21/09/2023
ইগ্নেশিয়া আমারা
মূল কথা:১)অবরুদ্ধ মনোভাব জনিত অসুস্থতা।
২)নির্জনপ্রিয়তা ও দীর্ঘনিঃশ্বাস।
৩)সান্তনায় বৃদ্ধি ও মানসিক পরিবর্তনশীলতা।
৪)বিরুদ্ধভাবাপন্ন হ্রাস ও বৃদ্ধি
দুঃখ-শোকের ভারে প্রপীড়িতা নারী,অতি স্নায়বিক-প্রকৃতি,মৃদুস্বভাবা,অথচ সহজেই উত্তেজনাশীলা,মূহুর্তে মূহুর্তে বিপরীত লক্ষণ প্রকাশ কারিনী,নিঃশব্দে নিভৃতে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন ও চোখের জলে ভাসছেন।আপনি কি তাকে চিনতে পারছেন? ইনিই আমাদের ইগ্নেশিয়া।
এতে সকল ইন্দ্রিয়ের উত্তেজনাতিশয্য রয়েছে।এমন কি নাক্সভমিকার চাইতেও বেশী।নাক্সভমিকাতে দেখতে পাই--তার উত্তেজনাতিশয্য বাহ্যিক ক্রোধ,প্রতিহিংসা,খিটখিটে মেজাজের দ্বারা প্রকাশিত হয়;কিন্তু ইগ্নেশিয়াতে দেখতে পাওয়া যায় শোক,দুঃখ ও ক্রন্দনশীলতা।দুঃখ ও শোকে সে কাঁদতে থাকলেও সে তা কাউকেই বলবে না,তার বুকের মাঝে দুঃখের বোঝা লুকিয়ে রেখে দূর্ভোগ পোহাবে।গুমরে গুমরে দুঃখ ভোগ করা তার স্বাভাব কিন্তু নাক্স মশাই বিপরীত।দুঃখ তিনি ত লুকাবেনই না;পরন্তু রাগে,তাপে উন্মাদের মত হবেন;যিনি তার বিপরীত বলবেন তাকেই মারধোর করবেন।তার কাছে বাস করা অসম্ভব;কেউই তার সঙ্গে থাকতে চায় না।
ইগ্নেশিয়ার এই শোক-দুঃখ আপনি পালসেটিলার মধ্যেও দেখতে পাবেন।কিন্তু পালসেটিলা তার মনের দুঃখ সবাইকে বলে দিতে চায়, অন্যের কাছ থেকে সে সহানুভূতি পেতে ইচ্ছা করে,সে ভীতা এবং বিনীতা;তাকে কিছু বললে সে মাথা পেতে নেয়।কিন্তু ইগ্নেশিয়ার রোগী তার দুঃখের কথা কাউকেই জানাতে চায় না,নীরবে নিভৃতে বসে শুধু গুমরে মরে।সাম্প্রতিক দুঃখ শোকের কূফলেই ইগ্নেশিয়া চমৎকার,কিন্তু পূরানো অবস্থায় অর্থাৎ বহুদিন ধরে শোক,দুঃখ,নৈরাশ্য ভোগ করার জন্য কূফলে এসিড-ফস ও নেট্রাম-মিউর দরকার হয়।এসিড-ফস দরকার হবে-যেখানে রোগী বলে যে তার নিশা ঘর্ম হচ্ছে।এই নিশা ঘর্ম কিন্তু কোন রোগের জন্য নয়-শুধু অবসন্নতার জন্য।শীর্ণতা,অবসন্নতা,ক্লান্তি এবং নৈশঘর্ম এসিড-ফসের চেহারার সঙ্গে মিশে যায়।
নেট্রাম-মিউর অনেকটা ইগ্নেশিয়ার মত হলেও তার শোক-দুঃখের সাথে ক্রোধ মেশানো থাকে।সান্তনা দিলে মেজাজ আরও খারাপ হয় এবং সে আরও ক্রোধ প্রকাশ করে।ইগ্নেশিয়ার অসম্পূর্ণ কাজটি নেট্রাম- মিউর করে দেয়।
ইগ্নেশিয়া তাড়াতাড়ি একটা জিনিস বুঝতে পারে এবং খুব তাড়াতাড়ি সে কাজটা সম্পন্ন করতে পারে।শীঘ্র শীঘ্রই তার দৈহিক ও মানসিক ভাবের পরিবর্তন ঘটে বিপরীত ভাবে।অনিয়মিত অব্যবস্থিত ভাবটিই ইগ্নেশিয়ার আসল রূপ।
