরুহে পরিণত হবে, তা যেমন ছোট থাকতেই বোঝা যায়, তেমনি যারা পরিণত বয়সে মহাপুরুষের মর্যাদা লাভ করবেন, তাঁদের মধ্যে শৈশব থেকেই বহু অলৌকিক ও বিস্ময়কর ব্যাপার পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ:)-এর শৈশবেও কিছু আশ্চর্যজনক ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। যেমন, তিনি মাতৃগর্ভ থেকেই ‘মাখতুন’ হালতে অর্থাৎ খাতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হন।
হযরত মুজাদ্দিদ (রহ:)’র শৈশবকালীন আরো একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে, তিনি কখনো নগ্নদেহে থাকতেন না। কখনো তাঁর সতর অনাবৃত হলে, সাথে সাথে তা ঢেকে নিতেন। তিনি সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও হাসি মুখে থাকতেন। তাঁর প্রত্যেকটি আচার-আচরণ ও চাল-চলনের মধ্যে এক বিশেষ নিদর্শন পরিলক্ষিত হতো।
হযরত মুজাদ্দিদ (রহ:) দুদ্ধপোষ্য শিশু থাকাবস্থায় একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তার পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সকলে তাঁর জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েন। এ সময় হযরত শাহ কামাল কায়থিলী (রহ:) সিরহিন্দ শরীফে আসেন। এ খবর পেয়ে শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ:) তাঁর অসুস্থ শিশুকে দু’আ করার জন্য তাঁর কাছে নিয়ে যান। শিশুকে দেখা মাত্রই হযরত শাহ সাহেব বলেন - আল্লাহ তায়ালা এই শিশুর হায়াত দারাজ করুন। এর ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল। পরিণত বয়সে সে আলেমে হাক্কানী ও আরিফে কামিল হবে এবং আমার মত হাজার হাজার লোক তাঁর আত্মিক তালিমে উপকৃত হবে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ প্রাপ্তির যে আলো সারা দুনিয়াতে ছড়াবে, তা কিয়ামত পর্যন্ত কখনো নিস্প্রভ হবে না। এরপর শাহ সাহেব তাঁকে কোলে নিয়ে নিজের পবিত্র জিহবা তাঁর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। শিশু মুজাদ্দিদে (রহ:) অনেকক্ষণ পর্যন্ত উক্ত জিহবা লেহন করতে থাকেন। অত:পর শাহ সাহেব তাঁর পিতাকে সান্তনা দিয়ে বলেন - চিন্তা করবেন না, ইনশা আল্লাহ্ শিশু আরোগ্য লাভ করবে। আল্-হামদু লিল্লাহ, শিশু কাদেরিয়া তরীকার সব নিয়ামত লাভ করলো।
শিক্ষা জীবন -
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ:) শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পন করলে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি পিতা-মাতা বিশেষ যত্ন নিতে আরম্ভ করেন। অল্প বয়সে, অতি অল্প সময়ে তিনি কুরআন মযীদ হিফয করেন। এরপর ‘ইলমে দ্বীনের অনেক কিতাব তিনি তাঁর পিতা শায়খ আব্দল আহাদ (র)-এর নিকট অধ্যয়ন করেন। সিরহিন্দের অন্যান্য বিখ্যাত আলিমের নিকট থেকেও তিনি দ্বীনি ইলম হাসিল করেন। হযরত শায়খ ইয়াকুব কাশ্মিরী (র.), হযরত মাওলানা কাযী বাহ্লুল (র.), স্বনামধন্য তর্কশাস্ত্রবিদ হযরত মাওলানা কামাল (র.) প্রমুখ আলিম ও বুযুর্গানে-দ্বীন তাঁর উস্তাদ ছিলেন।
ইলমে তাসাউফ বা মারিফাত সম্বন্ধীয় কিতাব ‘তাসাউফ’, আওয়ারিফুল মাআরিফ, ফুসুসুল হিকাম-প্রভৃতি তিনি সে যুগের শ্রেষ্ঠ উস্তাদদের নিকট পাঠ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি জাহেরী ও বাতেনী ইলমের এক বিরাট ভান্ডারে পরিনত হন। এরপর তিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন দেশে থেকে দলে দলে শিক্ষার্থী তাঁর নিকট আসতে থাকে এবং দিনরাত শিক্ষা দেওয়ার কাজ চলতে থাকে। তাঁর দারসে হাদীস ও তাফসীরের হাল্কা সব সময় শরগরম থাকতো। বহু লোক তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষ করে সনদ হাসিল করেন। অবশেষে তিনি ‘ইলমে-জাহেরীতে’ এরূপ কামালাত অর্জন করেন যে, তিনি মুজতাহিদের দরজায় উন্নীত হন।
