19/10/2024
এমন ছেলে আমার লাগবেনা, ওকে তুমি আদর করতে করতে আরো বোকা বানাও। যতো বড় হচ্ছে ততো বেকুব হচ্ছে ছেলেটি, যতো সব ফালতু বুদ্ধি, সব তোমার ছেলের মাথায়। আমার মেয়ের ২ বছরের বড় হয়েও ওর অর্ধেক বুদ্ধিও নেই ছেলেটার।
দুপুরে বাসায় ফিরে স্ত্রীর মুখে এমন অভিযোগ শুনে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। ৩বছরের মেয়েটাকে কোলে নিয়ে একটানা আমার ৫ বছরের ছেলেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেই যাচ্ছেন আমার স্ত্রী। কি হয়েছে প্রশ্ন করার আগেই মেয়ে বলে উঠলো, তারিফ ভাইয়াকে আম্মুু বকা দিছে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে গেলাম, দেখি ছেলে রুমে নেই। বুকটা ধুকধুক করে উঠলো, বাতরুমের দরজা খোলা ওখানেও নেই ছেলে। সাথে সাথে সামনের রুমে এসে প্রশ্ন করলাম আমার ছেলে কই? স্ত্রী বল্লো, কোথায় আবার, রুমেই তো আছে। আমি বল্লাম রুমে নেই, বাতরুমে ও নেই, তাহলে ছেলেটা কই?
সাথে সাথে মেয়ে আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে এসে দেখালো তারিফ বারান্দায় বসে নিরবে কাঁদছে। আমাকে দেখে তার চোখের পানির গতি বেড়ে গেলো বহুগুণ। আমি ছেলেকে কাছে গিয়ে, কোলে নিতে চাইলাম ও আসলো না।
পা ২টা লম্বা করে ফ্লোরে রেখে বসেই রইলো আমার ছেলেটি, আমি জোর করায়, ছেলে বল্লো তাইফাকে কোলে নাও, ওতো ভালো মেয়ে, আমি পঁচা ছেলে। ওকে নাকি আম্মু সব কিনে দিবে, বাইরে নিয়ে যাবে, আমাকে নাকি নিবে না। আমি আর এ বাসায় থাকবোনা চলে যাবো, আম্মু আমাকে খালি বকা দেয়, তাইফা দোষ করলেও আমাকে বকে।
কথার সাথে কান্নার ফোঁপানো শব্দ, কেনো জানি নিজের ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে চুরমার করে দিচ্ছে। সময় তখন দুপরে ২টা। ছেলেকে কানের কাছে গিয়ে বল্লাম, বাবার সাথে বাইরে হাঁটতে যাবে, নৌকায় চড়াবো আজ তোমাকে বাবা। নৌকায় বসে তোমার মাথার উপর ছাতা ধরবো বাবা। অনেক মজা করবো, ডাব খাবো।
ছেলেটা চোখ মুছতে মুছতে বারান্দা থেকে বের হয়ে গেঞ্জি নিয়ে রেডি হচ্ছে। এর মধ্যে আমার স্ত্রীকে বল্লাম তারিফ কি করছে বলতো? ও বল্লো একটু আগে বারান্দায় ফুলের টবে পানি দিতে গিয়ে বারান্দা পুরোটাই ভিজিয়েছে। অথচ আমার মেয়েকে পানি দিতে বলো? দেখবে বাইরে তোমার ছেলের মতো, পানি ফেলবে না অন্তত।
এবার আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বল্লাম। ছোট মানুষ এতো কিছু কি আর বুঝে। আমার স্ত্রী এবার বেশ রেগে গিয়ে বল্লো অন্তত আমার মেয়ের মতো বুদ্ধি ও সাহস থাকলেতো মেনে নিতাম। ওকে নিয়ে আমি কি করবো বলতো? আমি ওকে নিয়ে আর পারছিনা। আমি বল্লাম, তোমার কি মনে হয়? আমার ছেলের চাইতে মেয়ের বুদ্ধি ও সাহস বেশি। ও বল্লো কোন সন্দেহ নেই। আমি বল্লাম তাহলে দুপুরে খেয়ে, চলো ত্রিমোহনী বাজারের পাশে নৌকায় ঘুরে আসি।
সবাই মিলে একসাথে খাওয়া শেষ করে, বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা করে ত্রিমোহনী বাজারে গেলাম। বাজারের পাশে ব্রিজের নিচে ছোট একটা নৌকা করে ৩০টাকা ভাড়া দিয়ে পাশের একটা গ্রামে গেলাম। নৌকা থেকে নেমে ডাব খেলাম আমরা। তারপর আমার স্ত্রীকে বল্লাম মেয়েরতো ছেলের চাইতে বেশি সাহস তাইনা? ও বল্লো হ্যা।
এবার আমি বল্লাম তবে ছেলেকে আমি রাখলাম তুমি মেয়েকে বলতো ওই যে হাসগুলোকে দৌড়াতে? এবার ও তাইফাকে বল্লো, যাও হাসগুলোকে দৌড়াও। তাইফা একটু গিয়ে আর যায়না। ফিরে আসলো মায়ের কাছে। বল্লো আমি যাবো না। এবার আমি আমার স্ত্রীকে বল্লাম তুমি মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে রেখো। তারপর ছেলেকে বল্লাম বাবা যাওতো হাসগুলোকে দৌড়াতে?
