11/03/2024
মজুদদারী সিন্ডিকেট নিপাত যাক
সাধারণ মানুষ মুক্তি পাক...
গ্রামে একটা কথা আছে, চ্যাঙ উজায়, ব্যাঙ উজায়, পুটি কয়- মুইও উজাম। সামাজিক বাস্তবতাটাও এখন প্রায় এমনই।
সিন্ডিকেট-মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের উত্থান, রাতারাতি বদলে যাওয়া আর তাদের বিলাসী জীবন-যাপন দেখে অনেকেই সেই পথ ধরছেন। খোঁজ রাখছেন কখন, কোন মৌসুমে কোন পণ্যের চাহিদা বাড়ে বা বাড়বে। সে অনুযায়ী পুঁজি লগ্নি করে বিভিন্ন পণ্য মজুদ করে সিন্ডিকেটের পাহাড়ে যোগ দিচ্ছেন তারা। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে রাতারাতি বড়লোক হবার সহজ পথের সন্ধান করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
মানবিক মুল্যবোধ, ধর্মীয় মুল্যবোধ সব কিছু জলাঞ্জলী দিয়ে এই যে কিছু লোভী মানুষ তৈরি হচ্ছে- এখানে কেন শব্দটা বসালে তার উত্তরটা হয়তো সবারই জানা। আজকের এই পরিস্থিতির দায় কি আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা ব্যবস্থা এড়াতে পারে।
সেই প্রশ্নে যাবার আগে চলুন শৈশবে যাই। প্রাথমিকের একটা কবিতা পড়ে আসি।
সবার সুখে হাসব আমি
কাঁদব সবার দুখে,
নিজের খাবার বিলিয়ে দেব
অনাহারীর মুখে।
আমার বাড়ির ফুল-বাগিচা,
ফুল সকলের হবে,
আমার ঘরে মাটির প্রদীপ
আলোক দিবে সবে।
আমার বাড়ি বাজবে বাঁশি,
সবার বাড়ির সুর,
আমার বাড়ি সবার বাড়ি
রইবে না ক দুর।
এই যে নজরুল তাঁর কবিতায় বলেছেন-
সবার সুখে হাসব আমি
কাঁদব সবার দুখে,
নিজের খাবার বিলিয়ে দেব
অনাহারীর মুখে।
এই লাইন গুলো মুখস্থ্য করে শুধু পরীক্ষার খাতায় বমি করার জন্যই কি আমাদের পড়াশোনা।
আমার বাড়ির ফুল-বাগিচা,
ফুল সকলের হবে,
আমার ঘরে মাটির প্রদীপ
আলোক দিবে সবে।
এখন আমরা এতোটাই আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর হয়ে উঠছি, আমার বাড়ির কোন কিছুই আর অন্য কারো হয় না। অন্যেরটাও আর আমার হয় না। তার মানে কি দাড়াঁলো, এই শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হয়না। প্রয়োগ হচ্ছে উল্টোটা। তাহলে কেন এমন হচ্ছে, এনিয়ে কি একবারও আমরা ভাবার সময় পেয়েছি।
ভিক্ষুক থেকে রিক্সা চালক, দিনমজুর, গরীব কৃষকের নাড়ী ধরে টান দেয়া যে ট্যাক্সের টাকায় আমার লেখাপড়া, সেই লেখাপড়ায় অর্জিত জ্ঞান আমি/আমরা প্রয়োগ করছি যাদের ঘাম ঝড়ানো টাকায় পড়াশোনা করেছি, তাদের কিভাবে চুষে খাওয়া যায়, সেই চিন্তায়। কিভাবে সিন্ডিকেট করে, চাল-ডাল, নুন তেল মজুদ করে মানুষের রক্ত চোষা যায়- নতুন নতুন এসব ফন্দি ফিকির এদেশে নতুন নয়।
গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে। দু'দিন পর সব ঝড় থেমে যায়। যে লাউ, সেই কদুই হয় আবার। কারন, এই সিন্ডিকেট মজুদদারদের হাত এতোটাই লম্বা তাদের ধরাছোঁয়া বেশ কঠিন। না, এতো কঠিন হতো না। এই সিন্ডিকেটকেও ভেঙ্গে চুরমার করে মাটির সাথে মিশে ফেলা সম্ভব। এজন্য রাষ্ট্রের সাহসী ভুমিকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সব সময় একটা প্রশ্ন বড় করে দেয়, সেটা হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যখন যারা যুক্ত থাকেন, তখন তারাই এই সিন্ডিকেটের সুবিধা ভোগ করেন। কারো কাছে সুবিধা নিলে তার দিকে চোখ রাঙানো সম্ভব হলেও- আর যাই হোক ব্যবস্থা নেয়া যায় না। আর মজুদদারী-সিন্ডিকেটও পাল্টা চোখ রাঙিয়ে সুবিধা নেয়ার কথা মনে করিয়ে দেয় বলে - সব সময় এই চক্র শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে যায়।
এবার আরেকটা প্রশ্নে আসা যাক। যে প্রশ্নটা হাটে-বাজারে সব সময় শুনতে পাওয়া যায়। যে রমজানের মতো পবিত্র মাসও কেন রক্ষা পায়না এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে।
আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক আর ভোগবাদী হয়ে উঠেছি, নিজেকে ছাড়া আয়নায় আর কাউকে দেখতে পাই না। তাই ধর্মীয় মুল্যবোধকেও তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করিনা।
এতোটুকুতো নিশ্চিত করেই বলা যায়, পৃথিবীর কোন ধর্মই মানুষকে জিম্মি করার পক্ষে নয়, মানুষকে কষ্ট দেয়ার পক্ষে নয়। তারপরওতো আমরা সেই কাজটাই করে যাচ্ছি।
সুতরাং, বলাই যায়- চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। তবে তারপরও হাটে বাজারে নিষ্পেষিত মানুষ আশায় বুক বেঁধে থাকে মজুদদারী, সিন্ডিকেট নামক পাথরের হৃদয়ে গড়া মানুষ গুলোর সুমতি হয়তো একদিন ফিরবে।
যেহেতু প্রশাসন, রাষ্ট্রের কোন হুশিয়ারী এই রক্তচোষাদের থামাতে পারছে না- তখন আমাদের মহাত্মা গান্ধির প্রিয় সেই ভজন গানে শান্তনা খোঁজা ছাড়া আর কি করার আছে। -
রঘুপতি রাঘব রাজারাম,
পতিতা পাবন সীতারাম
সীতারাম, সীতারাম,
ভজ প্যারে তু সীতারাম
ঈশ্বর আল্লাহ তেরো নাম
সব কো সন্মতি দে ভগবান
রাম রহিম করিম সমান
হাম সাব হ্যায় উনকি সন্তান
সব মিলা মাঙ্গে ইয়হ বরদান
হামারা রহে মানব কা জ্ঞান।