14/09/2024
আপনি কাঁদবেন, আপনাকে কাঁদতেই হবে। না কেঁদে সামনে আগাতে পারবেন না। যদি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেন।
উম্মে মা'বাদ রাসূলুল্লাহকে [সাঃ] একবার মাত্র দেখেছিলেন। কিন্তু যে বর্ননা তিনি দিয়েছেন তা এখন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহর [সাঃ] সম্পর্কে দেওয়া শ্রেষ্ঠ বর্ননা।
'আমি তাকে দেখিছি, উজ্জ্বলদীপ্ত চেহারা, সুন্দর তাঁর গড়ন, সুদর্শন তাঁর মুখশ্রী, ছিপছিপে তাঁর শরীর। মাথাটা খুব ছোট নয়, বরং দেখতে তিনি অভিজাত এবং সুপুরুষ। চোখদুটো তাঁর ঘনকালো, পাঁপড়িগুলো টানাটানা।
বুদ্ধিদীপ্ত তাঁর চেহারা, ভরাট তাঁর কন্ঠস্বর। ভ্রু-যুগল উঁচু আর ধনুকের মতো বাকাঁনো, চুলগুলো পরিপাটি। তাঁর গ্রীবা বিস্তৃত এবং দাড়ি বেশ ঘন। তাঁর গাম্ভীর্য তাঁর আত্নমর্যাদা প্রকাশ করে, তাঁর কথা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। তাঁর কথাগুলো মনোমুগ্ধকর আর দৃঢ়, চটুল কিংবা ফেলনা নয়।
তাঁর প্রতিটি শব্দ যেন সুতোয় বাঁধা মুক্তোর মতো মসৃণ। দূর থেকে তাকে দেখতে যেমন উজ্জ্বল আর আকর্ষণীয়, কাছ থেকে দেখলেও তাঁকেই সবচেয়ে সুদর্শন লাগে। উচ্চতায় তিনি মাঝারি। খুব লম্বাও নন আবার খাটোও নন। বাকি তিনজনের মাঝে তিনিই সবচেয়ে সুন্দর। তিনি ছিলেন তাঁর সঙ্গীদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি যখন কথা বলতেন, তারা মন দিয়ে শুনতো, তিনি যখন কিছু আদেশ দিতেন তা পালন করতে তারা ছুটে যেতো।
তিনি কখনো মুখ গোমড়া করেননি। আর কেউ একবারও তাঁর কথার বিরোধিতা করেনি।
~যাদুল মা'আদ, ২য় খন্ড।
_______
রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ [সাঃ] হচ্ছেন এমন একজন, চৌদ্দশ বছর পরেও যাকে নিয়ে মুগ্ধতা এতটুকু কমেনি। যারা তাকে জেনেছে, তারা তাঁকে ভালোবেসেছে ; যত বেশি জেনেছে তত বেশি ভালোবেসেছে। যারা তাঁকে জানেনি, তাঁরা ভালোবাসার নদী দেখলেও মহাসমুদ্র দেখেনি। না- দেখেও যাকে পৃথিবীর মানুষ সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছে, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃ]।
গল্পের নায়কদের কথা মানুষ খানিক বাদেই মানুষ ভুলে যায়, ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের প্রভাব টিকে থাকে বড়জোর কয়েকটা বছর, কিন্তু রাসূলুল্লাহ [সাঃ] এমন একজন যাকে এতো বছর পরেও লোকেরা ভালোবাসে, তাঁর অনুসরণ করে, তাঁর সম্মানে নিজের জীবন দিয়ে দেয়। জীবদ্দশায় আবু জাহেলরা তাঁকে ভয় করতো, মৃত্যুর পরে আবু জাহেলের উত্তরসূরিরা তাঁর অনুসারীদের ভয় করতো।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে জাতির কাছে ‘মুহাম্মাদ' [সাঃ] আছে, সে জাতিকে আজ টং এর মামা থেকে শুরু করে বারাক ওবামা - প্রত্যেকেই দিকনির্দেশনা দিতে ব্যতিব্যস্ত। মুসলমানদের আজকে অমুসলিমরা ইসলাম শেখায়, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির সবক দেয়। বিষয়টা লজ্জা আর গ্লানির।
__________
আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃ] কে চিনলেও তাঁকে আমরা জানি না। জানিনা বলেই তিনি কারো কাছে নিছক একজন ‘ভালো মানুষ’, আর দশজন মনিষীর মতো, যারা কিনা কিছু দার্শনিক তত্ত্ব আর নীতিকথা বলে খালাস! কিংবা কারো কাছে তিনি একজন ‘ধর্মপ্রচারক', কিছু ভালো ভালো কাজ করেছেন, এই যা!
কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন রাসূল। তিনি একটা গ্লোবাল মিশন নিয়ে এসেছিলেন এবং আমরা সেই মিশনের অংশ। আল্লাহ এই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিকে পাঠিয়েছেন আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ে পথ দেখানোর জন্য। তিনি মানুষকে সেই পথ দেখিয়ে গেছেন, যে পথ খুঁজে পেতে আমাদের বুদ্ধিজীবী-দার্শনিক - বিজ্ঞানী - আমলারা মাথা কুটে মরে, কিন্তু সমাধান খুঁজে পায় না।
এই সমস্যার সমাধান একটিই। তা হলো রাসূলুল্লাহকে [সাঃ] জানা। আর জানার জন্যই তাঁর সীরাহ পড়া। রাসূলুল্লাহর [সাঃ] সীরাহ হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর জীবন, তাঁর নবুওয়াত, তাঁর নেতৃত্ব এবং তাঁর চারপাশের মানুষগুলো নিয়ে একটি চমৎকার কাহিনীপ্রবাহ।
সীরাহ পড়লে ইনশা আল্লাহ, ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সংকীর্ণ ধারনার দেওয়াল গুলো ভেঙে যাবে। রাসূলুল্লাহর [সাঃ] জীবন সম্পর্কে জানলে, ইসলামবিদ্বেষীদের প্রপাগাণ্ডা শুনে আমাদের মনে যে ‘খচনচ' হয় সেটা দূর হয়ে যাবে যাবে, বিইযনিল্লাহ। আমরা জানব রাসূলুল্লাহ [সাঃ] কত চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন।
তিনি কারো মন জয় করতেন, কাউকে রুখে দিতেন, আর কাউকে মোকাবিলা করতেন। নিজের ঘর থেকে শুরু করে যুদ্ধের ময়দান — প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব।
_
যারা তাঁকে ভালোবেসেছে, তাদের জীবন আমূল বদলে গেছে, যে জাতি তাঁর অনুসরণ করেছে, তাদের ভাগ্য বদলে গেছে। এমন একজন মানুষ সম্বন্ধে যদি আমরা না জানি, না মানি, তাহলে তো আমরাই ‘মিস' করলাম!
সীরাহ!
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ❤