Bana Bhante Gallery

Bana Bhante Gallery Our page bana bhante deshona, religious songs, religious videos and others
(1)

15/12/2024

দানের মূল হচ্ছে বিশ্বাস, পূজ্য ভান্তের স্বধর্ম দেশনা।

ধনপাল প্রেতকাহিনি।‘ওহে, তুমি কে? তোমায় দেখিতেছি নগ্ন, দুর্বর্ণ, কৃশ, শিরজাল-বেষ্টিত অস্থিচর্মসার দেহবিশিষ্ট; কে তুমি?প্র...
12/12/2024

ধনপাল প্রেতকাহিনি।
‘ওহে, তুমি কে? তোমায় দেখিতেছি নগ্ন, দুর্বর্ণ, কৃশ, শিরজাল-বেষ্টিত অস্থিচর্মসার দেহবিশিষ্ট; কে তুমি?
প্রেত বলিল :
প্রভো, আমি যম নামক দুর্গত প্রেতলোকের প্রেত। আমি পাপকর্ম করিয়া মনুষ্যলোক হইতে প্রেতলোকে জন্মগ্রহণ করিয়াছি।
বণিকগণ বলিলেন :
কায়-বাক্য-মনে কোন দুষ্কর্ম করিয়াছ? কোন কর্মের বিপাকে মানবকুল হইতে প্রেতকুলে গিয়াছ?
বণিকগণ এরূপ জিজ্ঞাসা করিলে, প্রেত অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যাবতীয় বিষয় প্রকাশ করিল এবং তাহাদিগকেও উপদেশ প্রদানচ্ছলে নিম্নোক্ত কথাগুলি বলিল :
দশন রাজ্যে এরকচ্ছ নামক সুপ্রসিদ্ধ এক গ্রাম ছিল। সেই গ্রামে আমি শ্রেষ্ঠী ছিলাম। সকলে আমাকে ধনপাল নামেই জানিত।
আমার নিকট তখন অশীতি শকট বোঝাই হিরণ্য ছিল। আর স্বর্ণ, রৌপ্য, মুক্তা, বৈদূর্য ও মণি ছিল প্রচুর।
তখন আমি এরূপ ধনী হইলেও দান আমার প্রিয় ছিল না। যাচকগণ যদি দেখিতে পাই এই ভয়ে আমি দ্বার রুদ্ধ করিয়াই ভোজন করিতাম।
আমি শ্রদ্ধাহীন, মাৎসর্যপরায়ণ ও কৃপণ ছিলাম। দুর্ভাষিত বাক্য ভাষণ করিতাম। বহুজনকে দান ও পুণ্যকর্ম হইতে এই বলিয়া বিরত করিয়াছিলাম ‘দান-সংযমে কোনো ফল নাই, পুষ্করিণী, ইন্দারা, কলোদ্যান রোপন, জলসত্র ও দুর্গম স্থানে সেতু প্রদানেও কোনো ফল নাই; বরঞ্চ আমি তাহা ধ্বংসই করিয়াছিলাম।
আমি পুণ্য করি নাই অথচ পাপই করিয়াছিলাম, তদ্ধেতু মনুষ্যত্ব হইতে চ্যুত হইয়া ক্ষুধা-পিপাসাতুর প্রেতলোকে উৎপন্ন হইয়াছি।
যেদিন হইতে আমার মৃত্যু হয়, সেদিন হইতে আজ পঞ্চান্ন বৎসর যাবৎ ভোজ্যপানীয় যে ভোজন করিয়াছি, এ কথা আমার স্মরণ হইতেছে না।
সংযমীকে যাহারা দান না দেয়, তাহারা একান্তই বিনাশপ্রাপ্ত হয়। ইহা প্রেতগণই ভালোরূপে জানে।
পূর্বে আমার নিকট বহু ধন থাকা সত্ত্বেও সঙ্কোচ চিত্ত-হেতু সংযমীদিগকে দান দিই নাই। দানীয়বস্তু যথেষ্ট ছিল বটে, কিন্তু দান দিয়া নিজের প্রতিষ্ঠা করি নাই। এখন স্বীয় কর্মের উৎপন্ন ফল ভোগ করিয়া অনুতপ্ত হইতেছি।
চারি মাস পরে আমার মৃত্যু হইবে। তখন আমি একান্তই উৎকট নিদারুণ ঘোর নরকে পতিত হইব।
সেই নরক চারি কোণ ও চারি দ্বারবিশিষ্ট। দীর্ঘ প্রস্থে সমান, লৌহ প্রাকারে পরিবেষ্টিত এবং লৌহাবরণে আবৃত।
ইহার লৌহময় ভূমিতল নিত্য তেজপূর্ণ ও প্রজ্বলিত থাকে। এই তেজ সর্বদা চতুর্দিকে শতযোজন বিস্তৃত হইয়া বিদ্যমান থাকে।
তথায় আমি দীর্ঘকাল যাবৎ মহাদুঃখ অনুভব করিতে থাকিব। ইহা আমার পাপকর্মের ফল। তদ্ধেতু আমি অতিশয় অনুতপ্ত।
হে সমাগত ভদ্রগণ, আপনাদিকে বলিতেছি যে গোপনে বা প্রকাশ্যে কোনো প্রকার পাপকর্ম করিবেন না।
আপনারা যদি সেই পাপকর্ম ভবিষ্যতে বা বর্তমানে করেন, তাহা হইলে আকাশপথে পলায়ন করিয়াও দুঃখ হইতে অব্যাহতি পাইতে পারিবেন না।
পিতা, মাতা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবাপূজায় উপকার করুন। শ্রমণ এবং পাপ বহিষ্কৃত ব্রাহ্মণদের সেবাপূজা করুন। ইহাতেই স্বর্গে গমন করিবেন।

চিত্ত বর্গ।শরনির্মাতা তীরের ফলাকে যেমন সোজা করে জ্ঞানী পুরুষ স্পন্দনশীল, চঞ্চল, দুরক্ষণীয় ও দুর্নিবার্য চিত্তকে সেইরূপ স...
11/12/2024

চিত্ত বর্গ।
শরনির্মাতা তীরের ফলাকে যেমন সোজা করে জ্ঞানী পুরুষ স্পন্দনশীল, চঞ্চল, দুরক্ষণীয় ও দুর্নিবার্য চিত্তকে সেইরূপ সরল করেন।
জলাবাস হইতে উদ্ধৃত এবং স্থলে নিক্ষিপ্ত মৎস্যের ন্যায় এই চিত্ত ও মাররাজ্য ছাড়িবার নিমিত্ত ব্যাকুল হয়।
দুর্দমনীয়, লঘুগতি, যথেচ্ছ-বিচরণশীল চিত্তের দমন মঙ্গলজনক; দমিত চিত্ত সুখাবহ হয়।
বিজ্ঞব্যক্তি অতি দুর্বোধ্য, সুদক্ষ ও যথেচ্ছ-বিচরণশীল চিত্তকে রক্ষা করিবেন; সুরক্ষিত চিত্ত সুখাবহ হয়।
দূরগামী, একচর, অশরীর ও হৃদয়গুহাশ্রিত চিত্তকে যাঁহারা সংযত করেন তাঁহারা মারবন্ধন হইতে মুক্ত হন।
যাহার চিত্ত অনবস্থিত, যে ব্যক্তি সদ্ধর্মানভিজ্ঞ ও যাহার প্রসন্নতা বিক্ষুব্ধ, তাহার প্রজ্ঞা কখনো পরিপূর্ণ হয় না।
যাহার চিত্ত অনাসক্ত ও অবিচলিত, যিনি পাপ-পুণ্যের বন্ধন পরিহার করিয়াছেন, সেই জাগ্রত ব্যক্তির পতনভয় আর থাকে না।
এই দেহকে কুম্ভবৎ (ভঙ্গুর) মনে করিয়া এই চিত্তকে নগরের ন্যায় সুরক্ষিত করিয়া প্রজ্ঞাস্ত্র দ্বারা মারের সহিত যুদ্ধ কর, এইরূপে বিজিত ধনকে সযত্নে রক্ষা কর; কিন্তু তৎপ্রতি আসক্তি রাখিও না।
হায়! অচিরে এই দেহ বিজ্ঞানহীন হইয়া তুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর কাষ্ঠখণ্ডের ন্যায় ধরাশায়ী হইবে।
বৈরী বৈরীর বা শত্রু শত্রুর যতখানি (অনিষ্ট) করে, মিথ্যায় আকৃষ্ট চিত্ত মানুষের তদপেক্ষা অধিক ক্ষতি করিয়া থাকে।
মাতাপিতা কিংবা জ্ঞাতিবর্গ যে উপকার মানুষের করিতে পারে না, সত্যনিবিষ্ট চিত্ত তাহার ততোধিক উপকার করে।