উল্লেখ্য যে ইমামে রাব্বানী, মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রাহঃ)-এর পূর্ব পুরুষগণ সবাই ছিলেন মারিফাত পন্থী। তাই ‘ইলমে মারিফত অর্জনের বিষয়টি তিনি ওয়ারিছ সূত্রেই লাভ করেন। প্রথমে তিনি তাঁর পিতার নিকট থেকে ‘ইলমে মারিফাত অর্জন করেন এবং তাঁরই নিকট থেকে চিশতিয়া তরীকার খিলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি কাদেরীয় তরীকার শ্রেষ্ঠ বুজর্গ হযরত শাহ সিকান্দার (রহঃ)-এর নিকট থেকে খিলাফত লাভ করেন। সে সময় ‘কুব্রাবিয়া’ তরীকার খুবই প্রসিদ্ধি ও প্রসার ছিল। হযরত মাওলানা ইয়াকুব (রাহঃ) ছিলেন এই তরীকার বিখ্যাত বুজর্গ। হযরত মুজাদ্দিদ (রাহঃ) তাঁর থেকে এই তরীকার খিলাফত লাভ করেন। এসময় তাঁর পিতা শায়খ আব্দল আহাদ (রাহঃ)-এর অন্তিম মূহুর্ত এসে পড়ে। ইন্তিকালের আগে তিনি তাঁর পুত্র মুজাদ্দিদে আলফে সানী (র) কে তাঁর সমস্ত বাতেনী শক্তি দান করে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। এভাবে তিনি সে সময় প্রচলিত সমস্ত তরীকার কামালিয়াত হাসিল করেন এবং পিতার নির্দেশ মতো নক্শাবন্দীয়া তরীকায় পরবর্তী কালে কামালিয়াত হাসিল করে ‘ইলমে মারিফাতের মহাসাগরে পরিণত হন।
জাহেরী ও বাতেনী ইলম হাসিলের পর মুজাদ্দিদে আলফে সানী (র.) বাদশাহ আকবরের রাজধানী আগ্রায় যান। বাদশার সেনা-বাহিনীর অনেকেই তাঁর জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হন। এ সময় অনেক ‘আলিম তাঁর নিকট থেকে ইলমে হাদীস ও তাফসীরের সনদ গ্রহণ করনে।’ এর ফলে তাঁর ‘ইলমে ও ইজ্তিহাদের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগ্রায় অবস্থানকালে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (র.)-এর খ্যাতি এমন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, শাহী দরবারের দর্শন ও তর্কশাস্ত্রে বিখ্যাত ‘আলিম আবুল ফযল ও ফৈযী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মাঝে মাঝে তারা তাঁর মজলিসে আগমন করতেন।
শাদী মুবারক -
ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.) দীর্ঘদিন আকবরাবাদে অবস্থান করার পর তাঁর পিতা হযরত আব্দুল আহাদ (র.) তাঁকে সিরহিন্দ শরীফে নিয়ে যান। পথিমধ্যে শায়খ সুলতানের কন্যার সাথে হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) -এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য যে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নযোগে শায়খ সুলতানকে এ বিবাহ সম্পর্কে ইশারা প্রদান করেন। শায়খ সুলতান ছিলেন সে সময় থানেশ্বরের শাসন কর্তা। দিল্লীর বাদশার পক্ষে তিনি থানেশ্বর এলাকা শাসন করতেন। একদা তিনি স্বপ্নে দেখেন, হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) তাঁকে বলছেন - হে সুলতান! তুমি তোমার মেয়েকে শায়খ আহমদ সিরহিন্দীর সাথে বিয়ে দাও।
সুলতান তাঁকে চিনতেন না। তাই এ নির্দেশ কিরূপে পালন করবেন, তা নিয়ে মহা চিন্তায় পড়েন। এসময় তিনি আবার স্বপ্ন দেখেন এবং এ সময় তাঁকে শায়খ আহমদ সিরহিন্দীর সুরতও দেখান হয়। কয়েকদিন পর শায়খ আহমদ খানেশ্বর যান এবং সুলতানের সাথে তাঁর দেখা হয়। তাঁকে দেখেই সুলতান চিনতে পারেন যে, ইনিই সেই যুবক, যার সাথে তাঁর কন্যার বিয়ে দেওয়ার নির্দেশ তিনি পেয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে উপযাচক হয়ে একজন অপরিচিত যুবকের কাছে নিজের কন্যার বিয়ের প্রস্তাব দিতে ইত:স্তত বোধ করছিলেন। ফলে আবার তিনি নবী করীম (স.) কে স্বপ্নে দেখেন। তিনি (স.) বলেন এ ব্যক্তি সম্পর্কেই আমি তোমাকে বলেছি। তুমি সরাসরি তাঁর কাছে প্রস্তাব দাও। এরপর শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ)-এর নিকট বিয়ের প্রস্তাব পেশ করা হলে, তিনি তাঁর পিতার সম্মতি নিয়ে এ বিয়েতে রাজী হন এবং যথা সময়ে শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। এ বিয়ের দ্বারা তাঁর আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল হয় এবং তিনি বসবাসের জন্য সিরহিন্দে বাড়ী এবং ইবাদাতের জন্য খানকাহ নির্মান করেন, যা এখন ও রয়েছে।
