06/05/2023
#তোমাকে_বুঝিনা_প্রিয়
তোহফা ইবনাত ইনসিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
০৩.
ইনসিয়াঃ উঁহু,জারাপি মাথায় মারো কেন জানো তো তোমার ইনসু কত ব্যাথা পাই ছলছল চোখে বলল।
জারাঃ জান এতো ঢং করো কেন তুমি,তোমারে আমি
চিনি না বুঝি। ইনসু জানিসস,আমার সিক্স সেন্স বলছে খুব তাড়াতাড়ি ভালো কিছু হতে চলছে। নিখোঁজ মানুষ খোঁজ মিলল মনে হয় এইবার।
এই মেয়ে,মন কোনদিকে এতক্ষণ আমি কাকে কি বলছি।
ইনসিয়াঃ জারাপি,কিছু শুনতে পাচ্ছো।
জারাঃ কী??
ইনসিয়াঃ নিষ্প্রাণ নগরীতে আজ ঝিঁঝি পোকার মেলা। খুব তাড়াতাড়ি কিছু হবে অথবা হচ্ছে আমাদের আড়ালে।
জারাঃ চিন্তা করিস নাহ,মেহসান ভাইয়া ঠিকঠাক ভাবেই আবার ফিরে আসবে। চল ঘুমিয়ে পড়ি,কাল হয়ত বড় ফুফুর বাসায় যেতে হবে আর মেহসান ভাইয়ার অনুপস্থিতিতে তোকে রেখে যাওয়া যাবে নাহ। আয় বাবুই,চোখ দুইটা খুব ক্লান্ত একটুখানি ক্লান্তি দূর কর তোর সে ফিরবে দেখিস।
ইনসিয়াঃ মনে মনে বি'ষ'ন্ন ভ'গ্ন'হৃ'দ'য় বলে উঠল-কমান্ডার সাহেব বিরল বসন্তে দুরুদুরু বুকে, সে অগাধ গভীরতায় আমি আপনাকে একটু ছুঁতে চাই। আপনার শ্যামাবতী খুব তৃষ্ণাত্ব,তার তৃষ্ণা নিবারনের সময় কি এখনও আপনার হয় নি!
ইনসিয়াঃ কি রে মু*খ ফু*লি*য়ে রাখছিস কেন,সক্কাল সক্কাল কি হয়েছে। ব্যা*কা হয়ে গিয়েছিস ছ্যাঁ*কা খে*য়ে।
জাহানারা বেগমঃ ইনসু,আমার বৃষ্টি মামুনিকে কি সব বলছিস, দেখছিস তো মেয়েটা না খেয়ে কি অবস্থা করেছে নিজের। তুই চিন্তা করিস না মা,মেহসান একবার বাড়ি ফিরুক,ওর একটা ব্যবস্থা করব।
ছোট মাঃ বৃষ্টি মা,ইনসু,জারা,আফিয়া চল সবাই নাস্তা করে নে। নাস্তার পর পরই বের হবো।
ইনসিয়াঃ জারাপি শোন নাহহহহহ।
জারাঃ বলো জান,আপনার জন্য এই বান্দা কি করতে পারে।
ইনসিয়াঃ মুচকি হেসে বলল, কোনদিন কি দেখেছো। বাড়ির মেয়ের থেকে বউয়ের কদর বেশি। মেয়েকে দূ*র ছা*ই করে কিন্তু দেখো বউকে সোনা,মা ছাড়া ডাকে নাহ মুখ ভে*ঙ*চি দিয়ে বলে উঠল।
জারাঃ হাহাহা,আর ইউ জেইলাস বাবুই? তাও নিজের ভাবি থুরি বেস্ট ফ্রেন্ডকে। আর,ইউ নো এই মোল্লা বাড়িতে সবকিছু উল্টোই হয়।
ছোট মাঃ মেজ আপা,দেখো একটু একটু করে আগের মতো হতে চলেছে। এখন শুধু অপেক্ষা, আর কিছুদিন তারপর সকল রহস্যের সমাধান হবে।
জাহানারা বেগমঃ তাই যেন হয় ছোট। এই ভাঙা সংসারের ভাড় নিতে নিতে ক্লা*ন্ত।
-----------
আফিয়াঃ বড় ফুফু,মেয়ের পরিবার থেকে কিছু কি আর বলছে। কি সিদ্ধান্ত নিল ওরা।
তাসফিয়া জাহান(বড় ফুফু): নাহ রে মা,ওরা বিয়ে ভে*ঙে দেওয়ার পর আর কিছু বলল নাহ। চারদিকে সবাই জানত,আজ বাদে দুইদিন পর ছেলের বিয়ে। হলুদ,বিয়ের জন্য বুকিং শেষ, অর্ধেকের বেশী মানুষ নিমন্ত্রণ করা শেষ। আল্লাহ ভরসা,ওনার পর ছেড়ে দিয়েছি এতো চা*প আর নিয়ে পারছি না রে।
জাহানারা বেগমঃ বড়বুবু,একে প্রেসার হাই তোমার। তার মাঝে এতো চা*প নিও নাহ। ছেলে আমাদের কম কিসে,ডাক্তার ছেলে,২-৩মাস হল লন্ডন থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসল,রঙে হাসা ফরসা,লম্বায় ৬ফুট এমন ছেলেকে নিয়ে কেউ টেনশন করে। চলতো,আজ সবাই ঘুরতে যাবো।
বৃষ্টিঃ কোথায় যাবা আন্টি? আগে থেকে কি তুমি সব প্লানিং করে এসেছো!
