ঘাস ফড়িং

ঘাস ফড়িং Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from ঘাস ফড়িং, Digital creator, Naogaon Joypurhat, Rajshahi.

বেকাররা একবার হলেও পড়বেন : গত ৫ বছর আগের ঘটনা তখন আমি প্রতিদিন সকালে শার্ট-প্যান্ট পরে একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতাম চাকর...
16/11/2023

বেকাররা একবার হলেও পড়বেন :

গত ৫ বছর আগের ঘটনা তখন আমি প্রতিদিন সকালে শার্ট-প্যান্ট পরে একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতাম চাকরির উদ্দেশ্যে। আর সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে ধ'পা'স করে চেয়ারের ওপরে বসে পড়ে বলতাম "আজকেও হল না।
এই ইন্টারভিউতেও কোনো সুবিধে করতে পারলাম না।"

আমার পরিবার বলতে শুধু মা-বাবা, আর স্কুলজীবনের প্রেমিকা পিয়ালী। প্রথম প্রথম যখন আমি চাকরি না পেয়ে ঘরে ফিরতাম, তখন মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। বলতো, "চেষ্টা কর, পরেরবার নিশ্চয়ই হবে।"

ধীরেধীরে মায়ের ব্যবহারও বদলাতে লাগল। তখন আমি বাড়ি ফিরলে মা আর সান্ত্বনা দিত না, বরং খো'টা দিতো। মা ও বুঝে গেছিল এই ছেলের দ্বারা আর কিচ্ছু হবার নয়। কিন্তু পিয়ালী সাথে ছিল। সে বরাবর বলত, "তুই চাকরি না পেলেও আমাদের বিয়ে হবেই"।
ছেলেদেরকেই স্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে তার কোনো মানে নেই, কলেজটা শেষ হলেই আমি চাকরিতে ঢুকব, তারপর সংসার সামলানোর দায়িত্ব আমার।"

এভাবে দু'মাস কে'টে গেল। সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই দেখলাম মোবাইলে পিয়ালীর ফোন ঢুকছে। ফোন ধরামাত্র পিয়ালী জিজ্ঞেস করল, "আজকেও কিছু হলনা তো?"
উত্তর দিলাম, "না।" পিয়ালী বলল, "শোন, আমার বাড়ি থেকে কিছুতেই মেনে নিচ্ছেনা তোর সাথে সম্পর্ক। একজন বেকার ছেলের সাথে থাকা যায়না। আমি মিউচুয়াল ব্রেক"আপ চাই।" আমি একদম চু'প করে গেলাম। তারপর ধীরেধীরে বললাম...
"কিন্তু তুই যে কথা দিয়েছিলিস।" পিয়ালী বলল, "তুইও কথা দিয়েছিলিস চাকরি পেয়ে দেখাবি। কিন্তু বুঝে গেছি তোর দ্বারা কিছু হবার নয়। আমি আমাদের কলেজের সুমনের সাথে সম্পর্কে চলে গেছি। পারলে আমায় ভু'লে যা।"

ওপার থেকে লাইন কে'টে গেল। আমি বরাবরেই খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে, খুব ক'ষ্ট হলেও কখনও সেটা প্রকাশ করি না। আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলনা, পিয়ালী অন্য কারুর সাথে সম্পর্কে যেতে পারে। সেই মেয়েটা, যে আমাকে এত ভালোবাসত, যে সারাজীবন সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যে বলেছিলো আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না।
আমার ছোটবেলার প্রেম।
আমার হঠাৎ করে
ছেলেবেলার কথা মনে পড়ল। তখন খুব ক'ষ্ট হলে মায়ের কোলে মাথা রেখে কাঁ'দ'তা'ম। আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে একবার মায়ের সামনে দাঁড়ালাম, আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একবার মাকে জড়িয়ে ধরতে। মা দেখতে পেল আমাকে। তারপর ঝাঁ'ঝা'লো গলায় বলল, "শোন কাল থেকে আর ইন্টারভিউতে যেতে হবে না। তোর বাবা বলেছে একটা চায়ের দোকান খুলে দেবে, নাহলে বাজারে সবজি বিক্রি করবি। অন্তত সংসারে একটু টাকা তো ঢুকবে। আমাদের থেকে টাকা নিয়ে রোজ বাস ভাড়া দিয়ে ইন্টারভিউ দেবার কোনো দরকার নেই।"

