Jafor Ikbal

Jafor Ikbal Education | Soft Skills | Knowledge share | Motivation | Ethics
(1)

17/01/2025

বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্যঃ উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বৈষম্য ও করণীয়

বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকাঃ
১. সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণঃ
• সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করেছে।
• তবে এসব কর্মসূচি যথেষ্ট বিস্তৃত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছায় না।

২. কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ
• পোশাক শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা হয়েছে।
• তবে গুণগত ও স্থায়ী কর্মসংস্থানের অভাব বৈষম্য কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।

৩. ক্ষুদ্রঋণ ও SME খাতে সহায়তাঃ
• ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম দরিদ্রদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করেছে।
• তবে SME খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি।

৪. অবকাঠামো ও যোগাযোগ উন্নয়নঃ
• গ্রামীণ সড়ক ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন কিছু ক্ষেত্রে বৈষম্য কমিয়েছে।
• তবে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে আরও সমতাভিত্তিক অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রয়োজন।

ভবিষ্যৎ করণীয়ঃ
১. প্রগতিশীল কর ব্যবস্থাঃ
ধনী ও উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের কাছ থেকে অধিক কর আদায় এবং কর ফাঁকি রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

২. দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষাঃ
• প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
• তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা উন্নয়ন করে উচ্চ আয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা জরুরি।

৩. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগঃ
• গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প এবং প্রান্তিক ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
• সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (PPP) কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪. সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আধুনিকায়নঃ
• সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে এবং সঠিক উপকারভোগীদের নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
• ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।

৫. দুর্নীতি দমনঃ
• দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
• স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১৭০১২০২৪

16/01/2025

বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্যঃ উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে তেমন সফলতা পায়নি। জাতীয় প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের বিভিন্ন স্তরে সমানভাবে বণ্টিত না হওয়ায় বৈষম্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেও বৈষম্য দূরীকরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

উন্নয়ন প্রচেষ্টার সীমাবদ্ধতাঃ
১. আঞ্চলিক বৈষম্যঃ
• শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য এখনও প্রকট।
• রাজধানী ঢাকার বাইরে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে।

২. আয়ের বৈষম্যঃ
• ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়ের পার্থক্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• ২০১৬ সালে বাংলাদেশের জিনি সহগ ছিল ০.৩২, যা ইঙ্গিত দেয় যে আয়ের বৈষম্য কমছে না বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• শীর্ষ ১০% ধনী জনসংখ্যা দেশের মোট সম্পদের প্রায় ৩৮% নিয়ন্ত্রণ করে, যা বৈষম্যের প্রকট চিত্র তুলে ধরে।

৩. চাকরির গুণগত মানের অভাবঃ
• দেশের অধিকাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে, যেখানে চাকরির নিরাপত্তা এবং উপযুক্ত বেতন কাঠামো নেই। ফলে কর্মজীবীদের আয়ের মানোন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

৪. শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে ঘাটতিঃ
• প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগে বৈষম্য রয়ে যায়।
• উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, যা কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতায় বৈষম্য সৃষ্টি করে।

৫. কর ব্যবস্থা ও পুনর্বণ্টনে ব্যর্থতাঃ
• কর ব্যবস্থা এখনও প্রগতিশীল নয়। উচ্চ আয়ের গোষ্ঠীর কাছ থেকে যথাযথ কর আদায় করতে না পারায় আয়ের পুনর্বণ্টন সঠিকভাবে হচ্ছে না।
• কর ফাঁকি এবং কর প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে বৈষম্য কমানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও বৈষম্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল হয়নি। উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অর্জিত সফলতাগুলো ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্যে বৈষম্য দূরীকরণে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি কাঠামো প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা, প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব। দক্ষ নেতৃত্ব ও কার্যকর নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি আরও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১৬০১২০২৪

15/01/2025

বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য: ধারণা ও তাত্ত্বিক কাঠামো

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য হলেও, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়ের বৈষম্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বৈষম্যের ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে এই ব্যবধান কমানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক তাত্ত্বিক কাঠামো ও কার্যকরী নীতি বাস্তবায়ন।