প্রিয়তমকে হারানোর মর্মান্তিক দুঃখই ইগ্নেশিয়াকে পীড়িত করে।এটাই তার বিশেষত্ব।পতিহীনাবহু স্ত্রী,পুত্রহীনা বহু মাতাকে এই ঔষধটি দ্বারা উন্মাদ অবস্থা থেকে রক্ষা করা হয়েছে।শোকদুঃখ ময় সংসারে মৃত্যুভরা ধরীত্রির মাঝে ইগ্নেশিয়া যেন বিধাতার আশীর্বাদ।
উদভ্রান্ত ও উদাসীন। একা থাকতেই সে চায়।পরিবর্তনশীল প্রকৃতি।এই হাসি আমোদ করছে,পরক্ষণেই হয়ত দুঃখের সাগরে নিমগ্ন হয়ে চোখের জল ফেলছে।নীরবে দুঃখ ভোগ করাই এর স্বভাব।কিন্তু প্রকৃতিটি তার বড়ই স্নেহশীল।সহজেই সে প্রণয়ে পড়ে যায়।আবার প্রণয় ভঙ্গ হলে সহজেই তার বুকটি ভেঙ্গে যায়।জগতের কিছুই তাকে তখন আর সান্তনা বা সুখ দিতে পারবে না। রাজকন্যা হলেও ভিখারিণীর বেশে নীরবে নিভৃতে বসে সেশুধু নিঃশব্দে কেঁদে বুক ভাসাবে।তার মনের দুঃখ সে কাউকেই বলবে না,কারো কাছে কোন সাহয্যও চাইবে না।সে ভাবে তার সর্বনাশ হয়ে গেছে-জগতের কাছে তার আর চাইবার বা পাবার কিছুই নেই।তার হারানো মর্মন্তুদ দুঃখটিকেই সে তার বুকে চেপে রাখে।চোখের জলে তার বুক ভেসে যায়।মধ্যেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস তার বুকটিকে বিদীর্ণ করে দেয়।
যদি কখনও সে ক্রুধ হয় পরক্ষণেই সে দুঃখে ভরে ওঠে।হিংসাও তার আছে এবং এর কূফলেও তার রোগ হয়।কফি খেলে তার সবই খারাপ বোধ হয়।তামাকও সে সহ্য করতে পারে না।
সে আলো সহ্য করতে পারে না।গোলমালে মাথা ধরে।কিন্তু তার কানের মধ্যে যে গর্জনবৎ শব্দ হয় তা গান শুনলে কমে যায়।শ্রবণশক্তিও কমে যেতে পারে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো-বক্তৃতা শোনার সময় তার বেশ শ্রবণ শক্তি থাকে।
তার দন্তশূল কফি পানে বা তামাক খেলে খুব বাড়ে।খাবার সময় তেমন নয়,কিন্তু দুবার আহারের মধ্যবর্তী সময়েই দন্তশূল বাড়ে।কথা বলবার সময় বা চিবুবার সময় ইগ্নেশিয়া জিহ্বটা বা গলাটা কামড়ে ফেলে।
আরও মজার ব্যপার দেখুন, গলায় ব্যথা হয়েছে-বা টনসিলের প্রদাহ হয়েছে,সে কিছুই গিলতে পারছে না,জল গিলতেও প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে,অথচ শক্ত খাদ্য বেশ ভালভাবেই ও আরামেগিলছে।আরো আছে-গেলবার সয় কষ্ট হচ্ছে না,কিন্তু যখন গিলতে হচ্ছে না বা হয় না -তখনই তার গলায় ব্যথা বেশী হচ্ছে।অদ্ভুতত্বেই ঈগ্নেশিয়া ভরা।
আরো আছে মজার ব্যপার।সে ক্ষুধার্তও হয়েছে আবার তখনই তার গা বমি বমি ও করছে।সে বহু জিনিসখেতে চাইছে,কিন্তু অতি কষ্ট যোগাড় করে যখন তাকে তা' খেতে দিলেন,তখনই তার খাবার ইচ্ছাটা একদম চলে গেল।
গা -বমি বমি করলে কেউ কি খেতে পারে?ইগ্নেশিয়া কিন্তু ঐ সময় খেতে ত পারেই বরং খাবার পরই সে ভাল থাকে।পেটের খামচান ব্যথাতেও ঐ মজার ব্যপার আছে।ঐ সময় অন্য কেউ খেতে পারে না,কিন্তু ইগ্নেশিয়া শুধু খেতে পারা নয়,বরং খেলেই ভাল থাকে।