আমার একটু আগেই ইচ্ছে হচ্ছিল মাকে জড়িয়ে ধরে একটু য'ন্ত্র'ণা'টা লাঘব করতে। কিন্তু মায়ের কথাগুলো তী'রের মত আমার বুকে গিয়ে বিঁ'ধ'ল। একবারও বলতে পারলাম না, ''মা আমার খুব ক'ষ্ট হচ্ছে। আমি তোমার ছেলে।'' চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

হঠাৎ দেখলাম ফোনে আবার পিয়ালীর ফোন ঢুকছে। আমি ফোন ধরতেই ওপার থেকে পিয়ালীর গলা ভেসে এলো, "শোন, আমি তোকে যে গিফটগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো আমায় ফেরত দিয়ে দিস। আমার বয়ফ্রেন্ড চায়না আমার এক্সের কাছে আমার কোনো স্মৃতি থাকুক। কাল সন্ধ্যে সাতটায় আমাদের বাড়ির নীচে জিনিসগুলো নিয়ে চলে আসিস।" ফোন আবার কে'টে গেল।

পরের দিন কাঁ'টায় কাঁ'টায় সাতটার সময় দেখা হল দুজনের। আমি ব্যাগ থেকে এক এক করে তিলেতিলে জমানো প্রতিটা উপহার ফিরিয়ে দিলাম পিয়ালীকে। হঠাৎ আমার শার্টের ফাঁকে চোখ পড়তেই পিয়ালী জিজ্ঞেস করল, "তোর গলায় ওটা কিসের আইডি কার্ড ঝোলানো রে?" আমি স্বভাবত শান্তস্বরে জবাব দিলাম, "আমার অফিসের"।

পিয়ালী অবাক হয়ে বলল, "অফিসের মানে? চাকরি কবে পেলি?" বললাম, "দু'মাস আগেই। প্রথম ইন্টারভিউটা থেকেই চাকরি পেয়েছিলাম। এতদিন আমি ইন্টারভিউয়ের নাম করে আসলে অফিসেই যেতাম।" বেশ খানিক্ষণ দুজনেই চু'প। তারপর ছলছলে চোখে পিয়ালী জিজ্ঞেস করল, "এতবড় মিথ্যেটা কেন বললি? এতদিন ধরে এভাবে ধোঁ'কা দিয়ে গেলি?" আমি ফ্যাকাসে হেসে বললাম, "নাহলে আসল রূপটা কিভাবে দেখতে পেতাম?

মাঝেমাঝে সফলতার পাশাপাশি ব্য'র্থ'তার গল্প শোনানোটাও জরুরী। একমাত্র ব্য'র্থ'তাই পারে শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রকৃত স্বরূপ চিনিয়ে দিতে।"

পিয়ালী চোখ ব'ন্ধ করে ফেলল, হয়ত সে কা'ন্না লুকোবার চেষ্টা করছিল। আমি বাড়ি ফিরে যেতে উদ্যত হলেই পিয়ালী আমার হাত চে'পে ধরে বলল, "আমায় ছেড়ে যাস না। ভু'ল বুঝেছিলাম তোকে। আমাদের এতদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক।" আমি আলতো করে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, "ভালোবাসার নয়, ব্যবসার সম্পর্ক।
যেখানে লাভ আর লোক'সানের হিসেব ক'ষা হয়, সেটা বিজনেস। ভালোবাসা স্বার্থহীন হয়।"
আমি বাড়ির দিকে চলতে শুরু করলাম আর দুই হাতে মুখ চে'পে ধরে দাঁড়িয়ে রইল পিয়ালী।

বাড়ির বেল বাজাতেই মা দরজা খুলল। মুখে একটা তি'র্য'ক হাসি নিয়ে বলল, "আজকেও মুখ কা'লো করে ফিরেছিস তো? এত দেরী হল ফিরতে? চু'রি'চা'মা'রি করছিলিস নাকি?" আমি শান্তভাবে ঘরে ঢুকে জুতো খুললাম, হাত মুখ ধুলাম। তারপর ব্যাগ থেকে একটা মোটা খাম বের করে টেবিলে রেখে বললাম...