পণ্ডিত বর্গ।যিনি [তোমার] ত্রুটি প্রদর্শন করেন ও তজ্জন্য ভর্ৎসনা করেন, সেই মেধাবীকে গুপ্তনিধি প্রদর্শকের ন্যায় দেখিবে। যে...
10/12/2024

পণ্ডিত বর্গ।
যিনি [তোমার] ত্রুটি প্রদর্শন করেন ও তজ্জন্য ভর্ৎসনা করেন, সেই মেধাবীকে গুপ্তনিধি প্রদর্শকের ন্যায় দেখিবে। যে ব্যক্তি তাদৃশ পণ্ডিতকে ভজনা করে তাহার মঙ্গলই হয়, অমঙ্গল নয়।

যিনি উপদেশ দেন, অনুশাসন করেন এবং অসত্য নিবারণ করেন তিনি অসতের অপ্রিয় এবং সৎলোকের প্রিয় হন।

পাপী মিত্রের সংসর্গ করিবে না, নরাধম ব্যক্তির সংসর্গ করিবে না, কল্যাণমিত্রদের ও পুরুষোত্তমদের সংসর্গ করিবে।

ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি প্রসন্নচিত্তে সুখে বাস করেন; পণ্ডিত ব্যক্তি আর্যোপদিষ্ট ধর্মে সর্বদা রত থাকেন।

সেচকগণ জলকে [যথেচ্ছ] পরিচালিত করে, শরনির্মাতা শরকে ইচ্ছানুরূপ গঠন করে, সূত্রধরেরা কাষ্ঠখণ্ডকে আয়ত্ত করে; আর পণ্ডিতগণ দমন করেন নিজেকে।

কঠিন পর্বত যেমন বায়ু দ্বারা কম্পিত হয় না, তদ্রূপ পণ্ডিত ব্যক্তিরা নিন্দা-প্রশংসাতে বিচলিত হন না।

গভীর, স্বচ্ছ ও অনাবিল, হ্রদের ন্যায় পণ্ডিত ব্যক্তিরা ধর্মোপদেশ শ্রবণ করিয়া প্রসন্ন হন।

সৎপুরুষেরা সমস্ত আসক্তি বর্জন করেন; সত্ত্বগণ কাম্যবস্তুর আলোচনা করেন না; তাঁহারা সুখে উল্লসিত কিংবা দুঃখে অবসন্ন হন না।

যিনি অধর্মত নিজের জন্য কিংবা পরের জন্য পুত্র, ধন বা রাষ্ট্র কামনা করেন না, এমনকি সমৃদ্ধিও ইচ্ছা করেন না তিনিই প্রকৃত শীলবান, প্রজ্ঞাবান ও ধার্মিক।

[ধর্মসাগরের] পারগামী মানুষের সংখ্যা নিতান্তই অল্প; অবশিষ্ট জনতা তার তীরেই ধাবমান।

যাঁরা সুব্যাখ্যাত ধর্মানুযায়ী জীবন গঠনে প্রবৃত্ত, কেবল তাঁরাই সুদুস্তর মৃত্যুর অধিকার উত্তীর্ণ হয়ে পরপারে গমন করেন।

পণ্ডিত অসত্য (কৃষ্ণ) ধর্ম ত্যাগ করিয়া সত্য (শুক্ল) ধর্ম অনুসরণ করিবেন; আগার হইতে অনাগারত্ব লাভ করিয়া যে নিঃসঙ্গতায় (বিবেক) আনন্দলাভ দুঃসাধ্য সেই নিঃসঙ্গতাতেই তিনি অভিরতি (আনন্দ) লাভের সাধনা করিবেন; কামনা ত্যাগ করিয়া ও অকিঞ্চন হইয়া পণ্ডিত চিত্তক্লেশ হইতে নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখিবেন।

সম্বোধি-অঙ্গে যাঁহাদের চিত্ত সুগঠিত হইয়াছে, যাঁহারা গ্রহণে অনাসক্ত ও বৈরাগ্যনিরত, সেই ক্ষীণপাপ দ্যুতিমানগণ ইহ জগতেই নির্বাণ লাভ করিয়াছেন।

পাপ বর্গ।কল্যাণকর্ম অতি সত্বর কর, পাপ হইতে চিত্তকে নিবৃত্ত রাখ, বিলম্বে পুণ্যকর্মকারীর মন পাপেতেই রমিত হয়।যদি কেহ [দৈবাৎ...
09/12/2024

পাপ বর্গ।

কল্যাণকর্ম অতি সত্বর কর, পাপ হইতে চিত্তকে নিবৃত্ত রাখ, বিলম্বে পুণ্যকর্মকারীর মন পাপেতেই রমিত হয়।

যদি কেহ [দৈবাৎ] পাপকর্ম করিয়া থাকে উহা যেন সে বারংবার না করে এবং উহাতে যেন তাহার রুচি না জন্মায়, (কারণ) পাপের সঞ্চয় দুঃখজনক।

যদি কেহ পুণ্যকর্ম করে তবে উহা যেন সে পুনঃপুন করে এবং উহাতে যেন রুচি জন্মায়, (কারণ) পুণ্যের সঞ্চয় সুখকর।

যতক্ষণ পাপকর্ম পরিপক্ব না হয় ততক্ষণ পাপী মঙ্গল দর্শন করে; কিন্তু পাপ যখন পরিপক্ব হয় তখন পাপী অমঙ্গল দেখিতে পায়।

কল্যাণকর্ম যতদিন ফল প্রদান না করে, ততদিন অকল্যাণ মনে হয়; কিন্তু উহা যখন ফলপ্রসূ হয় তখন পুণ্যবান কল্যাণের সাক্ষাৎ পান।

‘ইহা আমায় ফল দিবে না’ এই ভাবিয়া পাপকে সামান্য মনে (অবহেলা) করিও না। বিন্দু বিন্দু বারিপাতে যেমন কুম্ভ পূর্ণ হয়, তদ্রূপ অল্প অল্প পাপ সঞ্চয় করিয়া অজ্ঞ ব্যক্তি পাপে পূর্ণ হয়।

‘এই পুণ্য আমায় ফল দিবে না’ এই ভাবিয়া পুণ্যকার্যে অবহেলা করিও না; বিন্দু বন্দু জল পড়িয়া কুম্ভ পূর্ণ হয়, অল্প অল্প পুণ্য সঞ্চয় করিয়া বিজ্ঞ ব্যক্তি পুণ্যের পূর্ণতা সাধন করেন।

প্রচুর ধনশালী নিঃসঙ্গ বণিকের ভয়ের পথ পরিহারের ন্যায় এবং বাঁচিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির বিষ পরিত্যাগের ন্যায় পাপসমূহ পরিবর্জন করিবে।

যদি হাতে ক্ষত না থাকে তবে উহা দ্বারা বিষও আহরণ করা যায়; ব্রণহীন ব্যক্তির দেহে বিষ প্রবেশ করে না। প্রবৃত্তিহীন ব্যক্তির (অন্তরেও) পাপ সংক্রমিত হয় না।

