27/01/2024
**৭ম শ্রেণির শরিফ-শরিফার গল্পটা এরকমও হতে পারতো:-
** শরিফ আর শরিফা দুই ভাই-বোন...বাবা আর মায়ের সাথে ঢাকার বনানীতে বসবাস করেন। স্কুলের ছুটি পেয়ে ঢাকা থেকে দাদু বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও বেড়াতে যাচ্ছে , এটাই তাদের প্রথম ট্রেন ভ্রমণ,তাই ওরা দুজনেই খুব উৎফুল্ল,শরিফ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে আর শরিফা চতুর্থ শ্রেণিতে,শরিফ-শরিফার বাবা জনাব আশরাফ সাহেব রাজধানীর স্বনামধন্য ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক.....
ময়মনসিংহগামী -মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি জয়দেবপুর রেলস্টেশনে থামলে একদল হিজড়া//তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ট্রেনটিতে উঠে, ট্রেনের জানালার কাঁচ দিয়ে সে দৃশ্য দেখে শরিফ ও শরিফা,, দুই ভাই-বোনই ওদের দেখে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । 'মানুষগুলো মেয়েদের মত দেখতে,কিন্তু অনেক লম্বা,ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক লাগানো,মুখেও অনেক মেকাপ,দেখতে কেমন যেন একটু অদ্ভুত লাগে। ওরা সবচেয়ে অবাক হয়,মেয়েদের মত দেখতে হলেও ওদের গলার আওয়াজ ঠিকই ছেলেদের মত...শরিফা ভয় পেয়ে মায়ের আঁচলে লুকোতে চায়...কৌতুহল জাগে শরিফের মনে...সে বাবাকে জিজ্ঞেস করে,'বাবা, কে এরা তাদের দেখতে এমন কেন ?'
আশরাফ সাহেব বলেন,'ওরা তোমার আমার মতই স্বাভাবিক মানুষ...সৃষ্টিকর্তা তোমাকে যেমন ছেলে বানিয়েছেন...তোমার ছোট্ট বোনটাকে যেমন মেয়ে বানিয়েছেন...তেমনি সৃষ্টিকর্তা ওদেরও এক বিশেষভাবে বানিয়েছেন, ওরা ছেলেও না,আবার মেয়েও না, ওদের বলা হয় থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ'
বাবা-ছেলের এই প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে চলতেই সেই হিজড়াদের দলের একজন ওদের কাছে আসে, কিছুটা পুরুষের মত ভাঙ্গা গলা সুরে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে বলে শরিফের বাবাকে, ...শরিফের বাবা আশরাফ সাহেব পকেট থেকে ২০ টাকার একটা নোট শরিফের হাতে দিয়ে বলেন,'নাও বাবা,এটা আন্টিকে দাও'...শরিফ ভয়ে ভয়ে টাকাটা হিজড়া মানুষটির দিকে বাড়িয়ে দেয়, টাকা নিয়ে মুচকি হাসি দেয় সে হিজড়া মহিলা, শরিফের গাল টেনে আদর করে দিয়ে বলে,'অনেক বড় হও বাবা'আর শরীফার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে দিল...
এক পর্যায়ে চলে যায় হিজড়ার দল অন্য এই বগি থেকে অন্য বগিতে । কিন্তু কৌতুহল তখনও কাটেনি শরিফের,আবারও শরিফ জিজ্ঞেস করে তার বাবাকে,'আচ্ছা বাবা,ওরা যদি আমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ হয়,তাহলে ওরা ট্রেনে ট্রেনে এভাবে ভিক্ষা করে কেন ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শরিফ-শরিফার বাবা সুন্দর করে তার দুই ছেলে-মেয়েকে বুঝিয়ে বলেন,'ওরা আমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ হলেও স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করার সুযোগ তেমন একটা ওরা সমাজে পায় না ,ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগও ওদের তেমন নেই ,, সমাজে কিছু মানুষ ওদের দূর দূর করে, বেশিরভাগ মানুষ তাদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে। ওরা যদি সমাজে আট দশটা ছেলে মেয়ের মত সব জায়গায় সমান তালে পড়ালেখা ও চাকুরি করার সুযোগ পেত,,তাহলে ওদের ট্রেনের বগিতে, বগিতে এভাবে ভিক্ষা করার প্রয়োজন হত না। তাহলে তোমার মত বাবা-মার আদর স্নেহ পেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে তারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারত। সমাজের কিছু মানুষের কারণে তারা আজ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।
এ কথা শুনে শরিফ এবং শরিফা দুঃখ প্রকাশ করে বাবা-মায়ের কাছে ওরা বলে,ওরা বড় হয়ে তৃতীয় লিঙ্গের এই অবহেলিত মানুষদের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে আর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, শরিফ-শরিফার বাবা-মা এই কথা শুনে খুব খুশি হয় । বাবার সাথে শরীফ শরিফা হিজড়াদের নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে বলতে ট্রেনটি এসে গফরগাঁও স্টেশনে থেমে যাই পরে তারা ট্রেন থেকে নেমে দাদুর বাড়িতে চলে যায়।...................
বিঃদ্রঃ- আমাদের দেশে শিক্ষার চেয়ে গুজবের শক্তি বেশি, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শব্দ ও ভাষার ব্যবহারে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত, এসবের কারণে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে , ভবিষ্যতে যেন কেউই এই পুস্তকের ভুল ব্যাখ্যা না দিতে পারে.....
.......সাব্বির রায়হান.......
Journalist :- ATV আনন্দ টিভি