"দু'মাসের মাইনেটা ব্যাঙ্ক থেকে ক্যাশে তুলে আনলাম। অনেক বড় সংখ্যা, সময় নিয়ে গুনো। আর পাশে আমার আইডিটা রইল, সব উত্তর ওই চৌকো কার্ডের মধ্যে পেয়ে যাবে।" মা অবাক হয়ে চেয়ে রইল, আর আমি নিজের ঘরে ঢুকে দরজাটা টে'নে দিলাম....

✍️সংগৃহীত

আমি কোনোদিন বাবাকে মায়ের গায়ের উপর হাত তুলতে দেখিনি। আজ হাত তুললেন। সম্ভবত মায়ের গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে। কিন্তু ম...
28/07/2023

আমি কোনোদিন বাবাকে মায়ের গায়ের উপর হাত তুলতে দেখিনি। আজ হাত তুললেন। সম্ভবত মায়ের গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে। কিন্তু মায়ের চোখে পানি নেই। মায়ের অগ্নিচোখ। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করছেন। অথচ বাবার ছলছলে চোখ। বাবা ভেজা গলায় বললেন,

"উঠতে বসতে যে জোছনার খোটা দেও, সে আজ মরে গেছে। এবার খুশি তো? এখন থেকে অন্তত আমাকে রেহাই দেও।"

জোছনা নামটা আমি আজ প্রথম শুনিনি। আগেও বহুবার মায়ের মুখে শুনেছি। মা বাবার সাথে একটু রেগে গেলেই জোছনার নাম উঠে। আমি দুয়েকবার জানতে চেয়েছিলাম মায়ের কাছে, কে এই জোছনা? মা মুখে ভেংচির আকৃতি এনে ভাষাকে বিকৃতি করে বলেছিল,

"তোর বাপের নাঙ লাগে। আমারে বিয়ে করার আগে জোছনার লগে তোর বাপের পিড়িত ছিল।"

বাবা মাথা নিচু করে সেদিন আমার সামনে থেকে চলে গিয়েছিল। বুঝাই যাচ্ছে, নিজের ছেলের সামনে তিনি বেশ অপমানিত হয়েছেন।
বাবার জন্য আমার বড্ড মায়া লাগে। মায়ের এই অকথ্য ভাষার প্রতিবাদ বাবা কোনোদিন করেননি। কিন্তু আজ প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদের ভাষা ছিল সজোরে একটি থাপ্পড়। বিগত এত বছরের রাগ ক্ষোভ বাবা একটি থাপ্পড়ে কমাতে পেরেছেন তো? আমি দুপুরের খাবার খেতে বসেছি, মা তরকারি দিচ্ছিলেন। বাবা এলেন হঠাৎ ঘরে। তখনি মায়ের হুংকার!

"আমারে ঘুমে রাইখা কাউরে কিছু না কইয়া জোছনার কাছে গেছিলা? কইয়া গেলে কী হইতো? না করতাম আমি? এত বছরেও না কইরা ফিরাইতে পারছি?"

বাবা এগিয়ে এলেন। কষে থাপ্পড় দিয়ে জোছনার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করলেন। এমতাবস্থায় আমার গলা দিয়ে আর ভাত নামবে না। বাবা ঘর থেকে চলে গেলেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, মৃত্যু সংবাদ শুনে রাগ একটু কমেছে। আমি খাবার রেখে নলকূপে হাত ধুয়ে ফেলেছি। মনটা কেমন খারাপ লাগছে। বাবা যে আজ আড়ৎ এ যাবেন না, বুঝাই যাচ্ছে। তার চেয়ে ভালো আমি আড়ৎ এ গিয়ে বসি। কাস্টমারকে চাউল দিতে দিতে মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখা যাবে।

রাত তখন বারোটা হবে। আমি বই পড়ছিলাম। হুমায়ূন স্যারের 'মিশির আলি সমগ্র।' বইয়ের 'তন্দ্রা বিলাস' আমার দুই চোখের তন্দ্রা কাটিয়ে দিলো। দরজায় ঠকঠক। দরজার ওপাশ থেকে বাবার গলার শব্দ।

"শাওন, ঘুমিয়ে পড়েছিস?"