ছোট মাঃ মুচকি হেসে,আরে নাহ। এই তো শহরের শেষ দিকে নতুন একটা রিসোর্ট হয়েছে মেহসান কল দিয়ে বলল,ওখানে ও বুকিং দিয়ে রাখছে। ২-১ দিনের জন্য ঘুরে আসতেও বলল । সবার মন রিফ্রেশও হবে আবার একসাথে সময় কাটানোও যাবে কিTazin সব।
__________
Yours about the case, feel free to contact me if you have any suggestion or information, I expect your presence in Hatirjheel by 5 pm tomorrow.
Maj. Tazin...
বিকালঃ৪টা
মেজর তাযিন,আপনি কি গাড়ি করে হোটেল যাবেন।
নো,অভিরাজ। কিছু ইনফরমেশান নেওয়ার আছে রুমে যাওয়ার আগে শেষ করতে হবে।
তুমি বাকিদের নিয়ে বুকিং করা হোটেলে যাও,রাতে দেখা হবে।
ইয়েস স্যার! বলেই সবাই চলে গেল।
মেহসানঃ আমাকে হঠাৎ হাতিরঝিলে ডাকলি যে,বাসায় চল। কতদিন পর দেশে ফিরলি,সবাই কত অপেক্ষায় আছে তোর। চল বাসায় চল।
তাযিনঃ কেইস সম্পর্কে এ টু জেট সকল ইনফরমেশন চাই আমার,কেইস সলভ হলেই আমি ফিল্ডে ব্যাক করব। নো ম্যাটার হোয়াট,আই ওয়ানটু গো।
হঠাৎ কিছু বলার আগেই মেহসান চুপ হয়ে গেল,এখন বুঝে শুনে কো'প দিতে হবে একটু উনিশ বিশ হলেই আগুনে ঘি ঢালার মতো ভ*য়ং*ক*র অবস্থা হবে। কি মনে করে অপ্রসন্ন কন্ঠে বলল,বলার সাথে সাথেই সব ইনফরমেশন পাবি নাহ। এখানে অনেক রহস্য চা*পা পড়ে আছে,একটার সাথে আরেকটা লিংক যুক্ত। জ*ট ছাড়াতে সময় লাগবে। বাকিরা কই বাড়িতে চল আমার কলিগের পরিচয় হয়ে নাহয়। এদিকটাও গুছিয়ে নিতে হবে তো। জ*ট*লা কিন্তু ভালোই বেঁধে আছে।
........???
মেহসানঃ আর ইউ আউট অফ মাইন্ড? অল্পদিনের ছুটি এর মাঝে এতকিছু। কি কি প্লানিং করলি!
তাযিন কড়া দৃষ্টিতে নত হয়ে ঝিলের পানিতে তাকিয়ে রইল উত্তর না পেয়ে মেহসান নরম সুরে বলল,প্লানে আমাকে ব'লি'র পা*ঠা বানাবি আর আমাকে কিছু বলবি নাহ ভালো!ভালো!