নকশ্বন্দীয়া তরীকা হাসিল:
ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)-এর মনে আগে থেকেই বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের রওযা পাকের যিয়ারত করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অসুস্থ ও বৃদ্ধ পিতার খিদমতের জন্য তিনি হজ্জ আদায় করতে পারেননি। হিজরী ১০০৭ সালে তাঁর বুজর্গ পিতার ইনতিকালের পর তিনি ঐ বছরই হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে দিল্লীতে উপনীত হন। এ সময় তাঁর বন্ধু ও খাজা বাকী বিল্লাহ (র.) - এর মুরীদ মাওলানা হাসান কাশ্মীরীর সাথে তার দেখা হয়। এ সময় মাওলানা সাহেব তাঁর নিকট হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ (র.) -এর কামালাতের বিষয় প্রকাশ করে তাঁর সাথে দেখা করার জন্য তাঁকে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন- খাজা সাহেব নকশ্বন্দীয়া তরীকার একজন অতুলনীয় রত্ন, এ রকম লোক বর্তমানে দুর্লভ। তাঁর একটি নেক-নজরে তালেবগণ এমনই ফয়েয লাভ করেন, যা দীর্ঘদিন সাধনা ও চিল্লার দ্বারা হাসিল হয় না।
ইতিপূর্বে হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) এই তরীকা সম্পর্কে তাঁর বুজর্গ পিতার নিকট থেকে বহু কিছু শুনে এবং বইপত্র পড়ে অবগত হয়েছিলেন এবং এই তরীকার প্রতি তাঁর স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকার তিনি দেরী না করে তখনই মাওলানা হাসান সাহেবের সাথে খাজা সাহেবের দরবারে হাযির হন। কারও প্রতি কোনরূপ আগ্রহ প্রকাশ করার অভ্যাস হযরত খাজা (র.)-এর ছিলনা। তা সত্বেও তিনি তাঁর আদতের খিলাফ করে হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) কে কিছুদিন তাঁর খানকায় থাকার জন্য অনুরোধ করেন । তিনি সেখানে এক সপ্তাহ থাকবেন বলে ওয়াদা করলেও, প্রায় আড়াই মাস হযরত খাজার দরবারে অবস্থান করেন। দু’দিনের মধ্যে তিনি নিজের মধ্যে হযরত খাজার প্রভাব উপলব্ধি করে বায়আত হওয়ার দরখাস্ত পেশ করেন। ফলে, খাজা সাহেব সাথে সাথেই তাকে বয়আত করে ‘ক্বলবে’ যিকিরের তালিম দেন এবং তাঁর ‘ক্বলব’ তখনই জারী হয়ে যায়।
খিলাফত প্রাপ্তি-
হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ (র.) হযরত শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.)-এর ন্যায় একজন সুযোগ্য মুরীদের তালিম ও তারবিয়তের মাধ্যমে কামালিয়াতের দরজায় পৌঁছানোর সুযোগ পাওয়ায় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। তিনি তাঁর কামালাতও হালাতের প্রশংসা করে এক মুবারক সময়ে তার খিলাফাতের মর্যাদায় বিভূষিত করেন এবং পরে সিরহিন্দ শরীফে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ইমামে রাব্বানী, মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.) নিজ জন্মভূমি সিরহিন্দ শরীফে ফিরে আসার পর নিজ বুজর্গ মুর্শিদের হিদায়েত ও ইরশাদ বা নির্দেশ অনুযায়ী তালেবদের বা ইলমে মারিফাত অনুসন্ধানকারীদের শিক্ষা-দীক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শত শত তালেবে মারিফাত বা মারিফাত অন্বেষণকারীরা দুনিয়া ও আখিরাতের চিরকল্যাণ লাভ করে ধন্য হয়।
মুজাদ্দিদ উপাধি লাভ-