আর্থিক বৈষম্যের ধারণাঃ
আর্থিক বৈষম্য বলতে সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা শ্রেণীর মধ্যে আয়ের, সম্পদের এবং সুযোগের অসম বণ্টনকে বোঝায়। এটি সামাজিক বৈষম্যের প্রধান উপাদান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ব্যাহত করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আয়ের বৈষম্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে, পেশাভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এবং লিঙ্গভিত্তিকভাবে পরিলক্ষিত হয়।

বৈষম্যের কারণঃ
1. অসামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছায় না।
2. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাঃ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এবং অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার ফলে সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টিত হয় না।
3. বিনিয়োগের কেন্দ্রীকরণঃ দেশের কিছু অঞ্চলে অধিক বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন হওয়ায় গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ে।
4. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্যঃ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ভালো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি আয়ের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।

আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণের তাত্ত্বিক কাঠামোঃ
বাংলাদেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর জন্য একটি কার্যকরী তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে-

১. প্রগতিশীল কর ব্যবস্থাঃ
প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা এমন একটি কাঠামো, যেখানে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের ওপর বেশি কর আরোপ করা হয়।
• উদ্দেশ্যঃ
o আয়ের পুনর্বণ্টন নিশ্চিত করা।
o সরকারকে অধিক রাজস্ব সরবরাহ করা, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায়।

২. সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাঃ
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
• উদাহরণঃ
o বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা।
o দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রদান।

৩. বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানঃ
• আঞ্চলিক বিনিয়োগঃ
o শুধু শহর নয়, গ্রামীণ অঞ্চলেও বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
• ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) উন্নয়নঃ
o ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে।
• প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানঃ
o প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

৪. সমতাভিত্তিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাঃ
• শিক্ষাঃ
o প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা।
o টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা বাড়ানো।
• স্বাস্থ্যঃ
o প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া।
o দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করা।

৫. প্রযুক্তি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিঃ
• ডিজিটাল ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিংঃ
o দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং ও ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
• টেকসই কৃষিঃ
o প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা।

৬. আইন বাস্তবায়ন ও দুর্নীতি দমনঃ
• দুর্নীতি বৈষম্যের অন্যতম কারণ। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. গণসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনঃ
বৈষম্য দূরীকরণে জনগণকে সচেতন করা জরুরি। গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমানো অপরিহার্য। এ জন্য প্রয়োজন প্রগতিশীল নীতি, সমতাভিত্তিক বিনিয়োগ, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, এবং দুর্নীতি দমন। একমাত্র একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস করে একটি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১৫০১২০২৪

14/01/2025

বাংলাদেশের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর হলেও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে শিল্প ও সেবা খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময়, যেখানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প, কৃষি, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স), এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ । অর্থনৈতিক দুর্বলতার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম-
o ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য বা দারিদ্র্যের উচ্চ হার

বৈষম্যের কারণসমূহঃ
• আয় বৈষম্যঃ
o ধনী শ্রেণি বিনিয়োগ ও সম্পদে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
o দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চ মজুরির কর্মসংস্থানের অভাব।
• শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অসমতাঃ
o গ্রামীণ এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অনুপলব্ধ।
o শহরের উচ্চ আয়ের জনগোষ্ঠী উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা ভোগ করে।
• কৃষি ও শিল্পখাতে বৈষম্যঃ
o কৃষি নির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
o শিল্প ও সেবাখাত থেকে ধনী শ্রেণি অধিকতর মুনাফা অর্জন করে।

প্রভাবঃ
• সামাজিক অস্থিরতাঃ আর্থিক বৈষম্য সামাজিক দ্বন্দ্ব ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি করে।
• মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতাঃ দরিদ্র জনগোষ্ঠী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় না।
• অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধাঃ বৈষম্যের ফলে সঞ্চয়ের হার কমে যায়, যা বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য হ্রাসে আরো কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে দেশের আর্থিক অগ্রগতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১৪০১২০২৪

13/01/2025

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের অভাব

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি কার্যকর, সংযুক্ত এবং নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের ভেতরের সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্যর্থতার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংযোগের ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই অভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যিক, পরিবহন, কূটনৈতিক, এবং ভ্রমণ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি-

