25/12/2024
আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
Collected
(৪৪ এর শেষাংশ)
আবির গোলাপ আর চিরকুট টেবিলের উপর রেখে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। এই সুযোগে মেঘ চুপিচুপি আবিরের রুমে আসছে। চিরকুট আর ফুল যেভাবে রেখেছিল সেভাবেই আছে দেখে মেঘের প্রফুল্ল মন সহসা খারাপ হয়ে গেছে। ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। আবির ভাই এখনও দেখে নি ভেবেই মেঘের আনন্দিত বদন বদলে গেছে। মাথা নিচু করে মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে বেলকনিতে হাঁটছে। আচমকা ভারী কিছুর সাথে কপাল ঠেকে। বডি স্প্রের তীব্র ঘ্রাণ নাকে লাগতেই আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে৷ সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটা যে মেঘের একান্ত ব্যক্তিগত প্রিয় পুরুষ তা বুঝতে বাকি রইলো না৷ মেঘের ইচ্ছে করছে এই প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে কিন্তু তা সম্ভব না। অনিচ্ছা স্বত্তেও মাথা তুলে দু কদম পিছিয়ে গেল। মেঘের দৃষ্টি তখনও আবিরের পায়ের দিকে।
আবির সূক্ষ্ম নেত্রে চেয়ে রইলো। মেঘের চুল খোলা, এলোমেলো হয়ে আছে চুল । মশার কামড়ে কপালের দু তিন জায়গায় দাগ হয়ে গেছে। উজ্জ্বল বর্ণের কপালে দাগগুলো লাল টকটকে দেখা যাচ্ছে। আবির খানিক ভেবে হাত দিল মেঘের সুদীর্ঘ চুলের মাঝবরাবর৷ চুলের আগ শুকিয়ে গেলেও মাঝামাঝি আর গুঁড়ার দিকের চুলগুলো এখনও ভেজা । আবিরের কুঁচকানো ভ্রু যুগল একসঙ্গে লেগে গেছে, দাঁত খিঁচে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
" এই অনিয়ম কি সারাজীবন ই করবি? কথা শুনবি না আমার?"
মেঘ শশব্যস্ত চোখে তাকালো আবিরের দিকে। আবিরের ভারী কন্ঠস্বর শুনে মেঘের মুখটা আরও চুপসে গেছে। চাউনিতে শীতলতা। মন জুড়ে তার অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল৷ আবির ভাই চিরকুট দেখে কিভাবে রিয়েক্ট করবেন তাই ভাবছিল। আবিরের হাত তখনও মেঘের চুলে, দ্বিতীয় বার কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বলল,
"কি বললাম আমি?"
আগের কোনো কথায় মেঘের কর্ণকুহরে পৌছায় নি এটা আবিরকে কিভাবে বলবে, নিরুপায় হয়ে মেঘ উল্টো প্রশ্ন করল,
"আমি কি করেছি?"
"অসময়ে শাওয়ার নিছিস কেন? দুদিন পর পর যে মাথা ব্যথায় ভুগিস মনে থাকে না? তোকে সকাল সকাল শাওয়ার নিতে বলছিলাম। কথা মানিস না কেন?"
একদমে কথাগুলো বলল আবির। চোখে সাফ রুষ্টতা। মেঘের অনিয়ম সহ্য করতে পারে না সে। মেঘ মনে মনে উত্তর সাজাচ্ছে। কি বললে এ যাত্রায় উদ্ধার হতে পারবে সেসব ভাবছে। মেঘ উদ্বেগপূর্ণ কন্ঠে বলল,
" ভার্সিটি থেকে এসে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেছে। "
"কাল থেকে শাওয়ার নিয়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবি৷ মনে থাকবে?"
মেঘ ঘাড় কাত করে সম্মতি জানানো। ধমক খায় নি ভেবেই মনে মনে আনন্দিত হলো। আবির মেঘের চুল থেকে হাত সরিয়ে নিল৷ কপাল গুজিয়ে আবির পুনরায় আওড়ালো,
"এভাবে ভালোবাসার নিশান নিয়ে ঘুরতে লজ্জা লাগে না?"
মেঘ থতমত খেয়ে বলল,
"মানে? কার ভালোবাসা? কিসের নিশান?"
