02/10/2024
PC - RAM যে বিষয় আপনার জানা থাকা দরকার
লিখেছেন - Kazi Z Hossain
ভাবুন তো, ১৯৯৫ সালে আপনি আপনার বন্ধুর বাসায় গিয়েছেন। সে নতুন পিসি নিয়েছে। একটা নতুন Windows 95 অপারেটিং সিস্টেম চালানো কম্পিউটার দেখতে গেছেন। বন্ধু আনন্দের সাথে বলল, তার কম্পিউটারে 4MB RAM রয়েছে, যা সেই সময়ের জন্য একদম দুর্দান্ত।
তখনকার দিনে একটা JPG ছবি খোলার সময় পুরো কম্পিউটার হ্যাং হয়ে হিমশীতল হয়ে যেত। কিন্তু আপনার বন্ধুর নতুন 4MB RAM থাকায় কম্পিউটার একদম চমৎকারভাবে সেই ছবিটা খুলে দেখিয়ে দিলো। তখন আপনি ভাবলেন, “এই তো, আর কি লাগে! এটাই তো অনেক বেশি!”
কিন্তু আজ ২০২৪ সালে এসে আপনি যদি Windows 10 or 11 edition এ একটা 4K ভিডিও এডিট করতে চান এবং আপনার কম্পিউটারে মাত্র 4GB RAM থাকে, তাহলে পুরো সিস্টেম ধীর হয়ে যাবে, গতি কমে যাবে, আর আপনি হতাশ হয়ে যাবেন। 4GB RAM দিয়ে হয়তো সাধারণ ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা অফিসের কাজ করা সম্ভব, কিন্তু গেমিং, ভিডিও এডিটিং, বা ভারী সফটওয়্যার চালাতে গেলে কমপক্ষে 16GB RAM এখন প্রয়োজন।
RAM-এর ইতিহাস:
RAM-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪০ সালে। সেই সময় RAM ছিল বড়ো বড়ো টেবিলের মতো এবং Williams Tube নামে প্রথম RAM মেমোরি তৈরি হয়। তবে সেটা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের যন্ত্র ছিল। আধুনিক কম্পিউটারে ব্যবহৃত RAM আসতে সময় লেগেছে আরও কিছু বছর। ১৯৬৯ সালে Intel প্রথম DRAM (Dynamic RAM) তৈরি করে, যেটা এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এরপর ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে, কম্পিউটার ও ল্যাপটপগুলোর জন্য SDRAM (Synchronous DRAM) নিয়ে আসে, যা RAM-এর স্পিডকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
RAM-এর Bus Speed:
RAM-এর Bus Speed হলো কম্পিউটারের মেমরি এবং প্রসেসরের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের গতি। এটি মেগাহার্টজ (MHz) বা মেগাট্রান্সফার প্রতি সেকেন্ডে (MT/s) পরিমাপ করা হয়। Bus Speed যত বেশি হবে, RAM তত দ্রুত কাজ করবে।
উদাহরণস্বরূপ:
• DDR3 RAM: সাধারণত 800-2133 MT/s
• DDR4 RAM: 2133-3200 MT/s
• DDR5 RAM: 4800-6400 MT/s পর্যন্ত
একটি সহজ উদাহরণ দিই:
মনে করুন, RAM হল একটি পানির পাইপ। Bus Speed হল পাইপের ব্যাস বা পুরুত্ব। যত বড় ব্যাসের পাইপ, তত বেশি পানি (ডেটা) একসাথে প্রবাহিত হতে পারে। DDR3 থেকে DDR5-এ উন্নীত হওয়া মানে হল আপনি একটি সরু পাইপ থেকে একটি মোটা পাইপে আপগ্রেড করছেন, যা আরও বেশি ডেটা দ্রুত প্রবাহিত করতে পারে ওই একই সময়ে।
Bus Speed বাড়ানোর সুবিধা:
• অ্যাপ্লিকেশন দ্রুত লোড হয়
• বড় ফাইল প্রসেসিং দ্রুত হয়
• মাল্টিটাস্কিং পারফরম্যান্স উন্নত হয়
• গেমিং অভিজ্ঞতা উন্নত হয়
তবে মনে রাখবেন, শুধু Bus Speed বাড়ালেই সব সমস্যার সমাধান হয় না। RAM-এর পরিমাণ, CPU-র ক্ষমতা, এবং স্টোরেজ ডিভাইসের গতিও কম্পিউটারের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
RAM-এর বিভিন্ন প্রজন্ম:
RAM-এর কয়েকটি প্রজন্ম আছে। প্রতিটি নতুন প্রজন্ম আগেরটির চেয়ে উন্নত। চলুন, একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে বুঝি:
- DDR: এটি প্রথম প্রজন্মের RAM। মনে করুন এটি একটি ছোট বালতি, যা এক সেকেন্ডে ১০০ লিটার পানি ধারণ করতে পারে।
- DDR2: এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের RAM। এটি একটু বড় বালতি, যা এক সেকেন্ডে ২০০ লিটার পানি ধারণ করতে পারে, কিন্তু কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
- DDR3: তৃতীয় প্রজন্মের RAM। এটি আরও বড় বালতি, যা এক সেকেন্ডে ৪০০ লিটার পানি ধারণ করতে পারে, আবার আরও কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
- DDR4: বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত RAM। এটি একটি বিশাল বালতি, যা এক সেকেন্ডে ৮০০ লিটার পানি ধারণ করতে পারে, এবং সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
- DDR5: সবচেয়ে নতুন প্রজন্মের RAM। এটি একটি বিশাল ট্যাংক, যা এক সেকেন্ডে ১৬০০ লিটার পানি ধারণ করতে পারে, এবং আরও দক্ষতার সাথে কাজ করে।
প্রতিটি নতুন প্রজন্ম আগের প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত কাজ করে এবং কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এটি আপনার কম্পিউটারকে আরও দ্রুত এবং দক্ষ করে তোলে।
অপারেটিং সিস্টেমের সাথে RAM-এর লিমিটেশন:
প্রত্যেকটি অপারেটিং সিস্টেমের RAM ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। যেমন Windows 10 Home Edition সর্বোচ্চ ১২৮GB RAM সাপোর্ট করে, কিন্তু 32-bit Windows 10 সিস্টেম মাত্র ৪GB RAM পর্যন্ত সাপোর্ট করতে পারে।
একটা পিসিতে কতটুকু RAM থাকা জরুরি?