আমি কোনো জবাব না দিয়ে দরজা খুলে দিলাম। বাবা ঘরে ঢুকে আমার বিছানায় বসতে বসতে বললেন,

"ঘুমাসনি এখনো! তোর সাথে গল্প করতে এলাম। বাপ-বেটার গল্প অন্য কারো শুনতে হয় না। তাই এখন এলাম। তোর সমস্যা হবে না তো?"

আমি মুচকি হেসে বললাম,

"না বাবা। আমার আরো ভালো লাগছে যে তুমি এসেছো। আজ এই ঘরেই ঘুমাও। মায়ের ব্যবহারে মন খারাপ করে থেকো না।"

বাবা পা তুলে আয়েশ করে বসলেন। ইশারায় আমাকে চেয়ার টেনে কাছে যেতে ইঙ্গিত করলেন। আমি কাঠের চেয়ার নিয়ে বাবার মুখোমুখি বসলাম। বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বললেন,

"তোর অনেক কিছু জেনে রাখা দরকার। আমি তোকে জানাতে চাই। আগেও জানাতে চেয়েছি, সাহস হয়নি। ভেবেছি তোর মা যেমন অকথ্য ভাষায় কথা বলে, হয়তো তোর জানা হয়ে যাবে। কিন্তু তুই জানিস না কিছুই। শুধু একটি নাম জানিস, জোছনা। তুই এই নামটি তোর মায়ের মুখে শুনেছিস। যতবার শুনেছিস আমি লজ্জা পেয়েছি। বলতে পারিনি কিছু। আজ বলব।"

আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে বাবার গল্প শুনছি। যে নাম নিয়ে মায়ের অকথ্য ভাষা, বাবার লজ্জা পাওয়া। অজানাকে জানতে অবশ্যই মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বাবা একনাগারে গল্প বলছেন। লুকায়িত এক গল্প।