আবির নিজের ফোনের সেলফি ক্যামেরা অন করে মেঘের সামনে ধরলো। কপালের মাঝবরাবর মশার কামড়ের তিনটা দাগ, নাকের ডগায় একটা, থুঁতনির পাশ একটা, ২-১ টা গলাতেও আছে। মেঘ কি বলবে উত্তর খোঁজে পেল না। আবির কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
" বুঝলাম মশাকে ভালোবাসিস তাই বলে তাদের নিশান নিয়ে ঘুরতে হবে?"
মেঘ আহাম্মকের মতো চেয়ে আছে। আবিরের মুখের ভঙ্গি দেখে মেঘ ওষ্ঠ উল্টালো। আবির পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে মেঘ তড়িঘড়ি করে বলল,
"আমি মশাকে ভালোবাসি না। "
"তা তো নিশান দেখেই বুঝা যাচ্ছে। " আবিরের ঝটপট উত্তর।
মেঘ আবিরের পেছনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,
"আমি মশাকে না আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কি বুঝেন না?"
আবির মুচকি হাসলো। কথাটা ঠিকই তার কান পর্যন্ত পৌছেছে। সহসা হাসি থামিয়ে ঘাড় হালকা ঘুরিয়ে মেঘের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
"মশারী টানিয়ে ঘুমাইস"
দীর্ঘ কদম ফেলে আবির বেলকনিতে হাঁটছে আর মনে মনে বলছে,
" যে অঙ্গে আবিরের ভালোবাসার নিশান থাকার কথা, সে অঙ্গে অন্য কোনো নিশান আবির সহ্য করবে না। সেটা যদি সামান্য মশারও হয় তবুও না।"
রুমে ঢুকতে ঢুকতে বিড়বিড় করে বলে,
" Mahdiba is mine."
বলেই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিঃশ্বাসের তীব্রতায় বুঝা যাচ্ছে মশার প্রতি তার কতটা হিংসা কাজ করছে। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ঘন্টাখানেক মেঘের চিরকুট আর গোলাপ হাতে বসে রইলো। কল্পনায় কতটা পথ হেঁটে আসছে কে জানে! তারপর একটা ডায়েরির ভাঁজে গোলাপ আর চিরকুট রেখে শুয়ে পরেছে।
ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ চলছে৷ প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্পেশাল ডে। আবির প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই টেবিলে একটা চিরকুট দেখতে পায়। প্রপোজ ডে, চকলেট ডে, টেডি ডে একেকটা ডে তে একেকটা স্পেশাল চিরকুট সাথে চকলেট, টেডি কিছু না কিছু থাকে। কিন্তু আবিরের কোনো প্রতিক্রিয়া মেঘের চোখে পরে না। আবির অফিসে চলে গেলেই মেঘ ছুটে যায় আবিরের রুমে। খোঁজে নিজের দেয়া চিরকুটগুলো কিন্তু কিছুই খোঁজে পায় না। আবিরের রুমের প্রত্যেকটা জিনিসে তালা দেয়া৷ টেবিলের উপর রাখা বই, খাতা সব চেক করেছে কিন্তু কিচ্ছু পায় নি। মেঘ বিড়বিড় করে বলে,
" হি*টলা*র ব্যাটা, জিনিসগুলো যেমন তালা দিয়ে রাখছে, নিজের কলিজাটাকেও তালা মেরে রাখছে। যতই তালা দিয়ে রাখুন না কেন, আমি তালা ভেঙে হলেও আপনার হৃদয়ে জায়গা করে নিবই।"
আজ প্রমিস ডে৷ আবির অফিসের কাজে সকাল সকাল বেড়িয়ে গেছে। মেঘও ভার্সিটিতে এসেছে। মন টা তেমন ভালো না। আশেপাশে সবাই সবাইকে এটা সেটা প্রমিস করছে, মেঘ তাকিয়ে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছে। আবির ভাইয়ের থেকে চকলেট, টেডি ই যেখানে পায় নি, সেখানে প্রমিস ডে তে কোনো প্রমিস আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। এর মধ্যে বন্যা আসছে। মেঘের মন খারাপ দেখে উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
"কি হয়ছে বেবি? মন খারাপ কেন?"
"কিছু হয় নি। এমনি ভালো লাগছে না। "
"এমনি তো না। অবশ্যই কারণ আছে। আবির ভাইয়া কিছু বলছেন? অথবা তানভির ভাই?"
