29/04/2022
কুরআনের দুই নম্বর সূরায় রমযানে রোযা রাখার নিয়ম-কানুন রয়েছে। এই আয়াতগুলোর অনুবাদ হলো: ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা সংযমী হও। হাতে গোনা কয়েকটা দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে থাকে সে যেন অন্য দিনে সংখ্যাটি পূর্ণ করে। আর যার শক্তি নেই তাকে একদিন রোযার পরিবর্তে একজন গরীবকে একদিনের খাদ্য দিতে হবে। যে অতিরিক্ত পূণ্য করবে তা তার জন্য উত্তম। আর যদি তোমরা রোযা রাখ তাহলে তা তোমাদের জন্য মঙ্গল। যদি তোমরা বুঝতে পারো। রমযান হল সেই মাস যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য দিক-নির্দেশনা, সৎ পথের প্রত্যক্ষ নিদর্শন এবং সত্য-অসত্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে সে যেন তাতে রোযা পালন করে। আর যারা অসুস্থ অথবা ভ্রমণরত অবস্থায় থাকে তারা অন্যদিনে এই সংখ্যা পূর্ণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য ব্যাপারটা সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না। তিনি চান তোমরা পুরো মাস রোযা পালন করো, যাতে করে তোমাদেরকে সুপথ দেখানোর জন্য তোমরা তাঁর মহিমা প্রকাশ করতে পারো এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো’ (২: ১৮৩-১৮৫)। এই আয়াতগুলির অধ্যয়ন থেকে দেখা যায় যে রোযা একই সাথে দুটি জিনিসের প্রশিক্ষণ, একটি কৃতজ্ঞতা এবং দ্বিতীয় তাকওয়া। তাকওয়া হল, মানুষ পার্থিব জীবনে আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন তা পরিহার করে, আল্লাহ তাকে যে জিনিস থেকে বিরত রেখেছেন তা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ তাকে যা করার অনুমতি দিয়েছেন তা সে করে। রোযা মানে শুধু রাতে খাওয়া-দাওয়া করা এবং দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকা। এটি এমন যেন আল্লাহকে প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখার অনুশীলনের মতো। একজন মুমিনের পুরো জীবনটাই এক ধরনের রোযাদার জীবন। রমযান মাসে, কিছু অস্থায়ী জিনিস ব্যতীত, একজন ব্যক্তি তার সারাজীবনের জন্য তার প্রভুর কাছে অপছন্দনীয় বিষয়গুলি ত্যাগ করার প্রশিক্ষণ পায়। রমযান মাস সেই মাস যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় রোযা ও কুরআনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আর সেই সম্পর্ক হল কুরআন যারা মানে তাদেরকে এক মিশন দেয়। আর তা হল মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা। এই মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন। রোযার প্রশিক্ষণ মাস একজন ব্যক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে আল্লাহর দা’ওয়াহ মিশন পরিচালনা করতে এবং তাকে সাফল্যের গন্তব্যে নিয়ে যেতে সক্ষম করে। এই প্রশিক্ষণের সত্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিসে নিম্নোক্ত শব্দে বর্ণিত হয়েছে : قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم: ما من عبد یصبح صائما فیُشتم فیقول: سلام علیکم انی صائم، اِلاّ قال اللہ عز وجل: استجارعبدی من عبدی بالصیام فادخلوہ الجنۃ অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখনই কোন ব্যক্তি রোযা অবস্থায় থাকে এবং তাকে গালি-গালাজ করা হয় এবং সে বলে, ‘তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা অন্যদের থেকে রোযার আশ্রয় নিয়েছে, সেইজন্য তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। (তারতিব আল-আমালি আল-খামিসিয়াহ লিস-সাজারী, হাদীস নং ১৩৪৮) একই সাথে, রোযা মানুষের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি প্রশিক্ষণ। খাদ্য ও পানি আল্লাহর মহান নিয়ামত, কিন্তু সাধারণ পরিস্থিতিতে মানুষ তা উপলব্ধি করতে পারে না। রোযায় যখন মানুষ সারাদিন এসব থেকে বিরত থাকে এবং সূর্যাস্তের পর প্রচণ্ড ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় খাবার ও পানি পান করে, তখন সে বুঝতে পারে যে, এসব খাবার ও পানি আল্লাহর কত বড় নেয়ামত। এই অভিজ্ঞতা মানুষের মধ্যে তার প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ সৃষ্টি করে। রোযা অন্তরে কোমলতা ও তৃপ্তি সৃষ্টি করে এইভাবে, রোযা একজন ব্যক্তির মধ্যে সেই ক্ষমতা বিকাশ করে, যাতে করে সে সেই সমস্ত শর্তগুলি উপলব্ধি করতে পারে, যেগুলি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে চান। রোযার কঠোর প্রশিক্ষণ মানুষকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে তার হৃদয়ে প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর ভয় তাকে কাঁপিয়ে তোলে। মানুষ যখন এই মানসিক অবস্থায় পৌঁছায়, তখন সে এমন সক্ষমতা অর্জন করে যে সে আল্লাহর নেয়ামতের জন্য এমন শুকরিয়া আদায় করে যার মধ্যে তার হৃদয়ের স্পন্দন শামিল হয়, সে এমন তাকওয়া অনুভব করে যা তার শরীরের লোমগুলিকে খাড়া করে দেয়, সে যেন আল্লাহকে এমন এক মহান সত্তা হিসাবে খুঁজে পায় যার মধ্যে তার নিজের অস্তিত্ব খুবই ছোট মনে হয়
সকল বিভাগে ভর্তি চলছে