১. আঞ্চলিক সংযোগের অভাব
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
• বাণিজ্য বাধাগ্রস্তঃ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারের সঙ্গে কার্যকর সড়ক যোগাযোগ না থাকায় আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে রপ্তানি ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি পায় এবং সময়ও বেশি লাগে।
• পর্যটন শিল্পের ক্ষতিঃ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সহজ সড়ক যোগাযোগ না থাকায় পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে না। যদি আঞ্চলিক পর্যায়ে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকত, তাহলে পর্যটন থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় হতো।
• কৃষি ও শিল্প খাতে প্রভাবঃ আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ভালো হলে কৃষি ও শিল্পপণ্য দ্রুত পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানি করা যেত। বিশেষত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পণ্য সরবরাহের সুযোগ বাড়ত এবং স্থানীয় অর্থনীতি উন্নত হতো।

২. আন্তর্জাতিক সংযোগের ঘাটতি
বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অনেকাংশে ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।
• পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বৃদ্ধিঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বেশিরভাগই সমুদ্রবন্দর এবং আকাশপথে সম্পন্ন হয়। কিন্তু কার্যকর আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগ থাকলে দ্রুত এবং কম খরচে পণ্য পরিবহন সম্ভব হতো।
উদাহরণস্বরূপ, মিয়ানমার হয়ে চীন বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে বাংলাদেশ থেকে এসব অঞ্চলে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ ও দ্রুততর হতো।
• দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশের বাধাঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য মিয়ানমার হয়ে সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা জরুরি। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এই যোগাযোগ এখনো কার্যকর নয়। ফলে ASEAN (Association of Southeast Asian Nations) বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাংলাদেশ হারাচ্ছে।

৩. অবকাঠামো উন্নয়নের ঘাটতি
বাংলাদেশে সড়ক অবকাঠামো যথেষ্ট উন্নত না হওয়ায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সড়ক করিডোরগুলো পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না।
• বাণিজ্য করিডোরের সীমিত ব্যবহারঃ ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-আগরতলা এবং চট্টগ্রাম-ত্রিপুরা রুটে সড়ক যোগাযোগ থাকলেও রাস্তার মান ভালো না হওয়ায় এবং বাণিজ্যিক যানবাহনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাবে এ ধরনের রুটগুলো পুরোপুরি কার্যকর নয়।
• লজিস্টিক হাবের অভাবঃ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটে লজিস্টিক হাব বা ট্রান্সপোর্ট টার্মিনালের অভাবও একটি বড় সমস্যা। এর ফলে পরিবহন ব্যবস্থা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে।

৪. আন্তঃদেশীয় সমন্বয় ও নীতিগত দুর্বলতা
আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় আন্তঃদেশীয় সমন্বয়ের অভাব এবং নীতি গ্রহণে বিলম্বও একটি বড় সমস্যা।
• দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তির বাস্তবায়ন বিলম্বিতঃ SAARC এবং BIMSTEC-এর মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর অধীনে অনেক যোগাযোগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়। এর ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
• রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক প্রকল্প আটকে আছে।

৫. পরিবহন নীতি ও শুল্ক জটিলতা
সড়কপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক, ভাড়া এবং নীতিগত জটিলতা বাণিজ্যের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
• পণ্য পরিবহনে প্রতিযোগিতা কমঃ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে কম খরচে পণ্য পরিবহন করতে না পারায় বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
• সংযোগের অভাবে শিল্প খাতের ক্ষতিঃ দ্রুত সংযোগ না থাকায় দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প খাত আন্তর্জাতিক বাজারে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট করে।

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংযোগের অভাব একটি বড় বাধা। আঞ্চলিক বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন, এবং পর্যটন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপন জরুরি। সঠিক অবকাঠামো উন্নয়ন, আন্তঃদেশীয় সমন্বয় এবং নীতিগত জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১৩০১২০২৫

12/01/2025

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনাঃ জনগণের সচেতনতা ও আচরণগত সমস্যা

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে জনগণের সচেতনতার অভাব ও আচরণগত সমস্যা অন্যতম। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য আধুনিক অবকাঠামো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনগণের সঠিক ব্যবহার ও নিয়ম মেনে চলার মানসিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জনগণের অসচেতনতা ও দায়িত্বহীন আচরণ সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—

১. ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতার অভাব
বাংলাদেশে অনেকেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানে না বা জানলেও তা মেনে চলে না। উদাহরণস্বরূপ-
• ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করাঃ চালক ও পথচারীদের মধ্যে ট্রাফিক সিগনাল মানার প্রবণতা কম, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।
• হেলমেট এবং সিটবেল্ট ব্যবহার না করাঃ অনেক মোটরসাইকেল চালক হেলমেট ব্যবহার করেন না এবং প্রাইভেট গাড়ির যাত্রীরা সিটবেল্ট বাঁধেন না।
এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা বেড়ে যায়।

২. অসচেতন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন চালনা
বেশিরভাগ চালকই সড়কে দায়িত্বশীল আচরণ করেন না। কিছু চালকের অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং করার প্রবণতা, এবং সঠিক লেনে না চলার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটে।
• অভিজ্ঞ চালকের অভাবঃ অনেক চালক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালান।
• মাদকের প্রভাবঃ কিছু চালক মাদক সেবন করে গাড়ি চালান, যা দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে।

৩. পথচারীদের আচরণগত সমস্যা
সড়কে পথচারীদের অসচেতনতা সড়ক ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সমস্যা।
• যত্রতত্র রাস্তা পারাপারঃ পথচারীরা জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস ব্যবহার না করে যত্রতত্র রাস্তা পার হয়।
• পথচারীর মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতাঃ রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

৪. যানবাহনের অতিরিক্ত সংখ্যা ও অনিয়মিত পার্কিং
জনগণের মধ্যে পার্কিংয়ের নিয়ম না মানার প্রবণতা যানজটের একটি বড় কারণ।
• অননুমোদিত স্থানে পার্কিংঃ রাস্তায় অননুমোদিত স্থানে গাড়ি পার্ক করার ফলে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
• রাস্তায় হকার বসানোঃ জনগণের সহযোগিতার অভাবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যা পথচারীদের সড়কে হাঁটতে বাধ্য করে এবং দুর্ঘটনা বাড়ায়।

৫. গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্য
গণপরিবহনে বাস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং সড়কে যাত্রীদের প্রতি দায়িত্বহীন আচরণ সড়ক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
• বেপরোয়া বাস চালানোঃ অধিক যাত্রী নেওয়ার প্রতিযোগিতায় চালকরা বেপরোয়া গতি ও অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং করে, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়।
• যাত্রী উঠানামার সময় নিয়ম না মানাঃ অনেক সময় নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া মাঝপথে যাত্রী উঠানো ও নামানো হয়, যা যানজট তৈরি করে।

৬. সড়ক দুর্ঘটনার পর সহিংস আচরণ
সড়ক দুর্ঘটনার পর অনেক সময় জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে।
• দায়িত্বশীল আচরণের অভাবঃ দুর্ঘটনার পর সঠিক আইনগত প্রক্রিয়া না মেনে গাড়ি ভাঙচুর, চালককে মারধর, এমনকি যানবাহনে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
• অশান্তি ও যান চলাচল ব্যাহতঃ এসব ঘটনার ফলে সড়কে অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে।

জনগণের সচেতনতা ও আচরণগত সমস্যার কারণে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা ও যানজটের সমস্যা বাড়ছে। সঠিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন করতে পারলেই সড়ক ব্যবস্থাপনায় উন্নতি সম্ভব। "স্মার্ট বাংলাদেশ" গড়ার লক্ষ্যে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের আচরণগত পরিবর্তন জরুরি।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১২০১২০২৫

10/01/2025

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগঃ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও আধুনিকায়নের অভাব

সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং আধুনিকায়ন উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে যানজট, দুর্ঘটনা, পরিবহন ব্যয়, এবং সড়কের দ্রুত ক্ষতির সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব। তবে, বাংলাদেশে সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের অভাব লক্ষণীয়, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও আধুনিকায়নের অভাবঃ সমস্যা ও প্রভাব
১. যানজট সমস্যা নিরসনে প্রযুক্তির অভাব
বাংলাদেশের শহরগুলোতে যানজট একটি বড় সমস্যা। উন্নত দেশগুলোতে আধুনিক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ATMS), স্মার্ট ট্রাফিক সিগনালিং, এবং জিপিএস-ভিত্তিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে যানজট হ্রাস করা হয়।
প্রভাবঃ যানজটের কারণে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে বছরে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২. সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব
সড়কের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য উন্নত প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS), এবং সেন্সর-ভিত্তিক মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত।
প্রভাবঃ
• দ্রুত সড়ক ক্ষয়ঃ
অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর কারণে সড়কের গুণগত মান দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ADB) মতে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ সড়ক ৫-৭ বছরের মধ্যেই মেরামতের প্রয়োজন পড়ে, যেখানে উন্নত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সড়কের আয়ুষ্কাল ১৫-২০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
• অতিরিক্ত ব্যয়ঃ
বারবার সড়ক মেরামতের ফলে সরকারের বাজেটের বড় একটি অংশ এই খাতে ব্যয় হয়। ২০২৩ সালে সরকারের বাজেটের প্রায় ১৫% বরাদ্দ সড়ক মেরামতের কাজে ব্যয় হয়েছে।