" নাহ। "
"মিনহাজ, তামিমরা কিছু বলছে?"
"নাহ। "
"তাহলে হয়ছে টা কি?"
"আজকে কি ডে জানিস?
বন্যা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
"এসব ডে দিয়ে আমার কি কাজ? আমি জেনে কি করবো? তুই বল"
"আজ প্রমিস ডে। দেখ চারপাশে সবাই সবাইকে প্রমিস করছে। আমায় কেউ প্রমিস করে না৷ "
"ওরে আমার বেবি টা। তোমার প্রমিস লাগবে আগে বলবা না? "
বন্যা নিজের ওড়না থেকে একটা সুতা ছিঁড়ে মেঘের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে পেঁচিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলা শুরু করল,
" আজকের স্পেশাল দিনে আমি বন্যা তোকে প্রমিস করছি আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সারাজীবন অটুট থাকবে৷ জীবনে যতই ঝড় আসুক না কেন, সেই ঝড়ের কবলে দুজন পৃথিবীর দুই মেরুতে চলে যায় না কেন। তারপরও আমাদের বন্ধু একই রকম থাকবে। তোর যেকোন বিপদে আমায় পাশে পাবি। আজেবাজে অজুহাত দেখিয়ে আমি কোনোদিন দূরে সরে যাব না, প্রমিস। Happy Promise Day Baby"
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকে জড়িয়ে ধরেছে। বন্যা ছোট থেকেই খুব ম্যাচিউর একটা মেয়ে। মেঘ আর বন্যার মধ্যে মেঘ ঠিক যতটা দুষ্টু আর উগ্র বন্যা ঠিক ততটায় শান্ত। দুষ্টামির জন্য মেঘ স্যার ম্যামদের কাছে অনেক বকা খেয়েছে । বন্যা যথাসম্ভব মেঘকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। মেঘের রাগ বেশি হওয়ায়, সামান্য ব্রেঞ্চে বসা নিয়েও স্কুল লাইফে বান্ধবীদের সাথে ঝগড়া লেগে যেতো। সেখানেও বন্যায় ঝ*গড়া মিমাংসা করে দিতো। মেঘকে বুঝিয়ে রাগ কন্ট্রোল করতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেঘের চঞ্চলতাও কমে এসেছে। বাড়িতে মীম আর আদির সাথে টুকটাক দুষ্টামি করলেও বাহিরে এখন খুব ভদ্র থাকার চেষ্টা করে। মেঘ যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন, বন্যাকে সে চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারে। বন্যাও মেঘকে বোনের মতোই যত্নে রাখে। এত বছরের বন্ধুত্বেও বন্যা এত সুন্দর করে কখনো প্রমিস করে নি। মেঘও বন্যাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
"আমিও তোকে প্রমিস করছি, আমি যতদিব বেঁচে থাকবো ততদিন তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েই থাকবো। তোর সাথে কত দুষ্টামি করছি, ঝগড়া করছি, রাগ দেখায়ছি ইনফ্যাক্ট এখনও কত রাগ দেখায় তুই কি সুন্দর সব মেনে নেস৷ তোর মতো বান্ধবী পাওয়া সত্যি ই ভাগ্যের বিষয়। আমি খুব ভাগ্য করে তোকে আমার জীবনে পেয়েছি। তোকে কখনোই হারাতে চাই না আমি। খুব ভালোবাসি তোকে "
বন্যাও আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
"আমিও খুব ভালোবাসি।"
মিনহাজ আর তামিম দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলো,
" আহাগো, দুই বান্ধবীর কত প্রেম । "
মেঘ হাসিমুখে নিজের কনিষ্ঠা আঙ্গুল ওদের সামনে ধরে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
"দেখ আমার বেস্টু আমায় প্রমিস করেছে। "
মিনহাজ মাথা চুলকে বলল,
"ও হো আজ তো প্রমিস ডে। মনেই ছিল না। প্রমিস করতে হবে তো!"
মেঘ উঠে যেতে যেতে বলল,
"আমার বেস্টু আমায় প্রমিস করে ফেলছে৷ এখন আমার আবির ভাইয়ের প্রমিস প্রয়োজন। আবির ভাই যদি একবার বলে "কখনো ছেড়ে যাবে না " তাহলেই আমার জন্য যথেষ্ট। তোদের প্রমিস দিয়ে কি ঘোড়ার ঘাস কাটবো?"