দেখুন, যদি কাশি পায় আপনি কেশে নিলেন।ব্যস্,কাশি দূর হ'ল।কিন্তু ইগ্নেশিয়ার সবই বিপরীত তা' আগেই জানিয়েছি।এখানেও তেমনি;যতই সে কিশে ততই তার কাশি বেড়েই চলে।অনেকের কাশি গরম খিছু খেলেই কমে যিয়,কিন্তু এর কাশি গরম পানীয়ে বাড়বেই।
একটি রোগী আমায় বলেছিলেন,"ডাক্তারবাবু আমার কাশি হয়,কিন্তু তা' একটু মজার ধরনের।এমনিতে কাশি নেই,কিন্তু বেড়াতে বেড়াতে যেমনি আমি চুপকরে একবার থামব,তখনি আমার কাশি হবেই।এমনি ভাবেই যতবার থামব ততবারই কাশি আসবে।"তিনি হচ্ছেন ইগ্নেশিয়া।
ইনি বলেন যে,তাঁর যৌন-ইচ্ছা দূর্বল।কিন্তু বাহ্যে বসবার কালে জননেন্দ্রিয়টি শক্ত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে।আবার কখনও বা জননেন্দ্রিয়টি কুঁচকে গিয়ে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায়।
ভয় বা দুঃখহেতু খেঁচুনি হয়।শিশুদের দাঁত ওঠবার সময় খেঁচুনি হয়,মুখে ফেনা ওঠে,পা ছুড়তে থাকে;প্রত্যহ একই সময়ে হয়। শিশুদের শাস্তি দিলে তার খেঁচুনি হয়।প্রসবকালেও পোয়াতির খেঁচুনি হতে পারে- কিন্তু জ্বর বা Congestion না থাকেল বেলডোনা বা স্ট্রামোনিয়াম নয় এমন অজ্ঞানতার বা mania না থকায় হাইওসিয়ামাসও নয়।
ইগ্নেশিয়ার হিক্কা আছে;তার পেট্রর মধ্যে যে একটা দৃর্বলতাকর শূন্যতার অনুভূতি হয় সেটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিলেই কমে যায়।পেটের ওপর অস্ত্রোপচার করার যে হিক্কা হয়, তা হচ্ছে হাইওসিয়ামাসের।উত্তপ্ত পানীয় পান করলে হিক্কা হয়, হিক্কা হচ্ছে স্ট্রামোনিয়ামের এবং ভিরেট্রাম- এল্বাম; আর শীতল পানীয় পানে যদি হিক্কা হয়,তবে তা হচ্ছে আর্সেনিকের বা পালসেটিলার।
ভয় বা দুঃখ হেতু এর কোরিয়া বা তান্ডব রোগ হয়,কিছু খেলেই তা বাড়ে;চিৎ হয়ে শুলে কমে যায়।
সারারাত একই স্বপ্ন দেখে।
ইনি অনেক সময় বলেন যে,জ্বর হলে শীত অবস্থাতেই পিপাসা হয়।এর বাইরেরটা গরম ও ভিতরটায় শীতভাব; অথবা ভিতরটায় গরম ও বাইরেরটায় শীতভাব হয়।উত্তাপাবস্থায় পিপাসা থাকাই-ত স্বভাবিক,কিন্তু ইগ্নেশিয়া অস্বাভাবিকতায় ভরা।তাই, এর শীতের সময় তৃষ্ণা এবং উত্তাপের সময় তৃষ্ণাহীন হওয়া চাই।
অনুপূরক সম্বন্ধ:নেট্রাম-মিউর,
বেলেডোনা,চায়না,লাইকোপোডিয়াম,নাক্সভমিকা,সালফার।
সমগোষ্ঠী বা পরে ব্যবহার্য্য: আলফা,আর্সেনিক,বেলডোনা,ক্যাল্কেরিয়া,চায়না,ককিউলাস,লাইকোপোডিয়াম,পালসেটিলা,রাসটক্স,সিপিয়া,সাইলেশিয়া,সালফার।
প্রতিকূল সম্বন্ধ:নাক্স-ভমিকা,কফিয়া,ট্যাবেকাম।
ক্রিয়ানাশক বা এণ্টিডোট: এসেটিক- এসিড, আর্সেনিক, ককিউলাস, ক্যামোমিলা, পালসেটিলা।
ক্রিয়াকাল: ৯দিন।