৩. স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব
উন্নত দেশগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট সিগনাল, ট্রাফিক সেন্সর, এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা সড়কে যানবাহনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বাংলাদেশে এই ধরনের প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।
প্রভাবঃ
• বিপুল যানজটঃ
স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনাল না থাকায় যান চলাচল হাতে-কলমে পরিচালিত হয়, যা ত্রুটিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ।
• দুর্ঘটনা বৃদ্ধিঃ
অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে পথচারী ও যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
• তথ্যঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BUET) এক গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার ১৫% ঘটনার জন্য অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থা দায়ী।

৪. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও ডেটা বিশ্লেষণের অভাব
উন্নত দেশগুলোতে সড়ক ও যানবাহনের কার্যক্রম পরিচালনায় ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশে এখনও সঠিক ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কোনো উন্নত ব্যবস্থা নেই।
প্রভাবঃ
• পরিকল্পনায় ত্রুটিঃ
ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না।
• ব্যয় অপচয়ঃ
প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
• তথ্যঃ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার সড়ক উন্নয়নে পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার অপচয় হয়।

অর্থনৈতিক ক্ষতির ধরন ও প্রতি বছর ক্ষতির পরিমাণঃ
যানজটের কারণে কর্মঘণ্টা অপচয়- ৩ বিলিয়ন ডলার
সড়ক দুর্ঘটনার চিকিৎসা ব্যয়- ১ বিলিয়ন ডলার
বারবার সড়ক মেরামতের অতিরিক্ত ব্যয়- ৫০০ মিলিয়ন ডলার
জ্বালানি অপচয়- ৭০০ মিলিয়ন ডলার
মোট ক্ষতি- ৫.২ বিলিয়ন ডলার

সমাধানের প্রস্তাবনা
১. আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি প্রবর্তন
• স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনাল, স্মার্ট সড়কবাতি, এবং ট্রাফিক সেন্সর ব্যবহার করতে হবে।
• যানজট কমাতে GPS-ভিত্তিক রিয়েল-টাইম ট্রাফিক তথ্য ব্যবহার করে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
২. রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
• ড্রোন, IoT ডিভাইস, এবং GIS ব্যবহার করে সড়কের অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
• সড়ক মেরামতের জন্য আধুনিক মেশিনারি ব্যবহার করলে মেরামত দ্রুত ও মানসম্পন্ন হবে।
৩. ডেটা বিশ্লেষণ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি
• সড়ক ব্যবস্থাপনা ও যানবাহন চলাচলের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেতে পারে।
• ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
৪. প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগ
• সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে বিনিয়োগ বাড়িয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে।
• স্টার্টআপগুলোকে উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আসতে সহায়তা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও আধুনিকায়নের অভাবের কারণে যানজট, দুর্ঘটনা, এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই খাতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা হলে বছরে প্রায় ২-৩% জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব। তাই, সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সমাধান বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ১০০১২০২৫

09/01/2025

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগঃ ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও আইন প্রয়োগে অপ্রতুলতা

সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কার্যকর উন্নয়নের জন্য সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর আইন প্রয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব রয়েছে, যা সড়ক নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। এর ফলে যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিচে বিষয়টি তথ্য-উপাত্তের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাঃ কারণ ও প্রভাব
১. অপর্যাপ্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো, বিশেষত ঢাকায়, যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহনের সংখ্যা রাস্তার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু এই যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ এবং প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়।
প্রভাবঃ
• যানজট বৃদ্ধিঃ
ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০% কর্মঘণ্টা যানজটে অপচয় হয়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা অপচয় হয়, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার।
• জ্বালানি অপচয়ঃ
যানজটে আটকে থেকে যানবাহনগুলোর জ্বালানি অপচয় হয়, যা পরিবহন খরচ বাড়িয়ে তোলে।