"এভাবে অপমান করলি? দেখবি তোর আবির ভাই তোকে প্রমিস করবে না। এটা আমার অভিশাপ "
মেঘ হাতের কলম ছুঁড়ে মারে৷ কলমটা ঠিক মিনহাজের কপালে লাগে৷ মিনহাজ ব্যথায় উফ করে ওঠে। মেঘ রাগান্বিত কন্ঠে বলে,
"শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। আর যদি মরে, তাহলে তোকেও মরতে হবে।"
মেঘ ক্লাস শেষ করে বাসায় আসছে। মনটা ভীষণ অস্থির৷ আবির ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারে না বলে আজ কোনো চিরকুট লিখে নি। চিন্তা করেছে সরাসরি আবিরকে বলবে।মেঘ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। সন্ধ্যার খানিক বাদেই আবির বাসায় ফিরেছে। আবির রুমে ঢুকেই টেবিলের দিকে তাকায়। আজ কোনো চিরকুট নেই দেখে আনমনে কপাল গুটালো। ড্রেস চেইঞ্জ করে শাওয়ার নিতে চলে গেছে। প্রায় ৩০ মিনিট পর মেঘ আবিরের রুমে আসলো। আবির তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল ঝাড়ছিল। আগের ড্রেসিং টেবিল ভাঙার পর সেটা পাল্টিয়ে নতুন একটা আনিয়েছে। আগের টার থেকেও এটা অনেক বেশি সুন্দর। আবির রুমে না থাকলে মেঘ প্রায় প্রায় এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে সাজুগুজু করে, ছবি তুলে। আবিরের চুলের পানি ছিটকে গিয়ে মেঘের গায়ে পরে৷ মেঘ সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। ঘাড় ঘুরিয়ে আবিরকে দেখলো। আয়নায় তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিল আবির হঠাৎ মেঘের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কিছুটা নড়ে ওঠে৷ ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,
" কিছু বলবি?"
"আপনি কিছু বলবেন?"
"নাহ"
"কিচ্ছু বলার নেই?"
"নাহ"
"আজকে কি ডে বলুন তো"
"Monday মানে সোমবার কেন?"
'এই ডে এর কথা বলিনি"
আবির আড়চোখে চেয়ে শুধালো,
" তাহলে কোন ডে?"
মেঘ সূক্ষ্ম নেত্রে তাকালো। তপ্ত স্বরে বলল,
"আপনার টেবিলের উপর রাখা চিরকুট গুলো দেখেন নি?"
আবির ঠাট্টার স্বরে বলল,
"চিরকুট তুই রাখছিলি নাকি?"
মেঘ লাজুক হেসে চিবুক নামিয়ে বলল,
"জ্বি।"
আবির টেবিল থেকে ফোন নিয়ে কিছু চেক করতে করতে বলল,
"কি ছিল চিরকুটে?"
মেঘ অসহায়ের মতো চেয়ে শীতল কন্ঠে প্রশ্ন করল,
"আপনি চিরকুট গুলো দেখেন নি?"
"কি জানি৷ খেয়াল করি নি। "
মেঘের তৎক্ষনাৎ মিনহাজের অভিশাপের কথা মনে পড়ে গেছে। সেই সঙ্গে আবিরের কথাটা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে। মেঘের মেজাজ খারাপ হলো।রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
"আমার চিরকুট গুলো আমায় দিন। আপনার সাথে আর কোনো কথা নেই। "
আবির শশব্যস্ত হয়ে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে জানাল,
" তোর চিরকুট কোথায় উড়ে গেছে কে জানে!"
রাগে মেঘের চোখ জ্বলছে। মিনহাজের দেয়া অভিশাপ টা বারবার মনে পড়ছে আর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে। রাগের মাথায় হুট করে বলে উঠল,
"আপনি আমার জীবনে কেন আসছেন?"
প্রতিত্তোরে আবির বলল,
"আমি তোর জীবনে আসি নি বরং তুই আমার জীবনে আসছিস।"
মেঘ কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে,
"কিভাবে?"
আবির মেঘের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকায়। খানিক চুপ থেকে ঠান্ডা কন্ঠে শুধায়,
"তোর জন্ম আগে হয়ছে নাকি আমার?"
