![ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দূর্নীতিঃ সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুল একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। পরিতাপের বিষয় প্রয়াত প্রধান শিক্ষক মাষ্...](https://img4.medioq.com/847/198/970018208471988.jpg)
03/09/2024
ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দূর্নীতিঃ সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুল একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। পরিতাপের বিষয় প্রয়াত প্রধান শিক্ষক মাষ্টার হারাধন স্যার ২০১৪ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নাই তাই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে স্কুল চলছে। মামলা সংক্রান্ত কারনে দীর্ঘদিন ম্যানেজিং কমিটি না থাকার কারনে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদাধিকারবলে এ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ স্যার ২০১৪ সালে ১ম দফায় দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ৩ বছর দায়িত্ব পালন করে ২০১৬ সালে পদত্যাগে বাধ্য হন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার সময় প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এফডিআর ছাড়াও চলতি হিসাবে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা রেখে যান। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান থেকে তখন পদত্যাগের সময় ব্যাংক হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমান অর্থ ছিলোনা৷ সেসময়কার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের অডিটে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার গরমিল পরিলক্ষিত হয়। তখনকার সময় এবিষয়ে বেশীদূর আগানো সম্ভব হয়নি রাজনৈতিক চাপ ও নির্বাহী অফিসার বদলী হওয়ার কারনে।
২০১৭ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে মাষ্টার শামসুদ্দিন স্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালের মে মাসে অবসরে চলে যান। তিনি যাওয়ার সময় তার সময়ে সকল ব্যয় নির্বাহ করে নতুন এফডিআর ছাড়াও প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মতো চলতি হিসাবে জমা রেখে গেছেন।
কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে ২০১৯ সালে পুনরায় দায়িত্ব পান বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল্লাহ সাহেব। পুনরায় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অদ্যবদি ওনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় যা সন্দ্বীপের তখনকার এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অবগত। সহস্র শিক্ষার্থী থেকে আয়, বিভিন্ন প্রকল্প, অনুদান থেকে আয় ও বিবিধ আয় থাকার পরেও স্কুলের চলতি ফান্ডে অর্থ নাই বললেই চলে। এবিষয়ে স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একাধিকবার চিঠি প্রদান করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রভাব বিস্তারের কারনে এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দেয়ার মতো চলতি হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় স্কুলের শিক্ষকরা বারবার এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে স্কুলের সভাপতি, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় স্কুল পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শন শেষে ২০২৩ সালের শেষদিকে স্কুলের ৪ জন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে "অভ্যন্তরীন অডিট" কমিটি গঠন করেন। এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের ২য় মেয়াদের শুরুর সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল হিসাব যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।
জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বদলীজনিত কারনে ও অভ্যন্তরীন অডিট কমিটি প্রায় ৪ মাস কাজ করে নির্দিষ্ট সময়ের পরে একটি পূর্ণাঙ্গ অডিট প্রতিবেদন সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জমা দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত অভ্যন্তরীন অডিট কমিটি ভুয়া ভাউচার/বিলের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের প্রায় ৩০ লক্ষের অধিক টাকার গরমিল/দূর্নীতির খোঁজ পান।
এপ্রেক্ষিতে সভাপতি ও নির্বাহী অফিসার মহোদয় অডিট প্রতিবেদনর সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। বিভিন্ন সময় তদন্ত কমিটি স্কুল পরিদর্শনে করেন এবং অডিট প্রতিবেদনের সত্যতা পেয়েছেন বলে জানা যায়। কিন্তু উপজেলা ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কারনে তদন্ত এবং তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। এখানে উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কয়েক মাস পরপর বদলী হওয়ার কারনে সকল কিছু নতুন করে জানাতে হয়।
উল্লেখযোগ্য কিছু দূর্নীতির উৎসঃ বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত সূত্র মতে জানতে পারি যে, অনুদানের ৩৫ জোড়া বেঞ্চের বাইরে অন্যকোন কোন বেঞ্চ না তৈরী করেও প্রায় ১৫০+ জোড়া বেঞ্চ তৈরীর বিল, স্কুল মাঠে ৩০ ট্রাক মাটি ভরাট করে ১৫০+ ট্টাক মাটির বিল, শিক্ষার্থীর ভুয়া আইডি বিল, ক্যান্টিন তৈরীতে ৩ গুন বেশী ব্যয় দেখানো, স্কুলের পূর্ব পাশে রাস্তা তৈরীতে কয়েক গুন ব্যয় বেশী দেখানো, করোনাকালীন সময় স্কুল বন্ধ থাকার পরেও বিগতে ৫ বছরে কয়েকগুন আপ্যায়ন বিল, ব্যক্তিগত যাতায়াতকে স্কুলের যাতায়াত হিসেবে বিল করা, কম্পিউটার মেরামত না করেও মেরামত বিল, বিদায়ী পরীক্ষার্থীদের উপহারকৃত ফ্রীজের নামে ভুয়া বিল। এছাড়াও কুরবানির হাট থেকে প্রাপ্ত আয় কম দেখানো, ব্যাংক থেকে উত্তোলিত টাকা হিসাবে না দেখানোসহ কয়েক লক্ষ টাকার গরমিল/দূর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান হওয়ার পরে চট্টগ্রাম শহরের ভাটিয়ারী নামক স্থানে একটি চারতলা বাড়ীর নির্মান কাজ শেষ করেছেন। মফস্বল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তার স্কুলের বেতন দিয়ে মাত্র ৪/৫ বছরে চট্টগ্রাম শহরে বাড়ী করতে পারেন কিনা!! বিভিন্ন সময় ওনার বিরুদ্ধে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা, শিক্ষকদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কে অসম্মান করা, সকল কাজে স্বেচ্ছাচারিতাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। স্কুলে তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে জানা যায়।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চলতি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের শেষে শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাবেন। এসময়ের মধ্যে ওনার বিরুদ্ধে আনীত স্কুলের আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগের সমাধান না হলে স্কুলের দুর্নীতির অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবেনা এবং পরবর্তী শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিটে তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এবিষয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন।
একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে, স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় ও স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিকট আবেদন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উথাপিত আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যদি প্রমানিত হয় তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা এবং দূর্নীতির অভিযোগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওনাকে অবসরজনিত রিলিজ স্থগিত রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।।
নিজাম উদ্দীন সুমন, ব্যাচ-২০০৪