যে নির্দোষ, নিরপরাধ, নির্মল চরিত্র লোকের অনিষ্ট করে, বায়ুর প্রতিকূলে নিক্ষিপ্ত ধূলিকণার ন্যায় কৃতপাপকর্মের ফল সেই মূর্খের নিকট প্রত্যাবর্তন করে।

(মৃত্যুর পর) কেহ কেহ মাতৃগর্ভে ও পাপীরা নরকে উৎপন্ন হয়; ধার্মিক ব্যক্তিরা স্বর্গ লাভ করেন এবং ক্ষীণাসবগণ পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন।

অন্তরীক্ষে, সমদ্রমধ্যে কিংবা পর্বতবিবরে যেখানেই প্রবেশ কর না কেন, জগতের এমন কোনো স্থান নাই যেখানে থাকিয়া পাপকর্ম (ফলভোগ) হইতে মুক্তি পাওয়া যায়।

জগতে এমন কোনো প্রদেশ বিদ্যমান নাই, যেখানে অবস্থিত ব্যক্তিকে মৃত্যু বিনাশ (প্রসহন) করে না, অন্তরীক্ষে নহে, সমুদ্রমধ্যে নহে, পর্বতগুহায় প্রবেশ করিয়াও নহে।

09/12/2024

বৌদ্ধ ধর্ম হচ্ছে নির্বাণ, পূজ্য ভান্তের স্বধর্ম দেশনা।

সারিপুত্র স্থবিরের মাতৃপেত্নীকাহিনি।ওগো, তুমি বিবস্ত্রা, বিশ্রী, কৃশ, অস্থিচর্মাবৃত সমস্ত বিস্তৃত দেহধারিণী, এখানে দাঁড়া...
06/12/2024

সারিপুত্র স্থবিরের মাতৃপেত্নীকাহিনি।
ওগো, তুমি বিবস্ত্রা, বিশ্রী, কৃশ, অস্থিচর্মাবৃত সমস্ত বিস্তৃত দেহধারিণী, এখানে দাঁড়াইয়া আছ, তুমি কে?
প্রত্যুত্তরে পেত্নী বলিল :
আমি আপনার পূর্বজন্মের সাক্ষাৎ মাতা। আমি প্রেতলোকে উৎপন্ন হইয়াছি। এখন আমি ক্ষুধা-পিপাসাতুরা।
আমি নারী-পুরুষের বমি নিঃসৃত শ্লেষ্মা, কফ, নিক্ষিপ্ত থুথু, সিকনি, শ্মশানে অর্ধদগ্ধ মৃতদেহের চর্বি, প্রসূতির গর্ভমল, ব্রণের পূঁজ-রক্ত এবং হস্ত-পদ-নাসিকা ও শিরশ্ছেদে যেই রক্তস্রাব হয়, তাহাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোজন করি।
পশু ও মানবের রক্ত-পূঁজ খাইয়া বাসস্থান বিহীন নিঃস্ব অবস্থায় শ্মশানে মললিপ্ত শবমঞ্চেই আমি শয়ন করি।
হে পুত্র, আপনি দান দিয়া, সেই দানপুণ্য আমাকে প্রদান করুন। তাহাতে আমি নিশ্চয়ই পূঁজ-রক্ত হইতে অব্যাহতি লাভ করিব।
অনুকম্পাকারী উপতিষ্য মাতার এবম্বিধ বাক্য শ্রবণে মৌদ্গল্লায়ন, অনুরুদ্ধ ও কপ্পিন স্থবিরকে আমন্ত্রণ করিলেন।
তখন তিনি চারিখানি কুটির নির্মাণ করাইয়া অন্নপানীয়সহ তাহা চতুর্দিকের আগতানাগত ভিক্ষুসংঘের উদ্দেশ্যে দান করিলেন। তৎ পুণ্যসমূহ মাতার উদ্দেশ্যে প্রদান করিলেন।
এই পুণ্যপ্রদান মাত্রই পেত্নীর সুখবিপাক উৎপন্ন হইল। ইহাই ভোজ্য বস্তু পানীয় ও বস্ত্র দানের ফল।
পেত্নী এই দানফল অনুমোদন করার পরই পরিষ্কার পরিশুদ্ধ কৌশিক বস্ত্র হইতেও উত্তম ও বিচিত্র বস্ত্রালংকারে সুসজ্জিতা হইয়া কোলিতের নিকট উপস্থিত হইয়াছিল।
অতঃপর আয়ুষ্মান মৌদ্গল্লায়ন সেই পেত্নীকে বলিলেন :
হে মহাপ্রভাববতী দেবতে, তুমি যে শুকতারার ন্যায় সুন্দর সমুজ্জ্বল বর্ণে দশদিক উদ্ভাসিত করিয়া স্থিত আছ।
কোন কর্মফলে তোমার এতাদৃশ বর্ণ, স্বর্গীয় সুখ এবং যেকোনো মনোজ্ঞ ভোগসম্পদ সমুৎপন্ন হইতেছে?
হে মহানুভাব সম্পন্না দেবী, তোমাকে ইহা জিজ্ঞাসা করিতেছি যে তুমি মানবকুলে কোন পুণ্য করিয়াছিলে? কোন পুণ্যেরই বা প্রভাবে তোমার এই জ্যোতির্ময় বর্ণে সর্বদিক প্রভাসিত করিতেছ?
আমি সারিপুত্রের পূর্বজন্মের সাক্ষাৎ মাতা। আমি প্রেতলোকে উৎপন্ন হইয়াছি। এখন আমি ক্ষুধা-পিপাসাতুরা।
আমি নারী-পুরুষের বমি নিঃসৃত শ্লেষ্মা, কফ, নিক্ষিপ্ত থুথু, সিকনি, শ্মশানে অর্ধদগ্ধ মৃতদেহের চর্বি, প্রসূতির গর্ভমল, ব্রণের পূঁজ-রক্ত এবং হস্ত-পদ-নাসিকা ও শিরশ্ছেদে যেই রক্তস্রাব হয়, তাহাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোজন করি।
পশু ও মানবের রক্ত-পূঁজ খাইয়া বাসস্থান বিহীন নিঃস্ব অবস্থায় শ্মশানে মললিপ্ত শবমঞ্চেই আমি শয়ন করি।
আমি সারিপুত্রকে দান দিয়া সম্পূর্ণ ভয়মুক্ত হইয়া আনন্দে দিন কাটাইতেছি। ভন্তে, আমি কারুণিক মুনিকে বন্দনা নিবেদন করিতেই পৃথিবীতে আসিয়াছি।

05/12/2024
04/12/2024

ধুতাঙ্গ শীল সম্বন্ধে পূজ্য ভান্তের স্বধর্ম বাণী।

নন্দা পেত্নীকাহিনি।ওহে, তুমি দগ্ধ অঙ্গারের ন্যায় বিশ্রী, কালকর্ণী, কর্কশ দেহবিশিষ্টা, ভয়ঙ্কর দর্শনীয়া, চক্ষুদ্বয় পিঙ্গল ...
03/12/2024

নন্দা পেত্নীকাহিনি।
ওহে, তুমি দগ্ধ অঙ্গারের ন্যায় বিশ্রী, কালকর্ণী, কর্কশ দেহবিশিষ্টা, ভয়ঙ্কর দর্শনীয়া, চক্ষুদ্বয় পিঙ্গল বর্ণ। এ হেতু আমার বোধ হয় তুমি মানবী নও।
পেত্নী বলিল :

হে নন্দসেন, আমার নাম নন্দা। আমি পূর্বে আপনার পত্নী ছিলাম। পাপকর্ম করিয়া মনুষ্যকুল হইতে প্রেতলোকে জন্ম নিয়াছি।
নন্দসেন পেত্নীর কৃতকর্ম সম্বন্ধে নিম্নোক্তরূপে জিজ্ঞাসা করিলেন :

কায়-বাক্য-মনে তুমি কী দুষ্কর্ম করিয়াছ? কোন কর্মের বিপাকে তুমি এখান হইতে প্রেতলোকে গিয়াছ?
প্রত্যুত্তরে পেত্নী বলিল :