"আপনার"
"তো কে কার জীবনে আসছে?"
মেঘ চিবুক নামিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
"জানি না'
আবির প্রখর তপ্ত স্বরে প্রশ্ন করে,
"রুমে কেন আসছিলি?"
মেঘের পুনরায় মিনহাজের অভিশাপের কথা মনে পরে যায়৷ মেঘ রাগ অভিমান সাইডে রেখে কোমল কন্ঠে বলল,
" আজকে প্রমিস ডে তাই উইশ করতে আসছিলাম"
"এসব ডে টে আমি পালন করি না৷"
"কেন?"
"আমার মতে গোলাপ দেয়া, চকলেট দেয়া, টেডি দেয়ার জন্য স্পেশাল কোনো দিনের প্রয়োজন নেই৷ ইচ্ছে থাকলে প্রতিদিনই এসব ডে পালন করা সম্ভব।"
"তাই বলে সামান্য উইশ টাও করতে পারবেন না?"
" আমার উইশ করলে তা চিরকুট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে পারব না। কাজে কর্মে দেখিয়ে দিব।"
আবিরেট কথা মেঘ বুঝার চেষ্টায় করছে না। বরং মিনহাজের কথা মনে করে বার বার বলছে,
"আজকে অন্তত উইশ করুন। আর বলব না, প্লিজ"
" আজ করলে, কাল কি সমস্যা? এসব বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলার থাকলে বল"
মেঘ মন খারাপ করে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলল,
"মিনহাজ, তোর অভিশাপ ফলে গেছে"
আবির গম্ভীর কন্ঠে ডাকল,
"শুন"
মেঘ থমকে দাঁড়ালো । আবির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ শীতল কন্ঠে বলল,
"কি প্রমিস চাস?"
মেঘ সহসা চোখ গোলগোল করে তাকালো। আবির পুনরায় বলল,
"কি হলো বল?"
মেঘ ভেবেচিন্তে শান্ত কন্ঠে বলল,
" আপনি প্রমিস করুন, আমাকে আর কখনো ধমক দিয়ে কথা বলবেন না"
মেঘের খুব ইচ্ছে ছিল আবিরকে বলতে, যেন কখনো ছেড়ে না যায়। কিন্তু থা*প্পড়ের ভয়ে বলতে পারে নি।
আবির ভারী কন্ঠে বলল,
" তুই ভুল করলেও শাসন করতে পারবো না?"
"পারবেন। তবে হুটহাট ধমক দিয়ে কথা বলবেন না, প্লিজ। আমার ভয় লাগে "
আবির ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলো। ঠোঁটে হাসি রেখেই বলল,
" আমি প্রমিস করছি, আজকের পর অকারণে তোকে কখনো ধমক দিব না। হয়েছে?"
"হুমমমমমমমমমম. Thank you "
মেঘের মায়াবী কন্ঠে হুমমমমমম শুনে আবির আশ্চর্য নয়নে চেয়ে আছে। মেঘের চোখে মুখে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠছে। আবির ভাই প্রমিস ডে তে মেঘকে প্রমিস করেছে ভাবতেই হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যাচ্ছে। মিনহাজের অভিশাপ বিফলে গেছে ভেবেই মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। খুশিতে গদগদ হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে।১২ তারিখ কিস ডে ছিল। আবিরের জ্বর থাকাকালীন গালে কিস করার ঘটনা মনে পড়তেই মেঘ লজ্জায় দু হাতে মুখ লুকালো। সেই লজ্জায় চিরকুট ও লিখে নি। আবির বাসায় ফেরার পর থেকে আবিরের সামনেও পড়ে নি। প্রমিস ডে পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু কিস ডে, হাগ ডে এগুলো পালন করা মেঘের পক্ষে অসম্ভব বিষয় । তাই মুখ লুকিয়ে চলছে।
★★★★★
আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের প্রথম দিন। অন্যান্য দিনের মতো আজও আবির, তানভির যে যার কাজে বেড়িয়েছে। মীম আর আদিও স্কুলে গেছে। দুপুরের দিকে মেঘ,মীম, আদি তিনজনই বাসায় ফিরেছে। তার ঘন্টাখানেক পরই আবির বাসায় আসছে৷ আবিরের হাতে দুটা শপিং ব্যাগ। অসময়ে আবিরকে বাসায় ফিরতে দেখে মালিহা খান প্রশ্ন করলেন,
"কিরে তুই এ সময় বাসায় যে ?"
