![গল্পটা মন দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।-খালা ভাত খাবেন?-হ বাবা। অল্প কয়ডা ভাত খাইতাম।-বসেন চেহারে।-ভাত খাওনের কী কী আছে বাবা ?-...](https://img5.medioq.com/224/157/1096759882241571.jpg)
28/12/2024
গল্পটা মন দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।
-খালা ভাত খাবেন?
-হ বাবা। অল্প কয়ডা ভাত খাইতাম।
-বসেন চেহারে।
-ভাত খাওনের কী কী আছে বাবা ?
-ইলিশ মাছ, পাঙ্গাশ মাছ, রূপসা মাছ, মুরগী আর ভাজি। কী দেবো আপনাকে।
-পাতলা ডাইল নাই বাবা। আমার খালি ডাইল হইলেই হইবে।
-আছে। শুধু ডাল দিয়া খাবেন কীভাবে।সাথে ভাজি দেই?
-না বাবা। আমার কাছে টাহা নাই অত।আমারে পলিথিনে দুগ্গা ভাত আর এক চামচ ডাইল দেও। আমি খাইতে পারমু।ডাইল না দেলেও পানি দিয়া গিল্লা খাইতে পারি আমি। খালি দুগ্গা ভাত দেও আমারে বাবা।
-আপনার কাছে তো টাকা নেই।
ভাতের দাম দিবেন কিভাবে?
-এক মুঠ ভাতেরও দাম দেওয়া লাগবে বাবা?
একথা শুনে শান্ত ভিতরে গেলো ভাত আনতে।
ভাতের পাশে একটু ভাজি আর এক টুকরা মাংস এবং ঝোল নিয়ে প্লেটটা এগিয়ে দিলো।
-ও বাবা এয়া কি দেছো আমারে।
আমার কাছে তো টাহা নাই।
খালি ভাত দুগ্গা দেও আমারে।
আমি পানি দিয়া খাইতে পারমু।
-আপনি খেয়ে নিন। দাম দিতে হবে না।
বাহিরে প্রচন্ড রোদ। চৈত্র মাসের রোদ।সেদিকে তাকিয়ে শান্ত কিছু একটা ভাবতে লাগলো।
শান্তদের ভাতের হোটেলে সব ধরনের লোকই ভাত খেতে আসে।
তবে হাজেরা খাতুনের মত লোক আজ প্রথম এসেছে।
হাজেরা খাতুনের খাওয়া হয়ে গেছে।সে সামনে আসতেই শান্ত তাকে একটা টিসু পেপার এগিয়ে দিলো হাত মোছার জন্য।কিন্তু সে সেটা না নিয়ে তার কাপড়ের আঁচল দিয়েই হাত মুখ মুছে নিলো।
শান্ত খেয়াল করলো তার চোখ লাল।সে ভাবলো হয়তো তার ঝাল লেগেছে।কিন্তু তা নয়।তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।
সে জল হয়তো শান্তকে কিছু বলতে চাচ্ছে।
-আপনি কান্না করছেন কেনো ?
-কান্দি না রে বাপ। আজইগো অনেক দিন পরে এমন কইরা দুগ্গা ভাত খাইলাম।ঝোলের স্বাধ কেমন হয় তা অনেকদিন পর আমি বুঝতে পারছি।
-কেন আপনি বাসায় ভাত খান না।
-খাই বাবা কোনোভাবে চাউল সেদ্ধ দিয়া খাই। ফেনভাত। আইজ চাউল নাই।
শরীর ভালোনা তাই দেরি কইরা খয়রাতে বাইর হইছি। কেউ চাউল দেয় নায়।
বাবা তুমি যা খাওয়াইছো এতে আমার ২দিন না খাইলেও হইবে।
-আপনার স্বামী ছেলে-মেয়ে নাই?
-স্বামী মরছে ক্যান্সারে। পোলা আছিলো একটা। কিছু দিতে পারতাম না। আমারে মারধোর কইরা চইলা গেছে হেয়াও প্রায় দশ বছর হইলো।
-আপনি থাকেন কোথায়? আর আপনার নাম কী?