হযরত শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.) তাঁর মুর্শিদের নির্দেশে সিরহিন্দ শরীফে ফিরে আসলে দলে দলে লোক তাঁর খিদমতে হাযির হয়ে বায়আত হতে থাকে। এসময় একদিন তিনি ফজরের নামাযের পর তাঁর হুজরায় মুরাকাবায় মশগুল থাকা অবস্থায় দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম রুহানীভাবে সমস্ত আম্বিয়া, অসংখ্য ফিরিশ্তা, আউলিয়া ও গাওস কুতুবদের সাথে সেখানে তাশরীফ এনেছেন। নবী করীম (স.) তাঁর পবিত্র হাতে শায়খ আহমদ (রহ.)কে একটি অমূল্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পোশাক পরিয়ে দিয়ে বলেনঃ শায়খ আহমাদ মুজাদ্দিদের প্রতীকস্বরূপ আমি তোমাকে এই ‘খিলআত’ বা পোশাক পরিয়ে দিলাম এবং দ্বিতীয় হাজার বছরের জন্য আমি তোমাকে আমার বিশেষ প্রতিনিধি মনোনীত করলাম। আমার উম্মাতের দ্বীন ও দুনিয়ার যাবতীয় দায়িত্ব আজ হতে তোমার উপর অর্পিত হলো।
উল্লেখ্য যে, এই ঘটনাটি ১০১০ হিজরীর ১০ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার ফযরের নামাযের সময় সংঘটিত হয়। নবী রাসূলগণ সাধারণতঃ যে বয়সে নবূওতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হতেন, সেই বয়সে অর্থাৎ চল্লিশ বছর বয়সের সময় হযরত শায়খ আহমদ সিরহিন্দি (রহ.) “মুজাদ্দিদে আলফে সানী” উপাধিতে ভূষিত হন। মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.) এ সম্পর্কে বলেনঃ আমার উপর মুজাদ্দেদীয়াত বা সংস্কারকের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে, শুধু পীর-মুরিদি করার জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়নি। মুরীদদের মারিফাতের বা আল্লাহ্ প্রাপ্তির তালিম দেয়া আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। যে মহান দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়েছে, তা অনেক ব্যাপক ও বড়। মুরীদদের তরীকতের তালিম বা শিক্ষা দেয়া এবং মানুষকে কামালিয়াত বা পূর্ণতার স্তরে পৌঁছানো রাস্তা থেকে কুড়ানো তুচ্ছ জিনিসের মত।
— মাকতুবাত শরীফ, ২য় খন্ড, মাকতুব নংঃ ৪
হাকীকতে কাবা'র সিরহিন্দ শরীফে আগমণ-
প্রকাশ থাকে যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)-এর ‘রওজা মুবারক’ যেখানে অবস্থিত, সেখানে মদীনা মনওয়ারার রাসূলে পাক (স.)-এর ‘রওজা শরীফের’ কিছু মাটি আছে। এই মাটি নূহ (আ.)-এর তুফানের সময় মদীনা মনওয়ারা হতে এখানে এসেছিল। সারকথা এই যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)-এর কামালাত ও পরিপূর্ণ মর্যাদার কথা বর্ণনা করা মোটেও সম্ভব নয়। কারণ, তিনি তা নিজেই গোপন রাখেন।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.) আরো বলেনঃ.... এই ফকীর দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখছে যে নবী করীম (স.)-এর দ্বীনের দাওয়াত পেঁ․ছেনি, এমন কোন জায়গা পৃথিবীতে নেই। এমন কি ইয়াজুজ ও মাজুজদের কাছে এ দাওয়াত পৌঁছে গেছে। আগের উম্মতদের প্রতি খেয়াল করলে দেখা যায়, নবী-রাসূল প্রেরিত হননি, এমন কোন স্থান নেই। এমন কি সুদূর হিন্দুস্তানেও নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছিলেন এবং তাঁরা হিন্দুদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ইচ্ছা করলে আমি হিন্দুস্তানের সেই শহর গুলি নির্দিষ্ট করে দিতে পারি।
সিরহিন্দ শরীফের পূর্ব দিকে ‘বরছ’ নামক স্থানে কয়েকজন নবীর মাযার আছে। হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) কাশ্ফ মারফত এখবর অবগত হয়েছিলেন। সিরহিন্দ শরীফ থেকে এ স্থানের দূরত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) বলেন- “ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত পুরুষ ও নারী আমার সিলসিলা কিংবা অন্য কোনো সিলসিলার মাধ্যমে আমার তরীক্বার মধ্যে দাখিল হবে তাদের সকলকেই আমার সম্মুখে পেশ করে তাদের নাম, নসব, বংশ পরিচয়, জন্মভুমি এবং বাসস্থান সমস্ত কিছুই বলে দেয়া হয়েছে। আমি ইচ্ছা করলে সকলেরই নাম, ঠিকানা বলে দিতে পারি।” সুবহানাল্লাহ!
ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) বলেন, “মহান আল্লাহ পাক নিজের মেহেরবানীতে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমার সবকিছু লিখিত বস্তু ও মকতুবাত শরীফ আখিরী যামানায় হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামমের সম্মুখে পেশ করা হবে। তা উনার নিকট মকবুল বা গ্রহণযোগ্য হবে।” সুবহানাল্লাহ! (হালাতে মাশায়িখে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া-২/৩৭)
মহান আল্লাহ পাক হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.)কে এক নতুন তরীকা দান করেছিলেন। উনার পূর্ববর্তী হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগনের অনেকে মা’রিফতী সায়ির বা ভ্রমণ কেবলমাত্র বিলায়েতে ছুগরা বা ক্বলব লতীফার উপর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কদাচিৎ দুই একজনের বিলায়েতে কুবরা পর্যন্ত সায়ির (ছফর বা ভ্রমণ) নসীব হতো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজের ফযল ও করম দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বিলায়েতে কুবরা, বেলায়েতে মালায়েআলা, কামালতে নুবুওয়াত ও কামালতে রিসালত, কামালতে উলুল আ’যম, হাক্বীক্বতে ইবরাহীমী, হাক্বীক্বতে মুসাবী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী, হাক্বীক্বতে আহমদী, হুব্বে সরফা, ও লা-তাই’উন, হাক্বীক্বতে কা’বা, হাক্বীক্বতে কুরআন, হাক্বীক্বতে ছলাত, ছাওম মা’বুদীয়তে ছরফা মাক্বামসমূহের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) উনার ছাহেবজাদা হযরত খাজা মুহম্মদ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত খাজা মুহম্মদ মা’সুম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে উপরোক্ত তামাম মাক্বাম, সায়ির করিয়েছিলেন। আর উনাদের মাধ্যমে উনাদের সাহেবজাদাগণ ও খলীফাগণ উক্ত মাক্বামসমূহ সায়ির করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে এই তরীক্বার মধ্যে উক্ত মাক্বামসমূহের সায়ির বিদ্যমান রয়েছে। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত এটা জারি থাকবে।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) বলেছেন, ‘হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম এই তরীক্বার নিসবত হাছিল করবেন এবং এই ত্বরীকার নিসবত উনার উপর সর্বাঙ্গীন সুন্দররূপে বিকশিত হবে।”
এ কথা অনস্বীকার্য যে, মহান আল্লাহ পাক হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ.) কে যে নজীরবিহীন খুছুছিয়াত বৈশিষ্ট্য মুবারক দান করেছিলেন, তার সুনিপুণ বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। (হালাতে মাশায়িখে নক্শবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া-২/৩৮)
ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাব্বে মুস্তফা- উনার খাস নেসবত, রুহানি ফয়ুজাত ও বরকত আমাদের নছিব করুন- আল্লাহুম্মা আমীন- বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।
মুজাদ্দেদ আ্ল ফেসানী মান,
দেল ও জানাম বাশাউ কেতু,
বাহার দাম জারে মিনালিদ,
নুমা অ্যাঁ তাল আ'তে জিবা,
মুজাদ্দেদ আ্ল ফেসানী মান।।
গু'লামে তু শুদাম আজজান,
মুরিদে তু শুদাম আজ দেল,
শুয়ামে বর পায়ে তু কুরবান,
মুজাদ্দেদ আ্ল ফেসানী মান।।
বামিসকি নাম বাদারগা'হাত,
চু ফারমায়ে নাজার বারে,
বাহালাম হাম নাজার ফারমা,
জেখাকে পায়ে তু ই মিস্কিনাম,
মুজাদ্দেদ আ্ল ফেসানী মান।।
নুমা মারা ছুরাতে জামাল,
মুজাদ্দেদ আল ফেসানী মান।।
ছবি: সেরহিন্দ শরীফ, পাঞ্জাব, ভারত।
**এডিটর পোস্ট **