"আজ পহেলা ফাল্গুন। ভাবলাম মীম, আদি আর মেঘকে নিয়ে বের হবো। তানভিরও আসছে। "
"আজ যেমন ভাই-বোনদের কথা মনে করছিস। এমনভাবে কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে ওদের সময় দিতে পারিস না? তোর আব্বু প্রায়ই বলে, তানভির ছাড়া তুই কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলিস না।এটা তোর আব্বুর ভালো লাগে না। "
"আচ্ছা, চেষ্টা করব।"
আবির দুটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে মেঘের রুমের সামনে আসলো। হালকা কাশি দিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই মেঘ থতমত খেয়ে ওঠে৷ একটু আগেই ফেসবুকে হাগ ডে র ভিডিও দেখছিল, তা দেখেই আবির ভাইকে নিয়ে অলীক কল্পনায় পাড়ি জমিয়েছিল৷ অকস্মাৎ আবির রুমে ঢুকায় মেঘ আঁতকে উঠে । ওড়না ঠিক করতে করতে তাড়াতাড়ি ওঠে বসে। আবির একটা শপিং ব্যাগ মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
"এটাতে তোর জন্য শাড়ি আছে। কাকিয়াকে বলিস শাড়িটা পড়িয়ে দিবে।"
দ্বিতীয় শপিং টা বিছানার উপর রেখে বলল,
"এটাতে মীমের জন্য শাড়ি আর একটা ড্রেস আছে। ওর যেটা ভালো লাগে সেটায় পড়তে বলিস। "
মেঘ ঠোঁট উল্টে বলল,
"আমার ড্রেস কোথায়?"
"তুই শাড়িই পড়বি তাই ড্রেস আনি নি। একটু তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার চেষ্টা করিস৷ "
আবির দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও থামলো। ঘাড় ঘুরিয়ে শীতল চোখে তাকিয়ে কোমল কন্ঠে বলল,
"আজ হিজাব পড়তে হবে না। "
মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। আবির ভাই মেঘকে শাড়ি পড়তে বলছে, তাও আবার নিজেই শাড়ি গিফট করেছে ভাবতেই মেঘের ভেতরটা মুগ্ধতায় ছেয়ে গেছে। আঁখি জোড়ায় চমক দেখা যাচ্ছে । নিজের চোখ, কান কোনোকিছুকেই বিশ্বাস করতে পারছে না৷ মাইশা আপুর বিয়েতে মেঘ শাড়ি পড়ে দুতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত নামতে পারে নি। আবির ভাইয়ের ঠান্ডা কন্ঠের হুম*কিতেই শাড়ি পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিল। আজ আবির ভাই নিজেই শাড়ি পড়তে বলছেন তাও আবার চুল ছেড়ে। মেঘ শপিং ব্যাগ থেকে বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি বের করলো। সাথে ম্যাচিং পেটিকোট, দুজোড়া কাঁচের চুড়ি। মেঘ শাড়িটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। শাড়িটা এমনিতে সুন্দর তবে আবির ভাই দেয়ায় শাড়ির সৌন্দর্য মনে হচ্ছে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। মীমের শাড়ি আর ড্রেস টা দেখে মেঘ মীমকে দিয়ে আসছে । ঐগুলোও বেশ সুন্দর। বলতে হয় আবিরের পছন্দ আছে।
মেঘ ফ্রেশ হয়ে ছুটে গেল কাকিয়ার রুমে৷ কাকিয়া ঘুমাচ্ছে দেখে মেঘ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। মেঘের চটপটে মনটা শাড়ি পড়ার জন্য ছটফট করছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ হৃদয়ের তীব্র কম্পনের কাছে ভদ্রতা বেশিক্ষণ টিকলো না। মেঘ ধৈর্যহীন কন্ঠে কাকিয়াকে ডাক শুরু করলো। মেঘের ডাকে কাকিয়া ঝটপট করে উঠে বসেন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধায়,
"কি হয়েছে মেঘ?"
"তাড়াতাড়ি উঠো। আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে।"
"তুই শাড়ি পড়বি?"
"হ্যাঁ"
"হঠাৎ শাড়ি পড়তে মন চাইছে কেন?"