"তোর মায়ের মুখে জোছনা নাম শুনে হয়তো ভেবেছিলি, আমার অন্য কারো সাথে কোনো সম্পর্ক আছে। সত্য হলো, জোছনার সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। জোছনা আমার বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী ছিল। তোর দাদা দাদি পছন্দ করে বিয়ে করিয়েছেন। তোর দাদার বাড়ির কাছেই। আমরা যে এত বছর ধরে তোর দাদা দাদিকে রেখে শহরে থাকি, তার একটি কারণ এই জোছনা। তোকে নিয়ে যে প্রতিবার তোর দাদার বাড়ি যেতাম, আমি তোর সাথে সাথেই থাকতাম। যেন আমাদের গ্রামের কারো কাছ থেকে এই বিষয়ে কিছু শুনতে না হয়। তোর খারাপ লাগতে পারে শুনলে। তোর দাদা-দাদি মারা যাওয়ার পর গ্রামে খুব একটা যাই না। তোর মা সব জানে। তবুও তোকে বলেনি, যে আমি আগেও একটি বিয়ে করেছিলাম। আমার আর জোছনার একটি সন্তানও আছে। নাম ফাল্গুনী। তোর সৎ বোন ফাল্গুনীর মতো তোর নামটাও বাংলার বারো মাসের একটা নাম। গ্রামে আমরা শ্রাবণ মাসকেই শাওন মাস বলি। তোর মা আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। সে যাই হোক। জোছনার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর সে পরবর্তীতে আবার বিয়ে করে এক স্কুল মাস্টারকে। তোর দাদার বাড়ি থেকে কয়েকটা গ্রাম পরে। আট বছর সংসার করলেও আর কোনো সন্তানাদি হয়নি। স্কুল মাস্টার মারা গেলেন চার সালের বন্যায়। আমি সব খোঁজই রাখতাম। রাখার কারণ ফাল্গুনী, আমার মেয়ে। আমি তাকে আমার কাছে রাখতে পারিনি। মাস্টার মারা যাওয়ার পর সেই সংসারে টানাটানি অবস্থা। আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। কয়েকটা সংসার চালানোর তৌফিক দিয়েছেন। আমি প্রতি মাসেই যাই সেই এলাকায়। কাউকে দিয়ে খবর পাঠালে ফাল্গুনী আসে। বাবা বলে এসে জড়িয়ে ধরে। কতশত বায়না তার। আমি আসার পথে পুরো মাসের খরচ দিয়ে আসি ফাল্গুনীর হাতে। তোর মা এসব জানে। আমি গোপন করি না তোর মায়ের কাছে। আমি ফাল্গুনীর জন্মদাতা। সে আমার কাছে মেয়ে হিসেবে পাওনা। আমি তা দেবই। আমি ফাল্গুনীর মায়ের সাথে দেখা করি না। দেখা করাটা বেমানান। লোকে মন্দ বলবে। তাই লোক মারফত ফাল্গুনীকে ডেকে আনি। আর এখন তো নরসিংদী সরকারি কলেজেই অনার্স শেষ করবে এই বছর। এখন তো কলেজে গেলেই মেয়ের সাথে দেখা করতে পারি।
কিন্তু ঐ যে, আমি তোর মায়ের কাছে কোনোকিছু লুকাই না। তোর মা মনে করে আমি হয়তো ফাল্গুনীর মায়ের সাথেও দেখা করি। এজন্যই রাগের মাথায় দুই চারটে কথা শোনায়। এতে আমার খারাপ লাগে না। শুনতে শুনতে অভ্যেস হয়ে গেছে। কিন্তু তুই.... "

"বাবা এক মিনিট....."

আমি বাবাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলাম,

"এত বড়ো জীবন ঘটিত বিষয়টা মায়ের কাছেও লুকিয়ে রাখো না। তাহলে আমি শুনলে কী সমস্যা বাবা?"

বাবা উত্তরে বললেন,

"আসলে আমি চেয়েছিলাম তুই বড়ো হলে সব বলব। তোর মানসিক বেড়ে উঠাতে মস্তিষ্কে কোনো প্রভাব পড়ুক, সেটা চাইতাম না। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম, যথেষ্ট বড়ো হয়েছিস। ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে আর পড়লি না। ফাল্গুনী শুনেও কষ্ট পেয়েছে। ওহ হ্যাঁ, ফাল্গুনী কয়েকবার বলেছিল তোকে সব জানাতে, আমি সাহস পাইনি। তবে বিশ্বাস কর, ফাল্গুনীর মায়ের সাথে আমি দেখা করতাম না কখনো। কিন্তু আজ মৃত্যু সংবাদ শুনে না গিয়ে থাকতে পারিনি। তার উপর তোর মায়ের এমন কথাটুকু সহ্য হয়নি। তাই..."

আমার কোনো ভাই-বোন নেই, এমন একটি আক্ষেপ ছিল সবসময়। আজ বাবার মুখে শুনলাম আমার একটি বোনও আছে। আমার বড়ো আপু। নাম ফাল্গুনী। কোনোদিন দেখিনি। বাবা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ দুটো ছলছল। জোছনা নামের মানুষটির জন্য বাবার চোখে পানি। থাকাটা স্বাভাবিক। আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম,

"তোমাদের ছাড়াছাড়ি কেন হয়েছিল বাবা?"