২. অবৈধ পার্কিং ও সড়ক দখল
বেশিরভাগ সড়কে অবৈধ পার্কিং এবং ফুটপাত দখল একটি সাধারণ সমস্যা। দোকানপাট, স্টল, এবং অস্থায়ী বাজারের কারণে সড়কের অনেকাংশ দখল হয়ে যায়।
প্রভাবঃ
• সড়কের কার্যক্ষমতা কমে যায়ঃ
রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং যানজটের তীব্রতা বাড়ে।
• পথচারীদের জন্য ঝুঁকিঃ
পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থার অকার্যকারিতা
ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয় না।
প্রভাবঃ
• ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলাঃ
অনেক জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ সিগনালের পরিবর্তে হাতের ইশারায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন, যা যানবাহনের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

৪. ট্রাফিক পুলিশের অপ্রতুলতা ও প্রশিক্ষণের অভাব
দেশে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। উপরন্তু, তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
প্রভাবঃ
• অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাঃ
যানবাহন চালকেরা নিয়ম লঙ্ঘন করলেও যথাযথ নজরদারি না থাকায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।
• অনিয়মিত যান চলাচলঃ
ট্রাফিক পুলিশের দক্ষতার অভাবে যান চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ে, যার ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়।

আইন প্রয়োগে অপ্রতুলতাঃ কারণ ও প্রভাব
১. সড়ক পরিবহন আইনের দুর্বল বাস্তবায়ন
যদিও বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করেছে, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে।
প্রভাবঃ
• আইনের প্রতি অবজ্ঞাঃ
চালক ও পরিবহন মালিকেরা আইন ভঙ্গ করেও শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যান, ফলে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়ে।
• দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধিঃ
আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং, এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের ঘটনা বাড়ছে। BUET-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সড়ক দুর্ঘটনার ৮০% দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া গতি এবং ওভারটেকিং দায়ী।

২. শাস্তির হার কম
সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত চালকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও অনেক সময় যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না।
প্রভাবঃ
• দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কাঃ
অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়ায় অন্য চালকেরাও আইন লঙ্ঘনে উৎসাহী হন।
• আইনের প্রতি আস্থার অভাবঃ
জনগণের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগের প্রতি আস্থা কমে যায়।

৩. দুর্নীতি ও অনিয়ম
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্নীতি বিদ্যমান। অনেক ক্ষেত্রে ঘুষের বিনিময়ে আইন ভঙ্গের ঘটনা উপেক্ষা করা হয়।
প্রভাবঃ
• সড়কে নৈরাজ্যঃ
ট্রাফিক আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়ে এবং যানজট তীব্রতর হয়।
• সড়ক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতাঃ
নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা বারবার ঘটায় সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

তথ্য-উপাত্ত
• বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনঃ
বিশ্বব্যাংক ২০২১ সালে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, যানজটের কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২-৩% জিডিপি ক্ষতি হয়।
• জাতিসংঘের প্রতিবেদনঃ
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (UNESCAP)-এর মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ মানুষ আহত বা নিহত হন, যা সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইন প্রয়োগের অভাবের কারণে ঘটছে।

সমাধানের প্রস্তাবনা
১. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার
• স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনাল ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার বাড়াতে হবে।
• যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে ইলেকট্রনিক স্পিড মনিটর ও ফাইন সিস্টেম চালু করা যেতে পারে।

২. আইন প্রয়োগের কার্যকারিতা বাড়ানো
• সড়ক পরিবহন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
• আইন লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার হার বাড়ানো এবং তা আদায়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৩. ট্রাফিক পুলিশের প্রশিক্ষণ ও জনবল বৃদ্ধি
• ট্রাফিক পুলিশকে আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
• প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে।

৪. সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি
• চালক, যাত্রী, এবং পথচারীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারাভিযান চালাতে হবে।
• স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও আইন প্রয়োগে অপ্রতুলতা। এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, আইনের কার্যকর প্রয়োগ, এবং দুর্নীতি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ০৯০১২০২৫

08/01/2025

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতাঃ দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমের বড় একটি বাধা হলো দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি বিদ্যমান। এই দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা সড়ক অবকাঠামোর মান হ্রাস, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, এবং সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ার মতো নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে।

দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের কারণ
১. প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দুর্নীতি
সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণের সময় সঠিক জরিপ ও মূল্যায়ন না করে দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করা যায় না।

২. নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের প্রবণতা
অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, যা সড়কের স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়। যথাযথ তদারকির অভাবে এই ধরনের অনিয়ম নিয়মিত ঘটে।

৩. রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ আত্মসাৎ
সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ দুর্নীতির কারণে অপচয় বা আত্মসাৎ হয়। ফলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং পুনরায় মেরামতের জন্য আরও অর্থ ব্যয় করতে হয়।

৪. লাইসেন্স ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি
যানবাহন ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বিদ্যমান। এতে অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচল করে, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়।

দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের নেতিবাচক প্রভাব
১. সড়ক অবকাঠামোর নিম্নমান
দুর্নীতির কারণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহৃত হওয়ায় সড়কগুলোর স্থায়িত্ব কমে যায়।
• বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত সড়কগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করলে সড়কের স্থায়িত্ব ১৫-২০ বছর হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতির কারণে অনেক সড়ক ৫ বছরের মধ্যেই ভেঙে যায়।
• প্রভাবঃ বারবার মেরামতের প্রয়োজন হওয়ায় সরকারের ব্যয় বেড়ে যায় এবং জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

২. প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ও সময়ক্ষেপণ
দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং সময়মতো প্রকল্প শেষ হয় না।
• বাংলাদেশ অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় অনুমোদিত বাজেটের তুলনায় ৩০-৫০% বেশি হয়েছে।
• প্রভাবঃ বাজেট বাড়ানো ও সময়ক্ষেপণের কারণে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন সংকট তৈরি হয়।

৩. সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি
মানহীন সড়ক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।
• বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BUET) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ২৫% ঘটনার জন্য নিম্নমানের সড়ক ও অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দায়ী।
• প্রভাবঃ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের স্বাস্থ্যখাতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে যা অর্থনৈতিক ক্ষতিতে রূপ নেয়।

৪. জনগণের আস্থা হ্রাস
দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের কারণে জনগণের মধ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আস্থা কমে যায়।
• প্রভাবঃ জনগণ সড়ক ব্যবহারকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, যা পরিবহন ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

৫. পরিবহন খরচ বৃদ্ধি
সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যর্থতার ফলে যানজট ও সড়কের ক্ষতির কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়।
• আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) মতে, সড়ক অবকাঠামো খারাপ থাকার কারণে দেশের পণ্য পরিবহনে ব্যয় ২০-৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
• প্রভাবঃ এই ব্যয় বৃদ্ধি ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্যে প্রভাব ফেলে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।

সমাধানের প্রস্তাবনা
১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
• সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
• সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় (Public Procurement) স্বচ্ছতা আনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে।

২. দুর্নীতিবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ
• দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
• দুর্নীতিতে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. তদারকি ও পরিদর্শন বাড়ানো
• সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে স্বচ্ছ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।
• একটি স্বাধীন তদারকি সংস্থা গঠন করে নিয়মিত পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

৪. জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি
• জনগণকে সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
• স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যা সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের ব্যর্থতার পেছনে দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব। দুর্নীতি বন্ধ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ০৮০১২০২৫

07/01/2025

বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতাঃ যানবাহনের নিম্নমান ও নিয়ন্ত্রণহীনতা

সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন যানবাহন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় নিম্নমানের যানবাহন ও নিয়ন্ত্রণহীনতা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান, যা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। নিচে এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

যানবাহনের নিম্নমানের কারণ ও প্রভাব
১. পুরনো ও নিম্নমানের যানবাহনের ব্যবহার
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন খাতে অনেক পুরনো ও নিম্নমানের যানবাহন চলছে, যেগুলো অধিক জ্বালানি খরচ করে, ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রভাবঃ
• দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ নিম্নমানের যানবাহন চালকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা হয়, বিশেষত ব্রেকিং সিস্টেম এবং চাকার ঘর্ষণ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ে।
• পরিবেশ দূষণঃ নিম্নমানের যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও শব্দ পরিবেশ দূষণ বাড়ায়, যা জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
• পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিঃ এসব যানবাহন জ্বালানি বেশি খরচ করে, ফলে মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়।