আমি ক্রোধপরায়ণা, কর্কশ ভাষিণী এবং পতিভক্তিহীনা ছিলাম। আপনার প্রতি দুর্বাক্য ব্যবহারের যথোপযুক্ত ফল ভোগ করিবার জন্য মানবকুল হইতে প্রেতলোকে জন্ম নিয়াছি।

ইহা শুনিয়া নন্দসেন বলিলেন :
ওহে, তোমাকে এই উত্তরীয় বস্ত্রখানি প্রদান করিতেছি। ইহা পরিধান করিয়া আস। তোমাকে গৃহে নিয়া যাইব।

তুমি গৃহে উপস্থিত হইলে বস্ত্র ও অন্নপানীয় লাভ করিবে এবং তোমার পুত্র ও পুত্রবধূকে দেখিতে পাইবে।
ইহা শ্রবণে পেত্নী বলিল :

হাতে হাতে প্রদত্ত দান আমি পাইব না। শীলবান, বীতরাগী ও বহুশ্রুত ভিক্ষুদিগকে অন্নপানীয় দানে পরিতৃপ্ত করিয়া আমাকে সেই পুণ্য প্রদান করিলে তদ্বারাই আমার যাবতীয় অভাব পূর্ণ হইবে, আমিও সুখী হইব।

সাধু বাক্যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়া শীলবান, বীতরাগ ও বহুশ্রুত ভিক্ষুদিগকে প্রচুর অন্ন-পানীয়-খাদ্য-বস্ত্র-শয়নাসন-ছত্র-সুগন্ধি দ্রব্য ও জুতাদি বিবিধ দানীয় সামগ্রী শ্রদ্ধার সহিত দান করিলেন।

পর্যাপ্ত পরিমাণ অন্নপানীয় দান করিয়া পেত্নীকে তৎপুণ্য প্রদান করিলেন। পুণ্য প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই বিপাক উৎপন্ন হইল। ভোজ্যবস্তু, বস্ত্র ও পানীয় দানের এরূপই ফল।

তৎপর শুচিশুদ্ধ কৌশিক বস্ত্র হইতেও উত্তম বস্ত্রধারিণী বিচিত্র দিব্য বস্ত্রালংকারে বিভূষিতা হইয়া পেত্নী স্বামীর নিকট উপস্থিত হইল।

নন্দসেন তাহাকে দেখিয়া বলিলেন :
হে দেবী, শুকতারার ন্যায় সর্বদিক উদ্ভাসিত করিয়া অবিরূপ বর্ণে যে তুমি স্থিত হইয়াছ; তোমার এতাদৃশ বর্ণ এবং মনোজ্ঞ ভোগসম্পদাদি কী উপায়ে লাভ হইল?

হে মহানুভাববতী দেবী, তোমায় জিজ্ঞাসা করিতেছি, তুমি মনুষ্যাবস্থায় কোন পুণ্য করিয়াছিলে? তোমার দেহজ্যোতি সর্বদিক প্রভাসিত করিতেছে। কোন পুণ্যের ফলেই বা তুমি এরূপ বর্ণশালিনী হইয়াছ?
তদুত্তরে পেত্নী বলিল :

স্বামী নন্দসেন, আমার নাম নন্দা। পূর্বে আমি আপনার পত্নী ছিলাম। পাপকর্ম করিয়াই এখান হইতে প্রেতলোকে গিয়াছি।

আমার উদ্দেশ্যে আপনার প্রদত্ত দানপুণ্যে এখন নির্ভয় ও সুখবিহারিণী হইয়াছি। হে গৃহপতি, আপনি সমস্ত জ্ঞাতিবর্গসহ চিরজীবী হউন।

হে গৃহপতি, ইহলোকে ধর্মাচরণ করিয়া ও দান দিয়া শোক ও পাপবিহীন বশবর্তী দেবলোকেই আপনার আবাসস্থান হউক। মাৎসর্যমল ও লোভ-দ্বেষ-মোহাদি বিনয়ন করিয়া প্রশংসার্হ স্বর্গ স্থানে উপগত হউন।

কর্ম ও কর্মফল।বৌদ্ধধর্মের মূল ভিত্তি হলো কর্মবাদ। ভালো কর্ম সুফল এবং মন্দ কর্ম কুফল প্রদান করে। এরূপ দৃষ্টি বা ধারণাকে ক...
02/12/2024

কর্ম ও কর্মফল।
বৌদ্ধধর্মের মূল ভিত্তি হলো কর্মবাদ। ভালো কর্ম সুফল এবং মন্দ কর্ম কুফল প্রদান করে। এরূপ দৃষ্টি বা ধারণাকে কর্মবাদ বলে। কর্মের গতি বিচিত্র ও বহুমুখী। জীবন কর্মময়। প্রাণীরা কর্মফলের কারণে সুখ-দুঃখ ভোগ করে ৷

বুদ্ধ কর্মবাদ সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছেন:

প্রাণীগণ নিজ নিজ কর্মের অধীন। কর্মই প্রাণীদের একান্ত আপন। সকলেই কর্মের উত্তরাধিকারী। কর্মই জীবের পুনর্জন্মের হেতু। কর্মই বন্ধু, কর্মই আশ্রয়। ভালো-খারাপ যে যেরূপ কর্ম করে সে সেরূপ ফল ভোগ করে। কর্ম জীবকে হীন-শ্রেষ্ঠ, উচ্চ-নিচ নানাভাবে বিভক্ত করে।

ভগবান বুদ্ধ কুশল কর্মের কথা বলেছেন। ভালো কাজ করলে সকলের প্রশংসা পায়। পুণ্য লাভ হয়। জীবন সুন্দর হয়। সুখী হয়। মৃত্যুর পর স্বর্গে গমন করে। সুকর্ম সুখকর ও আনন্দদায়ক। পুণ্যবান ব্যক্তিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। তাঁদের নির্বাণ লাভের পথ প্রশস্ত হয়। দীর্ঘায়ু হয়। ভালো কাজকে কুশল কর্ম বলে।

খারাপ কাজ করলে সবাই নিন্দা করে। পাপ উৎপন্ন হয়। পাপীরা দুঃখে পতিত হয়। কুকর্ম অনিষ্টকর ও দুঃখদায়ক। পাপীরা কুকর্মে লিপ্ত থাকে। তারা সকলের নিন্দার পাত্র হয়। লোভ, দ্বেষ ও মোহ এগুলো দুষ্কর্মের অন্তর্গত। পাপীরা মানুষের হিত ও মঙ্গল কামনা করে না। দুষ্কর্মের ফল ভোগ করে। মৃত্যুর পর নরকে গমন করে। তাই খারাপ কাজকে অকুশল কর্ম বলে।

জীবনের অপূর্ণতা ও দুর্ভাগ্যের জন্য কাউকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। যার দুঃখ সে নিজেই সৃষ্টি করে। নিজের সুকর্মের জন্য নিজেই সুখ ভোগ করে। কুকর্মের জন্য দুঃখ ভোগ করে। মা-বাবা,আত্মীয়-স্বজন কেউ তাকে রক্ষা করতে পারে না। ছেলেমেয়েরা সৎজীবন গঠন করলে মা-বাবা আনন্দিত ও প্রশংসিত হয়। তাই বুদ্ধ বলেছেন— নিজেই নিজের ত্রাণকর্তা, অপর কেউ নয়। স্বর্গ-নরক নিজেদেরই পরিণতি। সেজন্য বলা হয়েছে—

সুকর্ম কুকর্ম হেথা উভয় প্ৰধান,

তাদের সহযোগে জীব সদা ভাসমান।

একদিকে পূর্ণ শান্তি পূর্ণতার দ্বার,

বিনিমুক্ত; অন্যদিকে নিরয় অপার।

যার যেদিকে ভার সেদিকে প্রয়াণ,

কর্ম অনুযায়ী গতি নিয়তি বিধান

তোমরা আপন কর্মে সংযত ও দায়িত্ববান হবে। নিজের দুঃখের জন্য অপর কাউকে দোষ দেবে না। অপরের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। প্রতিদানে তোমাকে ভালোবাসবে। কাউকে ঘৃণা করবে না। সর্বদা সত্য ও ধর্মপথ অনুসরণ করবে।