বাবা দেয়াল থেকে দৃষ্টি আমার দিকে দিলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

"যে মানুষটা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে, তার সম্পর্কে কিছু না বলাই উত্তম। এতটুকু জেনে নে, আমাদের মনের মিল ছিল না। তবে বুঝতে একটু দেরি হওয়াতে সাড়ে চার বছর সংসার টিকেছিল। পরে আর টিকেনি। ফাল্গুনীকেও নিয়ে গেছে, আমার কাছে কোনোভাবেই রাখতে পারিনি। জোর করলে হয়তো পারতাম। আইনে গেলে ফাল্গুনীকে রাখতে পারতাম। থানা পুলিশ করে কোর্টে গিয়ে এতসব করতে ইচ্ছে হয়নি।"

আমি কিছু বলতে যাব, তার আগেই বাবা কীভাবে যেন প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

"মেঘনা দিয়ে এক ট্রলার ভর্তি চাউল আসার কথা। মুন্সিগঞ্জ বাজারের পরিচিত পাইকারদের থেকে কিনেছি। সন্ধ্যায় আসার কথা। রাত নয়টা অবধি বসেছিলাম, আসেনি। দোকানের আওলাদের কাছে নাম্বার আছে। সকালে আড়ৎ এ গিয়ে একটু খোঁজ করিস তো। আসলে রশিদ দিবে, টাকা দিয়ে দিস।"

কথাটুকু বলে বাবা উঠলেন। উঠে সাথে সাথে চলে গেলেন না। একটু দাঁড়িয়ে থেকে আবার বললেন,

"রাত একটা বেজে যাচ্ছে। জেগে থাকিস না, ঘুমিয়ে পড়। সকালে আড়ৎ এ যাবি।"

বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি চেয়ার আগের জায়গায় নিয়ে এলাম। আজ আর 'তন্দ্রা বিলাস' পড়ে শেষ করা হবে না। বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

ঠিক এক সপ্তাহ পরে বাবা হঠাৎ মারা গেলেন। আমি আড়ৎ এ ছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে এসেছি বাড়িতে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। কেউ মারা গেলে পরিচিত সবাই শেষ দেখা দেখতে আসে। মা বিলাপ করে কান্না করছেন। মায়ের মুখেই শুনতে পেলাম, সকালে শুধু বলেছিলেন বুকটা ব্যথা করে। মা ভেবেছেন খাওয়ার পর হয়তো এমনিতেই ব্যথা করছে। তাছাড়া ব্যথা ততোটা বেশিও না। কিছু না বলে বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। আমার মাথার উপর বটগাছের ছায়া ছিলেন। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এত বড়ো পৃথিবীতে নিজেকে একা লাগছে। আমার দুই চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে। সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন এলাকার কয়েকজন। মানুষের সামনে কান্না করাটা অন্যসময় হলে লজ্জাকর পরিস্থিতী হতো। কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে না। শুধু পানি পড়ছে। এক এক করে সব আত্মীয় স্বজন এলো। শেষ বিদায়ের আয়োজন চলছে। বরই পাতার গরম পানি বসানো হয়েছে। কবর খুঁড়তে লোক গেছে কবরস্থানে। পাশের বাড়ির একজন আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন কাফনের কাপড় কিনতে। এ যেন এক অনুষ্ঠান চলছে। শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান।

বাবা মারা যাওয়ার মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি আড়ৎ এ বসে আছি। বাবার অবর্তমানে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। হঠাৎ আমার অবচেতন মনে ক্ষানিকটা ধাক্কা লাগল। ফাল্গুনী!
আমার একটা মাত্র বোন। বাবার মেয়ে। তাকে তো খবর দেওয়া হয়নি। আমার কাছে তো ফোন নাম্বারও নেই। বাড়িও চিনি না কোন গ্রামে থাকে! বাবাকে শেষ দেখা হয়নি তার। এটা তো তার প্রতি মস্ত বড়ো অন্যায় হয়েছে। মায়ের কাছে কি আপুদের বাড়ির ঠিকানা আছে? না, মা'কে কিছু বলা যাবে না। দাদার বাড়ির কেউ কি জানে?
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল, বাবা বলেছিলেন ফাল্গুনী আপু নরসিংদী সরকারী কলেজ থেকে এবার অনার্স শেষ করবেন। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। একটা বড্ড ভুল হয়ে গেল। আপুকে বাবার মৃত্যু সংবাদ জানানোটা দরকার ছিল।