মেঘের চোখে মুখে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠছে , উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
"আবির ভাই আমাকে আর মীমকে শাড়ি দিয়েছেন, তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলছেন, ঘুরতে নিয়ে যাবে। "
"তারজন্য এত খুশি?"
"হ্যাঁ, তুমি তাড়াতাড়ি আসো৷ আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে।"
"তুই যা আমি আসছি। "
মেঘ হুটোপুটি করে নিজের রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে কাকিয়া আসছেন৷ মাইশা আপুর বিয়েতে মাইশা আপুরা বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পড়েছিল তবে আজ কাকিয়া আঁচল ছেড়ে খুব সুন্দর করে কুঁচি দিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন৷ হালকা মেকাপ, হাতে দু ডজন কাঁচের চুড়ি, কানে সিম্পল কানের দুল, ওষ্ঠজুড়ে হালকা গোলাপি রঙের রঞ্জক, চোখে হালকা করে দেয়া কাজল, সঙ্গে গাঢ় আইলানারে মেঘের ডাগর ডাগর চোখ গুলো অত্যন্ত মায়াবী লাগছে। চুল আঁচড়ে ঠিক মাঝ বরাবর সিঁথি কেটে কিছু চুল সামনে রাখলো। পেছন দিকে চুলগুলো কোমড় ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা নিচে নামলো। চুলে আগ হাঁটুর কিছুটা উপরে। সাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর মেঘ কিছুটা দূর থেকে ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকালো। ওমনি চক্ষুদ্বয় প্রশস্ত হয়ে গেল।শাড়িতে নিজেকে কেমন যেন অপরিচিতা লাগছে। কাকিয়া মেঘকে আপাদমস্তক দেখে বলল,
"মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর লাগছে। বউ বউ লাগছে"
মেঘ নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসলো। মনে মনে বলল,
"হুমমমমমমম। তোমাদের আবিরের বউ"
কাকিয়া মেঘের হাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। তপ্ত স্বরে বললো,
"তুই একটু বস আমি আসছি"
কাকিয়া মীমের রুমে আসলো। মীম ততক্ষণে প্রায় রেডি৷ আদির চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলো। তানভির, আবির আর আদির জন্য ও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি আনা হয়েছে। পাঞ্জাবি তিনটা গতকাল ই তানভির নিয়ে আসছিল। ২ টা শাড়ি আর ড্রেস আজ আবির নিয়ে আসছে। তানভির নিজেই আদির হাত- মুখ ধৌয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। মীমের রুমে যাওয়ায় মীম আবারও আদির চুল গুলো ঠিকমতো আঁচড়িয়ে দিচ্ছিলো। আকলিমা খান রুমে ঢুকতে ঢুকতে দেখলেন বিছানার উপর শাড়ি পড়ে আছে৷ অথচ মীম ড্রেস পরেছে। আকলিমা খান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালেন,
" মেঘ শাড়ি পড়েছে তুই পড়িস নি কেন?"
"আমার শাড়ি পড়তে ভালো লাগে না আম্মু। শাড়ি দেখলেই রাগ উঠে। "
"এখন রাগ উঠছে ঠিকই৷ শাড়ি পড়ার বয়স হয়নি তো তাই। দুদিন পর মেঘের মতো তুই ও শাড়ি পড়ার জন্য ছটফট করবি। সে যাই হোক, তোর আলতা টা দে"
মীম ড্রেসিং টেবিল থেকে আলতা বের করে আম্মুকে দিল। আকলিমা খান মেঘের দু'হাতে আর দু পায়ে খুব সুন্দর মতনে আলতা পড়িয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মীম আর মেঘ নিচে নামলো। আদি রেডি হয়েই বাসা থেকে বেড়িয়ে গেছে। মেইন গেইট পার হতেই মেঘের নজর পরে বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পড়নে প্রিয় মানুষটার দিকে। পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত উঠানো, হাতে কালো রঙের ঘড়ি, অনামিকা আঙুলে জ্বলজ্বল করছে একটা আংটি। চোখে সানগ্লাস পড়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চাপছিল। বাসন্তী রঙে আবির ভাইকে দেখেই মেঘের হৃদয়ে বসন্ত দোলা দিচ্ছে। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ড টা ছুটছে দিগবিদিক, বদলে গেল মেঘের অভিপ্রায়, চোখদুটো প্রেমানুভূতিতে চকচক করছে। আবির ভাইকে এভাবে দেখেই মেঘের হার্টবিট থ*মকে গেছে। মেঘ মনে মনে নিজেকে আওড়ালো,
" আর কতবার, কত ভাবে আপনি আমার ছোট্ট হৃদয়ে অগ্নিকাণ্ড চালাবেন?"