আমরা সুন্দর জীবন গঠন করলে পৃথিবীকে স্বর্গে পরিণত করতে পারি। পুণ্যবান ও শীলবান ব্যক্তিকে সবাই শ্রদ্ধা করে। এটা ধার্মিক ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। ধার্মিক ব্যক্তিদের জন্য স্বর্গের দ্বার খোলা থাকে। আর যারা কুকর্মে লিপ্ত হয় তারা সমাজে অবহেলিত ও নিন্দিত হয়। কুকর্মের ফল ইহজীবনে ভোগ করতে হয়। তাই কবি বলেছেন-

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর,

মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর।

সেজন্য বুদ্ধ চেতনাকে কর্ম বলেছেন। এ চেতনা কায়, বাক্য ও মনোদ্বারে সংঘটিত হয়। তাই কুশল চিত্ত উৎপন্ন করতে হয়। সৎচেতনা দ্বারা সৎকর্ম উৎপন্ন হয়। কর্ম ও কর্মফল জীবন প্রবাহের অবস্থামাত্র। তাই সুখের ক্ষেত্রে স্বর্গ, দেবলোক, ব্রহ্মলোক যেমন রয়েছে, তেমন দুঃখের ক্ষেত্রে রয়েছে তির্যক, প্রেত, অসুর, নরক ইত্যাদি।

01/12/2024

দেহ আপন করলে দুঃখ। পূজ্য ভান্তের বাণী।

মিগার মাতা বিশাখা: পিতা কর্তৃক ১০টি উপদেশ।সাত বছর বয়সে বিশাখা প্রথম বারের মত তথাগত বুদ্ধের সাক্ষাত পেয়েছিলেন রাজগীরে তাঁ...
01/12/2024

মিগার মাতা বিশাখা: পিতা কর্তৃক ১০টি উপদেশ।

সাত বছর বয়সে বিশাখা প্রথম বারের মত তথাগত বুদ্ধের সাক্ষাত পেয়েছিলেন রাজগীরে তাঁর স্বীয় পিতামহের সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই তিনি বুদ্ধের অমৃত ধর্মোপদেশ শুনে স্রোতাপন্ন বা স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেছিলেন। স্রোতাপত্তি মানে হল, যাঁর চিত্ত ধর্মের স্রোতে পতিত হয়েছে। ইহা উচ্চতর আধ্যাত্মিক ফলের প্রথম স্তর।
এরকম উত্তরোত্তর আট শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক অবস্থার কথা বুদ্ধ বর্ণনা করেছেন। সে গুলিকে বলা হয় ‘অট্ঠ পুরিস পুগ্গলা’ পুদ্গল বা মানুষের অষ্ট প্রকার মার্গ ও ফল।

সেটিহল:
১) স্রোতাপত্তি মার্গারোহণ,
২) স্রোতাপত্তি ফল প্রাপ্ত।
৩) সকৃদাগামী মার্গারোহণ,
৪) সকৃদাগামী ফল প্রাপ্ত।
৫) অনাগামী মার্গারোহণ,
৬) অনাগামী ফল প্রাপ্ত।
৭)অরহত্ব মার্গারোহণ,
৮) অরহত্ব ফল প্রাপ্ত।

বিশাখা সাত বছর বয়সে স্রোতাপত্তি ফল প্রাপ্ত হয়েছিলেন। অর্থাৎ অসংশয়ারূপে ধর্মের স্রোতে পতিত হয়েছিলেন। এ স্রোতে পতিত হলে অরহত্ব অবস্থায় পৌঁছতে কোন বাঁধাই আর আটকাতে পারেনা।
বিশাখার পিতার নাম ছিল ধনন্জয় শ্রেষ্ঠী। বিশাখার পিতাকে কোশল নরেশ প্রসেনজিত মগধ হতে আহ্বান করে কোশলের অন্তর্গত সাকেতে নিয়ে বসবাস করিয়েছিলেন। এ সাকেতই বর্তমানের বিবাদিত স্থান অযোধ্যা। বিশাখা সেখানেই বেড়ে উঠেছিলেন। যথাসময়ে কোশলের রাজধানী শ্রাবস্তী নগরের মিগার শ্রেষ্ঠীর সুপুত্র পুণ্যবর্ধনের সাথে বিশাখার বিয়ে দেন পিতা ধনন্জয় শ্রেষ্ঠী।
বিয়ের সময় শ্বশুরবাডীতে যাওয়ার প্রাক্কালে পিতা ধনন্জয় শ্রেষ্ঠী প্রাণপ্রিয় মেয়ে বিশাখাকে দশটি সাংকেতিক উপদেশ প্রদান করেন। যার অনুকরণ প্রত্যেক নারীর জন্য সৌভাগ্য এবং মঙ্গলের কারণ হয়।

সে দশ সাংকেতিক উপদেশ হল:
১) ঘরের আগুন বাহিরে আনবেনা।
২) বাহিরের আগুন ঘরে আনবেনা।
৩) যে দেয়, তাকে দেবে।
৪) যে দেয়না, তাকে দেবে না।
৫) যে দেয় তাকেও এবং যে দেয়না তাকেও দেবে।
৬) সুখে বসবে বা উপবেশন করবে।
৭) সুখে খাবে বা আহার করবে।
৮) সুখে নিদ্রা যাবে বা শুতে যাবে।
৯) অগ্নির সেবা বা পরিচর্যা করবে এবং।
১০) কুল দেব-দেবীকে পূজা করবে।