নরসিংদী সরকারি কলেজের দক্ষিন দিকে অনার্স ভবন। আমার পরিচিত কেউ নেই এখানে। অনার্স ভবনের সামনে অনেকেই আছে। আমি এগিয়ে গেলাম। সবাই বয়সে আমার বড়ো। একসাথে তিন চারজন কথা বলছে দাঁড়িয়ে। আমি গিয়ে সালাম দিলাম। জানতে চাইলাম, অনার্স শেষ বর্ষের ফাল্গুনী নামের কাউকে চিনে কি-না! সাথে সাথে একজন ডানদিকে তাকিয়ে একটু গলাটা উঁচিয়ে বলল,

"এই ফাল্গুনী, তোকে কেউ খুঁজতে আসছে।"

আমার চোখদুটো যেন অপেক্ষা সইছে না। কেউ একজন এগিয়ে আসছে। আমার তিন চার বছরের বড়ো হতে পারে। দেখতে খুবই সুন্দর। ইচ্ছে করছে এখনি চিৎকার করে বলি, আপু আমি তোমার একমাত্র ভাই শাওন। কিন্তু বলতে পারিনি। আমার গলার স্বর কি ভেজা? বুঝতে পারছি না।

"আমাকে খুঁজছ? কে তুমি?"

আপুর কথায় কী বলব ভেবে পাচ্ছি না। আসলে কে আমি? পরিচয়ের শুরুটা কীভাবে করব? মুখ ফুটে বললাম,

"আপু, আপনার সাথে কিছু কথা আছে। খুব জরুরী। একটু এদিকে আসবেন?"

অনার্স ভবনের সামনে দুর্বা ঘাসে শীতল পাটির মতো বিছানা পাতা। আমি আর আপু ঘাস মাড়িয়ে মাঠের মাঝখানটায় গেলাম। আপুর কৌতূহলী চোখ। হঠাৎ বললাম,

"আমি চিনিশপুর থেকে এসেছি। আমার নাম শাওন।"

কথাটুকু বলে আপুর দিকে তাকালাম। আপু নির্বাক। চোখের পলক পড়ছে না। চোখদুটো ভিজে উঠল আমার সামনে। আরেকটু এগিয়ে এসে আপু আমার কাঁধে হাত রাখল। তারপর মাথায়, তারপর গালে। এই স্পর্শ কত শীতল, কত মায়ায় ভরা। টলমল চোখ, ভেজা গলায় আপু বলল,

"তোমাকে দেখার ইচ্ছে ছোটোবেলা থেকে। আমার একটা ভাই আছে, আর তাকে আমি কখনো দেখিনি। এই কষ্টটা আমার অনেক বছরের। কত বড়ো হয়ে গেছো তুমি।"

আমার দৃষ্টি নিচের দিকে। ইচ্ছে করছে নিজের চোখের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার চোখ থেকে এখন যেন কোনো পানি না পড়ে। আমি শত বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি আটকাতে। আটকাতে আর পারলাম কই! এরই মধ্যে আপু আবার বলল,

"বাবা মারা যাওয়ার দিন গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়িতে। আড়ৎ থেকে আওলাদ নামের কেউ একজন ফোন করেছিল। তোমাদের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিলাম। বিশ মিনিটের মতো ছিলাম। সবাই কান্না করছে। মানুষের ভীড়ে আমিও বাবার মুখখানি শেষবারের মতো দেখে নিয়েছি। দেখে কান্নাও করেছি। কিন্তু কেউ জানে না আমি কে!
তোমাকেও খুঁজেছি। জিজ্ঞেস করিনি কারো কাছে। কে কবর খুঁড়তে গেল, কে বাজারে গেল! এসব বলার সময় শুনলাম তোমার নাম। কেউ একজন বলছে শাওন কাফনের কাপড় কিনতে গেছে। আমি আর সেখানে থাকিনি, চলে এসেছি।"

মাথা তুলে তাকাতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু চোখের পানি লুকাতে পারব না। টপ করে নিচে পড়বে। আপু আমার থুতনি ধরে মাথাটা উপরের দিকে তুললেন। টপ করে চোখের পানি আপুর কব্জিতে পড়ল। আপু আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন। বড়ো বোনের বুঝি এত মমতা থাকে? এত আদর থাকে?
আপু আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথার চুল নাড়িয়ে বললেন,

