23/07/2023
আমি দেখেছি ২০০৮ নির্বাচনে আমরা হেরে যেতে, আবার দেখেছি যাঁদের কারনে হেরে গেছি ১৪ তে তাদেরকে পুরষ্কৃত করতে!
২৩শে জুলাই ২০২৩ইং, রবিবার, জাফর উল্লাহ টিটু।
আমি ৭৯ এর নির্বাচন দেখেছি, ছোট ছিলাম তবে আমাদের বাড়ীর চারপাশে তৎকালীন ক্ষমতাশীলদের তান্ডব ভালই বুঝতে পেরেছিলাম।
আমি ৮১ থেকে ৯০ দেখেছি, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি, সে বছর উপজেলা নির্বাচনও করেছি, ফলাফল কপালে ঝুটলো ১৬টি মামলা।
৯১ এর জাতীয় নির্বাচন করেছি, কপালে ঝুটলো আরও ৬টি মামলা।
আমি ৯১-৯৬ দেখেছি, সেই ৫ বছর একটা ঈদ-কোরবানও মা-বাবা-ভাই-বোনদের সাথে করতে পারি নাই। পুরো ৫ বছরে ৫টি দিনও নিজ বাড়ীতে হাসি-খুশীভাবে থাকতে পারিনাই।
আমি ৯৬ থেকে ২০০১ সালও দেখেছি। আমি দেখেছি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হাজারও নেতা-কর্মী বসত-ভিটা থেকে তাড়িত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় অর্ধাহারে-অনাহারে কোনভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে। অনেক কর্মীর স্ত্রীকে দেখেছি অন্যের ঘরে ঝী এর কাজ করে নিজ সন্তানের আহার জোগাড় করতে।
আবার দেখেছি দল ক্ষমতায় এসে সেই সকল কর্মীদের জেলে পাঠিয়ে নেতাদের সুখের ঢেঁকুর তুলতে। আমি দেখেছি আমার সাথে থাকার কারণে পিতাকে পিটিয়ে হত্যার পর পরিবারের আত্মনাদ। আমি দেখেছি দলের দূর্দিনে যারা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দলকে টিকিয়ে রেখেছিলেন তাদেরকে আবার দল ক্ষমতায় আসার পর নেতাদের অপছন্দে অবহেলায় নিঃস্ব হয়ে যেতে। আমি দেখেছি রজপথে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে যে সব কর্মীরা দলের বিপর্যয় রক্ষা করেছেন তাদেরকে দল ক্ষমতায় আসার পরে রাস্তার ছেলেদের হাতে নির্যাতীত হতে। আমি দেখেছি যারা দলের জন্য নিজের জীবন, যৌবন, সম্পদ সবকিছু ত্যাগ করেছে সেই সব নেতা-কর্মীরা দল ক্ষমতায় আসার পরে অর্ধাহারে, অনাহারে, রোগে-শোকে বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে। আর যারা বেঁচে আছেন তারা অপমানে-অবহেলায় নিজেদেরকে দল থেকে গুটিয়ে নিতে।
বিপরীতে দেখেছি যারা কোনদিন দলের পাশে ছিল না, যাদের কোন শ্রম-ঘাম-ত্যাগ নেই, দল ক্ষমতায় আসার পর অতি স্বল্প সময়ে তাদেরকে কোটিপতি বনে যেতে!
আমি দেখেছি ২০০৮ নির্বাচনে আমরা হেরে যেতে, আবার দেখেছি যাঁদের কারনে হেরে গেছি ১৪ তে তাদেরকে পুরষ্কৃত করতে।
আমি দেখেছি ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কত মৌমাছির আনাগোনা। ২০১৪ এর পরে আবার দেখেছি সবকিছু ভুলে কেবল মধুর লোভে অন্য ফুলে বসতে। দেখেছি কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অপছন্দের কারণে অনেক সম্ভাবনাময়ী নেতা-কর্মীকে দলীয় পদ-পদবী থেকে বঞ্চিত হতে , আবার এটাও দেখেছি ব্যক্তিগত খাতির কিংবা তোষামোদীর কারণে যোগ্যতা ছাড়া অনেক জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে পুরষ্কৃত করতে।
এইসব দেখে আমার কষ্ট হয়। মনের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করে। আমাকে ভালবাসার কারণে অনেক নেতা-কর্মী বছরের পর বছর জেল খেটেছে, ২৫/৩০টা মিথ্যা মামলার হুলিয়া নিয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ২৫-৩০জন ছাত্র তাদের বোর্ড পরীক্ষা না দিতে পেরে চরম অনিশচয়তা নিয়ে শিক্ষা জীবনের ইতি টেনেছে। অনেকে পরিবার-পরিজনের সাথে বছরের পর বছর ঈদ-কোরবান করতে পারেনি। এত কষ্ট এবং নির্যাতনের পরও এইসব নেতা-কর্মীরা একটা দিনের জন্যও আমাকে ছেড়ে যায়নি!
তোদের এই ভালবাসার ঋণ আমি কিভাবে শোধ করবো জানি না। শুধু এইটুকো জানি তোরা যেমন আমাকে ভালবাসতে গিয়ে সবকিছু ত্যাগ করেছিস আমিও তোদের জন্য সর্বদা একবুক ভালোবাসা নিয়ে পরম মমতায় তোদের পাশে থাকার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি এবং থাকবো।
নিরন্তর ভালবাসা তোদের জন্য।
সবাই ভালো থাকিস, নিরাপদে থাকিস।
লেখক : আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক মেয়র, সন্দ্বীপ পৌরসভা।