জন্মদাতা পিতার উপদেশ সমূহকে মনে গেঁথে নিয়ে বিশাখা স্বীয় শ্বশুরালয় শ্রাবস্তীতে চলে আসলেন শ্রেষ্ঠী মিগারের পুত্রবধু হয়ে। মিগার শ্রেষ্ঠী ছিলেন নিগণ্ঠ নাথপুত্র বা মহাবীরের অনুসারী। বুদ্ধের প্রতি তাঁর কোন আস্থা ছিলনা। তিনি মহাবীরের শিক্ষা অনুসরণ করতেন। ইতিমধ্যে এক ঘটনা ঘটে গেল মিগার শ্রেষ্ঠী এবং পুত্রবধু বিশাখার সাথে। বিশাখা স্বীয় শ্বশুর মিগার শ্রেষ্ঠীর জন্য নিজের হাতে খাবার রান্না করে তাজা গরম গরম খাবার নিজেই পরিবেশন করে শ্বশুর মশাইকে খাওয়াচ্ছিলেন। মিগার শ্রেষ্ঠী স্বর্ণ-রৌপ্যের থালা-বাটিতে খাবার খাচ্ছিলেন। তাঁর ভোজনের সময়েই এক বৌদ্ধ ভিক্ষু ভোজন সংগ্রহ করতে মিগার শ্রেষ্ঠীর দ্বার সম্মুখে এসে হাজির হলেন। বাল্যকাল হতে বুদ্ধ ও ভিক্ষু সংঘের প্রতি বিশাখার মনে অপার শ্রদ্ধা জাগ্রত ছিল। কিন্তু এমন পরিবারে তাঁর বিয়ে হল, যাঁদের নিকট বুদ্ধ, ধর্ম এবং সংঘের প্রতি কোন বিশ্বাস বা আস্থাই ছিলনা। ভিক্ষুকে দরজায় ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও মিগার শ্রেষ্ঠী তাঁকে না দেখার মত করে ভোজন করছিলেন। এ অবস্থায় বিশাখা ভাবতে লাগলেন, হয়তো শ্বশুরের নজর ভিক্ষুর উপর পড়েনি, তাই শ্বশুর ভিক্ষুকে দেখে মত তিনি সামান্য পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে শ্বশুর মশাইকে পাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। শ্বশুর মশাই ভিক্ষুকে দেখলেন। কিন্তু তারপরেও পাশ পরিবর্তন করে না দেখার মত হয়ে চুপচাপ ভোজন করছিলেন। নতুন পুত্রবধুরূপে শ্বশুর বাড়ীতে শ্বশুরের বিনা অনুমতিতে দান দেওয়াও শ্বশুরালয়ের অবমাননা হবে। অতএব, বিশাখা অতীব ভারাক্রান্ত মনে দরজার দিকে মুখ করে ভিক্ষুকে বললেন-‘ ভন্তে! আপনি আগে যান। আমার পিতা অর্থাৎ শ্বশুর বাসী খাবার খাচ্ছেন।’ এ কথা শুনতেই মিগার শ্রেষ্ঠী ক্রোধে ফেটে পড়লেন। তিনি ভোজনের থালা সরিয়ে রাখলেন এবং পুত্রবধু বিশাখাকে ঘর হতে বের করে দেওয়ার নির্ণয় নিলেন। তিনি বললেন,-‘ এক্ষুনি তুমি আমার ঘর হতে বের হয়ে যাও। তুমি এ ঘরে থাকার উপযুক্ত বধু নও।’
তখন বিশাখা শ্বশুর মশাইকে বললেন-‘ পিতাজী, আপনি আমাকে রাস্তা হতে তুলে আনেনি যে, আপনি বললেই আমি বের হয়ে যাব। আমার পিতৃপক্ষের এবং আপনার পক্ষের গণ্যমান্য লোকদের সাক্ষী রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে এনেছেন। আপনি তাঁদেরকে ডেকে বিচার দিন। তাঁদের বিচারে যদি আমি দোষী সাব্যস্থ হই, তাহলে নিশ্চয় আমি চলে যাব। না হয় যাব কেন।’
অত:পর মিগার শ্রেষ্ঠী উভয় পক্ষের প্রামাণ্য লোকদের নিয়ে পন্চায়েতের মত সালিসী বৈঠক করলেন। বৈঠকে শ্বশুর মিগার শ্রেষ্ঠী সবার সামনে স্বীয় নির্ণয় শুনিয়ে বললেন যে, এ পুত্রবধু আমার সাথে এরকম ব্যবহার করেছে, আমার এ প্রতিষ্ঠিত পরিবারে সে থাকার উপযুক্ত নয়। সে এক ভিক্ষুর সামনে আমাকে অপমান করেছে। স্বয়ং নিজের হাতে তাজা গরম ভোজন রান্না করে আমাকে খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু ভিক্ষুকে বলছিল, আমার পিতাজী বাসী খাবার খাচ্ছেন।’
উপস্থিত বিজ্ঞ বিচারকগণ বিশাখার কাছ হতে জানতে চাইলেন-‘ বিশাখা! তোমার শ্বশুর মশাই যে অভিযোগ করছেন, তা কি সত্যি?’
উত্তরে বিশাখা বললেন-‘ আমার শ্বশুর মশাই সত্য বলছেন। কিন্তু আমার বলার অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করছেন।’
আবার মিগার শ্রেষ্ঠী মাঝখানে বলতে লাগলেন-‘ আমার ক্রোধ আসার কারণ ইহাই একমাত্র নয়। বরং আরও কিছু কথা আছে। যখন পুত্রবধু তার পিত্রালয় হতে এখানে আসার জন্য বিদায় নিচ্ছিল, সে সময় তার পিতা ধনন্জয় শ্রেষ্ঠী তাকে কু-মন্ত্রনা দিয়ে কানভারি করে পাঠিয়েছে। তার পিতা তাকে দশটি বাক্য বা কথা শুনিয়েছে। সেগুলি আমি পাশে থেকে চুপিসারে শুনে ফেলেছি। আমি পর্দার অন্তরালে ছিলাম, যখন তার পিতা কান ভারি করার জন্য তাকে কথাগুলো বলছিল। তার পিতা বলছিল-‘ ঘরের আগুন বাহিরে নেবে না।’ এখন আপনারা বলুন যে, যদি কেহ চুলা জ্বালানোর জন্য আগুন চাইতে আসে, তাকে কি আগুন দেবনা?’ এগুলো কি পাড়া – প্রতিবেশীর সাথে শত্রুতা বাড়ানোর শিক্ষা হল না!’

বিজ্ঞ জেষ্ঠ বিচারকগণ বিশাখা হতে জিজ্ঞাসা করলেন-‘ তোমার পিতা কি তোমাকে সত্যিই এ সমস্ত কথা বলেছিল?’
বিশাখা সত্য ও ধর্মবল মনে রেখে সম্পূর্ণ আত্ম বিশ্বাসের সাথে বলেছিল-‘ হাঁ, আমার পিতা আমাকে কথাগুলো বলেছিলেন। কিন্তু তার অর্থ সেরকম নয়, যা আমার শ্বশুর মশাই আপনাদেরকে বলছেন। আমার পিতাজীর বলার তাৎপর্য ইহাই ছিল যে, যদি নিজের শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, দেবর-ননদ, পতির যে কারো কেহ নিন্দা বা অপ্রশংসা করলে, বা পরস্পর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে, তা যেন আমি বাহিরে গিয়ে না বলি। ঘরে নিজেদের মধ্যে যদি কেহ কারো বিরুদ্ধে বলে থাকে, তাও যেন বাহিরে প্রকাশ না করি। তাই হল ঘরের আগুন বাহিরে না নেওয়ার তাৎপর্য।
নিজের পুত্রবধুর মুখ হতে তার পিতার জ্ঞানগর্ভ উপদেশের ব্যাখ্যা শুনে মিগার শ্রেষ্ঠী হতচকিত হয়ে গেলেন। এর পর বিশাখা দ্বিতীয় উপদেশের ব্যাখ্যা করলেন-

২। ‘বাহিরের আগুন ঘরে আনিওনা’
আমার পিতার ইহা বলার তাৎপর্য হল- আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, দেবর-ননদ বা পতি অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ীর যে কোন পরিজনের যদি বাহিরের কেউ নিন্দা করে, বা কোন অপবাদ বলে তা শুনে আমি যেন শ্বশুরালয়ে এসে না বলি। ইহার চেয়ে বড় আগুন আর নাই। তাতে দু’পক্ষে ঝগড়া বিবাদ লেগে যাবে। এ কারণে পিতাজী বলেছিলেন, বাহিরের আগুন ঘরে আনিওনা।

৩। ‘যে দেয় তাকে দেবে’ তৃতীয় উপদেশ–
পিতাজী এ কথা বলার মানে ইহাই যে, পাড়া-প্রতিবেশী ও আশে-পাশের আত্মীয়-স্বজন যদি কেহ কোন বস্তু বা কিছু অর্থ ধার-উধার চায়, তাকেই দিতে বলেছেন, যিনি যথা সময়ে সেগুলি ফেরত দিয়ে থাকেন। যে দেয়, তাকে দেওয়ার ইহাই হল তাৎপর্য।

৪। ‘যে দেয়না, তাকে দিওনা’ চতুর্থ উপদেশ-
পিতাজী বলেছিলেন-‘ কখনও আশে-পাশের পাড়া -প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যদি কোন বস্তু বা কোন অর্থ ধার-উধার নিয়ে সামর্থ থেকেও যথাসময়ে ফেরত দেয় না, তাকে দেবে না। যে দেয়না, তাকে দেবেনা বলার ইহাই তাৎপর্য।