" তুমি ছোটো হলেও এখন তোমার দায়িত্ব অনেক। মায়ের দিকে খেয়াল রেখো।"

আমি আড়ৎ থেকে আসার সময় বিশ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি পকেটে ভরে। টাকাটা বের করে আপুর হাতে দিয়ে বললাম,

"আমি এখন আর ছোটো নই আপু। অনেক বড়ো হয়েছি। মায়ের খেয়াল যেমন রাখতে পারব, তেমনি আপুর জন্যও এই ভাইটি আছে।"

আপু একটু চমকালেন বোধ হয়। তারপর টাকাটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,

"আমি তোমার চেয়েও বড়ো। এখন আমার টাকা লাগবে না। মামার বাড়িতে থাকি এখন।"

আমি টাকা ফেরত না নিয়ে বললাম,

"টাকা নিতেই হবে। আপুর সব দায়িত্ব এখন থেকে তার ভাইয়ের। বাবা শুধু আমার একার নয়, তোমারও বাবা। তোমারও অধিকার আছে। আমাকে শুধু আপু ডাকতে দিও, বঞ্চিত করো না।"

অনার্স ভবনের মাঠের দুর্বা ঘাস সাক্ষী হচ্ছে দুই ভাই বোনের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানির। ঘাস মাড়িয়ে সামনে এগুচ্ছি। আড়ৎ এ যেতে হবে। আড়ৎ থেকে বাড়িতে। মা কয়েকদিন ধরে মনমরা থাকে। মায়ের কাছাকাছি থাকাটা দরকার। গল্প করা দরকার। সব দায়িত্ব এখন আমাকেই পালন করতে হবে। রিকশায় উঠে কিছু দূর এসে পেছন ফিরে দেখি, আপু তখনো আমার চলে আসা দাঁড়িয়ে দেখছে। যেন ভাইকে বিদায় দিতে মন চাচ্ছে না।
আকাশে মেঘ জমেছে। গুড়মুড় শব্দ হচ্ছে। এক পশলা বৃষ্টি হলে মন্দ হয় না।

সমাপ্ত...

#গল্পঃসংসর্গ

লেখনীর শেষ প্রান্তে,,,,,,,
,,,,,,ওমর ফারুক শ্রাবণ

প্রত্যেকটি প্রতিকুল ঘটনা বা হার আরেকটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।  এরকম ভাববার কোন কারণ নেই যে আপনি যাইই করবেন বা শু...
21/07/2023

প্রত্যেকটি প্রতিকুল ঘটনা বা হার আরেকটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।

এরকম ভাববার কোন কারণ নেই যে আপনি যাইই করবেন বা শুরু করবেন তাতে সফল হবেন। আপনি ১ বার ২ বার ৩ বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হউন বা হেরে যান – এটা ভাবা যাবে না যে আপনি আর পারবেন না। আবার শুরু করতে হবে।

আপনি যখন কোন কিছু শুরু করবেন, হয়তো ঐ রাস্তাটা শেষ হয়ে যাবে কিন্তু চেষ্টা করলে ঠিকই আপনি নতুন রাস্তার সন্ধান পাবেন। মনে রাখবেন আপনার যখন একটা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে, রাস্তায় থাকলে আপনার আরো নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে। নতুন কোন সম্ভাবনার দরজা জানালা খুলে যাবে।

প্রতিটি প্রতিকুল পরিস্থিতি বা হার নতুন কোন সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। আবার স্বপ্ন দেখে আবার শুরু করতে হবে। যেমন করে প্রতিটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, করোনা মহামারী...) কাঁটিয়ে মানুষ আবার স্বপ্ন দেখে, আবার সাহস করে, আবার শুরু করে – শুধু লেগে থাকতে হবে, আপনি আবার ঘুরে দাঁড়াবেনই।

Address

Naogaon Joypurhat
Rajshahi
6561

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ঘাস ফড়িং posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to ঘাস ফড়িং:

Videos

Share