মীমের ডাকে মেঘের মনোযোগ সরে। দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। কুঁচিগুলো ধরে আস্তেধীরে পা বাড়ায়।
তখনি আবিরের দৃষ্টি পরে আলতা রাঙা পায়ের দিকে। ওমনি বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছে। আলতা রাঙা পায়ের মালিক যে আবিরের হৃদয়ের রানী। আলতায় রাঙানো পা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখছে। প্রথমবার দেখেছিল মাইশা আপুর বিয়ে। আবির মেঘের পা থেকে মাথা অবধি দেখল। আবিরের হৃদয়ের অন্তঃস্থল জুড়ে অস্থিরতা কাজ করছে। বাসন্তী রঙা শাড়ি, সুদীর্ঘ ঘন কালো চুল, মায়াবী দুই আঁখি, সদ্য ফোঁটা রঙিন হাসিতে মন্ত্রমুগ্ধ আবির সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। শাড়িতে মেঘকে দেখে কেউ বলবেই না এই মেয়ে বয়স ১৮ কিছুদিন পর ১৯ এ পা দিবে৷ মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে ২২-২৩ বছরের যুবতী মেয়ে। মেঘকে দেখে অজানা শিহরণে আবিরের শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। বক্ষস্থলের ইতস্ততা কাটানোর সাধ্যি তার নেই। আবিরের হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করার অস্ত্র আবির নিজেই মেঘের হাতে তুলে দিয়ে এসেছে। জেনে বুঝে নিজেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিতে চাচ্ছে আবির। জোরালো হৃৎস্পন্দনের শব্দ আবিরের কান পর্যন্ত পৌছাতেই আবির ঢোক গিলল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। চোখ বন্ধ করে খানিক ভাবলো। চোখ মেলে তাকাতেই আবিষ্কার করল, মেঘ আবিরের থেকে ঠিক এক হাত দূরে দাঁড়ানো। এত কাছাকাছি দাঁড়ানোতে মেঘের গায়ের গন্ধ আবিরের নাসারন্ধ্র পর্যন্ত পৌছে যায়। এই ঘ্রাণ আবিরকে বারংবার মা*তাল বানাতে সক্ষম।
মেঘ সুমধুর কন্ঠে বলে,
"কি হয়েছে আপনার?"
আবির সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
"হয় নি তবে হবে"
"কি হবে? "
"তোর মাথা। গাড়িতে উঠ"
মেঘ ভেংচি কেটে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো। মীম, মেঘ, আদি তিনজনই পেছনে বসছে। আবির ড্রাইভিং সিটে বসছে, তানভির তার পাশেই বসছে। গাড়ি স্টার্ট দিল। ১০ মিনিটে কম করে হলেও ৫০ বার গাড়িতে থাকা আয়নাতে মেঘকে দেখেছে। আরও ৫ মিনিট যাওয়ার পর আবির আচমকা গাড়ি সাইড করে থামালো। তানভির উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল
"কোনো সমস্যা ভাইয়া?"
"ভাই, আজ গাড়ি তুই চালা। আমি পারছি না"
তানভির গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভিং সিটে বসছে। শান্ত কন্ঠে বলল,
"আমি কিন্তু তোমার মতো চালাতে পারবো না"
"যেভাবে খুশি চালা। আমায় বিরক্ত করিস না, প্লিজ"
তানভির ঠোঁট বেঁকিয়ে মুচকি হাসলো। আবিরের হৃদয়ের তোলপাড় তানভির কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে। মেঘ পেছন সিটে বসা থেকে একটু উঠে পেছন থেকে আবিরের কপালে হাত রেখে প্রশ্ন করল,
"আপনার কি শরীর খারাপ? "
আবির চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল,
" কারো হৃদয় হরণ হলে কি সে সুস্থ থাকতে পারে?"
চলবে..........
Next part at 10 AM