-পলাশপুর বস্তিতে থাহি।
নাম আমার হাজেরা খাতুন।
হাজেরা খাতুনের পড়নের জীর্ণ শীর্ণ শাড়ি এবং তাতে ময়লা মাখা।
তাকে হোটেলের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দু'জন নাক চেপে কোনোরকমে হাজেরা খাতুনের পাশ দিয়ে ভিতরে গিয়ে বসলো।
-বাবা আল্লায় তোমারে তৌফিক দিক।
দোয়া করি ভালো খাইকো সবসময়।
আমি যাই বাবা।
এ কথা বলেই হাজের খাতুন চলে গেলেন এবং শান্ত কিছুক্ষণ তার চলে যাওয়া দেখলো।
এরপর সে হাজেরা খাতুনের টেবিল পরিষ্কার করতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো।
টেবিলের আশেপাশে ভাত ছড়ানো নেই।একজন ভদ্রলোক যেভাবে পরিপাটি এবং গুছিয়ে খাবার খায় হাজেরা খাতুন ঠিক সেই ভাবেই গুছিয়ে খাবার খেয়েছে।সবথেকে অবাক করা ব্যাপার হলো গ্লাসের নিচে পাঁচ টাকার একটি নোট চাপা দেওয়া ছিলো।
-কিরে দুই দিন ধরে তোর মুখটা এমন ফ্যাকাসে লাগছে কেনো।
কিছু হইছে তোর?
'রুদ্র শান্তর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
-হুম। একটা বিষয় নিয়ে ভাবতেছি।
-কী বিষয় বল তো।
শান্ত হাজের খাতুনের কথা সব রুদ্রকে খুলে বললো।
শান্ত চায় হাজেরা খাতুনের সেই পাঁচ টাকা ফেরত দিতে এবং সাথে কিছু চাল, ডাল আরো কিছু খাবার নিয়ে যাবে।
-চল তাহলে।কালকেই চল।কালকে সোমবার আমাদের দোকান বন্ধ ফ্রি আছি।বিকেলের দিকে চল।
রুদ্র বললো,
-ঠিকাছে।চল কাল বিকেলেই যাবো।
সোমবার বিকেলেই তারা পলাশপুর রওনা হলো।সাথে চাল ২৫ কেজি।
ডাল ৫ কেজি। আলু ৫ কেজি। এছারাও পিয়াজ, রোসুন, সাবান, চানাচুর, ভালো মানের বিস্কিট এবং সেই পাঁচ টাকা।
পলাশপুর যেতে যেতে প্রায় বিকেল পাঁচটা বেজে গেলো।
বিশাল বড় বস্তি, তার ভেতর একজনকে খুজে বের করা খুব সোজা কাজ নয়।
শান্ত এবং রুদ্র লোকজনের কাছে খোজ করতে লাগলো।
কিন্তু কেউ হাজেরা খাতুনের খোজ দিতে পারলো না।
প্রায় সন্ধ্যার দিকে একজন মহিলা পাওয়া গেলো যে কিনা হাজেরা খাতুনকে চেনে।
-আমিতো হাজেরা বুর লগে মাঝে মাঝে খয়রাত করতে যাইতাম।
মানুষডা অনেক ভালো আছিলো।
-আমরা তার কাছে যেতে চাই তার ঘড়টা আমাদের একটু দেখিয়ে দিন। শান্ত বললো।
-সে তো মইরা গেছে।
ঘড়ে যাইয়া কী করবা তোমরা।
-মরে গেছে মানে?
গত শুক্রবার আমাদের দোকান থেকে সে ভাত খেয়ে এসেছিলো।
-শনিবার রাইতে আমি তার লগে দেখা করতে যাই।
দড়জা টাহাইছি অনেকবার ডাকছিও কিন্তু হে দড়জা খোলে নায়।
হেরপর কয়েকজন বেডারে ডাক দিয়া দড়জা খোলাইছি।
দেহি তার দেহডা মাডিতে পইরা আছে।হাতের ধারে পানির গ্লাস পইরা আছে।
মনে হয় পানি খাইতে যাইয়াও খাইতে পারে নায়।
-তারপর কী করলেন?
-কী আর করমু। হের তো পোলা মাইয়া স্বামী কিছুই নাই। এইহানের লোকজনই তারে মাডি দেছে গোরোস্তানে।
-আমি একটু সেখানে যেতে চাই।ভাড়ি কন্ঠে শান্ত বললো।
-চলো।কাছেই তো।
শান্ত হাজেরা খাতুনের কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইলো কবরের দিকে।
তারপর পকেট থেকে সেই পাঁচ টাকার নোট বের করে একটা ইট দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে দিলো তার কবরের পাশে।
আর বললো এক মুঠো ভাতের দাম আমি রাখতে পারবো না খালা।
বিঃ দ্রঃ কখনো যদি কাউকে সাহায্য করার সুযোগ আসে সেই সুযোগটা মিস করবেন না টাকা সবাই কামাতে পারে।
কিন্তু সাহায্য সবাই করতে পারেনা।
#সংগৃহীত