৫। ‘যে দেয় তাঁকেও দেবে এবং যে দেয়না তাঁকেও দেবে’ পন্চম উপদেশ:-
পিতাজী এ কথা বলার অর্থ হল যে, জীবনে কিছু কিছু আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া -প্রতিবেশী এমন থাকেন যে, যাঁদের কেবল দেওয়াই হল কর্তব্য। যাঁরা গরীব ও ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য নাই। তাঁরা ছাড়াও আরও কিছু লোক আছেন, যাঁদের কাছ হতে ফেরত পাওয়া প্রত্যাশা করা যায় না। যেমন, ছেলে-মেয়ে, জামাই, দেবর-ননদ, ভাবী, ভাগ্নে, ভাগ্নী, ভিক্ষু-শ্রামণ, সাধু-সন্ন্যাসী। তাঁদেরকে দেওয়ার সময় আবার ফেরত পাওয়ার আশায় দেওয়া উচিত নয়। তাঁরা ফেরত দিলেও ভাল, না দিলেও অসন্তুষ্ট হতে নেই। এ জন্য পিতা বলেছেন-‘ যে দেয়, তাঁকেও দেবে, না দিলেও তাঁকে দেবে।

৬। ‘সুখে উপবেশন বা বসা’ ষষ্ট উপদেশ
এ উপদেশে পিতাজী বুঝাতে চেয়েছেন-‘ ঘরে কাজ-কর্ম সেরে যখনই বসবে, এমন স্থানে বসবে যাতে শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, ভিক্ষু-শ্রামণ, প্রভৃতি গুরুজন বর্গ হঠাৎ আসলে তাড়াহুড়া করে যেন উঠতে না হয়। তাঁদের দৃশ্য পথে গিয়ে বসতে নেই। সুখে বসার তাৎপর্য হল ইহাই।

৭। ‘সুখে খাওয়া’ সপ্তম উপদেশ
পিতাজী এ উপদেশে শিক্ষা দিয়েছেন যে, শ্বশুর-শাশুড়ী, পতি, বাচ্চা, বড় গুরুজন, ঘরের কাজ-কর্মের লোক, গৃহপালিত পশু ইত্যাদিকে খাওয়ানোর পরে নিজেকে আহার করতে বলেছেন। সুখে আহারের ইহাই হল মাহাত্য।

৮। ‘সুখে নিদ্রা যাওয়া’ অষ্টম উপদেশ
সুখে নিদ্রা যাওয়ার উপদেশে পিতাজী শিক্ষা দিয়েছেন যে, প্রতিদিন রাত্রে শয্যা গ্রহণের পূর্বে শ্বশুর-শাশুড়ী, বড়জনদের আহার হয়েছে কিনা, কারো ঔষধ-পথ্যাদি নেওয়ার থাকলে, তা নেওয়া হয়েছে কিনা, ছোট জন বা বাচ্চারা শুয়েছে কিনা, ঘরের দরজা-জানালা যে গুলো বন্ধ করার সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে কিনা, আলমিরা, সিন্ধুক যেখানে মুল্যবান অলঙ্কার বা ধন-সম্পদ গচ্ছিত থাকে সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে কিনা, তা সব যাচাই করে শুতে বলেছেন। সুখে নিদ্রা যাওয়ার ইহাই হল গূঢ়ার্থ।

৯। ‘অগ্নির পরিচর্যা করবে’ নবম উপদেশ:
শ্বশুর-শাশুড়ি প্রভৃতি বড়জন, সাধু-সন্ন্যাসী, ভিক্ষু-শ্রামণ এসকল গুরুজনের সবাইকে অগ্নির মত জানবে। তাঁদের কাছ হতে নিজেকে সবসময় উচিত দূরত্বে অবস্থান করবে। তাঁদের সাথে এমন আচরণ করবেনা, যাতে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা হয়। তাঁদের কাছ হতে অতি দূরত্বেও থাকবে না, আবার অতি নিকটেও যাবেনা। শ্রদ্ধা, সম্মান ও আদব-কায়দা বজায় থাকে মত অবস্থান করবে। যে রকম খাদ্য রান্না করার সময় আগুনের উচিত দূরত্বে অবস্থান করে রান্না করা হয়, সে রকম গুরুজনদেরকে বা পতির সাথে উচিত ব্যবহার হয় মত জানবে।

১০। ‘কুল দেবী-দেবতাদের পূজা করবে’ দশম উপদেশ:
আমার পিতার এ উপদেশের সারমর্ম হল- মাতা-পিতা, শ্বশুর-শাশুড়ী, জেষ্ঠজন, সাধু-সন্ন্যাসী, ভিক্ষু-শ্রামণ, প্রভৃতিকে দেব-দেবী মনে করে পূজা ও শ্রদ্ধা করতে হবে। তাঁদের আবশ্যক বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে পুরা করতে হবে। তাঁদের সাথে কখনো মুখে মুখে তর্ক করতে নেই। তাঁদের অমর্যাদা ও অপমান হয় এ রকম কোন আচরণ করতে নেই। ইহাই হল কুল দেব-দেবীকে পূজা করার তাৎপর্য।
এ দশ কূট কথার ব্যাখ্যা শুনে মিগার শ্রেষ্ঠী আশ্চর্যান্বিত হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেললেন। তিনি পুত্রবধুর সাথে যে অন্যায় আচরণ করেছেন, তজ্জন্য তাঁর অনুতাপ-অনুশোচনা আসতে লাগল।
শ্বশুর আবার বলতে লাগলেন, আপনারা জিজ্ঞাসা করুন যে, আমার পুত্রবধু একজন ভিক্ষুর সামনে আমি বাসী খাবার খাচ্ছি, এরকম মিথ্যা ভাষণ কেন করেছে?’
বিচারকগণ জিজ্ঞাসা করলেন-‘ পুত্রী! তুমি তো দেখছি বড়ই বুদ্ধিমতী ও জ্ঞানী। কিন্তু তোমার শ্বশুরকে বাসী খাচ্ছে বলে মিথ্যা আরোপ করেছ কেন?’
তখন বিশাখা সম্পূর্ণ ধর্ম ও সত্যবলে বলীয়ান হয়ে সাহসের সাথে বলতে লাগলেন-‘ আমার এ কথার তাৎপর্যও আমার শ্বশুর মশাই বুঝতে পারেননি। সেজন্য ভুল ধারণা পোষণ করে আছেন। আমার এ কথা বলার তাৎপর্য হল যে, শ্বশুর মশাই সোনা-রূপার থালায় খাবার খেয়ে থাকেন। তিনি এতই ধনাঢ্য যে, শ্রাবস্তীতে তাঁর তুলনা অন্যদের সাথে হতেই পারেনা। তাঁর যে কত দাস-দাসী অনুচর পরিচারিকা রয়েছে, যা তাঁকে সম্ভ্রান্তের আসনে বসিয়েছে। তাঁর অনেক যশ-কীর্তিও রয়েছে। কিন্তু এত কিছু থাকার পরেও তিনি কোন দান-ধর্ম করেননা। এজন্মে তাঁকে দান -ধর্ম করতে দেখছিনা। তিনি যে অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদ, সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করেছেন, তা পুন্য কর্মের ফলেই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমি মনে করি যে, নিশ্চিত তিনি পূর্বজন্মে অনেক পুন্য কর্ম করেছেন, যার কারণে এ জন্মে পুর্ণ বিত্ত-বৈভবে অট্টালিকায় জীবন-যাপন করছেন। এজন্য আমি বলেছি যে, পিতাজী অর্থাৎ শ্বশুর মশাই বাসী খাবার খাচ্ছেন।’
এপর্যন্ত শুনার পর মিগার শ্রেষ্ঠী পূর্ণরূপে পুত্রবধুর নিকট আত্ম-সমর্পণ করে দিলেন। এবং বলতে লাগলেন-
‘ ইহাও আমার কোন জন্মের পুণ্যকর্মই হবে যে, এরকম ধর্মজ্ঞ ও জ্ঞানী পুত্রবধু লাভ করেছি। আজ হতে সে আমার পুত্রবধু নয়, বরং সে আমার জ্ঞানের মাতা হয়েছে। তখন হতে বিশাখা মিগার মাতা নামে পরিচিতা হয়েছিলেন।
বর্তমানে শ্রাবস্তীতে যখন আমাদের কদম পড়ে তখন বিশাখা মাতার পুন্যস্মৃতির কথা মনে যায়। তিনি তৎকালীন সময়ে সাতকোটি টাকা ব্যয় করে পূর্বারাম বিহার তৈরী করিয়ে বুদ্ধকে এবং সংঘকে দান করেছিলেন। সে বিহারে বুদ্ধ ছয়টি বর্ষাবাস যাপন করেছিলেন। তিনি বুদ্ধ প্রমুখ সকল-ভিক্ষু-শ্রামণের মাতা সদৃশ ছিলেন। যে কোন সময়-যে কোন সহযোগিতা তিনি ধর্মের প্রচার-প্রসারে অকৃপণভাবে করে গিয়েছেন। তাঁর প্রভাবে মিগার শ্রেষ্ঠী ও তাঁর পরিবার সদ্ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। মাতা তথা মহাউপাসিকা বিশাখার দানের কোন তুলনা নাই। দান পারমীতে ধনী বিশাখা মিগারমাতা নামে বৌদ্ধ বাগ্ময়ে অমর হয়ে আছে অদ্যাবধি।