২. মানহীন গণপরিবহন পরিষেবা
বাংলাদেশে গণপরিবহন পরিষেবার মান অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের। অধিকাংশ বাস, ট্রাক ও মিনিবাসের আসনবিন্যাস, যাত্রী ধারণ ক্ষমতা, এবং চলাচলযোগ্য অবস্থা নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণ করে না।
প্রভাবঃ
• যাত্রী নিরাপত্তার অভাবঃ যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মধ্যে অনেক সময় অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়, যা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
• জনসাধারণের ভোগান্তিঃ নিম্নমানের গণপরিবহনের কারণে যাত্রীরা অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভ্রমণ করতে বাধ্য হন।

৩. যানবাহনের মান যাচাইয়ে কার্যকর নীতিমালার অভাব
যানবাহনের মান যাচাই এবং অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা থাকলেও এর বাস্তবায়ন কার্যকর নয়।
প্রভাবঃ
• মানহীন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ সঠিক নিয়মকানুন মেনে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা না হওয়ায় মানহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
• ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলঃ নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়া রাস্তায় চলাচল করা অনেক যানবাহন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণ ও প্রভাব
১. অতিরিক্ত যানবাহন
ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু রাস্তার সংখ্যা সেই অনুপাতে বাড়েনি। ফলে যানজট চরম আকার ধারণ করছে।
প্রভাবঃ
• যানজট বৃদ্ধিঃ যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে।
• সময় ও জ্বালানি অপচয়ঃ যানজটের কারণে প্রচুর কর্মঘণ্টা ও জ্বালানি অপচয় হয়, যা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়।

২. অদক্ষ চালক ও অপরিকল্পিত লাইসেন্স প্রদান
অনেক চালক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন। তদ্ব্যতীত, লাইসেন্স প্রদান ব্যবস্থায় দুর্নীতির কারণে অনেক অযোগ্য ব্যক্তি চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রভাবঃ
• দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিঃ অদক্ষ চালকদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
• ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনঃ অদক্ষ চালকরা অনেক সময় ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না, ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

৩. যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি
বেশিরভাগ চালক নির্ধারিত গতি সীমা না মেনে গাড়ি চালান। বিশেষ করে আন্তঃজেলা মহাসড়কে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা দেখা যায়।
প্রভাবঃ
• গুরুতর দুর্ঘটনাঃ অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তা সাধারণত মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং প্রাণহানি ঘটে।
• যাত্রী ও পথচারীর ঝুঁকিঃ নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে পথচারীরাও দুর্ঘটনার শিকার হন।

৪. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা
সড়কে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতা এবং পুলিশের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীনতা বাড়ে।
প্রভাবঃ
• আইনশৃঙ্খলার অবনতিঃ আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
• জনদুর্ভোগঃ চালকদের নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে যানজট, দুর্ঘটনা, এবং সময়ের অপচয় বাড়ে।

সমাধানের প্রস্তাবনা
১. যানবাহনের মান উন্নয়নঃ
• পুরনো ও নিম্নমানের যানবাহন অপসারণ এবং নতুন, মানসম্পন্ন যানবাহনের অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে।
• নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষার মাধ্যমে যানবাহনের কার্যক্ষমতা যাচাই করতে হবে।
২. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগঃ
• লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কঠোরতা আনতে হবে।
• প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চালক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও আধুনিকায়ন করতে হবে।
৩. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
• সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক স্পিড মনিটর, এবং ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
৪. আইন বাস্তবায়নের কঠোরতাঃ
• সড়ক পরিবহন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন ব্যর্থতায় যানবাহনের নিম্নমান ও নিয়ন্ত্রণহীনতা বড় ধরনের অবদান রাখছে। মানহীন যানবাহন এবং নিয়ন্ত্রণহীন পরিবহন ব্যবস্থাপনার ফলে সড়কে দুর্ঘটনা, যানজট ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি নিরাপদ, টেকসই এবং মানসম্পন্ন সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

--জাফর ইক্‌বাল
তাংঃ ০৭০১২০২৫

Address

Shahzadpur

Telephone

+8801833181416

Website

https://www.youtube.com/channel/UCexsK0yZPIVdvhHUVH7fO_w

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Jafor Ikbal posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Jafor Ikbal:

Videos

Share