এখনকার দিনে ৮GB RAM প্রয়োজনীয়, যদি আপনি সাধারণভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মুভি দেখা, বা হালকা কাজ করেন। তবে গেমার বা ভিডিও এডিটরদের জন্য ১৬GB RAM লাগবেই। আর যারা আরও বড় কাজ করেন, যেমন 3D মডেলিং বা ভার্চুয়াল মেশিন চালান, তাদের জন্য ৩২GB বা তার বেশি RAM লাগবে।
RAM নষ্ট হওয়ার লক্ষণ:
RAM নষ্ট হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
- পিসি ধীরে ধীরে রিস্টার্ট হওয়া
- ব্লু স্ক্রিন অফ ডেথ (BSOD) দেখা যাওয়া
- হঠাৎ করে পিসি বন্ধ হয়ে যাওয়া
- ফাইল করাপ্ট হওয়া
- অ্যাপ্লিকেশন ক্র্যাশ করা বা হ্যাং হওয়া
- পিসি বুট না হওয়া
- অস্বাভাবিক শব্দ আসা (বিপ শব্দ)
RAM নষ্ট হওয়ার কারণ:
নিম্নলিখিত কারণগুলো RAM-এর ক্ষতি করতে পারে:
- অতিরিক্ত তাপমাত্রা
- পাওয়ার সার্জ বা অস্থির বিদ্যুৎ সরবরাহ
- ধুলা জমা হওয়া
- ভুল ইনস্টলেশন বা হ্যান্ডলিং
- ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ
- ম্যানুফ্যাকচারিং ত্রুটি
RAM পরীক্ষা করার উপায়:
RAM-এর সমস্যা নিশ্চিত হতে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:
- Windows Memory Diagnostic Tool ব্যবহার করা
- MemTest86 যেমন থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করা
- BIOS-এ বিল্ট-ইন মেমোরি টেস্ট রান করা
- RAM স্টিক পরিবর্তন করে দেখা
এই পরীক্ষাগুলো করে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার RAM-ই সমস্যার কারণ কিনা। যদি RAM-এ সমস্যা থাকে, তাহলে সেটি পরিবর্তন করা উচিত।
RAM ভালো রাখার উপায়:
আপনার RAM-এর যত্ন নিন, যেন সেটা ভালোভাবে কাজ করতে পারে। ডাস্ট বা গরম থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত কম্পিউটার পরিষ্কার করা দরকার। অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচানোর জন্য ভালো কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করুন।
Dual Channel সুবিধা:
Dual Channel হলো RAM ব্যবহারের একটি কৌশল যা আপনার কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি কীভাবে কাজ করে?
- দুটি একই রকম RAM স্টিক একসাথে কাজ করে
- ফলে, ডেটা প্রসেসিং গতি প্রায় দ্বিগুণ হয়
- গেমিং ও ভারী কাজের অ্যাপ্লিকেশন দ্রুত চলে
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি RAM স্টিক 12.8 GB/s গতিতে কাজ করে, Dual Channel-এ দুটি স্টিক মিলে 25.6 GB/s গতি দেয়।
Dual Channel ব্যবহারের শর্তগুলো:
- দুটি RAM স্টিক একই ক্ষমতার হতে হবে (যেমন, দুটিই 8GB)
- RAM-এর গতি ও লেটেন্সি একই হতে হবে
- মাদারবোর্ড Dual Channel সাপোর্ট করতে হবে
- RAM স্টিকগুলি সঠিক স্লটে বসাতে হবে (সাধারণত একই রঙের স্লটে)
কোথায় Dual Channel সবচেয়ে কার্যকর?
- বড় ফাইল কপি করার সময়
- ভিডিও এডিটিং করার সময়
- উচ্চ রেজোলিউশনের গেম খেলার সময়
Dual Channel প্রযুক্তি CPU এবং GPU উভয়ের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আপনার কম্পিউটারের সামগ্রিক পারফরম্যান্স উন্নত করে।
লেখা শেষ করার আগে, একটা মজার তথ্য দেই:
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী RAM-এর বাজার ছিল ১১০ বিলিয়ন ডলার, আর এই বাজার আরো বেড়েই চলেছে। গ্রুপে এক্টিভ থাকুন আর গ্রুপের নোটিফিকেশন পেতে আর আর মজার মজার টেক নিউজ ও ব্লগ চাইলে প্রতিটা পোস্টে লাইক কমেন্ট করুন। নাহলে মিস হয়ে যাবে কিন্তু ।
আর Knowledge share করতে চাইলে পোস্টটা share করতে পারেন।