29/11/2024

অষ্টশীল পালনের সুফল।
অষ্টশীল পালনের সুফল অনেক। অবিদ্যার কারণে মানুষের মধ্যে তৃষ্ণা বা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। তৃষ্ণা বা আকাঙ্ক্ষার কারণেই লোভের জন্ম হয়। লোভের বশর্তী হয়ে মানুষ নানা রকম অসৎ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে নানারকম দুঃখ ভোগ করে। অষ্টশীল পালনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সংযম, সততা, শৃঙ্খলা, নম্রতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য্য প্রভৃতি গুণাবলির বিকাশ ঘটে। লোভ-তৃষ্ণা দূরীভূত হয়। আত্মসংযম ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়। নীরোগ ও দীর্ঘ জীবন লাভ হয়। ধর্ম চেতনা জাগ্রত হয় এবং ধর্ম সম্মত জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ হয়। এছাড়া, নৈতিক ও মানবিক জীবন গঠন করা যায়। পারিবারিকভাবে অষ্টশীল পালনের অভ্যাস গড়ে তুললে পারিবারিক জীবনও সুখের হয়।

29/11/2024

তোমার যদি নির্বাণ যাওয়ার ইচ্ছে থাকে। পূজ্য ভান্তের বাণী।

আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল বাণী।১। অজ্ঞানীর সেবা না করা২। জ্ঞানী বা সত্ ব্যক্তির সেবা করা৩। পূজনীয় ব্যক্তির পূজা করা৪। প্রতির...
29/11/2024

আটত্রিশ প্রকার মঙ্গল বাণী।

১। অজ্ঞানীর সেবা না করা
২। জ্ঞানী বা সত্ ব্যক্তির সেবা করা
৩। পূজনীয় ব্যক্তির পূজা করা
৪। প্রতিরুপ দেশে বাস করা
৫। পূর্বকূত পূণ্য স্বরণ করা
৬। নিজেকে সঠিক পথে পরাচালিত করা
৭। বহু বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা
৮। বিবিধ শিল্পে শিক্ষার জ্ঞান লাভ করা
৯। বিনয়ী হওয়া
১০। সুভাষিত (সুন্দর) বাক্য বলা
১১। মাতা পিতার সেবা করা
১২। স্ত্রীর পূত্রের ভরণ পোষণ করা
১৩। সত্ কর্মের দ্বারা জীবিকার্জন করা
১৪। দান দেওয়া
১৫। কায় বাক্য মনে ধর্ম চর্চা করা
১৬। জ্ঞাতি বর্গের উপকার করা
১৭। পূণ্যকর্ম সম্পাদন করা
১৮। পাপকর্মে রত না হওয়া
১৯। পাপকার্য হতে দূরে থাকা
২০। মদ বা মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকা
২১। অপ্রমত্তভাবে ধর্ম জীবন যাপন করা
২২। গুণী ব্যক্তিরগৌরব করা
২৩। তাদের নিকট নম্র থাকা
২৪। প্রাপ্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট থাক
২৫। উপকারীর উপকার স্বীকার করা
২৬। যথাকালে ধর্মশ্রবণ করা
২৭। ক্ষমাশীল হওয়া
২৮। গুরুজনের আদেশ উপদেশ পালন করা
২৯। ধর্মগুরুর (ভিক্ষু-শ্রমন) দর্শন করা
৩০। যথাসময়ে ধর্মালোচনা করা
৩১। ধ্যান করা
৩২। ব্রম্ম চর্য পালন করা
৩৩। চার আর্যসত্য দর্শন করা
৩৪। নির্বাণ সাক্ষাত্ করা
৩৫। অষ্ট লোকধর্মে অবিচলিত না থাকা
৩৬। শোকহীন হওয়া
৩৭। লোভ দ্বেষ মোহরুপ কলুষহীন হওয়া
৩৮। ভয়হীন হওয়া। এই সমস্থ মঙ্গল কর্ম সম্পাদনে গৃহীগণ সুখে শান্তিতে ও নিরাপদে জীবন যাপন করা যায়।

বুদ্ধকে আলবক যক্ষ প্রশ্নঃ?১। জগতে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ কি?উত্তরঃ জগতে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ শ্রদ্ধা।২। জগতে কি কর্ম করলে সুখি...
29/11/2024

বুদ্ধকে আলবক যক্ষ প্রশ্নঃ?
১। জগতে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ কি?
উত্তরঃ জগতে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ শ্রদ্ধা।
২। জগতে কি কর্ম করলে সুখি হয়?
উত্তরঃ ধর্মাচরণ করলে সুখি হয়।
৩। জগতে সবচেয়ে উত্তম আরস কি?
উত্তরঃ জগতে সবচেয়ে আরস (স্বাদ) সত্য।
৪। জগতে সবচেয়ে উত্তম বেঁচে থাকার উপায় কি?
উত্তরঃ জগতে স্মৃতি প্রজ্ঞা নিয়ে বেঁচে থাকা সবচেয়ে উত্তম।
৫। ওঘকে কিভাবে পার করতে হয়?
উত্তরঃ শ্রদ্ধার সহিত ওঘকে পার করতে হয়।
৬। ভব সংসারকে কিসের দ্বারা পার করতে হয়?
উত্তরঃ অপ্রমাদের সহিত পার করতে হয়।
৭। দুঃখকে কিভাবে দূর করতে হয়?
উত্তরঃ বীর্যের সাথে দূর করতে হয়।
৮। চিত্তকে কিভাবে পরিশুদ্ধ করতে হয়?
উত্তরঃ প্রজ্ঞার দ্বারা পরিশুদ্ধ করতে হয়।
৯। প্রজ্ঞা কিভাবে লাভ করা যায়?
উত্তরঃ জানার ইচ্ছা, শ্রবনের ইচ্ছা, ধারণ করার ইচ্ছা থাকলে প্রজ্ঞা লাভ হয়।
১০। ধন কীভাবে লাভ করা যায়?
উত্তরঃ প্রচেষ্টা থাকলে ধন লাভ করা যায়।
১১। যশ কীর্তির লাভের কি করতে হয়?
উত্তরঃ বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করা।
১২। কল্যাণমিত্র লাভের জন্য কি করতে হয়?
উত্তরঃ দান করা।
১৩। কিসের ধর্মাচরণ করলে পরকালে সুখি হতে পারে?
উত্তরঃ সত্য বীর্য প্রজ্ঞা ত্যাগেয় সুখি হতে পারে।

পূজ্য ভান্তের পবিত্র দেহ।🙏🙏🙏
29/11/2024

পূজ্য ভান্তের পবিত্র দেহ।🙏🙏🙏

Address

Rajbana Vihar
Rangamati
4500

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bana Bhante Gallery posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Bana Bhante Gallery:

Videos

Share

Category

Nearby media companies


Other Video Creators in Rangamati

Show All