এখন,ওঠ। বাকিদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তোর কল পেয়ে ২দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে হেড অফিস থেকে ফাইল নিয়ে এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছি। বাসায়ও ঠিকভাবে যোগাযোগ হয় নি,কি হল চল।
তাযিনঃ হোটেলে উঠছি আমি,তুই ব্যাক কর। সময় হলে কল করে ডেকে নেবো তোরে।
মানে কি! তুই বাড়ি ফিরবি না তবে। ওকে ব্রো,নট অ্যা বিগ ডিল। তোর আমানতের দায়িত্ব আমার শেষ। বাকিটা তুই বুঝে নে।
এই তাযিন,তুই কিছু হাইড করছিস আমার কাছে।
এয়ারপোর্টে নামছিস বিকাল ৪টা এখানে ৪ঃ৫৫ এসেছিস,মানে এই ৫৩-৫৪মিনিট কিছু হয়েছে।
মেহসানের সন্দেহ দৃষ্টি দেখে শান্ত সরে তাযিন বলল,এখন মোল্লা বাড়ি যাওয়া মানে অনেকগুলো শু*ক*নের চোখ সাথে করে নিয়ে যাওয়া। কিছুটা কাজ ক্লোজ করে না হয় তোর বিয়েতে এটেন্ড করব। এখন ব্যাক করতে হবে। আই হ্যাভ টু গো রাইট নাও।
আর,আমানত সময় মতো বুঝে নেবো। তুই থাকতে তার যে কিছু হবে নাহ সেটা আমার থেকে ভালো কে জানে।
ঢং করো মি*য়া। এক মা*ঘে শীত যায় নাহ আমারও সময় আসবে। তখন দেখে নেবো।
তাযিনঃ ভাবিজির কি খবর,প্রপোজ কবে করলি।
-----------
বৃষ্টিঃ আর প্রপোজ। ছোট থেকে শুনছিলাম আর্মিরা অনেক রোমান্টিক হয় কিন্তু দেখো লাইফে আসল এক বোরিং নিরামিষ মানুষ। প্রপোজ তো দূরে কথা ৫মিনিটের বেশি কোনদিন কথাও বলি নাই।
বৃষ্টির কথা শুনেই সবাই হাসতে লাগল। এভাবেই, ঝিঁঝিপোকার ডাক সাথে ঠান্ডা বাতাসের কোলাহল রাতভর আড্ডা চলল।
নিষ্প্রান নগরী সাথে ঝিঁঝিপোকার ডাক অন্ধকারের হাতছানি আলাদা শান্তির জায়গা। কিছু নিরবতা কারণে-অকারণে হয় নাহ,যন্ত্রণাটাই এমন হয় যে আওয়াজটাও কেড়ে নিয়ে যায়। মন খারাপের সময় একজন সঙ্গী থাকা অবশ্যই দরকার,নাহলে সব কিছুই বিরক্ত লাগে। কিন্তু আকাশের চাঁদটা আজও তার একাকিত্বে খুশি,ভীষণ খুশি। যেন একাকিত্ব তার জন্যই সৃ*ষ্টি। তবে ভালো লাগছে চাঁদের ঝলমলে রূপ সাথে মিটিমিটি তারা। যেন আলাদাই জগৎ,গা শিরশির করা ঠান্ডা বাতাস। রজনীর এই অপরূপ সৌন্দর্য সাথে নীরবের রাঙা একাকিত্ব,বাতাসে তালে দুলিয়োমান গাছের ডাল-পাতার মড়মড় শব্দ। দূর থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিপোকার ডাক প্রকৃতির রহস্যময় এক খেলা খেলে চলেছে যেন। রূপালি রজনীর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে দূর থেকে যে কেউ ইনসুকে গি*লে খাচ্ছে সেই দিকে তার ধ্যান নাই। প্রকৃতি প্রেমীকন্যা বিভর তার কল্পনার সংসার সাজাতে।
চলবে..
(নোটবার্তা : আপনাদের ভালোবাসা দেখে সত্যিই আপ্লুত আমি। আপনাদের এই ছোট ছোট মন্তব্য কতটুকু ভালোবাসা জড়িয়ে আছে, আপনাদের একটা রিয়েক্ট ও কমেন্ট আমাকে কতোখানি উৎসাহ দেয়, সেটা কোনোভাবেই পরিমাপ করা সম্ভব না। একটুখানি অনুরোধ, আপনাদের এই উৎসাহটা যেনো আমার সাথে সবসময় থাকে। আপনাদের প্রতি ভালোবাসা রইল🌻)