ছেলে এক দৌড় দিয়ে হাসগুলোকে অনেক দুরে তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। এবার আমার স্ত্রীকে বল্লাম মেয়ের হাত ছেড়ে দাও। হাত ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে মেয়ে হাসগুলোকে দৌড়াতে চলে গেলো।
এবার সামনে দেখলাম একটা বালুর বেশ বড় মাঠ, কিন্তু মাঠটি রাস্তা থেকে প্রায় ৪ ফিট উচুতে। আবার আমার স্ত্রীকে বল্লাম মেয়েরতো ছেলের চাইতে বেশি বুদ্ধি তাইনা? ও বল্লো হ্যা, সাহস কম হলেও বুদ্ধিযে বেশি, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এবার আমি বল্লাম তবে ছেলেকে আমি রাখলাম, তুমি মেয়েকে বলতো, বালিতে হেটে উপরে মাঠে উঠতে? এবার ও তাইফাকে বল্লো যাও, বালিতে হেটে উপরে মাঠে উঠো। তাইফা হেটে হেটে উপরে যতবার উঠার চেষ্টা করছে পারছেনা, বার বার নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। আর না পেরে ফিরে আসলো মায়ের কাছে।
এবার আমি আমার স্ত্রীকে বল্লাম, তুমি মেয়ের হাতটা আবার শক্ত করে ধরে রেখো। তার পর ছেলেকে বল্লাম বাবা বালির মাঠে উঠো কানামাছি খেলবো। ও পায়ের জুতো খুলে, ২টা পা ও হাত বালিতে রেখে হামাগুড়ি দিয়ে ঘোড়ার মতো উপরে উঠে গেলো।
এবার আমার স্ত্রীকে বল্লাম মেয়ের হাত ছেড়ে দাও। হাত ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে মেয়েও ভাইয়ের মতো পায়ের জুতো খুলে, ২টা পা ও হাত বালিতে রেখে হামাগুড়ি দিয়ে ঘোড়ার মতো উপরে উঠে গেলো।
এবার আমার স্ত্রীকে বল্লাম, ছেলে হচ্ছে মেয়ের শিক্ষক। ছেলে যা করে, তা দেখে মেয়ে করে, তাই ও ভুল করে খুব কম। আর যে কাজে ছেলেটা ভুল করে, তার জন্য ছেলেকে আমরা যখন বকা দিয়, তখন তোমার মেয়ে আর এ ভুলটা করে না।
আচ্ছা এবার বলতো ছেলের কি এমন কোন শিক্ষক আছে যে ভুল দেখে বা ঠিকটা দেখে শিখবে ?? কিন্তু মেয়েরতো একজন বড় ভাই আছে। প্রতিটা ঘরেই বড় ছেলে-মেয়েরা বোকা হয় কারণ তাদের বড় কাউকে দেখে, শেখার সুযোগ তাদের হাতে নেই।
সুতরাং প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিৎ বাসার বড় সন্তানদের অবহেলা না করে, ছোট সন্তানের সাথে বা অন্য কারো সাথে তুলনা না করে, তার ভুলগুলো ঠিক করে দেওয়া ও তার ভালো কাজের প্রশংসা করা। তবেই তো বাসার ছোট সন্তানগুলো সঠিকভাবে সব কিছু শিখবে।
হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার স্ত্রীর ২ চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, আমি জানি এ চোখের পানি কষ্টের নয়, নিজের ভুল বুজতে পারার পানি, এটা ছেলের বুদ্ধি ও সাহসের চাক্ষুস প্রমানের পানি।
এবার ওর হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বল্লাম, ছেলের সব কিছু কিন্তু মায়ের মতো হয়েছে। কান্না চোখে ও এবার হেসে দিলো। হাসুক মায়েরা, সারাদিন সন্তানের সাথে থাকতে থাকতে তারা মন খুলে হাাসার সময়ও পায়না। অকারণে স্ত্রীকে হাসানোর চেষ্টান করুন, এতে পরিবারের সবাই হাসিখুশি থাকবে।
বি:দ্র: পৃথিবীতে সব চাইতে জঘন্য বিষয় হচ্ছে ছোটদের সামনে বড়দেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা। এটা না করে, বড় সন্তানকে সংশোধনমূলক বার্তা দিলেই বেশি ফল পাবেন।
মন্তব্য: বড় সন্তানের ভুলত্রুটি নিয়ে, ছোট সন্তানের সামনে তুলনা করে কিছু বলা উচিৎ নয়। কারণ এতে হিতে বিপরীত হয়, মনের অজান্তেই আমরা অভিভাবকরা ছোট-বড়দের মধ্যে দুরত্ব ও হিংসার বীজ বপন করে দিয় নিজ হাতে।
টিকা: সন্তানকে মানবিক ও ভালো গুন সম্পন্ন করে বড় করতে চাইলে, সন্তানের সাথেও মানবিক ও ভালো আচরণ করুন
Tsdn